#প্রেমপ্রদীপ
part–41
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
রঙ্গন আরো একটু শক্ত করে চেপে ধরে পিউকে।এতক্ষণ যাবত পিউ ঘোরের মধ্যে ছিল কিন্তু কোমড়ে চাপ লাগায় তার ঘোড় কেটে যায়।
সে তড়িঘড়ি করে রঙ্গনের কাধে তার দুই হাত রেখে, ভর দিয়ে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। রঙ্গন এখনো তার দিকে অপলক নয়নে চেয়ে আছে। পিউ রঙ্গনের হাত নিজের কোমড় থেকে সরিয়ে ফেলে, কষে একটা থাপ্পড় মারে রঙ্গনকে।
রঙ্গন ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। তার হাত সোজা গালে চলে গেল, যেই গালে সে থাপ্পড় খেয়েছে। এর আগে ক্রিমিনাল কে সে থাপ্পড় মেরেছে। তাও হাতে গোনা কয়েকজন কে। নিজে কোন দিন থাপ্পড় খায়নি সে।
পিউ হাতে হাত চেপে বলে, তোমার সাহস কিভাবে হয় আমার গায়ে হাত দেওয়ার? এই তোমার ঘর মা-বোন নেই? সেদিন তো খুব জেন্টেলম্যান সেজেছিলে আজকে এমন বেহায়ার মতো কেন গায়ে হাত দেওয়া হচ্ছে? কুত্তা কোথাকার!
পিউয়ের মুখে কুত্তা শুনে রঙ্গনের ইচ্ছা করছে ঘেউঘেউ করতে কিন্তু সে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে, একটা গালিই পারো নাকি? এর আগেও তো কুত্তা বলেছিলে!
পিউ চেতে উঠে বলে, জাস্ট গেট লস্ট।
রঙ্গন হেসে বলে, বোম্বে মরিচের ঝাঝ এতো কেন!
পিউ নিজের কোমড়ে হাত রেখে গভীর চিন্তা করে রঙ্গনের উদ্দেশ্য বলে, তুমি আমার বাসায় কি করছো?
— ঘুরতে এসেছি।
— কেন?
— কারনটা বললে তুমি আমাকে নেড়ি কুত্তা বানায় দিবা। (হেসে জবাব দেয় সে)
পিউ মনে মনে প্রচুন্ড রেগে আছে। পারলে এই মূহুর্তে সে ব্লাস্ট হবে। হুট করে তার নজর পড়ে রঙ্গনের দিকে। আজকে সে নেভি ব্লু রঙের শার্ট পড়েছে। ইন করা। আর্মি কাট চুল। শ্যামবর্ণ চেহারা। রোদে পুড়া যাওয়া চেহারাটা দেখে পিউ হতবাক হয়ে যায়।
ড্যাব ড্যাব চোখে পিউ তার দিকে তাকিয়ে থাকে। রঙ্গন সেটা বুঝতে পেরে লাজুক ঢংয়ের হাসি হেসে বলে, এভাবে তাকিও না গো। প্রেমে পড়ে যাবা।
পিউ সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিল। ইশ কি দরকার ছিলো এই বেয়াদব ছেলেটার দিকে তাকানোর। পিউ চোখ নামিয়ে রেখেই বলে,তুমি মাত্র যে কিসব হিজিবিজি কথা বললে না! আমার ভাই শুনলে তোমাকে পিটাবে।
রঙ্গন চব্বিশ দাত বের করে হেসে বলে, ভালোবাসার সমর্থক শব্দকে তুমি হিজিবিজি বানিয়ে দিলে? আর শুনো আমি কাউকে ভয় পাই না। তোমাকে ভালোবাসি অবলীলায় জানিয়ে দিচ্ছি। যাইহোক তোমার জন্য একটা উপহার আছে।
পিউ ক্রোধ চোখে রঙ্গনের দিকে তাকিয়ে আছে। রঙ্গন পকেট থেকে বকুল ফুল দিয়ে গাথা হাতে পড়ার অলংকার এনেছে। সুতো দিয়ে বাধা সেই ফুলের মালা পরম যত্নে বের করে আলতো করে পিউয়ের ডান হাত স্পর্শ করে রঙ্গন।
পিউ রঙ্গনের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে, শিউরে উঠল। সে বাকরুদ্ধ। এতোটাই বাকরুদ্ধ সে কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। ডাগর ডাগর চোখে সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখে যাচ্ছে সে। দেহে কোন বল ও নেই। এই আলতো স্পর্শেই পিউ কাহিল। মনে হচ্ছে গা ছেড়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তে পারলে আরাম পেত সে৷
রঙ্গন বকুল ফুলের মালাটা পিউয়ের হাতে পরিয়ে দিয়ে খুব শক্ত করে পিউয়ের হাত চেপে রেখে ধরে বলে উঠে,
দেইখা পরান ফাটে লো।
বকুল ফুল, বকুল ফুল।
সোনা দিয়ে হাত-কান ও বান্ধাইলি,
বকুল ফুল, বকুল ফুল
সীনা দিয়ে হাত-কান ও বান্ধাইলি।
পিউ ফ্রিজড হয়ে গেছে যেন। নাক-কান দিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে।
রঙ্গন বাকা হেসে পিউয়ের সামনে থাকা চুল গুলো পরম আদরে কানের ভাজে গুজিয়ে দিয়ে বলে, Since today, you became mine and i became yours!
