প্রেমপ্রদীপ পর্ব-২৬+২৭

0
3476

#প্রেমপ্রদীপ
Part–26
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

ভীষণ জোরে কিছু ভাঙ্গার শব্দে পিউ ভয় পেল। ভাইয়ার রুমের দরজার সামনে দাঁড়ানো সে। হাতে এক কাপ কফি। কিন্তু ভেতর থেকে জিনিস ভাংচুরের আওয়াজে আর ঢোকার সাহস পাচ্ছে না পিউ।

তারপর ও গরম কফি আর রজনিগন্ধা ফুল হাতে ভাইয়ের রুমে ঢুকে পিউ।

সমুদ্র মাত্র আয়নার ফোন কেটেছে। তার মেজাজ ভয়ংকর রকমের খারাপ। তাই তো পাশে থাকা সাইড টেবিলে সজোরে লাথি মারলো। টেবিল নড়ে ওঠার সময় টেবিলে থাকা ফুলদানি নিচে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সমুদ্র ভ্রু কুচকে বসে আছে চুপচাপ। পায়ে ব্যথা লেগেছে। এখন মনে হচ্ছে, কেন লাথি মারতে গেল! নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলো। তখনই পিউয়ের আগমন ঘটলো।

পিউকে দেখে সমুদ্র সরু চোখে তার দিকে তাকায়। পিউ একটা শুকনো ঢোল গিলে মেকি হেসে বলে, হাভ সাম কফি।

সমুদ্রের কফি অনেক পছন্দ। তাই সে আপত্তি করল না। মুড ঠিক করার জন্য হলেও কফি খাওয়া যেতে পারে। সে কফির মগ হাতে নিল। কফিতে চুমুক দিল । দুদান্ত হয়েছে খেতে। তার ছোট্ট পুতুল এতো সুস্বাদু কফি বানাতে পারে! এতো গুন তার বোনের! এই ধরনেত কফিই নামি-দামি৷ পাচ তারকা রেস্টুরেন্টে এক কাপ পাচশ-ছয়শ টাকা প্লাস ভ্যাটে বেচে।

ভাইয়ের মুড ভালো জন্য পিউ ফুল এগিয়ে দিয়ে বলে, নাও ভাইয়া এটা তোমার জন্য!

সমুদ্র একটু অবাকই হলো। এর আগে সে কোন দিন কারো কাছ থেকে ফুল পাইনি। আসলে বাঙ্গালী টাকা খরচ করে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনে কম কিন্তু অপ্রয়োজনীয় কাজ বেশি করে!

বিদেশে এর উলটা, ওরা আবার এরকম ফুল প্রায় কিনে অন্যকে উপহার দেয়।

সমুদ্র হাত বারিয়ে ফুলটা হাতে নিল। কি আশ্চর্য! তার বিরক্তি ভাব কমতে থাকে।

পিউ মুচকি হেসে বলে, নাকে নিয়ে গন্ধ নাও, কি যে মিস্টি গন্ধ!

সমুদ্র বোনের কথামতো, ফুলটা নাকের সামনে ধরল।গন্ধ আছে কিন্তু এতোও না যতোটা পিউ বলছিল।

পিউ চলে যেতে ধরছিল তখন সমুদ্র বলে উঠে, শোন, একটা সাহায্য লাগবে।

পিউ হাটা ধরেছিল রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য। ভাইয়ের কথায় তার পা আটকে যায়। সে উত্তেজিত হয়ে ভাইয়ের পাশে গিয়ে বসে বলে, বল! বল! কি হেল্প লাগবে!

সমুদ্র মৃদ্যু আওয়াজে বলে, আয়নার বাসায় যাব। ব্যবস্থা করে দে না প্লিজ।

ভাইয়ের আকুতি ভরা কন্ঠ শুনে, সে ভাইয়ের দিকে তাকালো। সমুদ্র মুখ কালো করে রেখেছে।

পিউ হুট করে শব্দ করে হেসে দিল। সমুদ্র এতে বিরক্ত হলো।

পিউ হাসতে হাসতে বলে, তো যাও না!

— বাট এভাবে যাওয়া তো যায় না কারো বাসায়। একটা রিজন তো লাগবেই। এইজন্যই হেল্প চাচ্ছি।

পিউ গম্ভীর ভঙ্গিতে কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলে, আমি ডাইনিং রুমে যাচ্ছি। তুমি ও পাচ মিনিটের মধ্যে আসবা।

— কেন?

