প্রেমমানিশা পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
239

#প্রেমমানিশা(৩৩)

‘ তুমি আমাকে কখন থেকে পছন্দ করো সানাহ্ ? ‘

সানাহ্ আইসস্ক্রিম খেতে ব্যস্ত ছিল কিন্তু ফারহানের কথা শুনে যেন নিজের হাসি আটকে রাখতে পারলো না। খোলা আকাশ কাপিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো। ফারহান ওকে এভাবে হাসতে দেখে বললো ‘ আজব তো হাসছো কেন ? ‘

‘ তো হাসবো না ? আমি আপনাকে পছন্দ করি কে বললো ? ‘ সানাহ্ হাসতে হাসতে জবাব দিলো।

‘ পছন্দ করো না ? তাহলে বিয়ে করছো কেন ? তুমি না বলেছিলে আমার মত ছেলে পাওয়ার জন্য সব মেয়েরা স্বপ্ন দেখে ? তুমিও কি সেই মেয়েদের মধ্যে পড়না ? ‘ ফারহান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

‘ অবশ্যই আমি আপনাকে বিয়ে করছি কিন্তু সেটা আমার বাবা মায়ের পছন্দে। প্রথমত আমি বাবা মায়ের অবাধ্য খুব কমই হই আর দ্বিতীয়ত আমার ইচ্ছা ছিল মামনি আর বাবাইয়ের মত আমিও অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করবো। তাই আপনাকে বিয়ে করছি।

আর স্বপ্ন তো এমন কাউকে নিয়ে দেখা হয় যাকে আমাদের পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর আপনি তো আমারই, আমাদের বিয়ে হচ্ছে। ইন ফিউচার আমরা একসাথে থাকবো। আমাদের আলাদা হওয়ার সম্ভাবনাও তো নেই। তাহলে আমি আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো কেন ? ‘ সানাহ্ তার আইসস্ক্রীম শেষ করে সেটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে এসে বললো।

ফারহান পুরোটা সময় মনযোগ দিয়ে শুনলো সানার কথা। সানার এই অন্যরকম চিন্তাভাবনাই তাকে সানার প্রতি দিন কে দিন আকৃষ্ট করছে। সানার প্রতি আরও তৃষ্ণার্ত করে তুলছে। ফারহান কিছু বলার উদ্দেশ্যে তার ঠোঁট দুটো জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিল। সানাহ্কে জিজ্ঞেস করলো ‘ তো তোমার কখনও ইচ্ছা হয়নি প্রেম করার ? ‘
‘ হবে না কেন ? অবশ্যই ইচ্ছা হয়েছে। ‘

‘ তাহলে প্রেম করলে না যে ? আমি তো শুনেছি তোমার আশেপাশে দিয়েও একটা ছেলেকে ঘুরতে অনেক বেগ পেতে হয়। ‘

‘ এই যে প্রেম করছি। আপনার কি মনে হয় আপনার সঙ্গে আমি এখানে মশা মারতে এসেছি ? এই খোলা আকাশের নিচে হাঁটতে হাঁটতে দুজনের একসঙ্গে আইসক্রিম খাওয়া কি প্রেম নয় ? রাতের আঁধারে মাঝ নদীতে সময় কাটানো কি প্রেম নয় ? সকাল সকাল কাউকে না জানিয়ে রেল লাইনে সময় কাটানো কি প্রেম নয় ? প্রেমই তো করছি আমরা। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর প্রেম করছি।

প্রেম করতে হলে যে সমাজের তথাকথিত প্রেম করতে হবে তার তো কোনো কারণ নেই। আমরাও যদি সবার মতো প্রেম করি তাহলে বাকিদের আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায় ? আমাদের লাভ স্টোরি নাহয় হোক অন্যরকম। বিয়ের পর হালাল প্রেম করবো আপনার সঙ্গে। ‘ কথাগুলো বলে শূন্যে নিজের হাত তুলে পোস্টার লাগানোর ভঙ্গিমা করলো সানাহ্।

ফারহান সানার কথা শুনে কিছু বললো না। চোখ দুটো বুজে রাতের আঁধারে সানার হাতে হাত রেখে দুজনের মধ্যে থাকা নিরবতা অনুভব করতে লাগলো। দূর থেকে কোথাও ভেসে আসছে এই রাত তোমার আমার গানের মৃদু সুর। রাতের আঁধারে নিস্তব্ধতা কাটিয়ে ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে।

—-

বিকেল সাড়ে পাঁচটা। সানাহ্কে তিন ঘণ্টা ধরে সাজাচ্ছে আয়না(আরাবের স্ত্রী) আর অতসী। এ নিয়ে সানাহ্ বেশ রাগারাগি করেছে। তার কথা হলো তাকে সাজ ছাড়া তো ফারহান হাজারবার দেখেছে তাহলে এখন সাজানোর মানে কি। কিন্তু অতসী আর আয়না ওর কথা শুনলে তো। তারা তো সাজাবেই আর এ নিয়েই বাড়ির উপর দিয়ে কিছুক্ষণ আগেও ঝড় বয়ে গেছে।

মিসেস কায়নাত চিন্তায় চিন্তায় পায়চারি করছেন। ফারহানরা বেরিয়ে পড়েছে জানিয়েছেন মিসেস আশা। পাত্র পক্ষ থেকে লোকজন বলতে ফারহানের ফুপু মিসেস মারিয়া, ফুপাতো বোন নিনিকা, ফারহানের ছোট ভাই রুদ্র,ফারহান আর মিসেস আশা। ফারহানের ভাই রুদ্র আজ সকালেই হোস্টেল থেকে ফিরেছে। নিনিকা আর মিসেস মারিয়াও আজ সকালেই এসেছেন।

মিসেস মারিয়া আর নিনিকা সিয়াটলের বাসিন্দা। মিসেস মারিয়ার স্বামী মারা গেছেন বিয়ের চার বছর পরেই। তারপর থেকেই মিসেস মারিয়া তার মেয়েকে নিয়ে শশুর বাড়িতে থাকতেন। এই কয়েক বছর আগেই সিয়াটলে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে ভাতিজার বিয়ে উপলক্ষে সুদূর সিয়াটল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।

ফারহানের এক দূর সম্পর্কের দাদু মানে ফারহানের দাদার বোন মিনার বেগম আসার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভদ্র মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে আর আসা হলো না। হয়তো সুস্থ হয়ে আসবেন নাত বৌকে দেখতে।

সানার দুই ফুপুরও আসার কথা ছিল কিন্তু তারা আসতে পারেননি। সানার বড় ফুপু সামান্য ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত অথচ এই টুকু ফিভারে আক্রান্ত হয়েই তিনি তুমুল কান্ড বাঁধিয়ে ফেলেছেন। উনার ধারণা উনি এখানে এলে উনার সঙ্গে সঙ্গে বাকিরাও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাই উনি ভাতিজির এনগেজমেন্টে এবং বিয়েতে আসার ইচ্ছা বিসর্জন দিয়েছেন। সানার ছোটো ফুপু দিন দশেক আগে ওমরাহ করার জন্য সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন তাই উনিও আসতে পারেন নি। বস্তুত মহিলা নিঃসন্তান।

মিসেস আশা সম্পর্কে মিসেস কায়নাতের বাল্য সখী হলেও মিসেস কায়নাতের চিন্তার অন্ত নেই। তার একটাই ভয় বেয়াইনকে অ্যাপায়নে কোনো ত্রুটি যেন নাহয়। এর জন্য উনি বেয়াইনদের সর্বোচ্চ অ্যাপায়নের ব্যবস্থা করেছেন। মিসেস রাহেলা সিংজিকে(কুক) সঙ্গে করে রান্নাঘরে নুডুলসের পাকোড়া ভাঁজছেন। এছাড়া যেসব নাস্তার প্ল্যান করেছিলেন ওগুলোও রেডি করছেন।

মিস্টার আশরাফ ভাই আমানকে সঙ্গে করে ‘ Flora ‘ তে গেছেন। সানাহ্ বহু বাছ বিচার করে ফারহানের জন্য আংটি পছন্দ করেছে। তার পছন্দ মতেই ফারহানের জন্য প্লাটিনামের আংটি বানানো হয়েছে। মিস্টার আশরাফ আর মিস্টার আমান সেটাই আনতে গেছেন। ফিরতে সময় একবারে মিস্টার কবিরকে সঙ্গে করে ফিরবেন। জাপান আর আরাব বাইরে গেছে একটা জরুরি কাজে। মূলত মিসেস কায়নাতই ওদের পাঠিয়েছেন।

—-

ফারহানরা সানাহ্দের বাড়ি এসেছে আধা ঘন্টা হয়ে গেছে। নিনিকা তো এসেই সাথে সাথে পগারপার। ছুটেছে তার ফারহান ভাইয়ের বউকে দেখতে। ইতিমধ্যে ভাবির সঙ্গে সে বেশ রসালো আড্ডাও জমিয়েছে। ভাবির প্রত্যেকটা কথায়ই সে মুগ্ধ হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে এই মেয়ে ভবিষ্যতে ভাবির অনেক বড় ফ্যান হতে চলেছে।

