প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :২
পার্ট :১১
আয়ান বিদেশ চলে গেছে গতকাল ৷চারুর চোখ ফুলে গেছে কাদঁতে কাদঁতে ৷এই নাকি সে চারুকে ভালোবাসে ৷ পাচঁ বছর পর নাকি দেখা হবে ৷কিভাবে থাকবে সে এতদিন ঐ শ্যামপুরুষকে না দেখে ৷ চারু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো ৷ সেও কথা বলবে না আর শ্যামপুরুষের সাথে ৷
তিনমাস পার হয়ে গেছে ৷চারু ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে ৷ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলেই সে এখন থাকে ৷ তার শ্বশুড় শ্বাশুড়ী মাঝে মাঝে দেখতে আসে ৷দ্বীপ আর মিহানও ভালো আছে ৷ দ্বীপের সাথে খুব একটা দেখা হয় না ৷ দিনকাল ভালোই যাচ্ছে চারুর ৷সময় নিজের মতো পেরিয়ে যাচ্ছে ৷
দেখতে দেখতে সাড়ে চার বছর পার হয়ে গেছে ৷সাড়ে চার বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে ৷ আজ চারু একজন ডাক্তার ৷দ্বীপ আর মিহান ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে ৷আয়ানের লেখা পড়া শেষ ৷সামনেই তার রেজাল্ট বের হবে ৷ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এ লেখাপড়া শেষ করেছে সে ৷ এখন শ্বশুড় বাড়ীতেই আছে চারু ৷আজ সকালেই চারুর কাছে আয়ানের চিঠি এসেছে ৷চিঠিটা পড়া হয় নি এখনো ৷বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে ৷ ঘরের দক্ষিনের জানালাটা খোলা ৷ বাইরে থেকে হালকা হাওয়ায় চারুর কালো চুল উড়ে যাচ্ছে ৷ পরনে গোলাপী রংয়ের সুতি শাড়ী ৷চারু ড্রয়ারের ভেতর থেকে চিঠিটা বের করলো ৷তারপর পড়তে শুরু করলো ৷
প্রিয় চারু
পত্রের শুরুতে আমার সালাম নেবেন ৷আপনি কেমন আছেন চারুলতা ৷আমি জানি আপনি ভালো আছে ৷কিন্তু আমি ভালো নেই ৷আমার দিন কাটতে চায় না চারু ৷ আচ্ছা চারু আপনাকে কি আমি সত্যি ভালোবাসি ৷সেটা আমি আজও জানি না ৷কিন্তু আপনি বলতেই আমি পাগল ৷আপনাকে বড্ড ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে ৷আচ্ছা আপনি কি এখনো সেই আগের মতো সহজ সরল চারু আছেন নাকি বদলে গেছেন ৷আপনি কি আমার দিকে এখনো আড় চোখে তাকাবেন ৷আপনি কি এখনো আড়াল থেকে আমায় দেখে মুচকি হাসবেন ৷অনেকে বলে ভালোবাসা নাকি রং বদলায় ৷সময় নাকি ভালোবাসার রং বদলে দেয় ৷কিন্তু আপনার প্রতি আমার ভালোবাসার রং এত তীব্র কেন হচ্ছে বলুন তো ৷আপনাকে নিয়ে আমার কল্পনার শেষ নেই চারু ৷কোনো এক শ্রাবনে আপনি আর আমি পাশাপাশি হাটবো চারু ৷আপনার ঐ নরম গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানি শুষে নেব ঠোটঁ দিয়ে ৷আপনার দিকে তাকিয়ে শত শত রাত পার করে দেব ৷আজ কাল দিন গুলো যেতেই চায় না ৷রাতে ঘুম হয় না ৷মনটা বড্ড উথাল পাথাল করে আমার ৷আপনি এখন কেমন দেখতে হয়েছেন ৷আপনাকে না দেখতে পাওয়ার জন্য কবে যেন মরেই যাই চারু ৷নিজের যত্ন নেবেন ডাক্তারনী ৷আপনার হাতের সেবা দিয়ে এই অসুস্থ পাগলটাকে কিন্তু ঠিক করতে হবে ৷ খুব তাড়াতাড়ি আসছি আমি আপনার কাছে ৷
ইতি
আপনার শ্যামপুরুষ ৷