— আহা আসবা মানে আসবা। আমার কাছে ফাটাফাটি প্লান আছে। পাচ মিনিটের মধ্যে আসো।

বলে পিউ চলে গেল।

সমুদ্র কিছু না বুঝে পাচ মিনিট পর ডাইনিং রুমে গেল। ডাইনিং রুমে সবাই বসে ছিল। সবাই চা খাচ্ছে। পিউ সবার মাঝে বসে কি যেন বলছে, সবাই তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।

সমুদ্র এগিয়ে গেল। পিউ ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলে, ভাইয়া, আমি আমার ফোনের চার্জার নানা বাসায় রেখে এসেছি। ফোনে চার্জ নেই। প্লিজ প্লিজ এনে দাও। একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে জুমে।

সমুদ্রের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। তার পুতুল বোন এতো বুদ্ধিমতী! বাব্বাহ!

ইভানা বলে উঠে, আমার চার্জার নে।

সমুদ্রের মুখ কালো হয়ে গেল। ফুপুও না আগ বাড়িয়ে ঝামেলা বাড়ায়!

পিউ প্লেট থেকে একটা আলুর চপ তুলে কামড় দিয়ে খেতে খেতে বলে, আমার টা আইফোন। আমার চার্জার ছাড়া হবে না।

ইভানা বলে, ও! এসব ফোনের ব্যাপার আবার আমি কম বুঝি। আমার চার্জার দিয়ে তাহলে হবে না রে পিউ?

–উহু।

ইভানা ভারী চিন্তিত গলায় বলে, তাইলে আর কি করার! জলদি যা সমুদ্র গিয়ে নিয়ে আয়।

সমুদ্র মনে মনে অনেক খুশি কিন্তু প্রকাশ করছে না।

রোদেলা সমুদ্রের সামনে নাস্তার প্লেট রাখলো।আলুর চপ, মোগলাই আর প্যাডিস। আজকে অনেক কিছু রান্না হয়েছে।

সমুদ্র মুখ ঘুরিয়ে নিল।

রোদেলা বলে উঠে, তোমার তো আলুর চপ প্রিয় খাচ্ছো না কেন?

সমুদ্র তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, আমার আলুর চপ একদম পছন্দ না, প্রিয় তো অনেক দূরের কথা!

রোদেলা দমে গেল। আর কিছু বললো না। ছোট বেলায় সমুদ্র আলুর চপ খাওয়ার জন্য কান্না করত। অথচ এখন নাকি তার এই খাবার পছন্দ না।

সমুদ্র পিউয়ের দিকে তাকিয়ে ইশারায় থ্যাংকস বলে বের হয়ে যায় বাসা থেকে। উদ্দেশ্য আয়নার বাসা যাওয়া। এখান থেকে ঘন্টা খানেক লাগবে।

★★★

আয়না তার রুমে পায়চারি করছে। সবকিছু অসহ্য লাগছে তার কাছে। সমস্ত জগৎ তার কাছে অসহ্য! সে ঠিক করে নিয়েছে, আজকে যদি সমুদ্র না আসে তার সাথে দেখা করতে তাহলে সে আত্মহত্যা করবে। তার মতো পোড়াকপালির আগেই মারা যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আত্মহত্যা করলে যে জাহান্নামে যেতে হবে। এ কালে শান্তি পায়নি কিন্তু আয়না চায় যেন পরকালে শান্তি পায়। সুখে থাকে যেন!

আজকে বাসায় সে আর নানী ছাড়া কেউ নেই। আলিয়ার নাইট ডিউটি আছে আজকে তাই মা সহ খালার বাসায় গিয়েছে। খালার বাসার পাশেই আলিয়ার হাসপাতাল। বাবা আর নানা
ব্যবসার কাজে বিকেলে বের হয়েছেন। বাবা তার জন্য তিনদিন ধরে অফিসে যায়নি। আজকে সে সুস্থ বোধ করছে জন্য অফিস গেলেন। এদিকে আবার নানীর প্রেসার বেড়েছে তাই ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে।

হঠাৎ গেটে বেল বাজলো। কলিং বেল বাজতেই আয়না কেপে উঠে চিন্তা করে কে আসতে পারে! বাবা এলো নাকি? হতে পারে। কাজ শেষ তাই চলে এসেছে।

সে দ্রুত হাটা দিল তারপর গেট খুলতেই টাশকি খেল। আশ্চর্যের আষ্টম আকাশে পৌছে গেল সে। খুশিতে মুখ উজ্জ্বল হতে লাগলো।

সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। পরনে বাসায় পড়া টিশার্ট আর টাওজার। এর আগে কোন দিন সে সমুদ্র কে এই লুকে দেখেনি। সবসময় সমুদ্র ফরমাল ভাবে শার্ট পড়ে বসে থাকে। মনে হাই স্কুলের ম্যাথ টিচার!

