প্রেমরোগ পর্ব-২৯

0
696

#প্রেমরোগ-২৯
#তাসনিম_তামান্না

তপ্ত দুপুর ঝলসানো গরমে ঢাকার একটা রেস্টুরেন্টে টেবিলে মুখোমুখি বসে আছে দুই মানব মানবি। এসি শীতল হাওয়ায় ও ঘামছে রিদ। কঠিন্য আঁখি জোড়া দিয়ে ঝড়ছে অভিমানের অশ্রু কিন্তু সেটা গড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে না। তবুও ক্রোধে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। কন্ঠে ঝাঁঝ এনে বলল
” কি হলো কথা বলছেন না কেনো? ”
” এসব তোমাকে কে বলল? ”
” সে যে-ই বলুক। আপনি একবার আমার সাথে কথাটা শেয়ার করতে পারতেন এভাবে নিজের মধ্যে রেখে গুমরে গুমরে না ম রে আমাকে বলতেন আমি একেবারে মে রে দিতাম ”
রিদ অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলল
” আন্টি চায় না তোমার সাথে আমার কিছু হোক তাই আমি ও… ”
” লাইক সিরিয়াসলি তাই আপনিও চান না। এই আপনার ভালোবাসা? আম্মু কি বলছে। আপনার মতো জামাই সবাই চান তিনি ও চায় কিন্তু শুধু আপনার বাবা-মা নেই। একটু বোঝালেই মা বুঝতো এতোটাও অবুঝ নয় আমার আম্মু। তার মেয়ের খুশির জন্য হলেও এটা মেনে নিতো। ”
” তুমি খুশি হবে আমার সাথে তোমার বিয়ে হলে ”
” খুশি না হওয়ার কি আছে? খুশি হতে গেলে দুইটা ভালোবাসা পূর্ণ মন লাগে। তাহলে সারাজীবন একসাথে থাকা যায় ”
” বাস্তবতা এমন নয়। টাকা না থাকলে এ জীবনে কোনো দাম নেই ”
” যদি আমি আপনার সাথে সারাজীবন থেকে প্রমাণ করে দি ”
” কেউ মানবে না আমাদের দু’জনের এক হওয়া ”
” মানবে কি মানবে না সেটা আপনি যানেন কিভাবে? সবার কাছ থেকে জেনে এসেছেন ”
” এমনিতেই বোঝা যায় ”
” চলেন বিয়ে করবো ”
রিদ আঁতকে ওঠে বলল ” এখান? ”
” হ্যাঁ তো? ”
নিরবতা গ্রাস করলো দু’জনের মাঝে। দুজনের মস্তিষ্কে ঘুরছে ‘বিয়ে’ নামক কথাটা। সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কি করবে কি করবে না। চারিদিকে কপোত-কপোতী মেলা, বন্ধুত্বের আসর জমিয়ে যে যার মতো গল্পে মেতে আছে। সূর্য একটু একটু করে হেলে পড়েছে বিদায়ের জানান দিচ্ছে। নিরবতায় কেটে যায় বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো না দুজন দুজনের চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেনো চোখে চোখে দুজনে মনের ভাব বিনিময় করছে। দুজন দুইজনের মনের অলিগলি ঘুরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। রিদ বলল
” এভাবে বিয়ে হয় না। তোমাকে এতোদিন যারা ভালোবেসে আগলে রাখলো তাদের মূল্য নেই তোমার কাছে? যদি তোমার আমার বিয়ে হওয়ার ই হয় তাহলে তাদের মতামত নিয়ে ই হবে ”
” যদি না মানে? ”
” তাহলে কখনোই দু’জনে এক হবো না ”
রিদের কথায় মেঘার অন্তত ছেদ করে উঠলো। চোখ ছলছল করে উঠে। চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে ‘ মেঘা রিদের না হলে আর করোর কখনো হবে না ‘
মেঘা দ্বিখণ্ডিত হৃদয় নিয়ে বলল ” আপনি চলে যান আপনার না কি কাজ আছে ”
” এখন তোমার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ হতে পারে না ”
” আমি এস্পেশাল কেউ নয় যার জন্য নিজের চাকরির ক্ষ তি করবেন ”
” তুমি আমার কাছে এস্পেশাল কেউ একজন ”
” আমি যান আমি আপনাকে সময় করে বলে দিবো আপনি কবে আমাদের বাসায় আসতে হবে ”
রিদ প্রতিত্তর করলো না উঠলোও না ঠাঁই বসে রইলো। তারপর আবারও নিরবতা গ্রাস করলো দু’জনের মাঝে। দুজনের মন বিষন্ন হয়ে আছে মস্তিষ্কে হা না দিয়েছে হাজারো কু চিন্তা।
——————-
নবদিনের সূচনা। দেখতে দেখতে অনেক গুলো দিন কেটে গেছে। অক্টোবর মাসটা অন্যরকম। একটা শান্তি শান্তি ফিল হয় এই মাসে। অক্টোবরের শেষ দিয়ে হালকা শীত পড়তে শুরু করে। নতুন ঋতুর আগমন হওয়া এই মাসটা অন্যসব মাসের চেয়ে একটু আলাদাই হয়। তুষার কুয়াশার খুনসুটিময় টোনাটুনির সংসার ভালোই চলছে। সুইজারল্যান্ডে ঠান্ডা বারছে। নিত্যদিনে দুজনের বাক্যবিনিময়ের সময় সীমিত। ছুটির দিনে দুজনে এগলি ওগলি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে, পার্কে ঘুরে আসে। তুষার যখন সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে নিড়ে ফিরে তখন কুয়াশার মুচকি হাসি দিয়ে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দেওয়া দৃশ্যটায় মন জুড়িয়ে যায় এইতো তার সব ক্লান্তি, হতাশা, খারাপ লাগা নিমিষেই দূর হয়ে গেছে।

