প্রেম আমার পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
7089

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৬♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
—- এ…এ…এ…কি করছেন? শাড়ি সরাচ্ছেন কেনো?
.
আমার প্রশ্নে আদৌ কোনো ভাবাবেগ হলো না নীবিড় ভাইয়ার। উনি আমার হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবারও আমার পেট থেকে শাড়ি সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
কিন্তু আমি আর পারছিনা, উনার স্পর্শ গুলোয় খুন হয়ে যাচ্ছি আমি। দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে আমার। উনি আমার পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে পেটে আলতো করে হাত রাখলেন। উনার হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলাম আমি। ইতিমধ্যে ঘামতেও শুরু করে দিয়েছি। ভয়ে চোখ বন্ধ করে উনার শার্ট আরোও শক্ত করে খাঁমচে ধরলাম আমি।
.
—- প..প..পি..প্লিজ আ..আমায় ছেড়ে দিন। খু..খু..ব ভয় করছে আমার।
.
উনি হঠাৎ আমায় এক ঝটকায় ছেড়ে দিলেন। যার দরুন আমি খাটের ওপর গিয়ে পড়ে গেলাম। উনি গটগট করে বড়বড় পায়ে হেটে যেতে যেতে বলে উঠলেন,
—- রেডি হয়ে নিচে এসো ফাস্ট!
.
বলেই দৃষ্টির অগোচরে চলে গেলেন উনি। আমি এখনো শকড হয়ে একই ভাবে বিছানায় পড়ে রয়েছি। কি হচ্ছিলো এতোক্ষণ? এটা কি কোনো স্বপ্ন ছিলো?
ভেবেই নিজের হাতে নিজেই একটা চিমটি কেটে বসলাম। চিমটি কাটার সাথেসাথেই “আউউউ” করে উঠেই বুঝতে পারলাম এটা আদৌ কোনো স্বপ্ন ছিলো না বরং ছিলো এক কঠিনতম বাস্তব। যা আমি মেনে নিতে পারছিনা কোনোমতেই।
হঠাৎ বাইরে থেকে আম্মুর গলা পেয়ে হকচকিয়ে উঠে বসলাম আমি।
.
—- অনন্যা…! হলো তোর? জলদি আয় মা৷ সব গেস্ট চলেই এসেছে প্রায়।
.
কাঁপাকাঁপা গলায় ক্ষীণ আওয়াজে উত্তর দিলাম,
—- এ..এ..এইতো আম্মু হয়েই গিয়েছে প্রায়। আসছি!
.
আমার জবাবে আম্মু রুমের দরজা পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। নিজেকে কেমন যেনো রোবট রোবট লাগছে আমার।
বেডের ওপর রাখা জুয়েলারি বক্সটা ওপেন করে একবার চোখ বুলিয়ে আবারও ফিলিংলেস রোবটের মতো বসে রইলাম অামি।
.
—- ছুটকি….!
.
পেছন থেকে রুশো ভাইয়ার গলা পেয়ে ভ্রম কাটলো আমার। রুশো ভাইয়া রুমের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
—- ছুটকি তোর জন্য একটা গিফট নিয়ে এসেছি।
.
রুশো ভাইয়ার মুখে গিফটের নাম শুনেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো আমার। আসলে রুশো ভাইয়ার গিফট মানেই দারুণ কিছু। আমি উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে প্রশ্ন করে বসলাম “কি ভাইয়া?” ওমনি ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো,
.
—- তোর জন্য বোম্ব নিয়ে এসেছি! তাও আবার যেই সেই বোম্ব না, একেবারে এটম বোম্ব।
.
রুশো ভাইয়ার মুখে “এটম বোম্ব” নামটা শুনায় নিমিষেই মনটা ভালো হয়ে গেলো আমার। এক লাফ মেরে বসা থেকে উঠে পড়লাম আমি। ততক্ষণে রাত্রি মুখ ফুলিয়ে রুশো ভাইয়ার দিকে কটমট করে তাকিয়ে যেনো চোখ দিয়েই গিলে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে ভাইয়াকে।
যা দেখে আমি ফিক করে হেসে ফেললাম।
রুশো ভাইয়া এক নজর রাত্রির দিকে চেয়েই একটা শুকনো ঢোক গিয়ে বলে উঠলো,
.
—- সো আমার কাজ শেষ তোরা ফট করে রেডি হয়ে ফুট করে নিয়ে চলে আয়। আমি বাবা বোম্ব ব্লাস্ট হওয়ার আগেই মানে মানে কেটে পড়ি।
.
বলেই এক ছুটে হাওয়া হয়ে গেলো রুশো ভাইয়া। যা দেখে আমি উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম সাথে রাত্রিও।
রাত্রি আমার কাছে এসে আমায় জড়িয়ে ধরতে যাবে তার আগেই এক লাফ মেরে ৩ ফুট দূরে সরে আসলাম আমি।
.
—- দূরে যা। একদম ছুবি না আমায়। শয়তানি, পেত্নি, ডাইনি, কুটনি, পিশাচিনী…..!
এখন এসেছিস কেনো? যা কার ঘাড় মটকাতে ব্যস্ত ছিলিস তার ঘাড়ই গিয়ে মটকা।
.
রাত্রি নিমিষেই মুখটা ছোট করে বলে উঠলো,
—- প্লিজ অনু শনু! আমায় ভুল বুঝিস না। আমার শরীরটা না একদম ভালো লাগছিলো না। আর ফোনটারও চার্য শেষ হয়ে যাওয়ায় তোকে জানাতে পারিনি। আমি আসতামই না হয়তো যদি না রুশো ভাইয়া আমায় নিয়ে আসতেন।
.
রাত্রির কথায় অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসলাম আমি। সাথেসাথেই ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো আমার।
আমি আমার ডান হাত রাত্রির কপালে, গালে, গলায় এক এক করে ঠেঁকিয়ে বলে উঠলাম,
.
—- কই, টেম্পারেচার তো নরমালই আছে! শরীর তো খারাপ হওয়ার কথা না। মিথ্যে বলছিস তুই রাত্রি!
.
—- উফফফ….নীবিড় ভাইয়া ঠিকই বলে তুই আসলেই একটা স্টুপিড। আরে শুধু জ্বর আসলেই বুঝি শরীর খারাপ হয়? বুদ্ধু! এখন প্লিজ আর রাগ করে থাকিস না। আমি তো এসেছি বল। আয় বোস তোকে সাজিয়ে দেই।
.
বলেই রাত্রি আমায় টেনে আয়নার সামনে গিয়ে বসিয়ে দিলো।
রাত্রি কেবল হাসিহাসি মুখে মেকআপ বক্সটা খুলতে যাবে তার আগেই আমি লাফ মেরে উঠে পড়লাম।
.
—- দূরে রাখ ওগুলো। শখ করে কিনিই জাস্ট আমি বাট ইউজ করি না জানিস তো। আমি ওসব আটা-ময়দা দিবো নায়ায়ায়া…….!
.
রাত্রি চোখ মুখ কুঁচকে দাঁত কটমট করে বলে উঠলো,
—- সামান্য ক্রিম আর ফেইস পাউডার তো লাগাবি! মেকআপ করা লাগবে না তোকে যা।
.
—- ঠিক আছে ঠিক আছে।

বলেই মুখ ফুলিয়ে আবারও বসে পড়লাম।
শেষমেশ রাত্রির জোড়াজুড়িতে হাল্কা কাজল সাথে ঠোঁটে হাল্কা ভায়োলেট কালারের লিপস্টিক লাগিয়ে নিলাম। আম্মুর দেওয়া জুয়েলারি সেট টা পরে নিয়ে আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে নিলাম।
.
—- ইশশ! অনু রে…! এত্তোগুলো মাশাআল্লাহ লাগছে। ভায়োলেট শাড়ির সাথে নেকলেস আর ইয়ার রিং টাও একদম পারফেক্টলি ম্যাচ করেছে।
আজ একজন তো পুরোই পাগল হয়ে যাবে।
.
আমি কপাল কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলাম,
—- এই একজন টা আবার কে?
.
রাত্রি আমার প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়েই ড্যাংড্যাং করে হেটে চলে যেতে লাগলো ওমনি দরজার সামনে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খেলো।
.
—- আউউউচ্চ! দিনে দুপুরে বোম্ব না ফেললে হয় না এটম বোম্ব?
.
বলেই রুশো ভাইয়া আবারও নিজের মাথা দিয়ে রাত্রির মাথায় টুস করে বারি দিয়ে “সেফটি ফার্স্ট, এখন আর সিং গজাবে না!” বলেই আমার কাছে এসে বলে উঠলো,
—- ওহ মাই গড ছুটকি! ইউ আর লুকিং সো স্টানিং। কাম কাম! মনি ডাকছে।
.
বলেই রুশো ভাইয়া আমায় নিয়ে যেতে লাগলো। এদিকে রাত্রি রেগেমেগে বোম্ব হয়ে মুখ ফুলিয়ে আগেই বেড়িয়ে গেছে।
.
🌸
.