পিউয়ের ক্রোধ ভরা নয়ন আস্তে আস্তে মায়াবী দৃষ্টিতে পরিনত হতে লাগলো। রঙ্গন বিড়বিড়িয়ে পিউয়ের কানের কাছে মুখ এনে বলে,
ওহে কি করিলে বল পাইবো তোমারে
রাখিব আখিতে আখিতে!
পিউ চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকিয়ে রইল। রঙ্গন ক্যাবলাকান্ত হাসি হাসলো। তার কানে কারো আসার পায়ের আওয়াজ আসতে লাগে। সে দ্রুত পিউ থেকে সরে এসে রুম ত্যাগ করে৷
রঙ্গনকে এভাবে চোরের মতো পালাতে দেখে পিউ অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো৷
★★★
টোটাল চারটা গানে নাচা হবে। সবাই মিলে গ্রুপ ডান্স দিবে একটা। পিউ আর আলিয়া ডুয়েল নাচবে, পিউ নিজে সিংগেল একটা নাচবে আর শ্রাবণ-পিউ মিলে কাপল একটা ডান্স দিবে। কাপল ডান্স নিয়ে শ্রাবণের ইন্টারেস্ট নাই। বুক চিনচিন করতে হায় এই গানে কেউ কাপল ডান্স দেয়? কিন্তু উপায় ও নাই। সমুদ্র ভাই বলেছে এই গানে তাদেরকে দুইজন কে একসঙ্গে নাচতে। বর মশাইয়ের ইচ্ছা তো আর ফেলে দেওয়া যায় না। সমুদ্র হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছে। মামা-মামী আর নানা-নানি সকালের পর পর বাসায় চলে গেছে৷ কিন্তু আয়না আর আলিয়া যায় নি। বিকেলের পর নিয়ে যাবে সমুদ্র তাদেরকে। আপাতত গ্রুপ ডান্স রিহাসেল চলছে।
ড্রয়িং রুমে তারা প্রাকটিস করছিল। তখনি বেল বেজে উঠল। পিউ গিয়ে গেট খুলে দেখে অপরিচিত দুইজন দাঁড়িয়ে আছে। একটা কমবয়সী মেয়ে আর সম্ভবত পাশের জন তার মা। চেহারায় মিল আছে। পিউ সালাম দিলো।
মহিলাটা সালামের জবাব দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। সমুদ্র আর শ্রাবণ তাকে দেখেই দাঁড়িয়ে সম্মান দেখিয়ে সালাম দিলো। মহিলা সালামের জবাব দিয়ে বলে, সমুদ্র শুনলাম তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই দেখা করতে এলাম।
সমুদ্র হেসে বলে, খুব ভালো করেছেন আন্টি। আয়েশা কেমন আছো আপুমনি?
আয়েশা এক গাল হেসে উত্তর দিল, ভালো আছি ভাইয়া।
সমুদ্র শ্রাবণের চৌদ্দ গুষ্টি কে চেনে। চিটাগংয়ে ইভানা ফুপুর বাসায় বাবা বাসা ভাড়া নিয়েছিলো। পাশাপাশি বাসায় থাকত তারা। তবে সমুদ্র বেশিরভাগ সময় ফুপুর বাসায়ই থাকত। স্কুল থেকে এসে গোসল করেই ফুপুর বাসায় যেত। দুপুরে খাওয়া, ঘুম, স্যারের কাছে পড়া সব ফুপুর বাসায় করত। বাবা বিকেলে অফিস থেকে ফিরলে সে নিজের বাসায় আসত। ইভানা ফুপি তাকে খুব স্নেহ করে।আগে ছোট থাকতে যখন ইভানা ফুপু তাকে আর শ্রাবণ কে নিয়ে কোথাও ঘুরতে বের হত, তখন অনেকেই ভাবত সমুদ্র তারই ছেলে। চিটাগংয়ের দিন গুলো বেশ মধুর ছিল। তাদের বাসার সামনে বিশাল মাঠ ছিল। আসরের আযান দেওয়া ও শেষ, ঘুম থেকে উঠে খেলতে যাওয়াও শেষ ।
ঘুমাত তো না! ফুপুর শাসনে চোখ বন্ধ করে রাখত আর কান খাড়া থাকত। ফুপুর কন্ডিশন থাকত আযান দিলে খেলতে নামবে আর মাগরিবের আযানের পর বাসায় ফিরতে হবে।
এই কারনে ইভানা ফুপুর শ্বশুড় বাড়ির আত্মীয় থেকে শুরু করে ফুপুর ফ্রেন্ডদেরকেও চেনে সমুদ্র। ডাক্তার হওয়ার পেছনে ফুপুর অনেক বড় ভূমিকা আছে। উনি শাসন করে পড়াতেন। উনার আদর, স্নেহ বা শাসন না পেলে সমুদ্র এতো সাইন করতে পারত না জীবনে।
আয়েশা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। শ্রাবণ বিরক্তিকর মুখে অন্য দিকে ফিরল।
আয়েশা আশেপাশের পরিস্থিতি দেখে উত্তেজিত হয়ে বলে,তোমরা কি করছিলে?