বাড়ির বড়রা সকলে একজোট হয়েছে। সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে। মিসেস মারিয়া এসেই ভাতিজার হবু শাশুড়ির সঙ্গে গল্প পেতেছেন। মহিলা বেশ রসিক। কথায় কথায় ফারহান, রুদ্র আর নিনিকার ছোটবেলার গল্প বলে সবাইকে হাসাচ্ছেন। তবে এত সবকিছুর মাঝেও ফারহান একা। তার মনটা আকুপাকু করছে এক ঝলক সানাহ্কে দেখার জন্য। বারবার সিড়ির দিকে নজর দিচ্ছে।

প্রচন্ড উৎকণ্ঠায় ফারহানের গলা শুকাচ্ছে। বারবার সাধ জাগছে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাওয়ার। সেই সঙ্গে সানার প্রতি রাগও হচ্ছে। আধা ঘন্টা হয়ে গেছে সে এসেছে অথচ মেয়েটা একবারও এসে দেখে গেলনা। এত সাজার কি আছে ? এমনিতেই যা চোখ ঝলসানো রূপ তারপর যদি আরও সাজে তাহলে ফারহানের চোখের সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ও পুড়বে। বিয়ের আগেই মেয়েটা এত অবহেলা করছে, বিয়ে হলে কি করবে ? ভেবে ভেবেই অস্থির ফারহান।

মিসেস রাহেলা সকলের সঙ্গে আড্ডায় মশগুল ছিলেন। কিন্তু ফারহানের দিকে চোখ পড়তেই ফারহানের অস্থিরতা দেখে আন্দাজ করলেন ফারহানের পানি প্রয়োজন। উনি আড্ডা ছেড়ে উঠে গিয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে ফারহানের সামনে ধরলেন। চোখের সামনে প্রার্থিত জিনিস দেখে ফারহানের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ‘ থ্যাংক ইউ ‘ জানিয়ে মিসেস রাহেলার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোকে খেয়ে নিল। মিসেস রাহেলা ‘ ইউর ওয়েলকাম ‘ বলে নিজের জায়গায় ফিরে আবারও কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

পানিটুকু শেষ করে সানাহ্ সময় কাটানোর উপায় খুঁজতে বের হলো মনের চোরাগলিতে। কিন্তু হাজার কাটাকুটি, ঘাঁটাঘাঁটির পরও যখন ভালো কোনো উপায় পেলো না তখন অগত্যা ফোন বের করে ফেসবুকিং করায় মন দিল। হঠাৎ সিড়ির দিকে নজর পড়তেই ফারহান থমকে গেলো। তার দামী অ্যান্ড্রয়েড ফোনটা মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ভাগ্যিস কার্পেট বিছানো ছিল নাহলে ফারহানের শখের নতুন ফোন আজই অক্কা পেত।

এই মেয়েটা কি আজ ওকে মেরে ফেলার প্ল্যান করে এত সেজেছে ? বিদেশিনী এত রূপবতী হয়েও কেন এমন ভয়ঙ্কর সুন্দরী সাজ দিয়েছে ? ফারহানের বুক তোলপাড় করছে। মনটা আনচান করছে। নিশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে।

সানাহ্ নেমে আসছে সিড়ি দিয়ে। মনে হচ্ছে যেন ফুলে সজ্জিত সিড়ি দিয়ে কোনো এক অচিন রাজ্যের শুভ্র পরী নেমে আসছে। পরনে সাদার মাঝে ম্যাজেন্ডা পাড়ের কাতান শাড়ি। গলায় ও কানে পাথর বসানো সোনার গয়না। চুলগুলো মাঝে সিথি করে আলগোছে খোঁপা করা। এলোমেলো খোঁপা করা চুলে বাঁধা বেলি ফুলের মালা। এমন নারীকে দেখাও যেন এক নৈস্বর্গিক সুখ।

সানাহ্ নিনিকার হাত ধরে সাবধানে নামছে। শাড়িটা বেশ ভারী হওয়ায় তার সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। ওদের দুজনের পিছন পিছন আসছে অতসী আর আয়না। সানাহ্ শাড়ির কুচি এক হাতে ধরে আস্তে আস্তে নামছে। আড়চোখে একবার ফারহানের দিকে নজর দিল। সে বেচারা তো হবু বউকে দেখে ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে গেছে। বড় বড় চোখ করে মুখ হা করে তাকিয়ে আছে সানার দিকে। সানার মুখ ফুটে প্রচন্ড হাসি আসতে চাইছে কিন্তু কোনোমতে নিজেকে সামলে রেখেছে।

‘ আয় হায় ভাবী তুমি এ কাকে ছেলের বউ করলে ? আমাদের বউমা তো রুপে একেবারে লক্ষ্মী ‘ সানাহ্কে নামতে দেখে বসার ঘর থেকেই খোশ মেজাজে হেসে বললেন মিসেস মারিয়া।

মিসেস আশা ননদের কথায় হাসলেন। সানাহ্কে নিজের কাছে ডেকে বসালেন। সানার ললাটে স্নেহ মাখা চুম্বন করে বললেন ‘ আমার ছেলের বউ শুধু রুপে নয় গুণেও লক্ষ্মী। ফারহান অনেক ভাগ্য গুনে সানার মতো মেয়েকে তার স্ত্রী হিসেবে পাচ্ছে। আমি হলফ করে বলতে পারি আমার ছেলেকে আমি যোগ্য পাত্রীর হাতেই তুলে দিচ্ছি। আমার পাগল ছেলেটাকে দেখে রেখো মা। হয়তো মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা কথা বলে তোমাকে রাগাবে কিন্তু সে মন থেকে তোমাকেই চায়, তোমাকেই ভালোবাসে। ‘

কথাগুলো বলে মুচকি হেসে সানার অনামিকায় আংটিটা পড়িয়ে সানার হাতে আলতো চুমু খান মিসেস আশা। আংটিটা সানার হাতে বেশ ভালই মানিয়েছে আর ঠিকমত বসেও গেছে। বড় একটা হিরের চারদিকে ছোট ছোট পান্না বসানো অভিজাত দেখতে আংটিটা। মিসেস আশা বললেন ‘ এই আংটিটা আমার মায়ের দেওয়া। মাকে দিয়েছিল আমার নানু। বংশানুক্রমে এই আংটি আমার মেয়ের পাওয়ার কথা কিন্তু আমার তো মেয়ে নেই। তবে এই আংটি দিয়ে আজ থেকে তোকে আমার মেয়ে করলাম সানাহ্। আংটিটাকে আগলে রাখিস মা। ‘

‘ আমি আংটিটা যত্নে রাখবো আম্মু। ‘ – সানাহ্

ফারহানের কোনোকালেই আংটি পছন্দ ছিলনা কিন্তু সদ্য হতে যাওয়া শশুরকে মুখের উপর না কি করে করে ? তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই শশুর মশাইয়ের দেওয়া আংটিটা নিতে হলো ফারহানের। তবে আংটিটা যেমন আশা করেছিল সেরকম না। সে ভেবেছিল তার শশুর হয়তো অবিবেচকের মতো তাকে সোনার আংটি দিবে। কিন্তু উনি সেটা করেননি। উনি নিজের অজান্তেই ফারহানকে তার মনমতো আংটি দিয়েছেন। ফারহানের বেশ পছন্দ হয়েছে আংটির ডিজাইন। অবশ্য পরে জানতে পারলো এই আংটি সানার পছন্দ। সানার প্রতি যা ভালোবাসা ছিলো তা যেন আরও এক ধাপ বেড়ে গেলো।

নানান হাসি, মজা, আড্ডায় সময় পেরিয়ে কখন যে ফারহানদের বিদায় নেওয়ার মুহুর্ত এসে হাজির হলো কেউ বুঝতেই পারলো না। যখন বুঝতে পারলো তখন ফারহানের মনে হায় হায় পড়ে গেলো। সবার মাঝে থেকে সানার সঙ্গে তো কথাই বলা হলো না। মেয়েটাও একবারের জন্য চেষ্টা করলো না ফারহানের সঙ্গে কথা বলার। সে দিব্যি হাসতে হাসতে তাদের বিদায় জানালো। ফারহান তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ গাড়ির পিছনের আয়না দিয়ে সানাহ্কে দেখা যায়। একসময় সানাহ্ আর তার পরিবার ধোঁয়াশার মতোই মিলিয়ে গেলো। আজ গাড়ি ড্রাইভার চালাচ্ছে বলেই সানাহ্কে আরও কিছুক্ষণ দেখার সুযোগ পেলো ফারহান।

বাড়ি ফিরেই ফ্রেশ হয়ে ঘরের দরজা চাপিয়ে বারান্দায় মুখ ভার করে বসলো। তার খারাপ লাগছে। বাড়ি ফিরেছে কমপক্ষে আধা ঘন্টা হতে চলেছে অথচ সানাহ্ এখন পর্যন্ত ফোন দিয়ে খোঁজ নিলো না সে ঠিকমত পৌঁছেছে কিনা।

