প্রীতিলতা আসবে বলে ৪ পর্ব-০১

0
1070

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন:৪
পার্ট:১

পুলিশ লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত করছে প্রীতিলতাকে ৷ মহিলা পুলিশ প্রীতির চুল খামচেঁ ধরে বলল একের পর এক খুন করেও এত স্বাভাবিক কিভাবে আছিস তুই ৷তোকে আজ এমন মারবো যে খুন করার চিন্তাও আর করতে পারবি না ৷ হাত পা কেটে রক্ত বের হওয়া শুরু করেছে প্রীতির ৷কিন্তু প্রীতিলতা একদম চুপ ৷একটা কথাও বলছে না ৷ মহিলা পুলিশটা এক সময় ক্লান্ত হয়ে গেল প্রীতিকে মারতে মারতে ৷তারপর হাতের লাঠিটা ফেলে দিয়ে বাইরে চলে গেল ৷একটু পর শান্ত ভেতরে ঢুকলো ৷প্রীতি এখনো চেয়ারে বাধাঁ ৷হাত পা কেটেঁ রক্ত পড়ছে ৷ ঠোটঁ ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে ৷কিন্তু প্রীতির হুশ নেই ৷তার চোখে না আছে পানি ৷আর আছে তার কোনো অনুভূতি ৷অতি কষ্টে একটা মানুষের যা হয় প্রীতিলতারও তাই হয়েছে ৷শান্ত একটা চেয়ার টেনে প্রীতির সামনে বসলো ৷তারপর বলল

কেন শিকার করছেন না নিজের অপরাধের কথা ৷ কাল আপনাকে কোর্টে তোলা হবে ৷সেখানেই আপনার বিচার হবে ৷ সবাই আপনার ফাসিঁ চাইছে ৷যেখানে মানুষ একটা খুন করে নিস্তার পায় না ৷সেখানে আপনি আটান্ন টা খুনের কথা বলেছেন ৷এই কথা যদি একবার মিডিয়াতে প্রকাশ পায় তাহলে কি হবে জানেন ৷

প্রীতি তবুও একটা কথা বলল না ৷শুধু চুপ করেই রইলো ৷

শান্ত দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বেড়িয়ে গেল ৷

দ্বীপ চৌধুরীর লাশ পোস্টমর্ডামে নেওয়া হয়েছে ৷চৌধুরী বাড়ীতে কান্নার রোল পড়েছে ৷দ্বীপ চৌধুরীর কাটা মাথার ভিডিও ফুটেজ সোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে ৷সবাই ছিঃ ছিঃ করছে ৷সবাই এই খুনীর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী করছে ৷

পরের দিন ৷প্রীতিলতাকে আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে ৷কিন্তু হাজারো মানুষের আনাগোনা ৷সবাই সিরিয়াল কিলার প্রীতিলতাকে দেখতে এসেছে ৷ প্রীতির হাতে হ্যান্ডকাফ ৷প্রীতিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন তার গায়ে জুতো ছুড়ে মেরেছে ৷ প্রীতি মাথা নিচু করে সবটা সয়ে গেল ৷একবার চোখ তুলে তাকালো না ৷

আদালতের কাঠগড়ায় প্রীতি দাড়িয়ে আছে ৷তার হয়ে লড়ার মতো কোনো উকিল নেই এখানে ৷উকিল থাকবে কিভাবে তার তো কোনো আপনজনই নেই ৷আদালতের কার্যক্রম শুরু হলো ৷একটু দুরেই আবেশ ,নিরুপমা আর তাদের ছেলে মেয়ে বসে আছে ৷প্রীতি তাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল ৷

তার বিরুদ্ধে থাকা ছবি আর ভিডিও ফুটেজ বিচারকের সামনে পেশ করা হলো ৷তারপর উকিল বলল

মহামান্য আদালত এ হচ্ছে সেই খুনী যে একের পর এক বিনাদোষে নিরপধাধ মানুষকে খুন করে গেছে ৷যার শিকার হয়েছেন সমাজের এবং দেশের রত্নরা ৷নিজ স্বার্থ হাসিলে এমন জঘন্য ভাবে খুন করতে দুইবার ভাবেন নি ৷ এর তো ফাসিঁ হওয়া উচিত ৷

তারপর অপর পাশের কাঠগড়ায় আনা হলো আবেশের ছোট ছোট ছেলে মেয়ে দুটো কে ৷ উকিল তাদের প্রীতিলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেই মেয়েটা বলল

এইটা তো পচাঁ আন্টি ৷আমাদের অনেক দিন তার কাছে রেখে দিয়ে ছিল ৷ তারপর ছেলেটা বলল আন্টি সকালে যেত আল লাতে আততো ৷ আমাদেল খালি বকা দিত ৷

উকিল বাচ্চা দুটোকে পাঠিয়ে দিল ৷তারপর বিচারককে বলল মহামান্য আদালত সামনে থাকা এই অপদার্থ নারী দুটো বাচ্চাকেও ছাড় দেয় নি ৷তাদের উপরেও অত্যাচার করেছে ৷শুধু তাই হয় পুলিশ ডিপার্টমেন্টে থেকে তাদের দিনের পর দিন ঠকিয়েছে ৷

বিচারক এবার প্রীতির দিকে তাকিয়ে বললেন

তোমার হয়ে কোনো উকিল আসতে চাইছে না ৷তা হয়তো জানো তুমি ৷

প্রীতি মাথা নত করে বলল জ্বী জানি ৷

ওকে ৷এবার তোমার পুরো নাম বলো ৷আর তোমার পরিচয় বলো ৷

পুরো নাম প্রীতিলতা চৌধুরী ৷বাবার নাম আয়ান চৌধুরী ৷মায়ের না চারুলতা চৌধুরী ৷প্রীতি বলল ৷

