#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৩♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌹
.
নীবিড় ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন। চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলেন,
— চিন্তা করো না অনন্যা! তোমার আর আমার বিয়ের খবর কেউ জানবে না। তুমি আগের মতোই চলাফেরা করবা। তোমার ওপর কোনো রকম অধিকার খাটাতে আসবো না আমি।
এবার প্লিজ একটু হাসো। এরকম ভাবলেশহীন ভাবে থেকো না। (হঠাৎ শান্ত হয়ে বললো নীবিড়)
.
আমি উনার কথার কোনো উত্তর দিলাম না। শুধু ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলাম উনার দিকে। ভাবতেই অবাক লাগছে আমার। এই মানুষটা যাকে আমি যমের মতো ভয় পাই সেই কিনা আমার হাজবেন্ড।
.
উনি আবারও আমার দিকে মুখ করে বসে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন,
— তুমি কি আমায় বিশ্বাস করো?
.
আমি শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালাম। জানি উনি বদমেজাজি, খিটখিটে স্বভাবের। আমায় সহ্যই করতে পারেন না আবার সময়ে সময়ে পাল্টি খেয়ে যান। তাও উনাকে আমি বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করতে একপ্রকার বাধ্যই হই। কারণ উনি যা বলেন তা ঠিকই করেন। আজ পর্যন্ত ভুলের জন্য অনেক শাস্তি দিলেও বাহ্যিক কোনো ক্ষতি করেন নি আমার। বরং সবসময় বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমার একটুখানি চোট লাগলেই ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। আমার বিশ্বাস উনি আমার সাথে যতই রুড বিহেভ করুক না কেনো, কখনোই কোনো পরিস্থিতিতে আমার ক্ষতি হতে দিবেন না।
.
নীবিড় ভাইয়া মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালেন। দাঁড়িয়েই হাসি মুখে বলে উঠলেন,
.
— জানো কটা বাজে? দুপুর ৩ টে বেজে ১২ মিনিট। (হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
.
চট করে আমি লাফিয়ে উঠলাম। ৩ টে পাড় হয়ে গিয়েছে! বাসায় নিশ্চয় আম্মু টেনিশন করছে! ভার্সিটি ছেড়েছিলো ১ টার একটু আগেই। তার মানে দু দুটো ঘন্টা যাবৎ শহরের বাইরে আছি আমরা।
উনি আমায় দাড়িয়ে যেতে দেখে আবারোও বলে উঠলেন,
.
— আমার পেটে মেবি শুধু ইঁদুরই নয় সাথে তোমার বলা সাদা বিলাইও দৌঁড়োচ্ছে। ভীষণ খিদে পেয়েছে। পাকস্থলী মহাশয় কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠছে বারবার।
আচ্ছা তোমার খিদে পায় নি? এমনি সময় টেনশনে পানি খেতে খেতে তো পেট টাকে কূয়ো বানিয়ে ফেলো। আজ কি হলো?
.
উনার কথায় হাল্কা স্বরে হেসে উঠলাম আমি। মনে মনেই ভাবতে লাগলাম ” উনি নিজেই তো সাদা বিলাই। নিজেই নিজের পেটে কিভাবে দৌঁড়োবেন?
আমায় হাসতে দেখে হেসে উঠলেন উনি নিজেও।
“চলো এবার যাওয়া যাক” বলেই আমায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন উনি।
.
🌺
.
অগ্নি ভাইয়া দেওয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বুজে উপরের দিকে চেয়ে রয়েছে। রুশো ভাইয়া পাশেই মাথায় দুহাত চেপে বসে আছে। আমরা ঘর থেকে বেরোতেই যেনো শ্বাস ফিরে পায় দুজনেই।
রুশো ভাইয়া একছুটে আমার সামনে এসে চিন্তিত হয়ে বলে উঠলো,
— ছুটকি, তুই ঠিক আছিস? কি ডিসিশন নিলি তোরা?
.
অগ্নি ভাইয়া কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
— আহ রুশো! এখনই এতো প্রশ্নের কি আছে? এখনোও কোনো কিছুর সলিউশন বের হয়নি।
.
রুশো ভাইয়া মাথা চুলকে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,
— ওমা তাইতো!
.
এর পরিপ্রেক্ষিতে অগ্নি ভাইয়া কিছু বলবে তার আগেই নীবিড় ভাইয়া বলে উঠলেন,
— ভাইয়েরা আমার! প্লিজ এখন কিছু বলিস না। খুব জোড় খিদে পেয়েছে। সকালে নাস্তা করেও আসা হয়নি আমার। ভার্সিটির মোড়ের রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়ে নেই চল।
.
অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া নীবিড় ভাইয়াকে এতোটা স্বাভাবিক দেখে অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দুজন দুজনের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চাওয়া-চাওয়ি করে সম্মতি জানালো।
তার মাঝে আমি বলে উঠলাম,
.
— ভাইয়া! আম্মুকে জানিয়েছিস আমরা একসাথে আছি যাতে টেনশন না করে?
.
— বলেছি! বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলো।
.
শুনে কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হলাম। এরপর সবাই গ্রাম থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। সবই ঠিক আছে কিন্তু বিপত্তি ঘটলো আমাকে নিয়ে। কারণ অগ্নি ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া দুজনেই বাইক নিয়ে এসেছেন আবার রুশো ভাইয়া এসেছে কারে। এর মাঝে আমি আগাছা! কার সাথে যাবো ভেবে পাচ্ছিনা।
আমার কনফিউশন দূর করতে নীবিড় ভাইয়া বলে উঠলেন,
.
— অনন্যা, তুমি রুশোর কারে গিয়ে বসো। অনেক টায়ার্ড তুমি। সিটে হেলান দিয়ে রেস্ট নাও ভালো লাগবে।
.
সবাই উনার কথায় সায় দিলেও, উনার সলিউশনটা ঠিক পছন্দ হলো না আমার। আমার চাই বুক ভরা তীব্র শ্বাস। কিন্তু কারে বসলে ওই সামান্য উইন্ডোও দিয়ে যেটা অসম্ভব। বাইকে বসে তাজা হাওয়া খেতে খেতে যাওয়ার মজাটাই অন্যরকম।
আমি কোনো কিছু না ভেবে টুপ করে সাদা বিলাইয়ের বাইকে উঠে পড়লাম। যা দেখে অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া কাশতে শুরু করে দিল। এদিকে সাদা বিলাই তো আমার কান্ডে চরম অবাক। উনি আমায় কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি বলে উঠলাম,
.
— চলো সবাই!
.
নীবিড় ভাইয়ার আর কিছু বলা হয়ে উঠলো না। চুপচাপ বাইক স্টার্ট দিয়ে ছুটে চললেন। পেছন পেছন অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়াও ভ্যাবাচ্যাকা খেতে খেতে আসতে লাগলো।
আকাশে আজো মেঘ করছে, বৃষ্টি হবে নির্ঘাত। বাইকে চড়ে এই ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ায় মনটা একদম ফুরফুরে লাগছে। অসম্ভব রকমের ভালোলাগা কাজ করছে আমার। সাথে চোখে নেমে আসছে রাজ্যের ঘুম। যদি পারতাম তো এখানেই ঘুমিয়ে যেতাম। কল্পনাতে দেখতেও শুরু করে দিয়েছি আমি এই সুন্দর পরিবেশে গা হিম করা বাতাসে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে আছি। এসব ভাবতে ভাবতেই নীবিড় ভাইয়ার পিঠে মাথা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। হঠাৎ উনি এমন আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠলেন। সাথেসাথে ব্রেক কষে ফেললেন উনি। যার কারণে আমার মাথা ঠাস করে বারি খেলো উনার হেলমেটে।
.
— আহ! কি করলেন এটা? লাগলো তো! (কপালে হাত বুলাতে বুলাতে)
.
উনি চট করে মাথা ঘুরিয়ে আমায় নামতে বললেন। আমি নেমে গেলেই বাইক স্টান্ড করে নেমে পড়লেন উনি নিজেও। আমাদের নামতে দেখে অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়ায় এসে থেমে গেলো একই স্পটে।
উনি রুশো ভাইয়ার কারের কাছে গিয়ে ভাইয়াকে কি বললেন জানি না তবে খুব তাড়াতাড়িই রুশো ভাইয়া কার থেকে নেমে গিয়ে নীবিড় ভাইয়ার বাইকে উঠে পড়লো।
.
— ছুটকি, ব্রোর সাথে গাড়িতে গিয়ে বোস।
.
রুশো ভাইয়ার কথার মাঝেই নীবিড় ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে গাড়িতে গিয়ে বসিয়ে দিলেন। এতোক্ষণ অগ্নি ভাইয়া শুধু নীরব দর্শকের মতো চেয়ে চেয়ে সব দেখছিলো। এবার মুখ খুললো ভাইয়া,
.
— এই তোরা করছিস টাকি? বদলা বদলি করছিস কেনো?
.