চারু চিঠিটা বন্ধ করলো ৷তারপর বারান্দায় চলে গেল ৷তারপর একা একা বলল
এখন খুব ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে ৷বিয়ের আগেও তার কত ভালোবাসা ৷আর বিয়ের পর ফিরেও তাকায় নি ৷বিদেশ চলে গেছে একা ফেলে ৷ এখন আবার ভালোবাসা দেখাচ্ছে ৷কথা নেই তার সাথে ৷আমার মনে হয় কষ্ট হয় না ৷চারুর চোখে অশ্রুকনা জমা হতে লাগলো ৷
পনেরো দিন পাড় হয়ে গেছে ৷চারু আজ হাসপাতালে রোগী দেখতে যায় নি ৷কারন আজ শ্যামপুরুষ আসবে ৷বাড়ীর কাজ সব শেষ ৷বাড়ীঘর পরিষ্কার করিয়েছে লোক দিয়ে ৷আয়ানের পছন্দের সব খাবার চারু নিজের হাতে রান্না করেছে ৷ এখন সে ঘরে বসে আছে ৷চারুর শ্বশুড় আর দ্বীপ গেছে আয়ানকে নিয়ে আসতে ৷চারুর মনটা বড্ড উথাল পাথাল করছে ৷বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ শব্দ হচ্ছে ৷ হাত পা কেমন যেন কাপঁছে তার ৷ চারু যান নি এয়ারপোর্টে ৷কেন যাবে সে ৷ তার কোনো কথা নেই ঐ নিষ্ঠুর শ্যামপুরুষের সাথে ৷সে তার চারুকে একা ফেলে চলে গেছে ৷ ঐ খারাপ লোকটা জানে না , তার চারু থাকতে পারে না তাকে ছাড়া ৷চলে যাবে চারু তার বাবার বাড়ী ৷ থাকবে না এই খারাপ লোকের সাথে ৷
চারুর চিন্তার মাঝেই গাড়ীর শব্দ এলো নিচ থেকে ৷চারু শব্দ পেতেই দৌড়ে জানালার কাছে চলে গেল ৷তবে কি শ্যামপুরুষ এসেছে এত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৷ এতক্ষন একা একা রাগ প্রকাশ করা মেয়েটাই তার প্রিয় মানুষটার জন্য দৌড়ে চলে গেছে জানালার কাছে ৷চারু নিচে গেল না ৷জানালার পর্দা হালকা সরিয়ে নিচে তাকালো ৷গাড়ীর ভেতর থেকে এক এক করে তার শ্বশুড় আর দ্বীপ নেমে এলো ৷কিন্তু ঐ মানুষটা কোথায় ৷চারুর মনটা অশান্ত হয়ে উঠছে ৷না আর অপেক্ষা করা যাচ্ছে না ৷শ্যামপুরুষের অপেক্ষা যে বড্ড যন্ত্রনা দেয় তাকে ৷চারুর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সাদা কোট পড়া একটা পুরুষ বেড়িয়ে এলো ৷চারু তার মুখটা দেখতে পেল না ৷তবে লোকটা অতিরিক্ত সুন্দর যা তার শারীরিক গঠনেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ৷ সাদা কোট পড়া লোকটা যখনই মাথা তুলে উপরে তাকালো ৷ চারু সাথে সাথে জানালার পর্দা লাগিয়ে দিল ৷
একটু পরেই চারুর ডাক পড়লো ৷চারুর শ্বাশুড়ী তাকে ডাকছে ৷চারু দেরি করলো না ৷নিজের ভেতর অনেকটা সাহস নিয়ে বাইরে ছুটে গেল ৷চারু সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো ৷চারু কোনো দিকে তাকালো না ৷তার সেই সাহস নেই একদম ৷চারুর শ্বাশুড়ী বলল
কি রে দূরে কেন দাড়িয়ে আছিস চারু মা ৷এই দ্বীপ ভাইয়ের ব্যাগ গুলো ঘরে নিয়ে যা ৷আয়ান ঘরে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নে তাড়াতাড়ি ৷ চারু মা আয়ানের জন্যা এক কাপ কফি বানাতো ৷
আয়ান দ্বীপের সাথে ঘরে চলে গেল ৷চারুর সাথে একটা কথাও বলে নি সে ৷
