প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
পার্ট :৭
সিজন :৩
বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেছে ৷গতকাল শান্ত আর জবার বিয়ে হয়েছে ৷এক প্রকার জোর করেই জবাকে বিয়ে করেছে শান্ত ৷প্রীতিও শান্তকে কিছু বলে নি ৷কেউ যদি নিজের ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে একটু কঠোর হয় হোক ৷
অন্যদিকে প্রীতি নিজের রুমে বসে কিছু কেসের তথ্য দেখতে ছিল ৷হঠাৎ করেই তার ফোনটা বেজে উঠলো ৷কিছুটা বিরক্ত হলো প্রীতি ৷কিন্তু ফোন দাতার নাম দেখেই প্রীতি হালকা হাসলো ৷ফোনটা তুলতেই অপর পাশ থেকে বললো
কেমন আছিস মা ৷
এইতো ভালো আছি ৷আপনারা কেমন আছেন ৷
আমরা মরে গেলেও তো তোর কিছু যায় আসে না ৷
দয়া করে আর কখনো এসব কথা বলবেন না ৷আমার কষ্ট হয় এসব শুনতে ৷
সিলেট থেকে যাওয়ার পর একবারও এসেছিস এই বুড়ো মা বাবাকে দেখতে ৷
তোমাদের ভালোর জন্য আমি চলে এসেছি ৷আমি থাকলে তোমাদের বিপদ হতে পারতো ৷তোমরা ছোট থেকে আমায় বড় করেছো ৷লেখাপড়া করিয়েছো ৷মৃত্যুর হাত থেকে বাচিঁয়ে এনেছো ৷আর কি চাই বলো ৷আমি চাই তোমরা ভালো থাকো ৷আমার জীবনের সবটুকু ভালো দিয়ে হলেও ভালো থাকো ৷
আমাদের কেন নিজের মা বাবা ভাবতে পারিস না মা ৷কেন বারবার মনে করিয়ে দিস যে আমরা তোকে লালন পালন করেছি ৷
আমি এমন এক রাস্তার পথিক ৷যে রাস্তায় মৃত্যুরা থাবা মেরে বসতে পারে ৷আর মৃত্যু একবার ডাক দিলে আমার যেতে কষ্ট হবে ৷তাই নিজের জীবনে আর কাউকে জড়াতে চাই না ৷প্রীতি বাম হাতে চোখে আসা পানি মুছে বলল
বাদ দাও এসব কথা ৷আগে বলো রোদ কেমন আছে ৷
তুই যাওয়ার পর ওর অসুখ লেগেই আছে ৷ওকে কয়েক দিন তোর কাছে নিয়ে রাখবি মা ৷ছেলেটা বড্ড কাদেঁ তোর জন্য ৷
কয়েক দিনের জন্য না শুধু ৷ওকে আমার কাছেই পাঠিয়ে দাও ৷আমি ওকে ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব ৷আর হ্যা রাতে কথা হবে ৷হাতে অনেক কাজ ৷এখন রাখি কেমন ৷
প্রীতি ফোন কাটতেই তার মোবাইলে নির্ঝরের কল এলো ৷প্রীতি ফোনটা রিসিভ করলো না ৷ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেল ৷গত দুই দিন ধরে লোকটা ওকে জ্বালিয়ে মারছে ৷প্রীতির খুব রাগ হতে লাগলো নির্ঝর নামক মানুষটার ওপর ৷ফোনটা আবারো বেজে উঠলো ৷এবার বেশ কিছুটা রাগ হয়েই প্রীতি ফোনটা রিসিভ করলো ৷প্রীতি ফোনটা রিসিভ করে বলল
কি ব্যাপার বারবার এভাবে কল কেন করছেন ৷
আপনার সাথে আমার কথা আছে প্রীতিলতা ৷
কি কথা বলুন ৷
আপনি ঐ দিন চলে গেলেন কেন ৷
ইচ্ছে হয়েছে তাই ৷
আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে প্রীতিলতা ৷ একটু দেখা করবেন আমার সাথে ৷আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ৷নিমতলায় একবার আসুন প্রীতিলতা ৷