নীবিড় ভাইয়া গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসতে বসতে বলে উঠলো,
— তোর বোনের ঘুম পেয়েছে। ওভাবে বাইকে ঘুমোলে কখন দুম করে পড়ে কোমড় ভাঙ্গত আর দোষ হতো আমার। বাইক স্টার্ট দে। আমরা আসছি পেছন পেছন।
.
ভাইয়া আর কিছু বললো না, বাইক স্টার্ট দিয়ে দুজনেই এগিয়ে গেলো।
এদিকে নীবিড় ভাইয়া ড্রাইভ করার আগে আমায় টেনে নিয়ে নিজের কোলে মাথা দিয়ে শুইয়ে দিলেন। সাথে আমার পাশের উইন্ডোও খুলে দিলেন। যার জন্য বাতাস সোজা আমার মুখে এসে পড়ছে।
.
— আরে আরে কি করছেন? এভাবে ঘুমোবো আমি?
.
উনি সানগ্লাস পড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে উঠলেন,
— শাট আপ! পিঠ টাকে তো ঠিকই বালিশ বানাতে পারলে। কোল টাকে বানালে দোষের কি? চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো। ইউ উইল ফিল বেটার।
.
বলেই ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলেন উনি। আর আমি বোকার মতো চেয়ে রইলাম উনার মুখ খানায়। কে বলেছে শুধু মেয়েরাই রহস্যময়ী হয়? যারা বলে তাদের বলবো সাদা বলাইকে দেখে যেতে। মিনিটে মিনিটে সেকেন্ডে সেকেন্ডে রং বদলান উনি। অদ্ভুত!
এসব ভাবতে ভাবতেই আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। তলিয়ে গেলাম আমি রাজ্যের ঘুমে।
.
🍂
.
যখন ঘুম ভাঙলো তখন নিজেকে ড্রয়িংরুমের সোফায় আবিষ্কার করলাম আমি। আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে অগ্নি ভাইয়া, রুশো ভাইয়া, আর নিত্য আপু।
আমি ওদের এভাবে আমার দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখে চমকে এক লাফ মেরে উঠে বসলাম। আমায় জেগে উঠতে দেখে যেনো সবার মুখেই হাসি ফুটে এলো।
.
— আ..আমি বাসায় এলাম কখন? আর তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আমার দিকে?
.
আমার এমন প্রশ্নে সবার মুখটা “হা” হয়ে গেলো। রুশো ভাইয়া মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলো,
— ছুটকি? আর ইউ ওকে? ৩ ঘন্টা ধরে ঘুমিয়েছিলিস তুই! কতো ডাকাডাকি করলাম তাও উঠলিনা। শেষে কোলে করে আনতে হয়েছে তোকে।
.
— এতো মরার মতো ঘুমিয়েছিস! দেখ কটা বাজে ৬ টা বেজে ২০ মিনিট। তোর জন্য তখন খাওয়াও হয় নি আমাদের। সোজা বাসায় এসে নেমেছি।
.
—- আহহহ! থাকনা অগ্নি! ক্লান্ত ছিলো, ঘুমিয়ে পড়েছে কাহিনি শেষ।
অনন্যা বোনটি উঠো তো ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো। দুপুরে তো খাওয়াই হয় নি তোমার! (নিত্য)
.
আমি বোকার মতো প্রশ্ন করে বসলাম,
— তোমরা খেয়েছো?
.
ওমনি অগ্নি ভাইয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো,
— নাহ! আপনার ঘুম ভাঙার ওয়েট করছিলাম।
বুদ্ধু! যা উঠ! আমরা খেয়েছি শুধু একজন বাদে।
.
ভাইয়ার পুরো কথা না শুনেই আমি পুরো বাড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে আবারও প্রশ্ন করে বসলাম,
— উনি কোথায়?
.
রুশো ভাইয়া মাথা চুলকে বলে উঠলো,
— হা? এই উনি টা আবার কে?
.
অগ্নি ভাইয়ারও একই অবস্থা! মাঝখান থেকে শুধু নিত্য আপু মুখে হাত দিয়ে হেসে যাচ্ছে।
হাসি থামিয়ে আপু বলে উঠলো,
— উনি টুনি সবাই আছে। আপাতত তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। মামনি কে জানাচ্ছি তুমি উঠেছো। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছিলো।
.
এবার আমার হুশ এলো। আরে নিত্য আপু এখানে কেনো? কখন আসলো! আমি চোখটা হাত দিয়ে ডলে নিয়ে আবারও ডাগর ডাগর চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
.
— আপু! তুমি কখন এলে?
.
আমি মিষ্টি করে হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
— মেডিকেল থেকে সোজা এখানেই এসেছি। মামুনি ফোন করে আসতে বলেছিলো। কিসব এনগেজমেন্টের কেনাকাটার ডিসকাশনের জন্য। এসে শুনলাম তোমরা সবাই এক সাথেই আছো তাই থেকে গেলাম। এক ঘন্টা পর তোমরা এলে। আর এই এখন তুমি ঘুম থেকে উঠলে।
.
আমি নিজের মরার মতো ঘুমানোর জন্য নিজেই নিজের মাথায় চাটি মেরে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
.
🍁
.
ছাদের রেলিং এর কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে নীবিড়। মেঘলা আকাশে মাঝে মাঝে আলোর ঝিলিক ফুটে উঠছে। প্রকৃতির এই ঠান্ডা বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে তার ঘন কালো সিল্কি চুলগুলো।
সে আপন মনে ভাবনার জগতে ভাসতে ব্যস্ত!
ভাবছে সে কিভাবে কি করবে! সে তো এমনটা চায় নি। চেয়েছিলো নিজের পায়ে দাঁড়াবে, অনন্যা আরোও বড় হবে। পড়াশুনো করবে, বাস্তবতা বুঝবে তাই তো দূরে দূরে থাকতে চাইতো সে। রুড বিহেভ করতো যাতে অনন্যা কোনোভাবেই তার কাছে না আসে আর সে উইক না হয়ে পড়ে। নাহলে সে তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। যেমনটা পারে না অনন্যার কাছাকাছি থাকলে। কিন্তু কিছুনা কিছু অঘটন সে ঘটাবেই তাই তো নীবিড় চেয়েও দূরে সরে যেতে পারে না।
কিন্তু এখন তো তারা বিবাহিত। অনন্যাকে কিভাবে দূরে ঠেলে দেবে সে? না দিয়েও তো উপায় নেই।
সে চায় অনন্যা কোনো মানুষিক চাপে না ভুগুক। আগে যেমন চলতো সেভাবেই চলুক।
.
আপন মনেই কথাগুলো ভাবছিলো নীবিড় সেই মুহূর্তেই তার কাঁধে কেউ হাত রাখায় চমকে উঠে ঘুরে দাড়ালো সে।
.
— ভাইয়া, কি ভাবছিস?
.
নীবিড় জোড়পূর্বক হেসে আবারও দৃষ্টি শুণ্যে নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,
— ভাবছি, কি হবে ভবিষ্যতে? কয়দিন লুকিয়ে রাখবো এসব? সবার সামনে আমি স্বাভাবিক থাকলেও থাকতে পারছিনা নিত্য। কি করবো আমি? আইন মেনে বিয়েও তো হয়নি যে কাগজ কলমে সই করে মুক্ত করে দেবো ওকে।
.
নীবিড়ের কথায় রেগে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফেরায় নিত্য।
— কি বলছিস এসব? ডিভোর্স কেনো ভাইয়া? তোর কি অনন্যা কে এতোটাই অপছন্দ? বিয়ে তো কাউকে না কাউকে করতেই হতো। ওর সাথে যেহেতু হয়েই গিয়েছে তাহলে বিচ্ছেদের প্রসঙ্গ আসছে কেনো?
.
— জানি না আমি। কিচ্ছু জানি না। এদিকে মামনি বাপি! ওদিকে আব্বু! কিভাবে ম্যানেজ করবো? ইনফ্যাক্ট অনন্যার লাইফে আমার জন্য কোনো রকম বাঁধা আসুক তা চাইনা আমি। হ্যা এটা ঠিক কোনো খারাপ কিছু এলাউ করবো না আমি। বাট এতো তাড়াতাড়ি এরকম একটা অঘটন! ওর স্টাডিতে প্রবলেম হবে। ও এখনোও ছোট৷ রাত্রির থেকেও ছোট কয়েক মাসের ও। কি বোঝে বল।
.
— ভালোবাসিস অনন্যাকে ভাইয়া?
.
নিত্য হঠাৎ এমন একটা প্রশ্ন করে বসবে ভাবতে পারে নি নীবিড়। জোড়ে একটা শ্বাস টেনে মাথা নিচু করে ফেলে সে।
.
— কি হলো ভাইয়া! বল আমাকে। দেখ আমি কিন্তু তোর অনেক কিছুই লক্ষ্য করি। আর অগ্নি তো বলেই। শুধু আমি না অগ্নিও ডাউট করতো তোকে৷ কিন্তু কখনোও বলে নি তোকে। কি ভেবেছিস শুধু তুই ই একা সবার চোখের ভাষা পড়তে পারিস! আর আমরা পারিনা?
.