চারু আয়ানের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৷আয়ানের নাকি মাথা ব্যাথা করছে ৷তাই কফি বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৷চারু ঘরে এসে দেখলো আয়ান নেই ৷ওয়াসরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে ৷হয়তো ফ্রেশ হতে গেছে আয়ান ৷চারু ব্যাগ গুলো একপাশে রাখলো ৷ তারপর বিছানায় বসে রইলো ৷ওয়াসরুমের দরজা খুলে আয়ান বেড়িয়ে এলো ৷চারু মাথা তুলে তার দিকে তাকালো ৷চারুর মাথা ঘুড়ছে ৷এটা কাকে দেখছে সে জানে না ৷এটা একদমই আয়ান হতে পারে না ৷ তার শ্যামপুরুষ এতো সুন্দর হলো কিভাবে ৷তার নজর লেগে যাবে তো ৷চারুর চিন্তার মাঝেই আয়ান বিছানায় শুয়ে পড়লো ৷চারু আয়ানকে শুয়ে পড়তে দেখে বলল
আপনার জন্য কফি এনে ছিলাম ৷খেয়ে নিন ৷মাথা ব্যাথা কমে যাবে ৷
আয়ানের তরফ থেকে কোনো আওয়াজ এলো না ৷
চারু কিছুটা সাহস নিয়ে আয়ানের গায়ে হালকা ধাক্কা দিল ৷তারপর বলল
শুনছেন আপনি ৷কফিটা খেয়ে নিন ৷
আয়ান চারুর হাত নিজের শরীর হতে ঝাড়া মেরে ফেলে দিল ৷তারপর চিৎকার করে বলল
একদম ভালোবাসা দেখাতে আসবি না তুই ৷খুব ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে না ৷তখন থেকে কফি কফি করে যাচ্ছিস কেন হ্যা ৷ আয়ান কফির মগটা মেঝেতে ফেলে দিল ৷তারপর চারুর হাত শক্ত করে চেপেঁ ধরে বলল
একটু শান্তি দে আমাকে ৷এত কেন জালাস তুই ৷এখন ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবি ৷একদম আমাকে জালাবি না ৷যদি জালাস তো মেরে ফেলবো বলে দিলাম ৷আমার সামনে আসবি না তুই ৷যা বের হ এখন তাড়াতাড়ি ৷একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবি না ৷আয়ান চারুর হাত ঝাড়া মেরে ছেড়ে দিল ৷
অন্যদিকে চারু হেচঁকি তুলে কাদঁছে ৷আয়ান ফিরেও তাকালো না একবার ৷আয়ান চারুকে ছেড়ে দিতেই সে দৌড়ে ঘর থেকে চলে গেল ৷চারু ছাদে বসে কাদঁতে লাগলো ৷
তার শ্যামপুরুষ বদলে গেছে ৷এখন আর সে তার চারুকে ভালোবাসে না ৷সে ঐ দেশে যেয়ে বদলে গেছে ৷ এর জন্যই চারু তার শ্যামপুরুষকে যেতে দিতে চায় নি ৷ ভালো যখন বাসেই না তখন চিঠিতে এত ভালোবাসা দেখালো কেন ৷চারু ছাদের এক কোনায় বসে খুব কাদঁতে লাগলো ৷
রাত এগারোটা বাজে ৷চারু ঘরে যায় নি এখনো ৷মমতা বেগম বারবার খেতে বলেছে কিন্তু সে খায় নি ৷খাবার টেবিলের কাছেও আসে নি ৷কাউকে কিছু বলে নি চারু ৷আয়ানের কাছে সে যায় নি ৷মমতা বেগমের সাথে টুকটাক কাজ করেছে ৷রাত হয়ে গেছে ৷চারু ধীর পায়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল ৷ঘরের লাইট অনেকক্ষন আগেই বন্ধ হয়ে গেছে ৷হয়তো আয়ান ঘুমিয়ে গেছে ৷
আগে চারু না খেলে আয়ান নিজের হাতে খাইয়ে দিত ৷চারুকে কত ভালোবাসতো সে ৷চারুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিত ঘুম না আসলে ৷কানের কাছে গুনগুন করে কত ভালোবাসার কথা বলতো ৷কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই মানুষটাই বদলে গেছে ৷চারু আজ সারাদিন যে খায়নি ৷সেই খোজঁটা এই পাষান লোকটা নেয় নি ৷চারু কোথায় আছে সেই খবরটাও নেয় নি ৷ হয়তো বিদেশে যেয়ে নিজের যোগ্য কাউকে পেয়েছে আয়ান ৷কথাটা ভাবতেই চারুর বড্ড কান্না পেল ৷চোখ থেকে আবারো অশ্রুকনা গড়িয়ে পড়লো ৷চারু ঘরে যেয়ে দেখলো আয়ান ঘুমিয়ে গেছে ৷ চাদেঁর আলোয় আয়ানের ঘুমন্ত মুখটা বেশ সুন্দর লাগছে তার কাছে ৷চারু আয়ানের পাশ থেকে একটা বালিশ আস্তে করে তুলে নিল ৷তারপর ফ্লোরে বালিশটা রেখে শুয়ে পড়লো ৷মানুষটা যখন তাকে ভালোবাসে না ৷তখন সে কেন থাকবে তার পাশে ৷ চারু কাদঁতে লাগলো আবারো ৷তার চোখের পানি বালিশে গড়িয়ে পড়ছে ৷শ্যামপুরুষ তার দিকে একবার তাকায়ও নি ৷সে যে লোকটার জন্য জলপাই রংয়ের কাতান শাড়ী পড়ে ছিল ৷ লোকটার জন্য যে চারু সেজে ছিল ৷কিন্তু লোকটা তাকায় নি তার দিকে ৷লোকটা একবার কথাও বলে নি তার সাথে ৷এখন আর হয়তো ভালোবাসে না ৷চারুর কান্নাটা নিঃশব্দে হলেও চোখের পানিটা মিথ্যে নয় ৷কান্নার জন্য শরীরটা ক্ষনে ক্ষনে কাপঁছে তার ৷
চলবে
প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট :বোনাস
ঘড়ির কাটায় সাড়ে এগারোটা বাজে ৷চারু বালিশে মুখ গুজে কাদঁছে ৷সে তো এই আয়ানকে চায় নি তার জীবনে ৷তাহলে কেন এমন হলো ৷ চারু কান্নার মাঝেই একটা শীতল হাতের ছোয়া পেল তার পেটে ৷একটা গরম নিঃশ্বাস তার গালে আচড়ে পড়ছে ৷কেউ একজন তাকে খুব শক্ত করে নিজের সাথে চেপেঁ ধরেছে ৷কেউ একজন তার নরম গালে নিজের নাক মুখ চেপেঁ ধরেছে ৷যার ফলে চারুর গালের পানি ঐ মানুষটার মুখেও লেগে যাচ্ছে ৷চারু জানে এই লোকটা কে ৷চারু লোকটাকে নিজের থেকে ছাড়াতে চাইলো ৷ কিন্তু ছাড়াতে পারছে না ৷ চারু লোকটার হাতে ইচ্ছে মতো আঘাত করতে লাগলো ৷ তারপর বলল
ছাড়ুন আমাকে ৷একদম আমার কাছে আসবেন না ৷আমি কালকেই বাবার বাড়ীতে চলে যাব ৷থাকবো না আর এখানে ৷
আয়ান একটা কথাও বলল না ৷চারুকে অনেক কষ্টে নিজের দিকে ঘুড়ালো ৷তারপর বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরলো ৷এবার চারু খুব জোড়েই কেদেঁ দিল আয়ানের বুকে ৷চারু বারবার হেচঁকি তুলতে তুলতে কাদঁছে ৷শরীরটা বারবার কেপেঁ উঠছে চারুর ৷চারু আয়ানের বুকে বারবার আঘাত করেই গেল ৷আয়ান চারুকে ছাড়লো না কোনো মতেই ৷আয়ান চারুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
চারু আর কাদঁবেন না দয়া করে ৷আজ সারাদিন কাদঁলেন ৷সারা দিন কিছু খান নি আপনি ৷আর কতো কাদঁবেন চারু ৷বেশি কাদঁলে আপনার চোখের পানিতেই সাগর হয়ে যাবে ৷আমি আর কখনো বকা দিব না আপনাকে ৷আমাকে মাফ করে দিন চারু ৷আমাকে যত খুশি মারুন আপনি ৷তবুও আর কাদঁবেন না ৷আমি তখন ইচ্ছে করে খারাপ ব্যবহার করি নি সত্যি বলছি ৷আপনি জানেন আপনাকে দেখার জন্য আমার বুকের ভেতরটা কেমন করছিল ৷আমি ভেবে ছিলাম আপনি এয়ারপোর্টে যাবেন ৷কিন্তু আপনি যান নি ৷আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি সেই খবর কি আপনি রাখেন চারু ৷ ভাবলাম বাড়ীতে এসেই আমি আমার পরী বউটার মুখ দেখবো ৷কিন্তু কি হলো বলুন তো ৷বাড়ীতে এসেও আপনাকে দেখতে পেলাম না ৷কিন্তু আপনি ঠিকই জানালার আড়াল থেকে আমায় দেখে নিলেন ৷তারপর নিচে যেয়েও একবার তাকালেন না ৷এত লজ্জা কেন পেতে হবে আমার সামনে চারু ৷ভালোবাসার মানুষের সামনে এতটা লজ্জা