নির্ঝরের করুন আবদার প্রীতি ফেলতে পারলো না ৷রাজী হয়ে গেল ৷জামা কাপড় পরে বেড়িয়ে গেল নিজের চিরচেনা মানুষটার সাথে দেখা করতে ৷একটা রিকশায় করে নিমতলা চলে গেল প্রীতি ৷রিকশা থেকে নামতেই কিছুটা দূরে কালো শার্ট আর জিন্স পরা একটা যুবককে বাইক নিয়ে বসে থাকতে দেখলো ৷প্রীতি ভাড়া মিটিয়ে হাটা দিল ঐ দিকে ৷ প্রীতি নির্ঝরের পেছনে দাড়াতে নির্ঝর বলল
পেছনে কেন দাড়িয়ে আছেন প্রীতিলতা ৷সামনে আসুন ৷
প্রীতি চমকালো ৷তাকে না দেখেও কিভাবে নির্ঝর তার অস্তিত্ব টের পেল ৷ তবে কি এখনো নির্ঝরের মনের কোথাও না কোথাও সে আছে ৷প্রীতি নির্ঝরের সামনে যেয়ে দাড়ালো ৷কিন্তু একি এই লোকটার এই অবস্থা কেন ৷লোকটা কি কেদেঁছে ৷চোখমুখ এমন কেন হয়েছে তার ৷প্রীতি নির্ঝরে দিকে তাকিয়ে বলল
আপনার এই কি অবস্থা সূর্য সেন ৷
আমার এই অবস্থা আপনি করেছেন প্রীতিলতা ৷
আমি আবার কি করেছি ৷
আগে বলুন আপনি কেন আমার ফোন ধরেন নি ৷আপনি জানেন আমার কিছুই ভালো লাগছিল না আপনাকে ছাড়া ৷
কেন ভালো লাগে নি ৷
আমি জানি কিছু ৷শুধু জানি আপনি আমার সাথে রোজ কথা বলবেন ৷তাতে যাই হোক ৷আমি এক প্রীতিলতাকে হারিয়েছি ৷আরেক প্রীতিলতাকে হারাতে পারবো না আমি ৷একজনকে হারিয়ে আমি মৃত লাশ হয়ে গেছি ৷আপনার মতো বন্ধু হারিয়ে আমি মরতে চাই না ৷
আমি বুঝি আপনার বন্ধু ৷
নির্ঝর মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালো ৷
প্রীতি হালকা হাসলো ৷তারপর হাত দিয়ে নির্ঝরে মাথার চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল
এর জন্য আপনি কাদঁবেন বাচ্চাদের মতো ৷কিছুটা থেমে প্রীতি বলল আমার একটা ইচ্ছে আছে পূরন করবেন ৷
একবার বলুন শুধু ৷
আপনি বিয়েতে আমার পছন্দ মতো পোশাক পড়বেন ৷সাবরিনাকেও আমি নিজের হাতে সাজাতে চাই ৷আমার এই আশাটা পূরন করবেন প্লিজ ৷
আপনাকে আমার খুব কাছের মনে হয় প্রীতিলতা ৷আর কাছের মানুষের ইচ্ছে অপূর্ন রাখতে নেই ৷আপনার যেমন ইচ্ছে ৷
সাবরিনা আপনাকে অনেক ভালোবাসে তাই না নির্ঝর ৷
হুমম খুব ৷
আপনি অনেক সুখী হবেন ৷এতটাই সুখী হবেন যে নিজের অতীতটাও মনে থাকবে না ৷
নির্ঝর আর কিছু বললো না ৷আকাশের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
চলুন আপনাকে বাড়িতে পৌছে দেই ৷
মাত্রই তো আসলাম ৷
আপনাকে কেন জানিনা দেখতে ইচ্ছ করে ছিল খুব ৷তাই আসতে বলা ৷আর হ্যা পরশু সাবরিনার সাথে আমার আংটি বদল ৷তাই কাল শপিং করতে হবে ৷আপনি কাল আমার সাথে থাকবেন ৷
প্রীতি মাথা নেড়ে সায় জানালো ৷কিন্তু আর কিছু বললো না ৷
নির্ঝর বাইকে উঠে প্রীতিকে বলল
আপনিও আমার পিছনে বসে পড়ুন ৷
আমার বাইকে উঠতে ভয় করে অনেক ৷প্রীতি নির্ঝরের একটু কাছে যেতে ছোট একটা মিথ্যে কথা বলে দিল ৷
নির্ঝর মুচকি হেসে বলল একবার বসুন তারপর আর ভয় লাগবে না ৷
প্রীতি নির্ঝরের পেছনে বসতেই নির্ঝর বলল
এবার আমাকে ঝক্ত করে ধরুন ৷তারপর কাধেঁ মাথা রেখে চোখবন্ধ করে রাখুন ৷দেখবেন আর ভয় করছে না
চলবে