ফারহানের অনেক অভিমান হলো। অভিমানের বশে কিছুক্ষণ পর সানাহ্ ফোন দিলেও সেই ফোন রিসিভ করলো না সে। ক্রমাগত কিছুক্ষণ ফোনটা বেজে বন্ধ হয়ে গেলো। ফারহানের অভিমান আরও গাঢ় হলো। কেন মেয়েটা মাত্র কয়েকবার ফোন দিয়েই হার মেনে নিল ? ফারহানকে আরও কয়েকবার ফোন দিলেই তো সে ফোনটা ধরতো।

ফারহান রাতের অন্ধকারে অভিমান করা মেঘলা আকাশে ধোঁয়া উড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। একমাত্র এই সিগারেটই পারে সানার নেশাটা ভুলিয়ে রাখতে। তবুও অবাধ্য মন সানার কথা মনে করিয়ে দেয়। তখন মন থেকে একরাশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই আসে না। সানার নেশা বুঝি সিগারেটের নেশা থেকেও তীব্র।

ঘরের দরজায় করাঘাতের শব্দে ফারহানের ভাবনায় ছেদ ঘটলো। বারান্দার এক কোণে সিগারেট ফেলে পায়ে থাকা স্লিপার দিয়ে সেটা পিষে ফেলে দরজা খুলতে গেলো। দরজা খুলতেই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মিসেস আশা কানে ফোন হাতে নাক মুখ কুচকে ফেললেন। পুরো ঘর ভর্তি সিগারেটের গন্ধ। ফারহান এই সময় তার মাকে দেখে অবাক হলো। তার মা তো নিচে সবার সঙ্গে বসে প্ল্যানিং করছিলো ওদের বিয়ের দিন নিয়ে।

মিসেস আশা কিছুক্ষণ ফোন কানে নিয়ে দাড়িয়ে থেকে ফোনটা ফারহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন ‘ নিজেদের মধ্যে মান অভিমান, রাগারাগি থাকলে সেটা নিজেরা মিটিয়ে নিবি। খামোখা রাগারাগি করে সিগারেট খেয়ে নিজেকে আর অন্যকে কষ্ট দিবি না। ‘

কথাগুলো বলেই ফারহানের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন মিসেস আশা। ফারহান তার মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে ফোনের দিকে চোখ দিলো। ফোনের সানার নাম উঠে আছে ডিসপ্লেতে। তারমানে সানাহ্ তাকে না পেয়ে তার মাকে ফোন দিয়েছে। ফারহান আর কোনো কিছু না ভেবে ফোনটা কানে ধরে বারান্দায় চলে গেলো।

‘ ফোন ধরছিলেন না কেন ? ‘

‘ ফোন ধরলেই বা কি হতো ? একজনের কি আমাকে নিয়ে কোনো টেনসন আছে ? সে তো আপন খেয়ালে আছে। ‘ ফারহান খানিকটা অভিমানী গলায় বললো।

‘ হায় আল্লাহ কবি সাহেব আপনি এতটা অভিমানী ? আমি আবার কি করলাম ? আমি তো আমার দোষই জানিনা। অপরাধীকে তার দোষ না জানিয়ে শাস্তি দেওয়াটা কি অন্যায় নয় ? ‘ ফোনের ওই পাড়ে হাসতে হাসতে বলল সানাহ্।

‘ সবাই যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল তখন আমার সঙ্গে বললে না কেন ? বাড়ি ফিরেও তো ফোন দিয়ে খোঁজ নিলে না। ‘

‘ সবার সামনে কি করে কথা বলতাম বলুন তো। আপনি ছেলে মানুষ তাই হয়তো লোকে আপনাকে নিয়ে কিছু ভাববে না কিন্তু আমি তো মেয়ে। আমি এরকম করলে লোকে অনেক কথা বলবে। তাছাড়া ফোন তো দিয়েছিলামই। আপনিই তো রাগ করে ধরলেন না। ‘ সানাহ্ মৃদু হেসে বললো।

‘ লোকে কি ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। তোমার উচিত ছিল কোনো অজুহাত দিয়ে আমার সঙ্গে একা সময় কাটানোর। বিয়ের আগেই এমন করছো। বিয়ের পরে তো চোখেই দেখবে না। তুমি এতগুলো ভুল করার পরও যদি আমি তোমার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলি তখন কি সেটা অস্বাভাবিক হবে না ? ‘

‘ বুঝলাম মিস্টার কবির অভিমান হয়েছে। কিন্তু কবি সাহেব আপনি না ভাবলেও আমাকে যে ভাবতে হয়। ছেলেরা এমন অনেক কিছুই করতে পারে যেটা মেয়েরা করতে পারে না। তবে আই প্রমিজ এরকম আর হবে না। বিয়ের পর তো একেবারেই হবে না। এটা সানার পাক্কা প্রমিজ। ‘ সানাহ্ মিষ্টি হেসে বললো।

ফারহান কিছু বললো না। রাতের আঁধারে শুধু সানার অনেক না বলা কথা মন দিয়ে শুনতে লাগলো। ফোনের ওই পাড়ে থাকা রমণী হয়তো জানেও না ফারহান তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। সে তো ব্যস্ত নিজের কথা বলতে, নিজের না বলা কথাগুলো ফারহানকে জানাতে।
আর ফারহান ব্যস্ত রমণীর মিনমিনিয়ে বলা কথাগুলো শুনতে।

~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….

#প্রেমমানিশা(৩৪)

[পর্ব: শুভ পরিণয়]

বাগানে দাড়িয়ে আছেন মিস্টার আশরাফ। এক মনে ভোরের আলো দেখছেন। সূর্য তার লালিমা নিয়ে ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে পূর্বের আকাশে। মিস্টার আশরাফ সেই সূর্যোদয় দেখছেন। সানাহ্দের বাড়ির বাগান থেকে সূর্যোদয় দেখার দৃশ্য নয়নাভিরাম। আশেপাশে প্রভাতকালিন পাখিদের মৃদু গুঞ্জন আর ছোটো ছোটো নাম না জানা পাখির আকাশ জুড়ে বিচরণ যেন প্রকৃতিকে দিয়েছে এক অন্যরকম প্রাণ।

মিস্টার আশরাফের চোখে জল ভিড় করে এসেছে। উনি ভাবতেও পারছেন না যেই সানাহ্ কাল অব্দি মা হারা বাচ্চা একটা মেয়ে ছিল সেই সানার বিয়ে। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই মেয়েটা কারোর বাড়ির মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে কারোর বাড়ির বউও হবে। কারোর ভাগ্নি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারোর স্ত্রীও হবে। সময় অনেক দ্রুত পেরিয়ে যায় তবে সেটা মানুষের অগোচরে। মানুষ যখন সেই পেরিয়ে যাওয়া সময়ের সন্ধানে বের হয় তখন আবিষ্কার করে যেই সময় তারা খুঁজছে সেই সময় তো বহু আগেই পেরিয়ে গেছে।

একটা সময় ছিল যখন সানার মা মারা যাওয়ার পরে সানাহ্ নিজেকে সামলাতে পারত না। হাজার মানুষের ভিড়ে একা হয়ে যাওয়ার ভয়ে সবার মাঝেই থাকার চেষ্টা করতো। কিন্তু আজ সময়ের প্রভাবে সেই সানাহ্ বদলে গেছে। এখন এই সানাহ্ পারে একা একা থাকতে,নিজের মতো থাকতে। সে পারে শত মানুষের ভিড়ে নিজেকে আলাদা রাখতে। এখন আর একলা হওয়ার ভয় নেই তার। সে যে সকলের মাঝে থেকেও বরাবর একলাই ছিল।

—-

সানাহ্দের বাড়িতে বেধেছে হুলুস্থুল কান্ড। পুরো বাড়ি জুড়ে হইচই। হইচইয়ের উৎস সানাহ্। বাড়ির মেয়ে বাড়িতে নেই। নিজের বিয়ের দিন হুট করেই কাউকে না জানিয়ে গায়েব হয়ে গেছে সানাহ্। মিসেস কায়নাত দোতলার সিড়ি থেকে বসার ঘরে দাড়িয়ে থাকা অতসীকে হাক দিয়ে বললেন ‘ এই পেয়েছিস সানাহ্কে ? ‘

কিন্তু অতসীর নেতিবাচক উত্তরে আশাহত হলেন। কোথায় যে গেল মেয়েটা হুট করে ? ওইদিকে ছাদ থেকে চিৎকার দিয়ে বাগানে দাড়িয়ে থাকা মিস্টার আমানকে আরাব বললো ‘ মামা সানাহ্ তো ছাদেও নেই। ‘ সকলে ছুটেছে চতুর্দিকে। মিসেস রাহেলা সোফায় বসে মাথায় অনবরত আইস প্যাক দেওয়া মিস্টার কবিরের দিকে আরেকটা আইস প্যাক বাড়িয়ে দিয়ে বললেন ‘ ভাইজান চিন্তা করবেন না। সানাহ্ হয়তো আশেপাশেই গেছে। এক্ষুনি চলে আসবে। ‘

