প্রেমদণ্ড পর্ব-১০

0
149

#প্রেমদণ্ড (১০)💚

“তোমার কোন ক্ষতি করেছি বলে তো মনে পড়ে না। তাহলে এসব নোংরামি করে কেন নিচু মানসিকতার প্রমাণ দিচ্ছো শায়েলা?” ফাতিমা বেগমের রাগান্বিত কন্ঠস্বরের প্রশ্নেবাক‍্যে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল শায়েলা বেগম। সামনে তাকিয়ে দেখলেন রমিজ উদ্দিন আর ইজহান দাড়িয়ে। সকলের মুখ থমথমে। শায়েলা বেগম আমতা আমতা করে প্রতিত্তোরে বললেন, “এসব কি কইতাছেন ভাবি? আফনেরা কেন আমার ক্ষতি করবেন। আমিই বা কি নোংরামি করলাম?”

ফাতিমা বেগম রাগে ফোঁসফোঁস করছেন। ফের রাগান্বিত কন্ঠে বললেন, “জানো না এমন কিছু তো তুমি করোনি। জেনেশুনে করেছ। নাটক কেন করছো? আমি বা তোমার ভাই কখনও বলেছি, তোমার মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিব?”

শায়েলা বেগম এবার সকলের থমথমে মুখের কারণ বুঝতে পারলেন। রেগে মেয়ের দিকে তাকালেন। শর্মিলা ভাবলেশহীন ভাবে দাড়িয়ে আছে। এসবের কিছুই তাকে ছুয়ছে না। শায়েলা বেগমের নিরবতায় ফাতিমা বেগম আবার তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন, “তোমার মেয়ের সাহস হয় কি করে আমার ছেলের বউয়ের সাথে এত অসভ‍্য ভাষায় কথা বলার? পালিয়ে গিয়ে মুচির ছেলের সাথে বিয়ে করেছ। না খেয়ে দিনাতিপাত কর। কেউ খোঁজখবর রাখে না। এই মানুষটা বাড়ি তৈরি করে, মাসের খরচ দিয়ে বাদরকে মাথায় তুলে দিয়েছে নাকি? তুমি যে ব‍্যবহার আমার সাথে করেছ তা কি আমি ভুলে গিয়েছি ভেবেছ? আমার বিবাহিত জীবন বিষময় করে ফেলেছিলে তুমি। ননদ নয় সাক্ষাৎ ডায়নি রূপে আমার জীবন নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছিলে। তবুও মেয়েকে শহরের কোচিংয়ে পড়াবে তাই কোনরকম আপত্তি করিনি। তোমার সাহস হয় কি করে এসব দিবাস্বপ্ন দেখার? তোমার মেয়েকে এত সাহস কে দিয়েছে?”

“কি করছে আমার মাইয়া?”

“তুমি এবং তোমার মেয়ের মত বাকিদেরও নোংরা ভাব কোন সাহসে? শরীর দেখিয়ে আমার ছেলেকে বশ করেছে এসব কি ধরনের কথা? অনুজার জায়গায় তোমার মেয়ের থাকার কথা ছিল এসব কেন বলবে সে? এতবড় সাহস ও কার থেকে পাই?”

শায়েলা বেগম নাকমুখ কুচকে জবাব দিলেন, “ছোট মানুষ নাহয় ভুল করেই ফেলেছে। তার জন্য আপনি এভাবে বলবেন? আমার মাইয়ার মত ভালো মাইয়া কই পাবেন আপনে? ফকিন্নির বাচ্চারে পোলার বউ কইরা আনছেন। জীবনে কিছু পাইবেন?”

“ছোটফুফু! আপনি সব সীমা অতিক্রম করে ফেলছেন। আম্মা, এই মহিলাকে এখনই বাড়ি থেকে তার বেয়াদব মেয়ে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে বল। নাহলে আমি কি করব নিজেও জানিনা। ওদের এত সাহস হয় কি করে আমার বউয়ের সম্পর্কে এমন কথা বলার?” ইজহানের বজ্রকন্ঠে শর্মিলা লাফিয়ে উঠল ভয়ে।

এতক্ষণ নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করা রমিজ উদ্দিন গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন, “চুপচাপ ব‍্যাগপত্র গুছিয়ে আমার বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে যা। অনেক হয়েছে আর না।”