সমুদ্র হাপাচ্ছে। সিড়ি দিয়ে এক প্রকার লাফিয়ে লাফিয়ে উঠেছে। আর তর সইছিলো না তার!

আয়না সমুদ্রের খুটিনাটি সব দেখছে।

সমুদ্র গলা খাকিয়ে বলে, ভেতরে আসতে পারি?

আয়না মাথা ঝাকালো।

— তাহলে সাইড দাও।

আয়না সরে দাড়ালো। তার কেমন যেন লাগছে। লজ্জাও লাগছে, ভালোও লাগছে, কান্নাও পাচ্ছে। সমুদ্র আসবে তাকে দেখতে এটা তার কল্পনা ছিল। তবে কল্পনা কি সত্য হলো?

সমুদ্র বাসায় ঢুকে চারপাশে তাকিয়ে বলে, কেউ নেই নাকি?

— নানী আছেন।

–কোথায় উনি?

— ঘুমাচ্ছে।

,–প্রেসার বেড়েছে নাকি?

–হু।

— তুমি কেমন আছো আয়ু?

সমুদ্র কন্ঠে এমন কিছু শুনে আয়নার মনের মধ্যে ভূমিকম্প হয়ে গেল।রিখটার স্কেল দিয়ে মাপলে এর পরিমাপ, ৮.০ আসবে! কি ভয়ানক ভূমিকম্প ঘটে গেল অথচ সামনে থাকা ব্যক্তিটা টের অব্দি পেল না!

আয়না উত্তর দিতে পারলোনা। মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। তার গলার বাকযন্ত্র কাজ করছে না।

সমুদ্র আয়নার কাছে এসে তার কপালে হাত দিলো। সঙ্গে সঙ্গে আয়নার গায়ে বেয়ে চার চল্লিশ ভোল্টের বিদ্যুৎ খেলে গেল।

সমুদ্র বেশ মনোযোগ দিয়ে তার কপালে হাত দিয়ে চোখে চোখ রেখেছে। আয়না চোখ স্থির রাখতে পারছেনা। চোখ ভরে আসছে। যখন-তখন পানি চলে আসবে।

সমুদ্র অপর হাত দিয়ে আয়নার নাকের নিচে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে দিয়ে প্রশ্ন করে, ঘামছো কেন?

আয়না শুকনা ঢোক গিলল। সে একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে।

আচ্ছা সমুদ্র কি সত্যি এসেছে নাকি সে স্বপ্ন দেখছে? তার এতো খুশি লাগছে কেন?

সমুদ্র সরে এসে বলে, চা দাও তো।

আয়না দ্রুত চা বানাতে গেল। সে ঠিক করলো, আজকে নিজ হাতে রান্না করে সমুদ্র কে খাওয়াবে।

কিন্তু কি রান্না করা যায়! বাসায় কি কি আছে? তারা মধ্যবিত্ত পরিবার। বাসায় সবকিছু কখনোই থাকে না। চিনি থাকলে চাপাতা থাকে না আবার, দুধ থাকলে চিনি থাকেনা টাইপ অবস্থা তাদের।

বাসায় নুডুলস ছাড়া কিছু ই নেই। হতাশ হয় সে। সমুদ্র তো ছোট বেলায় নুডুলস খুব পছন্দ করত। এখনো কি করে? সে রান্না করলে কি খাবে তার হাতের রান্না?

আয়না সাত-পাচ ভাবতে ভাবতে ই রান্না শুরু করল। আজকে বহু দিন পর রান্না করছে। সে খুব ভালো বিরিয়ানি আর তেহারি বানাতে পারত! জর্দা পোলাও টাও তার খুব মজা হতো। প্রতি ঈদে আয়নাই বাসার সব রান্না করত। এখন এসব আষাঢ়ে গল্প।

সে রান্না শেষ করে সুন্দর করে ট্রেতে সাজিয়ে বের হলো রান্নাঘর থেকে।

এদিকে খানিকক্ষন কেটে যাওয়ার পরও আয়ু না আসায় সমুদ্র বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরালো। সিগারেটে টান মারতেই তার প্রেয়সী ট্রে হাতে হাজির হলো বারান্দায়।

সমুদ্র উৎসাহ নিয়ে দেখলো কি এনেছে। চা, নুডুলস আর ড্রাই কেক।

সে নুডুলসের বাটি হাতে নিয়ে খেতে লাগলো। বেশ আয়েস করে খাচ্ছে সমুদ্র। যেন অমৃত কিছু খাচ্ছে।