মিস্টার কবিরকে মিথ্যা আশা দিলেও মিসেস রাহেলাও চিন্তিত। সানাহ্কে দেখে ওনার মনে হয়নি মেয়েটার বিয়েতে আপত্তি আছে। অথচ মেয়েটা সেই সকাল থেকে গায়েব। প্রথমে সকলে ভেবেছিল হয়তো ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু ক্রমেই যখন সকাল পেরিয়ে সময়টা দুপুরে গিয়ে ঠেকলো তখন মিসেস কায়নাতের সন্দেহ হলো। উনি উনার সন্দেহকে পাকাপোক্ত করতে ছুটলেন সানার ঘরে। গিয়ে দেখলেন সানাহ্ যথারীতি রুমে নেই। বারান্দায় শাড়ি ঝুলিয়ে সেটা দিয়ে নেমে গেছে।

মিসেস কায়নাত অতিরিক্ত চিন্তায় রীতিমত ঘামছেন। এসি ঘরে বসেও তার দরদর করে ঘাম হচ্ছে। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে মগের পর মগ কফি খাচ্ছেন। উনার শুধু একটাই চিন্তা এই ভর দুপুরে মেয়েটা কোথায় গেলো। এইদিকে শায়খকেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেও তার ভাগ্নির সঙ্গে সঙ্গে গায়েব হয়ে গেছে।

চিন্তা হওয়ারই কথা। সকলের অনুমান বলছে সানাহ্ বেরিয়েছে সকালে সকলে যখন ঘুমিয়ে ছিল। আর এখন দুপুর পনে চারটা। অন্যদিকে ফারহানরা আসবে সাড়ে চারটায়। তারমানে হাতে আছে আর মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিট। এইটুকু সময়ের মধ্যে যদি সানাহ্ না ফিরে তাহলে আশঙ্কা করা যায় অনেক বড়সর একটা ঝামেলা হতে চলেছে। হবু বেয়াইনদের সামনে পুরো বংশের নাম তো ডুববেই সঙ্গে দুই বান্ধবীর সম্পর্কও নষ্ট হবে।

‘ আই থিঙ্ক জাপান জানে শায়খ আর সানাহ্ কোথায় ‘
আরাবের এই কথায় সকলে যেন চমকে উঠলো। সকলের দৃষ্টি একসঙ্গে গিয়ে বসলো সোফায় বসে থাকা জাপানের দিকে। সে ফোনে গেম খেলতে ব্যস্ত। তবে আরাবের কথা শুনে এবার সে নড়েচড়ে বসলো। নিজের এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে দিয়ে ঠিক করে দিলো।

সত্যিই তো ব্যাপারটা কারোর মাথাতেই আসেনি। সানাহ্ বরাবরই জাপানের অনেক ক্লোজ আর শায়খেরও জাপানের সঙ্গে বেশ সখ্যতা আছে। তার উপর দিয়ে সানাহ্ আর শায়খের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পরও জাপানের বিচলিত না হওয়া আরও ঘোরতর সন্দেহের ব্যাপার। ঘটনা আন্দাজ করতেই মিস্টার কবিরের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।

‘ আরাব কি ঠিক বলছে জাপান ? শায়খ আর সানাহ্ কোথায় সেটা কি ওরা তোমাকে বলে গেছে ? ‘ মিস্টার কবির থমথমে গলায় বললেন।

মামা হিসেবে উনি উনার বোনের ছেলেদের খুব ভালোবাসেন। অত্যধিক স্নেহ করেন তাদের। তবে এহেন বিপদের সময় উনি নিজেকে নমনীয় রাখতে পারলেন না। নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে তাকে কঠোর হতে হলো। প্রথম দিকে নিজের মামার এমন রুঢ় স্বর শুনে অবাক হয়েছিল জাপান। তবে সে নিজেকে সামলে নেয়। দৃঢ় গলায় বললো ‘ ভাইয়া যেটা বলেছে সেটা ঠিক। আমি জানি ওরা কোথায়। কিন্তু আমি সেটা বলতে পারবো না। আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। সানসাইন বলেছে ও যেখানেই যাক না কেন বিয়ের আগেই ফিরে আসবে। ‘

বসার ঘরে চলছে পিনপতন নীরবতা। মিস্টার কবিরের মেজাজের পারদ আঁচ করতে পেরে কেউ আর শব্দ করেনি। সকলেই নিরবতা মেনে চলেছেন। শুধু যুদ্ধ চলছে দুজন মানুষের মধ্যে। মিস্টার কবির আর জাপানের মধ্যে কোল্ড ওয়ার চলছে। একে অপরের মধ্যে চোখে চোখে যুদ্ধ চালাচ্ছেন তারা।

সময়টা চারটা পনেরো। ফারহানদের সাড়ে চারটায় আসার কথা থাকলেও রাস্তা ফাঁকা পেয়ে ওরা পনেরো মিনিট আগেই চলে এসেছে। হুট করে ঠিক করা সময়ের আগেই হাজির হতে দেখে মিসেস কায়নাত ঘাবড়ে গেলেন। ভয়ে উনার সমস্ত শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। চেহারা ইতিমধ্যে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। চোখ মুখের ভাব বদলে গেছে।

বান্ধবীর এহেন পরিবর্তন মিসেস আশার চোখে পড়লো। উনি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘ কি হয়েছে কায়নাত ? তোকে এমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে কেন ? শরীর খারাপ করছে নাকি ? ‘

নাহ্ কোনো উত্তর দিতে পারলেন না মিসেস কায়নাত। দিবেনই বা কি করে ? কি বলবেন ? উনার মেয়ে বিয়ের দিন বিয়ে ছেড়ে পালিয়ে গেছে এটা কি আদৌ বলার মতো কথা ? উনি ভেবে পাচ্ছেন না বান্ধবীকে মুখ কি করে দেখাবেন। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করলেন। আলতো হেসে বললেন ‘ নাহ্ শরীর খারাপ। আসলে প্রথম মেয়ের বিয়ে তো। এই সময় মায়েদের একটু চিন্তা হয়ই। তাই হয়তো এরকম লাগছে। ‘

‘ ওহ্…. আমি আরও কি না কি ভাবলাম। যাই হোক সানাহ্কে রেডি করিয়ে দে তো। ইমাম হুজুর চলে এসেছেন। ‘

এবার মিসেস কায়নাত পড়লেন ফ্যাসাদে। কি উত্তর দিবেন বান্ধবীকে ? যে তার মেয়েকে এখনও খুজেই পাওয়া যায়নি ? মিথ্যা কথা বলে আশাও তো দেওয়া যাবে না। এই মিথ্যা আশা যে বান্ধবী মেনে নিতে পারবে না। তাই বলে কি মানুষটার মনে কষ্ট দিয়ে সত্যি কথা বলে দিবে ? এখন সত্যি না বললে পরে বিয়ের সময় যখন সব সত্যি সবার সামনে আসবে তখন বান্ধবী পারবে তো নিজেকে সামলাতে ?

নাহ্ মিসেস কায়নাত কিছু লুকোবেন না। যেটা সত্যি সেটাই বলবেন। যা হয় হোক। একটা মিথ্যা কথা বলে কাউকে মিথ্যা আশা উনি দিবেন না। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। যেটা উনি চান না। সামান্য মিথ্যা কথার জন্য কত সম্পর্ক ভাঙার কথা শুনেছেন উনি। আজ নিজে সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাননা উনি।

উনি উনার বান্ধবীকে আসল সত্যিটা বলতে প্রস্তুত হলেন ঠিকই কিন্তু উনার কথার উনার মুখেই রয়ে গেলো কারণ উনার নজর পড়েছে সদর দরজার দিকে। সদর দরজা দিয়ে শায়খ ঢুকছে। পরক্ষনেই মনে হলো কেউ উনার কাঁধে হাত রেখেছে। পিছন ফিরে দেখলেন অতসী তাকে ডাকছে। উনি অতসীর ইশারা দেখে বুঝলেন সে কিছু বলতে চায়। অতসীর ইশারা বুঝতে পেরে বান্ধবীকে বলে অতসীকে নিয়ে সাইডে গেলেন। অতসীকে কেমন উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে তার অগোচরে কিছু একটা ঘটেছে যার প্রত্যক্ষ দর্শন করেছে অতসী।

‘ কি হয়েছে ? ডেকে আনলি কেন ? ‘ – মিসেস কায়নাত

‘ মা আপাই চলে এসেছে। গোসল করে রেডি হচ্ছে। ‘ – অতসী

যদিও শায়খকে দেখার পরপরই ব্যাপারটা আন্দাজ করেছিলেন মিসেস কায়নাত কিন্তু মেয়ের কথায় নিশ্চিন্ত হলেন। ফোস করে সস্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন ‘ তাহলে দাড়িয়ে আছিস কেন ? তাড়াতাড়ি ওকে রেডি কর…. ‘

