প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন:৪
পার্ট :৪
রাস্তার পাশে পরে রইলো প্রীতিলতা ৷পাশ থেকে একটা সাদা গাড়ী যাচ্ছে ৷হঠাৎ রাস্তার মাঝে কাউকে পরে থাকতে দেখে ড্রাইভার গাড়ী থামায় ৷গাড়ীতে ছিল এসিপি শরীফ ও তার অন্তসত্ত্বা স্ত্রী ৷ শরীফের স্ত্রীর বাচ্চা হবে ৷তাই তারা হাসপাতালে যাচ্ছে ৷গাড়ী থামতেই এসিপি শরীফ বললেন
গাড়ী কেন থামালে ড্রাইভার ৷
স্যার রাস্তায় কেউ পরে আছে ৷ড্রাইভার বলল ৷
এসিপি শরীফ গাড়ী থেকে নেমে এলো ৷রাস্তায় একটা মেয়ে পরে আছে ৷শরীফ মেয়েটার কাছে দৌড়ে গেলেন ৷মেয়েটাকে নিজের দিকে ফেরাতেই আতঁকে উঠলেন ৷মেয়েটার পুরো মুখ রক্তে লাল হয়ে আছে ৷শরীরে ক্ষতের দাগ গুলো কালো হয়ে গেছে ৷এসিপি ছোট প্রীতিলতাকে গাড়ীতে তুলে নেয় ৷অতঃপর ড্রাইভারকে জোড়ে গাড়ী চালাতে বলে ৷
এসিপি নিজের স্ত্রী আর রাস্তায় পাওয়া ছোট মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে ৷ডাক্তার প্রীতিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় ৷কিছুক্ষন পরে শরীফের স্ত্রী একটা পুত্র সন্তান জন্ম দেন ৷কিন্তু প্রীতিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া ডক্টর যা বলেন ৷এতে শরীফের চোখ নিজের অজান্তেই টলমল করে ওঠে ৷
ডাক্তার জানায় প্রীতির মাথার মস্তিষ্কে প্রচন্ড জোড়ে আঘাতের কারনে কিছু নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ছোট মেয়েটা কোমায় চলে গেছে ৷কখনো জ্ঞান আসতেও পারে আবার নাও আসতে পারে ৷কিন্তু জ্ঞান আসতেই মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে ৷ এবং বয়সের সাথে সাথে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে ৷যার ফলে মৃত্যুও হতে পারে ৷
সেই দিনের পর সাত মাস পার হয়ে গেছে ৷ এসিপি শরীফের সিলেটে বদলি হয় ৷তিনি প্রীতির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন সিলেটে ৷ কোনো কমতি রাখেন নি তিনি ৷একদিন হঠাৎ করেই শরীফের মোবাইলে একটা কল আসে ৷কল টা পেয়ে শরীফ নিজের বাসায় যত দ্রুত সম্ভব চলে আসে ৷প্রীতিলতার জ্ঞান ফিরেছে ৷ বাড়ীতে ডাক্তার এসেছে ৷প্রীতির মুখে অক্সিজেন মাস্ক ৷প্রীতি কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্ত পারছে না ৷
দুই দিন পার হয়ে গেছে ৷সকালে শরীফ নাস্তা করছিল ৷হঠাৎ উপর থেকে নার্সের চিৎকারে শরীফ দৌড়ে উপরে গেলেন ৷ জ্ঞান ফিরে আসা ছোট মেয়েটা নার্সকে কামড়ে দিচ্ছে ৷ সে স্বাভাবিক নয় ৷সে যাকে পাচ্ছে মারছে ৷তার কাছে কেউ যাচ্ছে না ৷সে চিৎকার করে কিছু চাইছে ৷শরীফ অতি কষ্টে প্রীতির হাত আটকে ধরলেন ৷প্রীতি শরীফের হাত কামড়ে ধরলো ৷শরীফ প্রীতিকে ছেড়ে দিল ৷শরীফ ছাড়তেই প্রীতি পাশে থাকা ফুলদানি শরীফের মাথায় মেরে দিল ৷তারপর বলল