খাওয়ার মাঝপথে সে খাওয়া থামিয়ে আয়নার কাছে গেল এবং চামচে করে তার মুখের সামনে নুডুলস ধরলো।

আয়না বিষ্মিত হলো। সমুদ্র বলল, নাও মুখে দাও৷

আয়না অল্প একটু খাবার মুখে নিয়ে বিষ্ময়কর চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। সমুদ্র এবার নিজে বাকিটা খেয়ে নিয়ে বলে উঠে, আয়ু বাচ্চাদের মতো মুখে খাবার ধরে আছো কেন? খেয়ে নাও।

আয়না লজ্জা পেল। সে এতোক্ষন সমুদ্রের হা করা, মুখে খাবার পুড়ে দিয়ে চাবিয়ে খাওয়ার দৃশ্য দেখায় এতোটাই ব্যস্ত ছিল যে নিজের খাওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিল।

খাওয়া শেষ করে চায়ের কাপে চুমুক দিলো সমুদ্র। তারপর বললো,পৃথিবী টা গোল! এজন্য কখন কি হয় বোঝা যায় না! কিন্তু যেহেতু বৃত্তাকার তাই ঘুরেফিরে সেই জায়গায় এসে থামি যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম।

আয়না মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনছে। কি সুন্দর করে কথা বলে সে। মনে হয় সে বলুক আর আয়না শুনে যাক!

সমুদ্র কথা বলা থামিয়ে দিয়ে বলে, বল তো বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সূত্র কি?

— পাই আর স্কয়ার।

–ভেরি গুড। আমি ভেবেছিলাম তুমি উত্তর দিতে পারবে না।

আয়না নিচু গলায় বলে, আমি অশিক্ষিত না সমুদ্র। এটা তোমার ভুল ধারনা যে আমি অশিক্ষিত। কেন এমন ভাবো জানি না।

সমুদ্র চায়ের কাপ সরিয়ে সিগারেটে ফুক দিয়ে বলে, তাই নাকি?কি পাশ করেছো তুমি? বিলেত থেকে ব্যারেস্টারি?

–অর্নাস পাশ করেছি। (নিচু গলায়)

— কোন বিষয়ে? বাংলা বা ইংরেজি ?

— ক্যামেস্ট্রি।

সমুদ্র সিগারেটে টান মারতে যাচ্ছিলো কিন্তু আয়ুর মুখে ক্যামিস্ট্রি সাবজেক্ট শুনে সে থ হয়ে যায় এবং আয়ুর দিকে তাকিয়ে বলে, ওহ আল্লাহ! ক্যামিস্ট্রি! এতো কঠিন সাবজেক্টে পড়াশোনা করেছো! কোন ভার্সিটি থেকে?
— ঢাকা ভার্সিটি।

সমুদ্র একটা বড়সড় ধাক্কা খেল এবং কিছুক্ষন চুপ থেকে উলটো পথে হাটা ধরলে আয়না দ্রুত তার কাছে গিয়ে কাদো কাদো গলায় বলে, তুমি কি আমাকে ঘৃণা করো?

সমুদ্র ভ্রু কুচকে আয়নার দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না।

আয়না কেদে দিয়ে বলে, প্লিজ আমাকে ঘৃণা করবেনা।

— ঘৃণা কেন করব!

— আমি বিধবা জন্য,,,,

সমুদ্র এতোটুকু শুনেই রেগে ফেটে পড়ে আয়নাকে দেয়ালের দিকে ধাক্কা দিল।

দেয়ালের দিকে ধাক্কা খেয়ে পড়ল সে।
আয়না পিঠে ব্যথা পায়। সমুদ্র কর্কষ কন্ঠে বলে,নিজেকে বিধবা বলে কি প্রুফ করতে চাও?
আমি মারা গেছি? আয়ু তুমি চাও না আমি সুস্থ থাকি, বেচে থাকি!

আয়না কাদার বেগ কমিয়ে দিয়ে বলে, আমি সবসময়ই চাই তুমি সুস্থ থাকো। অনেক বছর বাচো।

— তাহলে আমাকে মৃত বানিয়ে দিতে পারলে এক নিমিষেই! বুক কাপলো স্বামী সামনে দাড়িয়ে থাকতেও নিজেকে বিধবা বলতে?