অতসী অবাক তার মায়ের কথায়। সে অনুমান করেছিল এই খবরটা পাওয়ার পর তার মা হয়তো দিক বেদিক হারা হয়ে সবার কথা ভুলে তার আপাইকে শাসাতে ছুটবে। কিন্তু তার অনুমান একেবারেই ভুল ছিল এবার । মিসেস কায়নাত তার ইমেজিন করা কোনো ঘটনাই ঘটাননি। উল্টো কথাগুলো বলে বান্ধবীকে সানাহ্ আসছে এই খবর দিতে ছুটলেন।

বসন্তের রঙে প্রকৃতি তার পুরনো সত্তায় ফিরেছে। ধারণ করেছে তার বহু পরিচিত সোনালী আবরণ। গাছে গাছে নাম না জানা পাখির জোড়া আর চারদিকে অজানা সব ফুলের গন্ধে পরিবেশ এক অপার্থিব সৌন্দর্য ধারণ করেছে। শোনা যায় ফাগুন প্রেমের আগুন। তাই হয়তো আজ পহেলা ফাগুন হওয়ায় রাস্তায় নেমেছে এক ঝাঁক কপোত কপোতীর দল। কেউ প্রেমিক প্রেমিকা আবার কেউ কেউ নব বিবাহিত স্বামী স্ত্রী।

পহেলা ফাগুনেই বাতাসে প্রেমের আগুন ছড়িয়ে সানাহ্ আর ফারহানের বিয়েটা হয়ে গেলো। বিয়ে, তিন কবুল বলে একে অপরকে স্বামী স্ত্রী মেনে বিয়ে। এখন আশেপাশের বাড়িতে মিষ্টি বিতরণ পর্ব চলছে। সানার মা এবং শাশুড়ি মা দুজনেই প্রত্যেকের ঘরে ঘরে ‘ আমাদের ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাদের জন্য দোয়া করবেন ‘ বলে হাসিমুখে মিষ্টি বিলচ্ছেন। কেউ কেউ আলহামদুলিল্লাহ বলে সেই মিষ্টি হাসিমুখে গ্রহণও করছেন।

মিস্টার কবির,মিস্টার আমান এবং মিস্টার আশরাফ গেছেন ‘ Flora ‘ তে। মিস্টার কবির নিজে দাড়িয়ে থেকে এমপ্লয়ীদের মাঝে মেয়ের বিয়ের খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করবেন। মিসেস রাহেলা আর মিসেস মারিয়া রান্নাঘরে অতি আগ্রহ নিয়ে সন্ধ্যায় খাওয়ার জন্য চা নাস্তা তৈরি করছেন।

প্রকৃতিতে বসন্তের আবির্ভাব ঘটলেও হালকা শীতের আমেজ এখনও কিছুটা আছে। এই শীতের রাতেই বাগানে বন ফায়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন ফায়ারের চারদিকে গোল করে চেয়ার পাতা হয়েছে। এই বন ফায়ারকে ঘিরেই সকলে নাচে, গানে, আড্ডায় মেতে উঠবে। অবশ্য এতসব কিছুর আয়োজন করেছে জাপান। তার কথা হলো ইরফান বংশের বড় মেয়ের বিয়েতে সব ধরনের হইহুল্লোড় হওয়ার কথা। অথচ সানার এসব পছন্দ না বলে অতি সাধারণভাবে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিয়ের পরও যদি নাচাপিচা নাহয় তাহলে এতবড় অন্যায় কিছুতেই মেনে নিবে না জাপান। আফটার অল কাজিন মহলে তার একটা সম্মান আছে।

মিসেস রাহেলা আর মিসেস মারিয়া কিছুক্ষণ আগে চা নাস্তা দিয়ে গেছেন। নাস্তা হিসেবে নুডুলস, শাকের পাকোড়া, পেঁয়াজু, ডিম চপ আর আলুর চপ করা হয়েছে। যদিও সানার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার কথা হয়েছিল কিন্তু সানাহ্ই নিষেধ করে দিয়েছে যে তার জন্য আলাদা করে কিছু করতে হবে না। মিসেস আশা অবশ্য খুশি হয়েছেন ছেলের বউ রুপি মেয়ের এহেন উন্নতিতে। যাক মেয়েটা মানিয়ে নিতে শুরু করেছে এটাই বেশি।

বড়রা সকলে তাদের মতো কাজ কারবার শেষ করে ছাদে বসেছে আড্ডা দিতে। আর ছোটদের জায়গা হয়েছে লনে। যদিও সানার এত তেলে ভাজাভুজি জিনিস পছন্দ না কিন্তু নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় সে তৎপর। পাকোড়ার গাঁয়ে টিসু পেঁচিয়ে খাচ্ছে। এতে এক্সট্রা অয়েল শুষে নিবে টিসু পেপার। এতকাল এসব ভাজাভুজি সম্পর্কে সানাহ্ যা ধারণা রেখেছে আজ দেখি তার ঠিক উল্টো। খাবারগুলো তার ধারণা মতে মোটেই অখাদ্য নয় বরং বেশ সুস্বাদু।

‘ যেহেতু আজ আমাদের মধ্যে নিউ ম্যারিড কাপল আছে সেহেতু শুরুটা তাদের দিয়েই হবে। ফারহান এখন আমাদের গান গেয়ে শোনাবে। ‘ আরাব সকলের মাঝে ঘোষণা করে বললো।

কথাটা শুনে সকলে হাততালি দিলেও ফারহান আটকে উঠলো। মৃদু চিৎকার করে বলল ‘ কি!! আমি গান গাইবো ? আমি কি করে গান গাইবো ? আমি কবিতার মানুষ, আমি গান জানি আবৃত্তি জানি। আমি কি করে গান গাইবো ? ‘

এবার যেন নিনিকা সুযোগ পেয়ে গেলো কথা বলার। ফারহানের কাধে চাপর মেরে বললো ‘ তাহলে আবৃত্তিটাই করো না। কতদিন শুনিনা তোমার আবৃত্তি। মনে আছে তুমি যখন ক্লাস নাইনে স্কুলের ফাংশনে আবৃত্তি করেছিলে তখন মেয়েদের সারির একেকটা মেয়ে তোমার আবৃত্তি শুনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল ? ‘

এবার ফারহান নিনিকার মাথায় চাটি মেরে দাত কিরমির করে বললো ‘ তোকে কে বললো মেয়েরা আমার আবৃত্তি শুনে হুমড়ি খাচ্ছিল ? ‘

‘ উহ ভাইয়া এত মারো কেন ? তুমি যখন নাইনে ছিলে তখন কি আমি পিচ্ছি ছিলাম। বড়জোর ৫-৬ বছর ছিল আর আমি ছোটো থাকলেও মামানিতো আর ছোটো ছিল না। মামানি বলেছে আমাকে মেয়েরা কেমন করে তাকাতো তোমার দিকে। ‘ নিনিকা ব্যথার জায়গায় আঙ্গুল ঘষতে ঘষতে নাক মুখ কুচকে বললো।

‘ তাহলে তো আর কথাই রইলো না। সো মিস্টার দুলাভাই আপনি এবার আবৃত্তি শুরু করুন। এটা আপনার বউয়ের বড় ভাই মানে আপনার বড় শালার অনুরোধ। ‘ আরাব বললো।

অতঃপর কি আর করবে ফারহান। বাধ্য হয়েই ধরলো আবৃত্তি ~

খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে
এ চোখ থেকে ঐ চোখের কাছে থাকা
এক পা বাড়ানো থেকে অন্য পায়ের সাথে চলা
কিংবা ধরো রেল লাইনের পাশাপাশি শুয়ে
অবিরাম বয়ে চলা ।

যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে
মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন
দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর, আকাশ কিংবা আলোর সারির।

তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো
যেমন দূরে থাকে ছোঁয়া, থেকে স্পর্শ
রোদ্দুরের বু্‌ক, থেকে উত্তাপ
শীতলতা, থেকে উষ্ণতা
প্রেমে্‌র, খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা

তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-
এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ
কতটা কাছা কাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী।

ফারহানের আবৃত্তি শুনে সকলে হাত তালি দিয়ে উঠলো। সানাহ্ নির্নিমেষ পানে তাকালো ফারহানের চোখে। শুভ দৃষ্টি হলো চার চক্ষুর। বন ফায়ারের উষ্ণ অভ্যর্থনায় বাড়লো তাদের হৃদয়ের উষ্ণতাও। বোন আর বোন জামাইয়ের এহেন রোমান্টিক মুহূর্তে অতসী ব্যাগ্রা দিয়ে বললো ‘ তাই বলি আমার বোনটা কেন আপনার প্রেমে পড়ে এমন অধঃপতন হলো। এমন কাব্যিক,রোমান্টিক প্রেমিক থাকলে কে না প্রেমে পড়ে। ‘

