প্রেম আমার পর্ব-৪২+৪৩+৪৪

0
8500

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৪২♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
নিজের ভেতরে এক তীব্র পেট ফাটা হাসি দমিয়ে রেখে চুপচাপ খাবার খাওয়াটা যে কতোটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার তা আজ হারে হারে টের পাচ্ছি আমি। হাসির ঠ্যালায় গলা দিয়ে খাবার নামা তো দূর চিবুতেই পারছি না ঠিকমতো। নিত্য আপু আর রাত্রির অবস্থা বর্তমানে ঠিক কিরকম তা দেখার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই আমার। নিজেকেই সামলিয়ে উঠতে পারছিনা আমি আর ওদের দিকে কিভাবে তাকাবো? হয়তো ওদেরও আমার মতোই অবস্থা অথবা তার থেকেও করুন।
.
আমাদের ওপর পাশের পাটিতে গুটিশুটি মেরে ভাইয়ারা মাথা নিচু করে প্যারার চরম সীমায় পৌঁছে ভাতের একটা একটা করে লোকমা মুখে তুলছে। অগ্নি ভাইয়া আগেও মেঝেতে পাটি বিছিয়ে বসে এখানে এসে খেয়েছে তাই খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না ভাইয়ার। কিন্তু বিপত্তি ঘটছে নীবিড় ভাইয়া আর রুশো ভাইয়াকে নিয়ে।
নীবিড় ভাইয়া বসার ধরণটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। একটু পর পর নড়াচড়া করছেন আর বসার ধরণ বদলে চলেছেন। আর এদিকে রুশো ভাইয়া লুঙ্গির সাথে বোধহয় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। রুশো ভাইয়ার বর্তমান ফিলিংস কিছুটা এরকম যে “শালার কাপড় পড়েও ফাঁকা ফাঁকা লাগে! যেই সেই দিক থেকে বাতাস ঢুকে ক্যারে!”
.
আসলে লুঙ্গি পোশাক টাই এরকম। আমার কাছে এটা নিতান্তই রিস্কি একটা পোশাক , যেটা আন্ডি (আন্ডারওয়্যার) ছাড়া পড়লে ৯০% চান্স থাকে পুরো ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাওয়ার। সামান্য কয়েকটা প্যাচ দিয়ে নিলেই পড়া হয়ে যায় আবার যাদের প্যাচ একটু ঢিল অথবা প্যাচ দেওয়াই এক্সাক্টলি হয় না তাদের জন্য এই লুঙ্গি নামক পোশাকটা হার্ট এটাকের কারণ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
যারা এটা সামলাতে পারে তারা তো আমার মতে লিজেন্ড! তবুও এমন অনেক পুরুষই রয়েছে যারা এই লুঙ্গি পরে সারাদিন ফিটফাট হয়ে ঘুরে বেরোলেও ঘুমোনোর সময় লুঙ্গিটার অবস্থান হয় তাদের পায়ের শেষ প্রান্তে! আবার কারো কারো তো শরীর থেকেই হাওয়া হয়ে যায়। 😑
.
🌸
.
—- দিদুন সবটা কি খেতেই হবে? আসলে পেট ভরে গিয়েছে আর খেতে পারছিনা!
.
দিদুন কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো,
—- ঠিক আছে উঠো!
.
দিদুনের সম্মতি পেতেই খুশিতে চোখ চিকচিক করে উঠলো আমার। খুশি মনে প্লেট সরিয়ে রেখে উঠতে নিলেই নিত্য আপু আর রাত্রি করুন চোখে তাকালো আমার দিকে। যার অর্থ “আমাদের একা ফেলে যাইস না রে বইন! আমাদেরও নিয়ে যা, যেথায় দু চোখ যায় তাও প্লিজ এইখান থেকে নিয়ে যা! ”
ওদের অবস্থা বুঝতে পেরে আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ভয়ে ভয়ে দিদুনকে বললাম,
.
—- দিদুন, আপু আর রাত্রিও আর খেতে পারছে না! ওরাও উঠুক প্লিজ!
.
দিদুন তার কুঁচকে যাওয়া কপালটা আরোও দ্বিগুণ কুচকে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
—- খাবার অপচয় আমি পছন্দ করি না। মাসুম…..মামুন….লালু ভলু কে বেঁচে যাওয়া খাবার গুলো দিয়ে আয় তো।
.
দিদুনের কথা শেষ হতেই নিত্য আপু আর রাত্রি লাফ মেরে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো৷ দিদুনের দিকে সৌজন্যের হাসি হেসে দুজনেই মাথা নিচু করে বললো “ধন্যবাদ দিদুন!”
.
আমি নিত্য আপু আর রাত্রি হাত ধুয়ে তৎক্ষণাত ঘরে ঢুকে দরজার ছিটকানি লাগিয়ে দিলাম।
একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে তিনজন তিনজনের দিকে একপলক তাকিয়েই পর মুহূর্তে হু হা করে ঘর কাঁপিয়ে হাসতে শুরু করে দিলাম। হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খাওয়া শুরু করলাম আমি।
.
—- সিরিয়াসলি লুঙ্গি! কি ছিলো ওসব?
.
হাসতে হাসতে নিত্য আপু বলে উঠলো।
আমি আর রাত্রি হাসতে হাসতেই জবাব দিলাম “বিনোদন!” বলেই আবারও হাসতে লাগলাম তিনজন মিলে।
ইশশ কতোক্ষণব্যাপী যে হাসিগুলো পেটে চেপে রেখেছিলাম। ভাগ্যিস লালু ভলু ছিলো। (পালিত গরু) নয়তো পুরো খাবার শেষ করেই উঠতে হতো। কিন্তু তার আগেই যা হওয়ার তাই হয়ে যেতো। আমি হাসির সাথে যুদ্ধে নির্মমভাবে পরাজিত হয়ে ফেটে পড়তাম আর তারপর যা হতো তা শুধুই ইতিহাস মাত্র। সেসব কল্পনাও করতে চাইনা আমি কোনোমতেই।
.
🍂
.
—- হেই গাইস, দ্যটস নট ফ্যায়ার ইয়ার! দেখলি তোরা ওরা কিভাবে আমাদের মজা নিলো! নিশ্চয় এতোক্ষণ ঘরে গিয়ে হাসির বন্যা বইয়ে দিয়েছে।
.
—- এক্সাক্টলি তাই ব্রো! এটা জাস্ট নাইনসাফি।
.
নীবিড় পায়েচারী থামিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাম সাইডের ঠোঁট কামড়ে বলে উঠলো,
—- আগে এই লুঙ্গি সামলাই তারপর নাহয় দেখা যাবে! টেনশন নট। আপনা টাইম আয়েগা।
.
—- বাট এখন কি করবো? ফিলিং টু মাচ বোরিং ব্রোস।
.
—- হেই শুন! এখন তো রাত। রাতে তো দিদুন আবার বেরোতে দেবে না। দিনের বেলায় নাহয় বেরোবো। স্কুল পার করে ক্লাবের ওদিকটায় যাবো নি ভালো লাগবে তোদের।
.
রুশো মুখ কালো করে ঠোঁট উল্টে বললো,
—- তো রাতে কি করবো? ওয়াইফাই নাই, নেটওয়ার্ক ও স্লো। আমার 4G সিম 2G স্পিডে চলছে। তখন টিউটোরিয়াল তো বহু কষ্টে একটু দেখেছিলাম তাও আটকে আটকে যাচ্ছিলো৷ নাও হোয়াট টু ডু ?
.
নীবিড় আর অগ্নি দুজনেই কিছুক্ষণ গালে হাত দিয়ে ভাবার ভান করে পর মুহুর্তে দুজন দুজনের দিকে এক পলক চেয়েই একসাথে ঠোঁট উল্টে কাধ উঁচু করলো।
যার অর্থ এই যে, বর্তামনে তাদেরও এই সম্পর্কে জ্ঞানের ভান্ডার শূণ্য! রুশো আবারও হতাশ হয়ে ধপ করে গাল ফুলিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।
কিছুক্ষণ গাল ফুলিয়ে নিজের পড়নের লুঙ্গির দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে হঠাৎ এক লাফ মেরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো রুশো। একসাথে ৩২ পাটি দাঁত কেলিয়ে ভ্রু নাচিয়ে সে বললো,
.
—- হেই ব্রো, আই হ্যাভ এন ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া! এই লুঙ্গিই আমাদের বিপদে ফেলেছে এন্ড নাও এই লুঙ্গিই আমাদের বোরিংনেস দূর করবে।
.
অগ্নি আর নীবিড় রুশোর এমন আইডিয়ায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অবাক হয়ে একসাথে জিজ্ঞেস করলো “কিভাবে?”
ওমনি রুশো আরাম করে বিছানায় আরাম করে বসতে বসতে বলে উঠলো,
.
