প্রেমপিপাসা❤
পর্ব – ১১
writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
ভার্সিটি ছুটির পর রেহান কুহুকে বাইকে করে বাসায় পৌঁছে দেয়।
আজ রেহানের সাথে আসতে কুহুর এতোটাও অস্বস্তি হয়নি বরং কিছুটা ভালোলাগছে!
রেহান কুহুকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
কুহু বাসায় ঢুকতেই দেখে জেরিন বসে আছে। মেয়েটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেচারি অনেক টেনশনে আছে।
কুহুকে দেখেই দৌড়ে কুহুর কাছে আসে।
জেরিন – হাই আপি… আজ সারা দিন কেমন কাটলো গো?
কুহু জেরিনের কথায় রেগে যায়। কতো টা অসভ্য মেয়ে! নিজেই বিপদে ফেলে নিজেই জিগ্যেস করছে আজ সারাদিন কেমন কাটলো! কুহু রেগে গেলেও তার রাগটা প্রকাশ করে না।
কুহু – ভালোই কাটলো (মুখ গোমড়া করে)
জেরিনকে আর কিছু বলতে না দিয়েই কুহু রুমে চলে যায়।
জেরিন – যাহহ বাবা কিছুই তো বুঝলাম না। এমন ভাবে উত্তর দিলো যে দুটানায় পড়ে গেলাম। না ভালো না খারাপ!
জেরিন কিছুক্ষণ বিরবির করে নিজের রুমে চলে যায়। গিয়েই তিশান (হিয়ার বয়ফ্রেন্ড) কে ফোন দেয়।
— হ্যালো
জেরিন – হ্যা ভাইয়া কাজ টা হয়েছে তো। আই মিন রেহান বিশ্বাস করেছে তো?
— জ্বী আপু।
জেরিন – ওকে ধন্যবাদ ভাইয়া।
জেরিন ফোন টা কেটে দেয়। এই মূহুর্তে জেরিনের ইচ্ছে করছে নাচতে!
জেরিন – তার মানে রেহান সত্যি বিশ্বাস করে নিলো তিশান নামের কেউ আপির বয়ফ্রেন্ড!
আহারে ভাবতেই কেমন খুশিখুশি লাগছে আমার।
এদিকে কুহু ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে যায়।
খাওয়া শেষ করে এসে ফোন টা হাতে নিয়ে এফবিতে ঢুকে।
অনেক খুঁজে রেহানের আইডিটা পেয়ে যায়। অবশ্য রেহান আগে থেকেই কুহুকে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে রেখেছে।
কুহু কিছু একটা ভেবে একসেপ্ট করে। কিছুক্ষণ পরই রেহানের আইডি থেকে ম্যাসেজ আসে…
— জানপাখি এতো দিন আমাকে ঝুলিয়ে রেখে আজ একসেপ্ট করার সময় হলো?
কুহু তো অবাক! রেহান জানলো কি করে এটা কুহুর আইডি! ধুরর কোথায় ভেবেছিলো রেহান কে একটু পরিক্ষা করবে তা না বেটা তো সব জেনেই গেলো।
রেহান – কি হলো? কথা বলছো না যে?
কুহু – আপনি জানলেন কি করে এটা যে আমার আইডি?
রেহান – ওহ তাই বলো! তোমার ফ্রেন্ড সানিয়া ওর আইডিটা পেয়েছিলাম ওর কাছ থেকেই তোমার টা নিলাম। বাই দ্যা ওয়ে… তুমি ফেইক একাউন্ট ইউজ করো কেনো?
কুহু – এমনিই।
রেহান – ওহহ ওকে। খেয়েছো?
কুহু – হুম। আপনি?
রেহান – হ্যাঁ। ফোন নাম্বার টা দাও।
কুহু – কার?
রেহান – আমার বাবার!
কুহু – মানে?
রেহান – মানে তোমার কাছে যেহেতু চাইছি তাহলে নিশ্চয় তোমার নাম্বারটাই চাইছি।
কুহু – আচ্ছা দিচ্ছি। (কুহুর নাম্বার টা দিয়ে দেয়)
রেহান – ওকে এখন বাই। রেস্ট করো তুমি।
কুহু – আচ্ছা।
তারপর রেহান কুহুকে অনেক গুলো কিস ইমুজি দিয়ে অফলাইনে চলে যায়।
কুহু ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
বিকেলে…
কুহু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কফি বানাতে চলে যায়।
পেছন থেকে জেরিন ডেকে উঠে।
জেরিন – আপি
কুহু – হ্যা বল
জেরিন – ছাঁদে যাবে?
