প্রেমপ্রদীপ পর্ব-২২+২৩

0
2595

#প্রেমপ্রদীপ
Part–22
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

সকালের কড়া মিস্টি রোদ এসে রোদেলার গায়ে পড়ছে। সে এই মৃদ্যু শীত মৃদ্যু উত্তাপকে বেশ উপভোগ করছে। আপাতত সে এক কাপ রঙ চা হাতে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো ভেজা তাই আরেক হাত দিয়ে চুল ঝাড়ছে। চুল থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে।আজ সকাল-সকাল গোসল সেরে ফেলেছে।

রোদেলা ভাবলেশহীন ভাবে শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে। যতোই চেষ্টা করছে সূর্যের প্রখর তাপে তার চোখ কুচকে ছোট হয়ে আসছে ফলে আর আকাশের দিকে তাকালো হয়ে উঠছেনা তার। সে হতাশার একটা শ্বাস ফেললো। আজকে মঙ্গলবার৷ সমুদ্রের আজকে বিকেলে আসার কথা। রোদেলার কেন যেন মনে হচ্ছে, সমুদ্র আর এ বাসায় আসবে না।

আগে আবেগ বলত, সমুদ্র নাকি তার মতো। রোদেলার মতো জেদ। তখন রোদেলা হাসত। বিশ্বাস হত না। এখন মনে হচ্ছে আবেগ ঠিকই বলত।

রোদেলার চোখে পানি এসে যাচ্ছে অতিরিক্ত তাপের ফলে। তার গা ও গরম হয়ে আসছে, সেই সাথে চুলও শুকিয়ে গেছে। সে চোখ মুছে ছাদের মাঝ বরাবর আসলো। ছাদের মাঝখানে কে যেন এলোভেরা গাছ লাগিয়েছে। বেশি বড় না গাছটা। পাশেই গোলাপ গাছ। ফুল নেই, শুধু পাতা রয়ে গেছে তাও পাতাগুলো শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম।

সে কাপ হাতে ছাদ থেকে নামতে লাগে। পিউ থাকলে মনের সবকিছু খুলে বলা যায়। তখন শান্তি পায় সে। পিউয়ের স্বভাবটা খুব অদ্ভুত। বেশ চঞ্চল তার মেয়েটা। ছেলেটা আবার ছোট থেকেই চুপচাপ স্বভাবের৷

★★★
সকাল হওয়া মাত্র সমুদ্র আর এক মুহূর্ত দেরি করেনি কাউকে না জানিয়েই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। গ্রাম পাড় হয়ে সোজা সদরে উঠে ঢাকার বাস চেপে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়। চোখ মুখ শক্ত করেই বসে থাকে সে। চারপাশের প্রতি চরম বিরক্ত সে। সবকিছু অতি মাত্রায় তুচ্ছ লাগছে তার কাছে। সব চেয়ে বেশি রাগ সে নিজের প্রতি। আর নিজের ভাগ্যের উপর ও রাগ লাগছে তার।

★★★

এদিকে সকাল দশটার দিকে পিউ আয়নার রুমে যায়। রুমে টোকা দিতেই দরজা খুলে গেল। সে আস্তে ধীরে রুমে ঢুকে দেখে আয়না মেঝেতে শুয়ে গভীর ঘুম। আয়নাকে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আতকে উঠে পিউ।

তার ভাইকে খুজতে থাকে কিন্তু কোথাও নেই ভাইয়া। পিউ আবারো আতকে উঠে। সে চোখ বুলিয়ে চারপাশ দেখে নেয় কোথাও আছে নাকি সমুদ্র ভাই।

পিউ কি করবে বুঝে পাচ্ছেনা। তার মাথা ফাকা হয়ে গেল। সে বুঝতে পারছে, কিছু একটা হয়েছে ভাইয়া আর আপার মাঝে। আপার চোখে ঘুমের মধ্যে ও পানি লেগে আছে।

পিউ রুমের বাইরেও খুজলো ভাইকে। কিন্তু ভাইয়া কোথাও নেই। উপায় না পেয়ে শ্রাবণ কে ডাক দিলো সে। শ্রাবণ আর সে মিলে মোটামুটি আশপাশে দেখে নিল। শ্রাবণ ফোন পাওয়ার ব্যাংক দিয়ে চার্জ দিচ্ছিলো। টেন পারসেন্ট চার্জ হতেই, সে ফোন অন করে ফেলে, ফোনে সমুদ্রের ম্যাসেজ। ম্যাসেজে লেখা, আমি ঢাকা যাচ্ছি। তোদের সময় হলে চলে আসিস।

