প্রেমমোহ পর্ব-০৪

0
443

#প্রেমমোহ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৪

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কালো টি-শার্ট গায়ে দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো স্পন্দন। কিছুক্ষণ পর তাকে বের হতে হবে। কিন্তু এখন তার চায়ের নেশা ধরেছে ভীষণ। মায়ের ফোনে কল দিয়ে,

–” আমার রুমে তাড়াতাড়ি এক কাপ চা পাঠাও।”

অপর প্রান্তের মানুষটির কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে দিল স্পন্দন। মিসেস সাবিনা বেগম শুভ্রতার রুমে ফোন রেখে চলে গিয়েছিলেন। ফোনের শব্দে রিসিভ করতেই ওপাশের গম্ভীর মানুষটির অর্ডার শোনে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কল কেটে দিল লোকটি।

–” এই ছেলেরা নিজেকে কি ভাবে দেশের প্রধান মন্ত্রী। কথা নেই বার্তা নেই অর্ডার করা শুরু করেছে। বলি আমাকে একটি সুযোগ দিতি এইটার বলার জন্য যে আমি তোর মা নই আমি শুভ্রতা। এখন কি করবো? আন্টিকে গিয়ে বলে আসি।”

ফোনটা হাতে নিয়ে মিসেস সাবিনা বেগমকে খুঁজতে লাগলো শুভ্রতা। শুভ্রতার উঁকি ঝুঁকি দেখে টুনির মা বলল,

–” বড় ম্যাডাম পাশের বাসায় গিয়েছে। কিছু দরকার পরলে আমাকে বলো।”

–” স্পন্দন স্যারের জন্য চা পাঠাতে বলেছেন।”

–” ওই খবিশ লোকের জন্য চা আমি বানাতে পারব না। এক নম্বরের খবিশ লোক। এত ভালো বড় ম্যাডাম, বর সাহেব, বড় ভাই, ছোট আফা কিন্তু ওই লোকটা কেন বদমেজাজি হলো বুঝলাম না। জানো একবার খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে গিয়েছিলাম আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছিল মনে হয়েছিল রাক্ষস তাকিয়েছে। ”

শুভ্রতা একমনে কথাগুলো শুনলো। হঠাৎ আবারো ফোন আসলো রিভিভ করার সাথে সাথেই স্পন্দন বলে উঠলো,

–” মাথা ধরেছে ভীষণ। গতকাল ওই মেয়েটার চিন্তায় ঘুম হয়নি। প্লিজ এক কাপ চা দাও।”

শুভ্রতা মুখ থেকে একটা উচ্চারণ ভেসে আসলো,

–” হুম।”

স্পন্দন ফোন কেটে দিল। শুভ্রতা গ্যাসে দুই কাপের মত পানি দিয়ে নিজের পছন্দ অনুযায়ী চা বানালো। তেজপাতা, আদা, লবঙ্গ, এলাচি, দারুচিনি দিয়ে চা বানিয়ে দুই কাপে ঢেলে এককাপ নিচে রেখে আরেক কাপ নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতে লাগলো। আচমকা মনে পড়লো সে তো কার কোনটা রুম জানে না। উপর থেকেই জিজ্ঞাসা করলো টুনির মাকে,

–” উনার রুম কোনটা?”

–” একদম সিঁড়ির সোজা ওইটাই। যাচ্ছ তো দেখো কেমন আচরণ করে।”

শুভ্রতা টুনির মায়ের কথায় কান না দিয়ে এগিয়ে গেলো স্পন্দনের রুমে। রুমের কাছে যেতেই তার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। দরজায় কড়া নাড়তেই স্পন্দন বলল,

–” দরজা খোলা আছে।”

সাহস যুগিয়ে শুভ্রতা রুমের ভিতর ঢুকলো। স্পন্দন মন দিয়ে কাজ করছে। চুপিচুপি চায়ের কাপটা রাখতে যাবে টমি এসে জোরে জোরে ঘেউঘেউ করতে লাগলো। শুভ্রতা ভয়ে চায়ের কাপটা হাত থেকে ফেলে দিল। গরম চা স্পন্দনের পায়ে এসে পড়লো। গরম চোখে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,

–” ইউ? চোখে দেখতে পান না? গরম চা কি আমার পায়ে ফেলার জন্য অর্ডার করেছি? তাছাড়া আমার রুমে আপনি কি করছেন।”

ভয়ে ভয়ে বলল শুভ্রতা,

–” আন্টি বাসায় নেই।”

–” তো? টুনির মা কোথায়? সেও কি বাসায় নেই?”

–” উনি ভয় পান আপনাকে।”

–” কেন আমি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে উনি আমায় ভয় পায়। উনাকে কি আমি খেয়ে ফেলবো। এখন আপনি সাহস দেখিয়ে চলে আসছেন আমার রুমে। খুব সাহস আপনার তাই না?”

–” আপনিই তো বলছিলেন, আপনার মাথা ব্যাথা করছে তাইতো চা নিয়ে আসছিলাম। আপনার এই কুত্তাই তো আমাকে ভয় দেখালো।”

টমি আবারো ঘেউঘেউ করে উঠলো। স্পন্দন টমির দিকে তাকিয়ে আবার শুভ্রতার দিকে তাকালো শান্ত গলায় বলল,

–” কুত্তা কি? ওর নাম টমি। আজকের পর থেকে সম্মান দিয়ে কথা বলবেন।”

–” আপনার টমি কালো কেন? দেখলেই তো ভয় করে। সাদা কুকুর আনতে পারলেন না?”