কুহু – চল যাই।
জেরিন – ওকে আসো। আমি কফি বানিয়ে নিই।
কুহু – তুই যা। আমিই বানিয়ে আনছি।
জেরিন ছাদে চলে যায়। আর কুহু অনিচ্ছা স্বত্তেও কফি নিয়ে ছাদে আসে।
জেরিন কে একটা মগ দিয়ে আরেক টা নিজে রাখে।
অনেকখন দুজন কফি খাচ্ছে আর গল্প করছে। হটাৎ কুহু নিচে তাকাতেই দেখে রেহান বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছে ।
তার মানে রেহান এখানে এসেছিলো? কিন্তু চলেই বা যাচ্ছে কেনো? কুহু চিন্তায় পড়ে যায়।
রাতে সবাই একসাথে বসে ডিনার করে নেয়। কুহু নিজের রুমে চলে আসে। কুহু ভাবছে রেহানকে কি একটা ফোন দিবে? ভাবতে ভাবতেই কারো ফোন আসে।
কুহু মোবাইলের স্কিনে তাকাতেই দেখে রেহানের নাম্বার। কুহু ভয়ে ভয়ে ফোন টা রিসিভ করে।
রেহান – ছাঁদে আসো।
কুহু – কিহহহহ!
রেহান – কানে কম শুনতে পাও কবে থেকে?
কুহু – কম শুনবো কেনো?
রেহান – তাহলে কি বললাম কানে গেলো না? (দাঁতে দাঁত চেপে)
কুহু – না মানে… এতো রাতে ছাঁদে গিয়ে কি করবো?
রেহান – আমার সাথে প্রেম করবা ডেম এট…
কুহু রেহানের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
কুহু – ছাঁদে আপনার সাথে প্রেম করবো মানে?
রেহান – তুমি যে বোকা আমি জানতাম কিন্তু সেই লেভেলের বোকা সেটা তো জানতাম না।
কুহু – দেখুন বেশি বলে ফেলছেন কিন্তু।
রেহান – পকপক বন্ধ করে ছাঁদে আসো। আমি ছাঁদে আছি অনেকখন হলো।
কুহু – আপনি আমাদের ছাঁদে?
রেহান – না আমার বাসার ছাঁদে!
কুহু – (এই অসভ্য ছেলেটার মুখে মধু দেয় নাই ক্যান! কথায় কথায় রেগে যায়)
রেহান – আসো ফাস্ট।
কুহু – আচ্ছা ঠিক আছে।
রেহান ফোন কেটে দিলে কুহু চুপিচুপি ঘর থেকে বের হয়ে দেখে সবার দরজা বন্ধ। হয়তো সবাই ঘুমিয়ে গেছে।
কুহু মেইন দরজা টা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।
এতো রাতে ছাঁদে যেতে অবশ্য কুহুর অনেক টা ভয়ও করছে। কিন্তু না গিয়েও উপায় নেই।
কুহু ছাদে আসতেই কেউ কুহুকে একটানে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে।
ভয়ে কুহুর প্রানখানা উড়াল দিবে এমন অবস্থা!
কুহু তাকিয়ে দেখে রেহান!
কুহু – আপনি এতো রাতে এখানে এলেন কী করে?
রেহান কুহুর কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে কুহুর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।
কুহু রেহানের কাজে বেশ অবাক হয়ে যায়। এমন কিছু করবে রেহান তা ভাবতেও পারেনি।
কুহু রেহান কে ছাড়াতে চেষ্টা করে রেহান কুহুকে আরও চেঁপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
অনেকখন পর রেহান কুহুকে ছেড়ে একটু দূরে সরে দাড়ায়।
রেহান – সরি জানপাখি
কুহু – কেনো? (অবাক হয়ে)
রেহান – তোমার পারমিশন ছাড়াই তোমাকে কিস করেছি।
কুহু – আচ্ছা। এখন বলুন এখানে আসলেন কী করে? আর আমাদের ছাঁদের দরজা টা তো বন্ধ থাকে। তাহলে?
রেহান – আমি তো খুলাই পেলাম। আমি জানতাম না বন্ধ থাকে তাও এসে খুলা পেয়েছি বলেই তোমাকে কল করলাম।
কুহু – আর বন্ধ থাকলে নিশ্চয় আবার বাড়ি ফিরে যেতেন?
রেহান – উহুম…তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো। যেভাবে হোক দেখা করেই যেতাম।
বন্ধ থাকলে ফোন করে তোমাকে নিচে ডাকতাম।
কুহু – যদি না আসতাম তো?
রেহান – তোমার ঘরেই চলে যেতাম। কেউ দেখলে দেখতো আই ডোন্ট কেয়ার! (ভাব নিয়ে)
কুহু – হুহহহ হয়ছে।
রেহান – ইয়াপ জানপাখি। সত্যিই ভয় পাবো না৷ কিন্তু আমি এখন এতোটাও বোকামি করবো না। কারন আমি চাই না তোমার ঐ গুনধর বোন আমাদের ব্যাপার টা জানুক।
কুহু – আচ্ছা জানলে সমস্যা টা কী বলুন তো?
রেহান – ওকে সারপ্রাইজ দিবো!
কুহু – এ আবার কেমন সারপ্রাইজ?
রেহান – সময় হলেই বুঝবে।
কুহু – হুম। ঐ সময় চলে গেলেন যে?
রেহান – তুমি দেখে নিয়েছো?