নীবিড় এবারও নিশ্চুপ। মুখ ফুটে কিচ্ছু বলছে না সে।
— আমার চোখের দিকে তাকা ভাইয়া! তারপর বল। জানি মিথ্যে বলতে পারবি না তুই। তাই মাথা নিচু করে রেখেছিস।
.
নীবিড় এবার মাথা তুলে তাকায়। নিজেকে শক্ত করে বলে উঠে,
— হ্যা হ্যা হ্যা! ভালোবাসি আমি ওকে। শুনেছিস তুই? ভালোবাসি আমি অনন্যাকে। আম ম্যাডলি ফল ইন লাভ লাভ উইথ হার!
.
নিত্য মুচকি হেসে নীবিড়ের গাল টেনে দিয়ে বলে উঠলো,
— আই নিউ ইট! চল খেয়ে নে। অগ্নি বলেছে তোর নাকি তখন চরম খিদে পেয়েছিলো তাও অনন্যার জন্য খাস নি। ও ঘুম থেকে উঠেছে এবার তো আয়।
.
নীবিড় খাবে না বলে আবারোও জানিয়ে দিলো। নিত্য জানে হাজার বললেও সে তাকে মানাতে পারবে না তাই নিচে নেমে এলো।
.
🌼
.
সেই কখন থেকে সাদা বিলাই কে খুঁজে যাচ্ছি কিন্তু কোথাউ খুঁজে পাচ্ছিনা। উফফফ! এমনি সময় তো যখন তখন এক্সিডেন্ট হতে থাকে উনার সাথে। আজ বাড়িতে থেকেও হাওয়া! হাহ!
.
— কাকে খুঁজছে হবু ননদিনী টা?
.
নিত্য আপু গলা পেয়ে চমকে উঠলাম আমি। মুখে জোড়পূর্বক হাসির রেশ টেনে বলে উঠলাম,
—- ক…ক…কই কাউকে না তো হবু ভাবী!😅
.
আপুর বোধহয় আমার উত্তরটা বিশ্বাস হলো না। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হুট করেই বলে উঠলো আপু,
— যাকে খুঁজছো সে ছাদে আছে। সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছে সে।
.
হা? বলে কি? উনি খান নি! এতোক্ষণ না খেয়ে রয়েছেন?
আমার ভাবনার মাঝে আবারোও নিত্য আপু বলে উঠলো,
— আমরা সবাই ট্রাই করেছি বাট কেউই মহাশয় কে খাওয়াতে পারিনি। তুমি প্লিজ ভাইয়াকে নিয়ে এসো। নাহলে অসুস্থ হয়ে পড়বে তো ভাইয়া।
.
— তোমাদের কথাই শুনেন নি। আর উনি শুনবেন আমার কথা? আছাড় মেরে ফেলে দেবেন সোজা। যে পরিমাণ বদমেজাজি। তাও শুধু আমার সাথেই। আর তুমি আমাকে পাঠাচ্ছো উনাকে ডাকতে?
.
— বদমেজাজির পেছনেও অনেক কিছু লুকিয়ে থাকে। যেটা তোমার এই ছোট্ট মাথায় ঢুকে না। এখন যাও প্লিজ।
.
🌹
.
নিত্য আপুর জোড়াজুড়িতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অগত্যা ছাদের দিকে পা বাঁড়ালাম আমি। মনে মনে দোয়া দরুদপাঠ করে যাচ্ছি। হঠাৎ খাচ্ছেন না কেনো উনি আল্লাহ জানেন। তখন তো খিদে পেয়েছে বলে ছুটছিলেন। এখন আবার কি হলো?
.
ছাদে উঠে উনাকে রেলিং ঘেঁষে উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটা জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে পা টিপেটিপে উনার পেছনে গিয়ে দাঁড়ানো মাত্রই উল্টো দিকে মুখ রেখেই ধমকে উঠলেন উনি,
— আহহ! নিত্য! বলেছি না খাবো না আমি। যা তুই…! মামনির সাথে কি বলার বলে নে। একটু পরই রওনা দিবো বাসায়।
.
উনার ধমক শুনে কেঁপে উঠলাম। কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
— আমি আপু না ভাইয়া!
.
উনি আমার গলা পেয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে আবারোও সামনে মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠলেন,
— খেয়েছো?
.
— না! আসুন আপনিও খেয়ে নিবেন প্লিজ।
.
উনি যেনো পরের কথাটা শুনেও শুনলেন না। খানিকটা রেগে আবারোও বলে উঠলেন,
— এখনোও খাও নি কেনো? যাও খাও। কুইক।
.
উনার কথা শুনে রাগ উঠে গেলো আমার। আরে নিজেই সকাল থেকে না খেয়ে বসে আছেন আর উল্টো আমাকে না খাওয়ার জন্য বকছেন! এটা তো মানা যায় না।
তাই রেগেমেগে উনার হাত চেপে ধরে টেনে আনতে আনতে বলে উঠলাম,
— আমি তো খাবোই সাথে খাবেন আপনিও।
.
উনিও বাধ্য ছেলের মতো হাটতে লাগলেন আমার পেছন পেছন। ভেবেছিলাম দু-চারটে ধমক দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেবেন। অথচ কতো শান্তশিষ্ট ভাবে চলে আসছেন। হা! কেমনে কি?
.
🌸
.
খাবারের প্লেট সামনে ধরে শুধু আঙুল ঘুরিয়ে যাচ্ছেন নীবিড় ভাইয়া। পাশে অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপু দাঁড়িয়ে।
উনার খাওয়ার প্রতি অনিহা দেখে আমি আবারও রেগে গেলাম।
.
— ভাইয়া….! খাচ্ছেন না কেনো?
.
আমার কথায় নীবিড় ভাইয়া একটু চমকে গেলেও নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়া বিষম খাওয়া শুরু করে দিলো।
নিত্য আপু ভাইয়ার কানে কানে কিছু একটা বলা শুরু করলো কথাটা অবশ্য আমার কান পর্যন্ত পৌঁছোয় নি। কথাটা ছিলো এরকম ” হায় আল্লাহ! নিজের সদ্য বিবাহিত বরকে ভাইয়া বলছে তোমার বোন!”
নিত্য আপুর কথা শুনে অগ্নি ভাইয়া কপালে হাত দিয়ে পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। এদিকে আমার ধমক শুনে ভালো বিড়ালের মতো লেজ গুটিয়ে খাওয়া শুরু করলো নীবিড় ভাইয়া। যা দেখে নিত্য আপু হু হা করে হেসে উঠলো।
.
চলবে…………………💕
#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৪♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍂
.
রাত্রির বাসার ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে আছে রুশো। উদ্দেশ্য একটিবারের জন্যে হলেও রাত্রিকে দেখা৷ তার যে মন মানছে না। যত দিন যাচ্ছে ততই যেনো আরোও গভীর মায়ায় জড়িয়ে পড়ছে সে রাত্রির।
.
পুরো একটা দিন তার কাছে পুরো একটা মাসের মতো লেগেছে রাত্রিকে দেখতে না পেয়ে।
অনন্যার কাছে যখন শুনেছে “আজ রাত্রি অসুস্থ তাই ভার্সিটিতে আসেনি!” তখনই বুকের বাম পাশে মোচড় দিয়ে উঠেছে তার। একে তো রাত্রিকে সারাদিকে এক ঝলক দেখতে না পারার কষ্ট তার ওপর রাত্রির অসুস্থতা। সব মিলিয়ে রুশোর বুকের ওপর এক বিশাল বড় পাথর চেপে বসেছে যেনো। যা রাত্রিকে এক ঝলক দেখলেই বোধহয় গলে যাবে খুব সহজেই।
.
অনন্যাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বেশ কৌশলেই রাত্রিদের বাড়ির ঠিকানা এরেঞ্জ করেছে রুশো। বাড়িটা খুব বেশি বড় না আবার খুব বেশি ছোটও না। ডুপ্লেক্স বাড়ির মেইন গেট বরাবর দাঁড়িয়ে আছে রুশো। তার আইডিয়া উপরের ছাদের পাশে লাগানো ঘরটাই রাত্রির হবে নিঃসন্দেহে। তার মতে মেয়েরা হাওয়া-বাতাস বেশি পছন্দ করে তাই এরকম একটা বাড়িতে ওই রুমটাই রাত্রির হওয়া উচিৎ। কিন্তু তার কাছে না আছে রাত্রির ফোন নম্বর আর না আছে মই। যেটা দিয়ে ছাদের উপরে উঠতে পারবে সে।
রুশো একবার হাতে থাকা হ্যান্ডওয়াচে চোখ বুলিয়ে নেয়। রাত ২ টো বেজে ১৪ মিনিট।
অনন্যাদের বাসা থেকে চুপিচুপি কাউকে না জানিয়েই দেড় টার পরপরই বেড়িয়েছে সে। হঠাৎ করেই গভীর রাতে তার মাথায় রাত্রিকে দেখার ভূত চেপে বসেছিল। তার ভাবখানা এমন ছিলো যেনো রাত্রিকে না দেখলে আজ রাত্রে ঘুমোই তার কাছে ধরা দেবে না।
এখানে পৌঁছতে ১০ মিনিটের মতো লেগেছে তার। দ্যট মিনস গত আধাঘন্টা যাবৎ এভাবে বোকার মতো রাত্রির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রুশো।
.