—- দেখো ব্রো! বোরিংনেস থেকে মুক্তি পাওয়ার ওনলি ওয়ান ওয়ে হলো ড্যান্স! আর যেহেতু লুঙ্গি আছে তাই ড্যান্সের সাথে এড হয়ে, হয়ে যাবে লুঙ্গি ড্যান্স!
সাথে আমার ফোনে শাহরুখ খান আর দীপিকা “পাদুকোন…” উপপসস সরি আই মিন পাড়ুকোনের লুঙ্গি ড্যান্স সং তো আছেই। তো হয়ে গেলো না নাইট ঝাকানাক? 😎
.
অগ্নি আর নীবিড় নিজেদের লুঙ্গির দিকে এক পলক চেয়ে পর মুহূর্তে বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে “সাব্বাস ব্যাট্টা!” বলে বিছনায় বসতে বসতে রুশোর কাধে গিয়ে দুজনে হাত রাখলো।
.
🍁
.
(রাত ১০ টা বেজে ১২ মিনিট)

Mucho ko thora round ghumake,
Andha ke jaisa chashma lagake,
Coconut mein lacchi milake,
Ajao sare mood banake……!
.
—- এই রাত্রি তুই কি কিছু শুনতে পাচ্ছিস? ওই উঠ!
.
রাত্রি চোখ বন্ধ রেখেই খানিকটা বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
—- কি শুনবো? বিরক্ত করিস না, ঘুমোতে দে প্লিজ! তুই তো পুরো রাস্তা ঘুমিয়েছিস!
.
বলে আবারও হা করে ঘুমোতে লাগলো রাত্রি! উফফ…..! আমি তো ৪ ঘন্টা ঘুমিয়েছি৷ আমার তো ঘুমও আসবে না এখন। কিন্তু কিসের আওয়াজ আসছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না। স্পষ্ট শুনাও যাচ্ছে না।
কিন্তু কিছু তো একটা গন্ডগোল ঘটছেই। আর ঠিক কি হচ্ছে সেটার রহস্য উদঘাটন না করা অবদি আমার শান্তিও হবে না। যদি ভূতও বের হয় তাও আমি এই আওয়াজের রহস্য উদঘাটন করেই ছাড়বো।
তাই রাত্রিকে ছেড়ে নিত্য আপুকে ডাকতে লাগলাম। টানা ৪ ঘন্টার জার্নি করে সবাই ক্লান্ত তাই খুব তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়েছে। তাছাড়া গ্রাম এলাকা। এখানকার মানুষ ৯ টার আগেই ঘুমিয়ে পরে আবার ঘুম থেকে ওঠে ভোর ৪ টা অথবা সাড়ে ৪ টায়।
.
—- নিত্য আপু…..! উঠো….! আপুউ…!
.
নিত্য আপুকে জাগাতে বেশি বেগ পেতে হলো না। একবার ডাকেই আপু ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। নিজের বাম চোখ বা হাত দিয়ে ডলতে ডলতে আমাকে উদ্দেশ্য করে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে আপু বলে উঠলো,
.
—- কি হয়েছে অনন্যা? ঘুমোও নি এখনোও? ওয়াশরুমে যাবা? চলো নিয়ে যাচ্ছি।
.
বলেই আপু আমার হাত ধরে বিছানা থেকে নামতে নিলেই আমি আপুকে আটকিয়ে বিস্ময়ে বলে উঠলাম,
—- বাথরুমে যাবো না আপু!
আচ্ছা তুমি কি কোনো আওয়াজ শুনতে পাচ্ছো? আমার মনে হয় আওয়াজ টা পাশের ঘর থেকে আসছে। মনে হচ্ছে ভূতেরা রাতের বেলায় লাফালাফি করছে।
.
নিত্য আপু আমার কথায় চোখ বড়বড় করে কান খাড়া করলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আওয়াজটা শুনার চেষ্টা করে আপু বলে উঠলো,
.
—- ভাইয়াদের রুম থেকে সাউন্ড টা আসছে! আই থিংক কোনো ভূত টুত না বরং ওরাই কিছু ঘুটুরমুটুর করছে। চলো গিয়ে দেখে আসি।
.
আমি নিত্য আপু কথা চট করে দাঁড়িয়ে গেলাম। রাত্রির দিকে এক পলক চেয়ে ওকে উঠানোর সর্বত্তোম উপায় অবলম্বন করার জন্য জোড়ে একটা চিমটি বসিয়ে দিলাম রাত্রির পায়ে। রাত্রি ব্যাথায় কুঁকরে উঠে লাফ মেরে শুয়া থেকে উঠে বসে পড়লো। আমার দিকে রাগান্বিত লুক নিক্ষেপ করে রাত্রি বললো,
.
—- ওই তোর কি ক্ষতি করেছি আমি বলতো? একটু শান্তিমতো ঘুমোতে দিস না কেনো….
.
বলতে বলতে রাত্রি নিজেই থেমে গিয়ে কান খাড়া করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে উঠলো,
—- হচ্ছে টা কি? এই দুমদাম আওয়াজ কিসের?
.
—- আরে সেটার রহস্যই তো উদঘাটন করতে যাচ্ছি। উঠ তাড়াতাড়ি।
.
রাত্রি আর কথা না বাডিয়ে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।
এরপর আমরা তিন ডিটেকটিভ পা টিপেটিপে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লাম সেই ধুমধাম আওয়াজের উৎসের পানে।
.
🌹
.
All the Rajni fan…..
Don’t miss the chance…..(!!)
LUNGI DANCE LUNGI DANCE LUNDI DANCE LUNGI DANCE….(!!!!)
.
ভাইয়াদের ঘরের কাঠের দরজায় ফাঁকে চোখ লাগাতেই আমার চোখ ছানাবাড়া!
আমি কয়েক সেকেন্ড ওভাবে থেকেই চোখ সরিয়ে নিলাম। আমার মুখ এখনোও হা হয়ে আছে! নিত্য আপু আর রাত্রি আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে যে কি দেখলাম, এভাবে হা করে আছি কেনো! কিন্তু আমি তাদের কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারছিনা। কি করে বলবো ওদের যে আমি কি দেখলাম!
আমি নিজেই এখনো শকড! কথাই বের হচ্ছেনা মুখ থেকে আমার।
.
আমার থেকে কোনো উত্তর না পাওয়ায় গাল ফুলিয়ে নিজেই দরজার ফাঁকে চোখ লাগিয়ে দিলো রাত্রি! কয়েক সেকেন্ডে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাত্রিও আমার মতো চোখ সরিয়ে সোজা হয়ে হা করে দাঁড়িয়ে পড়লো।
নিত্য আপু রাত্রিকে ঝাকিয়ে প্রশ্ন করায় রাত্রি আঙুল এর ইশারায় বললো নিজেকেই দেখে নিতে।
শেষমেশ নিত্য আপুও বাধ্য হয়ে ডান চোখ বন্ধ করে বাম চোখ ছোট করে দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভেতরে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো!
খানিক বাদে আপুও চোখ সরিয়ে আমাদের সাথে হা করে সটানভাবে দাঁড়িয়ে পড়লো।
.
এভাবে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করে আমরা একে ওপরের হা করা মুখ থুতনিতে ধরে উঁচু করে বন্ধ করে দিলাম।
একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তিনজন একসাথেই জিজ্ঞেস করলাম,
.
—- আমি যা দেখেছি, তোমরাও কি তাই দেখেছো?
.
বিনিময়ে তিনজনই চোখের ইশারায় সম্মতি জানিয়ে মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম।
বর্তমানে আমাদের অবস্থা কিছুটা এরকম “না পারছি হাসতে আর না পারছি চেপে রাখতে!”
এক কথায় ভীষণ নাজেহাল অবস্থা আমাদের।
.
ভাইয়াদের ঘরে লুঙ্গি ড্যান্স গান বাজছে। অগ্নি ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া চোখে সানগ্লাস, গায়ে শুধু গেঞ্জি আর লুঙ্গি।
দুজনেই গানের সাথে তাল মিলিয়ে উড়াধুরা লুঙ্গি হাটু পর্যন্ত উঠিয়ে ধরে নাচছে কম লাফাচ্ছে বেশি। আর রুশো ভাইয়া?
হাহ! ভাইয়া তো খাটের ওপর উঠে লুঙ্গি খুলে হাতে ধরে ঘুরিয়ে চলেছে সাথে ধুমধাম লাফিয়ে চলেছে। রুশো ভাইয়ার পড়নে শুধু গেঞ্জি আর আন্ডারওয়্যার!🙈
যেহেতু পড়নের লুঙ্গিটা বর্তমানে ভাইয়ার হাতে ঘুর্ণায়মান। হায়রে এর নামই কি তবে লুঙ্গি ড্যান্স!
.