এই আমার ক্যামেরা কোথায় ৷আমার চেইন কোথায় ৷ঐ গুলো না পেলে তোকে আমি খুন করে ফেলবো ৷কাউকে ছাড়বো না আমি ৷ আমার মায়ের জিনিস দে বলছি ৷শরীফ নিজের মাথা চেপে ধরলো ৷ আর প্রীতিলতা শরীফকে হাত দিয়ে মারতে লাগলো ৷হঠাৎ নিজের সামনে চিরচেনা চেইন আর ক্যামেরা পেতেই প্রীতি খপ করে ধরলো ৷শরীফের বুক থেকে উঠে গেল ৷তারপর খাটের একপাশে যেয়ে একা একা হাসঁতে লাগলো ৷কিছুক্ষন পর আবার কাদঁতে লাগলো ৷কিন্তু এই চেইন আর ক্যামেরার জন্য জ্ঞান ফেরার পর এত ভয়ংকর আচরন করার মানে কেউ বুঝতে পারলো না ৷ শরীফের স্ত্রী আলমারিতে রেখে দিয়ে ছিল ৷ মেয়েটার অস্বাভাবিক আচরন দেখেই দৌড়ে নিয়ে আসেন ৷
এসিপি শরীফ ফোন বের করে কাউকে কল করলেন ৷তারপর ফোনটা রেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেল ৷
রাত আট টা বাজে ৷একটা বাচ্চার আওয়াজ কানে আসতেই প্রীতি ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল ৷ঘরের দরজাটা খোলাই ছিল ৷সারাদিন কেউ ভয়ে তার কাছে যায় নি ৷ শরীফের মাথা ব্যান্ডেজ করা হয়েছে ৷সে নিজের ঘরে শুয়ে আছে ৷তার স্ত্রী স্বামীর জন্য খাবার বানাতে গেছে ৷ প্রীতি একটা ঘরে ঢুকলো ৷একটু দূরেই একটা দোলনা ৷সেখান থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে ৷ প্রীতি সেখানে চলে গেল ৷ পাশের বিছানায় শরীফ শুয়ে আছে ৷ ৷প্রীতি দোলনার কাছে গেল ৷দেখতে পেল একটা বাচ্চা শুয়ে আছে ৷প্রীতি বাচ্চাটা কোলে নিয়ে নিল ৷বাচ্চাটা কোলে নিতেই চুপ হয়ে গেল ৷প্রীতি বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে রইলো ৷তারপর বলল
তুই কি করে বেচেঁ গেলি ভাই ৷ওরা তো তোকে মেরে ফেললো ৷তবে যাই হোক তুই আমার কাছে থাকবি ৷আমি কারো কাছে তোকে দেব না ৷
হঠাৎ কারো চিৎকার কানে আসতেই প্রীতি ও দিকে তাকালো ৷একটা মহিলা দাড়িয়ে আছে ৷প্রীতি ঐ দিকে তাকিয়ে বলল
একদম চুপ ৷আমার ভাই ভয় পাবে ৷একদম চুপ ৷
প্রীতি বাচ্চাটা নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল ৷শরীফ ইশারায় স্ত্রীকে চুপ থাকতে বললো ৷ ৷ প্রীতি বাচ্চাটাকে খুব আদর করতে লাগলো ৷বাচ্চাটাও তার সাথে খেলতে লাগলো ৷শরীফ আর তার স্ত্রী দূর থেকে শুধু খেয়াল রাখলো ৷খেলতে খেলতে একটা সময় প্রীতি ঘুমিয়ে গেল ৷শরীফ নিজের বাচ্চাটা অতি সাবধানে তুলে নিল ৷
সকালে প্রীতির ঘুম ভাঙ্গলো মানুষের শব্দে ৷কেন যেন মনে হলো কেউ তার হাত বেধেঁ ফেলছে ৷প্রীতি চোখ খুলতেই দেখলো তার হাতে পায়ে কয়েকটা লোক শিকল পড়িয়ে দিচ্ছে ৷প্রীতি চিৎকার করে উঠলো ৷
ছাড় আমাকে ৷ছেড়ে দে আমাকে ৷আমি তোদের সাথে যাব না ৷এগুলো কেন পড়াচ্ছিস আমাকে ৷