কুহু – হ্যা।
রেহান – তোমার সাথে দেখা করতেই এসেছিলাম। দেখলাম তুমি ছাঁদে আর তোমার সাথে আরও একজন আছে। থাকলে তো জেরিনই থাকতো। তাই চলে গিয়েছিলাম।
কুহু – ওহহ। বুঝেছি। আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এবার বাড়ি যান।
রেহান – পরে যাই।
কুহু – না যান তো। কাল ভার্সিটি আছে আমার।
রেহান – আমারও তো আছে। তাতে কি?
কুহু – আপনার কিছু না কিন্তু আমার অনেক কিছু। আমি এখন ঘুমাবো। বুঝেছেন?
রেহান – ওকে। রেহান কুহুর দিকে একটু এগুতেই কুহু ভয়ে পিছিয়ে যায়। রেহান কুহুর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে…
রেহান – গুড নাইট। —- বলেই কুহুর কানের নিচে চুমু দেয়।
কুহু কেঁপে উঠে। গুড নাইট কথাটাও এভাবে বলতে হই? আজিব!
রেহান চলে গেলে কুহুও নিজের রুমে চলে যায়।
কুহু রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই জেরিন রুম থেকে বেরিয়ে আসে….
জেরিন – এতো রাতে আপি কোথায় গিয়েছিলো?
জেরিন মাথায় হাজারটা চিন্তা নিয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে কুহু ঘুম থেকে উঠে ফোনের রিংটোন এর শব্দ শুনে রিসিভ করতেই কারো মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে….
— গুড মর্নিং জানপাখি….
কুহু মুচকি হাসে।
— ভার্সিটিতে আসবে না?
কুহু – হ্যা।
— ওকে ফ্রেশ হও।
কুহু – ওকে।
ফোন কেটে দিতেই কুহু ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে আসে।
কুহুর মা – কিরে আজ এতো তারাতারি?
কুহু – হুম।
কুহুর মা – কোনো কাজ আছে?
কুহু – না এমনিই। সব সময় তো দেরি করেই যাই। তাই আজ একটু তারাতারি যাবো।
জেরিন – (কিছু একটা ভেবে) আপি আমিও আজ তোমার সাথে ভার্সিটি যাবো।
কুহু – তুই আবার কবে ভার্সিটিতে ভর্তি হলি? তাও আমাদের ভার্সিটিতে?
জেরিন – না মানে এমনিই ঘুরে দেখতে যাবো আরকি।
কুহু – ভার্সিটি নিশ্চয় পার্ক নয় যে তুই ঘুরে দেখবি। তাছাড়া আমাদের ভার্সিটিতে বাহিরের কাউকে এলাউ করে না।
জেরিন – ওহহ আচ্ছা।
কুহু ব্রেকফাস্ট শেষ করে উঠে চলে যায়।
কুহু বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশা করে ভার্সিটিতে চলে আসে।
এতো তারাতারি এসেও বেচারি ঝামেলায় পড়লো। না সানিয়া আর রিহা এসেছে না রেহান!
একা একা অস্বস্তি ফিল করছে। কিছুক্ষন এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করতেই দেখে রিহা আর সানিয়া আসছে। ওদের দেখে কুহুর যেনো প্রান ফিরে পেলো।
কুহু – এতো খনে আসার সময় হলো? (ওদের কাছে এগিয়ে গিয়)
সানিয়া – আরেব্বাস! এ আমি কাকে দেখছি?
কুহু – নিশ্চয় তোর শাশুড়ি কে না! আমাকেই দেখছিস।
রিহা – সেটাই তো! তুই এতো তারাতারি?
কুহু – এমনিই ভালো লাগছিলো না বাসায় তাই চলে আসলাম।
সানিয়া – বাহ উন্নতি হচ্ছে দেখছি!
কুহু – আরে আজিব! তারাতারি আসলে বুঝি উন্নতি হয়?
রিহা – সে তুমি বুঝবে না খুকি। এবার চলো।
কুহু – হু চল।
কুহু ওদের সাথে হাটছে আর বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
সানিয়া – কেউ বোধহয় আসেনি আজ! আহারে যার জন্য এতো কষ্ট সেই মিসিং!
কুহু ভ্রু কুঁচকে সানিয়ার দিকে তাকায় সাথে সাথেই সানিয়া চোখ টিপ মারে।
এদিকে রেহান ঘুম থেকে উঠতে অনেক টা লেট করে ফেলে। কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে চলে আসে।
রেহানের বাবা – আজ ভার্সিটিতে যাবে?
রেহান – হ্যা বাবা।
রেহানের বাবা – তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।
রেহান – হ্যা বলো না। ব্রেকফাস্ট করতে করতেই শুনে ফেলি।
রেহানের মা – থাক না। রাতে বললে হয় না।
রেহানের বাবা – না এখন বলবো। সারা দিন ও ভেবে নিবে রাতে আমাকে জানাবে ব্যাস।
রেহানের বাবার কথা শুনে রেহান কিছুটা অবাক হয়ে যায়। এমন ভাবে কথা বলছে কেনো বাবা?
কী এমন কথা যে সারা দিন ভাবতে হবে।
চলবে…