প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম সিজন : ২
পার্ট : ৫ (বিবাহ স্পেশাল 🙈🙈)
চারুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে ৷ডাক্তার চারুর পেট থেকে বিষাক্ত পয়জন বের করেছে ৷কিছুক্ষন আগে জ্ঞান এসেছে চারুর ৷এখনো কেউ চারুর সাথে দেখা করে নি ৷চারু চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল ৷দরজা বন্ধ করার আওয়াজে সে চোখ খুললো ৷ কিন্তু চোখ খুলে যা দেখলো এতে তার পরান যায় যার অবস্থা ৷আয়ান তার সামনে দাড়িয়ে আছে ৷আয়ান যে বড্ড রেগে আছে ৷তা চারু বুঝতে পারলো ৷তবুও নিজের মুখে কিছুটা হাসি ফুটিয়ে বলল
আয়ান আমাকে …….
চারু আর কিছু বলার আগেই আয়ান এসে ওর মুখ চেপে ধরলো ৷তারপর বলল
এই তোর ভয় করে না আমাকে ৷দাড়া তুই যাতে আমাকে ভয় পাস সেই সব ব্যবস্থা আমি করে ফেলেছি ৷ কিভাবে পারলি বিষ খেতে তুই ৷আজকে যদি তোর কিছু হতো তাহলে আমি কি করতাম ৷তোর মৃত্যুর আগে যেন আল্লাহ আমাকে আগে নিয়ে যায় ৷আয়ান কথা গুলো বলতে বলতে কেদেঁই দিল চারুকে ধরে ৷
আমাকে কেন একটু বুঝতে চান না চারুলতা ৷আমি কি এতটাই খারাপ যে আমাকে বোঝা যায় না ৷আপনার কাছ থেকে তো অনেক ভালোবাসা আমি চাই নি ৷আপনি শুধু আমাকে বুঝবেন ব্যস ৷ আপনি কি সত্যি আমার চোখে ভালোবাসা দেতে পান না চারু ৷একটা মানুষ আর কত ভাবে বুঝাতে পারে বলুন তো ৷আমাকে এত শাস্তি না দিয়ে মেরে ফেলুন চারু ৷ আজ যদি আপনার কিছু হতো তাহলে আমি কি করতাম চারু ৷আমি তো আপনাকে হারাতে চাই না ৷আপনাকে নিয়ে হাজার জনম পারি দিতে চাওয়া ছেলেটাকে রেখে মরে কেন যেতে চান আপনি ৷জানেন চারু আমি রোজ খোদার কাছে বলি যেন আমি আগে মরি ৷কারন আপনার মৃত্যু আমি সহ্য করতে পারবো না ৷তাহলে আপনি কেন আমাকে ছেড়ে যেতে চান ৷যদি সত্যি ছেড়ে যেতে চান ৷তাহলে নিজের হাতে মেরে চলে যাবেন ৷আমি বাধাঁ দেব না ৷কিন্তু আমাকে বাচিঁয়ে রেখে যাবেন না কখনো ৷আপনাকে ছাড়া বেচেঁ থাকার কথা কখনো ভাবতেও পারি না আমি চারু ৷আয়ান চারুকে জরিয়ে ধরে কাদঁতে কাদঁতে কথা গুলো বলল ৷চারুও আয়ানকে ধরে কাদঁছে ৷ হ্যা সে সত্যি বড্ড ভুল করেছে তার শ্যাম পুরুষকে বুঝতে ৷ আয়ান চারুকে ছেড়ে দিল ৷তারপর মাথা নিচু চোখের পানি মুছে বলল
একটু পর কাজী আসবে ৷এখানেই আপনার আমার বিয়ে হবে ৷
মানে ৷
মানে যা বললাম আমি ৷আমি আপনাকে এখনই বিয়ে করবো ৷
আমি আপনাকে এখন বিয়ে করবো না ৷
আয়ান তড়িৎ গতিতে এসে চারুর হাত চেপে ধরে বলল অসুস্থ বলে কিছু বলছি না ৷আমার রাগ উঠিও না চারু ৷
চারু আয়ানের কথায় পাত্তা দিল না ৷মুখ ভেংচি কেটে বলল
ছেলের তো ঠিক মতো দাড়িই হয় নি ৷সে নাকি আবার বিয়ে করবে ৷তা সাহেব বিয়ে যে করবেন বউ , ছেলে, মেয়েকে কি খাওয়াবেন ৷
আয়ানের রাগ হঠাৎ করেই পানি হয়ে গেল ৷আয়ান বাকাঁ হেসে বলল আমার বউ আর যাই হোক তোমার মতো রাক্ষসী নয় ৷আর দাড়ীর কথা বলছো ৷ওটা ঠিক সময় হলেই হয়ে যাবে ৷ বউয়ের আদর পেলে দাড়ি তাড়াতাড়ি হয় ৷তাই তো বউ নিয়ে বাড়ী যাবো আজ ৷
আয়ানের ফিসফিস করে বলা কথায় চারু লজ্জায় মাথা নত করে আছে ৷ছেলেটাকে সে যত ভালো ভাবতো ৷সে তার কানাকড়িও ভালো নয় ৷বড্ড দুষ্টু স্বভাবের ৷
আয়ানের কথার মাঝেই দরজায় টোকা পড়লো ৷আয়ান চারুর কাছ থেকে দূরে সরে এলো ৷আয়ান মুচকি হাসতে হাসতে দরজা খুললো ৷দরজা খুলেই দেখলো তার মা দাড়িয়ে আছে ৷আয়ানের মা তার সাথে আরো দুইজন মেয়েকে এনেছেন ৷আয়ানের মা আয়ানকে বাইরে রেখে দরজা লাগিয়ে দিল ৷
অপর দিকে আয়ানকে ধরে নিয়ে গেল ওর বন্ধুরা ৷ আয়ানকে কিছু বলার সুযোগ কেউ দিল না ৷