সমুদ্র আগ্রহ নিয়ে বলে, ডান্স প্রাকটিস হচ্ছে। তুমি ও জয়েন করো।
শ্রাবণ সমুদ্র কথায় আরো বেশি বিরক্ত হয়।
আয়েশা উত্তেজিত হয়ে বলে, হ্যা। আমিও ডান্স করতে চাই শ্রাবণের সঙ্গে।
আলিয়া এতোক্ষণ আয়েশাকেই দেখছিল। এই মেয়েটার সঙ্গেই শ্রাবণ সেলফি তুলেছে। স্পষ্ট মনে আছে তার। আর এখন মেয়েটার কথা শুনে আলিয়ার মন চাচ্ছে মেয়েটার চুল টানতে।
সমুদ্র বলে, তাহলে তুমি আর শ্রাবণ একটা কাপল ডান্স দাও। তোমরা একটা হিন্দি গানে নাচো। সব গানই বাংলা। একটা হিন্দি থাকুক। মন্দ হয় না।
আয়েশার খুশি দেখে কে? সে তো খুশিতে বাক-বাকুম। যেন সোনার হরিণ হাতে পেয়েছে। সে দাত বের করে হেসে বলে, একটা পুরাতন গান আছে না কাজলা রে তেরে কানে কানে,,,, ওইটাতে নাচি শ্রাবণ?
শ্রাবণ মুখ ভোতা করে বলে, এমন কোন গান আমি আমার জীবনে শুনিনি। আর নাচতে ও পারিনা আমি।
আয়েশা বলে উঠে, সমস্যা নাই। আমি তোমাকে স্টেপ গুলো শিখিয়ে-পড়িয়ে দিব । এরপরে বিড়বিড় করে বলে, সেটা আমাকে ভালোবাসা হোক বা গানের তালে তালে নাচ!,
প্রাকটিস শুরু হয়। আয়েশা যেহেতু নতুন তাই শ্রাবণ আর ওর নাচটাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
শ্রাবণ আর আয়েশা মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে যায়। সব স্টেপই নরমাল। খুব একটা কঠিন না। কিন্তু আয়েশা খুব সুন্দর নাচে।
কেবল একটা স্টেপেই একটু কাছাকাছি এসে হাত হাত রেখে নাচতে হয়। সব স্টেপ আয়ত্তে আনতে পারলেও এটা আর শ্রাবণ পারেনা! এজন্য বারবার কাছাকাছি আসতে হয় তাকে আয়েশার। আসলে আয়ত্তে না নিতে পারার পেছনে একটা কারন ও আছে।
যখন সে আয়েশার কাছাকাছি যেয়ে কোমড় ধরে, চোখ আর মন উভয়ই তার কালনাগিনীর দিকে যায়। আলিয়ার চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যায় সে শ্রাবণের পাশে আয়েশাকে সহ্য করতে পারছেনা।
আয়েশার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলেও মন আলিয়াতে পড়ে থাকে শ্রাবণের। এজন্য সে আর ঠিক মতো স্টেপ তুলতেও পারেনা।
লাস্ট বারের মতো প্রাকটিস করতে লাগে তারা। আবার যখম সেই মুহূর্তের স্টেপ আসে শ্রাবণ তার লাছে আসলে আয়েশা ফিসফিস করে বলে, এই যে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব! কালকে অফিসে আসবেন।
— ঠ্যাকা পড়ছে আমার।
আয়েশা শয়তানি হেসে বলে, অবশ্যই ঠ্যাকা আপনার। এতো রূপবতী একটা মেয়ে সেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে আর আপনি নিরুদ্দেশ!
শ্রাবণ বলে উঠে, সে যদি পৃথিবীর শেষ মেয়েও হয় তাও তার দিকে ফিরেও দেখব না।
আয়েশা মুচকি হেসে বলে, এতো কষ্ট করে ইঞ্জিনিয়ানিং পাশ করলে অথচ সার্টিফিকেট তো আমার কাছে।
শ্রাবণ হচকচিয়ে যায়৷ ক্রোধ ভরা চোখে আয়েশার দিকে তাকালো।
আয়েশা তার কাছে এসে বলে, কালকে আইসো! একসাথে ডিনার করব।
— লাগবে না আমার সার্টিফিকেট।
— মেইন কপি তো।
— আবার ভার্সিটি থেকে তুলে নিব।
— বহুত প্যারা হবে। তার চেয়ে আসো আমার কাছে।
শ্রাবণ কড়া চোখে আয়েশার দিকে তাকালো।
আয়েশা আমতাআমতা করে বলে, মানে অফিসে আসিও কালকে।
শ্রাবণ তাকে ছেড়ে দিয়ে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে।
আলিয়া গভীর মনোযোগ দিয়ে শ্রাবণ কে দেখছে। কি এতো কথা তার এই মেয়েটার সঙ্গে! এই মেয়ের সাথে ও লাইন মেরে মেয়েটার জীবন নষ্ট করছে নাতো শ্রাবণ। অবশ্য শ্রাবণের মতো
ছেলেরা এইসব ই করে বেড়ায়। আজকে এই মেয়ের সাথে প্রেম তো কালকে ওই মেয়ের সাথে রিলেশন। এরা প্রেমের প ও বুঝে না!
তার মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে। সে উঠে দাড়ালো এবং বলল, আপা চল বাসায় যাই।
আয়না একটু অবাক হলো। তাদের সন্ধ্যার পর যাওয়ার কথা। আলিয়া তো পারলে আজকেও থাকে। সেই মেয়ের কি হঠাৎ কি হলো?