প্রীতির কথা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে গেছে ৷আবেশ চিৎকার করে বলল

এই খুনীটা আমার বোন হতেই পারে না ৷আর আমার বোন চৌদ্দ বছর আগে মারা গেছে ৷নিরুপমা নিজের স্বামীকে শান্ত করলেন ৷আবেশ প্রীতিলতার দিকে তাকিয়ে রাগে কাপঁছে ৷

বিচারক প্রীতিলতাকে বলল এত গুলো খুন ,গুম ,কিডন্যাপ কেন করেছো ৷

আমি আমার দোষ কবুল করবো ৷কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে ৷

উকিল কিছু বলতে যাবে ৷কিন্তু বিচারক তাকে থামিয়ে বলল

বলো তোমার কি শর্ত আছে ৷

আমি চাই আমার আর আবেশ চৌধুরীর ডিএনএ টেস্ট হোক ৷তাহলে আমি আসল প্রীতিলতা কিনা তা সিওর হয়ে যাবেন ৷আর দিহান ও তার মৃত বাবার ডিএনএ টেস্ট করানো হোক ৷ আর আমি যেই রুমে থাকতাম ৷আমার সেই রুমের বালিশের নিচে একটা ডায়রী আছে ৷আমি চাই ও ডায়রীর প্রতিটা কথা জনগনের সামনে তুলে ধরা হোক ৷আর এগুলো করার পর যেই দিন আমার জবান বন্দি নেবেন ৷ঐ দিন যেন এখানে সকল সাংবাদিক উপস্থিত থাকে ৷আমি ক্যামেরার সামনে নিজের দোষ কবুল করবো ৷এছাড়া আমি কিছু কবুল করবো না ৷

ঠিক আছে তোমার কথা মতো সব করা হবে ৷বিচারক বললেন ৷

আর আজকের মতো আদালতের কার্যক্রম বন্ধ করে দিল ৷তিন দিন পরে আবারো বিচার সভা বসবে ৷

প্রীতিকে নিয়ে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় আবেশ প্রীতির সামনে এসে দাড়ালো ৷পুলিশের কাছে এক মিনিট সময় নিয়ে বলল

তুই যদি আমার বোনও হোস ৷ তাও তোকে আমি দুনিয়ার সব থেকে বেশি ঘৃনা করি ৷তোর ফাসিঁ হওয়ার পরে ৷তোর লাশটাও আমি নেব না মনে রাখিস ৷তোর মতো একটা হিংস্র জানোয়ারকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে যাব না আমি ৷

প্রীতি কোনো কথা বলল না ৷শুধু মাথা নিচু করে রইলো ৷কিন্তু তার চোখ থেকে এক ফোটাঁ পানি গড়িয়ে পড়লো মাটিতে ৷পুলিশ প্রীতিকে টানতে টানতে নিয়ে গেল ৷

অন্ধকার কারাগারে বসে আছে প্রীতিলতা ৷পড়নের কাপড়ে ধুলা জমেছে ৷মিহানের গায়ের রক্ত এখনো তার শার্টে লেগে আছে ৷কেন যেন প্রীতির মনে হলো কেউ তার পাশে বসে আছে ৷প্রীতি পাশে তাকালো ৷প্রীতি পাশে তাকিয়ে রইলো ৷ মায়া ভরা চোখে তার বাবা তার দিকে তাকিয়ে আছে ৷বাবাকে সে দেখতে পায় ৷ এই লোকটার জন্যই তো তার প্রতিশোধ নেওয়া ৷কত ভালোবাসতো তাকে এই লোকটা ৷ তাকিয়ে রইলো প্রীতি ঐ দিকে ৷কিন্তু হঠাৎ করেই কারো ধাক্কায় প্রীতির হুশ হলো ৷পাশে তাকিয়ে দেখলো একজন মহিলা কনস্টেবল ৷কনস্টেবল মহিলা প্রীতিকে বলল

তোর সাথে দেখা করতে এসেছে একটা ছেলে ৷চল দেখা করবি ৷পাচঁ মিনিটের বেশি কথা বলতে পারবি না চল ৷

এইতো সামনেই নির্ঝর দাড়িয়ে আছে ৷কিন্তু তাদের মাঝে এক বিশাল দেয়াল ৷প্রীতি নির্ঝরে দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল ৷

নির্ঝর প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল

কিভাবে পারলি এমনটা করতে ৷এই তোকে কি আমি তোর রূপ দেখে ভালোবেসে ছিলাম ৷নাকি তোর টাকা দেখে ভালোবেসে ছিলাম ৷তাহলে তুই কেন আমাকে ঠকালি ৷ দিনের পর দিন অভিনয় করে গেলি ৷জানিস তো তুই ঠিকই বলেছিস ৷আমি সাবরিনার সাথে খুব ভালো থাকবো ৷আজকের পর তোর মতো একটা খুনীর অধ্যায় শেষ ৷আর হ্যা তোর মৃত্যুর জন্য শুভ কামনা ৷উপর ওয়ালার কাছে দোয়া করবো ৷যেন তোর মরা মুখটাও আর না দেখা লাগে ৷আজকের পর শুধু ঘৃনাই তোর জন্য বরাদ্দ ৷বাই

নির্ঝর চলে গেল ৷আর প্রীতিলতা নিজের জায়গায় দাড়িয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় লুটিয়ে পড়লো মাটিতে ৷

চলবে…..