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই আমি পুরো শকড! অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপুকে একসাথে বসানো হয়েছে। এই প্রথম বোধহয় ভাইয়া এমন একটা গেট-আপ নিয়েছে যেখানে ব্লাক এর ছিঁটেফোটাও নেই। গোল্ডেন আর হোয়াইট এর কম্বিনেশনে ড্রেস পরেছে দুজনেই। ভাইয়া হোয়াইট শার্টের ওপরে গোল্ডেন সুট, হোয়াইট প্যান্ট আর পায়ে গোল্ডেন সুজ পড়েছে। আজকে চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে নিয়েছে ভাইয়া। সাথে হাতে গোল্ডেন কালারের ব্রান্ডেড ওয়াচ।
নিত্য আপু হোয়াইট আর গোল্ডেনের কম্বিনেশনে গর্জিয়াস একটা লেহেঙ্গা পড়েছে। হাত ভর্তি চুড়ি৷ গলায় ভারী নেকলেস। কানে ইয়া বড় বড় দুল! যেটা দেখেই আমার মাথা ঘুরানো শুরু হয়ে গিয়েছে অলরেডি। ইয়া আল্লাহ! এতো বড় দুল পড়লে আমার কান ছিঁড়েই পড়তো নির্ঘাত এমনিতেই যে নরম আমার কানের লতি!
তবে যাই হোক নিত্য আপু কে একদম মাশাল্লাহ পরীর মতো লাগছে। আর ভাইয়া কে তো জাস্ট অসাম লাগছে। আহ! ভাই আমার! কত্তো সুন্দর মাশাল্লাহ! গর্বে নিজের বুকটাই ফুলে যাচ্ছে। নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়াকে একদম মেড ফর ইচ আদার লাগছে। আসলেই উপর থেকেই দুজনের সেটিং করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
.
আমার বুকে আবারও সেই চিনচিনে অনুভূতিটা হতে লাগলো যখন আমি আমার যম মি. সাদা বিলাই থুক্কু মি. সাদমান শাহরিয়ার নীবিড়কে দেখলাম। আয় হায় মরে যাবো আমি, খুন হয়ে যাবো! উনি ভায়োলেট কালারের ব্লেজার পড়েছেন সাথে ব্লাক প্যান্ট। হাতে ব্লাক ব্রান্ডেড ওয়াচ। সিল্কি ঘন কালো চুলগুলো চিকচিক করছে উনার। তার খানিকটা কপালের ওপর এসে পড়ছে বারংবার। উনি হেসে হেসে গেস্টদের সাথে কথা বলে যাচ্ছেন। উনার দাঁত গুলোও এদকম শেইপ মতো, মুক্তোর মতো ঝকমক করছে! সাথে উনার ডার্করেড লিপ্স! উফফফফ…..! কি ভয়ংকর সুন্দর! উনার এই কিলার লুকটাই আমায় খুন করার জন্য যথেষ্ট।
তবে একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যে, উনি ড্রেস চেঞ্জ করলেন কখন? এতো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গেলেন? সিরিয়াসলি ভেরী ইম্প্রেসিভ!
.
—- তোরই তো বর! পরেও দেখতে পারবি। একটু তো চোখ নামা…! (কাঁধে হাল্কা করে ধাক্কা মেরে বললো রাত্রি)
.
রাত্রির কথায় আমি লজ্জায় পড়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। ইশশস! আসলেও তো আমি কেমন হ্যাংলার মতো তাকিয়ে ছিলাম উনার দিকে। ছিঃ ছিঃ কি ভাবলো সবাই! আমার এই বেহায়া চোখ দুটোকে নিয়ে আর পারিনা আমি। সবসময় চারিদিকে শুধু সাদা বিলাই কেই খুঁজে বেড়োয়। দূরে থাকলে হ্যাংলার মতো চেয়ে থাকে আবার কাছে গেকে ভয়ে বন্ধ হয়ে যায়। অদ্ভুত সব কারবার!
কিন্তু রাত্রিকে বুঝতে দিলে চলবে না যে আমি আসলে উনাকেই দেখছিলাম। তাই টেকনিক খাটিয়ে সুন্দর করে মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলাম,
.
—- আরে ধুর ওই বিলাইরে আবার কে দেখে? আমি তো উনার ব্লেজারটা দেখছিলাম। কোন যেনো অনলাইন শপে দেখেছিলাম তাই দেখে মনে করবার চেষ্টা করছিলাম।
.
রাত্রিও বিনিময়ে মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলো,
— থাক। আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না।
.
বলেই সাইডে চলে গেলো৷ আর এদিকে আমি মুখে বিরক্তির রেশ ফুটিয়ে আনমনেই বলে উঠলাম ফাজিল একটা”।
.
🍂
.
এবার আংটি বদলানোর সময় ঘনিয়ে এলো। অনামিকা আহমেদ (অনন্যার মা) অগ্নি আর নিত্যর সামনে ২ টো আংটি নিয়ে গেলেন। প্রথমে ছেলে মেয়েকে পড়িয়ে দেবে এরকমটাই কথা।
এতো খুশির মাঝে সবার মুখেই হাসিহাসি ভাব শুধুমাত্র একজন বাদে।
রাত্রি সবার থেকেই কিছুটা দূরে গিয়ে আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। সে পারছেনা এমন কঠিন সময়ে স্বাভাবিক থাকতে। চোখ টলমল করছে তার, যেন এখনই গড়িয়ে পড়বে নোনাজল গুলো।
রাত্রি তার চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বার আগেই কিছুটা ঝুঁকে পড়ে, যাতে জলগুলো পড়লেও ফ্লোরে পড়ে। গাল বেয়ে পড়লে নিশ্চয় কেউ দেখে ফেলতো।
.
রাত্রির চোখ থেকে দুফোঁটা জল টপ করে নিচে পড়ার মুহূর্তেই তা ফ্লোরে পড়তে না দিয়ে ধরে ফেলে একজোড়া হাত। সেই হাতের অধিকারী কে তা দেখতে রাত্রি মাথা তুলে পাশ ফিরে তাকায়।
রুশো খুব সাবধানে তার চোখ থেকে নিঃসৃত জলের দুফোঁটা তার নিজের হাতে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।
রাত্রি রুশোকে এমন অবস্থায় দেখে চমকে উঠে। পর মুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে উঠে,
.
—- আপনি?
.
রুশো মুচকি হেসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
—- হুম কেনো? ভূত ভেবেছিলে? আর এখানে লুকিয়ে লুকিয়ে কি করছো? যাও ছুটকির পাশে গিয়ে দাঁড়াও।
.
রুশোকে এমন স্বাভাবিক গলায় কথা বলতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো রাত্রির। রাত্রির কথা মতে রুশো তো সবটা জানে তাও এভাবে বলছে কেনো ওকে?
রাত্রির ভাবনার মাঝে আবারও রুশো বলে উঠলো,

—- কি হলো? যাচ্ছো না যে?
দেখবেনা তোমার ভালোবাসার মানুষটার হাসিমাখা মুখ? তুমি তো অগ্নি ব্রো কে লাভ করো, তার এমন সুসময়ে খুশি না হয়ে কাঁদছো? দ্যটস নট ফেয়ার।
ওয়েট তোমায় একটা আইডিয়া দেই। আমি যেটা মনে করি আরকি, ইফ উই লাভ সামওয়ান এন্ড দ্য পারসোন ইজ হ্যাপি উইথ এনাদার ওয়ান, দেন উই শুড বি হ্যাপি ঠু… কজ আওয়ার লাভ ইজ হ্যাপি!
তাই তোমারও হ্যাপি থাকা উচিৎ, হাসা উচিৎ ইন্সটেড অফ ক্রায়িং। গো…! নিজেকে স্ট্রং ভাবো, ইউ ক্যান ফেইস দিস সিচুয়েশন। এন্ড অলওয়েজ রিমেমবার ওয়ান থিংক দ্যট ইউ আর নট এলোন।
.

রুশোর কথায় রাত্রি বুক ফুলিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে চোখের কোণে জমা জলগুলো হাত দিয়ে মুখে ফেলে। পর মুহূর্তে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে ততক্ষণাৎ আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে অনন্যার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
.
🌸
.
অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপুর এনগেজমেন্ট খুব সুন্দর ভাবেই হয়ে গেলো।
তাদের খুশি যেনো আর ধরে না।
এদিকে নীবিড় ভাইয়ার চোখ চিক চিক করছে। আচ্ছা উনি কি কাঁদছেন? কি জানি, তবে অবশ্য খারাপ লাগারই কথা, আজ এনগেজমেন্ট কাল তো বিয়েও হয়ে যাবে। বোনকে শশুড় বাড়ি আসতে হবে। নিজের একমাত্র বোনকে নিজের থেকে দূরে পাঠাতে হবে। ব্যাপারটা নিতান্তই কষ্টদায়ক। এককথায় ভীষণ কষ্টদায়ক।
.
এদিকে রুশো ভাইয়া ফটো শুট করতে করতে বোধহয় শহীদই হয়ে যাবে। একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছে। অবশ্য রুশো ভাইয়া অনেক ভালো ফটোশুট করতে পারে। মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ হয় যে ভাইয়া প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার কি না।
আর এইযে আমার বেস্টু রাত্রি, সেই কখন থেকে সাদা বিলাই আর আমার ড্রেসের কালার ম্যাচ হওয়া নিয়ে টিটকারি মেরেই যাচ্ছে। ব্যাপারটা যে কাকতালীয় তা আমি হাজার চেষ্টা করেও এই মাথা মোটাকে বোঝাতেই পারছিনা। তার একটাই কথা “নীবিড় ভাইয়া আমার জন্য গেট-আপ চেঞ্জ করে ফেলেছে, আহা! কত্তো লাভ!”