অন্যদিকে আয়ানের মা চারুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
চারু মা আমার ছেলেটা অনেক ভালো ৷নিজের ছেলে বলে বলছি না ৷ তোমায় বড্ড ভালোবাসে সে ৷আজ থেকে ভালোবাসে না ৷সেই চার বছর ধরে ৷প্রথম দুই বছর লজ্জায় যেতে পারে নি ৷তারপর আমি বলেছিলাম তোমাকে জানাতে ৷আমাকে তোমার ব্যাপারে সব বলে আয়ান ৷যতক্ষন বাড়ীতে থাকে ততক্ষন ওর মুখে শুধু চারু নাম ৷আমার ছেলেটা তোমার চিন্তায় ঠিক মতো ঘুমায় না ৷ কত দিন রাতে যে ছুটে এসেছে তোমার বাড়ীর কাছে তার হিসেব নেই ৷কোনো বিপদ হলে কে দেখবে এই ভয়ে ৷আমি তাকে কখনো আটকাই নি ওকে ৷আর আটকাতে চাইও না ৷ ভালোই তো বেসেছে শুধু ৷কোনো অন্যায় তো করে নি ৷ আমার ছেলে তোমায় যতই ভালোবাসুক ৷তবুও আমি জানতে চাই তুমি তাকে বিয়ে করবে কি না ৷আমি কোনো মেয়ের উপর বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন চাপিঁয়ে দিতে চাই না মা ৷তুমি কি রাজী চারু মা ৷
চারু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল যা করলে আয়ান ভালো থাকবে তাই করুন ৷
তবুও আমি তোমার মত চাই ৷আয়ানের একার মতে আমি এই বিয়ে দিতে পারি না চারু মা ৷
আয়ানে মতই আমার মত মা ৷
আয়ানের মায়ের ঠোটেঁ হাসি ফুটলো ৷চারু তাকে মা বলে ডেকেছে ৷আয়ানের মা উত্তর পেয়ে গেছে ৷আয়ানের মা চারুর থুতনিতে হাত রেখে বললেন
এই তোরা আমার চারু মাকে সাজা সুন্দর করে ৷একদম লাল টুকটুকে বউ সাজাবি কিন্তু ৷আজ আমি ঘরে লক্ষী উঠাবো ৷
চারুকে লাল বেনারসি পড়ানো হয়েছে ৷তার কপালে লাল আর সাদা কুমকুমের ছোয়া ৷চোখে গাড়ো কাজল আর ঠোটেঁ লাল লিপস্টিক ৷পুরো শরীরে খাটি সোনার ভারী গয়না ৷দুই পায়ে আলতার ছোয়া ৷ একটা লাল রংয়ের পাতলা ঘোমটা দিয়ে চারুর সুন্দর মুখটা আড়াল করা হলো ৷ তারপর তার গলায় চকচকে সোনালী সুতোর একটা লাভ সেইপের মালা পড়ানো হলো ৷
অপর দিকে আয়ানকে সাদা পাঞ্জাবি পড়ানো হয়েছে ৷এক হাতে ঘড়ি আর অন্য হাতে সোনালি রংয়ের চকচকে সুতোর হাত বন্ধনি ৷মাথায় একটা সাদা পাগড়ী ৷গলায় সোনালী ঝড়ি সুতোর লাভ সেইপের মালা ৷হাতে রুমাল আয়ানের ৷
হাসপাতালের ডাক্তার নার্স সবার মুখে হাসি ৷এই প্রথম তাদের হাসপাতালে কারো বিয়ে হচ্ছে ৷একে অন্যের জন্য পাগল এমন একজোড়া চড়ুই পাখির বিয়ে দেখতে কার না ভালো লাগে ৷
চারুকে আয়ানের পাশে বসানো হয়েছে ৷ পাচঁ হাজার টাকা তাদের বিয়ের দেনমোহর ৷কাজী সাহেব আয়ানকে কবুল বলতে বললেন ৷আয়ান আস্তে আস্তে কবুল বলল ৷তার কেমন যেন লাগছে বড়দের সামনে ৷ বাবার সামনে কবুল বলতে বেশ লজ্জাই তার লাগছিল ৷
চারুকে কবুল বলতে বললে সে চুপ করে রইলো ৷লজ্জায় বলতেই পারছে না ৷মাথাই তুলে তাকাতে পারছে না ৷ অবশেষে আয়ানের মা চারুকে ধরে সাহস দিল ৷চারু নিজের মধ্যে কিছুটা সাহস জুগিয়ে কবুল বলেই ফেললো ৷আর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলল ৷
এবার চারুর বিদায়ের সময় ৷ চারু তার দাদিকে ধরে খুব কাদঁছে ৷ আশেপাশে প্রান প্রিয় দাদাকে দেখতে না পেয়ে বড্ড কষ্ট পেল সে ৷আয়ানের মা চারুকে ধরে বাইরে নিয়ে গেল ৷
চারু আর আয়ানকে একটা রিকশাতে বসানো হলো ৷তারপর রিকশার চারিদিকে কাপড় পেচাঁনো হলো ৷ভেতরে শুধু বর আর বউ ৷যদিও আয়ানের বাবার গাড়ী আছে ৷তবুও আয়ান তার বউকে নিয়ে সাধারনদের মতোই যাবে ৷ছোট একটা রিকশায় চারু আর আয়ান ৷চারু কান্নার কথা ভুলে গেছে ৷পাশে থাকা শ্যাম পুরুষের জন্য বড্ড লজ্জা লাগছে তার ৷তার নিঃশ্বাসের শব্দ চারু শুনতে পারছে ৷
চলবে….