শ্রাবণ থ মেরে যায়। ভাই এভাবে না বলে চলে কেন গেল? কিছু কি হয়েছে তবে? বড় কোন সমস্যা? সে চিন্তায় পড়ে গেল। যেভাবেই হোক দ্রুত এখান থেকে বের হতে হবে। সময় নষ্ট করা যাবে না।

শ্রাবণ পিউকে বলে, তুই আলিয়া আর আয়না আপাকে রেডি হতে বল। আমরা পনের মিনিটের মধ্যে বের হবো।

–ওকে।

পিউ গিয়ে আয়নাকে ডাকতে লাগলো।

কারো ডাক পেয়ে আয়না ধড়ফড় করে উঠে পড়ল। এক মুহূর্তের জন্য সে সবকিছু ভুলে গিয়েছিল। পিউকে দেখেই তার সমুদ্রের কথা মনে পড়লো। আচ্ছা সকালে সমুদ্র ওইভাবে চলে কেন গিয়েছিল? সে কি তার উপর রেগে আছে?

আয়না পিউয়ের দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকালো।

পিউ বলল, আপা আমরা এখন রওনা দিব৷দেরি করা যাবে না। উঠো প্লিজ।

আয়না উঠে দাড়ালো। প্রচুন্ড মাথা ব্যথা তার। মনে হচ্ছে মাথা ছিড়ে পড়বে৷

ঢুলু ঢুলু পায়ে আয়না গাড়িতে গিয়ে বসলো। আলিয়াও দ্রুত রেডি হয়ে গাড়ি তে বসে পড়ে। সবার চোখ মুখে হতাশার ছাপ। না জানি কি হয়! গাড়ি তে সবাই একেবারে চুপচাপ থাকলো। কারো মুখে কোন কথা নেই। আয়না চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। তার হাত-পা কাপছে। নিরবে কাদছে সে। যেই চাপা কান্নার শব্দ কেউ শুনতে পায় না।

আচ্ছা তার কি দোষ? সে বিধবা এটাই তার দোষ? সমুদ্র নাকি তাকে ভালোবাসে। এটাই তার ভালোবাসার নমুনা। অবশ্য এখানে সমুদ্রের দোষ নেই। দোষ তার কপালের। ভাগ্যের। তার উচিত ছিল সমুদ্রকে আগেই জানিয়ে দেওয়া। কিন্তু সুযোগ তো পায় নি।সমুদ্র অচেতনের মতো পড়ে ছিল তখন কারো কথাই তার কানে ঢুকছিল না। সেই অবস্থায় এতোবড় সত্য আয়না বলতে পারছিল না তাকে। আচ্ছা সমুদ্র কি তাকে ভুলে যাবে? যাক ভুলে। এটা কেবলমাত্র একটা ভুল। সমুদ্র তার চেয়ে কয়েকশ গুন ভালো মেয়ে ডির্জাভ করে। সে তার নখের ধুলাও না। আয়নার চোখ ভরে আসতে লাগলো।

হুট করে সে মুখ ভর্তি বমি করে দেয়।

বাসায় পৌছানোর পর পর আয়নার প্রচুন্ড জ্বর আসে। একটু পর পর বমি করতে থাকে সে। আলিয়া নিজেও ক্লান্ত ছিল। আয়নার এমন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের সবাই ঘাবড়ে যায়।

অথৈ এক দফা চিল্লা-চিল্লি শুরু করে দিলো। মেঘ নিজেও হতভম্ব। কারন আয়নার অবস্থা আসলেই ভালো না। রাতের দিকে আয়না অবচেতন হয়ে পড়ে। নিশ্বাস নিতে পারছিলোনা সে। আয়নার বাবা আর সময় নষ্ট না করে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।

আলিয়াও সঙ্গে যেতে চেয়েছিল কিন্তু রাত বেশি হওয়ায় মেঘ সঙ্গে নেয় নি তাকে।

হাসপাতালে ভর্তি করার পর ডাক্তার বললো, সম্ভবত জন্ডিস হয়েছে। টেস্ট করাতে হবে।

মেঘ চিন্তিত মুখেই মেয়ের ক্লান্ত ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল। বাবা-মায়ের কাছে সন্তানই তো সব। এই যে তার এই এতো বুদ্ধিমতী মেয়েটার জীবন যে এতোটাই কালো হবে কে তা জানত?