হাহ! আর লাভ! উনি একটা আস্ত গিরগিটি। সেকেন্ডে সেকেন্ডে পাল্টি খান উনি।
.
🍁
.
পরেরদিন…………….
ভার্সিটির সেই চিরচেনা বটগাছটার নিচে বিরিক্তি মাখা ফেইস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর রাত্রি। অবশ্য এমনি এমনি বিরক্ত নই মোটেই, বিরক্ত হবার যথা সম্ভব যুক্তিযুক্ত কারণও রয়েছে। আর কারণ টা হলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু সিনিয়র আপুরা। তারা একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে আর রাত্রি রেগেমেগে দাঁত কটমট করতে করতে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। যদিও প্রশ্ন গুলো আমাকে নিয়েই তবুও উত্তর রাত্রিকেই দিতে হচ্ছে। কারণ আমি উত্তর দিতে কোনোভাবেই বাধ্য নই। নীবিড় ভাইয়া যদি আমার জাস্ট ভাইয়ের বেস্টফ্রেন্ড হতেন তবে হয়তো জবাব দিতাম তবে উনি আমার না চাইতেও অনেক বেশি কিছু যা এদের বলে অহেতুক মাথা খারাপ করানোর কোনো মানে দেখছি না আমি। কজ কথায় কথা বাড়ে।
.
—– এই মেয়ে তুমি কেনো প্রত্যেকটা কথার জবাব দিচ্ছো? প্রশ্ন গুলো তো আমি ওকে করছি, চুপ করে আছে কেনো ও!
(আমার দিকে আঙুল তুলে) হেই ইউ তোমার সাহস তো কম নয়, তুমি রিনাকে এভোয়েড করো! দেখো মেয়ে তুমি নীবিড়ের যাই লাগো না কেন, জাস্ট দূরে থাকো ওর থেকে। হি ইজ মাই লাভ।
.
এতোক্ষণ ধরে চুপ ছিলাম আমি কিন্তু এবার ধৈর্য্যর বাঁধ টা ভেঙে ফেললো এই অসভ্য সিনিয়র আপুটা। আমি আপুটার আঙুল আমার হাতের আঙুল দিয়ে আস্তে করে নিচে নামিয়ে বলে উঠলাম,

—- দেখুন আপু, আপনি রিনা খান হন বা জরিনা খালা হন তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমার লাইফে আমি কি করবো না করবো সেটা আমার ব্যাপার। এতোই যখন খারাপ লাগছে তো আপনার লাভকেই মানা করুন যাতে আমার কাছে না আসেন উনি।
.
বলেই রাত্রির হাত ধরে পাশ কাটিয়ে যেতে লাগবো তার আগেই আপুগুলো আবারও আমাদের ঘিরে ধরলো।
এদিকে আমার বিরক্তি ক্রমান্বয়ে বেড়ে আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে। এতোক্ষণে রুশো ভাইয়ার আমাকে নিতে আসার কথা। আমায় এখনোও না পেয়ে নিশ্চয় দুশ্চিন্তা করছে।
রেগেমেগে কিছু বলতে যাবো তার আগেই চিরচেনা সেই কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসায় থেমে গেলাম আমি।
.
—– এক্সকিউজ মি! কি হচ্ছে এখানে?
.
নীবিড় ভাইয়ার হঠাৎ আগমনে চমকে ওঠে মেয়েগুলো। এদিকে রাত্রি যেনো এই সুযোগেরই অপেক্ষা করছিলো।
রিনা না জরিনা নামের আপুরটা ভয়ে ভয়ে ” কই কিছু না তো” বলতেই রাত্রি গড়গড় করে সব বলে দিলো। যে কিভাবে ওরা আমাদের একের পর এক বাজে বাজে কথা শুনাচ্ছিলো। তাদের মধ্যে একজন তো আমায় বলেই ফেলেছিলো আমি নাকি গায়ে পড়া টাইপ মেয়ে।
.
সবকিছু শুনে নীবিড় ভাইয়া চোখ বন্ধ করে জোড়ে একটা শ্বাস টানলেন। দুহাতের মুঠো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থরথর করে কাঁপছেন উনি। বুঝতে পারছি খুবই ভয়ানক কিছু হতে চলেছে।
এদিকে এতোক্ষণ ধরে তেজ দেখানো মেয়েগুলোরও ঘাম ছুটে যাচ্ছে।
.
নীবিড় ভাইয়া নিজের বন্ধ খুলতেই ভয়ে কেঁপে উঠলাম আমি সহ সবাই। উনার চোখদুটো রক্তিম আভা ধারণ করেছে, যেনো সব কিছু তছনছ করে দেবেন উনি তার চোখ নিসৃত আগুন দ্বারা।
উনি হুট করে আমার হাত চেপে ধরলেন। হাত ধরেই টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলেন একেবারে ক্যাম্পাসের মাঝখানে। আমাদের এভাবে হেটে যাওয়া দেখে সবাই মুভির শুটিং দেখার মতো ভান করে মাছির মতো ভন ভন করতে করতে এগিয়ে আসতে লাগলো।
.
উনি আমায় মাঠে একদম মিডিল পয়েন্টে নিয়ে এসে থামলেন। ওদিকে রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া আমাদের এভাবে দেখতে পেয়ে গেইটের দিক থেকে ছুটে আসছে এদিকেই।
আমার হৃদপিন্ডের অলিন্দ-নিলয় ইতিমধ্যে লাফালাফি করা শুরু করে দিয়েছে।
.
উনি আমার হাত ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। আমার চোখের দিকে এক পলক তাকিয়ে “সরি!” বলেই নিজের দুহাত দিয়ে আমার কোমড় চেপে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলেন উনি।
সাথেসাথেই কানে ভেসে আসতে লাগলো আমার একদফা কোলাহল।
উনি সেসবের কোনো তোয়াক্কা না করেই একটু ঝুঁকে আমার ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোঁটজোড়া ডুবিয়ে দিলেন। খুব গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছেন উনি আমায়।
.
এদিকে রুশো আর অগ্নি এই সিন দেখে থেমে গিয়ে পুরো রসগোল্লার মতো চোখ বড়বড় করে মুখ “হা” করে ফেললো।
অগ্নি ওভাবে হা করে থেকেই নিজের বাম হাত রুশোর চোখের সামনে ঢেকে ধরলো।
চোখের সামনে অগ্নির হাত চলে আসায় রুশোও নিজের ডান হাত অগ্নির চোখের সামনে ধরে বলে উঠলো,
.
—- ইটস চিটিং ব্রো! ইউ শুড ক্লোজ ইউর আইস ঠু..!
.
প্রায় ২ মিনিটের পর উনি আমার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগলেন। আর আমি এখনোও ঘোড়ের মধ্যে রয়েছি। এতোক্ষণ কি হলো তা বোঝার চেষ্টা করেও পারছিনা যেনো।
.
অগ্নি রুশোর হাতের ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে তাকিয়ে “ইটস ওভার” বলে নিজেও রুশোর চোখের সামনে থেকে হাত সরিয়ে ফেললো।
কিন্তু তাদের শুখ ২ সেকেন্ডও টিকলো না।
তাদের আবারও অবাক করে দিয়ে নীবিড় অনন্যার ঠোঁটে আবারও ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
.
—- ওহ নো! কিসিং স্টার্টস এগেইন! ব্রো হাত দাও! নাহলে ফুটো হয়ে যাবে আমার আইস!
.
—- তুইও ডাক আমার চোখ! নাহলে বেড়িয়ে আসবে এবার।
.
বলে আবারও দুজন দুজনের চোখ ঢেকে ফেললো!
.
চলবে…………….💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৭♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
নীবিড় ভাইয়া আরোও ২ মিনিট পর আমার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে লাগলেন। আমি এদিকে রোবটের মতো শুধু দাঁড়িয়েই আছি। কেনো যেনো নিজেকে অনুভূতি শুণ্য একটা রোবটের মতো লাগছে আমার!
মাথাটা ভীষণ ভারী ভারী লাগছে, কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা আমি। মোটকথায় একপ্রকার শকের মধ্যে রয়ে গিয়েছি যেনো। সবকিছু কেমন আবছা আবছা লাগছে আমার কাছে।
.
—- ব্রো? পিকচার আভিভি বাকি হ্যায় ওর খাতাম হুয়া হ্যায়?
.
অগ্নি রুশো কথায় চোখ বন্ধ রেখেই বলে উঠলো,
—- এবার তুই দেখ! আগেরবার আমি দেখতে নিয়েছি তাই আবারও শুরু করেছিলো। তুই দেখলে করবে না আর। তোর লাকি চোখ আর আমার কুফা চোখ!
.
রুশো এক আঙুল দিয়ে কিছুক্ষণ মাথা চুলকে আবারও বলে উঠলো,
—- ব্রো, লাকি তো বুঝলাম, বাট হোয়াট ইজ কুফা চোখ?
.