অনেক্ষণ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রুশোর চোখ যায় ছাদের সাথে লাগানো পাইপের দিকে। তখনই কোনো এক ফিল্মে দেখা সিনের কথা মনে পড়ে যায় তার। সেখানে হিরো হিরোইনের বাসায় ঢোকার কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে পাইপ বেয়ে হিরোইনের বাসার ছাদে উঠে হিরোইনের ঘরে গিয়েছিলো।
হঠাৎ সেই সিন মনে পড়তেই নিজেকে সেই হিরোর মতো মনে হতে লাগলো রুশোর। বুক ফুলিয়ে এক শ্বাস টেনে বলে উঠলো সে,
.
— ওহ কাম অন রুশো। ইউ ক্যান ডু ইট। কোরিয়ার ওই চিকু ফাইভ হিরো গুলো পারলে তুই পারবি না তা কি করে হয়? হাহ! রুশো ক্যান ডু ইট এনিথিং ফর এটম বোম্ব!
.
বলে নিজেই নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে দিলো রুশো। এই ভেবে যে এটম বোম্বের থেকে মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ছুটে আর সেখানে সে কিনা যেচে প্রাণ বাজি রেখে এটম বোম্বের কাছে যাচ্ছে!
অতঃপর মাথা থেকে এসব উল্টো পাল্টা চিন্তা ঝেড়ে এগিয়ে যেতে থাকে সে পাইপের দিকে।
.
🍁
.
কাথা মুড়ি দিয়ে নিশ্চিতে ঘুমোচ্ছে অনন্যা! তার বেডের ঠিক পাশে গালে হাত দিয়ে অনন্যার ঘুমন্ত রূপ দেখতে ব্যস্ত নীবিড়! বিয়ের রীতিনীতি অনুযায়ী তাদের আজ বাসর রাত হবার কথা ছিলো। কিন্তু নিয়তি যে এক অদ্ভুত খেলায় নেমেছে। যার স্বীকার নীবিড় ও অনন্যা দুজনেই।
.
তখন আকাশের বুক চিরে ঝুম বৃষ্টি নামায় থেকে যেতে হয়েছে নীবিড়দের। বৃষ্টিও বোধহয় ১১ টার আগে ছাড়বে না বলে পণ করেছিলো। যার কারণে নিত্য-নীবিড় আজও অনন্যাদের বাসায়।
রাতে ঘুম না আসায় এপাশ-ওপাশ করতে করতে একসময় উঠে পড়ে নীবিড়। অগ্নির রুমের পাশেই অনন্যার রুম। নীবিড় অগ্নিকে মরার মতো ঘুমোতে দেখে আনমনেই “ঘুমারু একটা” বলেই বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। তবে অদ্ভুত ভাবেই অনন্যার ঘরের দরজা শুধু চাপানো দেখে থমকে দাঁড়ায়। ভেবেছিলো ছাদে গিয়ে কিছুক্ষণ থেকে চলে আসবে তার আগেই অনন্যার ঘরের দরজা খোলা পেয়ে অগত্যা প্লান ক্যান্সেল করে ফেলে সে।
.
নিজেই নিজের মনকে বারবার এক কথাই বুঝাতে থাকে যে, “নো নীবিড়! এটা ঠিক নয়। জাস্ট কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ ড্যাম ইট!” কিন্তু মন কি আর ব্রেইনের কথা শুনে? তাই শেষমেশ নিজের ব্রেইনের কাছে পরাজিত হয়ে মনের দেখানো পথেই পা বাড়ায় সে।
নিঃশব্দে দরজা ঠেলে অনন্যার ঘরে ঢুকে পড়ে নীবিড়।
বেড সাইডের টেবিল ল্যাম্পের হাল্কা আলোয় আলোকিত হয়ে রয়েছে অনন্যার মুখখানা। কাথা মুড়ি দিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে সে। তার ঘুমন্ত মুখটা দেখেই নীবিড়ের বুকের বাম পাশটায় কেমন যেনো চিনচিন করে উঠে। এলোমেলো হয়ে থাকা চুল গুলো তার কপালজুড়ে বিরাজ করছে। শুয়ে থাকায় মাথার হেয়ার ব্যান্ডটা লুজ হয়ে গিয়েছে। ওকে দেখেই নীবিড় মুচকি হেসে আনমনেই বলে উঠে “পিচ্চি একটা”।
তারপরই ঘরে থাকা চেয়ার টেনে বেডের পাশে বসে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে অনন্যার মায়াভরা মুখখানা।
.
অনেকক্ষণ যাবৎ এক ভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ অনন্যার ঠোঁট নড়তে দেখে ভয় পেয়ে গেলো নীবিড়। চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে তখনই বুঝতে পারে অনন্যা ঘুমের ঘোড়েই স্বপ্নে কিছু একটা বিড়বিড় করে বলছে।
নীবিড় সরু দৃষ্টিতে অনন্যার দিকে তাকিয়ে, কাছে এসে হেলে নিজের কানটা তার ঠোঁটের কাছে নিয়ে আসলো। কথা গুলো আধো আধো হলেও অনেকটাই বুঝা যাচ্ছে। অনন্যার কথাগুলো এরকম,
.
” আপনি এমন কেনো সাদা বিলাই! শুধু বকা দেন। হুহ! আপনার সাথে আমার আড়ি! যান ভাগেন, বলবো না কথা আর আপনার সাথে!”
.
অনন্যার ঠোঁটেরর কাছ থেকে সরে আসে নীবিড় মুখে হাত দিয়ে কাশতে লাগলো। তার চোখ যেনো বেড়িয়ে আসার উপক্রম।
— আরে করে কি এই মেয়ে! স্বপ্নেও আমাকে দেখছে! তাও আবার সেখানেও ” সাদা বিলাই” “সাদা বিলাই” শুরু করে দিয়েছে?উফফফ…! এটাকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো? হে আল্লাহ! প্লিজ হেল্প মিহ!
.
কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে নীবিড় বেড়িয়ে গেলো অনন্যার ঘর থেকে। গিয়ে আবারও অগত্যাই অগ্নির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। অগ্নি এখনোও মরার মতো ঘুমোচ্ছে। যা দেখে নীবিড় মনে মনে বলে উঠলো,
.
— যদি বাসর রাত না হয়ে বাসর দিন হতো তাহলে হয়তো বোনটার কপাল ভালো হতো আমার! এই শালা তো ঘুম ছাড়া কিছুই বোঝে না! উফফফ….! দুটো ভাই-বোনই দু দুটো প্যারার বস্তা!
.
🌸
.
এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো নিজের কোমড়টা ভাঙলো রুশো। অনেক চেষ্টা করেও পাইপ বেয়ে উপরে উঠতে পারছে না সে। যতবারই একটু উপরে উঠতে গিয়েছে ঠিক ততবারই অর্ধেক গন্তব্য থেকে ধপাস করে পড়ে গিয়েছে।
শেষমেশ বিরক্ত হয়ে বলতে শুরু করলো সে,
— এটা পাইপ না আস্ত তেল দেওয়া কলার গাছ? এতো স্লিপারি কেনো! বিডিতে থাকতে আমগাছ, জাম গাছ, পেয়ারা গাছ প্রায় সবকটা তেই উঠেছিলাম। কেনো যে কলার গাছে উঠি নি। ধ্যাত!
এটাই লাস্ট ট্রাই! এরপরও না পারলে আমি ভাঙা কোমড় নিয়েই হোম ব্যাক করবো।
.
বলেই আবারও উঠতে শুরু করলো রুশো। কিন্তু এবারও ভাগ্য সহায় হলো না তার। একটু উপড়ে উঠতেই পা স্লিপ করে বিকট একটা আওয়াজ করে ধপাস করে পড়ে গেলো সে। এবারের আওয়াজটা ভীষণ জোড়ে হওয়ার রাত্রি ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। মূলত রুশোর আইডিয়াই ঠিক ছিলো। ছাদের পাশের রুমটাই রাত্রির। জানালা খুলেই ঘুমোনোর অভ্যেস তার যার কারণে আওয়াজটা বাড়ির অন্য সদস্যরা না পেলেও রাত্রি ঠিকই পেয়েছে।
.
দ্রুত পায়ে আওয়াজের উৎস খুঁজতে দরজা খুলে ছাদে গিয়ে পৌঁছোলো রাত্রি। ততক্ষণে রুশো কোমড় ধরে উঠে মাথা হেলিয়ে প্যান্টে লেগে থাকা ধুলো ঝাড়তে ব্যস্ত। রাত্রি ঘুমুঘুমু চোখে নিচে তাকিয়ে কাউকে মাথা হেলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোর ভেবে এক চিৎকার দিয়ে উঠলো,
.
— মা-বাবা! রিমিইইইই চোর……..! চোর এসেছে চোর……!
.