নাহ! আর পারলাম না আমরা। যেখানে নিত্য আপুর মতো পরিস্থিতি বুঝে রিয়াক্ট করা মানুষও হাসি কন্ট্রোল করতে পারছে না সেখানে আমি আর রাত্রি নিতান্তই তুচ্ছ মাত্র!
হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে ভাইয়াদের ঘরের দরজার সামনে ধপ করে বসে পড়লাম আমরা! মুখ হাত দিয়ে যথাসম্ভব চেপে ধরে রয়েছি যাতে হাসির আওয়াজে কারোও ঘুম না ভেঙে যায় আর আমাদের ওপর ঠাডা না পরে!
আমি ভাবছি সাদা বিলাইয়ের কথা! অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া যদিও এরকম টা করতে পারে তাই বলে উনিও? উনার মতো এতো গম্ভীর মানুষ এভাবে লুঙ্গি ধরে উড়াধুরা নাচছে ভাবা যায়?
.
গান শেষ হতেই ভাইয়ারা হকচকিয়ে উঠলো। কারণ দরজার বাইরে থেকে আমাদের চাপা হাসির শব্দ গান বন্ধ হওয়ার পর বেশ ভালো করেই শুনা যাচ্ছে। এতোক্ষণ গান চলাকালীন সাথে এমন উটপটাং নাচের ধারামধুরুম আওয়াজে আমাদের হাসির আওয়াজ কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে নি তাদের।
রুশো ভাইয়া তৎক্ষণাৎ লুঙ্গি পরে গায়ে টি-শার্ট ঢুকিয়ে নিলো। এদিকে অগ্নি ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া সানগ্লাস খুলে গায়ে টি-শার্ট পরে নিয়ে ফট করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো।
.
—- অ…অনন্যা…..! তোরা এ..এ…এখানে কি করছিস? আর এভাবে পাগলের মতো গড়াগড়ি খাচ্ছিস কেনো?
.
—- নিত্য তোরা ঘুমোস নি এখনো? যা ঘরে যা! আমাদের দরজার সামনে কি করছিস?
.
ভাইয়াদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারলাম না আমরা। বরং আগের থেকেও হাসির বেগ আরোও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিলাম।
এদিকে রুশো ভাইয়া লজ্জায় লাল হয়ে অগ্নি ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়ার পেছনে মুখ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুশো ভাইয়ার মতে যদি আমরা কেউ কিছু দেখে থাকি তবে সবথেকে বেশি ইজ্জতের ফালুদা হবে তারই।
আমাদের আরোও হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়তে দেখে অগ্নি ভাইয়া আমাকে আর নিত্য আপুকে টেনে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে রুশো ভাইয়াকে ইশারা করলো রাত্রিকে তোলার জন্য।
রুশো ভাইয়া নিজের শুকনো মুখটা আরোও বেশি শুকনো করে রাত্রিকে টেনে উঠিয়ে দাঁড় করালো।
কিন্তু আমার হাসি আরও বাড়ছে বৈ কমছে না৷ হাসতে হাসতে নীবিড় ভাইয়ার গায়ে ঢলে পড়তে লাগলাম আমি। উনি তৎক্ষনাৎ আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আটকিয়ে নিলেন নিজের বাহুডোরে।
.
নিত্য আপু খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে উঠলো,
—- আমরা কিছু দেখিনি কিন্তু…!
.
বলে আবারও ফিক করে হেসে ফেললো নিত্য আপু। আপুর এই কথাটার মানে ভাইয়ারা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরে গেলো। কথাটার অর্থ সামহাউ “ঠাকুর ঘরে কে?
আমি তো কলা খাইনি টাইপ!” রুশো ভাইয়া লজ্জায় পুরো টমেটো হয়ে মুখ দুহাতে চেপে মিনমিন করে বললো,
.
—- প্লিজ এখন এটা বলিও না যে তোমরা গানের মাঝামাঝি সময়ে এসেছো!
.
রাত্রি ফিক করে হেসে দিয়ে হাত উঠিয়ে বললো,
—- আচ্ছা বলবো না কিন্তু এটাই সত্যি!
.
রাত্রি কথা শুনে রুশো ভাইয়া মুখ ঢেকেই “ওহ নোউউ…!” বলে উল্টো দিকে ফিরে এক ছুটে ঘরে ঢুকে হাওয়া হয়ে গেলো। এদিকে নীবিড় ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়াও পালাতে চাইছে কিন্তু আমাকে এমন হাস্যকর রোগে আক্রান্ত অবস্থায় একলা ফেলে যেতেও পারছেনা!
আমারই বা কি করার আছে? বারবার চোখের সামনে সেই সিনটাই ভেসে উঠছে! হাসি থামানো একদম দায় হয়ে গেছে আমার। নীবিড় ভাইয়া পরিস্থিতি বুঝে কি করবে ভেবে না পেয়ে শেষমেশ আমায় কোলে তুলে নিয়ে আমাদের ঘরের দিকে হাটা ধরলেন। আমাদের পেছন পেছন বাকি সবাইও হাটা ধরলো। নিত্য আপু আর রাত্রি এখনো ঠোঁট চেপে হাসছে, অগ্নি ভাইয়া ধমক দিতেই চুপ করে গিয়ে পর মুহূর্তে আবারও হেসে উঠছে।
.
নীবিড় ভাইয়া আমায় ঘরে নিয়ে এসে শুইয়ে দিয়ে বাকিদের বললেন ” একটু বাইরে থাক তো তোরা! জাস্ট টু মিনিটস!” বলেই ঠাস করে দরজা লাগিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি এখনো উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে হেসে চলেছি।
.
উনি এগোতে এগোতে একদম আমার কাছে এসে ঝুঁকে পড়তেই আমি চুপ করে গেলাম। অন্ধকার ঘরে চাঁদের আলোর প্রবেশে ঘরটা অনেকটাই আলোকিত হয়ে রয়েছে। জানালা থেকে আসা আলোগুলো সোজা এসে পড়ছে উনার মুখে।
কি মারাত্মক মায়াবী লাগছে উনাকে এই চাঁদের আলোয়! আমার চোখ যেনো উনাতেই আটকে গিয়েছে। এতোক্ষণ হেসে গড়াগড়ি খাওয়ায় উনাকে এভাবে এতোটা কাছ থেকে লক্ষ্যই করি নি আমি। উনি আরোও একটু ঝুকে একেবারে আমার ঠোঁটের কাছে নিজের মুখ নিয়ে এসে শীতল কণ্ঠে বলে উঠলেন,
.
—- কি হলো? এখন হাসছো না কেনো?
.
উনার এমন শীতল কন্ঠে পুরো শরীর জুড়ে এক অজানা শিহরণ বয়ে গেলো আমার। শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রমান্বয়ে ঘোড়ার বেগে ছুটতে শুরু দিলো আমার।
আমি ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিতেই উনি মুচকি হেসে আমার নাকে সাথে নিজের নাকে ডগা স্পর্শ করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন।
আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবারও বলে উঠলেন,
.
—- জানি না কি দেখেছো বা কিভাবে দেখেছো বাট যাই দেখোনা কেনো ভুলে যাও!
.
বলেই দরজার ছিটকানি খুলে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে গেলেন। আর আমি এখনো বোকার মতো চেয়ে রয়েছি উনার যাওয়ার দিকে।
.
চলবে………….💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৪৩♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
—- আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া………!
আম্মু, আব্বুউউউ, ভূত……! ভূতে হিশু করে দিয়েছে আমার ওপর…….!
.
গায়ে পানি পড়ায় একলাফ মেরে চেঁচিয়ে এসব বলতে বলতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো অগ্নি ভাইয়া!
আর প্রতিবারের মতোই ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠতে যেয়ে উদ্ভট সব বাক্য উচ্চারণ করে বসলো ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে। আমার পেছনে নীবিড় ভাইয়া মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।
উনার পাশেই রুশো ভাইয়া টেনশনের চোটে এতোক্ষণ দাঁত গুলোকে আবারও নেইম কাটার বানিয়ে কুটকুট করে নখ কেটে যাচ্ছিলো। কিন্তু অগ্নি ভাইয়ার মুখে এমন অদ্ভুত বাক্য শুনে টেনশন ফেলে ফিক করে হেসে ফেললো রুশো ভাইয়া।
.