অগ্নি ভ্র কুঁচকে রুশোর দিকে এক পলক চেয়েই নিজের হাত রুশোর চোখের সামনে থেকে সরিয়ে বলে উঠলো,
—- ভাই আমার, আগে দেখ সব ঠিক আছে কিনা!
.
রুশো নিজের চোখ পিতপিট করে খুলে সামনে তাকিয়ে দেখলো নীবিড় অনন্যার ঠোঁট ছেড়ে দিলেও এখনোও কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
তাই সে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠলো,
.
—- ব্রো আধা ঠিক তো আধা বেঠিক!
.
অগ্নির রুশোর কথার আগা-মাথা কোনোকিছুই না বুঝে একরাশ বিরক্তি নিয়ে নিজেও চোখ খুলে সামনে তাকালো। সবাই নীবিড় আর অনন্যার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রয়েছে। কিন্তু কেউ টু শব্দও করছে না। হয়তো তারাও শকের মধ্যে রয়েছে।
সবাই যে যার স্থানে স্থির থেকে হা করে তাকিয়ে আছে ফিল্ডের মিডিল পয়েন্টে!
.
🍁
.
নীবিড় ভাইয়া আমায় ছেড়ে দিয়ে নিজের এক হাত দিয়ে আমার বা দিকের কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে একপ্রকার চেঁচিয়েই বলে উঠলেন,
.
—- আশা করছি এবার আর কারো কোনো কোয়েশ্চেন অর এনি টাইপ অফ প্রবেলমস নেই।
লুক এট দ্য গার্ল, শি ইজ মাই ওয়াইফ,
শি ইজ মাই লাইফ!
শি ইজ মাই এভরিথিং!
সো ওকে নিয়ে কোনো উল্টো পাল্টা কথাবার্তা এই সাদমান শাহরিয়ার নীবিড় সহ্য করবেনা। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, ওর আশেপাশেও যদি কোনো ছেলে অর এনি টাইপ অফ লো মাইন্ডেড মেয়ে ঘুরে ওকে ডিস্টার্ব করে দেন তাকে জ্যান্ত পুতে ফেলতে দু’বারও ভাববো না আমি।
.
উনার এতো জোড়ে চেঁচিয়ে বলা কথাগুলোও আমার কানে খুবই হাল্কা মনে হচ্ছে। কথাগুলো উনার এতো কাছে থাকা সত্ত্বেও কান পর্যন্ত পৌঁছোচ্ছে না আমার।
মাথাটা কেমন যেনো ঝিমঝিম করছে আমার। চোখে ইতিমধ্যে ঝাপসা দেখতে শুরু করে দিয়েছি আমি! বুঝতে পারছি আমি জ্ঞান হারাচ্ছি। দেহের ভার ছেড়ে দিচ্ছি ক্রমশই।
মাথাটা হঠাৎ চক্কর দিয়ে উঠলো আমার, সাথেসাথেই গা এলিয়ে দিলাম উনার ওপর।
তারপর আর কি হয়েছে তা আমার মনে নেই।
.
🍂
.
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে আমার বেডরুমে আবিষ্কার করলাম আমি। আমায় ঘিরে বসে আছে আম্মু-আব্বু, অগ্নি ভাইয়া, নিত্য আপু, রুশো ভাইয়া আর রাত্রি।
আরেকটু ঘরের চারপাশে চোখ বোলাতেই চোখে পড়লো নীবিড় ভাইয়াকে। উনি দরজার সাথে হেলান দিয়ে এক পা ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছেন। এক হাত উনার পকেটে আরেক হাতের দু আঙুল দিয়ে কপালে স্লাইড করে যাচ্ছেন উনি।
.
আমায় জ্ঞান ফিরে পেতে দেখে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। নীবিড় ভাইয়া আমার জ্ঞান ফিরায় এক পলক চেয়েই আবারও মুখ ঘুড়িয়ে নিলেন।
আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো,
—- এখন কেমন লাগছে রে মা? তুই এমন কেনো বলতো? আমার একটা কথাও শুনিস না। খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করিস না। এই রোদে না খেয়ে দুপুর পর্যন্ত থাকলে তো জ্ঞান হারাবিই!
.
আব্বু আম্মুকে থামিয়ে সামান্য বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে বলে উঠলো,
—- আহ! অনামিকা, থাক না সেসব কথা। আগে ওকে উঠিয়ে খাইয়ে দাও।
.
পাশেই নিত্য আপু বসে ছিলো। আপু আমার গাল টেনে দিয়ে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
—- অনন্যা, দুধ, ডিম ফ্রুটস এসব খুব কম খায় তাইনা?
.
ওমনি আম্মু যেনো নোবেল জিতার সুযোগ পেয়ে গেলো। পেটে চেপে থাকা বারো বছরের নালিশ যেনো একদিনেই পারা শুরু করে দিলো।

—- আর বলিস না, কিচ্ছু খেতে চায় না। ফলমূল কিছু তো খায়ই না তার ওপর দুধের নাম শুনেই বাড়ি ছেড়ে পালায় এমন অবস্থা! ডিম ও খেতে চায় না।
শুধু খায় এক মুরগী! শাক-সবজি জীবনেও খাওয়াতে পারিনি ওকে আমি।
শুধু আজেবাজে খাবার খেয়ে বেরোয়! সকালে ব্রেকফাস্ট টাও ঠিকমতো করে না। বলে ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নেবে।
.
আম্মুর ননস্টপ নালিশে আমি শুধু অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে রইলাম আম্মুর দিকে। এদিকে অগ্নি ভাইয়া আমার এমন করুন অবস্থায় যেনো ভীষণ মজা পাচ্ছে!
আম্মু আরোও কিছুক্ষণ আমার বিরুদ্ধে নালিশ পাড়তে পাড়তে একসময় থেমে গিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো। সব শুনে নিত্য আপুর মুখে গম্ভীরতার সৃষ্টি হলো।
আপু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলো,
.
—- মামনি, আমি একটা চার্ট বানিয়ে দেবো সেই অনুযায়ী ওকে খাওয়াতে হবে।
.
আমি আবারও অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম আম্মুর দিকে। যার অর্থ, “আম্মু গো আমি শহীদ হয়ে যাবো, তাও ওসব ঘাস-ফুস খেতে পারবোনা!”
কিন্তু মা জননী আমার অসহায় দৃষ্টি একেবারেই তুচ্ছ ভেবে উপেক্ষা করে আবারও বলে উঠলো,
.
—- এবার তোদের দ্বায়িত্ব দিলাম ওকে খাওয়ানোর, আমি আর পারবোনা।
.
অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া দুজনেই আম্মুর কথায় ঠোঁট উল্টালো! যার অর্থ তারা নিজেরাও আমায় জোড় করে খাওয়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত!
নীবিড় ভাইয়া এবার দরজায় হেলান দেওয়া থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চুলগুলো এক হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়ে বলে উঠলো,
—- ও তুমি চিন্তা করো না মামনি! আমাদের ওপর ছেড়ে দাও।
.
আম্মু-আব্বু মুচকি হেসে উঠে চলে গেলো লাঞ্চ সার্ভ করতে। এদিকে রুশো ভাইয়া এতোক্ষণ বোধহয় পেটের সাথে যুদ্ধ করে কথা আটকিয়ে রেখেছিলো।
আম্মু আব্বু যেতেই উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে বসলো,
.
—- তার মানে ছুটকি ওই ইয়ের জন্য সেন্সলেস হয়নি, শরীর দূর্বল ছিলো তাই সেন্স হারিয়েছিলো?
.
রুশো ভাইয়ার প্রশ্নে অগ্নি ভাইয়া মুখ ফুলিয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই, রুশো ভাইয়া আমতাআমতা করে বলে উঠলো “উউউপপসসস…! সরি!”
এদিকে নিত্য আপু আর রাত্রি মুখ চেপে হেসে চলেছে। নিত্য আপু হাসি থামিয়ে বলে উঠলো,
.
—- এক্সাক্টলি!
.
এদিকে আমি মনে করার চেষ্টা করছি ক্যাম্পাসে তখন কি ঘটছিলো? উনি তো আমায় টেনে মিডিল পয়েন্টে গিয়ে থামলেন। দেন আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেও ছিলেন তারপর………আর কিছু মনে আসছে না কেনো আমার?
কিছু মনে করতে চেষ্টা করলেই সব কিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে আমার কাছে।
আমি মাথা ধরে আস্তে আস্তে উঠে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে উঠলাম,
.
—- তখন কি হয়েছিলো? আমার কিছু মনে পড়ছেনা কেনো?
.
আমার এমন প্রশ্নে সবাই যেনো সাত আসমান থেকে ধপাস করে পড়ে গেলো! রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া চোখ বড়বড় করে দুজন দুজনের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে।
রাত্রি আমায় ঝাঁকিয়ে বলে উঠলো,
.
—- সিরিয়াসলি অনন্যা, তোর কিচ্ছু মনে নেই?
.
আমি আবারও মনে করার চেষ্টা করেও কিছু মনে করতে না পেরে ঠোঁট উল্টালাম।
—- শরীরটা তখন কেমন যেনো করছিলো, উনি তো আমায় টেনে নিয়ে গেলেন। তারপর থেকেই কেমন যেনো সবকিছু ঘোলাটে ঘোলাটে লাগছিলো। আচ্ছা এক্সাক্টলি কি হয়েছিলো?