সমুদ্র বলল, নাস্তা করে যাও।
আলিয়া মাথা নাড়িয়ে বলে , আমি ওয়াশ রুমে যাব।
সে ওয়াশ রুমে যাবে বলে পা বাড়ালে শ্রাবণ তার পিছু ধরে আগায়।
আলিয়া পিউয়ের রুমে ঢুকে গেট লাগাবে, শ্রাবণ সঙ্গে সঙ্গে গেট ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেট লাগিয়ে দেয়।
আলিয়া চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালো। এবং বলল, এভাবে একটা মেয়ের রুমে ঢুকার মানে কি?
— মানে-টানে বুঝি না আমি৷ আলিয়া তুমি আমার সঙ্গে কথা কেন বলো না? প্লিজ যা খুশি কর। বাট কথা না বলে থেকো না৷
আলিয়া তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, তুমি তো আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য রিলেশনে যাওনি। খারাপ চিন্তা, কুচিন্তা নিয়ে রিলেশন করতে। আর এখন ঢং করছো? যত্তোসব!
শ্রাবণ আলিয়ার হাত ধরে আকুতি ভরা কন্ঠে বলে, আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। প্লিজ আলিয়া মাফ করে দাও। আমি তোমাকে ভালোবাসি৷
আলিয়া কাদো সুরে বলে, তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আমার সঙ্গে শারি,,,, এমন কথা আমি মুখে আনতে পারিনা। অথচ তুমি এ-সব আমার সঙ্গে করতে চাইছো। ছিঃ! আমার লজ্জা লাগে যে আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। তোমাকে অনেক সম্মান করতাম। তোমার লেখা পড়ে প্রতিটার মেয়ের মনে তোমার জন্য সম্মান জন্ম নিত। মেয়েরা তোমাকে আইডল ভাবত। মোটিভেট পেত তোমার কাছ থেকে। অথচ সেই তোমার মন এতো কালো। মেয়েদের সঙ্গে টাইম পাস আর কাছে আসার জন্য সম্পর্ক করো। ছি! আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগে। আবার ভালোবাসার মতো পবিত্র শব্দটাকে উচ্চারণ করো!
শ্রাবণ চুপ হয়ে যায়।
চলবে।
#প্রেমপ্রদীপ
Part–42
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
—রসায়নবীদ চলুন নামায় দিয়ে আসি আপনাদেরকে। (সমুদ্র)
আয়না সমুদ্রের কথায় দাঁড়িয়ে গেল। কালকে থেকে নিজের বাসায় যায় না সে। আর ভালো লাগছে না একদমই এখানে। আয়না কিছুটা ঘরকোনা স্বভাবের। নিজের বাসা ছাড়া অন্য কোথায় তার ভালো লাগেনা। হাসফাস লাগে।
আয়না প্রশ্ন করে, আলিয়া তো এখনো আসলো না?
সমুদ্র কিছুটা জোড়ে আলিয়ার নাম ধরে চেচিয়ে ডাকলো।
আলিয়া সঙ্গে সঙ্গে পিউয়ের রুমের গেট খুলে বেরিয়ে এলো এবং বোনের পাশে গিয়ে দাড়ালো। ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে তার চেহারা।
সমুদ্র বললো, চলো। তোমাদেরকে রেখে আসব৷
আলিয়া হাফ ছেড়ে বাচলো। ভাইয়া এমন ভাবে ডেকেছিল সে ভেবেছে সমুদ্র ভাইয়া তাকে আর শ্রাবণ কে একসঙ্গে দেখে ফেলেছে৷
আলিয়া মাথা নেড়ে বলে, হুম। চল।
পিউ মুখ ভার করে বলে, কালকে আসবে আলিয়া?
আলিয়ার মুখ কালোই ছিল। পিউয়ের কথায় আরো কালো হলো। সে আহত গলায় বলে, নাহ। কালকে হাসপাতালে ডিউটি আছে সারা দিন।
সমুদ্র বললো, বোনের বিয়ে জন্য কবে ছুটি নিবে?
