প্রীতিলতা আসবে বলে ৪ পর্ব-০৮

0
1266

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :৪
পার্ট : ৮

প্রীতিলতা নিস্তেজ হয়ে ফ্লোরে পরে আছে ৷রিমান্ডে যেই ভাবে মারা হয়ে ছিল ৷তার ব্যাথা আস্তে আস্তে বাড়ছে ৷কোর্ট থেকে আসার পর থেকে শরীরটা ভালো লাগছে না ৷ মারের দাগ গুলো গাঢ় কালো হয়ে গেছে ৷অনেক জায়গায় ফুলেও গেছে ৷হালকা আলোয় জ্বলতে থাকা বাতিটার দিকে তাকিয় প্রীতী গাইতে লাগলো ৷

যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো ভালো থেকো
মনে রেখ এই…..

আর গাইতে পারলো না ৷ তার আগেই লকাপের তালা খুলে এসিপি প্রদীপ ভেতরে ডুকলো ৷প্রীতি ঐ দিকে তাকিয়ে বলল

কি ব্যাপার স্যার ৷গরিবের বাড়ীতে হাতির পারা নাকি ৷

আমি তোমার সাথে ফালতু কথা বলতে আসি নি ৷পানি ঘোলা করে এখন আমাদের বলছো সমস্যার সমাধান করতে ৷তোমার জন্য শত শত মেয়ের জীবন ঝুকিতে ৷তুমি এখনো কিভাবে ঠান্ডা মাথায় বসে আছো ৷মেয়েদের বাবা মা আন্দোলন শুরু করেছে ৷অলরেডি তিন জায়গার থানাতে ভাংচুর হয়েছে ৷

প্রীতিলতা উঠে দাড়ালো ৷হাত দিয়ে আস্তে করে নিজের শরীরের ময়লা ঝেড়ে ফেলে দিল ৷তারপর এসিপির কাছে এসে বলল

সিগারেট আছে স্যার ৷প্রীতির কথায় উপহাস ৷এত আঘাতের পরেও মেয়েটা এসিপির দিকে কিভাবে চোখে চোখ রেখে কথা বলছে ৷তা দেখে এসিপি অবাক ৷তার থেকেও বেশি অবাক একটা ফাসিঁ আসামী হয়ে সিগারেট চাইছে ৷এটাও সম্ভব ৷

এসিপি নিজের পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে প্রীতির হাতে দিল ৷প্রীতি সিগারেটে টান দিতে দিতে বলল

স্যার পানি আমি ঘোলা করি নি ৷কিন্তু ঘোলা করিয়েছি ৷আপনার কি মনে হয় স্যার প্রীতিলতা কাচাঁ খেলোয়ার ৷সো স্যাড স্যার ৷আপনাদের জন্য আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস করুন ৷প্রাতিলতা তারপর উচ্চ শব্দে হাসতে লাগলো ৷

এসিপি প্রীতিকে ধমক দিয়ে বলল চুপ করো তুমি ৷ একদম বাজে কথা বলবে না ৷তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হই ৷এত সাহস কোথায় পাও তুমি ৷

প্রীতিলতা এসিপির দিকে আস্তে করে ঘুরলো ৷অতঃপর আস্তে আস্তে হাটতে হাটতে বলল

সত্যি তো এত সাহস আসলে আমি কিভাবে পাই ৷ হুমম এটা কিন্তু অনেক ভাবনার বিষয় ৷হঠাৎ করে কথা বলতে বলতে প্রীতি এসিপির সামনে তড়িৎ গতিতে চলে আসে ৷হঠাৎ এমন করে আসায় এসিপির ভয় পেয়ে যায় ৷প্রীতিলতা উপহাস ভরা কন্ঠে বলে ওঠে

কি স্যার ভয় পেলেন ৷ঠিক এই ভাবেই হঠাৎ করে আমার পরিবার শেষ হয়েছে ৷নিজের প্রান ভিক্ষা চেয়ে ছিলাম ৷কিন্তু ওরা দেয় নি ৷তাহলে আমি কিভাবে ওদের ছেড়ে দিব স্যার ৷এতটা মহান আমি নই ৷আর আপনারা যদি সঠিক ভাবে আমার মা বাবার হত্যার রহস্য খুজতেন ৷তাহলে আজ আমি খুনি হতাম না ৷আজ আমার একটা স্বাভাবিক জীবন থাকতো ৷যাই হোক আপনার কি মনে হয় স্যার ৷প্রীতিলতা স্বার্থহীন মানুষ ৷আমি প্রথম পঞ্চাশ টা খুন শুধু নিরপরাধ মানুষদের জন্য করেছি ৷নো স্যার ৷আমি এতটাও অবুঝ নই ৷একবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন স্যার ৷অন্যের সাথে হওয়া অন্যায়ের শাস্তি ৷আমি কেন দিতে গেলাম ৷আবার ভাবুন টাকা হ্যাক করলাম ৷কিন্তু অন্য মানুষের মাঝে কেন দিয়ে দিলাম ৷ভাবুন স্যার এবার ৷নিজের মাথাটা এবার খাটান একটু ৷প্রীতিলতা দুই হাত নিজের পকেটে ঢুকিয়ে দূরে গিয়ে দাড়ালো ৷ কিছুক্ষন যাওয়ার পর প্রীতি আবারো বলল