.
সবাই যেনো আমার কথায় একপ্রকার হাফ ছেড়ে বাঁচলো। অগ্নি ভাইয়া তো পারেনা লুঙ্গি ড্যান্স দেয়।
আর রুশো ভাইয়া তো অলরেডি লাফ মেরে উঠে “ঢিংকাচিকা!” বলে ছাম্মাক ছাল্লো শুরু করে দিয়েছে।
কিন্তু নীবিড় ভাইয়া এখনো আগের মতোই রয়েছেন। এতে যেনো কিছু যায়ই আসছে না উনার।
.
—- রুশো ভাইয়া লাফাচ্ছো কেনো?
.
রুশো ভাইয়া লাফাতে লাফাতে হঠাৎ থেমে গিয়ে আমায় টেনে বসা থেকে উঠিয়ে বলে উঠলো,
“মনে বড় খুশি রে! বাদ দে, খেয়ে নিবি ছুটকি, চল! আর ব্রো, সিস, এটম বোম্ব তোমরাও চলে এসো।
বলেই আমায় ড্রয়ইরুমে নিয়ে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিলো রুশো ভাইয়া। আমাদের পেছন পেছন বাকি সবাইও এসে উপস্থিত হলো।
.
আমার একপাশে অগ্নি ভাইয়া আর এক পাশে রুশো ভাইয়া, রুশো ভাইয়ার পাশে রাত্রি। আমার ঠিক সামনে আছেন নীবিড় ভাইয়া, তার ঠিক পাশে নিত্য আপু।সবাই যে যার মতো খেয়ে যাচ্ছে, শুধু আমার গুনোধর ভাইটা ছাড়া। অগ্নি ভাইয়া খেতে খেতে একটু পর পরই কেঁপে কেঁপে উঠছে। ব্যাপারটা ঠিক সুবিধের ঠেকছে না আমার। টেবিলের নিচে কিছু তো গড়বড় ঘটছেই।কিন্তু কি?
ভাইয়ার হঠাৎ মৃগী রোগ হওয়ার কারণটা তো জানতে হচ্ছে। তাই রুশো ভাইয়ার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলাম,
.
—- রুশো ভাইয়া, একটু হেলো তো।
.
রুশো ভাইয়া আমার কথায় খাওয়া থামিয়ে ভ্রঁ কুঁচকে লো ভয়েজে বলে উঠলো,
—- কেনো রে? কি হয়েছে ছুটকি?
.
—- আরে টেবিলের নিচে তাকাও। অগ্নি ভাইয়া একটু পর পর কেঁপে উঠছে কেনো তার কোনো উত্তর পাও কিনা দেখো!
.
রুশো ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে সম্মতি জানিয়ে সবার আড়ালে মাথা হেলে টেবিলের নিচে তাকালো। কিন্তু কথা হচ্ছে রুশো ভাইয়া গত ২ মিনিটেও উঠছে না। সবাই খাওয়া থেকে চোখ সরিয়ে ভাইয়াকে এভাবে হেলে থাকতে দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। তাই হাতের কুনুই দিয়ে রুশো ভাইয়ার পিঠে আস্তে করে গুঁতো মেরে দিলাম আমি।
রুশো ভাইয়া পিঠে খোঁচা লাগায় তাড়াহুড়ো করে উঠতে যেয়ে টেবিলের সাথে “ঢাস” করে বারি খেয়ে “আউউচ্চ!” করে উঠলো।
রুশো ভাইয়ার আওয়াজে সবাই খাওয়া থামিয়ে এদিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। রুশো ভাই মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে উঠে বসতেই সবার নজর বন্দি হয়ে যাওয়ায় একটা শুকনো ঢোক গিলে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। ভাইয়ার অসহায় চাহুনী দেখে আমি শুধু ঠোঁট উল্টালাম।
রুশো ভাইয়া আবারও দাঁত কেলিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলে উঠলো,
.
—- ইয়ে মানে ওই, পা চুল্কোচ্ছিলো তাই হেলে চুলকোচ্ছিলাম আরকি। তোমরা খাও ব্যাপার না। আম ফাইন।
.
রুশো ভাইয়ার কথায় সবাই সন্তুষ্ট হলেও হলো না শুধু রাত্রি। সে ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলো,
—- এখন কেনো টেবিলে ইচ্ছে করে ২ বার বারি খেলেন না? আপনার তো আবার একবার বারি খেলে সিং গজায়।
.
রাত্রির কথায় রুশো ভাইয়া আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে আবারও অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঠাস করে আবারও টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বারি খেলো। তাতে রাত্রির যেনো কোনো ভাবাবেগ হলোনা। আরও নিশ্চিন্ত হয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো সে।
রুশো ভাইয়া কিছুক্ষণ মুখ ফুলিয়ে থেকে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
.
—- ছুটকি,, কাবাডি কাবাডি কাবাডি।
.
—- মানে? কাবাডি খেলা কোথায় থেকে আসলো?
.
রুশো ভাইয়া আবারও দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো,
—- ব্রো আর ভাবী টেবিলের নিচে কাবাডি খেলছে। ভাবী ব্রোর পায়ে খোঁচা দিচ্ছে!
.
এতোক্ষণে বুঝলাম রুশো ভাইয়ার কাবাডি খেলার আসল মানেটা। তারমানে হলো এই যে নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়া টেবিলের নিচে পা দিয়ে রোমান্স করছে। আমার ভাই তো এমনিতেই নিরামিষ! বেচারী নিত্য আপুকেই সবকিছু প্রথমে শুরু করতে হবে।
ভেবেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম আমি আর রুশো ভাইয়া!😂
.
🌸
.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসেছে। রুশো ভাইয়া রাত্রিকে পৌঁছে দিতে গিয়েছে। এদিকে আজ নিত্য আপুর আব্বু আবারও ঢাকায় গেছেন বিজনেসের জন্য! আম্মু এই শুনে আপু আর নীবিড় ভাইয়াকে একদম আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছে যেনো। কোনোভাবেই যেতে দেবেনা আজ। নীবিড় ভাইয়া অনেক বলার পরও কোনো কাজ হলো না। অগত্যাই তাদের আজ আমাদের বাসাতেই থাকতে হবে বলে মুখ কালো করে রেখেছেন উনি। এদিকে নিত্য আপুতো ভীষণ খুশি যা আপুর চেহারা দেখে বেশ বুঝতে পারছি আমি।
হঠাৎ কলিং বেল বাজায় চমকে উঠলাম আমি। রুশো ভাইয়া এসে গেছে হয়তো।
.
দরজা খুলতেই চোখে যেটা সর্বপ্রথম পড়লো সেটা হলো লাল টকটকে টমেটো!
রুশো ভাইয়া আবারও নিজের নাকটা টমেটো বানিয়ে এনেছে। কিন্তু ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত লাগছে আমার। বাসায় থাকতে তো রাত্রি ঠিকই ছিলো। তবে আবারও কি করে বসলো রুশো ভাইয়া যে আবারও রাত্রি তার ঢাই কিলোর হাত দিয়ে রুশো ভাইয়ার নাকটা ফাটিয়ে লাল বানিয়ে ফেললো?
.
রুশো ভাইয়া সোফায় বসে মুখ ফুলিয়ে রয়েছে। এদিকে আমি আইস ব্যাগ নিয়ে এসে ভাইয়ার নাকে লাগাচ্ছি।
.
—- ভাইয়া, এবার তো বলো কি করে কি হলো?
.
রুশো ভাইয়া আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,
—– জানিস তো ওদের বাসার সামনে গাড়ি থামাতেই রোডে একজন মহিলাকে ঝাড়ু দিতে দেখেছিলাম আমি। তো ওই মুহূর্তে কেনো যেনো রাত্রির হাতে ঝাড়ু থাকার সিনটা কল্পনায় আসতে লেগেছিলো।
তো আমি আনমনেই ওকে বলে ফেলেছিলা যে, “এটম বোম্ব, তোমাকে না ঝাড়ু হাতে টম এন্ড জেরীর ওই ঝাড়ুর পিঠে উঠে উড়ে বেরানো ডাইনি গুলোর মতো লাগে!”
ব্যাস! তারপর যা হওয়ার তাই হলো। সোজা নাক বরাবর একটা পাঞ্চ মেরে চলে গেলো। আমার কি ফল্ট বল? আমি তো জাস্ট ইমাজিন করে যার মতো লাগে সেটাই বলেছিলাম। ওর তো আরো প্রাউড ফিল করা উচিৎ তাইনা? কজ, টম এন্ড জেরীর একটা ক্যারেক্টার হতে পারাটা তো ভাগ্যের ব্যাপার! আমার তো এখনও কার্টুনটা ভালো লাগে। নিজেকে কেমন যেনো টমের মতো লাগে।
.
রুশো ভাইয়ার কথা শুনে আমি হাসবো না কাঁদবো, না গড়াগড়ি খাবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা! কিন্তু এটা বেশ বুঝে উঠতে পারছি আমার পেটে হাসির বোম্ব গুলো ইতিমধ্যে আকুপাকু করা শুরু করে দিয়েছে।
আমি রুশো ভাইয়াকে কোনো রকমে সান্ত্বনা দিয়ে ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
দরজা লাগানোর পরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে হু হা করে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়া শুরু করে দিলাম। উফফফফফ……! হাসতে হাসতে আমার পেট টাই না ফেটে যায়।😆
.