মেঘ হতাশার নিশ্বাস ছাড়ে। তার বড় মেয়ে হলো বাবা-মায়ের অত্যন্ত অনুগত সন্তান। তাকে যদি ডান দিকে যেতে বলা হয় সে ডান দিকেই যাবে। বামে ঘুরেও দেখবে না। কতো আশা নিয়ে ভালো একটা ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কে জানত এই বিয়েই কাল হবে তার মেয়ের জীবনে। জানলে কোন দিন ই তার মেয়েকে বিয়ে দিত না। নিজের কাছেই রেখে দিত আজীবন।

মেঘের চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। তখনই আয়না ঘুমের মধ্যে নড়ে-চড়ে উঠে মৃদ্যু আওয়াজে বলে, পানি খাব।

মেঘ মেয়েকে আস্তে করে উঠে বসালো তারপর পানি খাওয়ালো। আয়নার খিদেও পেয়েছে অনেক। কিন্তু রুচি নেই তার। সে জানে কিছু খেলেই সে বমি করে দিবে।

আয়না পানি খেয়ে বাবার দিকে তাকালো। একি! বাবার চোখে পানি। অবশ্য তার জন্য বহু বার বাবার চোখে পানি এসেছে আগেও। আয়না নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে, বাবার বুকে আছড়ে পড়ে কেদে দিয়ে বলে, আব্বু, আমি মরে কেন যাই না? কেন তোমাদেরকে এতো কষ্ট দিই? আমাকে প্লিজ মেরে ফেলো। আমি বাচতে চাই না আব্বু।

মেঘ মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। জ্বরের মাথায় মেয়ে বুঝি ভুলভাল বকছে। নাকি তার মেয়ে আবারো ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে?

মেঘ আতকে উঠে। আয়নার বিয়ের চারাসের মাথায় আয়নার স্বাসী ফাহাদ মারা যায়।বাইক এক্সিডেন্টে মারা যায় ফাহাদ।

ল এরপর মেঘ তার মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু আয়নার শ্বাশুড়ী ছেলের বউকে বাপের বাড়ি যেতে দিবেননা। আয়নাও আসতে চাচ্ছিলোনা। আয়না তখন কুমিল্লা থাকত।ফাহাদ পরিবার সহ কুমিল্লাতে বসবাস করত।

অগত্যা ফাহাদের মৃত্যুর দশ দিনের মাথায় মেঘ তার পরিবার নিয়ে আয়নাকে ওখানে রেখেই চলে আসে। ফোনে প্রতিনিয়ত মেয়ের সাথে কথা হত তাদের।

কিন্তু মাঝের দিকে আয়না ফোনেও ঠিক মতো কথা বলতে চেত না। এরপর!

এরপর এক সকালে তার মেয়ে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় তাদের বাসায় হাজির। কোন কথা নেই, বার্তা নেই, মেয়ে চলে এসেছে। তাও সদ্য বিধবা হওয়া।

এইটুকু ভাবতেই মেঘ বাস্তবে ফিরে আসে। আয়না এখনো তাকে ঝাপ্টে ধরে বসে আছে। মেঘ মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, কিছু খাবি মা?

,–উহু। কিছু খাব না৷

মেঘ আয়নার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। আবার ভাবনায় ডুব দিলো।

আয়না বাসা ফিরে এসে একেবারে চুপচাপ হয়ে গেল। শান্ত থাকত। কিছু জিজ্ঞেস করলে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকত। কোমল চেহারাটা কালো হয়ে যাচ্ছিল। আয়না ঢাকা আসার এক দিনের মাথায় আয়নার শ্বাশুড়ি আর দেবর এসে উপস্থিত। আয়নাকে নিতে এসেছে।

মেয়ের বাবা-মা সবসময়ই বোধহয় একটু নিরুপায় হয়। এজন্য তারা যখন আয়নাকে নিয়ে গেলেন মেঘ আটকাতে পারেনি। ভেবেছিল আর কটা দিন গেলে মেয়েকে একেবারে ওখান থেকে এনে নিজের কাছে রাখবে। আয়না যাওয়ার সময় একটা টু শব্দ ও করেনি জন্য মেঘ ভেবেই নেয় সে যেতে রাজী।সহজ-সরল চিন্তাধারায় মেয়েকে পাঠিয়ে দেয় শ্বশুড় বাড়ি। কিছু দিন ফাহাদের মায়ের সাথে থাকলে উনিও শক্ত হতে পারবে। তিনিও মাত্র যুবক ছেলে হারিয়েছেন। এই মূহুর্তে পরিবারের আরেক সদস্যের বিয়োগাত্মক হয়তোবা তার মধ্যে প্রভাব ফেলবে। এমন নেক চিন্তা করেই আয়নাকে যেতে দেয় মেঘ। কিন্তু এটা যে দ্বিতীয়
ভুল তা সম্পর্কে অবগত ছিল না কেউই।