আয়না হতভম্ব হয়ে গেল।

সমুদ্র তার নিকটে এসে দাঁড়িয়ে বলে, আর কোন দিন যদি নিজেকে বিধবা বলো তবে আজীবনের জন্য কথা বলা বন্ধ করে দিব। এই যাত্রায় ক্ষমা করলাম। কিন্তু শাস্তি পেতে হবে তোমাকে আয়ু।

আয়না কাপা গলায় বলে, কি শাস্তি?

— তোমাকে আগের মতো হয়ে বাচতে হবে। আগের আয়ু, চঞ্চল আয়ু হতে হবে!

— আমি পারব না। (কেদে দিয়ে)

— একদিনে না আস্তে আস্তে৷ চেষ্টা করো। মানুষ পারেনা এমন কিছু নেই। Slow and steady wins the race!

আয়না মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে লাগে।

সমুদ্র নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে, সাত দিন পর আবার আসব। এর মধ্যে আগের মতো হবার চেষ্টা চালাতে হবে। চেষ্টা করবে। চেষ্টা না করলে কিন্তু আর আসব না। এখানেই শেষ দেখা।

আয়না মৃদ্যু আওয়াজে বলে, আচ্ছা চেষ্টা করব। কিন্তু এর মধ্যে একবারও আসবে না?

— না।

আয়না ছলছল চোখে সমুদ্রের দিকে তাকালো। সমুদ্র তা দেখে হেসে বলে,আলিয়া নূর জাহানের ফোনে প্রতিদিন রাত এগারোটায় কল দিব। রিসিভ করবে।

আয়নার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল।

হুট করে সমুদ্র আয়নার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে এনে, তার ডান গালে গভীর ভাবে চুমু দিয়ে বলে,
Happy kiss day, বউ!

চলবে।

#প্রেমপ্রদীপ
Part–27
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

আয়না গালে হাত দিয়ে চোখ গোল গোল করে দাঁড়িয়ে আছে। গা বেয়ে ভালোলাগার শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। শ্বাস আটকে গেছে তার। মনে হচ্ছে সময়টাও থমকে গেছে, সেই সাথে নিজের মন, মস্তিষ্ক সব থমকে গেছে তার। সেই সাথে এক রাশ লাজুকতা তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে আসছে৷

সমুদ্র আর কিছু না বলে বারান্দা থেকে বের হলো। আয়না এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেইভাবেই। পা দুটো অসাড় হয়ে আছে। তাই নড়তেও পারছেনা। কানে মেইন গেট খোলা ও বন্ধ করার শব্দ এলো। তবে কি সে চলে গেল? আয়নার বুকটা ছ্যাত করে উঠে। সে বারান্দা থেকে নিচের দিকে সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মিনিট দুই পর সমুদ্র কে উপর থেকে সে দেখতে পেল। সে হেটে হেটে সামনে পা বাড়াচ্ছে৷

কি মনে করে যেন সে আয়নার দিকে মাথাটা উচু করে তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। সমুদ্র মৃদ্যু হেসে হাটা ধরল।

আয়না উদাসীন চোখে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল।

সে কি পারবে নিজেকে আগের মতো করে তৈরি করতে? সবকিছু কি এতোটাই সহজ? সে একটা বড় করে দম নেয়। কালকে থেকে চেষ্টা করবে আগের মতো স্বাভাবিক হওয়ার।চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই। এতো দিন চেষ্টা করেনি কারন তার চোখে কোন স্বপ্ন ছিল না। এখন আছে। বেশ বৃহৎ পরিসরের এক আশা, স্বপ্ন তাহলো সমুদ্রের হাত আকড়ে ধরে সামনের দিনে পা ফেলার স্বপ্ন।

সেও বাচতে চায় অন্য সবার মতো করে! এক ঘরে বন্দি থাকতে চায় না।

আয়না আকাশের দিকে তাকালো। জ্বলজ্বল করে আকাশের নক্ষত্র গুলো জ্বলছে৷ মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকেও মুক্ত লাগছে। শরীরটা হালকা লাগছে তার।

আয়না মুচকি হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছড়া কাটলো,

থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে,-
কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে।

তার চোখে-মুখে নতুন কিছু আশা, স্বপ্ন, ভালোবাসা, ভালোলাগা, নতুন করে বাচতে শেখার অনুপ্রেরণা, মন্ত্র উপছে পড়ছে৷

★★★
ধানমন্ডির আশেপাশে ভালোবাসা দিবস জন্য হৈচৈ লেগে গেছে। ফুটপাতে গোলাপ বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে আরো ফুল তো আছেই। কিন্তু গোলাপের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। কাপলদের ভীড় এখনো খুব একটা দেখা যাচ্ছে না সকাল জন্য প্রেমিক রা ঘুম থেকে উঠে নি। দুপুরের পর দেখা যাবে এদেরকে।

রঙ্গন একটা ফুল ওয়ালার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, এক পিস গোলাপ কত করে ?