🌹
.
ড্রয়ইরুমের মাঝে পিনপতন নীরবতা বিরাজমান! আব্বু আজ নাকি খুব জরুরী একটা কথা বলবে বলে আমাদের সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছে। যার দরুন আমরা সকলে উপস্থিত এখানে।
রুশো ভাইয়া আবারও দাঁতটাকে নেইল কাটার বানিয়ে ফেলেছে। তবে আমি আজ পানি নিয়ে বসিনি। তাই অগত্যাই গলা শুকিয়ে গেলেও গলা ভেজাতে পারছিনা। পুরো জীবনে এতোটা সিরিয়াস আব্বুকে সচরাচর কখনো দেখিনি আমি। আজ হঠাৎ আব্বুর এমন গম্ভীরতা বড্ড ভাবাচ্ছে আমায়।
এদিকে অগ্নি ভাইয়ার হাটু কাঁপা শুরু হয়ে গিয়েছে।
আর নীবিড় ভাইয়া ভাবলেশহীন ভাবে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে রয়েছেন। নিত্য আপুও বেশ চিন্তিত আব্বুর এমন সিরিয়াসনেস দেখে।
আব্বুকে এখনোও চুপচাপ থাকতে দেখে আমি আপুকে বললাম এক গ্লাস পানি এনে দিতে। যেহেতু ইম্পর্ট্যান্ট কথাটা আমায় নিয়েই তাই আমি আর নড়লাম না।
.
একটুপরই নিত্য আপু পানির গ্লাস নিয়ে হাজির হতেই আব্বু মুখ খুললো!
—- শোন অনন্যা! তুই তোর নাহিন আংকেল কে তো চিনিস তাইনা?
.
আমি একটু মনের করার চেষ্টা করে বলে উঠলাম,
—- ওইযে আমার বার্থডেতে পেট মোটা, ভূরি ওয়ালা গোপ বিশিষ্ট একটা লোক এসেছিলো উনি?
.
আমার কথায় নীবিড় ভাইয়া বাদে সবাই ফিক করে হেসে আবারও নীরবতা পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
আব্বু আবারও গম্ভীরতা ধারণ করে বলে উঠলো,

—- হুম উনিই! উনার একমাত্র ছেলে নিহাম এবার মেডিকেল পাশ করে বেরিয়েছে! উনি তোমায় দেখে ভীষণ পছন্দ করেছে তাই উনি চান তোমার সাথে নিজের ছেলের বিয়ে দিতে। আর তোমারও তো বয়স ১৯ রানিং!
ছেলে ভালো পরিবারও ভালো। আগামী সপ্তাহে ওরা ছেলে সহ তোমায় দেখতে আসবে। তুমি সুন্দর ভাবে নম্র ভদ্র আচরণ করবে, যা যা জিজ্ঞেস করে তার ঠিকঠাক উত্তর দেবে।
.
আব্বুর কথা শুনে আমার অর্ধেক খাওয়া পানি ভুসসসস….করে মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো। এদিকে রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া কাশতে কাশতে বোধহয় যক্ষ্মা রোগীর খেতাব ছিনিয়ে নেবে।
নিত্য আপু মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়লো।
শুধুমাত্র সাদা বিলাইয়েরই কোনো রিয়াকশন চোখে পড়লো না আমার। উনি এখনোও ভাবলেশহীন ভাবে ফোনে মুখ গুঁজে রয়েছেন।
.
—- ওহ নো…….! ব্রো, এটা কি হলো? আমি তো শুনেছি মেয়েদের সতিন হয়। এখন তো দেখছি নীবিড় ব্রোর ও সতিন হবে।
.
—- আরে রাখ তোর সতিন!
হায় কপাল আমার, আমাকে যে দুজনের শালা হতে হবে তার বেলা?
.
চলবে………………💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৮♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
—- আপনার কি মাথা ঠিক আছে? কিসব বলে যাচ্ছেন বলুন তো? দেখুন আপনি এই বিয়েটা মানেন না সেটা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু ইসলামের রীতিমতো আমাদের বিয়েটা হয়েছে! আপনি মানলেও হয়েছে, না মানলেও হয়েছে।
.
নীবিড় ভাইয়া এবারও ভাবলেশহীন! কোনো ফারাকই পরছে না উনার আমার কথাগুলোয়। যেনো কোনো ভাঙা টেপ রেকর্ডার বেজে চলেছে ভেবে উনি আমার বলা যুক্তিযুক্ত কথাগুলো কানেই তুলছেন না।
.
তখন আব্বুর কড়া গলা দেওয়া আদেশ শুনে মুখ ফুটিয়ে আর কিছু বলা হয়ে উঠেনি আমার। রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া বলেছিলো যে আমার বয়স আরোও বাড়ুক! সবে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছি। কিন্তু আব্বু ভাইয়াদের নিরাশ করে দিয়ে নিশ্চিন্ত গলায় বলে দিয়েছিলো যে, “পড়াশুনো তো করবেই৷ বিয়ের পর করলে ক্ষতি কি?”
ব্যাস তাতেই হয়ে গেলো। আব্বুর মুখের ওপর আর কারো কথা বলা হয়ে উঠলো না।
.
বর্তমানে আমরা সকলে সাদা বিলাইকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে একের পর এক কথা বলে যাচ্ছি কিন্তু উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আরাম করে গেমস খেলায় ব্যস্ত শুধু!
এতোগুলো কথার বিনিময়ে উনি শুধু ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে এটুকু বলেছেন যে, “বোনের বিয়ের বয়স হয়েছে, বিয়ে তো করতেই হবে! তাতে তোরা এতো চেঁচামেচি করছিস কেনো? যেমন যেমন চলছে, তেমন তেমন চলতে দে!”
ঠিক তারপরই আমি লাগাতার উনাকে এই কথাগুলো বলে যাচ্ছি বাট উনি তা এক কান দিয়ে শুনছেন, সাথে অপর কান দিয়ে খুব সহজেই বের করে দিচ্ছেন!
.
শেষমেশ আমি উনাকে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত হয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। আমার সাথেসাথে মাথায় হাত রেখে বসে পড়লো রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়াও।
নিত্য আপু রেগে গিয়ে নীবিড় ভাইয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। চোখেমুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
.
—- ভাইয়া, তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস? অনন্যা তোর বউ হয়! তুই কি করে তাকে আরেক জায়গায় বিয়ে করতে বলতে পারিস?
.
নীবিড় ভাইয়া জানালার বাহিরে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চুলগুলোর মাঝে ডান হাত চালিয়ে বলে উঠলেন,
—- সো হোয়াট? আমি ওকে বউ বলে মানি না। এন্ড ইটস দ্য মেইন পয়েন্ট।
.
অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া দুজনই নিজেরদের মুখে একবার তো নীবিড়ের দিকে একবার চেয়েই অবাক হয়ে বলে উঠলো,
—- তো আজ ভার্সিটিতে ওসব…………
.
আর কিছু বলার আগেই নীবিড় ভাইয়া চোখ রাঙালেন। সাথেসাথেই রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া চুপ হয়ে গেলো। রুশো ভাইয়াতো এক ঠেলায় ঠোঁটে আঙুল চেপে চুপ করে রইলো! নীবিড় ভাইয়া অগ্নি ভাইয়াকে চোখের ইশারায় কিছু একটা বোঝাতেই অগ্নি ভাইয়া চুপ হয়ে কিছু একটা ভেবে হঠাৎ হেসে উঠলো। যার কোনো কিছুই আমি বুঝে উঠতে পারলাম না।
শুধু বোকার মতো ড্যাবড্যাব করে চেয়েই রইলাম তাদের দিকে। নিত্য আপু ভ্রু কুঁচকে নীবিড় ভাইয়ার দিকে তাকাতেই আপুকেও ধমক মেড়ে চুপ করিয়ে দিলেন উনি! এদিকে আমি নির্বোধ কিছুই বুঝতে পারছিনা। কি হবে আমার? শেষমেশ দু দুটো জামাই নিয়ে ঘুরতে হবে? না না এটা মানা যায় না। এটা অন্যায়, ঘোর অন্যায়!
.
রুশো ভাইয়া হঠাৎ কিছু একটা ভেবে আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো,
—- ছুটকি রে…! তুই মন খারাপ করছিস কেনো বলতো? তোর দু দুটো বর হলে কিন্তু দারুণ হবে। আমাদের দু দুটো দুলাভাই হবে। আমরা ডাবল ডাবল আদর পাবো! আহা আহা! কি লাইফ হবে ভাব!
.
রুশো ভাইয়ার কথায় অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপু মুখ টিপে হেসে চলেছে। কিন্তু আমার হাসি পাচ্ছেনা। রাগ লাগছে আমার ভীষণ রাগ! তাই একপ্রকার চেঁচিয়েই বলে উঠলাম আমি,
.
—- ভাইয়ায়ায়ায়া……! কি বলছো এসব?
.