রাত্রির এমন গলাফাটানো চিৎকারে রুশো ভরকে গিয়ে উপরে তাকালো। রাত্রি মুখ ঘুড়িয়ে বাড়ির সবাইকে এক নাগারে ডেকে চলেছে। রুশো ভেবে পাচ্ছেনা এখানে চোর আসলো কোথায় থেকে! হঠাৎ রাত্রি রুশোকে উদ্দেশ্য করে ছাদ থেকেই বলে উঠে,
.
— এই চোর একদম পালাবার চেষ্টা করবি না। ওখানেই থাক।
.
বলেই নিচে নামা শুরু করে দিলো রাত্রি। রুশো এবার বুঝতে পারলো একচুয়ালি রাত্রি তাকেই চোর বলে ভেবেছে। রুশো দিশকুল না পেয়ে কোমড় ধরেই ধীর পায়ে দৌড়ে বাইকের কাছে এসে থামলো। তখনই রাত্রিদের বাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে আসলো তাদের বাড়ির সবাই। রাত্রির মা-বাবার হাতে লাঠি! রাত্রির ৫ বছরের ছোট বোন রিমির হাতে খুন্তি! আর রাত্রির হাতে ঝাড়ু!
রুশোকে চোর ভেবেই তারা এগিয়ে আসতে শুরু করলেই রুশো তাড়াহুড়ো করে বাইকে উঠে স্টার্ট দিয়ে ফুল স্পিডে ছুট লাগালো। ভাগ্য ভালো রাতের অন্ধকারে রুশোর মুখ দেখতে পারলো না কেউই।
রুশোকে সেকেন্ডের মধ্যে হাওয়া হয়ে যেতে দেখে রাত্রি বাবা-মা রাত্রিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
.
— এ আবার কেমন ধারা চোর? চোরের আবার বাইক আছে!
.
— এই আপুউউ ওটা মেবি কোনো চোর নয়। হয়তো ডাকাত ছিলো।(রিমি)
.
ওমনি রাত্রির মা ধমক দিয়ে বলে উঠেন,
— ওরে গাধাগুলো, ডাকাতি কি কেউ একা করতে আসে?
.
রিমি ঠোঁট উল্টে “ওমা! সেটাইতো” বলে আবারও মাথা চুলকে বলে উঠলো,
— তাহলে হয়তো বড়লোক চোর।
.
রাত্রি রিমির এমন বোকার মতো কথায় ঠাস করে চাটি মেরে দিলো তার মাথায়।
সে এখনোও ভেবে পাচ্ছেনা হঠাৎ এমন করোর আসার কারণ কি! একজন প্রফেশনাল চোর এতোক্ষণে ধরা পড়লে পাগাড় পার করে ফেলতো। তাহলে কি লোকটা চোর নয়। অন্য কেউ?
তবে কে সে?
.
🌹
.
মাঝরাতে ঘুমটা আচমকাই ভেঙে গেলো আমার। ঘুমু ঘুমু চোখে পাশ ফিরে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম রাত ৩ টে প্রায় বেজেই গিয়েছে।
পানি খেতে হবে, গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে। তাই আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম। কিন্তু আমার অদ্ভুৎ এক অনুভূতি হচ্ছে। ঘরের কোথাউ কিছু না কিছুর সমস্যা তো রয়েইছে। নাকে এক চিরচেনা ঘ্রাণ ভেসে আসছে। এরকম সুবাস টা তো মেবি সাদা বিলাইয়ের আশেপাশে থাকলেই পাই আমি। কিন্তু তা কি করে হয়? উনি তো আমার রুমে নেই।
.
একটু ভালো করে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম, দরজা লাগানো নেই শুধু চাপানো আছে! ইশশ কত্তো বোকা আমি। রাতে দরজাটা লাগিয়ে ঘুমোবো তাও ভুলে গিয়েছি। আচ্ছা উনি আবার আমার ঘরে আসেন নি তো? উহু তা কি করে হয়! এখন তো সবার ঘুমোনোর কথা। হয়তো বা আমার মনে ভুল। উনার গায়ের পারফিউম টা মেবি আমার নাকের সাথে চিপকে গিয়েছে।
ভেবে নিজেই নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে দিলাম।
.
টেবিলের ওপর খালি জগ দেখে মুখটা নিমিষেই ফ্যাকাশে হয়ে গেলো আমার। রাতে আম্মু বলেছিলো পানি ভরিয়ে নিয়ে যেতে কেনো যে পরে পরে বলে কাটিয়ে দিয়েছি! এখন বুঝো ঠ্যালা!
.
ঘুম ঘুম চোখে হাই তুলতে তুলতে কিচেনে এসে জগটা ভরিয়ে নিলাম আমি। তখনই একটা আওয়াজ কানে ভেসে আসতে লাগলো। আমি যদি ভুল না হই তবে আওয়াজটা আসছে সদর দরজা থেকে। এতো রাতে দরজা থেকে কিসের আওয়াজ আসছে? কোনো চোর-ডাকাত নয় তো?
ভেবেই কিচেন থেকে কুকিং প্যান আর একটা কাপড় হাতে নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম। অন্ধকার হলেও আড়াল থেকে কাউকে পা টিপেটিপে বাসায় ঢুকতে দেখা যাচ্ছে! ওরে চুর মাম্মা! খাড়া দেখাচ্ছি তোরে মজা।
বলেই লুকিয়ে লুকিয়ে একটা পিলারের পেছনে গিয়ে দাড়ালাম আমি। চোরটা দরজা আটকিয়ে এদিক ওদিক উঁকি-ঝুঁকি মারতে মারতে ধীর পায়ে ড্রইংরুমে প্রবেশ করছে। আমিও কম কি? আস্তে আস্তে চোরটার পেছনে এসেই হাতে থাকা কাপড়টা চোরের মাথায় ফেলে পুরো ঢেকে ফেললাম ব্যাটাকে। ফেলেই হাতে থাকা প্যান দিয়ে বারি মেরে দিলাম চোরটার মাথায়। সাথেসাথেই এক প্রকান্ড চিৎকার দিয়ে চোরটা দুম করে পড়ে গেলো। আর এদিকে আমি বাসার সবাইকে চেঁচিয়ে ডাকতে শুরু করলাম।
.
— আম্মুউউ…! আব্ববুউউউউউ……..! ভাইয়ায়ায়ায়ায়া……….! কোথায় তোমরা? দেখো চোর ধরেছি আমি!
.
চিৎকার টা এতোজোড়েই দিলাম যে সাথেসাথে সবাই হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠে ছুট লাগালো ড্রইংরুমের দিকে। শুধু আমার গুনোধর ঘুমকাতুরে ভাই আর রুশো ভাইয়ার বদলে। নীবিড় ভাইয়া আর আব্বুউউ দৌড়ে এসে চোরকে ধরে ফেললো। তবে চোরটা বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করছে না।
.
— বাপী আই থিংক হি ইজ সেন্সলেস।
.
নিত্য আপু লাইট জ্বালাতেই আব্বু আর নীবিড় ভাইয়া মিলে চোরটাকে টেনে সোফায় বসালো। ওদিকে অগ্নি ভাইয়া দুলতে দুলতে হাই তুলে কেবল নিচে নামছে।
নিত্য আপু গিয়ে ফট করে চোরের মুখ থেকে কাপড়টা সরানো মাত্রই মুখে দু হাত চেপে চোখ বড়বড় করে ফেললো। এদিকে আমার তো চোখ খুলে হাতে চলে আসার মতো অবস্থা!
আমি সহ বাকি সবাই চমকে উঠে এক স্বরে বলে উঠলো,
.
—- রুশোওওওও…………..!😱
.
আমার হাত থেকে ঠাস করে প্যানটা পড়ে গেলো! হায় আল্লাহ এ আমি কি করলাম!
সবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এবার পড়লো আমার ওপর। আমি তো রীতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছি। ওদিকে নিত্য আপু ছুট লাগিয়েছে পানি আনতে।
.
— অনন্যায়ায়ায়া…….! এসব কি??? চোর ভেবে ছেলেটার মাথায় এভাবে বাড়ি মেরে দিলি? (আম্মু),
.
অগ্নি ভাইয়া দৌড়ে এসে রুশো ভাইয়াকে ঝাঁকাতে শুরু করে দিলো।
— রুশো…! কি হয়েছে তোর? উঠ! এই ড্রিমার উঠ না!
.
সবাই রুশো ভাইয়াকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছে। এদিকে আমি তো পারিনা পুরো বাসা কান্না করে ভাসিয়ে দেই।
নিত্য আপু গ্লাসে করে পানি এনে কয়েকবার রুশো ভাইয়ার মুখে ছিটা দিতেই ভাইয়া জ্ঞান ফিরে পেয়ে পিটপিট করে চোখ মেলতে শুরু করলো। তা দেখে যেনো আমার জানে জান ফিরে আসলো।
রুশো ভাইয়ার জ্ঞান ফেরায় সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম যেনো। রুশো ভাইয়া মাথা ধরে “আউউউচ্চ!” করে উঠে আস্তে আস্তে বসে পড়লো।
.
— রুশো…! ঠিক আছিস তুই বাবা? (আব্বু)
.