এই ঘটনার পনের দিন পর কুমিল্লার এক হাসপাতাল থেকে আয়নার ফোন আসে। মেঘ কুমিল্লা পৌছে দেখে তার মেয়ের শরীরে নির্যাতনের দাগ। তার উপর যে অত্যাচার করা হয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মেঘের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। মেয়ের মৃত প্রায় অবস্থা৷ আয়নার শ্বশুড় বাড়ির কাউকেই দেখতে পেল না মেঘ। এদিকে মেয়ে অসুস্থ।মারা যাচ্ছে তার মেয়ে।

মেঘের মাথা খারাপ অবস্থা। নিজেকে মাঝ সমুদ্রে জাহাজ ছাড়া মনে হচ্ছিল সেই মুহূর্তে।

দুই দিন ধরে নাকি আয়না হাসপাতালে ভর্তি। জ্ঞান ছিল না। আয়না কিছুটা সুস্থ হলে তাকে ঢাকা আনা হয়। কিন্তু ততোদিনে আয়না মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল। রাতে ঘুমাত না।খাওয়া-দাওয়া ছেড়েই দিয়েছিল প্রায়। কান্না করত সারাদিন। রুম থেকে বের হত না।

আয়নাকে ঢাকা আনার পর মেঘ জানতে পারল, শ্বশুড় বাড়ি থেকে আয়নাকে বের করে দেওয়া হয়েছে কারন ফাহাদের মৃত্যুর পর তার নাকি দেবরের সাথে পরক্রিয়া চলছিল। যখন এই খবর তাদের কানে আসে আয়না সেই সময় পুরাপুরি সুস্থ ছিল না। মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিল কিছুটা। মেঘ তাদের কথা বিশ্বাস করেনা। সে জানে তার মেয়ে কেমন। এরপরে আর কোন যোগাযোগ করেনি আয়নার শ্বশুড়বাড়ির লোকদের সাথে। তাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেছিল। কাজ হয় নি। আয়না অসুস্থ থাকায় সাক্ষী দিতে পারেনি। মামলা ডিসমিস। তারপর এভাবে আড়াই বছর ধরে আয়না একা একা থাকে রুমে।কারো সাথে কথা বলেনা।

এতো দিন পর মেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। চিকিৎসা করা হয়েছে৷ এখন বন্ধ আছে। মেয়েকে আশা নিয়ে ঘুরতে যেতে দিল যে ঘুরে এসে কিছুটা রিফ্রেস হবে। তা না জন্ডিস বাধিয়ে আনলো। তার মেয়েটা বুঝি খুব দুর্বল।

মেঘ খেয়াল করলো, আয়না ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করছে। সে কান পেতে শুনল। আয়না সমুদ্রের নাম নিচ্ছে৷

মেঘ ভ্রু কুচকে ফেলে।

চলবে।

#প্রেমপ্রদীপ
part–23
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

বারান্দায় রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্র। হুহু করে বাতাস বইসে। এই হিম বাতাস যেন বসন্তের আগামনির বার্তা। প্রকৃতি তে সবকিছু ঘটার আগেই একটা করে পূর্বাভাস দেয়। এই যে শীত ঋতু চলে যাওয়ার আগাম সংকেত পাচ্ছে সে। এখন আর মোটা সোয়েটার পড়া যাচ্ছেনা। আবার ফাগুন ঘরে ঢোকার আগেই তার মনভুলানো হাওয়া ঘরে কাড়া নাড়ছে৷ সমুদ্র মুগ্ধ হতে পারলোনা। প্রকৃতি তে যদি সবকিছু আগাম সংকেত দিয়েই হয় তাহলে তাকে কেন কোন সিংন্যাল দেওয়া হলো না? এতো বড় ঘটনা ঘটে গেল৷ অথচ প্রকৃতি তাকে আগেভাগে কিছুই জানালো না?