নাকের পানি চোখের পানি এক করে শায়েলা বেগম বলেন, “এসব আপনি কি কইতাছেন ভাই? মা-পোলার কথা শুইনা বোন-ভাগ্নিকে তাড়ায় দিবেন? আল্লাহ সইবে না।”

“কুকুরকে বেশি আদর দিতে হয় না। তুই হচ্ছিস আমার সেই বোন। আবর্জনার সাথে থেকে থেকে নিজেও আবর্জনা হয়ে গিয়েছিস। তাই যেখানে যাচ্ছিস সেখানেই দূর্গন্ধ সৃষ্টি করছিস। অন‍্যদের মত যদি খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দিতাম তাহলেই বোধহয় ভালো হত। তোর সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছি না। আমার বাড়িতে এসে আমারই ছেলের বউয়ের সাথে এহেন ব‍্যাবহার করতে তোদের বাধলো না? কি শিক্ষা দিয়ে মেয়েকে বড় করেছিস?”

“ভাইজান আপনি এমনে করে বলতে পারলেন?”

“পারলাম। এর থেকেও কঠিন এবং কঠোর হওয়া উচিত ছিল। আমার ঘৃণা হচ্ছে তুই আমি একই মায়ের পেটে বেড়ে উঠেছি। এখনই বেড়িয়ে যা। কোনদিনও যদি এমুখো হয়েছিস সোজা পুলিশে দিব।”

শর্মিলা বলে উঠল, “একরত্তি মেয়ের জন্য আমাদের সাথে এমন ব‍্যাবহার করবেন আপনারা? রশিকতা করে নাহয় দুটো কথা বলেছি ই। তাই বলে সঙ্গে সঙ্গে সকলের কানে দিতে হবে? শহরের মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার কোন বালাই নেই।”

পিছন থেকে দুপা এগিয়ে এল ইজহান। চোখ লালচে রঙ ধারণ করেছে। পূর্বের ন‍্যায় চিল্লিয়ে বলে উঠল, “তোর সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারি না। এখনো মুখে মুখে তর্ক করছিস! তুই কি ভেবেছিস ইনবক্সে দেওেয়া সেসব ফটো আমি কাউকে দেখাইনি? সবই আম্মা জানেন। তোর নোংরামি সম্পর্কে অবগত না করলেই নয়। অন‍্যকে বশ করতে শরীর বানিয়েছিস। সেটাই কর। এটা ভদ্রলোকের বাসা। কোন প্রস্টিটিউডের এখানে কোন স্থান নেই।”

“ইজহান তুমি চুপ কর।” পিছন থেকে রমিজ উদ্দিনের শান্ত কন্ঠে বলার কথায় দমে গেল ইজহান। ইজহান বাবার দিকে ফিরে বলল, “ওকে বলুন, অনুজার এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড কোথায় রেখেছে? সেগুলো যেন হয়ে বের হয়।”

শর্মিলা বিছানার নিচ থেকে ফাইলসহ কাগজপত্র বের করে দিল। ইজহান সেগুলো নিয়ে হনহন করে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।

শায়েলা বেগম রাগে ফুসতে ফুসতে ব‍্যাগ গোছাতে লাগলেন। এরপর রমিজ উদ্দিন নিজে ওদের বেড় করে দিয়ে মুখের ওপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আর একটি কথাও বলার সুযোগ দিলেন না।

স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন, “আমাকে বেশি করে লিকার দিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে দাও তো ফাতিমা। মাথাটা ধরেছে।”

ফাতিমা বেগমের চোখমুখ থমথমে। অযথা চিৎকার, চিল্লাচিল্লি করা তার স্বভাবে নেই। চুপচাপ শান্ত থাকতেই পছন্দ করেন তিনি। কিন্তু চুপ থেকে অনেক অন‍্যায় তিনি সহ‍্য করেছেন। তবে আজকে চুপ থাকলে একটি এতিম মেয়ের সাথে অন‍্যায় করা হত। চুপচাপ গিয়ে স্বামী মহাদয়ের জন্য চা করে নিলেন।

ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন রমিজ উদ্দিন। ফাতিমা বেগম সশব্দে চায়ের কাপটি রেখে বললেন, “মন খারাপ লাগছে?”