— এক দাম পঞ্চাশ।

রঙ্গনের চোখ কপালে। সে ঝাড়ি মেরে বলেন,গাছের চাড়া কিনব না। ফুল কিনব।

লোকটা বিরক্ত হয়ে বলে, ফুলের দামই পঞ্চাশ টাকা।

— মজা করেন আমার সাথে?

–জি না।

রঙ্গন তেজি গলায় বলে, এতো দাম কেন?

লোকটা বলল, কেমন মানুষ আপনে? গার্লফ্রেন্ডের জন্য একটা ফুল কিনতে আইসাও বার্গেনিং করেন, ছ্যেহ!

রঙ্গন মুখ বাকিয়ে বলে, তুমি তো এসব বলবাই! নইলে ব্যবসা চলবে কেমনে?

রঙ্গন হাটা ধরল। লোকটা বলে উঠে, ফুল নিবেন না?

সে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, ফুল নিয়ে কি করব? কেউ আছে যে দিব? খামোখা পঞ্চাশ টাকা পানিতে ফেলব নাকি!

সামনের স্টেশনেই রঙ্গনের কর্মক্ষেত্র। সে আস্তে আস্তে হাটছে। তার মনে বহুত প্রেম জমা আছে কিন্তু এই প্রেম যার মাথায় ঢালবে তার-ই বড় অভাব। মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপন দিতে মন চায়, গার্লফ্রেন্ড চাই!

সে গোমড়া মুখে পুলিশ স্টেশনে এসে বসলো।যে যার মতো কাজ করছে। কেউ আবার চা-শিঙাড়া খাচ্ছে।

রঙ্গন তাদের এক পিয়ন কে ডেকে বলে, আমার জন্য এক কাপ চা আর শিঙ্গারা আনো তো। খাইরুল ভাইয়ের চায়ের দোকান থেকে আনবা। ওনার চা-টা ফাটাফাটি হয়।

— আচ্ছা স্যার।

রঙ্গন শিঙ্গারা খাওয়ার অপেক্ষায় আছে। আজকে তেমন কাজ নেই। বসে বসে দিন পার করবে। সে মনে মনে ভেবে নিয়েছে আজকে দুপুরে সুলতান’স ডাইন থেকে কাচ্চি খাবে। তাইলে অন্তত মনের ব্যথা কমবে৷

সে বিড়বিড় করে বলে, Single life is awesome!

★★★
আবেগ চুপচাপ বসে আছে ড্রয়িং রুমে।সমুদ্র, পিউ, শ্রাবণ আর ইভানা মিলে লুডু খেলছে। পিউ তেমন একটা বুঝে না লুডু খেলার কৌশল। তাই সে বারবার উল্টাপাল্টা দান দিচ্ছে আর সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

আবেগ উঠে দাড়ালো এবং পিউয়ের পাশে গিয়ে দাড়ালো। পিউ তিনটা গুটি হাতে ধরে বসে আছে। মুখটা গোমড়া করে রেখেছে।

আবেগ বললো, তিনটা গুটিই খেয়ে ফেলেছে তোমার?

পিউ ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, হুম।সমুদ্র ভাইয়া আমার একটা পাকা গুটি কেটে ফেলেছে বাবা। আর দুইটা শ্রাবণ ভাইয়া কাটছে।

সমুদ্র ছক্কা হাতে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে, ওই শ্রাবণ দেখ তো পিউয়ের চতুথ নাম্বার গুটি কাটতে কত লাগবে আমার?

শ্রাবণ শয়তানি হেসে বলে, চার!

সমুদ্র দান দিলো। কিন্তু দান আসলো তিন। সে সঙ্গে সঙ্গে পিউয়ের সবুজ গুটির পেছনে নিজের হলুদ গুটি দিলো৷ পিউ অসহায় চোখে বাবার দিকে তাকালো।

আবেগ মেয়ের হয়ে সমুদ্রকে ধমকে বলে, এই তুই আমার মেয়ের গুটি কাটবি না।

সমুদ্র বাকা হেসে বলে, মেয়ের পক্ষপাতিত্ব করো কেন?

পরের দানে পিউয়ের পুট উঠলো। সবাই আবার হেসে দিলো। শুধু হাসলো না আবেগ আর পিউ৷

এবার সমুদ্রের দানে দুই উঠে আর সে পিউয়ের শেষ সম্বলটা রক্ষা করল। অন্য গুটি দিয়ে দুইয়ের দান দিতে দিতে বলে, পিউ হলো দুধভাত।

পিউ অভিমানী গলায় বলে, আমিও মোটেও দুধভাত না!