গত ১৫ মিনিটের মতো সময় ধরে দিদুনের আদেশ মতো অগ্নি ভাইয়াকে ডেকেছি আমি। কিন্তু কোনোকিছুতেই কোনো লাভ হয় নি বরং ডাকতে ডাকতে আমার গলা ব্যথা হয়ে গিয়েছে। আমরা মেয়েরা তো ভোরের দিকেই উঠে গিয়েছি। যেহেতু নিত্য আপু আর নীবিড় ভাইয়া সচরাচর ভোর বেলায়ই ঘুম থেকে উঠেন সেই হিসেবে আপু উঠে আমাকে আর রাত্রিকে ডেকে তুলে দিয়েছে। এদিকে নীবিড় ভাইয়া রুশো ভাইয়াকে ঘুম থেকে উঠাতে পারলেও আমার এই ঘুম কাতুরে ভাইকে শত চেষ্টা করেও উঠাতে পারেন নি।
দিদুন ৬ টার দিকে ভাইয়াদের ঘরে এসে অগ্নি ভাইয়াকে এখনো ঘুমোতে দেখে আমায় ডেকে পাঠিয়েছেন। অবশেষে আমিও যখন ভাইয়াকে উঠাতে ব্যর্থ হলাম ঠিক সেই মুহূর্তে দিদুন আমার হাতে এক মগ পানি ধরিয়ে দিয়ে বললেন ভাইয়ার মুখে ছুড়ে মারতে। প্রথমে না করতে চেয়েও দিদুনের কড়া গলার নির্দেশ শুনে অগত্যাই ভাইয়ার মুখে পানি মারতে হলো আমার।
.
অগ্নি ভাইয়া চোখ ভালো করে ডলে নিয়ে মগ হাতে আমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দিলো এক ধমক,
—- ওই পেত্নী, শাঁকচুন্নি! পানি মারলি কেন গায়ে? আমার কতো সাধের ঘুমটা ভাঙ্গালি!৷ আহা কি স্বপ্নটাই না দেখছিলাম। আমি আর নি….
.
আর কিছু বলার আগেই আমি নিঃশব্দে চোখ-মুখের ইশারায় ভাইয়াকে আড়চোখে দিদুনকে দেখিয়ে চুপ করতে বলায় ভাইয়া তৎক্ষনাৎ দুহাতে ঠোঁট চেপে ধরলো।
দিদুন আমাদের থেকে খানিকটা দূরে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। অগ্নি ভাইয়াকে উঠে বসে এসব অদ্ভুতুড়ে কথা বলতে দেখে দিদুন নিজের কুঁচকে যাওয়া কপাল আরোও খানিকটা কুঁচকিয়ে বলে উঠলেন,
.
—- এসব কি অগ্নি? এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমোও কেনো? বাকিরা তো ঠিকই উঠে গেছে। তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নিচে এসো সবাই।
.
অগ্নি ভাইয়া আমতাআমতা করে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে উঠলো,
—- সরি দিদুন! আর হবে না এমন। তুমি যাও, আসছি আমরা!
.
দিদুন আর কিছু বললেন না। ধীর পায়ে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে।
দিদুন চলে যেতে রুশো ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া হাসতে হাসতে অগ্নি ভাইয়ার পাশে বসে পড়লেন।
.
—- সিরিয়াসলি অগ্নি! ভূত তোর ওপর হিশু করে দিয়েছে? বাহ কি টয়লেট ভূতের!😂
.
—- ব্রো, ভূতেদের আবার হিশু, পটি এসবও হয় নাকি? আমি তো জানতাম না। 😅
.
ওদের কথা শুনে আমি ঠোঁট চেপে হাসতে লাগলাম। অগ্নি ভাইয়ার এরকম আচমকা ঘুম থেকে উঠার কারণে বলা উদ্ভট সব বাক্য গুলোর সাথে আমি পূর্ব পরিচিত হলেও নীবিড় ভাইয়া পরিচিত নন। তাই একটু বেশিই মজা নিচ্ছেন উনি!
.
—- ভাইয়া, এইবার কিন্তু আমি ইচ্ছে করে পানি মাড়ি নি। দিদুনের আদেশে বাধ্য হয়েই মেড়েছি! তাই তোর বকা গুলো ফেরত নে। পেত্না, শাঁকচুন্না!
.
অগ্নি ভাইয়া আমার কথায় চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো,
—- পেত্নি অার শাঁকচুন্নির কোনো মেল ফর্ম নেই, ডাফার।
.
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কপালের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো মুখ বাকিয়ে ফুঁ দিয়ে সরিয়ে বলে উঠলাম,
—- সো হোয়াট? না থাকলে নাই। আমি বানিয়ে নিলাম।
.
আমার কথায় রুশো ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া আগের থেকে আরো উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। এদিকে অগ্নি ভাইয়া রেগে বোম্ব হয়ে “তবে রে…!” বলে তাড়া করতেই আমি হাসতে হাসতে এক ছুটে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।
হাহ! যা করে করুক ভাই! আমি আগে পালাই বাবা!
.
🍂
.
ভাজ্ঞিস আমরা বুদ্ধি খাটিয়ে পেস্ট আর ব্রাশ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলাম। নয়তো আর সবার মতো নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজতে হতো আমাদের।
.
বাড়ির নিয়ম সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ২০ মিনিট হাটাচলা করা। সেই সুবাদেই বাড়ির পাশের রাস্তাটায় হাটছি আমি নিত্য আপু আর রাত্রি।
ভাইয়ারা সবাই উল্টো দিকে হেটে গিয়েছে। ওদিকটায় গ্রামের একটা ক্লাব আছে। আর তার পাশেই আছে একটা পুকুর। ওদিকে পরিবেশটা অনেক সুন্দর কিন্তু আমি যাচ্ছি না অন্য একটা কারণে আর সেই কারণটা হলো “ভুট্টু!” ভুট্টু কোনো মানুষের নাম নয় এটা হলো সৈকত কাকুদের পোষা কুকুরের নাম। ওটাকে দেখলেই আমার ছোট বেলার কুকুরের তাড়া খাওয়ার সিনটা মনে পড়ে যায় যার ফলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে দেই এক দৌড়। তবে বিপদে আমি কখনোই পড়িনি। বিপদে তো পড়ে আমার পেছনে থাকা মানুষজন। ঠিক যেমনটা পড়েছিলো সাদা বিলাই। কুকুরটা আমায় ধরতে না পেরে উনাকে তাড়া করেছিলো। এখনো সাদা বিলাইয়ের পেছনে ওই কুকুরটার দৌড়ানোর দৃশ্য মনে পড়লেই পেট ফেটে হাসি বের হয় আমার।
.
—- কিরে হাসছিস কেনো?
.
রাত্রির প্রশ্নে ভাবনা জগৎ থেকে বেড়িয়ে এলাম আমি। নিজেই নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে বলে উঠলাম,
.
—- এমনি রে! একটা সিন মনে পড়ায়!
.
—- কালকের লুঙ্গি ড্যান্সের? (হাসতে হাসতে বললো রাত্রি)
.
—- আরে না না! ঐ যে তোর মনে নেই ভার্সিটির তৃতীয় দিনে নীবিড় ভাইয়াকে কুত্তার দৌড়ানি খাইয়েছিলাম?
.
আমার কথায় রাত্রি কিছুক্ষণ চুপ থেকে মনে করার চেষ্টা করে পর মুহুর্তে হু হা করে হাসতে শুরু করে দিলো!
.
—- সিরিয়াসলি অনন্যা, তুই একটা জিনিস! হায়রে নীবিড় ভাইয়াকে কিভাবে না কুকুরের তাড়াটা খাওয়ালি! বেচারা দুলাভাই!
.
উনাকে দুলাভাই বলায় আমি মুখ বাকিয়ে রাত্রির পেটে গুঁতে মেরে দিলাম। নিত্য আপু আমাদের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
—- এই অনন্যা, তোমাদের দাদুবাড়িতে চা খায় তো সবাই?
.
আমি গালে হাত দিয়ে একটু ভেবে বললাম,
—- শুধু মামুন ভাইয়া, মাসুম ভাইয়া আর চাচিমনি খায়! কেনো?
.
নিত্য আপু ঠোঁট উল্টে বললো,
—- আর বলো না, সকাল সকাল উঠে গরম গরম চা না খেলে আমার কিছু হজম হতে চায় না৷
.
আপুর কথায় হাল্কা হেসে বললাম,
—- চলো তবে, কেউ চা বানিয়েছে কিনা দেখি। নাহলে বানিয়ে নিতে হবে।
.
🌹
.
—- আচ্ছা মামুন, এগুলো কি ফুল? (নীবিড়)
.
মামুন পাশের ঝোপে ফোটা ফুলগুলোর দিকে এক নজর চেয়েই বলতে শুরু করলো,
—- ও এগুলোকে ধুতুরা ফুল বলে। রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত স্থানে জন্মায় এই অবহেলিত ধুতুরা ফুল। এই গাছ সাধারণত বিষাক্ত হিসেবে পরিচিত হলেও আয়ুর্বেদ ও ভেষজ চিকিৎসায় এই গাছের পাতা, ফুল, মূল ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ধুতুরার বীজ থেকে চেতনানাশক পদার্থ তৈরি করা হয়। তাছাড়া কুকুরের কামড়ের বিষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ধুতুরা গাছের মুলের রস পান করানোর বিধান আছে।
.