আলিয়া বলে উঠে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ডিউটি করব। বুধবার থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত। শনিবার নাইট শিফটে কাজ করতে হবে। এর বেশি ছুটি দিবেনা।
সমুদ্র আগ বাড়িয়ে বলে, তাও তো অনেক ছুটি দিসে। আমি তো ইন্টার্ণ করার সময়ে ঈদের দিনেও ছুটি পাইনি।
আলিয়া ছোট্ট করে হেসে বাইরে বের হলো। আয়না আর সমুদ্র আস্তে আস্তে হাটছে।হালকা কথা হচ্ছে দুজনের মধ্যে।
রিকশা নেওয়া যাবে না। তাই সমুদ্র উবার ডেকেছে।
গাড়িতে বসে বহু কষ্টে আলিয়া কান্না চেপে রেখেছে। সে শ্রাবণ কে সত্যি খুব ভালোবাসে। কিন্তু এখন শ্রাবণ কে ঘৃণাও লাগে৷
কয়েক বছর আগে খুব জনপ্রিয় ছিল শ্রাবণ। লেখালেখি করত। সেই সাথে আরজে ছিলো।
” শুক্লাদ্বাদশী” নামের সো তে আরজে ছিলো সে।আলিয়া প্রতি বৃহঃপতিবার রাত এগারো টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত শ্রাবণের অনুষ্ঠানের খুব মনোযোগী শ্রোতা ছিল। শ্রাবণের অনুষ্টান সপ্তাহে একদিন হত। প্রতি বৃহঃস্পতিবার রাতে৷ প্রথম প্রথম আলিয়া শ্রাবণের রেডিও অনুষ্ঠান শুনত। অদ্ভুত মনোমুগ্ধকর ভয়েস শ্রাবণের। মাঝে মাঝে যখন শ্রাবণ বাংলা গান গাইত। আলিয়ার নেশা ধরে যেত।
এরপরে জানতে পারে শ্রাবণ লেখক ও। তারপর শ্রাবণের ফেইসবুকে এড হয়। নিয়মিত পাঠিকাও হয়। ওই সময় শ্রাবণ যেহুতু বিখ্যাত ছিল পর পর তিনটা বই বের হয় শ্রাবণের। শ্রাবণের প্রথম প্রকাশিত বইয়ের নাম ছিল, সেদিন মুষুলধারে বৃষ্টি ছিল। খুব ফেমাস হয় বইটা। এরপর দ্বিতীয় বইয়ের নাম রেডিও সো এর নামে তথা শুক্লাদ্বাদশী। এটা আরো হিট হয়। এই বই পড়ে আলিয়া শ্রাবণের ফ্যান হয়ে যায়। তৃতীয় গল্পের বইয়ের নাম শেহজাদী। এটা আরো বিপুল পরিমানে হিট হয়।
আলিয়ার কাছে তিনটাই বই ই আছে। শ্রাবণের লেখার ক্ষমতা এতো মারাত্মক রকমের যে মনে হত বাস্তব কাহিনি চোখের সামনে ভাসছে। শ্রাবণের লেখা পড়ে সে ভাবত শ্রাবণ বুঝি খুব উদার মনের। খুব ভালো। গল্পের নায়কের মতো সুপুরুষ।
এজন্য তার পোস্টে রেগুলার কমেন্ট করত।একবার মেয়েদেরকে ছোট করে একটা কবিতা লেখে শ্রাবণ। সেখানে আলিয়া শ্রাবণ কে ধুয়ে দেয়। সেদিন রাতেই শ্রাবণের কাছ থেকে সে ম্যাসেজ রিসিভ করে।
ম্যাসেজটা কিছুটা এমন ছিলো, পাঠিকা বেগম এতো রাগান্বিত কেন? এই অধম কি কিছু ভুল করে ফেলেছে যার কোন ক্ষমা নেই! তাহলে শাস্তির হুকুম দেন। মাথা পেতে নিব।
এইভাবেই সূচনা। এরপর প্রায় প্রায় শ্রাবণ ম্যাসেজ করত। নিজ থেকে রিকুয়েষ্ট পাঠায় শ্রাবণ। শুধু তাই না! আলিয়ার সব পোস্টে লাভ রিয়্যাক্ট দিত। দেখা গেল আলিয়া লাল শাড়ি পড়ে ছবি আপলোড দিয়েছে। এর দুই-তিন ঘন্টা পর শ্রাবণ তাকে নিয়ে আকারে-ইঙ্গিতে অনুগল্প বা কবিতা লিখবেই!
শ্রাবণের এমন আচরণে আলিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। এইজন্য না যে শ্রাবণ আরজে বা লেখক বরং তাকে নিয়ে শ্রাবণের কেয়ার দেখে আলিয়ার মনেও কিছু একটা হয়। শ্রাবণ প্রায় প্রতিদিন তাকে ফোন দিত। দুইজনে অনেকক্ষন ফোনে কথা বলত। একবার প্রায় সাত দিন শ্রাবণ তাকে ম্যাসেজ করেনি তখন আলিয়া বুকের মধ্যে শূন্যতা ভর করে। সে বুঝে যায় শ্রাবণ তার জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে।
এরপর সাত দিয়ে পর শ্রাবণের ম্যাসেজ আসে, অসুস্থ ছিলাম। হবু ডাক্তার একটা বার খোজ ও নিলো না রোগীর। কেমন ডাক্তারনী সে?