অতসীর কথায় ফোঁড়ন কেটে জাপান বললো ‘ কারেকশন প্লিজ। প্রেমিক না ওটা স্বামী হবে। ‘
অতসী জবাবে বললো ‘ ওই আর কি যাই হোক। এখন কনের বোন হওয়ার খাতিরে আমি বলবো। আজ আমি তোমাদের একটা সিক্রেট বলবো। ‘

‘ সিক্রেট!! কি সিক্রেট ? ‘ সকলে সমস্বরে বলে উঠলো।

‘ আপাই যখন মেট্রিকের পর স্কুল বদলে কলেজে ভর্তি হলো কাহিনী তখনকার সময়ের। রূপবতী হওয়ায় আপাইয়ের অ্যাডমায়ারের শেষ নেই। তার মধ্যেই একজন ছিলেন পাড়ার এক বড় ভাই। আপাইকে দেখলেই মোমের মতো গলে যেতেন। উনি কখনও মুখ ফুটে কিছু বলতেন না তাই আপাই ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবেই এড়িয়ে চলত। কিন্তু একদিন ঘটলো এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। ওই বড় ভাই আপাইয়ের বাড়ি ফেরার পথে আপাইকে প্রেম পত্র দিলো। আপাই কিছু বললো না তখন। বাড়ি এনে সোজা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল পুড়িয়ে ফেলতে।

এমন প্রায়শই হতো। রূপবতী ছিল আমার আপাই। তার উপরে পড়তো সরকারি কলেজে যেখানে ছেলে মেয়ে একসঙ্গে ক্লাস করে। কাজেই এমন অনেক ছেলেই ছিল যারা আপাইকে প্রপোজ করার সাহস করতে না পেরে প্রেম পত্র দিত আপাইয়ের ব্যাগে। আপাই সেটা বাড়ি এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে বলতো। আমি আবার ওগুলো পুড়াতাম না। সোজা নিয়ে মাকে দিতাম।

মা আবার আপাইয়ের পাওয়া প্রেম পত্র পড়তো আর হাসতে হাসতে ছেলেদের লেখার হাজার ভুল বের করত। আজ অব্দি গোটা শতেকের উপরে প্রেম পত্র পড়েছে মা। মাঝে মাঝে এসব গর্ব করে বলে মা। তবে সেবার প্রেম পত্র পড়ে মা নিজেই পুড়িয়ে দিলো ওটা অথচ মা ওগুলো জমিয়ে রাখতে শখ করে…. ‘ এতটুকু বলে থামলো অতসী।

~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….

#প্রেমমানিশা(৩৫)

‘ এত সাসপেন্স ক্রিয়েট না করে বলে দিলেই তো পারিস নাক বুচি ‘

আচমকা জাপানের হুংকার দেওয়া কথা শুনে এক মুহূর্তের জন্য অতসী লাফিয়ে উঠলো। বুকে হাত রেখে বার কয়েক বড় বড় নিশ্বাস ফেলে ভ্রু কুচকে বললো ‘ হুট করে এমন চিৎকার দিলে কেন ? আমাকে তোমার ধমকের জোরে মেরে ফেলতে চাইছ নাকি ? আর নাক বুচি কি হ্যা ? আমার নাম নাই ? ‘

‘ তোকে মেরে ফেলতে চাইছি না মেরে ফেলবো। এত সাসপেন্স ক্রিয়েট না করে সোজাসুজি বললেই পারিস। তা না উনি বলবে কেন ? উনি তো বিশ্ব সেরা ড্রামাবাজ। আর তোকে আমি নাক বুচি বলেই ডাকব। তোর কোনো সমস্যা ? আমি কিন্তু তোর বড় ভাই হই। ‘ জাপান দাত কিরমির করে বললো।

‘ হুহ আসছে আমার বড় ভাই। তোকে আমি বড় ভাই মানিনা বুঝলি ? ‘ অতসী ভেংচি কেটে বললো।

‘ তুই আমাকে তুই বললি ? তোর এত বড় সাহস ? ‘ জাপান চোখ কপালে তুলে বললো।

‘ সাহসের আর দেখলে কি। এই সাইয়ারা কবির অতসীর অনেক সাহস। তোমার মত ভীতুর ডিম না আমি। ‘ অতসী পুনরায় ভেংচি কাটলো।

‘ কিহ!! আমি ভীতুর…. ‘ তবে এবার আর জাপান কিছু বলতে পারলো না। সানাহ্ তার আগেই ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো ‘ উফফ ভাইয়া ঝামেলা কেন করছো ? ও পাগল বলে কি তুমিও ওর মতো পাগলামি করবে ? ‘ সানাহ্ বেশ বিরক্ত। এই দুই ভাই বোন হরহামেশা ঝগড়া করে আর তাদের ঝগড়ার সমাধান ওকেই করতে হয়।

সানার কথা শুনে আর কথা বাড়ালো না জাপান। মৌন হয়ে বসে রইলো। অতসী ওকে দেখে বাঁকা হাসি দিয়ে বলতে শুরু করলো ‘ এরপরের দিন ঘটলো আসল কাহিনী। ওই বড় ভাই বাড়ির সামনে এসে আপাইকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে আই লাভ ইউ বলছে। তখন আমরা মিরপুরের ওইদিকে থাকি। আশেপাশের যত নেইবার আছে সব এর ওর জানালা দিয়ে উকিঝুকি মারছে। বাবা ‘ Flora ‘ তে। আমি, আপাই আর মা বাসায়। আমি আর মা ভেবেছিলাম আপাই হয়তো প্রতিবারের মতো এইবারও এড়িয়ে যাবে। কিন্তু আপাই এবার এমন একটা কাজ করলো যে আর কোনো ছেলে সাহস করেও আপাইকে ভালোবাসার কথা বলতে পারেনি আজ পর্যন্ত।

আমাকে আর মাকে অবাক করে দিয়ে সরাসরি ওই বড় ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাড়ালো। বড় ভাই তো বহুত খুশি কিন্তু কিছুক্ষন পরেই ঐ খুশি উড়ে গেলো। আপাই ওই বড় ভাইকে কি বললো সেটা আমরা আজ অব্দি কেউ জানতে পারিনি তবে এরপর আর ওই বড় ভাই কেন আর কোনো বড় ভাইকেও আমাদের বাড়ির আশেপাশে দেখা যায়নি। এমনিতেই আপাই বরাবর আস্তে আস্তে কথা বলে তাই ওর কথা শোনা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা তবুও জানার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আপাই বলেনি। আজ পর্যন্ত এই কথা লুকিয়ে রেখেছে। ‘

এবার সকলে একসঙ্গে সানার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। সানাহ্ ফোনে ব্যস্ত থাকলেও শেষের কথাগুলো সে ভালো করেই শুনেছে তাই মাথা উঠিয়ে সকলকে একবার করে জরিপ করে বললো ‘ বেশি কিছু না। শুধু বলেছিলাম আমার ফুপা পুলিশ কমিশনার তাই তেড়িবেড়ি করলে সোজা ইভ টিজিং এর দায়ে এক বছরের জন্য জেলে পুড়ে দেবো। জানেন তো বাংলাদেশে আইন বলে কিছু একটা আছে ? বাংলাদেশের কোর্ট কিন্তু অতটাও অচল নয়। ‘

সকলে হতভম্ব, ভাবেনি সানার মতো শান্তশিষ্ট,ঠান্ডা মেজাজের মেয়ে এরকম ভয়ঙ্কর হুমকি দিতে পারে। তবে ফারহান অবাক হয়নি। ইতিমধ্যে সে সানার তুই তুকারির শিকার তাই এই মেয়ে কি চিজ সেটা তার জানা। সে মৃদু কেশে সকলের মনযোগ আকর্ষণ করে বললো ‘ বলছি কি আড্ডা কি আগানো হবে নাকি এখানেই স্থগিত ? ‘

ফারহানের কথা শুনে সকলে বিস্ময়ের চূড়ান্ত রেশ কাটিয়ে নিজ নিজ দুনিয়ায় ফিরে এলো। অতসী ফারহানের কথার রেশ ধরে বললো ‘ স্থগিত মানে ? আড্ডা অবশ্যই হবে সঙ্গে ননস্টপ ফুল মাস্তি। এবার আপাই গান ধরবে। ফারহান ভাইয়ের আবৃত্তির পর আপাইয়ের গান । আহা যাকে বলে মেঘ না চাইতে জল। ‘

এবার সানাহ্ শীতল দৃষ্টিতে নজর দিল অতসীর দিকে। মৃদু গলায় বললো ‘ গান ছেড়েছি ১৫ বছর!! ‘। একমাত্র রুদ্র,ফারহান আর নিনিকা বাদে সকলেই স্বাভাবিক। আরাব কথার রেশ টেনে বললো ‘ ছেড়েছিস তো কি হয়েছে ? শোনা তো বন্ধ হয়নি। তারমানে তুই গান জানিস। অনেকদিন গাস না বলে প্রথমে খারাপ হলেও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তুই ওসব চিন্তা করিস না। তুই শুধু গান ধর। গান শোনার কাজ আমাদের। ‘