সমুদ্র চোখ বন্ধ করেই সিগারেট ধরালো। মৃদ্যু হাওয়ায় তার চুল নড়ছে। সে গান গাইতে লাগলো,

“ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
আমার আপনহারা প্রাণ, আমার বাঁধন-ছেড়া প্রাণ”,,,,,,,,,,,

হুট করে তার চোখের সামনে আয়নার সাথে প্রথম দেখা হওয়া সেই মাঝরাতের কথা মনে হলো। সমুদ্র তড়িৎ গতিতে চোখ খুলে ফেলে। তার মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, “আমার বাধন ছেড়া প্রাণ”। বাক্যটা মর্ম অনেক বেশি গভীর। কেবল জ্ঞানীরাই বুঝবে এর মানে।

তোমার সাথে আমি কোন বন্ধনে আবদ্ধ নেই, কোন শিকলে আটক নেই, তারপর ও তুমি ই সব!!! বাধন ছেড়ে যাওয়ার পর ও তুমি ই আমার প্রাণ।

আচ্ছা তার বাধন ছেড়া প্রাণ কে? উত্তর টা সম্ভবত সমুদ্র জানে। কিন্তু এই মূহুর্তে স্বীকার করতে চাচ্ছেনা সে।

তখনই তার ফোনে কল আসে। বিরক্ত হয় সমুদ্র। দশ মিনিট আগেই ফোন অন করেছে। কালকে ঢাকা পৌছানোর পর ও সে ফোন অফ করেই রেখেছিল। মন-মেজাজ ভালো না জন্য আজকে অন করেনি। এখন বিকেল হয়ে আসছে জন্য ফোন খুলল আর দশ মিনিট না যেতেই কল আসার লাগে?

সে বারান্দা থেকে রুমে গিয়ে ফোন রিসিভ করে। আলিয়ার ফোন।

ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আলিয়া উদ্বিগ্ন হয়ে বলে, ভাইয়া আপনি ফোন কেন ধরছিলেন না?

সমুদ্র কড়া কিছু বলতে চাইলো কিন্তু কিছু বললো না। চুপ থাকলো।

আলিয়া নিজে থেকেই বলে উঠে, আপা আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে৷

— আমার সময় নেই। একটু ব্যস্ত আছি।

আলিয়া হতাশ হয়ে বলে, আপা দুই দিন ধরে প্রচুর অসুস্থ।

— ও প্রায় সময় ই অসুস্থ থাকে৷

— হাসপাতালে ভর্তি।

সমুদ্র একথা শুনে চমকে উঠে কিন্তু আলিয়াকে তা বুঝতে দিল না৷

আলিয়া ওপার থেকে কাদতে কাদতে বলল, আপা কিছু ই খেতে পারছেনা। জন্ডিস ধরা পড়েছে। বারবার আপনার কথা বলছেন । একটু আসেন না ভাইয়া।

— আচ্ছা দেখি।

সমুদ্রের এমন ভাবলেশহীন কথায় আলিয়া রেগে গিয়ে বলে, দেখি মানে কি? আমার আপা মারা যাচ্ছে আর আপনি আসবেন না? আপা কিন্তু আপনার স্ত্রী হয় অথচ কতোটা দায়িত্বহীন
জ্ঞানহীন হলে একজন তার অসুস্থ বউয়ের খোজ করেনা। একা ফেলে রেখে চলে আসে।সেম অন ইউ!

সমুদ্র তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, শালিকা, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন আর তোমার বোনই এই বিয়ে মানছে না। এবার বলো, আমি কি করতে পারি?

— আপনি কি মশকরা করছেন ভাইয়া?

— একদম না। আচ্ছা দেখি এডড্রেস দাও। কোথায় ভর্তি করিয়েছো তোমার বোনকে?

— অলোকে আছে।

— কচুখেত ব্রাঞ্চ?

— হুম।

— ওখানে কেন এডমিট করালে। স্কয়ারে করাতে। বেটার হতো।

— আমরা আপনাদের মতো এতো বড়লোক না।

— আচ্ছ। আচ্ছা।

ফোন কাটার পর ও সমুদ্র ধীরে-আস্তে ফ্রেস হলো। শার্ট ইস্ত্রি করল। তারপর রেডি হয়ে সময় নিয়ে চুল আছড়ালো। বাইরে থেকে তাকে দেখে যেন কেউ না বুঝে তার ভেতর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাচ্ছে।

সে ময়নার মা খালাকে ডাক দিয়ে, এক কাপ কড়া লিকার দিয়ে দুধ চা বানাতে বলে। চা খেয়ে রওনা দিবে।

সমুদ্রের তার ড্রেসিং টেবিল তথা আয়নার সামনে একটা টুল এগিয়ে এনে বসে আছে। কোন ছেলেই এভাবে আয়নার সামনে বসে থাকে না। এই স্বভাবটা মেয়েদের। ঘন্টার পর ঘন্টা আয়নার সামনে বসে সাজবে-গুজবে।

তখনই সমুদ্রের ফুপু ইভানা সমুদ্রের রুমে এসে বিচলিত হয়ে বলে, কি রে? তুই সকাল থেকে কিছু খাস না। দুপুরেও ভাত খাসনি। এখন আবার খালি পেটে চা খাবি?