এভাবেই প্রেমের সূচনা ঘটে তাদের। হুট করে একদিন শ্রাবণ আলিয়ার মেডিকেল কলেজে আসে। সেদিন শ্রাবণের জন্মদিন ছিলো। রাতে উইশ করে সকালে মেডিকেলে ক্লাস করতে এসে দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে আলিয়া হতভম্ব হয়ে যায় শ্রাবণ কে দেখে।
ওই দিন তারা একসাথে অনেকক্ষন সময় কাটায়। একসাথে দুপুরে খায়। বিকেলের দিকে শ্রাবণ তাকে ধানমন্ডির এক রেস্টুরেন্টে প্রোপোস করে ফেলে। আলিয়া আহ্লাদে আটখানা হয়ে রাজী হয় যায়। সেদিন দুইজনেই খুব খুশি ছিলো। আলিয়া তো আর জানত না শ্রাবণের নিয়ত ভালো না।
★★★
রঙ্গন অস্থির ভাবে পায়চারি করছে তার কেবিনে। গরমও লাগছে বেশ। শীত থাকায় ফ্যান অনেক দিন বন্ধ ছিল। আজকে হুট করে গরম পড়ে গেছে। কিন্তু ফ্যান আর ঘুরেনা অর্থাৎ ফ্যান নষ্ট হয়ে গেছে। সে ল্যাপটপ স্ক্রিনের দিকে তাকালো। এখানে ইশরাক রহমানের সব ডিটেইলস আছে। ওনার এমকে ব্যাংকে একাউন্ট ও আছে। সেখানে টাকাও আছে। রঙ্গন হিসাব কষছে ইশরাক রহমান তাকে যৌতুকে কত দিবে? যৌতুকের উপর ভিত্তি করে পিউয়ের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে সে।
রঙ্গন বাকা হাসি হেসে ল্যাপটপ ঘাটাঘাটি করছে। এবারে রোদেলার ইনফরমেশন বের করল। তার এক ফ্রেন্ড গোয়েন্দায় আছে তার মাধ্যমেই এতো কিছু বের করতে পেরেছে। রোদেলার ব্যাংক ব্যালেন্স ইশরাক রহমানের তুলনায় বেশি৷
রঙ্গন বিড়বিড়িয়ে বলে, বেশি তো হবেই। উনি কামায় টাকা আর ওই মহিলা কামায় ডলার।৮৪ টাকার ডিফারেন্স।
সে পিউয়ের একাউন্টে গিয়ে রিকুয়েষ্ট পাঠায় এবং একটা ছোটো করে টেক্সট দেয়
টেক্সট টা কিছুটা এমন,
আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মৌ
এতো ডাকি তবু কেন
কও না কথা বৌ?
সে স্মিত হাসলো। তারপর মনে মনে বলে,
সুখ ফুরিয়ে গেলে
দুঃখ মেলে কপালে
তোমার চোখে আমার
নামে অশ্রু ঝড়ুক।
সে পিউয়ের সিন করার অপেক্ষায় আছে। সিন করলেই কল দিবে ডিরেক। এতো গাইগুই করার টাইম নাই। খুব শট টাইম আছে তার কাছে। এর মধ্যেই পিউকে বিয়ে করে নিতে হবে। নাহলে প্রতিশোধ তো পূর্ণ হবে কিন্তু যার জন্য পূরন করবে তাকে তো সচোখে দেখাতে হবে নাহলে এতো কাঠখড় পোহানোর কি দরকার? খালি রোদেলার চোখে ধরা খাইলেই হলো। ধরা খাওয়ার চান্স নেই। তার চেহারা কিছুটা তার নানার মতোন। রোদেলা তার নানাকে চেনেনা। কিন্তু তারপর ও সাবধানে থাকতে হবে। পটাতে হবে বাড়ির কর্তাকে। তথা ডাক্তার ইশরাককে। উনাকে যদি রাজী করানো যায় তাহলে পারমানেন্টলি পিউ তার হয়ে যাবে।
পিউ সিন করছে না জন্য সে ফোন রেখে কাজে মন দেয়৷ মেজাজ খিটখিটে রাখা যাবেনা একদমই। খুবই নিখুঁতভাবে অভিনয় করতে হবে। এমন ভাবে অভিনয় করতে হবে যেন অমিতাভ বচ্চনকেও সে ফেইল মারে। যদিও বা পিউকে তার এক দেখায় বোকাসোকা মনে হয়েছে৷ তারপর ও সত্যটা সামনে আসতে দেওয়া যাবে না। রঙ্গন খুব ভালো করেই জানে পরবর্তীতে যেদিন তার সঙ্গে ইশরাক রহমানের দেখা হবে সে তাকে তার বাবা-মা সহ আসতে বলবে। মা তো নেই। এখন নকল বাবা ভাড়া নিতে হবে। কোন আর্টিস্ট হায়ার করবে নাকি পুলিশ কন্সটেবেল করিম সাহেবকে এই রোল দিবে? দোটানায় ভুগছে রঙ্গন। করিম সাহেবকে বাবার রোল দিলে টাকা কম লাগবে। এক হাজার টাকা বখশিশ আর দুপুরে ভাত খাওয়ালেই হবে।
হুট করে ম্যাসেঞ্জারে আওয়াজ আসে। সে ফোন বের করে দেখে পিউয়ের ম্যাসেজ।
কে তোর বউ? কুত্তা কোথাকার!
রঙ্গন হেসে ফেলে বলে, হাউ কিউট!
★★★
শ্রাবণ উসখুস করছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তাকে আয়েশার কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে। আসলেই সেকেন্ডে টাইম ভার্সিটি থেকে নেওয়ার চেয়ে আয়েশার কাছ থেকে নেওয়াই উত্তম। কেন যে সে রাগের মাথায় ফাইল ফেলে চলে এসেছিলো!
