প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন :৪
পার্ট :১০
প্রীতিলতা তার সাথের লোকদের নিয়ে বাইরে এলো ৷চারিদিকে অনেকটা অন্ধকার ৷তারা সামনের দিকে এগিয়ে গেল ৷প্রীতি শান্তকে এক দিকে পাঠিয়ে দিল ৷বাকি দুইজনকে এক দিকে ৷এবং নিজে অন্য দিকে চলে গেল ৷কেন যেন প্রীতিলতার জায়গাটা বেশ অদ্ভুত লাগছে ৷কেন যেন মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে তাকে এখানে নিয়ে এসেছে ৷যেখানে শত শত নারী বন্দি আছে ৷সেখানে এতটা জনমানবহীন হওয়ার কথা না ৷প্রীতিলতা সামনের দিকে এগিয়ে গেল ধীর পায়ে ৷দুইতলার ভাঙ্গা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল সে ৷ এদিকে বাকি তিনজনও প্রীতির সাথে যোগাযোগ করছে না ৷তিনতলার একদম শেষের দিকে প্রীতিলতা গিয়ে থামলো ৷ কোনার একটা ঘরের দিকে তার চোখ আটকে গেল ৷কেন যেন মনে হলো এখানে কিছু আছে ৷দরজাটা তালা দেওয়া ৷প্রীতিলতা দরজায় কান পেতে দিল ৷একটা চাপাঁ কান্নার আওয়াজ যেন তার কানে লাগলো ৷মনে হলো কিছু মানুষ নিঃশব্দে কাদঁছে ৷বদ্ধ দরজার ভেতরের অবস্থা দেখতে তার মন মরিয়া হয়ে উঠলো ৷প্রীতি তার কাধে থাকা ছোট ব্যাগের ভেতর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস বের করলো ৷তারপর তালা খোলার ব্যবস্থা করলো ৷ প্রীতিলতা তার দক্ষ হাতে তালা খুলে ফেললো চাবি ছাড়াই ৷ তারপর ছিটকিনি খুলে ঘরে প্রবেশ করলো ৷কিন্তু ঘরে ঢুকে যা দেখলো ৷তাতে ওর চোখ কপালে উঠে গেল ৷
তার সামনে প্রায় দুইশ মেয়ে হাত মুখ বাধাঁ অবস্থায় পরে আছে ৷ তাদের অবস্থা শোচনীয় ৷হালকা লাইটের আলোতে তাদের শরীরের ঘা গুলো স্পষ্ট ৷তারা কিছু একটা বলতে চাইছে ৷কিন্তু বলতে পারছে না ৷ কিন্তু অনেকের চোখ দেখে প্রীতিলতা যা বুঝলো ৷মেয়ে গুলো ওকে চলে যেতে বলছে ৷কিন্তু কেন ৷প্রীতি লতা একটা মেয়ের কাছে এগিয়ে গেল ৷মেয়েটার মুখ অনেক শক্ত করে বাধাঁ ৷প্রীতি মেয়েটার মুখ খুলে দিল ৷মুখ খুলে দিতেই মেয়েটা বলল
আপু আপনি চলে যান এখান থেকে ৷ওরা আপনাকে মেরে ফেলবে ৷ওদের প্লান অনুযায়ী আপনাকে ফাদেঁ ফেলেছে ৷ওরা সবাইকে মেরে ফেলবে ৷কাউকে ছাড়বে না ৷আর আমাদের কিডন্যাপ কারী আর কেউ না ৷আমাদের যে কিডন্যাপ করেছে তার না….