—- আচ্ছা? তাহলে তো বলা যায় বিষও কোনো না কোনো ভাবে উপকারী!
.
মামুন হাসলো। আর একটু এগোতেই সামনে পড়লো “ভুট্টু!” রুশোও অনন্যার মতো কুকুরে ভীষণ ভয় পায় তাই মামুন স্থির থাকতে বলবে তার আগেই “ওহ নোউ কুত্তা!” বলেই ছিড়ে ছুটকে উল্টো দিকে ঘুরে দৌড় লাগালো রুশো!
রুশোকে দৌড়োতে দেখে নীবিড়ের আবারও ভার্সিটির ওই বডিবিল্ডার কুকুরের দৌড়ানির কথা মনে পড়তেই “আবে ভাগ পাগলা!” বলে নিজেও দৌড় লাগালো। ততক্ষণে ভুট্টুও ওদের পেছনে “ভাউউউ” “ভাউউউ!” করতে করতে দৌড়ানো শুরু করে দিয়েছে।
এবার অগ্নি আর মামুন একে ওপরের দিকে তাকিয়ে “চাচা আপন প্রাণ বাঁচা!” বলেই নিজেরাও ছুট লাগালো বাড়ির উদ্দেশ্যে!
.
🌺
.

বাড়িতে ফিরতেই চোখ গেলো বড় চাচির দিকে। বড় চাচি চাল বাছছেন! পাশে বসে আছে চাচিমনি! চাচিমনি পিরায় বসে রুটি বেলছেন। আর সেই বেলা রুটিগুলো নির্দিধায় মাটির উনুনের ওপর বসানো তাওয়াতে ভাজছে আম্মু! আম্মুর পাশের উনুনে আলুর ডাল রান্না করছে জুঁই ভাবী ওরফে মাসুম ভাইয়ার ওয়াইফ! ৩ বছর হলো বিয়ে করেছেন মাসুম ভাইয়া!
মাসুম ভাইয়া বড় চাচির ছেলে। উনারা ৩ ভাই বোন। মাসুম ভাইয়ার ছোট আরোও দু বোন ছিলো তবে ওদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে শ্বশুর বাড়িতে থাকে।
আর চাচিমনির একমাত্র ছেলে হলো মামুন ভাইয়া। উনি মার্স্টার্স শেষ করেছেন তবে শহরে চাকুরির সন্ধানে যান নি। বাড়ির ব্যবসা তেই হাত লাগিয়েছেন। কারণ চাচ্চুদের বয়স হয়ে যাচ্ছে, শুধু মাসুম ভাইয়ার ওপর সব চাপ তো আর রাখা যায় না তাই মামুন ভাইয়াও মাসুম ভাইয়ার সাথে ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। মৎস ব্যবসায় ইনকামও বেশ ভালোই হয়। তবুও দিদুনের কথামতো কেউই প্রয়োজন ছাড়া কোনো খরচ করে না। খুব সাধারণ ভাবেই চলাফেরা করে সবাই।
.
চায়ের কথা মনে পড়তেই আমি পা টিপেটিপে আম্মুর পাশে গিয়ে কানে ফিসফিস করে বললাম,
—- আম্মু চা হবে?
.
আম্মু আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আস্তে করে বললো,
—- তুই আবার চা খাওয়া শুরু করলি কবে? গলা ব্যথা করছে নাকি?
.
—- আরে না না আম্মু! আসলে নিত্য আপু প্রতিদিন সকালে চা খায় তুমি তো জানো! তাই বলছিলাম আর কি!
.
—- ওমা তাইতো? ভুলেই গিয়েছিলাম, আচ্ছা তুই যা। রুটি ভাজা হয়ে গেলে চা বসাচ্ছি!
.
আমি মাথা নাড়িয়ে খুশি মনে আপুর পাশে এসে দাঁড়াতেই পেছন থেকে দিদুনের গলা পেয়ে উল্টো দিকে ঘুরে তাকালাম। দিদুন নিজের চোখে লাগানো চশমাটা ঠেলে দিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠলেন,
.
—- আজকে চা হবু নাত বউ বানাবে। আর আমিও চা খাবো! কথা সবার কানে গিয়েছে?
.
সবাই এক সুরে “জ্বি” বলে মাথা নাড়াতেই দিদুন উল্টো দিকে ফিরে নিজের চেয়ারে বসে খবরের পাতাটা মেলে পড়তে শুরু করলেন। এদিকে নিত্য আপু ভীষণ নার্ভাস ফিল করছে! চা বানাতে আপুর কোনো প্রবলেম নেই তবে প্রবলেম হচ্ছে আজকে দিদুনও চা খাবেন। যদি একটু উনিশ-বিশ হয় তবে কি হবে তার ধারণা না থাকলেও অজানা ভয় এসে হানা দিচ্ছে আপুর মনে।
আর আমি ভাবছি মাটির উনুনে আপুর গায়ে কোনো ভাবে যদি আগুন লেগে যায়! তাছাড়া এমনিতেই তাপের কারণে চুলোর আশেপাশেই যেতে পারিনা আমি। আপুর ফর্সা মুখ আজকে টমেটোই হয়ে যাবে নির্ঘাত।
.
এর মধ্যেই ভাইয়ারা এসে হাজির হলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে দৌড়াদৌড়ি করেছে তিনজন মিলেই ভীষণ! কি জানি ভুট্টুর তাড়া খেলো টেলো না তো? ওটা যে সেয়ানা কুকুর অপরিচিত কাউকে দেখলেই তো গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে থাকে। ইভেন একটু টেরিবেরি করলে পেছন পেছন ছুটও লাগিয়ে দেয়। হাহ!
আর ইদানীং কেনো জানি ভাইয়াদের দেখলে আমার শুধু একটা কথাই মনে হয়। কথাটা কিছুটা এরকম, “তিন মাথা ছয় কান, যেখানেই যাবে সেখানেই অপমান!”
.
ভাইয়ারা ভেতরে ঢুকতেই আম্মু রুটি ভাজতে ভাজতে অগ্নি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
—- অগ্নি…! দেখ দরজার পাশে একটা হাড়িতে দুধ রাখা আছে। হাড়িটা নেয়ে আয় তো বাবা!
.
“আচ্ছা আনছি” বলে ভাইয়া হাড়িটা নেওয়ার আগেই রুশো ভাইয়া অগ্নি ভাইয়া কে থামিয়ে দিয়ে ভাব নিয়ে বললো “হেই ব্রো চিল না! আমি নিয়ে যাচ্ছি!”
বলে রুশো ভাইয়া হাড়িটা নিয়ে দুধাপ দিতেই “ডাসসসস….!”
.
পুরো উঠান জুড়ে নীরাবতা! আমি হা করে মাথায় হাত দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। অগ্নি ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া এতোক্ষণে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছে।
.
পুরো উঠান জুড়ে দুধের ছড়াছড়ি! রুশো ভাইয়ার গা থেকে টপ টপ করে দুধ পড়ে যাচ্ছে! এতো বড় হাড়িতে মিনিমাম ৩ কেজি দুধ তো ছিলোই। তার অর্ধেক ছিটকে রুশো ভাইয়ার গা ভিজিয়ে দিয়েছে, আর বাকি অর্ধেক উঠানে ছিটকে উঠানে গড়িয়ে পড়েছে। একবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিতেই সবাইকেই হা করে থাকতে আবিষ্কার করলাম আমি! শুধুমাত্র দিদুনের চেহারায় অবাকের বিন্দুমাত্র রেশ নেই। দিদুন নিজের চোয়াল শক্ত করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুশো ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন। যার অর্থ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয়াবহ কিছু হতে চলেছে!
.
রুশো ভাইয়া ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দুধের বন্যার দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে পর মুহূর্তে মুখ তুলে তাকিয়ে সবার রিয়াকশন আড়চোখে দেখে নিয়ে কাচুমাচু করে ঠোঁট উল্টালো।
.
দিদুন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে খানিকটা এগিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
.
—- সালমা…..! ওকে পুরো উঠান মুছতে লাগিয়ে দাও। মুছা হয়ে গেলে লালু-ভলুর ঘরে পাঠিয়ে দুধ দুইয়ে আনতে বলো। সময় ১ ঘন্টা!
এর মধ্যে আমি ফিরে এসে যেনো সবকিছু আগের মতো পাই।
.
বলেই দিদুন গটগট করে হেটে ঘরে চলে গেলেন আর রেখে গেলেন ধকধক করতে থাকা আমাদের ছোট্ট ছোট্ট কলিজাগুলোন! রুশো ভাইয়া গাভীর দুধ দুইবে? এও সম্ভব?
এই কাহিনীর পর রুশো ভাইয়া এতোক্ষণে পারলে বোধহয় এক লাফে মাটি ফাঁক করে ভেতরে ঢুকে পড়তো!