— দেখি কোথায় চোট পেয়েছিস!
.
বলেই আম্মু ভাইয়ার মাথায় হাত দিতে লাগা মাত্রই রুশো ভাইয়া এক হাত দিয়ে আম্মুকে আটকিয়ে বলে উঠে,
— হু আর ইউ? এন্ড হু ইজ রুশো….? হোয়াট আর ইউ গাইস সেয়িং?
.
রুশো ভাইয়ার কথা শুনে সবাই যেনো সাত আসমান থেকে পড়ে গেলাম। আল্লাহ! রুশো ভাইয়ার মাথায় চোট লাগায় কি মেমোরি লস হয়ে গেলো? নাহ……! এ হতে পারে না। কিছুতেই না। আমার জন্য ভাইয়ার এতো বড় ক্ষতি হয়ে গেলো? না আমি মানি না।
.
সবাই যখন আঁতকে উঠে মূর্তির মতো চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তখনই আমি কান্না করা শুরু করে দিলাম। যাকে বলে একদম গলা ফাটানো কান্না।
রুশো ভাইয়া আমাকে কান্না করতে দেখে বসা থেকে চট করে উঠে আমার দু গালে হাত রেখে বলে উঠলো,
.
— হেই ডোন্ট ক্রাই ছুটকি! আমার কিচ্ছু হয়নি। আমি তো জাস্ট ফান করছিলাম।
.
রুশো ভাইয়ার কথায় কান্না থামার বদলে আরোও বেড়েই গেলো আমার। সবাই এবার এসে আমাকে সামলানো শুরু করে দিলো। কিন্তু আমার কান্না থামছে না। বারবার এটাই মনে হচ্ছে আমি এই দুহাতে রুশো ভাইয়াকে আঘাত করেছি। সবাই অনেক বলছে যাতে আর না কান্না করি আমি। কিন্তু কান্নার বেগ বেজায় বেড়েই যাচ্ছে। এদিকে রুশো ভাইয়াকে সবাই বকছে এরকম মেমোরি লসের ড্রামা করার জন্য।
.
নীবিড় ভাইয়া নিত্য আপুকে কি যেনো ইশারা করলো যা দেখে নিত্য আপু আমায় নিয়ে রুমের দিকে যেতে লাগলো। আমায় খাটে বসিয়ে দিয়ে নিত্য আপু ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে ছুট লাগালো নিচে। আমি এখনো চাপা স্বরে কেঁদেই চলেছি।
.
একটু পরই রুমে কেউ ঢুকায় কান্নার বেগ কমে এলো আমার। নীবিড় ভাইয়া আমার কাছে এসেই আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। আমার মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে ধীর কন্ঠে বলতে লাগলেন,
.
— হুশশশস! অনেক কান্না করেছো। চুপপ…!
আর কাঁদতে হবে না। রুশো ইজ কমপ্লিটলি ফাইন।
.
অদ্ভুত ভাবে উনার বুকে মাথা দেওয়া মাত্রই আমার কান্না থেমে গেলো। উনার শীতল কন্ঠের স্রোত বয়ে গেলো আমার পুরো শিরা-উপশিরায়! আমায় চুপ হতে দেখে উনি আমায় ছেড়ে উঠে বসলেন।
.
— নিচে এসো ফাস্ট।
.
বলেই গটগট করে চলে গেলেন নিচে। আর আমি এদিকে বোকার মতো চেয়ে রইলাম উনার যাওয়ার দিকে।
.
🌺
.
সোফায় বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি সবাই রুশো ভাইয়ার দিকে। এর মাঝে অগ্নি ভাইয়া বলে উঠলো,
— কোথায় গিয়েছিলিস এতো রাতে?
.
রুশো ভাইয়া গলা খাঁকারি দিয়ে আবারও শান্ত হয়ে বলে উঠলো,
— রিচার্জ করতে ব্রো।
.
আমরা সবাই আবারও অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসলাম।
—- এতো রাতে দোকান খোলা থাকে না রুশো তোর সেটা জানা উচিৎ। নয় কি? (অগ্নি)
.
—- কারেক্ট! এবার বলো চোরের মতো কথায় থেকে ফিরলে তুমি রুশো ভাইয়া?
.
রুশো ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,
—- হেই! তোমরা এমন ডিটেকটিভ দের মতো কোয়েশ্চেন করছো কেনো? আম ফিলিং সো নার্ভাস!
দেখো উইএসে তো সারা রাতই শপ খোলা থাকে। এন্ড আমি ভেবেছি হয়তো পেয়ে যাবো তাই বেড়িয়েছিলাম। বাট ট্রাস্ট মি আমি কারো বাসায় যাই নি।
.
— আরে আমরা এটা কখন বললাম যে তুমি কারো বাসায় গিয়েছো? (ভ্রু নাচিয়ে বললো নীবিড়)
.
— ইয়েস! ব্যাপারটা কিছুটা এমন হয়ে গেলো না? যে ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি! এই টাইপ? (আমি)
.
আমরা আবারও কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই আম্মু এসে তাড়া দিলো ঘুমোনোর জন্য। নিত্য আপুও আম্মুর কথায় সায় দিয়ে বলে উঠলো,
.
—- থাক না সেসব কথা। ওর রেস্টের দরকার। আমি ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি প্লাস স্প্রেও করে দিয়েছি। ঘুমোলে বেটার ফিল করবে।
.
নিত্য আপুর কথায় মাথা নাড়িয়ে অগ্নি ভাইয়া রুশো ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
—- তোকে তো আমি পড়ে দেখে নিচ্ছি বাচ্চা!
.
বলেই ভাইয়া রুশো ভাইয়াকে ধরে ঘরে নিয়ে গেলো। আমরাও আর কথা বাড়ালাম না। চলে গেলাম নিজ নিজ ঘরে। যাওয়ার আগে একবার নীবিড় ভাইয়ার দিকে তাকিয়েছিলাম কিন্তু উনি যেনো আমাকে দেখেও দেখছেন না। উনার সময়ে সময়ে পাল্টি খাওয়া গুলো আমি যে ঠিক হজম করতে পারছি না। সেটা কি উনি জানেন না?
.
চলবে………………..💕
#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৫♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
আজ নিয়ে ১ সপ্তাহ হয়ে গেল সাদা বিলাই আমার সাথে কোনো কথা বলছেন না। কি হয়েছে উনার? আমি যতোবারই কিছু বলতে গিয়েছি ততবারই উনি আমায় পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছেন। যার জন্য ভীষণ বিরক্ত আমি।
উনি কি আমায় এতোটাই অপছন্দ করেন? আমি জানি এক্সিডেন্টলি আমাদের বিয়েটা হয়ে গিয়েছে তাই বলে কি একেবারেই দূরত্ব বাড়িয়ে দেবেন উনি? আমার ভাবীর ভাই হন উনি। আরেক দিক থেকে ভাইয়ের বেস্টফ্রেন্ড, টুকটাক কথাও তো বলতে পারেন! উনি কি বোঝেন না ভয় পেলেও উনার সাথে কথা না বললে আমার ভেতরটা কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগে?
.
আজ নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়ার এনগেজমেন্ট আজকের দিনেও অন্তত একটু হলেও কথা বলা উচিত! নয় কি? কিন্তু না, উনি তো আমার আশেপাশেও আসছেন না। কেমন যেনো পালিয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়োচ্ছেন। আচ্ছা আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক? আমার থেকে পালাচ্ছেন কেনো উনি?
.
—- ছুটকি এখনোও রেডি হোস নি কেনো? তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। লোকজন আসতে শুরু করে দিয়েছে তো।
.
রুশো ভাইয়ার ডাকে ভ্রম কাটলো আমার। সেই ১ ঘন্টা আগে রেডি হতে পাঠিয়েছে আম্মু। আর আমি এখনো বিছানায় বসে সাদা বিলাই কে নিয়ে ভেবে যাচ্ছি! উফফফ….! কতো বলদ আমি।
কিন্তু রাত্রি এখনো এলো না কেনো? ও না আসলে আমি একা একা রেডি হবো কি করে? আম্মুও তো ব্যস্ত। ধ্যাত! তার মধ্যে এই শাড়ি আর জুয়েলারি হাতে ধরিয়ে দিয়েছে আম্মু। তার একটাই কথা, আজ যেনো টপস, স্কার্ট, টি-শার্ট এসব না পরি। কিন্তু একা একা তো পড়তেও পারবো না শাড়িটা৷
তাই অসহায়ের মতো ঠোঁট উল্টালাম আমি। রুশো ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম,
.
—- ভাইয়া, রাত্রি তো আসেনি এখনোও আমি তো একা একা শাড়ি পড়তে পারবো না।
.
আমার উত্তরে নিমিষেই হাসিমাখা মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো রুশো ভাইয়ার।
—- এটম বোম্ব হয়তো আসবে না রে ছুটকি।
.
রুশো ভাইয়ার কথায় কপাল কুঁচকে এলো আমার। এটা কেমন কথা? ভাইয়ার এনগেজমেন্টে আসবে না মানে কি?
—- তুমি কি করে জানলে যে আসবে না?