মেয়েটা আর কিছু বলতে পারলো না ৷তার আগেই কেউ একজন পেছন থেকে প্রীতিলতার মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করলো ৷প্রীতিলতা কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল ৷মুখ থেকে একটা কথাও বের হলো না ৷সামনে থাকা মেয়েটা ভয়ে তাকিয়ে রইলো প্রীতির দিকে ৷ প্রীতির চোখের সামনে এক এক করে সব ঝাপসা হয়ে এলো ৷আস্তে আস্তে প্রীতিলতা ধুলোয় ভরা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ৷
একটা চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাধাঁ অবস্থায় পরে আছে প্রীতিলতা ৷মাথা থেকে টপটপ করে রক্ত পড়ছে ৷হালকা আলোয় প্রীতিলতার অবয়ব স্পষ্ট ৷ একটা গরম পরিবেশে প্রীতিলতা ঘামছে ৷ তীব্র মাথা ব্যথা নিয়ে প্রীতি আস্তে আস্তে চোখ তুলে তাকালো ৷সব কিছু ঝাপসা লাগছে ৷ঘাড় তুলে তাকাতে বেশ কষ্ট হচ্ছে ৷চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে ৷হালকা আলোয় দেখলো সামনে কেউ একজন বসে আছে তার ৷প্রীতি তাকে দেখার জন্য সম্পূর্ন চোখ খোলার চেষ্টা করলো ৷সামনে বসা লোকটার মুখ ঢাকা ৷তাই চেনা যাচ্ছে না ৷প্রীতি চোখ খুলতেই লোকটা বলল
কি রে এতক্ষন পরে চোখ খুললি ৷এতটুকু লাঠির আঘার সহ্য করতে পারলি না ৷আবার এসেছিস শত্রু শেষ করতে ৷তবে বলতে হবে তোর বুকের পাটা আছে ৷আয়ান চৌধুরী আর যাই করুক ৷তোর মতো একটা বাঘিনী জন্ম দিয়েছে ৷ আচ্ছা বলতো এত সাহস তুই কোথা থেকে পাস ৷ এখন যদি তোকে মেরে পুতে দেই ৷তাহলে কেউ কিছু করতে পারবে না ৷এই তুই জানিস তোকে তাড়াতাড়ি ফাসিঁতে ঝুলাতে কত কষ্ট করেছি ৷কিন্তু না সেই তুই বের হলি ৷তাই এবার তোকে নিজের হাতেই টুকরো টুকরো করবো ৷
প্রীতিলতা সামনের লোকটার কথা শুনতে লাগলো ৷লোকটার কন্ঠ তার বেশ চেনা ৷কিন্তু এই ব্যক্তি তার লক্ষ্য নয় ৷আর এই ব্যক্তির জন্য সে এখানে আসে নি ৷তাহলে এই লোকটা কেন তাকে মারতে চাইছে ৷প্রীতিকে চুপ থাকতে দেখে সামনের লোকটা আবারো বলল
কিরে চুপ করে আছিস কেন ৷কি ভেবেছিস তোর পুলিশের লোকেরা তোকে বাচাঁবে ৷তাহলে শোন ওরা এখন আমার হাতে বন্দি ৷তোকে আমি তোর জালেই ফাসিঁয়েছি ৷ তুই এখানে আসিস নি ৷আমি নিয়ে এসেছি তোকে ৷আজ তোকে এমন ভাবে মারবো যে মৃত্যুও ভয় পেয়ে যাবে ৷
প্রীতিলতা সামনের লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল
একদিন না একদিন সবাইকেই মরতে হবে ৷আমি না হয় আগেই মরলাম ৷ আর তোর কি মনে হয় প্রীতিলতা মৃত্যুকে ভয় পায় ৷তুই আমাকে মেরে ফেলতে পারিস ৷কিন্তু মেয়ে গুলোকে ছেড়ে দে ৷ওদের ফিরে যাওয়াটা জরুরী ৷মেয়ে গুলোর জীবন নষ্ট করিস না ৷আল্লাহ সহ্য করবে না তাহলে ৷