কি স্যার বুঝতে পারছেন না তো ৷ওকে আমি আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি ৷তবে শুনুন আপনি বলেছেন তিনটা থানায় ভাংচুর হয়েছে ৷কিন্তু স্যার কারা ভাংচুর করেছে তা কিন্তু আপনি বলেন নি ৷বলেছেন কি ৷এসিপি মাথা দুলিয়ে না বলল ৷তারপর প্রীতি আবারো বলল

একটা দেশের প্রধান শক্তি কি জানেন স্যার ৷একটা দেশের প্রধান শক্তি জনগন ৷আমি সেই জনগনকে কাজে লাগিয়েছি ৷বুঝতে পারছেন না তো ৷ওকে আরেকটু পরিষ্কার করি ৷আমি প্রিয়জন হারানোর কষ্ট মানুষের চোখে দেখে ছিলাম ৷আমি ন্যায়ের জন্য দৌড়াতে থাকা মানুষ দেখে ছিলাম ৷হঠাৎ আমার মাথায় একটা প্লান এলো ৷আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি অপরাধীদের খুন করতে শুরু করি ৷ আর অসহায় মানুষ গুলোকে তাদের ন্যায় দিতে লাগলাম ৷কিন্তু তা গোপনে ৷অন্য দিকে হ্যাকিং করা টাকা দিয়ে গোপনে সমাজ সেবা করতে লাগলাম ৷এতে করে দুইটা কাজ হয়েছে ৷প্রথম কাজ হলো অসহায় মানুষ তাদের অধিকার পেয়েছে ৷আর দ্বিতীয় কাজ হলো আমি এক অদৃশ্য রাজ্য স্থাপন করেছি ৷অসহায় মানুষ গুলো আমার পরিচয় জানে না ৷কিন্তু তারা আমার জন্য প্রান দিতে পারে ৷প্লান অনুযায়ী আমি জানতাম খুব শিগ্রই আমি ধরা পড়বো ৷ তাই প্লান অনুযায়ী ইচ্ছে করেই আমি ধরা দিলাম ৷আর এমন একটা সময় আমি ধরা দিলাম ৷যখন নারী পাচারকারীদের সব তথ্য আমার কালেক্ট হয়ে গেছে ৷আমি তথ্য গুলো লুকিয়ে ফেললাম ৷আর ধরা দেওয়ার পিছনের কারন হলো এই তথ্য ৷যদি নারী পাচারের এই কেস সমাধানের পর আমি ধরা পড়তাম ৷তাহলে আপনারা আমাকে সময় দিতেন না ৷আর না আপনারা আমার পরিবারের হত্যার কারন জানতে চাইতেন ৷আর না আপনারা আমার বক্তব্য শুনতেন ৷ আমি চেয়ে ছিলাম সবাইকে সবটা জানাতে ৷তাই ধরা দেওয়া ৷আপনারা যে শুধু মাত্র এই কেসের জন্য আমার ফাসিঁ আটকে রেখেছেন ৷তা আমি খুব ভালো করে জানি ৷শুনুন স্যার এত দিন আপনারা আপনাদের ক্ষমতা আমাকে দেখিয়েছেন ৷এখন থেকে আপনারা দেখবেন ৷আপনার কি মনে হয় স্যার , থানায় ভাংচুর কিডন্যাপ হওয়া মেয়ে আর বাচ্চাদের আত্মীয়রা করেছে ৷না স্যার ওখানের মূল হামলাকারী কারা ছিল জানেন ৷ঐ অসহায় মানুষ গুলো যাদের আমি একদিন ন্যায় দিয়ে ছিলাম ৷ঐখানের মূল হামলাকারী ছিল যাদের মুখে হ্যাকিং করা টাকায় খাবার তুলে দিয়েছি ৷এতদিন দিন আপনারা প্রসাশনের ক্ষমতা কাজে লাগিয়েছেন ৷কিন্তু এখন আমি আমার বানানো জনগনের পাওয়ার দেখাবো ৷কি বলে ছিলেন আপনি আমাকে ৷এসিপি শরীফ আমায় জায়গা না দিলে আমি ভিক্ষে করতাম ৷ আপনারা এখন দেখবেন মা বাবা হারা একজন ভিক্ষারী কি কি করতে পারে ৷চব্বিশ ঘন্টা সময় দিচ্ছি আপনাকে আমি ৷চব্বিশ ঘন্টা পার হওয়ার আগে আপনি আবার আসবেন ৷কিন্তু এইবার আমায় মুক্ত করতে ৷কেন জানেন স্যার ৷আপনি আসবেন কারন মেয়েরা কোথায় আছে তার তথ্য সব আমার কাছে ৷আর নিজের সন্তানকে পেতে মা বাবারা আপনাদের ছাড়বে না ৷এবার আপনারা নন ৷এবার জনগন আমায় মুক্ত করবে স্যার ৷কথাটা মিলিয়ে নেবেন ৷