শ্রাবণ হোহো করে হেসে বলে, না। না। পিউ দুধভাত না। ও হলো আম দুধভাত।

সকলের মধ্যে হাসির ধুম পড়ে গেল৷ এবারে আবেগ ও হেসে দেয়৷

সবাইকে হাস্তে দেখে পিউ নিজেও খুশি হয়। এমন একটা সুখী পরিবারই তো সে সবসময়ই চাইত। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেছে। শুধু মা নেই এখন। ভবিষ্যতে মাও থাকবে।

রোদেলা পর্দার আড়াল থেকে ড্রয়িং রুমে সবার কান্ড দেখছে। সেও মুচকি হাসছে। তার কি যে ভালো লাগছে। মন চাচ্ছে, সেও যদি সবার সাথে গিয়ে বসতে পারত? কিন্তু নিজেকে সংযম করে রাখে। সে গেলেই সমুদ্র রেগে যাবে। আজকে সে গরুর মাংস রান্না করেছে৷

আবেগ গরুর মাংস খুব পছন্দ করে। আবেগের জন্য সে রান্না করেছে। এখন দুপুর। খেতে আসবে সবাই। সে খাবার টেবিলে রেখে দূরে সরে আসলো। সমুদ্র তার সামনে খায় না।

রোদেলা তার বেডরুমে এসে বসল। কিন্তু মনটা এখনো ড্রয়িং রুমে পড়ে আছে। ইশ! তার ছেলেটাকে হাসলে কত সুন্দর দেখায়! মন চায় একবার যদি ছেলেকে ছুয়ে দেখতে পারত! একবার যদি কপালে স্নেহের পরশ মেখে দিতে পারত!

রোদেলার বুক হুহু করে উঠে। না চাইতেও চোখ বেয়ে পানি পড়ল। সে হতাশ হয়ে একদৃষ্টিতে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থেকে আড়াল থেকে ডাইনিং রুমের দিকে নজর রাখলো।

সবাই খেতে বসেছে। রোদেলার হাতের গরুর মাংস আবেগের খুব পছন্দ। এতো লম্বা জীবনে বহু মেয়ের হাতের গরুর মাংস খেয়েছে। কিন্তু কেউ রোদেলার মতো রাধতে পারেনা। রোদেলা অনেক তেল দিয়ে রান্না করে৷ কড়াইয়ে তেল ভেসে বেড়ায়।

আবেগ ভাত নিয়ে গরুর মাংস পাতে নিয়ে একটু উকি দিয়ে তাদের রুমের দিকে তাকিয়ে দেখা রোদেলা দাঁড়িয়ে আছে। সে স্মিত হেসে খেতে লাগলো।

সমুদ্র তাকে কালকে মেরুদণ্ড হীন বলেছিল। ছেলের কাছে এমন মন্তব্য পেলে সব বাবাই কষ্ট পাবে। সে মেরুদন্ড হীন কিনা জানে না। তবে যদি মেরুদণ্ডহীন হলে তার মেয়ে তার সাথে থাকে, পরিবারে সবাই খুশি থাকে তবে মেরুদণ্ড হীন হওয়াই ভালো।

সেই পুরুষ উত্তম না যে স্ত্রীকে পায়ের নিচে রাখে, বরঙ সেই পুরুষ উত্তম যে স্ত্রীর কাছে নত থেকে হাতে হাত রেখে জীবন যাত্রা পাড়ি দেয়।

আবেগ জানে রোদেলা কে এতো দ্রুত ক্ষমা করা ঠিক হয়েছে । অনেক তো দূরে ছিল তারা। রাগের বশে, জেদের বশে দূরে ঢেলে দিয়েছিল।
এবার সে শান্তি চায়। নিজের সুখ খুজে দিয়ে যদি হাতে ধরে রাখায় তাকে মেরুদণ্ড হীন বলা হয় তাহলে সে আরো একশ বার মেরুদণ্ড হীন হতে রাজী। তার তো আপত্তি নেই এতে! যেকটা দিন সে আছে, থাকুক না সুখে।