.
রুশো ভাইয়া বোধহয় কিছুটা ভরকে গেলো। আমতাআমতা করে বলে উঠলো,
—- এতোক্ষণেও যখন আসেনি। তাই আর কি আইডিয়া করে বললাম।
.
আসলেই এতোক্ষণে চলে আসা উচিত ছিলো রাত্রির। সাজুগুজু করলেও কোনো অকেশনে এতো লেট করার মেয়ে ও না।
ব্যাপারটা শিওর হওয়ার জন্য ফোনটা হাতে নিয়ে রাত্রির নম্বরে ডায়াল করলাম। কিন্তু আমায় হতাশ করে দিয়ে সেই চিরচেনা বিরক্তিকর নারী কন্ঠ ভেসে আসতে লাগলো ওপাশ থেকে।
” দুঃখীত! আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরে এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর ডায়াল করুন। Sorry, the number you dial is currently unreachable!”
নিমিষেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো আমার। মানেটা কি? ফোন বন্ধ কেনো ওর?
রেগেমেগে ফোন ছুড়ে মারলাম আমি। আসবে কখন রাত্রি আর আমি রেডি হবোই বা কখন!
.
রুশো ভাইয়া আমার অবস্থা বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,
—- হেই ডোন্ট টেক টেনশন। ইউ নো হোয়াট ছুটকি, টেনশন লেনে কা নেহি টেনশন দেনে কা হ্যায়!
.
বলেই রুশো ভাইয়া একপ্রকার ছুট লাগালো বাইরে। আর আমি হ্যাবলার মতো চেয়ে থাকলাম শুধু! হা? কি করতে যাচ্ছে ভাইয়া?
.
🌹
.
প্রায় ৭ মিনিটের মাথায় ঘরে প্রবেশ করলো ১ জোড়া পা। এই পায়ের অধিকারী কে তা দেখতে চোখ উপরে ওঠাতেই চোখজোড়া বড়বড় হয়ে এলো আমার।
সাদা বিলাই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে আসছেন। উনার চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি চরম বিরক্ত। কেউ জোড় করে উনাকে এখানে পাঠিয়েছে এমন টাইপ। উনি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলে উঠলেন,
.
—- কি?
.
—- কোথায় কি?
.
—- সেটাই তো বলছি কি হয়েছে টা কি?
.
—- কোথায় কি হবে? আপনি এসেছেন কেনো?
.
নীবিড় ভাইয়ার বোধহয় আমার পাল্টা প্রশ্ন করাটা ঠিক পছন্দ হলো না। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলেন উনি,
—- তুমি একটা ১৮+ মেয়ে কে বলবে? জাস্ট থিংক কতোটা স্টুপিড তুমি! একটা শাড়ি পর্যন্ত পড়তে পারো না।
.
এবার বুঝলাম আসল কাহিনী। তার মানে রুশো ভাইয়া “টেনশন লেনে কা নেহি, টেনশন দেনে কা” বলতে আই সাদা বিলাইকে হেল্প করতে পাঠানোর জন্য ভেবেছিলো? হায় আল্লাহ। কিন্তু রুশো ভাইয়া কি জানে, যে সে আমার টেনশন আগের থেকেও আরোও বাড়িয়ে দিয়েছে?
আমি চুপ করে এসব ভেবে যাচ্ছি তখন আবারও উনি ধমকে উঠলেন,
.
—- এই নাও এই ব্লাউজ এন্ড এটার নাম যেনো কি…? হোয়াট এভার, পড়ে আসো কুইক!
.
আমি অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে চোখদুটো আরোও বড়বড় করে ফেললাম! উনি চোখ রাঙিয়ে আবারও ধমকানোর পূর্বেই দিলাম এক দৌড়।
ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যেনো।
কি অদ্ভুত! আমিই চাচ্ছিলাম উনার সাথে কথা বলতে আবার যখন উনি এলেন তো ভয়ে কু্ঁকরে পালিয়ে এলাম। তবুও ভেতরে কেমন যেনো এক প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছি আমি।
ব্লাক কালারের ব্লাউজ-পেটিকোট পড়ে নিলাম তাড়াতাড়ি করে কিন্তু বিপত্তি ঘটলো এখানে, আমি শাড়িটা ফেলেই চলে এসেছি। পেট-পিঠ দুটোই বের হয়ে আছে আমার। এই সামান্য জড়জেটের পাতলা ওড়না দিয়ে কতটুকুই আর কভার করা যাবে? তাও কোনোমতে পেঁচায় পুঁচায় ওড়নাটা গায়ের সাথে জড়িয়ে নিলাম।
.
বের হতেই দেখি মি. সাদা বিলাই উল্টো দিকে মুখ ঘুড়িয়ে রেখেছেন। ভালোই হলো অবশ্য। এই ফাঁকে আমি ফট করে শাড়িটা গায়ের সাথে পেঁচিয়ে নিলাম। নিজেকে ঠিকঠাক ভাবে ঢেকে নেওয়া হয়ে গেলে একটা শুকনো কাশি দিয়ে বসলাম অামি,
—- আহহহুউউউউম! আহহুউউউউউম! আপনি এবার ঘুরতে পারেন।
.
আমার কথায় উনি চোখ বন্ধ রেখেই ঘুরে দাঁড়ালেন। যা দেখে আমার মনে হচ্ছে লজ্জা নামক জিনিসটি বোধহয় আমার মধ্যেই নেই আর উনার মধ্যে লজ্জার খনি রয়েছে।
.
—- চোখ বন্ধ রাখার কিছুই নেই৷ চোখ খুলতে পারেন। আর চোখ বন্ধ থাকলে শাড়িটা পড়িয়ে দেবেন কিভাবে?
.
আমার কথা শুনে উনি “শাট আপ!” বলে চেঁচিয়েই পিটপিট করে চোখ খুলতে শুরু করলেন।
পুরোপুরি চোখ খুলে হুট করে আমায় একটান মেরে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে শাড়ির আঁচলটা কাঁধে ঠিক মতো পিন দিয়ে আটকিয়ে নিলেন। আর আমি শুধু রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছি। হাহ! করুক আজকে যা করার। আমি কিচ্ছু করবো না৷ আমি তো স্টুপিড! কিচ্ছু পারিনা। ওকে উনি পুরো শাড়ি একা একা কিভাবে পড়ান আমিও দেখতে চাই।
নীবিড় ভাইয়া হঠাৎ কিছু একটা ভাবতে শুরু করলেন৷ যা দেখে আমি জিজ্ঞেস করে উঠলাম,
.
—- কি? থামলেন কেনো। পড়ান।
.
উনি শাড়ির ডানদিকের পাড় হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে বোকার মতো বলে উঠলেন,
—- এটা, ডান দিকে গুঁজাবো না বাম দিকে! ইটস সো কনফিউজিং!
.
এবার আমার ভীষণ রাগ উঠতে লাগলো। আরে আমাকে শাড়ি পড়তে না পারার জন্য বকে নিজে এমন ভাবটা নিলেন যেনো উনি শাড়ি পড়ানোতে পিএইচডি লাভ করে এসেছেন। আর এখনই হাওয়া ফুউউউসসসস…..!
.
আমি মুখ খুলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি “ওয়েট আ মিনিট!” বলে আমায় থামিয়ে দিয়ে ফোনে মুখ গুঁজে দিলেন। বুঝলাম উনি পারবেন না একা একা যার জন্যে ইউটিউব মামার হেল্প নিতে শুরু করে দিয়েছেন। হুহ! যত্তসব।
.
🍁
.
রাত্রিদের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রুশো। কলিংবেল বাজাবে কি বাজাবেনা এই নিয়ে চরম কনফিউজড সে। আগের বার নাহয় রাতে চুপিচুপি এসেছিলো বলে সবাই তাকে চোর ভেবেছিলো কিন্তু এবার তো সে লুকিয়ে লুকিয়ে নয় বরং সদর দরজা দিয়ে ঢুকে ভদ্র ভাবে রাত্রিকে নিয়ে যেতে এসেছে। তাও কেনো যেনো সাহস কুলিয়ে উঠছে না তার। বারবার রাত্রির হাতে ঝাড়ু থাকার সিন টা ভেসে আসছে চোখের সামনে।
.
শেষমেশ অনেক ভাবার পর বুক ফুলিয়ে একটা দীর্ঘঃশ্বাস টেনে কলিং বেলে চাপ দিলো রুশো। জাস্ট ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই খট করে দরজা খুলে যাওয়ায় খানিকটা অবাক হলো সে।
ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো এক হাস্যজ্বল মুখ।
.
—- জ্বি বলুন! কাকে চাই?
.
— ইয়া মানে আপু, রাত্রি বাসায় আছে?
.
মহিলার বয়স আর চেহারা দেখে রুশোর মনে হলো উনি বোধহয় রাত্রির বড় বোন! তাই সে আপু বলেই সম্মোধন করলো মহিলাটিকে। কিন্তু রুশোকে পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করে দিয়ে মহিলাটি বলে উঠলেন,
.