তুষার সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলো। তুষার কে দেখেই কুয়াশার সারাদিনের বোরিংনেস কেটে গিয়ে মুখে এক চিলতে হাসি এলো। তুষারে দিকে পানি এগিয়ে দিলে তুষার আজ হাসলো না কেমন বিষন্ন লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো কারণে বেশ চিন্তিত। কুয়াশা জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও করলো না। খেতে বসে কুয়াশা এবার জিজ্ঞেসা করেই ফেললো
” কি হয়েছে আপনার? কোনো কারণে আপনি চিন্তিত? ”
” আমি চলে গেলে তুমি এবাসায় একা থাকতে পারবে না? ”
কুয়াশার অন্তত ছেদ করে উঠলো। আঁতকে ওঠে বলল ” আমাকে একা ফেলে কোথায় যাবেন? ”
তুষার শান্ত কন্ঠে বলল ” হাইপার হয়ে যাচ্ছো কেনো? রিলাক্স হও ”
” আগে বলেন কি হয়েছে? কেনো আমাকে রেখে যাবেন? কোথায় যাবেন? ”
” কুয়াশা কয়দিনের জন্য আমাকে বের্ন যেতে হবে অফিসের কাজে। ”
কুয়াশা মনের মধ্যে কেমন অস্থিরতা গ্রাস করলো। অন্তঃপুর শূন্য হয়ে গেলো।
” কবে ফিরবেন আপনি? ”
” কাজ হয়ে গেলে ফিরে আসবো কথা দিতে পারছি না ”
আর কেউ কথা বলল না চুপচাপ খেয়ে নিলো।

সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বের্ন ভ্রমণের জন্যএকটি জনপ্রিয় ইউরোপীয় গন্তব্য। ভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান । ভ্রমণকে সহজতর ও আরামদায়ক করার জন্য এখানকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

বার্নে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এর গবেষণার কার্যকাল উদযাপনের এখানকার জাদুঘরের পাশেই তার সম্মানার্থে আইনস্টাইন ক্যাফে রয়েছে। এই ক্যাফেটি ভ্রমণকারীদের ভ্রমণকে নতুন অভিজ্ঞতা প্রদান করে ।

সর্বোপরি, শহরটি মধ্য দিয়ে কুঁকড়ানো নদীটি অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য যোগ করেছে। সমস্ত গ্রীষ্মকাল ধরে স্থানীয়রা বার্নের লোয়ার শহরে যাত্রা করে নদীর স্রোতে একটি সতেজ প্রবাহ উপভোগ করে। নদীতে নৌকা ভ্রমণের জন্য সুইজারল্যান্ড এর সবথেকে জনপ্রিয় স্থান এটি।

তুষার লাগেজে জামাকাপড় গোছাচ্ছিল। কুয়াশার ঘরে মন টিকছে না। নিজের সাথে অনেক যু দ্ধ করে তুষারের রুমে সামনে এসে নক করলো।
” ভিতরে আসো নক করার কি আছে? ”
তুষার গোচ্ছে দেখে কুয়াশার মন খারাপের তিব্রতা বেড়ে গেলো।
” কিছু বলবে? ”
” আমাকে আপনার সাথে নিবেন? ”
তুষার কুয়াশার দিকে একবার তাকিয়ে বলল
” নিতে পারলে তোমাকে অবশ্যই নিতাম তুমি না বললেও কিন্তু এটা আমার হাতে নেই। তাছাড়া আমি ওখানে কাজে ব্যস্ত থাকবো তোমাকে সময় দিতে পারবো না। তুমি বাসায় থাকো আর বলো কি কি লাগবে এখন অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি। সকালের মধ্যে এসে যাবে। ”
” কিছু লাগবে না সবই আছে ”
” আচ্ছা। শুনো একা বাসা থেকে বের হবে না। দরকার হলেও না। কেউ আসলে দরজা খোলার দরকার নাই কেউ আসবেও না। আর সাবধানে থেকো। ”
কুয়াশা কিছু বলল না। তুষার একটু থেমে আবার বলল ” তুমি কি একা একা পুরো বাসায় থাকতে ভয় করবে? ”
” নাহ ”
” আচ্ছা তাহলে তো হয়েই গেলো। কয়েকটা দিন রিলাক্সে থাকো। আমার সাথে ঝগড়া করা লাগবে না। তোমাকে কেউ খে পাবে না। তুমি শুধু খাবে, দাবে আর ঘুমাবে ”
কুয়াশার রাগ হলো। বলল
” হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। আপনি গেলে আমি একা একা শান্তিতেই থাকবো ”
কুয়াশা ধুপধাপ পায়ে চলে গেলো। তুষার হাসলো। ব্যাগ গুচ্ছিয়ে নিলো। দু’জনের দুই রুমে র্নিঘুম রাত কাটলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