দুখে তো কাউকে পায় না, তাই সুখের ভাগীদার ও সে একাই।

মৃত্যু নামক জিনিসটা মানুষের মনকে মোলায়েম করে তুলে।এজন্য হয়তোবা বলা হয়, খারাপ কাজ করতে না চাইলে মৃত্যুকে স্মরন করো। মৃত্যুর কথা মাথায় থাকলে কেন যেন সবকিছু তে আনন্দ পাওয়া যায়। অতি তুচ্ছ ব্যাপার গুলোও চমৎকার লাগে! এজন্য ই হয়তো আমরা অমর না। অমর হলে এই সুন্দর জগৎ আর ভালো লাগত না।

আবেগ তিন লোকমা খেয়ে আর খেতে পারলোনা। রুচি হচ্ছে না তার। কেমন যেন গা গুলিয়ে আসছে।

সবাই আনন্দ করে খাচ্ছে। সে চেয়ারে বসে বসে এই দৃশ্যটা দেখছে। ইশ! কি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য৷ জীবনের শেষ সময় টা যে এতো সুন্দর ভাবে কাটবে। সব অপরিপূর্ণতা পূর্ণতা পাবে, তার ইচ্ছা পূরণ হবে কে জানত৷ এই পূর্ণতা প্রাপ্তির জন্য যদি কেউ তাকে মেরুদণ্ডহীন ডাকে, সে মানুষ হয়েও মানুষ হতে পারিনি।

আর তাছাড়া ক্ষমাই মহৎ গুন। রোদেলা যে অন্যায় করেছে এটা সেও জানে। আবেগ তাকে কোন কিছু ছাড়াই ক্ষমা করে দিয়েছে এই ব্যাপার টা রোদেলার মতো আত্মসম্মানবোধ নারীর মনে দাগ কাটবে। মনে মনে কষ্ট পাবে সে। তার তো শাস্তি প্রাপ্য ছিল কিন্তু মওকুফ হয়ে গেছে। এই ব্যাপার টা তাকে পোড়াবে মনে মনে। এটাই রোদেলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আজীবন মনে রাখবে। সে যখন থাকবে না তখন শুধুমাত্র এই কারনেই রোদেলা কষ্ট পাবে। তার জন্য কাদতে।

কথায় আছে না, কারো হাসির চেয়ে কান্না হওয়া সৌভাগ্যের!

সবাই এক দিক দিয়ে ভাবে। কিন্তু আবেগ চারদিক দিয়ে ষোলবার ভাবে।

সে উঠে দাড়ালো এবং রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে আসতে রোদেলা জিজ্ঞেস করে, খাওয়া হয়ে গেল এতো দ্রুত?

–হুম।

— কেমন হয়েছে রান্না?

— অনেক মজা। খুব তৃপ্তি করে খেয়েছি।

আবেগ বিছানায় শুয়ে পড়ে। রোদেলা ভ্রু কুচকে বলে, তুমি কি অসুস্থ?

— না। না। অসুস্থ কেন হবো? এমনি খাওয়ার পর ভাত ঘুম দিব।

–অফিস গেলে না যে আজ?

— আমার মেয়ে এসেছে জন্য তিন দিনের ছুটি নিয়েছি।

রোদেলা মুচকি হাসলো। আবেগ পিউকে একটু বেশি আল্লাদ করে। পিউয়ের বেলায় সবকিছু একটু বেশি সেটা ভালোবাসা হোক বা উপহার!

সমুদ্র খাওয়া শেষ করতেই পিউ জোড়ে করে ডেকে উঠে, ভাইয়ায়া!

সমুদ্র পিউয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, কিহ?

— আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা। আজকেই যাব আমি!

সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলে, মনে আছে তাহলে।

–ইয়েস। এ-সব কথা আমি ভুলি না। কখন যাব?

–আজকে ভীড় হবে অনেক

— হোক। সমস্যা নাই। আমি শাড়ি পড়ব৷

একথা শুনে সমুদ্র শাসনের সুরে বলে, মোটেও না। সেবার শাড়ি পড়ায় কুচির সাথে পা লেগে দুইবার হোচট খেয়েছো। শাড়ি পড়া যাবেনা। অন্যকিছু যেটা কমফোর্ট সেটা পড়বি৷

পিউ মুচকি হেসে ফেলে। ভাইয়া যে তাকে খুব ভালোবাসে তা সে জানে। কিন্তু ভাইয়া কিছুটা চাপা স্বভাবের। এজন্য প্রকাশ করেনা।

সমুদ্র নরম গলায় বলে, এভাবে মায়া মায়া চোখে তাকানোর দরকার নেই। ঠিক চারটায় বের হব। এক মিনিট লেইট হলে কিন্তু আমি আর যাব না।

পিউ আবারো সুন্দর করে হাসলো।

চলবে।

(রিচেক দিতে পারিনি। বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।)