সামনের মানুষটা প্রীতির গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল ৷তারপর বলল
একটাও কথা বলবি না তুই ৷তোর সাথে আসা অফিসারদের তো আটকে ফেলেছি ৷কি ভেবেছিলি মেয়েদের নিয়ে যাবি ৷আজ তোরা সবাই এখানে মরবি ৷তোদের মরার সব ব্যবস্থা আমি করে ফেলেছি ৷তুই আমার কিছু করতে পারবি না প্রীতিলতা ৷ সামনে থাকা লোকটা উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে প্রীতির চুল শক্ত করে ধরে বলল
সমাজের চোখে এতদিন ভালো মানুষের মুখোশ পরে ছিলাম ৷তোর জন্য আমার নারী পাচারের ব্যবসা শেষের দিকে ৷তুই যে কিছু দিন আগে চল্লিশটা মেয়েকে গোপনে বর্ডার থেকে বাচিঁয়ে এনেছিস ৷তা আমি ভালো করেই জেনে গেছি ৷ কিন্তু আমি এতদিন শিওর ছিলাম না ৷ পাগলের মতো খুজেছি তাকে ৷কিন্তু তুই আমার হাতের নাগালে থাকার পরেও বুঝতে পারি নি ৷বল মেয়ে গুলোকে কোথায় রেখেছিস ৷মেয়ে গুলোকে আমার চাই ৷
প্রীতিলতা বাকাঁ হাসলো ৷তারপর বলল
ওদের যদি আপনার হাতে তুলেই দিতাম ৷তাহলে ওদের বাচিঁয়ে গোপনে রাখতাম না ৷কারন আমি জানতাম ওদের আপনি ছাড়বেন না ৷আর ওরা ঐ দিনই আমার কাছে আপনার পরিচয় ফাসঁ করে দিয়েছে এসিপি প্রদীপ ৷
সামনের ব্যক্তিটা হকচকিয়ে উঠলো তার নাম শুনে ৷তারমানে প্রীতিলতা তার ব্যাপারে জানে ৷নাকি সে ভুল শুনলো ৷ নিজেকে স্থির করে প্রদীপ বলল
এই তুই আমাকে কি সব নামে ডাকছিস ৷ মাথা ঠিক আছে তোর ৷
ভয় পেলেন স্যার ৷ ভয় পেলে আপনাকে বড্ড সুন্দর লাগে ৷
তারমানে তুই আমার ব্যাপারে সব জানতি ৷কিন্তু কিভাবে ৷
ইয়েস জানতাম ৷ কিছুদিন আগে আমি খবর পাই কিছু মেয়েকে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে ৷তারপর পরিকল্পনা অনুযায়ী যেই গাড়ীতে ট্রাকে মেয়ে গুলো ছিল ৷ঐ ট্রাকটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেই ৷আপনার দুইজন লোক ছিল ঐ ট্রাকে ৷গাড়ী ভর্তি চালের কথা বলে মেয়ে গুলো নিয়ে যাচ্ছিলো ভারতের মুম্বাইতে ৷কিন্তু মাঝপথে আমি গাড়ীর সামনে চলে আসি ৷আর বলি আমাকে কিছু লোক তাড়া করেছে ৷আপনার লোক দুটো বড্ড নারী লোভী স্যার ৷আমার চেহারা দেখে নিজেদের লোভ সামলাতে পারে নি ৷গাড়ী থেকে নেমে পরে দুইজন আমাকে ভোগ করতে ৷আর সেই সুযোগে আমিও আমার কাজটা করে দেই ৷বিষ দিয়ে মেরে ফেলি ওদের ৷ তারপর মেয়ে গুলোকে সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাই ৷ঐ মেয়ে গুলোর মধ্যে একজন আপনার ব্যাপারে জানতো ৷সে আপনার ব্যাপারে আমাকে সব বলে ৷ আর আমি আপনাকে তেল দিয়ে চলতে থাকি ৷এমন একটা ভাব ধরি যেন আমি কিছুই জানি না ৷