‘ তুমি যদি গানের উসিলায় আমাকে আড্ডা থেকে উঠিয়ে দিতে চাও তাহলে নির্দ্বিধায় বলো। আমি উঠে যাচ্ছি। ‘ বলেই সানাহ্ ফোন নিয়ে উঠে দাড়ালো। কারোর কথায় বিন্দুমাত্র কান না দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল তবে জাপানের কথা শুনে দাড়িয়ে গেলো। জাপান বললো ‘ বড় মামার গান কতটা প্রিয় ছিল সেটা আমাদের থেকেও ভালো তুই জানিস। আর সেই গানকেই তুই ছেড়ে দিলি ? এত স্বার্থপর কখন হলি সানসাইন ? ‘

কথাগুলো শুনেও সানার মাঝে তেমন কোনো ভাবাবেগ দেখা দিল না তবে তার শুভ্র চোঁখ জোড়া যেন রক্তিম হয়ে উঠেছে। চলনবলন স্থির। কোনদিকে না তাকিয়েই সোজা হনহন করে বেরিয়ে গেলো। সেইদিকে তাকিয়ে জাপান এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ফারহান জাপানের এই যন্ত্রণাময় দীর্ঘশ্বাস লক্ষ্য করে বললো ‘ তোমরা আড্ডা কন্টিনিউ করো… আমি সানাহ্কে নিয়ে আসছি। ‘

—-

এই রাত শুধু যে গানের
এই ক্ষণ এ দুটি প্রাণের
শুধু দুজনের
এই রাত তোমার আমার….

বারান্দায় বসে আছে সানাহ্। মোবাইলে বাজছে তার আর তার বাবাইয়ের প্রিয় গান। এই গান তার সুখ, দুঃখ, আনন্দ সবকিছুর সঙ্গী। তার অভিমানী রাতের সাক্ষী এই গান। একমাত্র এই গানটা শুনলেই তার মনে হয় তার মামনি আর বাবাই তার কাছে আছে। তার ছোটো বয়সে তার বাবাই তাকে আর তার মামনিকে নিয়ে প্রায়শই এই গান শুনত। এটা ছিল উনার মনের ভাবাবেগ প্রকাশের মাধ্যম,ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম।

কাধে কারোর স্পর্শ টের পেয়েও মাথা তুলে তাকালো না সানাহ্। কিছুক্ষণ পর টের পেলো মানুষটা তার পাশে বসেছে। সানাহ্ তবুও চুপ রইলো। মৌন থেকে রাতের নিস্তব্ধতা অনুভব করছে সে। এই মুহূর্তে তার কিছুই বলতে ইচ্ছা করছে না। শুধুই নীরব থাকতে মন চাইছে।

‘ আমাদের সবারই একটা যন্ত্রণা আছে যেটা আমরা কাউকে বুঝাতে পারিনা। সবার মানে সবার। হোক সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। সুখী মানুষেরও অ-সুখ আছে। কিন্তু আমাদেরকে সেই যন্ত্রণা ভুলে এগোতে হয়। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, যন্ত্রণা এসব নিয়েই আমাদের জীবন। তাই বলে তো পুরনো যন্ত্রণাকে ঘিরে জীবন কাটানো যায় না। পুরনো যন্ত্রণা ভুলে না এগোলে নতুন যন্ত্রণা নিয়ে জীবন কি করে কাটাবে ? তাহলে দুই যন্ত্রণার ভারে তোমার ঘাড়ই না ভেঙে যাবে ? ‘

সানাহ্ নীরবে মন দিয়ে শুনলো ফারহানের প্রতিটা কথা। এই একটা মানুষ আছে যার প্রত্যেকটা কাজ,প্রত্যেকটা কথা সবই তার ভালো লাগে। সব মানে সব। এই মানুষটা যদি তার হাজার দুঃখের মাঝেও একটা সুন্দর কথা বলে তখন সেই কথাই তার মনে আশা দেয়। তাকে নতুন আশার আলো দেখায়। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। ফারহানের বলা প্রতিটা কথা তাকে নতুন আশার পথ দেখাচ্ছে যেই পথে সে হাঁটতে চায়।

সানাহ্ মুচকি হেসে তার চোখের পানি মুছে বললো ‘ রিয়াশা ম্যাডামের অত কাছাকাছি যাবেন না। আমার উনাকে পছন্দ নয়। উনি সবসময় আপনার গায়ে পড়েন। উনাকে দেখলেই আমার গা পিত্তি সব আগুনের মতো দাউদাউ করে জ্বলে। আর আমি গান গাইলে কিন্তু হাসতে পারবেন না। অনেকদিন গান গাই না। ‘

ফারহান সানার কথার জবাবে কিছু বললো না। সে শুধু মুচকি মুচকি হাসছে। সানার কথাই বলে দিচ্ছে সানার কাছে তার গুরুত্বটা ঠিক কোথায়। সানাহ্ স্বভাবে বৈপরীত্য দেখালেও সানার বাচনভঙ্গি যে অন্য কথা বলে এটা ফারহানের বহু পূর্বেই জানা। এতকাল ধরতে পারেনি হুটহাট সানার রেগে যাওয়ার রহস্য। তবে আজ রহস্য নিজেই তার দুইয়ে দুইয়ে চার করে সমাধান ফারহানের সামনে হাজির করেছে।

—-

অবশেষে ফারহানের অনেক বোঝানোর পর সানাহ্ গান গাইতে রাজি হলেও সকলে সংকটে পড়লো এ নিয়ে যে সানাহ্ গান গাইলেও ব্যাকগ্রাউন্ড টিউন কে দিবে। এই আড্ডা মহলে কেউই গিটার, মাউথ ওয়ার্ম বা ফ্লুট বাজাতে জানেনা তবে হুট করে সানার মনে পড়লো অতসী তো ছোটবেলায় বাঁশি বাজানো শিখেছিল। সানাহ্ বলে উঠলো ‘ অতস বাঁশি বাজালে কেমন হয় ? ‘

‘ এমা আমি!! আমি তো সেই কবেই ভুলে গেছি বাঁশি বাজানো। আমি কি করে বাজাবো ? ‘ অতসী আতকে উঠে বললো।

এবার যেন জাপান লাই পেলো। বিদ্রুপ করে বললো ‘ পারবি কি করে। তোর মনে থুড়ি প্রেমের আগুন লেগেছে। ফাগুন প্রেমের আগুন। প্রেমের আগুন লাগলে বীণা বাজাতে না পারা মানুষও আনমনে বীণার সুর তুলে। তুই সিঙ্গেল মানুষ। তুই এমনিতেও পারবি না। ‘

জাপান কথাটা মজার ছলে বললেও অতসী যেন বিমূর্ষ হয়ে গেলো এই কথা শুনে। সকলে জাপানের কথা শুনে হাসাহাসি করছে কিন্তু সানাহ্ লক্ষ্য করলো অতসী আনমনা, কি যেন ভেবে সে দুঃখে দুঃখে মরে যাচ্ছে। সানাহ্ এবার জাপানের মনযোগ আকর্ষণ করে বললো ‘ তোমরা এসব মজা করা এখন বন্ধ করো। কথা ছিলো আমরা আড্ডা দিবো, গান গাইবো আর নাচবো। কিন্তু এখন তো দেখছি একেকজন আরেকজনকে খোঁচা মেরে কথা বলছে। এরকম চললে আড্ডা আর কন্টিনিউ করবো না আমি। ‘

‘ এই এই না না সরি… আই অ্যাম সরি। তুই উঠিস না। আমি তো এমনই বলছিলাম। তোর নাক বুচি বোন যে এভাবে সিরিয়াসলি নিবে সেটা কে জানত ? এই বুচি আই অ্যাম সরি। ‘ বলে অতসীর দিকে ইনোসেন্ট মুখ করে তাকালো জাপান।

মুহূর্তের জন্য জাপানের এহেন ভাবভঙ্গি দেখে অতসীর হাসি আসছে। জাপানকে এখন যেন ঠিক একটা হাবলা হাবাগোবা ছেলে মনে হচ্ছে যে অপরাধ করে ইনোসেন্ট মুখে মায়ের কাছে সরি বলছে। অতসী জাপানের কথার উত্তর না দিয়ে উঠে দাড়ালো। পকেটে ফোন গুঁজে বললো ‘ তোমরা বসো… আমি ফ্লুট নিয়ে আসছি। ‘

নিস্তব্ধ প্রকৃতি। বাতাসে দূর থেকে ভেসে আসছে রাতের অজানা পোকার ডাক। সানাহ্ ছোটোবেলায় এর নাম দিয়েছিল কুহুকি পোকা যে শুধু রাতের আঁধারে তার অবস্থান জানান দেয়। প্রকৃতির মাঝে বয়ে যাওয়া হালকা ঠান্ডা আমেজে যেন চারদিকে ফুলের মিষ্টি গন্ধ ছড়াচ্ছে।

এই হালকা শীতের ফুলেল আমেজে আকাশ বাতাস কাপিয়ে অতসী বাঁশির সুর তুললো। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে সানাহ্ও গেয়ে উঠলো তার স্বভাব ভিন্ন এক গান। সকলে মুগ্ধ হয়ে শুনছে সেই শ্রুতি মধুর সঙ্গীত। এ যেন এক নতুন সানাহ্ যার স্বভাব বলে সে পশ্চিমা সংস্কৃতি প্রেমী তবে তার সঙ্গীতের সুর তাল, লয় বলছে সে একজন বাঙালীও বটে।

সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’—
সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময়।
সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস?
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ….