শ্রাবণ কোনমতে রেডি হয়ে বের হলো।ফুপার গুলশানের অফিসে যাবে। বাবার গাড়িতে করে শ্রাবণ বের হয়।
অফিসে পৌছে দেখে অফিস ফাকা হয়ে যাচ্ছে। সে কোনকিছুরই তোয়াক্কা না করে আয়েশার কেবিনের দিকে গেলো।
পারমিশন ছাড়াই গেট খুলে ফেলে শ্রাবণ। সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে আয়েশা চেচিয়ে উঠে। শ্রাবণ যা বোঝার বুঝে গেল। সে সর্যি বলে রুমের বাইরে এসে খট করে গেট লাগিয়ে দিলো। মেয়েটা তো বড় ঝামেলার! অফিসের কেবিনে শাড়ির কুচি ঠিক করার মানে কি? আশ্চর্য কারবার! আয়েশার যে স্বভাব এই সামান্য মিস্টেককে সে তাল বানাবে তারপর সেই তালকে গুড় দিয়ে পিঠা বানাবে এই মেয়ে ফর সিউর।
আয়েশা ভেতর থেকে বলে উঠে, শ্রাবণ ইউ ক্যান এন্টার নাও। আই এম ডান ।
শ্রাবণ ভেতরে ঢুকছে না। সে বিব্রতবোধ করতে লাগলো। মেয়েটার হাবভাব ভালোনা এমনিতেই। তবুও সংকোচ নিয়ে ভেতরে ঢুকে শ্রাবণ। আয়েশা টেবিলে ভর দিয়ে ছোট একটা আয়না সামনে রেখে লিপস্টিক পড়ছে।
শ্রাবণ কিছু বললো না। গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকলো। কিন্তু গেটটা লেগে গেল। রুমে এসি চলে সবসময়ই। তাই গেট খুলে রাখার সিস্টেম নেই। অটোমেটিকলি লেগে যায়। শ্রাবণ একবার তার দিকে তাকালো। তারপর দ্রুত চোখ নামিয়ে নিল। এরপর ভুলেও সেকেন্ডে টাইম আর আয়েশার দিকে তাকায় না।
আয়েশা হেটে হেটে তার কাছে এসে বলে, লেটস গো।
–আমার ফাইল ব্যাক কর। আমি বাসায় যাব।
–নোপ। আমাদের একসঙ্গে ডিনার করার কথা। আগে ডিনার তারপর ফাইল।
–বাড়াবাড়ি হচ্ছে না?তুমি আমার কাজিন জন্য সহ্য করছি নাহলে এমন থাপ্পড় মারতাম বাপ জন্মে ও আমায় ভুলতে না।
আয়েশা হেসে উঠে বলে, বাপ জন্মে কেন? সম্রাট আগবরের আমল থেকেও তোমায় ভুলতে চাই না৷
শ্রাবণ বহু কষ্টে তার রাগ কন্ট্রোল করল। এই সময় আয়েশার সাথে ঝামেলা করা যাবে না। আয়েশার বাবার সঙ্গে তাদের পাটনারশীপ হয়েছে। এর জন্য তাদের বিসনেসে প্রোফিট ভালোই হয়েছে । এখন আয়েশাকে রাগানো মানে মহা বিপদ।
আয়েশা বলল, চল। বের হই।
— কোথায় যাব?
–আমারিতে।
শ্রাবণ আয়েশাকে রেখেই হাটা ধরে। আয়েশা তার পিছু পিছু হাটছে।
দুইজন দুই গাড়িতে করে রেস্টুরেন্টে যায়। আয়েশা পুল সাইডে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার বুক করেছে। সে শ্রাবণকে নিয়ে সেখানে বসে। চারিদিকে সুনসান নীরবতা। যে যার মতো খাচ্ছে। অন্ধকার। কেবল মোমবাতির আলো। প্রাকৃতিক বাতাস এবং সফট সং বাজছে। পরিবেশ জুড়ে রোমান্টিকতার শেষ নেই। আয়েশার সিল্কের শাড়ির আচল বাতাসে উড়ে উড়ে শ্রাবণের হাতে ও মাঝে মাঝে মুখে এসে লাগছে।
শ্রাবণ বিরক্তি ভাব এনে বলে, দয়া করে আচল সামলাও।
আয়েশা নেশা ধরা চোখে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলে, অবাধ্য মন ও অবাধ্য শাড়ির আচলকে উড়তে দিতে হয়। বাধা দিতে হয় না।
শ্রাবণ চমকে উঠে। এটা তো তার লেখা। শেহজাদী গল্পের পেইজ নং ১২২ এর তিন নাম্বার প্যারার ফিফথ লাইন। শ্রাবণ ঢোক গিলে৷ কিন্তু ভুলেও আয়েশার দিকে তাকায় না।
আয়েশা বলল, আমার দিকে তাকাতে ভয় করে বুঝি?
— যাক অবশেষে বুঝলে তুমি কি।
–আমি কি মানে?
–মানে হলো তুমি পেত্নি এজন্য তাকাতে ভয় পাচ্ছি৷
আয়েশা হোহো করে হেসে উঠে কোকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, তুমি তাকাও না কারন তোমার ভয় হয় যদি প্রেমে পড়ে যাও আমার।
— হাসালে। তোমার মতো গ্যাদা বাচ্চার প্রেমে কেন পড়ব?
— আমি এবার ভার্সিটি ফাস্ট সেমিস্টারে।
শ্রাবণ আর কোন কথা বলল না। প্লেট থেকে চিকেনটাকে স্পুন দিয়ে কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো৷ কিন্তু সে কিছুতেই আর চিকেন কাটতে পারছেনা। প্লেটে খটখট করে শব্দ হচ্ছে কিন্তু মুরগীর মাংস আর কাটা যায় না।
আয়েশা তা দেখে বলে, আমি খাইয়ে দেই?
শ্রাবণ জোরে চেচিয়ে উঠে বলে, জাস্ট সাট আপ।
আয়েশা ভয়ে কেপে উঠে। চারপাশের মানুষ তাদের দিকে তাকালো।
আয়েশা শ্রাবণ কে চুপ করতে বলে। সে থেমে যায়।
আয়েশা কাদো কাদো গলায় বলে, এমন কেন কর আমার সাথে? শুধু মাত্র ভালোবাসি তোমাকে এইজন্য এমন করো?