রুশো ভাইয়া আমার চেঁচানোতে জ্বিবে কামড় দিয়ে বসা থেকে উঠে এক ছুটে পালালো! আর আমি এদিকে রাগে ফোসফোস করছি! কি হলো টা কি এদের? সবার মাথার তারতুর ছিঁড়ে গেলো নাকি? উফফফফ….! আর পারা যাচ্ছেনা। আমার ব্রেইন টা কে একটু রেস্ট দেওয়া দরকার।
ভেবেই পা বাড়ালাম আমার রুমের দিকে। এতোক্ষণ সবাই ভাইয়ার রুমেই ছিলাম তাই।
.
🍂
.
রাত ১০ টা বেজে ১২ মিনিট…..!
শুয়া থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো! তখন ৭ টা ৪৫ মিনিটের মাথায় রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তার মানে আমি পুরো আড়াই ঘন্টা ধরে ঘুমিয়েছি? আর কেউ আমায় ডাকলোও না? অবশ্য ভালোই হয়েছে। কষ্ট করে আর খেতে যেতে হবে না। আমি বরং ফ্রেশ হয়ে এসে একটু ফেসবুকে ঘুরে আসি। ব্যস্ততায় ঢোকাই হয়না।
.
ফ্রেশ হয়ে এসে ফেসবুকে ঢুকতেই প্রথমে চোখের সামনে সাদা বিলাইয়ের আইডি চোখে পড়লো। ফেসবুক থেকে ফ্রেন্ড সাজেশন এসেছে। হাহ!
প্রোফাইলে ভাইয়াকে ধরে উনার সেই ভুবন ভুলানো হাসিটা অন্য সময় যেমন অমায়িক লাগতো আজ তার ঠিক উল্টো লাগছে আমার। উনার হাসি দেখে আমার পুরো গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে!
আমাকে এদিকে রাজ্যের চিন্তায় ফেলে কি সুন্দর করে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছেন উনি।
.
অনিচ্ছা সত্ত্বেও উনার আইডি স্ক্রল করতে ঢুকলাম আমি। কভার পিকে এখনোও নিত্য আপুর সাথে ছবিটা দেওয়া আছে উনার। ইশশস! কি বোকামিটাই না করেছিলাম আমি। আপু কে উনার গার্ল ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছিলাম! এখন সেসব কথা ভাবলেই লজ্জা লাগে।
.
প্রোফাইল পিকের কমেন্ট সেকশনে ঢুকতেই সবার প্রথমে যেসব কমেন্ট চোখে পড়লো সেসবের কিছু নমুনা:
— হেই হ্যান্ডসাম রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করো প্লিজ!😭

— ও মাই গড! ক্রাশ!😍

— আই লাভ ইউ নীবিড়….!😘

— ওহ নো…! আই নিড বোথ! উফফফ…..! 😍😘❤
.
আর দেখলাম না। চট করে ফোনের ওয়াইফাই ডিসকানেক্ট করে বের হয়ে আসলাম।
প্রথমে রাগ লাগলেও লাস্ট কমেন্টটা দেখে এখন ভীষণ হাসি পাচ্ছে আমার।
হায় আল্লাহ! শি নিড বোথ! আমার ভোলাভালা ভাইটার সাথে আমার এক্সিডেন্টলি বর দুটোকেই নিতে চায়। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ফেলেছে মেয়েগুলো। কমেন্টে ডিরেক্টলি প্রপোজ, হাউ ফানি!
.
আমি পেট চেপে হাসছিলাম সেই মুহূর্তেই দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। আমি ফোনটা বালিশের পাশে রেখে ভাইয়া এসেছে ভেবে “আয়” বলে উঠে দাঁড়ালাম। ছেড়ে দেওয়া চুলগুলো আয়নার সামনে গিয়ে বাধতে লাগলাম।
ওমনি দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো ৩ জোড়া পা।
আমি পা গুলোকে আড় চোখে লক্ষ্য করে ততক্ষণাৎ পেছন ফিরে তাকালাম।
সাথেসাথেই আমার চোখ রসগোল্লার আকার ধারণ করলো। নিত্য আপুর হাতে থাকা বোলে ফ্রুটস, অগ্নি ভাইয়ার হাতে থাকা প্লেটে অল্প পরিমাণে ভাত তার সাথে মিক্স ভেজিটেবলস! আর রুশো ভাইয়ার হাতে পানির গ্লাস। সব মিলিয়ে যা বুঝলাম, আমায় খুন করার পুরোপুরি প্লানিং করে এসেছে তারা!
.
আমি ভয়ে দুই ধাপ পেছনে ফেলে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
—- ভা..ভা..ভাইয়া…! আপু….! এসব কি?
.
সবাই যেনো আমার এমন ভীত হওয়া দেখে এক পৈশাচিক আনন্দ পেলো। রুশো ভাইয়া দাঁত বের করে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো,
—- আমার ছুটকির জন্য ছোট্ট ছোট্ট সারপ্রাইজ!😁
.
অগ্নি ভাইয়া খাবারের প্লেট আমার বেড সাইড টেবিলে রাখতে রাখতে বলে উঠলো,
—- বুঝলি তো অনু, আজকে থেকে তোকে এসবই খেতে হবে। এন্ড শুধু এসবই না আরোও কিছু বাকি আছে।
.
নিত্য আপু ফ্রুটস এর বোলটা টেবিলে রেখে মুচকি হেসে ভাইয়ার কথায় শায় দিলো! এদিকে আমি শুধু এদিকওদিক চোখ বুলিয়ে পালানোর পথ খুঁজে বেরোচ্ছি!
যখন দেখলাম এরা আমায় বেঁধে হলেও এসব খাইয়েই ছাড়বে তখন আর পথ খোলা না পেয়ে এক লাফ মেরে খাটের ওপর উঠে দাঁড়ালাম আমি।
.
রুশো ভাইয়া আমাকে খাটে উঠে এদিক ওদিক লাফাতে দেখে ঠোঁট উল্টে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
—- ছুটকি…! তুই আবার কাবাডি কাবাডি খেলছিস কেনো? ওটা তো ব্রো আর ভাবীর গেইম।
.
রুশো ভাইয়ার এমন অদ্ভুত কথা শুনে নিত্য আপু আর ভাইয়া দুজনেই অবাক হয়ে “মানে?” বলে চেঁচিয়ে উঠলো। রুশো ভাইয়ার এবার হুশ হলো সে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। রুশো ভাইয়া আমতাআমতা করে মাথা চুলকোতে লাগলো।
এই সুযোগ, কারোও দৃষ্টি এখন আর আমার দিকে নেই, এখনই আমাকে মানে মানে কেটে পড়তে হবে।
ভেবেই খাট থেকে নেমে এক দৌড়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলাম আমি।
কিন্তু ভাগ্য আমার এবারেও সহায় হলো না। দরজা দিয়ে বের হতেই একটা লম্বা পিলারের সাথে বারি খেয়ে একটুর জন্যে পড়তে পড়তে বেঁচে গেলাম আমি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো দরজার সামনে পিলার আসলো কোথা থেকে? তা দেখার জন্য আমি মাথা উঠিয়ে উপরে তাকাতেই বড়সড় একটা শক খেলাম।
নীবিড় ভাইয়া কপালে ভাজ ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন আমার দিকে। উনাকে দেখেই আমার বাঁচার সর্বশেষ আশাটাও বিফলে চলে গেলো।
.
অগ্নি ভাইয়া আমাকে পালাতে দেখে নীবিড় ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
—- আরে ওটাকে ধর। নয়তো পুরো বাড়ি ইঁদুরের মতো দৌড়োবে! কিন্তু ধরতে আর পারবোনা।
.
নীবিড় ভাইয়া স্ট্রেইট হয়ে দাঁড়িয়ে ঠোঁটের বাম সাইডে কামড়ে ধরে বলে উঠলেন,
—- আরে বাহ! মানুষ হয়েও ইঁদুরের মতো দৌড়োয়! ইম্প্রেসিভ!
.
বলেই সোজা ঘরের মধ্যে ঢুকতে লাগলেন উনি।
উনি আমার একদম সামনে থাকায় অগত্যা পেছাতে পেছাতে ঘরে ঢুকতে হলো আমায়। উনি ভেতরে ঢুকে নিত্য আপুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

—- নিত্য…ও ফ্রুটস খাবে না ভালো কথা, জুস বানিয়ে আন। আর অগ্নি, তুই খাবারের প্লেটটা আমায় দে। না খেয়ে কোথায় যায় আমিও দেখতে চাই। তোরা নাহয় এখন যা। আমি ডাকলে চলে আসিস।
.
নীবিড় ভাইয়ার কথায় কেউ আর কথা বাড়ালো না। শুধু রুশো ভাইয়া একবার ঠোঁট উল্টে জিজ্ঞেস কর উঠলো,
—- হেই ব্রো..! ওকে খাওয়াতে পারবে তো?
.
নীবিড় ভাইয়া বাঁকা হেসে পকেটে দু হাত গুঁজে বলে উঠলেন,
—- কই শাখ?
.
—- আরে বাহ নীবিড় ব্রো! তুমহে ভি হিন্দি আতি হ্যায়?
.
নীবিড় ভাইয়া হাসলেন। সামনে এগিয়ে এসে রুশো ভাইয়ার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে উঠলেন,
—- দেখতে হবে না কার ব্রো!