বাতাসে মৃদু ঝঙ্কার তুলে একসময় সানাহ্ তার সঙ্গীতের ইতি টানল। পরিবেশটা এক প্রকার শান্ত হয়ে আছে। সকলে বসে বসে চোখ বুজে অনুভব করছে রাতের গভীরতা। অতসী কেমন যেন গম্ভির ভাব ধরে রেখেছে মুখে। সানাহ্ সেইদিকে একবার নজর দিয়ে বলল ‘ আমি তো তোর অনুরোধ রাখতে গান গেয়েছি। এবার তোরও আমার কথা রাখা উচিত। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয় সেটা জানিস তো ? ‘

সানার কথায় ভ্রুক্ষেপ করলো না অতসী। মৃদু গলায় বাতাসে বিষাদ মিশিয়ে সুর তুললো। সে গান গাইছে খালি গলায়। তার গানের সঙ্গে না বাজছে কোনো বাঁশির সুর না কোনো সেতারা। এ যেন এক মধুর মিশ্রণ। খালি গলার সুর আর পশ্চিমা সঙ্গীতের এক অপূর্ব বিষাদময় মিশ্রণ যেন বলে দিচ্ছে সম্পর্কের টানাপোড়েন। অতসীর এই বিষাদ পূর্তি সুর সকলের মন বিষাদ করে তুলছে। সকলে অপলক চেয়ে আছে অতসীর দিকে। রসিকতা প্রিয় জাপানও অবাক সেই সুর শুনে।

A broken heart is all that’s left
I’m still fixing all the cracks
Lost a couple of pieces when
I carried it, carried it, carried it home

I’m afraid of all I am
My mind feels like a foreign land
Silence ringing inside my head
Please carry me, carry me, carry me home

I’ve spent all of the love I saved
We were always a losing game
Small town boy in a big arcade
I got addicted to a losing game

Oh
Oh
All I know, all I know
Loving you is a losing game….

সকলের মনে বিষাদের সুর বাজছে। অতসী নিজেকে সামলে নেয়। চেহারায় কৃত্রিম খুশি খুশি ভাব এনে বললো ‘ কেমন লাগলো ? ভালো গেয়েছি না ? আরে সবাই এভাবে মুখ লটকে বসে থাকলে কিভাবে হবে ? একটু ব্রিফ তো দাও কেমন গেয়েছি। নাকি বাজে হয়েছে ? হলে আমার দোষ নেই কারণ আমি টিউন আর্টিস্ট। গান গাওয়া আমার কাম্য নয়।

তবে এবার আমাদের ফেমাস ড্যান্সার নাচবে। আপাই তোকে নাচতেই হবে। কতদিন দেখিনি তোকে নাচতে। ‘

‘ সবার সামনে নাচবো ? তুই ভালো করেই জানিস আমি নাচ জানলেও কখনও কারোর সামনে নাচি না। সবার সামনে গানের তালে কোমর দুলিয়ে নাচ আমার পছন্দ নয়। জোর করলে আমি কিন্তু উঠে যাবো। ‘ সানাহ্ হুমকি দেওয়ার রুপে বললো।

‘ এখন কোনো নাচ টাচ হবে না। সবাই ঘরে চল খেতে। রাত দশটা বাজে। এখন না খেলে ঘুমোতে যাবি কখন ? ‘ ফারহানের ফুপু মিসেস মারিয়া এসে বললেন। উনি সানার কথা শুনেছেন তাই সানাহ্কে এসবের হাত থেকে বাঁচানোর পাঁয়তারা করলেন। এমনিতেও তিনি সবাইকে খেতে আসতে বলতেই এসেছিলেন।

—-

বারান্দায় মিটিমিটি আলো জ্বলছে। এক কোণায় একটা নীলচে আলো জ্বালিয়ে রেখেছে সানাহ্। তার বারান্দাটা বাড়ির অন্য সব বারান্দা থেকে বেশ খানিকটা বড়। এক পাশে ডিভান আর তার পাশেই আড়াআড়ি করে সুইং চেয়ার। বারান্দাটা ডিভানের সাইডে স্বচ্ছ কাচ দিয়ে ঘেরা। কাচ লাগানো হয়েছে যাতে বৃষ্টি এলে ডিভান আর সুইং চেয়ার ভিজে একাকার না হয়।

সানাহ্ বারান্দার খোলা অংশে বাতাসের গাঁয়ে গা এলিয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রকৃতিতে মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। মিটমিট করে জ্বলে উঠা বারান্দায় হালকা শীতের আমেজ সানার মেজাজ ফুরফুরে করেছে।

খানিকটা দূরে কাচের অপর পাশে ডিভানের উপর রাখা ফোনে একটা পুরনো দিনের হিন্দি গান বাজছে। সানাহ্ তেমন একটা হিন্দি গান শুনে না। আজকাল সব অটো টিউন দেওয়া ধুম তানানা গান তাই ওসব তার ভালো লাগে না। তবে পুরনো দিনের গানগুলো তার বড্ড ভালো লাগে। এখনও সে এরকমই পুরনো এক গান শুনছে।

Abhi na jao chhod kar ke dil abi bhara nahi
Abhi na jao chhod kar ke dil abi bhara nahi
Abhi abhi to aayi ho, abhi abhi to
Abhi abhi to aayi ho, bahar banke chhayi ho

Hawa zara mehak to le, nazar zara behak to le
Yeh shaam dhal to le zara
Yeh shaam dhal to le zara
Yeh dil sambhal to le zara
Main thodi deir jee to loon….

‘ মানুষ বাসর রাতে রোমান্টিক গান শুনে আর আমার বউ পুরনো দিনের স্যাড টাইপের সং শুনছে। এই ছিল কপালে। মনে হয় বিবাহিত জীবন বিরহে বিরহেই কাটবে আমার। ‘

সানাহ্ মন দিয়ে গান শুনছিল। সে একেবারে হারিয়ে গেছিলো গানে। তবে ফারহানের কথা শুনে বাস্তবে ফিরে এলো। গানের ঘোর কাটিয়ে উঠলো। পাশ ফিরে দেখলো ফারহান রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি তার স্থির। ফারহানরা আজ এখানেই থেকে যাবে সেটা আগেই কথা হয়েছিল। যেহেতু আজকের রাতটা ওদের প্রথম রাত তাই বড়রা ওদের একসঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ দিয়েছে। কাল থেকে আবার দুজনে আলাদা হয়ে যাবে।

এবার সানাহ্ খানিকটা ঠোঁট কামড়ে ফারহানের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। বললো ‘ এটা স্যাড সং না। একটা আলাদা কিছু আছে এই গানে। আমি হিন্দি গান শুনিনা তবে এই গান আমাকে টানে। ‘

‘ বাহ্ তোমার এই গান পছন্দ ? তাহলে তো আমারও একে পছন্দের তালিকায় যোগ করতে হচ্ছে। বাই দ্যা ওয়ে তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি। দেখতে চাও ? ‘ ফারহান সানার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।

‘ আপনার ইচ্ছে করলে দেখান। আমিও গিফট এনেছি। আই থিঙ্ক সেটা আপনার খুব পছন্দ হবে। ‘ সানাহ্ বললো।

‘ বাহ্ তুমিও এনেছ ? তাহলে তো দেখতেই হয়। তবে আগে আমারটা দেখাই তারপর তুমি দেখাবে। ঠিক আছে ? ‘

ফারহানের কথায় মাথা নাড়ল সানাহ্। ফারহান ওর ট্রাউজারের পকেট থেকে একটা বক্স বের করলো। সানাহ্ এতক্ষণে খেয়াল করলো ফারহানের গাঁয়ে রাতের সেই পাঞ্জাবি নেই। সেটা বদলে ট্রাউজার আর টিশার্ট আছে। তারমানে সে আগেই ঘরে এসে জামা কাপড় বদলেছে।

বক্সটা খুলতেই অবিকল ফারহানের হাতে থাকা প্লাটিনামের রিংয়ের মতো সেম একটা রিং চোখে পড়লো সানার। সে অবাক হয়েছে বটে তবে সেটা চোখে মুখে প্রকাশ পেতে দিলো না। ফারহান ওর নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় আংটির দিকে তাকিয়ে থাকা দেখে বললো ‘ সুন্দর না ? আমার হাতে হালকা রিং আর আমার বউয়ের হাতে এত ভারী রিং থাকবে সেটা কি মেনে নেওয়া যায় ? আমার বউয়ের কষ্ট হলে আমারও তো কষ্ট হয় তাইনা ? ‘

~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….