রমিজ উদ্দিন চোখ বন্ধ করেই জবাব দিলেন, “নাহ। আমি ভাবতেও পারছি না আমার বোনটি এমন হবে। মেয়েটাকেও কি বাজে শিক্ষা দিয়েছে। দুদিনের দুনিয়া, আমি ঝুট ঝামেলা চাই না। আমি কখনোই চাই না আমার ঘরে এসে পরের মেয়েটি কষ্ট পাক। তোমার সাথে হওয়া অন‍্যায়ের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কোনটাই আমি করতে পারিনি। জানিনা কতটা কষ্ট পেয়েছ। বোনের অন‍্যায় মনে না রেখেও যোগাযোগ স্থায়ী রেখেছি। আর সেই বোন কিনা এমন দিবাস্বপ্ন দেখে! মানুষ এত স্বার্থপর কেন হয় ফাতিমা?”

রমিজ উদ্দিনের কন্ঠে অসহায়ত্ত্বের ছাপ। ফাতিমা বেগম স্বামীর হাতদুটো মুঠোবন্ধি করে প্রতিত্তোরে বলেন, “আমার কথা ছাড়ুন। আপনি এবং ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি সুখে আছি এতে শতখুশি আলহামদুলিল্লাহ্। মন খারাপ করবেন না। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুন। নিন চা টা পান করুন। ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।”

ফাতিমা বেগম নিজেই চায়ের কাপ এগিয়ে দিলেন। রমিজ উদ্দিন উঠে বসলেন। স্ত্রীর হাত থেকে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বললেন, “চা টা তুমি বরাবরই ভালো বানাও ফাতিমা!”

স্বামীর প্রশংসায় লাজুক হাসেন ফাতিমা বেগম। বয়স পঞ্চাশের কোঠা পেড়লেও গালদুটোতে লজ্জায় লালচে আভা ধারণ করল।
_______________________
অনুজা টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। ইজহান এসেই ওয়াশরুম থেকে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিয়ে এসেছে। মাথায় যে খুন চেপেছে তাতে নিজেকে আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করল। এরপর গুটি গুটি পায়ে অনুজার সন্নিকটে এসে দাড়াল। চোখ খানিক বাদে বাদে কেঁপে কেঁপে উঠছে। ইজহান যা বোঝার বুঝে গেল। এক টানে অনুজাকে দাড় করাল। নিজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুধাল, “কষ্ট হচ্ছে?”

চোখেমুখে কান্নারা লেপ্টে আছে সজতনে। বহুক্ষণ কান্নার ফরে চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে। স্ত্রীর এমন এলোমেলো রূপ ইজহানকে আবারও মুগ্ধ করল। দুষ্টু হেসে বলল, “কান্নারাও আমার থেকে ভাগ‍্যবান। আমার কিশোরীর কত কাছে গিয়ে লেপ্টে আছে দেখ। অথচ আমার মানুষটা আমার থেকে কত দূরে। সে কেঁদেকেঁটে ভাসিয়ে ফেলছে অথচ আমি কিছুই করতে পারছি না। পারছিনা নিজের সাথে ঠিক কান্নার মত জড়িয়ে নিতে। এ অন‍্যায় কি ক্ষমার যোগ্য ষোড়শী?”

অনুজা ওড়নার কোণা দিয়ে চোখমুখ মুছে ফেলল। ইজহানের প্রেমময় বাক‍্যে পাত্তা না দিয়ে বিষণ্ণ কন্ঠে শুধাল, “আমার জন্য আজ আপনাদের নিজেদের মধ্যে এত ঝগড়া ঝামেলা হয়ে গেল। আমার খুব খারাপ লাগছে। বিশ্বাস করুন আমি এমনটা চাইনি।”

অনুজার এলোমেলো চুলগুলো এক হাতে ঠিক করে দিয়ে ইজহান বলে, “তোমার কিছু চাইতে হবে না। কর্মফল ভোগ করেছে। এর জন্য তুমি কেন মন খারাপ করছো? কাল পরিক্ষা। এখন পড়তে বস। আজেবাজে চিন্তা মাথাতেও আনবে না। কুকুর কামড়ালে কুকুরকে ঠিকই আমরা কামড় দিতে পারি না। কিন্তু লাঠি দিয়ে সরিয়ে কিংবা আঘাত তো করতেই পারি তাই না? ওর এত বড় সাহস আমার বউয়ের সম্পর্কে এতবড় কথা বলে! ওকে আস্ত রেখেছি এটাই অনেক। হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বস। আমি একটু বেড়চ্ছি।”