এসিপি কিছু বলবে ৷তার আগেই প্রীতি সিগারেট ফেলে দিয়ে বলল

অনেক দিন ঘুমাই নি স্যার ৷এবার ঘুমাতে দিন আমাকে ৷প্রীতিলতা কথাটা বলেই ফ্লোরে শুয়ে পড়লো ৷

অন্যদিকে চৌধুরী বাড়ীতে চিৎকার চেচাঁমেচি হচ্ছে ৷দিহান তার মায়ের দরজায় একের পর এক ধাক্কা দিয়েই চলেছে ৷

প্লিজ মা দরজা খোলো ৷আমি একদম ভালো হয়ে যাবো ৷তুমি না আমাকে আদর করো ৷প্লিজ আম্মু দরজা খোলো ৷আমার খুব ভয় করছে ৷আমার সাথে এমন করো না ৷তুমি তো জানতে না যে ঐ লোকটা বাবা নয় ৷মানুষেরই তো ভূল হয় মা ৷প্লিজ দরজাটা একবার খোলো ৷আবেশ দৌড়ে এলো ৷তারপর বলল

দিহান সর ৷আমি লোক নিয়ে এসেছি ৷ওরা এখনি তালা ভাঙ্গবে ৷একদম চিন্তা করিস না ৷ভাই আছে তো ৷চাচির কিছু হবে না ৷

তারপর দরজা ভাঙ্গা শুরু হলো ৷ দরজা ভাঙ্গতেই দিহান ঘরের ভেতর দৌড়ে ঢুকলো ৷এক এক করে সবাই ঢুকলো ৷দিহান ভেতরে ডুকেই মা বলে একটা চিৎকার করে উঠলো ৷

ফ্যানের সাথে ডায়নার ঝুলন্ত মরা দেহটা ঝুলছে ৷জিভ বের হয়ে গেছে ৷চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গেছে ৷ হয়তো দিনের পর দিন অবৈধ ভাবে কারো সাথে থাকার ধাক্কাটা নিতে পারে নি ৷হয়তো ভালোবাসার মানুষটা আর নেই সেই যন্ত্রনা টা নিতে পারে নি ৷দিহান মায়ের পা জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কেদেঁ উঠলো ৷

ও মা তুমি এমন কেন করলে ৷এখন আমার কি হবে মা ৷আমার কিছু চাই না ৷তুমি শুধু ফিরে এসো ৷আমি আর মেয়েদের কাছে যাব না ৷আমার টাকা পয়সা কিছু লাগবে না ৷আমার কাছে তুমি শুধু ফিরে এসো ৷ আমায় এই ভাবে শাস্তি দিও না তুমি ৷

ভোর রাতের দিকে ডায়নাকে দাফন করা হয় ৷দিহান হাসপাতালে ভর্তি ৷মায়ের মৃত্যুশোক নিতে পারে নি ৷মায়ের পা জরিয়ে কান্না করা অবস্থায় তার শরীরে কাপুনী উঠে যায় ৷এক সময় নিচে পরে যায় ৷হাত পা খিচেঁ আসে ৷আর মুখ থেকে সাদা ফেনা বের হতে শুরু করে ৷আবেশ দিহানকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তখনই ৷ ডাক্তার জানায় মায়ের মৃত্যু শোক নিতে পারে নি ৷তাই দেহে খিচুনী উঠেছে প্রবল গতিতে ৷

ঘড়িতে সকাল দশটা ৷প্রীতি এখনো ঘুমাচ্ছে ৷হঠাৎ কেউ একজন ধাক্কা দিতেই প্রীতি চোখ তুলে তাকালো ৷তাকিয়ে দেখলো একটা মহিলা পুলিশ পাশে ৷প্রীতি তার দিকে তাকিয়ে বলল

কি হয়েছে ৷

এসিপি প্রদীপ স্যার এসেছেন তোমার সাথে দেখা করতে ৷

প্রীতিলতা উঠতে উঠতে বলল

কি একটা ঝামেলা ৷এখন দেখছি ঘুমাতেও পারবো না ৷চব্বিশ ঘন্টা না পেরিয়ে যেতেই হাজির ৷তা এসেছেন কেন ৷

কেন এসেছি তা ভালো করেই জানো তুমি ৷ঝামেলা পাকিয়ে রেখে এখন ঘুমানো হচ্ছে ৷সব জায়গায় পুলিশের উপর হামলা হচ্ছে ৷বাইরে জনগন জেলখানায় ঢুকতে চাইছে ৷হয়তো ঢুকেও যাবে ৷একটাই দাবী তোমাকে ছাড়তে হবে ৷তারা তো আর জানে না তুমি ওদের ব্যবহার করছো ৷

প্রীতিলতা এসিপির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল

আমায় নিতে এসেছে এত তাড়াতাড়ি ৷ আমি তো ভাবেই পারছি না ৷আমার কিন্তু এখন যাওয়া উচিত স্যার ৷বুঝতেই পারছেন নইলে সবাই রাগ করবে ৷তা দাড়িয়ে আছেন কেন ৷নিয়ে চলুন আমাকে ৷

চলবে