.
দিদুন একটু পর পরই এসে দেখে যাচ্ছে যে আমরা কেউ রুশো ভাইয়াকে হেল্প করছি কিনা! তাই ভাইয়াকে কেউ একটু হেল্পও করতে পারছি না।
কোনোরকমে কাপড় দিয়ে উঠান মুছে উঠলো রুশো ভাইয়া!
কিন্তু এবার কি হবে?
নীবিড় ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া দুজনেই কপাল চাপড়াচ্ছে। এদিকে রুশো ভাইয়া নখ কামড়ে ভাবছে দুধ দুইবে কিভাবে! নিত্য আপু আর আমি অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। বাড়িতে কেমন যেনো থমথমে পরিবেশ! শুধুমাত্র একটা মানুষই এখন মুখ টিপে হেসে যাচ্ছে। সে হলো আমার বেস্টু রাত্রি! এই মেয়েটা আমার ভোলাভালা ভাইটার ইজ্জতের ফালুদা হলে এতো খুশি হয় কেনো আল্লাহ মালুম!
.
হঠাৎ রুশো ভাইয়া নখ খাওয়া থামিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভেবে বললো,
—- হেই গাইস! কেউ টেনশন করো না। আমি ঠিক টাস্ক কমপ্লিট করে আসছি! মনি একটা বালতি দাও আমাকে!
.
আম্মু অসহায় ফেইস নিয়ে রুশো ভাইয়ার হাতে বালতিটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
—- পারবি তো? সাবধানে করিস বাবা!
.
রুশো ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো, “ওহ কাম অন মনি, ওই কাউ একটা লাথি দিলে আমি উল্টে দুটো কিক মেরে দেবো!”
বলেই বুক ফুলিয়ে শ্বাস টেনে গোয়াল ঘরে চলে গেলো ভাইয়া!
.
🌸
.
—- হেই কাওস তোমাদের মধ্যে হু ইজ লালু এন্ড হু ইজ ভলু? মনি তো বললো লালুর দুধ দুইতে। দুজনেই তো প্রায় সেম সেম কালারের! চিনি কীভাবে বলোতো?
.
রুশোর প্রশ্নের কোনো আগামাথা না বুঝে লালু “হাম্বায়ায়ায়া…!” করে ডাক দিলো। রুশো লালুর ডাকে লাফিয়ে উঠে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে বুলে ফুঁ দিয়ে শান্ত হয়ে আবারও একটু এগিয়ে এসে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো,
.
—- ওহ! তার মানে তুমি লালু! গুড লুকিং লালু! বাই দ্য ওয়ে এখন এটারও এন্সার দাও তো, যে দুধ দুইবো কোথায় থেকে?
.
লালু আবারও আগের থেকে জোড়ে “হাম্বায়ায়ায়ায়া!” করে উঠলো। রুশো খানিক ভেবে হঠাৎ চুটকি বাজিয়ে “আইডিয়া!” বলে ফোন বের করে দুধ দুয়ার একটা ভিডিও অল্প একটু দেখে নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“এইবার কোনে যাব্বা লাল্লু জি? আম কামিং লালু বেবি!”
বলেই লালুর কাছে গিয়ে আস্তে করে বালতিটা নিচে রেখে দিলো রুশো। লালুকে চারদিকে খু্ঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিয়ে রুশো চিন্তিত হয়ে পড়লো এই ভেবে যে,
“এইরে, ইউটিউবে দেখা গরুর মতো এটার অঙ্গ-প্রতঙ্গ নেই কেনো? তবে কি এটা হাইব্রিড গরু?”
ভেবেই রুশো গুটিগুটি পায়ে লালুর পাশে গিয়ে বসতে নিলেই লালু লেজ দিয়ে রুশোর গালে ঠাসস করে বারি মেরে দিলো। লেজের বারি খেয়ে রুশো ধপাস করে নিচে থাকা গোবরের ওপর পড়ে গেলো!
.
—- ও মাই গড! এই চিপকু গামের মতো এগুলো কি?
.
বলে নিজের বাম হাত গোবরে ছুঁইয়ে মুখের সামনে ধরতেই “ওহ নো ইটস পটি! কাউ ডানগ! ইয়্য্যায়ায়াক্কক্কক……!” বলে নাক-মুক সিঁটকে উঠতে নিলেই আবারও গোবরে পা লেগে স্লিপ কেটে সোজা লালুর গায়ের সাথে লেগে যায় রুশো।
লালু রেগে গিয়ে পেছনের পা দিয়ে রুশোর পেছনে লাথি মেরে দিতেই “ইয়ায়ায়ায়ায়া……!” বলে চিৎকার দিয়েই ধপাস করে সামনে রাখা পাতার ঝুড়ির ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে যায় রুশো!
.
🍁
.
বাইরে থেকে রুশো ভাইয়ার চিৎকার শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়লাম আমি। অগ্নি ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া মাথায় ধপ করে হাত দিয়ে অপরের দিকে এক নজর তাকিয়ে ” এই খাইছে রে….!” বলেই ছুট লাগালো গোয়াল ঘরে। এদিকে আমরা আল্লাহ আল্লাহ করে যাচ্ছি! নির্ঘাত লালু রেগে গিয়ে লাথি মেরে দিয়েছে ভাইয়াকে। তবে লালুতো সচারাচর এরকম রেগে যায় না। খুব শান্ত স্বভাবের লালু! আবার লালুর ঠিক উল্টো হচ্ছে ভলু! ভীষণ রাগি! আশেপাশে গেলেই গুঁতো মারতে এগিয়া আসে ভলু!
.
কিছুক্ষণ পরই রুশো ভাইয়ার দুবাহু ধরে নিয়ে এলো অগ্নি ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া! রুশো ভাইয়ার প্যান্ট গোবরে মাখামাখি। মুখচোখের অবস্থা করুন। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ধুলোয় লুটুপুটু খেয়ে গেছে।
রুশো ভাইয়াকে এমন অবস্থায় দেখে আম্মু আর চাচিমনি ছুটে গিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ভাইয়াদের জিজ্ঞেস করলো,
.
—- একি, রুশোর এই অবস্থা হলো করে?
.
আম্মুর প্রশ্নে অগ্নি ভাইয়া মুখটা পেঁচার মতো বানিয়ে উত্তর দিলো,
—- গাভী কে ছেড়ে ষাঁড়ের দুধ দুইতে গেলে এর থেকে কম আর কি হতে পারে?
.
চলবে…………….💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৪৪♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
গালে হাত বসে গভীর ভাবনার জগতে ডুব দিয়েছি আমি। পাশেই রাত্রি হাসির সাথে যুদ্ধে নেমে পড়েছে! সেই যে শুনেছে রুশো ভাইয়া ষাঁড়ের দুধ দুইতে গিয়েছে সেই থেকে এখন পর্যন্ত শুধু হেসেই যাচ্ছে!
সামনেই নিত্য আপু ফার্স্ট এইড বক্স থেকে মুভ নিয়ে রুশো ভাইয়ার পিঠে লাগিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে অগ্নি ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া রুশো ভাইয়াকে একেবারে গোসল করিয়ে তারপর ঘরে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে তারা রুশো ভাইয়ার দুপাশে বসে একটু পর পর ফিক করে হেসে উঠছে আবার পর মুহূর্তে রুশো ভাইয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে।
.
—- আহহ….! ভাবী আস্তে…..!
.
—- সরি সরি! এদিকে লেগেছে বুঝতে পারিনি! হয়ে গেছে আমার। তুমি রেস্ট নাও এখন, ব্যথা সেরে যাবে।
.
বলেই আপু আমার পাশে এসে বসে পড়লো। এমন সময় মামুন ভাইয়া ঘরে নক করে বলে উঠলেন,
“আসবো?”
অগ্নি ভাইয়া মামুন ভাইয়াকে অনুনয়ের সুরে বললো
” আরে এসো এসো!”
মামুন ভাইয়া মুচকি হেসে ঘরে ঢুকেই একবার রুশো ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে বসলেন,
.
—- রুশোর কি খবর? ঠিক আছে এখন?
.
রুশো ভাইয়া শুয়ে থেকেই ডান হাত উপরে তুলে “লাইক থামস আপ” দেখিয়ে “অলরাইট ব্রো!” বলেই হাত নামিয়ে নিলো। মামুন ভাইয়া মৃদু হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
.
—- অনন্যা, দুপুরের খাবারের পর দিদুনের ঘরে এসো! দিদুন ডেকেছে। একটু পরই খাবার বারা হবে।
.
মামুন ভাইয়ার মুখে দিদুন আমায় ডেকেছে শুনেই বুকটা ধক করে উঠলো আমার। এই একটা মানুষ যখন কাউকে নিজের ঘরে ডাকে তখন শুধু সিরিয়াস না মারাত্মক সিরিয়াস কিছু বলার জন্যই ডাকে। যা দিদুনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের জন্য হার্ট এট্যাকের কারণ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তাই আমি কৌতুহল বসতো উত্তেজিত হয়ে মামুন ভাইয়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
.