–হুম। কড়া করে লিকার দিয়ে বানাতে বল।স্যালস্যালা হলে কিন্তু মুখে দিব না ফুপু।

ইভানা ভ্রু কুচকে বলে, তোর হয়েছেটা কি বল তো! সকাল থেকে খাচ্ছিস না কিছু। মন মরা হয়ে বসে আছিস। কিছু বলিস ও না।

— কিছু হওয়ার মতো হলে তো বলব।

ইভানা সমুদ্র কে দেখে বলে, কোথাও বের হচ্ছিস?

— হুম।

— কই যাবি?

সমুদ্র বিড়বিড় করে বলে, আমার আপনহারা প্রাণের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।

ইভানা সমুদ্রের কথা শুনতে না পেয়ে বলে, কি বললি শুনি নি। আবার বল বাবা।

— কিছু না। চা দিতে বল জলদি।

ময়নার মা চা দিয়ে গেলেন। কিন্তু চা আসলেই স্যালস্যালা হয়েছে। মুখে দিতেই মুখ বিকৃত করে সমুদ্র। চায়ের কাপ টেবিলে রেখে ফোন আর ওয়ালেট নিয়ে হাটা ধরলো।

“আপন কারো চেয়ে। সম্ভবত আপন-হারার কদর বেশী”

★★★
সমুদ্র যখন হাসপাতালে পৌছালো তখন বিকেলের শেষ ভাগ৷ সে দ্রুত পায়ে আগাচ্ছে। জ্যামের কারনে খানিকটা দেরি হয়ে গেছে। তার হাতে ফলের প্যাকেট। ডান হাতে কমলা আর কালো আঙুর।আর বাম হাতে তিনটা ডাব। এই ডাব খুজে পেতে গিয়েও খানিকটা দেরি হলো। আনার নিতে চেয়েছিল কিন্তু পায় নি দোকানে। হাসপাতাল ঢুকে আলিয়াকে কল দিল সমুদ্র।

ওপাশ থেকে আলিয়া রিসিভ করতেই সমুদ্র বলে উঠে, কতো নাম্বার রুমে আছো?

–৩০৫ নাম্বার রুম।

–আচ্ছা বলে সমুদ্র সিড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠলো।

রুমে ঢুকতেই দেখলো, আয়নাকে ঘিরে অনেকেই আছে। মামা-মামী, নানা, আলিয়া।

সমুদ্র ভ্রু কুচকে মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে, মামা এতোজন কে ওরা ঢুকতে দিল কেন?, এতোজন তো এলাউ না মেবি।

–পারমিশন নিয়েছি।

সমুদ্র আয়নার কাছে গেল না। দূর থেকেই ফলের প্যাকেট টা আলিয়ার হাতে দিয়ে মুচকি হাসলো।

সমুদ্র কে দেখেই আলিয়ার রাগ লাগছে। এতো ফিটফাট হয়ে আসার কি মানে? সে কি দাওয়াত খেতে এসেছে? এতো বেহায়া কেন? মনে দয়া-মায়া কিছু নেই তার? অসহ্য!

সমুদ্র আলিয়াকে প্রশ্ন করে, ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট টা দেখাও তো।

আলিয়া রিপোর্ট হাতে দিল। সে মনোযোগ দিয়ে সবটা দেখলো। আসলেই রক্তে বিলরুবিনের মাত্রা বেশি। জন্ডিসই হয়েছে আয়নার। বাইরের পানি খেয়েছিল বোধহয় যার দরুন এই অসুখ বাধালো।

তারপর মেঘের কাছে গিয়ে বলে,।বাসায় নিয়ে যাবেন কবে?

মেঘ বলে, কালকে নিয়ে যাব। আয়নার তো জ্বর ও এসেছে অনেক।

— আচ্ছা। জ্বর আসা জন্ডিসের লক্ষন। জ্বর থাকবেই। চিন্তার কোন কারন নেই।

তখনই আয়না চোখ খুলে। সে বেডে শুয়ে থেকেই সমুদ্রের কন্ঠস্বর শুনে চোখের মনি নাড়াতে থাকে। কোথায় সমুদ্র? দেখতে পাচ্ছে না কেন তাকে?