অনুজা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। ইজহান অনুজার চোখেমুখে চুমু দিয়ে ওয়ালেটটা নিয়ে বেড়িয়ে গেল। পেছনে রেখে গেল প্রেয়সীর হাসিমাখা মুখখানা।
____________________
দিবালোকে আঁধার কেঁটে স্নিগ্ধ সুন্দর আলো ফুটেছে। আঁধারে ঢেকে থাকা পৃথিবীর আলো পেয়ে ঝলমলিয়ে উঠলেও অনুজার মুখে হাসি নেই। ফ‍্যাকাশে বিষণ্ণ মুখমণ্ডল। বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে। পরিক্ষার টেনশনে চোখমুখ শুকিয়ে গিয়েছে। শেষ রাতেই ঘুমের আরাম ত‍্যাগ পড়তে বসেছিল। এখনো একমনে পড়ছে।

ইজহান দু মগ ধোঁয়া ওঠা গরম কফি নিয়ে এল। সেও অনুজার সাথেই জেগে রয়েছে। তদারকি করছে বউয়ের পড়াশোনা। অনুজার দিকে কফি মগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “চিল! এত টেনশন করলে যা পড়েছো সেটাও ভুলে যাবে। চিন্তামুক্ত মন পরিক্ষার জন্য বেটার। এত টেনশনের কি আছে? তোমার যতটুকু সামর্থ্য তুমি চেষ্টা করে যাবে। ফলাফল দান করা তো মহান সৃষ্টিকর্তার হাতে।”

ইজহানের মোটিভেশনে অনুজার মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেল না। সে আগের মতোই বিষণ্ণ মুখে বসে আছে। কফি মগ ইজহানের থেকে নিয়ে চুমুক দিল। তারপর ছোট্ট করে জবাব দিল, “হুম ইনশাআল্লাহ।”

কফি খাওয়া শেষে ইজহান বলল, “এখন পড়াশোনা বন্ধ কর। আটটা বেজে গেছে। তৈরি হয়ে খেয়ে বেড়তে হবে। পরিক্ষা কেন্দ্রে যেতে কমপক্ষে বিশ মিনিট লাগবে। প্রথম দিন সিট খুজতে হবে তাই আগেই বেড়িয়ে পরা ভালো।”

অনুজা বলল, “তৈরি হতে দশ মিনিটের বেশি লাগবে না। কিন্তু আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। কেমন বমি বমি লাগছে। কিছুই ভালো লাগছে না।”

ইজহান অনুজার সন্নিকটে গিয়ে দাড়াল। কপালে, গলায় হাত ছুইয়ে তাপমাত্রা চেক করল। নাহ ঠিকই আছে। অনুজাকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে নিজের মুখ বরাবর দাড় করিয়ে বলল, “এসব টেনশনের জন্য হচ্ছে। পরিক্ষার সময় বুবুও এমন করতো। এত টেনশন করিও না। টেনশন করলেও যে প্রশ্ন আসার সেটাই আসবে। না করলেও সেটাই আসবে। তাই উচিত নয় কী? মনকে ফ্রেশ রাখা। আম্মু বলেন, মনে মনে দোয়া কালাম পড়ে আল্লাহ্কে স্বরণ করা উচিত। এতে মন শান্ত থাকে।”

প্রতিত্তোরে অনুজা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল।

হঠাৎ করে ইজহান বলে উঠল, “দেখি বুকে এসো তো মেয়ে।”

অনুজা ইজহানের কথা বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইল তার মুখের দিকে। ইজহান হেসে ইশারা করতেই অনুজা ঝাপিয়ে পরল ইজহানের বুকে। ইজহান দুপা পিছিয়ে গেল অনুজার আক্রমণে। অনুজাকে দু হাতে আগলে নিয়ে শুধালো, “টেনশন কমেছে?”

প্রতিত্তোরে অনুজা বলল, “হুম। শান্তি লাগছে। আচ্ছা, প্রিয়জনের বুকে মাথা রাখলে এত শান্তি লাগে কেন? মনে হয় জনম জনম এভাবে কাটিয়ে দেওেয়া যেত! যাদের আমার মত কিউট, ড‍্যাশিং একটা হাসবেন্ড নেই তাদের টেনশন কি করে কমবে শুনি?”