মেয়ে গুলোকে কোথায় রেখেছিস ৷
ওরা এখন ওদের মা বাবার কাছে আছে ৷যাদের মধ্যে এতদিন কেউ ছিল মৃত ৷কেউ আবার বয়ফেন্ডের সাথে সংসার করা মেয়ে ৷যাদের নামে মিথ্যা রটিয়ে আপনি বিক্রি করতে চেয়ে ছিলেন ৷আর আপনার ব্যাপারে শুধু আমি এতদিন জানতাম স্যার ৷কিন্তু এখন আপনার ব্যাপারে পুরো দুনিয়া জানে ৷
মানে কি বলতে চাস তুই ৷
একবার সোসাল মিডিয়া থেকে ঘুড়ে আসলেই বুঝবেন স্যার ৷
এসিপি প্রদীপ নিজের ফোন বের করলেন কৌতুহল নিয়ে ৷কিন্তু তারপর যা দেখলেন এতে তার রূহ কেপেঁ উঠলো ৷তার আর প্রীতিলতার কথা লাইভ দেখাচ্ছে ৷লাখ লাখ মানুষ তা দেখছে ৷কিন্তু এটা কি করে সম্ভব ৷
প্রীতিলতা হাসছে ৷অট্ট হাসি হাসতে হাসতে বলল
আপনার প্লান রাইট ছিল ৷কিন্তু ঐ যে আপনার বুদ্ধি আমার হাটুর নিচে স্যার ৷আমি এক দুই দিনে প্রীতিলতা হয়ে উঠি নি ৷বছরের পর বছর কঠোর শ্রম দিয়ে প্রীতিলতা হয়েছি ৷আপনি হয়তো ভুলে গিয়ে ছিলেন আমি প্রীতিলতা ৷আমি আয়ান চৌধুরী নই ৷যদিও ব্যক্তিগত ভাবে আপনার সাথে আমার শত্রুতা ছিল না ৷কিন্তু সময় আপনাকে আমার শত্রু বানিয়ে দিল ৷আর হ্যা যাকে আপনি আমার থেকে বাচাঁতে চান ৷ তাকেও আপনি বাচাঁতে পারবেন না ৷ আমি বাচঁতে দেব না ৷
এসিপি প্রদীপ প্রীতির গলা চেপেঁ ধরলো ৷তারপর বলল
এই তুই কি করছিস ৷কিভাবে এটা হতে পারে ৷তার মানে এতক্ষনে সবাই আমার আসল পরিচয় জেনে গেছে ৷এত দিন যেই যেই অফিসার এই কেসটার ভার নিয়েছে ৷সবাইকে আমি বুদ্ধিতে হারিয়েছি ৷তারা বাধ্য হয়েছে কেসটা ছেড়ে দিতে ৷আমি ভেবে ছিলাম তুই একটা ৷মেয়ে হয়ে আর কি বা করবি ৷তোকে একটা মেয়ে ভেবেই আমি ভুলটা করে ছিলাম ৷এর জন্যই তুই এতদিন তোর কাছে থাকা তথ্য গুলো আমার কাছে দিস নি তাই না ৷
ইয়েস ৷যদি আপনি একজন ভালো মানুষ হতেন ৷তাহলে দুইবার ভাবতাম না আমি ৷কিন্তু একটা শয়তানকে এগুলো দিয়ে শত শত মা বাবাকে আমি ঠকাতে চাই নি ৷আর কি ভাবছেন কিভাবে এখন লাইভে সবাই আপনাকে দেখছে ৷কি ভেবে ছিলেন আমাকে ৷তাহলে শুনুন কিভাবে দেখছে আপনাকে ৷যদি একবার ঠিক করে আমার শার্টের বোতামে তাকাতেন ৷তাহলে আপনাকে এত কষ্ট করে বুঝতে হতো না ৷
প্রীতিলতার কথা অনুযায়ী প্রদীপ ওর বোতামে তাকাতেই আসল রহস্য বুঝে গেল ৷ছোট ক্যামেরাটা ভালো করে না তাকালে বোঝাই যাবে না ৷
চলবে….