আয়না নিজ থেকেই দুর্বল শরীর নিয়েই মাথা ঘুরিয়ে সমুদ্র কে খুজতে লাগলো ।

আলিয়া তার কাছে গেল। সে আয়নার কাছে গিয়ে বসলো। আয়নার দৃষ্টি মাঝ বরাবর গেল।

আয়না নিষ্পলক চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সমুদ্রের দৃষ্টি তার হাতে থাকা কাগজের দিকে। সে সব মনোযোগ সেই কাগজে দিয়ে রেখেছে। আয়না কাপা ঠোঁটে এতো আস্তে করে সমুদ্র কে ডাকলো যে সে বাদে কেউ তার আওয়াজ শুনতেই পেল না। আয়নার চোখ ভরে উঠছে। সমুদ্র কি তাকে দেখতে এসেছে? আয়নার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

সমুদ্র একবারও আয়নার দিকে তাকায়নি। সে ঠিক করেছে তাকাবেও না। হাতের প্রেস্ক্রিবশনটা মামাকে দিতে দিতে বলে, এগুলো ফলো করলেই চলবে৷

মেঘ বলে, কি কি খাওয়াব ওকে?,

সমুদ্র বলল, এখানকার ডাক্তার কিছু বলে নি?

-না। হাসপাতালেত খাবারই খাওয়ানো হচ্ছে।

— এরা হচ্ছে আসল ঢাকার ডাক্তার। সবজি আর ফলমূল খাওয়াবেন। আশযুক্ত। একটু পর পর জুস, পানি শরবত খাওয়াবে। হাই ক্লাস প্রোটিন আর ফ্যাট যেন না খায়। দুধের খাবার ও যেন না খায়। কোন দরকার হলে আমাকে জানাবেন আর আলিয়া তো আছেই।

তখনই আয়না উঠে বসে। সমুদ্র আড়চোখে তাকিয়ে বুঝে ফেলে আয়না ঘুম থেকে উঠে বসেছে। সে কথা শেষ করেই রুমের বাইরের দিকে হাটা ধরল।

সমুদ্রের যদি পেছনে দুটো চোখ থাকত তাহলে বুঝতে পারত, তার প্রস্থান কারো চোখ ভর্তি পানি এনে দিয়েছে।

সমুদ্রের হঠাৎ চলে যাওয়াটা আয়নার মন ক্ষত করলো। সে আহত চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিছু সেকেন্ডে পর তার চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগে।

মেঘ আয়নার কাছে যেতেই সে হড়বড় করে বমি করে দিলো। প্রচন্ড দুর্বল লাগছে তার।

আয়নাকে শক্ত করে ধরে আছে মেঘ। তখনই
আয়না চোখ বন্ধ করে করুন গলায় বলে, আমি বাসায় যাব আব্বু। বাসায় নিয়ে চলো। আর এক মুহূর্ত এখানে থাকব না বাসায় যাব।

মেয়ের এমন আবদার ফেলতে পারছেনা মেঘ। মেয়ে বাসায় যেতে চায়। কি করা উচিত তার?,, এই অবস্থায় বাসায় নিবে? আবার যদি অসুস্থ হয়ে যায়।

আয়না কাতর গলায় বলে, আমার এখানে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। বাসায় যাব।

আয়নার মা চুপচাপ বসে ছিলেন। এবার সে মুখ খুললেন। তিনি বললেন, বাসায় গেলেও কষ্ট হবে। তার চেয়ে হাসপাতালেই থাকুক ও৷

আয়নার মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে মেঘ মেয়েকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

একটা সিএনজি ভাড়া করে মেঘ আর আয়না রওনা হলো। সিএনজির ভেতরএ আয়না আরেকবার বমি করে সিএনজি নোংরা করে দিল৷ মেঘ মেয়ের পাশে নিয়ে বসে আছে। আয়না বাবার বুকে গুটিসুটি মেরর কাদতে লাগলো।

সিএনজি ওয়ালা পেছনে তাকালে মেঘ অনুরোধের কন্ঠে বলে, ভাই, মেয়েটা খুব অসুস্থ। আমি আপনার গাড়ি পরিষ্কার করে দিব। ভাড়াও বাড়ায় দিব। সমস্যা নাই।

সিএনজি ওয়ালা স্মিত হেসে বলে, দরকার নাই। আপনার জায়গায় আমার মেয়ে হলে কি টাকা বেশি নিতাম। আমি তো এমনি তাকায় দেখলাম মেয়ের অবস্থা বেশি খারাপ কিনা।

মেঘ সিএনজি ওয়ালার কথায় নির্বাক। কিছু মানুষের মানসিকতা এতোই উত্তম যে ভাবার বাইরে আবার কিছু মানুষের মানসিকতা এতো নিষ্ঠুর যে কল্পনাও করা যায় না। আসলেই মানুষ ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্র্যের হয়।

আয়না বাবাকে জড়িয়ে নিয়ে কেদে কেদে বলে, আব্বু আমার এতো কষ্ট আর ভালো লাগেনা। আমি ও সুখে থাকতে চাই। আমি কি আর সুখে থাকতে পারব না?