টমি এইবার রেগে গিয়ে শুভ্রতার কাছে এসে ঘেউঘেউ করতে লাগলো। শুভ্রতা ভয় পেয়ে স্পন্দনকে জড়িয়ে ধরলো। স্পন্দন তো রেগে আগুন। সে মেয়ে মানুষ মোটেও দেখতে পারে না আর শুভ্রতা কিনা তাকে জড়িয়ে ধরেছে। শুভ্রতার হাত জোরে ধরে রাগান্বিত স্বরে বলল,

–” আমার আশে পাশে মোটেও আসবেন না। খুন করে ফেলবো। আমার রুমে যদি আরেকবার এসেছেন তাহলে খবর আছে আপনার।”

–” হাতে লাগছে আমার।”

–” এখন শুধু হাতে ব্যাথা পাচ্ছেন। আমার কথা না শুনলে গলা চেপে ধরবো।”

শুভ্রতা ভয় পেয়ে চলে যেতে নিলে সামনে টমি এসে পথ আটকালো। সাদা দাঁতগুলো তার বের করে শুভ্রতার কাছে আসতে লাগলো শুভ্রতা এইবার কান্না করতে করতে স্পন্দনকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

–” আর জীবনেও আপনার রুমে আসবো না। প্লিজ এই কুকুরের কাছ থেকে রক্ষা করুন।”

–” কুকুর বললে তো কামড় দিবেই। টমি ডাকুন। পশুদের ভালোবাসুন তাহলে দেখবেন তারাও আপনাকে ভালোবাসবে।”

–” ওকে ওকে। এখন টমির কাছ থেকে তো বাঁচান।”

স্পন্দন টমিকে ইশারা দিতেই টমি পথ থেকে সরে দাঁড়ালো। সোফায় উঠে আরামছে শুয়ে পরলো টমি। শুভ্রতা স্পন্দনকে ছেড়ে দরজার কাছে যেতেই স্পন্দন আবারো বলল,

–” আমি এখন অফিস যাবো। প্রথম চা তো নষ্ট করে ফেললেন এখন আরেক কাপ চা বানান আমি পাঁচ মিনিটের ভিতর আসছি।”

শুভ্রতা হ্যাঁ বোধক অর্থ বুঝিয়ে নিচে নামলো। তাকে দেখে টুনির মা বড় বড় চোখ করে বলল,

–” তুমি বেঁচে আছো? ভাবছিলাম তো এই বুঝি শেষ। কিছু বলেনি তোমাকে খবিশ লোকটা?”

–” নাহ।”

শুভ্রতা রান্না ঘরে গিয়ে তার বানানো চা গরম করে অপেক্ষা করতে লাগলো। স্পন্দন ড্রয়িং রুমের কাছে এসে রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে বলল,

–” চা হয়েছে মিসেস শুভ্রতা?”

শুভ্রতা চা স্পন্দনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো। প্রথম চুমুকেই স্পন্দন যেন চায়ের প্রেমে পড়ে গেলো। এই প্রথম কারো প্রশংসা করলো সে। চায়ের কাপটা দু’ঠোঁটে স্পর্শ করে প্রশংসার পঞ্চমুখ হয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল,

–” চা তো দেখছি ভীষণ ভালো পারেন। আজকের পর থেকে আমার চা আপনিই বানাবেন। ফ্রী-তে থাকবেন আমার বাসায় এইটুকু তো আমার জন্য করতেই পারেন তাই নয় কি?”

শুভ্রতা পিছন না ঘুরেই জবাব দিলো,

–” সব কাজেই পারি আমি। সমস্যা নেই আজকের পর থেকে আপনার চা আমিই বানিয়ে দিবো তবুও যদি মাথার উপর থেকে অন্যের ঘরে খাওয়া উপাধিটা ঘুচে।”

বিকালে,

পুরো আলমারি জোরে সমস্ত জামা কাপড় এলোমেলো করে দেখছে দিয়া। এত এত জামার মাঝেও সে পরার মত জামা খুঁজে পাচ্ছে না। বারবার হতাশ দৃষ্টি জামা কাপড়ের দিকে নিক্ষেপ করছে। একবার গোলাপী, আরেকবার সবুজ এইভাবে সবগুলো জামা সে চোখ বুলিয়ে নিলো। নাহ কিছুতেই সে নিজের প্রিয় জামা খুঁজে পাচ্ছে না। এক প্রকার বহু কষ্ট নিজের ভিতরের জমে রাখা কষ্ট প্রকাশ করলো সে। জোরে জোরে কান্না করতে করতে মায়ের রুমের কাছে আসতেই মিসেস সাবিনা বেগম অবাক হওয়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মেয়ের দিকে।

–” কি হয়েছে কান্না কেন করছিস?”

–” আম্মু গোওওও আমার কোনো জামা নেই। পরার মত কোনো জামা খুঁজে পাচ্ছি না আমি।”

মেয়ের এমন আশ্চর্যজনক কথায় ভীষণ রকমের আশ্চর্য হলেন উনি। বাসায় তার এত এত জামা, মাসে সে কম হলেও ছয় সাত সেট করে শপিং করে এখন নাকি তার পরার মত জামা নেই। বিষয়টা সত্যিই আশ্চর্যজনক।

–” কেন কিছুদিন আগে না কিনে আনলি ওইগুলো কোথায়?”

–” দেখতে ভালো লাগে না। এখন আমি কি গায়ে দিয়ে শপিং করতে যাবো আম্মু?”

একরাশ বিরক্তি ও রাগী দৃষ্টি নিয়ে বললেন,

–” আমার শাড়ি পরে যা। কথায় আছে, এ জগতে হায়, সে বেশি চায় আছে যার ভূরি ভুরি/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি । তোর এত কিছু থাকা সত্ত্বেও মন ভরে না। কষ্টে থেকে বুঝতে পারতি কেমন লাগে।”

চলবে,

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।