—- হ্যাঁ রাত্রি বাসায়ই আছে, আর আমি ওর মা! কিন্তু তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না। কে তুমি বাবা?
.
রুশো কিছুটা ভরকে গিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলো। আমতাআমতা করে বলে উঠলো,
—- ইয়ে মানে সরি আন্টি। আসলে আপনাকে ইয়াং মনে হচ্ছে তাই রাত্রির বড় বোন ভেবে নিয়েছিলাম।
আমি রুশো। অনন্যার কাজিন, আজকে তো অগ্নি ব্রোর এনগেজমেন্ট জানেন নিশ্চয়। রাত্রি এখনোও যায় নি তাই ওকে নিতে আসলাম!
.
রুশোর মুখ থেকে নিজের প্রশংসা শুনে যেনো গর্বে বুক ফুলে উঠলো ভদ্রমহিলার। উনি এক গাল হেসে হঠাৎ চমকে উঠে বলে উঠলেন,
—- কি বললে? অগ্নির এনগেজমেন্ট? কই আমরা তো কিছু জানি না।
.
রুশো কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,
—- রাত্রিকে তো ইনভাইটেশন কার্ড দিয়েছিলো অনন্যা! হয়তো ও বলে নি আপনাদের।
.
শায়লা বেগম (রাত্রির মা) কিছুক্ষণ চুপ থেকে পর মুহূর্তে মুখে হাসি ফুটিয়ে রুশোকে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলো।
—- এসো এসো বাবা ভেতরে এসো। আমি এক্ষুনি রাত্রিকে রেডি করিয়ে আনছি।
.
শায়লা বেগম রুশোকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে উপরে চলে গেলেন।
.
🌸
.
—- রাত্রিইইই….! আজ অগ্নির এনগেজমেন্ট আর তুই আমাদের জানাস নি! দেখ তো অনামিকা ভাবী কি ভাববেন আমাদের। আর অনন্যাটাই কি বলবে তোকে বল? এখন তো আর আমাদের যাওয়া সম্ভবও নয়। তোর বাবা অফিসে। তুই চট করে রেডি হয়ে নে।
.
রাত্রি হঠাৎ মায়ের কথা হকচকিয়ে যায়। সে বুঝে উঠতে পারছে না এই খবরটা তার মা কে কে দিলো।কতো সুন্দরভাবে লুকিয়ে যাচ্ছিলো সে অথচ শেষ মুহূর্তে এসে ধরা খেয়ে গেলো!
.
—- এমা! আমি তো একদম ভুলেই গিয়েছিলাম। আর এতোক্ষণে নিশ্চয় এনগেজমেন্ট হয়েও গিয়েছে। আর গিয়ে লাভ কি? আমি পরে অনন্যাকে মানিয়ে নেবো তুমি টেনশন করো না।
.
—- আজ্ঞে না৷ কিচ্ছু শেষ হয় নি। তুই জাস্ট ৫ মিনিটে রেডি হ। অনন্যার বাড়ি থেকে লোক এসেছে তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
.
বলেই শায়লা বেগম বেড়িয়ে গেলেন ঘর থেকে। আর এদিকে রাত্রি পড়লো মহাবিপদে। সে চাচ্ছিলো না এনগেজমেন্টে যেতে। কিন্তু মায়ের ওপরে কথা বলার সাহস নেই তার। তাই অগত্যা মুখ কালো করে একটা গাউন পড়ে রেডি হয়ে নিলো সে।
তবে আজ অন্য দিনের মতো কোনো সাজগোজ করলো না রাত্রি। কিভাবেই বা করবে? নিজের ভালোবাসায় মানুষটার অন্য মানুষের হাতে রিং পড়িয়ে দেওয়ার দিনে কি করে সাজবে সে?
.
নিচে নেমে আসতেই রুশোকে দেখে চোখ বড়বড় ক্ক্রে ফেললো রাত্রি!
—- আপনিইইইইই…..???
.
রুশো রাত্রির চিৎকারে হকচকিয়ে উঠে এক লাফ দিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।
—- উফফফ…! বাচ্চেকা জান লোগে কেয়া? এমনিতেই ভয়ে ভয়ে আছি তারওপর এভাবে চিৎকার দিলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাবো আমি।
.
রুশোর মুখ থেকে মরে যাওয়ার কথা শুনেই রাত্রির ভেতরটা কেঁপে উঠলো। রেগে গিয়ে বলে উঠলো সে,
—- কিসব আজে বাজে কথা বলেন? আর আপনি এসেছেন কেনো?
.
—- কেনো আবার তোমাকে নিতে! ছুটকির স্যাড ফেইস এই রুশো দেখতে পারে না জানো না? সো চলো এখন।
.
রুশো ভালো করে খেয়াল করে দেখলো রাত্রির মুখে কোনো সাজগোজ নেই। ক্রিম টাও দিয়েছে কিনা সন্দেহ।
কানেও কোনো দুল না পড়ায় কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তা দেখে রুশো শায়লা বেগমকে ডেক দিয়ে বসলো,
.
—- আন্টি, রাত্রি এভাবে যাবে? ওখানে কতো গেস্ট আসবে। ওকে একটু ফাস্ট জাস্ট সিম্পলি রেডি করিয়ে দিন প্লিজ।
.
রুশোর কথায় শায়লা বেগমের রাত্রিকে এক ঝলক দেখেই কপাল কুঁচকে যায়। কড়া হুকুমে রাত্রিকে ভালো মতো রেডি হতে বলায় রাত্রি ২ মিনিটেই ঘোড়ার বেগে রেডি হয়ে এসে উপস্থিত হয়। আর এদিকে রুশো রাত্রির ভয়ে ভয়ে রেডি হওয়া দেখে মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে।
আর মনে মনে বলছে সে, “রাত্রি, তোমাকে স্ট্রং হতে হবে!পালিয়ে পালিয়ে আর কতো দিন! আমি তোমার পাশে আছি তুমি ঠিকই সব ভুলে নিজের লাইফে ফোকাস করতে পারবে!”
মনে মনে কথাগুলো বলে একটুপরই শায়লা বেগমের সাথে কুশল বিনিময় করে রাত্রিকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে রুশো।
.
🍁
.
প্রায় ১৫ মিনিট ধরে টিউটোরিয়াল দেখে ড্যাশিং মুড নিয়ে ফোন রেখে আমায় শাড়ি পড়াতে লেগে পড়েন সাদা বিলাই। আগের বাড় তো শুধু কুঁচিই করে দিয়েছিলেন তাতেও হয়তো ভেবে নিয়েছিলেন শাড়ি পড়ানো ভীষণ সহজ। এখন দেখ কেমন লাগে! যত্তসব ঢং।
.
কুঁচি করা হয়ে গেলে আমার হাতে কুঁচি গুলো ধরিয়ে দেওয়ার আগেই আমি হাত সরিয়ে ফেললাম।
—- কি হলো ধরো?
.
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ডান হাতের নখ দেখতে দেখতে বললাম,
—- এতোক্ষণ ধরে টিউটোরিয়াল দেখে করলেন টা কি? আমি তো স্টুপিড। আপনি তো ইন্টেলিজেন্ট। সো ফার্স্ট টু লাস্ট। সবকিছুই আপনিয়ে করিয়ে দেবেন, আমি কিছু করছি না ব্যস।
.
আমার কথায় যেনো উনি আরোও খুশিই হলেন। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে এক হাত দিয়ে আমার কোমড় চেপে ধরে টেনে আনলেন নিজের কাছে। উনার আচমকা এমন করায় পুরো শরীরে এজ অজানা শিহরণ বয়ে গেলো আমার। সাথেসাথেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম আমি।
উনি আমার কোমড় আগের থেকেও আরোও শক্ত করে চেপে ধরে শাড়ির কুচিগুলো আমার কোমড়ের সামনের দিকে গুঁজে দিলেন। উনার হাত আমার উন্মুক্ত পেটে স্পর্শ করা মাত্রই শিউরে উঠলাম আমি। আচমকাই উনার শার্টে কলার শক্ত করে খাঁমচে ধরলাম। উনি এবার দুহাত দিয়ে আমার কোমড় ধরে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। এতোটাই কাছে নিয়ে গেলেন নিজের যে সেখানে ১ সে.মি এর মতোও গ্যাপ আছে কিনা সন্দেহ হতে লাগলো আমার।
উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে শীতল কন্ঠে বলে উঠলেন,
.
—- কি? এখন কেনো ভয় পাচ্ছো? আমায় পাগল করার আগে এই ভয় কোথায় ছিলো হুম?
.
বলেই আমার কানের লতিতে ঠোঁট ছোঁয়ালেন উনি। এতে যেনো ৪৪০ ভোল্ট ঝাটকায় কেঁপে উঠলাম আমি। থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছি আমি ইতিমধ্যেই। উনি হঠাৎ এক হাত আমার কোমড় থেকে সরিয়ে সেই হাতে আমার পেটের ওপর থেকে আস্তে আস্তে শাড়ি সরাতে লাগলেন।
এতে আমি আরোও জমে গয়ে খপ করে উনার হাত চেপে ধরলাম।
.
.
.
চলবে………………..💕