মেঘ উত্তর দিতে পারলোনা। আসলেই কি তার মেয়ে আর সুখের দেখা পাবেনা।

আয়না সিএনজির দরজার ছোট আকাশ দিয়ে কালো আকাশটা দেখছে।

রাতে কিন্তু আকাশটা কালো হয়ে যায়না। বরং আমাদের জীবনে আলো থাকেনা জন্য আমাদের কাছে রাতের আকাশটা কালো,অন্ধকারে বসে রঙিন নীল আকাশ দেখতে পাইনা ।

★★★

আবেগ অস্থির ভাবে পায়চারি করছে। সবকিছু কেমন ধোয়াশেময় হয়ে গেছে। ছন্নছাড়া, লাগামহীন। কালকে থেকে তার ছেলের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। ভেতরে ভেতরে যে কি।চলছে তার ছেলের জীবনে সে জানে না। এদিকে নিজেও অসুস্থ। আর সহ্য হচ্ছে না একাকিত্ব। অন্তত শেষ যে কটা দিন সে বেচে আছে, সেই দিন গুলো যেন সুন্দর কাটে। এজন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে আজকে সে রোদেলার বাসায় যাবে। নিজের মেয়ে আর বউকে ফিরিয়ে আনতে যাবে। সে জানে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে কিন্তু কথায় আছে না?

নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। বাকি কটা দিন সে রোদেলার সাথে থাকতে চায়। এটা তার শেষ ইচ্ছা। জানে অভাগাদের ইচ্ছা পুষতে নেই। কিন্তু মানুষ মাত্রই ইচ্ছা পোষণ করবে।

আবেগ রেডি হয়ে রওনা হলো। অনেক দিন পর
আবেগ এদিকটায় আসলো। কিছুই বদলে যায়নি। আগের মতোই আছে। দোকান-পাটগুলো আর নেই কিন্তু রাস্তা-ঘাট আগের মতোই আছে।

বেল বাজাতেই রোদেলা ভাবলো মেঘ এসেছে বোধহয়। সে দ্রুত পায়ে গেট খুলতে গিয়ে চমকে উঠে। এ কাকে দেখছে সে! আবেগ?

রোদেলা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল আবেগের দিকে। ইশ! চেহারার কি অবস্থা! বিধ্বস্ত লাগছে কেমন? মনে হয় শান্তিতে ঘুমায় না কতোদিন। খাওয়া-দাওয়া কি ঠিক মতো করেনা সে?

আবেগ ক্লান্ত গলায় বলে, ভেতরে আসতে পারি?

রোদেলা সরে দাড়ালো। তআর মুখের বুলি হারিয়ে গেছে। এতো বছরের প্রতিক্ষা কি শেষ হতে চললো!

আবেগ চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসে রোদেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে, তুমি না বিকেলে চা খাও?

–হু।

— আজকে খেয়ে ফেলেছো নাকি?,

— কেন ?

আবেগ নির্লিপ্ত গলায় বলে, না খেয়ে থাকলে আমাকেও এক কাপ দিও আর যদি খেয়ে থাকো তাহলে থাক। লাগবে না।

রোদেলার বুকে চিনচিনে ব্যথা করে উঠে। সে দ্রুত পায়ে চা বানাতে গেল। তার হাত-পা কাপছে। গা ঘেমে গেছে তার।

রোদেলা চায়ে দুই চামচ চিনি দিয়ে, দুধ দিলো চায়ে। আবেগ দুধ চা খেতে পছন্দ করে। চিনি ছাড়া চা খায় না। সে দ্রুত চা হাতে আবেগের কাছে গেল।

আবেগ মাথা নিচু করে বলে, আমি তোমাদের নিতে এসেছি।

কথাটা ঝনঝন করে রোদেলার কানে বাজতেই সে চায়ের কাপটা ফেলে দিলো। গরম চা তার পায়ে পড়ে গেল। চায়ের কাপের ভাঙ্গা টুকরো চারপাশে ছিটিয়ে গেল।

আবেগ বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে রোদেলাকে দেখেই যাচ্ছে। রোদেলা একদম আগের মতোই আছে। কেন বদলে যায় নি?চেহারাটার মতো কি তার মনটাও অপরিবর্তিত আছে কি?

আজো তার মনে সে আছে,? রোদেলাকে কি শেষ সময়টায় পাশে পাবে ?

চলবে