লোক গুলো ছোট প্রীতিকে টেনে নিয়ে গেল ৷এসিপি শরীফ মূলতো গতকাল ডাক্তারের কাছেই কল করে ছিল ৷সেই আজ লোক পাঠিয়েছে ৷প্রীতিকে একটা গাড়ীতে তোলা হলো ৷গতকাল রাতে হাতে থাকা চেইন আর গলায় ঝুলানো ক্যামেরাটা রয়েই গেল তার সাথে ৷
একটা মেন্টাল হাসপাতালের এক কোনায় অন্ধকারে বসে আছে প্রীতি ৷একা একা কিছু একটা বলছে ৷আজকাল তার নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে ৷একা একা কথা বলে ৷একা কাদেঁ আবার একাই হাসে ৷বিরবির করে একা একা কিছু একটা বলে ৷ সারাদিন একা একা কথা বলে ৷এসিপি শরীফ এখনো প্রীতির চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ কিন্তু দিনকে দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে ৷অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না ৷ডাক্তারের মতে সে কল্পনায় কথা বলে ৷মস্তিষ্কের সমস্যা জনিত কারনে এমন হচ্ছে ৷তবে মেয়েটার নাম প্রীতিলতা এটা ডাক্তার জানিয়েছে ৷
রাত গভীর ৷হঠাৎ চিৎকারের আওয়াজ কানে আসতেই প্রীতির ঘুম ভেঙ্গে গেল ৷প্রীতিলতা উঠে দাড়ালো ৷কোথাও কেউ কাউকে কষ্ট দিচ্ছে না তো তার মায়ের মতো ৷ হ্যা তার মা এই ভাবেই চিৎকার করে ছিল ৷প্রীতিলতা বাইরে বেড়িয়ে গেল ৷প্রীতিলতা একটা ঘরের কাছে এসে থেমে গেল ৷দরজা হালকা খুলতেই যা দেখলো ৷এতে হঠাৎ করেই তার মাথায় খুন চেপেঁ বসলো ৷প্রচন্ড রাগে হাত পা কাপঁতে লাগলো ৷একটা ছোট বেডের উপর একটা মেয়ে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় পরে আছে ৷দুইজন মিলে একটা মেয়ের সাথে জোর করছে ৷ লোক দুটোর হাতে কাচেঁ বোতলও আছে ৷তারা বোতলের ভেতর থাকা পানীয় খাচ্ছে আর জোড় করে শারিরীক সম্পর্ক করছে ৷প্রীতি পাশে কিছু ইঞ্জেকশন দেখতে পেল ৷ঐ ইঞ্জেকশন গুলো সে তার পাশের বেডে থাকা মেয়েটার শরীরে পুশ করতে দেখেছে ৷ ঐ টা দেওয়ার কিছুক্ষন পরেই মেয়েটা কেমন যেন হয়ে যায় ৷কাউকে চিনে না ৷তার একটু পরেই কিছু লোক আসে ৷আর ঐ মেয়েটাকে ধরে কাদেঁ ৷তারপর চলে যায় লোক গুলো ৷প্রীতিলতা নিজের হাতে ইঞ্জেকশন গুলো নিয়ে নেয় ৷তারপর ঐ ডাক্তার দুটোর পেছনে যেয়ে হঠাৎ তাদের গলায় ইঞ্জেকশন দুটো ঢুকিয়ে দেয় ৷তারা এতটাই মদ্যপ ছিল যে চিৎকার করতেও পারে নি ৷ প্রীতি পাশে থাকা ছুড়ি কাচিঁর ট্রে থেকে একটা ছুড়ি নিয়ে ডাক্তার দুটোর গলায় চালিয়ে দেয় ৷পাশে থাকা মেয়েটা কাদঁছে ৷ আর কি সব আবল তাবল বকছে ৷ কেউ এখনো আসে নি ৷প্রীতি বিছানার কাপড় দিয়ে ছুড়ি আর ইঞ্জেকশন দুটো মুছে নিল ৷তারপর মেয়েটাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল ৷আর ওরা পরে রইলো ঘরের ভেতরেই ৷
সকালে হইচই পরে গেল ৷হাসপাতালে ডাক্তার খুন হয়েছে ৷কে মেরেছে তাদের কেউ জানে না ৷পুলিশ এসেছে তদন্ত করতে ৷লাশ দুটো নিয়ে যাওয়া হলো ৷একটা মুখ হাসলো ৷তারপর বলল
রক্ত চাই আমার ৷আরো রক্ত চাই ৷
চলবে