শ্রাবণ অনেক রেগে যায়। সে ধাম করে উঠে আয়েশার হাত ধরে টেনে দাড় করিয়ে ঠাস করে
দুই গালে দুইটা থাপ্পড় বসায়।
তারপর দাতে দাত চেপে বলে, খবরদার আবার যদি আমার সামনে আসছিস তুই? জানে মেরে ফেলব। এতোই যখন ভালোবাসার শখ জাগছে মনে, রাস্তায় নাম। ভালোবাসার মানুষের অভাব পড়বে না।
আয়েশা ধারালো কন্ঠে বলে, মিসবিহেইভ করবে না৷ আমি তোমার বাসার কাজের মেয়ে না। ভদ্রভাবে কথা বল,,,,,
শ্রাবণ আয়েশাকে শেষ করতে না দিয়ে তার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বলে, কি করবি? কি করতে পারবি তুই? আমাকে হুমকি দিস? সাহস তো কম না তোর! এমন জায়গায় লাশ পুতে রাখব না তোর বাপও খুজে পাবেনা৷
আয়েশা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে, বাপিকে নিয়ে বাজে কথা বলবে না শ্রাবণ।
শ্রাবণ প্রচুন্ড রেগে আছে। সুযোগ বুঝে আরো একট চড় বসায় আয়েশার গালে। আজকে যা খুশি সে তাই করতে পারবে। নো ইভিডেন্স। পরবর্তীতে স্বীকার করবেনা। এই ভেবে তিন-চার টা ইংলিশে আয়েশাকে গালি দিলো। আয়েশা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণ তাকে গাকি দিতে এটা কোন কালেই সে কল্পনা করতে পারেনি। চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগে তার
শ্রাবণ তার চুলের মুঠি ছেড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়। ইংলিশে গালি দিয়েছে আয়েশাকে কারন আয়েশা ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্ট ছিলো।
★★★
–আয়ু?
–হুম?
— তোমার কি ঘুম পাচ্ছে?
আয়না হাই তুলে বলে, কিছুটা। ফোন রাখি প্লিজ।
সমুদ্র মুখ ভার করে বলে, আজকে সারা রাত অন কলে থাকলে তোমার সমস্যা হবে?
— সিম কোম্পানি তো বড়লোক হয়ে যাবে।
সমুদ্র হেসে বলে, তাইলে আর কি। রেখে দিই ফোন?
–হুম। গুডনাইট। আল্লাহ হাফেজ
সমুদ্র ফোন কেটে দিয়ে রাতে খেতে আসলো। রাতে সে সবার সঙ্গে খায়নি। এখন ক্ষুধা পেয়েছে।
বাসার সবাই যে যার রুমে জন্য সমুদ্র নিজে খাবার গরমে দেয়। এবং সালাদ করার জন্য শশা বের করে যেই না কাটতে যাবে হুট করে হাত কেটে যায়। সে ও মা গো বলে চেচিয়ে উঠে।
কি আজব না! যেই মায়ের সঙ্গ সে জীবনে পায়নি সেই মাকেই ব্যথা পেলে খোজে হায়রে নিয়তি। হায়।
পেছনে থেকে মায়ের আওয়াজ শুনে কেপে উঠে সমুদ্র
রোদেলা ব্যতিব্যস্ত গলায় বলে, কি হয়েছে বাবু?
সমুদ্র পেছনে না তাকিয়ে বলে, হাত কেটে গেছে। টিস্যু আনেন একটা।
রোদেলা জানে বাসায় টিস্যু শেষ হয়ে গেছে। এখন টিস্যু আনতে গেলে টয়লেট টিস্যু আনতে হবে। তাই সে এগিয়ে এসে নিজের ওড়না দিয়ে সমুদ্রের হাতের আঙুল পেচিয়ে নিলো।
সমুদ্র বাধা দিলোনা। সবসময় না বোধক কথা তার ভালো লাগেনা । আজকে তার জন্য ইয়েস ডে। যা হবেই সবকিছুতেই হ্যা। না এর কোন জায়গা নেই আজকে। আবার একদিন নো ডে পালন করবে। যেদিন সবকিছুতেই না বলবে সে৷ আপাতত Today is Yes day.
রোদেলা দেখল সিংয়ের উপর রক্ত পড়ে আছে।
সে আতংকিত হয়ে বলে, তুমি শশা কেন কাটতে গেলে? আমাকে ডাকতে৷
— ডিস্টার্ব করতে চাইনি।
–আমি খাইয়ে দেই বাবু?
–আমার খিদা নেই৷
— তারপর ও একটু খাইয়ে দিই? খালি পেটে শোয়া ভালো না।
সমুদ্র না করল না। রোদেলা প্লেটে খাবার বেড়ে সমুদ্র কে পরম যত্নে খাইয়ে দিতে লাগলো। খাওয়ানোর সময় লোকমা থেকে দুই-তিন দানা ভাত সমুদ্রের শার্টে এসে লাগছে।এতে বিরক্ত সমুদ্র। তবুও মায়ের দিকে অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে ভাত খেতে লাগলো সে। কেমন যেন লাগছে। এই অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত না সে।
চলবে।