ইজহান অনুজার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে জবাবে বলল,
“ওদের কথা চিন্তা না করলেও হবে। আমি খাবার নিয়ে আসছি। ততক্ষণে তুমি তৈরি হয়ে নাও।”

অনুজা তড়িঘড়ি করে স্কুল ড্রেস, হিজাব পড়ে তৈরি হয়ে নিল। ইজহান প্লেটভর্তি ভাত মাংসের তরকারি নিয়ে এসেছে। অনুজা ভাতের পরিমাণ দেখে বিস্ময় নিয়ে শুধাল, “এত ভাত কে খাবে?”

ইজহানের নির্বিকার উত্তর, “কে আবার? তুমি। দেখি বিছানায় শান্ত হয়ে বসো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত মাখিয়ে অনুজাকে খাইয়ে দিতে লাগল ইজহান। অনুজার কয়েক লোকমা নিয়ে আর খেতে পারল না। তার পেট ভরে গিয়েছে। তারপর বাকিটা ইজহান খেতে নিলে অনুজা হতভম্ব স্বরে জিজ্ঞাসা করে, “আমার এটো ভাত আপনি খাবেন?”

“সমস‍্যা আছে?”

“না। কিন্তু ঘৃণা লাগবে না?”

“ঘৃণা কেন লাগবে? যেখানে আপাদমস্তক পুরোটাই তুমি আমার সেখানে তোমার এটো ভাত আমি খেলে ঘৃণা কেন লাগবে? এতে ভালোবাসা বাড়ে জানো?”

অনুজা দু দিকে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো, “জানিনা।”

অনুজা এক এক করে শশুর, শাশুড়িকে বলে ইজহানের সাথে বেড়িয়ে পরল। ফাতিমা বেগম গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে, কপালে চুমু দিয়ে দোয়া করে দিয়েছে। রমিজ উদ্দিনও দোয়া করে পরিক্ষার সালামি হিসাবে হাতে হাজার টাকার দুটো নোক গুজে দিয়েছেন। এরপর মায়ের ফ্লাটে গিয়ে মায়ের কাছে দোয়া চাইতে গেল অনুজা। সাথে তিনিও যেতেন কিন্তু ছোট্ট ইয়াশের শরীর ভালো না। জ্বর, ঠাণ্ডা তাই ইজহান ই নিষেধ করে বলেছিল, “সে সব দেখবে। চিন্তা করতে হবে না।”

অনিশা অনুজাকে এক প‍্যাকেট ক‍্যাটবেরি দিতে বলল, “খুব ভালো পরিক্ষা দিও আপু।”

অনুজা অনিশার কপালে চুমু দিয়ে বলল, “দোয়া করিও আপা।”

আইরিন রহমান জোর করে আধ গ্লাস দুধ খাইয়ে দিলেন। ইজহান তাড়া দিতেই বেড়িয়ে পড়ল তারা।

গাড়িতে চেপে বসতেই অনুজার বই খুলে বসল। বিশ মিনিটে অনেকগুলো টিকচিহ্ন পড়া যাবে। ইজহান অনুজার পাশে। ড্রাইভার মাঝারি গতিতে গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যস্থল যাচ্ছেন।

পরিক্ষা কেন্দ্রে পৌছাতেই ইসরাতের সাথে দেখা হয়ে গেল। ওর মায়ের সঙ্গে এসেছে। ইজহানের সাথে প্রথম আলাপ ইসরাতের আম্মুর। পরিচয় করিয়ে দিলে কুশল বিনিময় করল ইজহান। ভেতরে ঢোকার মিনিট খানিক আগে মুশফিকা এসে পৌছালো। দুটো বড় সাইজের ক‍্যাটবেরি অনুজা ও ইসরাতের হাতে দিয়ে বলল, “শুভকামনা রইল প্রিয়রা। ইনশাআল্লাহ ভালো হবে পরিক্ষা।” তারপর সকলের চোখ এড়িয়ে ইসরাতে কানে কানে বলল, “শুভকামনা রইল আমার দেবরের পক্ষ থেকে। টেনশন কর না।”

ইসরাত হতভম্ব! অবাক চোখে তাকাতেই মুশফিকা হেসে ইশারা করতেই ইসরাতের চোখে পড়ল রোদ চশমায় আটা শ‍্যামবর্ণের সেই গম্ভীর মুখখানা। রক্ত ছলকে উঠল যেন। বেশিক্ষণ দেখা হল না তার। ঘন্টার আওয়াজ কানে বাজতেই তড়িঘড়ি করে ভেতরে ঢুকে পড়তে হল।

ইনশাআল্লাহ চলবে….

লেখায়~সুমাইয়া ইসলাম জান্নাতি