.
বিনিময়ে রুশো ভাইয়া লাফিয়ে নীবিড় ভাইয়াকে একটা ঝাপ্পি মেরে আমার গাল টেনে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো। এদিকে অগ্নি ভাইয়া নীবিড় ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

—- বেস্ট ইফ লাক উডবি শালা!
.
বিনিময়ে নীবিড় ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে ভাইয়ার কোমড়ে কাতুকুতু দিয়ে বলে উঠলো,
—- থ্যাংক ইউ পার্মানেন্টলি শালা!
.
ভাইয়া কোমড়ে কাতুকুতু লাগায় লাফাতে লাফাতে মুখ ফুলিয়ে চলে গেলো। পেছনে নিত্য আপু পেটে চেপে ধরে রাখা হাসির বস্তা খুলে হু হা করে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো।
সবাই চলে যেতেই উনি দরজা লাগিয়ে ভিলেনি স্মাইল দিতে দিতে আমার দিকে এগোতে লাগলেন। আর আমি ভয়ে ঢোক গিলতে গিলতে পেছাতে লাগলাম।
পেছাতে পেছাতে একটা সময়ে খাটের সাথে পা বেজে “আম্মুউউ” বলে চিৎকার দিয়েই ধুপ করে বিছানায় পড়ে গেলাম।
আমায় পড়ে যেতে দেখে উনি যেনো বেশ মজা পেলেন। মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বিছানায় এসে বসলেন উনি।
আমি শুয়া থেকে উঠে বসবো তার আগেই আমার দুহাত খাটের সাথে চেপে ধরে আমার উপর ঝুঁকে শীতল গলায় বলে উঠলেন,
.
—– চুপচাপ যা খাওয়ানো হচ্ছে তা খেয়ে নাও। একটা টু শব্দও হলে কিন্তু ফল ভালো হবে না।
.
উনার এমন কার্যকলাপে আমি চোখ বড়বড় করে উনার চোখের দিকে তাকাতেই যেনো হারিয়ে যেতে লাগলাম উনার মাঝে। অদ্ভুত এক গভীরতা রয়েছে উনার চোখে। রয়েছে মাতাল করা এক মায়া। যেথায় তাকালেই আমি ডুব দেই উনার চোখের সেই অতল গহীনে। আমায় এভাবে ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি মুচকি হেসে আমায় ততক্ষণাত ছেড়ে দিয়ে উঠে বসালেন।
.
খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ভাত সবজি দিয়ে অল্প করে মেখে আমার মুখের সামনে তুলে বলে উঠলেন,
—- হা করো!
.
আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়েই কিছু না ভেবে হা করতেই ভাতের লোকমাটা মুখে পুরে দিলেন উনি। হঠাৎ আমার হুশ আসতেই বুঝতে পারলাম আমায় উনি এমন কিছু খাইয়ে দিয়েছেন যা আমি অপছন্দ করি। এক কথায় ভীষণ রকমের অপছন্দ করি।
আমায় খাবার মুখে নিয়ে চুপচাপ গাল ফুলিয়ে থাকতে দেখে উনি ধমকে উঠলেন,
.
—– কি হলো খাও….!
.
উনার ধমক শুনে কেঁপে উঠলাম আমি। তাড়াহুড়ো করে টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে না চিবিয়েই পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেললাম। উনি আমার এমন খাওয়া দেখে রেগেমেগে আবারও ধমকে উঠলেন,
.
—- স্টুপিড! না চিবিয়ে গিলে ফেললে কেনো? খাওয়া শিখো নাই? লাস্ট টাইম আস্ক করছি, সুন্দর ভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে কি না?
নাকি আমি তোমার চাপা ভাঙবো তাই বলো?
.
আমি উনার ধমক শুনেও কোনো রিয়াকশন দিলাম না এবার। কারণ আমার সম্পূর্ণ এটেনশন এখন উনার বলা “চাপা” শব্দের ওপর। যেটার অর্থ আমার অজানা।
তাই বোকার মতো উল্টো প্রশ্ন করে বসলাম,
.
—- আচ্ছা এই “চাপা” টা কি?
.
উনি আমার এমন প্রশ্নে যেনো আহম্মক বনে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও ধমক দিয়ে উঠলেন উনি,
—- শাট আপ! চুপচাপ খাও নাহলে আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।
.
উনার ধমক খেয়ে ভয়ে চুপসে গেলাম আমি। শেষমেশ আর কোনো উপায় না পেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কষ্ট করে একটু একটু করে চিবিয়ে খেতে লাগলাম।
উফফফ…..! পুরো ১৯ টা বছরের রেকর্ড ব্রেক করে দিলেন উনি আমার। যে কাজ আমার পরিবারের কেউ করতে পারলো না, তা আজ উনি করে দেখালেন।
একটু পরই নিত্য আপু দরজায় নক করে বাইরে থেকেই বলে উঠলো,
.
—- আসতে পারি?
.
নীবিড় ভাইয়া কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন,
—- আস্ক করে আসার কি আছে? চলে আয়।
.
নিত্য আপু ভেতরে এসে মুচকি হেসে জুসের গ্লাসটা টেবিলে রেখে দিলো।
—- বাব্বাহ! ভাইয়া তুই আমার ননদটাকে এতো সহজে খাইয়ে দিলি!
.
নীবিড় ভাইয়া ওমনি ভাব নিয়ে বলে উঠলেন,
—- নীবিড় পারেনা এমন কিছুই নেই।
.
নিত্য আপু মুখ বাঁকিয়ে নীবিড় ভাইয়ার নাক টেনে দিলো। এবার আমার ফুলিয়ে রাখা মুখের দিকে চেয়ে বলে উঠলো,
—- অনন্যা! তোমার ভালোর জন্যই এসব খাওয়ানো হচ্ছে পাখি! প্লিজ লক্ষ্মী মেয়ের মতো খেয়ে নাও।
.
বলেই আমার গাল টেনে দিয়ে চলে গেলো আপু।
আমায় ভাত খাওয়ানো হয়ে গেলে জুসের গ্লাস সামনে ধরে নীবিড় ভাইয়া বলে উঠলেন,
—- পুরো গ্লাস ফিনিশ করো ফাস্ট!
.
আমি আবারও অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম উনার দিকে। তাতে উনার বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ হলো না। উনি আগের মতোই চোখমুখ শক্ত করে আবারও আমায় জুসের গ্লাসের দিকে ইশারা করে খেতে বললেন।
আমি নাক মুখ সিটকে এক চুমুক খেয়েই ঠোঁট উল্টে বলে উঠলাম,
.
—- ভাইয়া…..! এটা তো ফ্রুটোর মতো খেতে না। আমি খাবো না।
.
ওমনি উনি ধমক মেরে বলে উঠলেন,
—- হ্যা তো, তোমার তো ওসব কুমড়োর ঝোলই ভালো লাগবে। ম্যাংগোর ফ্লেবারই শুধু দেয় ওরা। ফ্রুটস নাম মাত্রও দেয় না।
পুরোটা খেয়ে নাও নয়তো দুধ গরম দেওয়াই আছে। আজই ওটাও খাইয়ে দেবো।
.
আমি আর কিছু বললাম না দুধ আমার জাত শত্রু তাই আর উপায় না পেয়েই একটা ছন্নছাড়া বেড়ালের মতো লেজ গুটিয়ে জুসের গ্লাস ধীরে ধীরে শেষ করতে লাগলাম।
.
🍁
.
এক সপ্তাহ পর………..

আজ ছেলেপক্ষ আমায় দেখতে এসেছে বলে চুপচাপ ঘোমটা টেনে বসিয়ে রাখা হয়েছে আমায় তাদের সামনে। আমার পাশে আম্মু-আব্বু বসা।
বাম পাশে রুশো ভাইয়া অগ্নি ভাইয়া আর তার পাশে নিত্য আপু। নীবিড় ভাইয়া কিছুটা দূরে চেয়ার টেনে বসে আরাম করে গেমস খেলছেন। আর এদিকে আমার ঘাম ছুটে যাচ্ছে। হায় কি দূর্দিন এলো আমার!
আমার বরের সামনেই পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে আমায়। আর আমার শুধু নামের বর সাদা বিলাইয়ের তাতে কোনো যায়ই আসছেনা।
.
আমি এখনও তাদের কাউকেই দেখিনি। নিত্য আপু আমায় শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে এত্তোবড় ঘোমটা টেনে দিয়ে ধরে ধরে এনেছে।
কিন্তু পাশ থেকে রুশো ভাইয়ার ফিসফিসানো কথায় এটা বেশ বুঝতে পারছি ছেলে হয়তো চশমা পরে এসেছে।
.
—- হেই ব্রো, আমাদের সেকেন্ড দুলাভাই তো দেখি কান্টুস!
.
—- ওই “কান্টুস” আবার কি?
.
—- আরে ব্রো ডাবল ব্যাটারি বোঝোনা? ওই দেখো চোখে ইয়া মোটা ফ্রেমের চশমা। ব্যাটায় এখনই চোখের মাথা খেয়ে ফেলেছে। তাই কানার বদলে একটু স্টাইল করে “কান্টুস” বললাম আরকি।
.
.
.
চলবে…………..💕