—- কেনো ডেকেছে আপনি কি জানেন ভাইয়া?
.
মামুন ভাইয়া ক্ষণিকের জন্য একটু চিন্তা করে বললেন,
—- তা ঠিক বলতে পারছি না। গেলেই বুঝতে পারবে। আমাকেও ডেকেছে অবশ্য! আমিও তার কারণ জানিনা।
.
—- আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া!
.
বিনিময়ে মামুন ভাইয়া স্মিথ হেসে বেড়িয়ে গেলেন। নীবিড় ভাইয়া কিছুক্ষণ ভ্রু কুচঁকে মামুন ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসলেন। উনার এমন চাহনির কোনো অর্থ খুঁজে পেলাম না আমি৷ উনি কিচ্ছুক্ষণ ওভাবেই তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে রুশো ভাইয়ার সাথে আবারও হাসি-তামাশায় মত্ত হয়ে পড়লেন।
.
—- ছুটকি….! এটম বোম্বকে একটু থামতে বল না রে বোন! ও ফেটে গেলে আমরা একটাও আস্ত থাকবো না। গ্রেনেড টাইপ হামলার শিকার হয়ে টপকে যাবো সবাই!
.
রুশো ভাইয়ার কথায় নিমিষেই হাসি থামিয়ে রেগেমেগে লাল হয়ে উঠলো রাত্রি! দাঁতে দাঁত চেপে রুশো ভাইয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বড়বড় পায়ে হেটে চলে গেলো ঘরে।
আমি ফিক করে হেসে দিয়ে রুশো ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসে পড়লাম। ভাইয়ার কপালের সাথে লেপ্টে থাকা সিল্কি ব্রাউন চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে নাকটা টেনে দিলাম।
রুশো ভাইয়ার সাথেসাথেই নিজের নাক চেপে ধরে আহত কন্ঠে বলে উঠলো,
.
—- তুইও শেষমেশ আমার অসহায় নাকেটার পেছনেই পড়লি ছুটকি?
.
আমি মুখ টিপে হেসে দিয়ে বললাম,
—- তোমার নাকটা অনেক কিউট তো তাই রাত্রি আদর করতে গিয়ে ভুলে ঢিশুম করে মেরে দেয়। আর আমি তো শুধু আদরই করলাম। হেহে!😁
.
আমার কথা ভাইয়ারা সাথে নিত্য আপুও ঘর কাঁপিয়ে হাসিতে ফেঁটে পড়লো। অগ্নি ভাইয়া আবারও দাঁত কেলিয়ে রুশোর ভাইয়ার মজা নেওয়ার জন্য বলে উঠলো,
.
—- সিরিয়াসলি রুশো! তুই শেষমেশ কিনা একটা ষাঁড়ের দুধ দুইতে গিয়েছিস! ইতিহাসে প্রথম! এটা নিয়েই স্টোরি লেখ ভাই! ট্রাস্ট মি, সেই মার্কেট পাবে।
.
রুশো ভাইয়া ঠোঁট উল্টিয়ে মুখে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে বলে উঠলো,
—- আমার কি দোষ? আমি আস্ক করলাম দুটোকেই যে হু ইজ লালু এন্ড হু ইজ ভলু! তার মধ্যে একজন এন্সার দিলো! তাই তো আমি ওকেই লালু ভেবে নিয়েছিলাম!
.
—- মানে? গরু আবার এন্সার দেয় কিভাবে? (নীবিড়)
.
রুশো ভাইয়া মুখ গোমরা করে আবারও বললো,
—- আমি তো নিনজা হাতোরীর মতোই আস্ক করেছিলাম আর প্রতিউত্তরে ওই বুল টা হাম্বায়ায়া…! করে ডেকেছিলো। সো এতে আমার কি দোষ?
.
রুশো ভাইয়ার উত্তরে আমি হাসবো না কাঁদবো না বাড়ি ছেড়ে উগান্ডায় পালাবো ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছিনা।
অগ্নি ভাইয়া হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে নীবিড় ভাইয়ার ওপর থেকে উঠে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো,
.
—- ভাই থাম তুই! আর হাসাস না প্লিজ!
এসব জাস্ট তোর দ্বারাই পসিবল। হাহ? মানুষ হয়ে পশু-পাখি দের সাথে কথা উল্টাপাল্টা কথা জাস্ট তুই ই বলতে পারিস! উফফফ…..! আম জাস্ট স্পিচলেস!
.
নিত্য আপু আর আমি হাসতে হাসতে তিন ফাজিল কে রেখে বেড়িয়ে এলাম! আম্মু ডাকছে নিচে যাওয়ার জন্য, তাই রাত্রি কে নিয়ে নিচে নেমে গেলাম!
.
🌷
.
—- কিন্তু মা…! এটা কিভাবে হয় তুমিই বলো? তুমি এখনো সেই পুরোনো কথা ধরে বসে আছো? (আব্বু)
.
—- আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা আহসান! তুই বলেছিলি অনন্যা ছোট তাই সময় নিবি। সেই হিসেবে আজ নিয়ে দু বছর পেরিয়ে গিয়েছে। ও এখন ১৯ বছর বয়সে পা দিয়েছে। সেই হিসেবে এখন ওর বিয়ের বয়সও হয়েছে। (দিদুন)
.
—- সবই ঠিক আছে আম্মা, কিন্তু মেয়ের ওতো একটা মতামত আছে। আমরা তো মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করতে পারিনা। (আম্মু)
.
—- বেশ তো! অনন্যাকে ডেকে পাঠিয়েছি আমি। ও আসুক তবেই ওর কাছে মতামত নেওয়া হবে। তাছাড়া ওর মতামতে তেমন কিই বা যায় আসবে? পরিবার থেকে যেখানে বিয়ে দেওয়া হবে মেয়ে তো সেখানেই বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে। এতে এতো ভাববার কিছুই নেই। আমি চাই এই মাসেই বিয়েটা সেরে ফেলতে। মামুনের বয়সও তো কম হলো না! বিয়ে তো করতে হবে!
.
—- অনন্যা তো শহরে মানুষ হয়েছে মা! ও কি করে এখানে খাপ খাইয়ে নেবে বলো?
.
—- সমস্যা নেই। ব্যবসা শহরে থেকেও করা যাবে। বরং তার থেকে ভালোই হবে। এখান থেকে মাসুম সামলাবে। শহর থেকে মামুন মাছগুলো জায়গা মতো পৌঁছে দেবে। দরকার হলে বাড়ি ভাড়া নিয়েই থাকবে বগুড়ায়! তাছাড়া মামুন উচ্চশিক্ষিত! এর পরেও কোনো আপত্তি থাকার কথা না।
.
—- কিন্তু…..!
.
—- আর কোনো কিন্তু না! আমি যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটাই ধার্য্য করা হবে! এর ওপর কোনো কথা নয়! আমি তোর সাহস দেখে অবাক হচ্ছি আহসান, তুই আমার ছেলে হয়ে আমায় না জানিয়ে বাসায় পাত্রপক্ষকে ডেকেছিস! আর দেড়ি করতে রাজি নই আমি।
.
দিদুনের কথার ওপর আর আম্মু আব্বু কিছু বলার সাহস পেলো না। ঠিক সেই সময়ই আমি আর মামুন ভাইয়া গিয়ে হাজির হলাম দিদুনের ঘরের সামনে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুক ফুলিয়ে সাহস নিয়ে ধীর পায়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দিদুনকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
.
—- দিদুন, আসবো?
.
—- এসো….।
.
দিদুনের অনুমতি পেয়ে ঠোঁট কামড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম আমি। আমার পেছন পেছন প্রবেশ করলো মামুন ভাইয়াও।
ভেতরে যেতেই দেখলাম আম্মু আব্বু দুজনেই উপস্থিত! আম্মু আব্বুকে দেখে একটু স্বস্তি ফিরে পেলাম। আস্তে করে আম্মুর পাশে বসতেই আম্মুর মুখটা মলিন হতে দেখে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো আমার। এক অজানা ভয় এসে হানা দিলো আমার মনে কোণে! তবে কি খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে? তবে কি সেটা?
.
দিদুন আমাদের বসিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলা শুরু করলো,
—- মামুন, অনন্যা! তোমাদের দুজনের উদ্দেশ্যে কিছু কথা আছে আমার! আর আমি তোমাদের নিয়ে যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছি তা অবধারিতই! তবুও যেহেতু ব্যাপারটা তোমাদের নিয়েই তাই তোমাদের ডেকেছি। এখন আমি যা যা বলছি তা মন দিয়ে শুনো! সে হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করো!
.