পেতে নেই ৷আপনি জানেন আমার তখন কত খারাপ লেখেছে ৷আপনার কি মনে হয় আমি আপনাকে দেখে নি ৷আমার বউটা আগের থেকে যে বড্ড সুন্দরী হয়ে গেছে সেই খবর কি আপনি জানেন ৷আমার বউটা যে আগের থেকে গলুমলু হয়ে গেছে ৷আমার বউটার গাল গুলো যে এখন লাল বর্ন ধারন করেছে সেই কথা কি আপনি জানেন ৷আপনি কি জানেন আপনার এই দীর্ঘ চুলের প্রেমে আমি আবারো পড়েছি ৷চারু আজ আপনাকে শাড়ীতে বড্ড সুন্দর লেগেছে ৷আমার ইচ্ছে করে ছিল আপনাকে কোলে নিয়ে পুরো বাড়ী ঘুড়তে ৷কিন্তু আপনি তো আমায় পাত্তাই দিলেন না ৷আপনি বড্ড খারাপ চারু ৷আমাকে একদম বোঝেন না আপনি ৷যদি ঘরে এসে একবার বাতীটা জ্বালাতেন তাহলে এতক্ষন শুয়ে শুয়ে কাদঁতেন না ৷
চারুর কান্না বন্ধ হয়ে গেছে ৷কিন্তু এখনো হেচঁকি তুলছে ৷চারু আয়ানের কথা শুনছে ৷আয়ান চারুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল
আজ আমাদের বিবাহের ছয় বছর শেষ হলো ৷আর রাত বারোটা এক মিনিটে আমাদের সপ্তম বিবাহ বার্ষিকী বউ ৷তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার তখন খারাপ ব্যবহার করেছি ৷যেন তুমি ঘরে না আসো ৷ আজ সারাদিন আমি আর দ্বীপ ঘর সাজিয়েছি তোমায় সার প্রাইজ দিতে ৷
আয়ান চারুকে ছাড়লো ৷তারপর চারুকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিল ৷তারপর লাইট অন করে দিল ৷লাইট অন করতেই চারু অবাক হয়ে চারিদিকে তাকিয়ে রইলো ৷কত সুন্দর করে ঘর সাজানো ৷এই সব কি সত্যি সত্যি আয়ান তার জন্যই করেছে ৷আয়ান চারুর চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলল
আমার সত্যিই ভুল হয়ে গেছে চারু ৷ আর কখনো এমন হবে না ৷চারু আয়ানের দিকে আড় চোখে তাকালো ৷ কিন্তু কোনো কথা বললো না ৷ চারু এখন আবারো কেদেঁ দিল ৷তারপর কাদঁতে কাদঁতে বলল
আপনি একদম আমাকে ছুবেন না ৷আপনি সব সময় আমার সাথে এমন করেন ৷আপনি সাড়ে পাচঁ বছর আগে আমায় ছেড়ে চলে গেলেন ৷আর এখন এসেই আবার ঢং শুরু ৷কাল সকালেই চলে যাবো ৷চারু কথাটা বলেই চলে যেতে নিল ৷কিন্তু যেতে পারলো না ৷ তার আগেই আয়ান চারুকে ধরে ফেললো ৷
কোথায় যাবে বউ ৷যেতে দেব বলে তো আর আসি নি আমি ৷এত রাগ করতে নেই বউজান ৷রাগ কমাও এখন ৷আমি কিন্তু এখন আর আগের আয়ান নেই ৷অনেক বদলে গেছি আমি ৷আমাকে দেখেই হয়তো বুঝতে পেরেছো ৷ কত সুন্দর হয়ে গেছি আমি দেখেছো ৷আমি জানি আমার চেহারা দেখেই তুমি হিংসে করছো ৷এই দেখো কত সুন্দর দাড়ি হয়েছে ৷ এখন আর দাড়ি নিয়ে কিছু বলতে পারবে না ৷ সবই কিন্তু ঐ বিদেশি রক্তজবার মতো দেখতে ম্যামদের কাজ ৷ আয়ান চারুকে রাগাতে কথা গুলো বললো ৷
চারু অবাক চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল মানে ৷ বিদেশি ম্যামরা কি করেছে ৷
বিদেশি ম্যামদের চুমু খেয়েই তো দাড়ি হয়েছে ৷বউ তো আর দেয় না ৷তাই ……
চারু আয়ানের দিকে রাগী চোখে তাকালো ৷ তারপর বলল
কি ঐ দেশে গিয়ে এই কাজ করেছেন ৷আজ আপনার একদিন কি আমার একদিন ৷চারু আয়ানে ছোট ছোট দাড়ি ছিড়তে না পেরে ৷সেখানে একের পর এক খামচি দিতে লাগলো ৷
চলবে…..