একটু থেমে দিদুন আবারও বলতে শুরু করলো,
—- তোমাদের দুজনেরই বয়স হয়েছে। বলা যায় তোমরা বিয়ে করার উপযুক্ত বয়সে পা দিয়েছো!
মামুন যদিও একটু হলেও অবগত এই ব্যাপারে তবে অনন্যা তুমি বিষয়টা জানো না। অনেক আগে থেকেই তোমার আর মামুনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি আমরা! শুধু অপেক্ষা ছিলো তোমাদের উপযুক্ত হওয়ার! আর এখন তোমরা সেই নির্দিষ্ট সময়ে পা রেখেছো!

যেহেতু অপরিচিত কাউকে বিয়ে করতে বলছি না আমি তোমাদের। আমার মনে হয় না তোমাদের দুজনের মধ্যে কারোও কোনো আপত্তি থাকতে পারে।
.
—- কিন্তু আমার আপত্তি আছে দিদুন!
.
পেছন থেকে কারোও গলা পেয়ে হকচকিয়ে উঠে পেছন ফিরে তাকালাম আমরা সবাই! নীবিড় ভাইয়াকে এই মুহূর্তে দেখে আমার খুশি হওয়ার কথা তবুও নিজেকে কেমন যেনো অনুভূতি শুণ্য বলে মনে হচ্ছে আমার। আমি শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে দেখছি সবাই কে! কি হচ্ছে আমার সাথে? আর পরবর্তীতেই বা কি হবে? নীবিড় ভাইয়া কিভাবে হ্যান্ডেল করবে সবকিছু? আগের বার নাহয় নিত্য আপু ছেলেপক্ষকে বুদ্ধি করে তাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এবার?
আমার মাথাটা কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সব কিছু ঘোলাটে লাগছে আমার।
.
নীবিড় ভাইয়া ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করে দিদুনের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। দিদুন নিজের ঘরে কাউকে এভাবে প্রবেশ করায় রেগে গিয়ে নিজেও দাঁড়িয়ে পড়লেন সাথে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আম্মু আব্বু আর আর মামুন ভাইয়াও!
দিদুন কড়া গলায় নীবিড় ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
.
—- তার মানে তুমি দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনেছো! তুমি এর মাঝে বলার কে?
.
নীবিড় ভাইয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আমায় টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে একহাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন। আমায় নিজের সাথে লাগিয়ে রেখেই বলে উঠলেন,
—- বা রে! আমার বউয়ের আবারও বিয়ে নিয়ে কথা উঠছে সেখানে বুঝি আমার আপত্তি থাকবে না?
.
নীবিড় ভাইয়ার কথা আব্বু হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন,
—- নীবিড়, অনু তোর বউ মানে?
.
তখনই আম্মু আব্বুকে থামিয়ে দিয়ে মাথাটা নিচু করে বললো,
—- বাবুই ঠিকই বলছে, অনন্যা আর নীবিড় বিবাহিত! তারা একে অপরের স্বামী-স্ত্রী!
.
আব্বু যেনো আম্মুর কথায় আকাশ থেকে পড়লো, উত্তেজিত হয়ে আব্বু জিজ্ঞেস করলো,
—- কিভাবে???
.
নীবিড় ভাইয়া আমায় ছেড়ে দিয়ে আব্বুর এক হাত নিয়ে দুহাতের মুঠোয় নিয়ে উনি বলতে শুরু করলেন,
—- হ্যাঁ বাপী! মামনি ঠিকই বলছে। আর তোমার বাকি প্রশ্নের জবাব আমিই দিচ্ছি!
.
একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে উনি আবারও বলতে শুরু করলেন,
—- এটা সেদিনের পরেরদিনের ঘটনা, যেদিন আমরা নিত্য আর অগ্নির এনগেজমেন্টের ডেট ফাইনাল করে চলে গিয়েছিলাম! ওই দিন ভার্সিটিতে রাত্রি যায়নি, আর শেষ ক্লাসও হয় নি অনন্যাদের। তাই ও একাই বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পড়ে। আর ওকে একা পেয়ে সেই সুযোগেই তুলে নিয়ে যায় ভার্সিটির দুজন ছেলে! আগে থেকে অনন্যার পেছনে ঘুরে বেড়াতো সিফাত! ওদের বিরক্ত করার জন্য আমি শাসিয়েও ছিলাম কিন্তু সে শুধরোয় নি বরং এমন একটা সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলো সে।

সেদিন ক্লাসের বাহিরে ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট দের টাইমের আগেই বেরোতে দেখে আমিও অনন্যার খোঁজে বেরিয়ে পরি। আর ঠিক তখনই এক জুনিয়রের কাছে জানতে পারি কেউ বা কারা অনন্যাকে গাড়িতে অজ্ঞান করে উঠিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে! আমি আর বিন্দুমাত্রও অপেক্ষা করিনি। জিপিএস থেকে লোকেশন ট্রাক করে গন্তব্যে পৌঁছেই অনন্যাকে অনেক খোঁজার পর একটা ঘরে আবদ্ধ অবস্থায় পাই। ছেলেগুলোকে মেরে রক্তাক্ত করে ফেলি আমি রাগের বশে। কিন্তু অনন্যাকে নিয়ে ফেরার পথে শেষরক্ষা আর হয় নি, গ্রামের কয়েকদল লোক আমাদের খারাপ উদ্দেশ্যের লোক ভেবে জোর জবরদস্তি বিয়ে দিয়ে দেয়!
তার পরেই অগ্নিরা এসে উপস্থিত হয় কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তা হয়েই গিয়েছে।
.
বলেই আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালেন নীবিড় ভাইয়া! আব্বু স্তব্ধ হয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো! আম্মু আব্বুকে ধরে বলে উঠলো,
—- আমিও এসব জানতাম না আহসান। তবে এখানে আসার আগের দিনই নীবিড় আমায় সব খুলে বলেছে! প্রথমে আমি ব্যাপারটা নিতে না পারলেও পরে ভেবে দেখেছি! এর থেকে খারাপ ও তো কিছু হতে পারতো তাইনা? যদি নীবিড় সময় মতো সেখানে না পৌঁছাতে পারতো তবে আমাদের মেয়েটার কি হতো তা ভাবলেও আমার গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে! আর বিয়েটা তো যার তার সাথেও হয়নি। আমাদের বাবুইয়ের সাথেই হয়েছে। তুমি প্লিজ ভেঙে পড়ো না!
.
আব্বু আম্মুর হাত ধরে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পর মুহূর্তে মাথা তুলে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,
—- তুমি হয়তো ঠিকই বলছো অনামিকা! যেভাবেই হোক ওদের বিয়েটা হয়েছে! এটা আমাদের মেনে নিতে হবে।
.
—- কিচ্ছু মানতে হবে না কাউকে। সমস্যা যেহেতু হয়েছে তার সমাধানও রয়েছে! (দিদুন)
.
দিদুনের কথা চমকে উঠলাম সবাই! আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ছলছল চোখে দিদুনের দিকে তাকাতেই দিদুন বলতে শুরু করলো,
—- হয়তো বিয়েটা হয়েছে তবে ভূল বশত হয়েছে। যেমন বিয়ে হয়েছে তেমন বিয়ে ভাঙার পদ্ধতিও রয়েছে। আর তাছাড়া ওদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই।
.
দিদুনের কথা শেষ হতেই নীবিড় ভাইয়া আমার বা হাত নিজের ডান হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে দিদুনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
—- তা হয়তো আছে দিদুন, তবে আমি তো অনন্যাকে ছাড়বো না। যে কোনো মূল্যে হোক ওকে আমি ছাড়ছি না।
.
দিদুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নীবিড় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুখে হাল্কা বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললেন,
—- বেশ তো! তবে আগে প্রমাণ করো তুমি অনন্যার যোগ্য! শুধু টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি আর সুন্দর চেহারা থাকলেই সব হয় না। তুমি কি রাজি?
যদি আমার শর্তে হেরে যাও তবে অনন্যাকে তালাক দিতে হবে তোমায়।
.
নীবিড় ভাইয়া বুক ফুলিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে আমার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলেন,
—- আমি রাজি! যতটা কঠিন পরীক্ষাই দিতে হোক না আমায় আমি দেবো!
.
নীবিড় ভাইয়ার উত্তরে দিদুন রেগে গেলেন না বরং এক রহস্যময়ী হাসি হেসে “কাল থেলে তোমার পরীক্ষা শুরু হবে। ঘরে যেতে পারো। যেটুকু সময় পাচ্ছো বিশ্রাম করে নাও!” বলেই দিদুন নিজের চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে ফেললেন।
আমি এতোক্ষণ শুধু রোবটের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছিলাম। মুখ ফুটে কিছু বলবার শক্তিই যেনো হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি। হয়তো বলতে চাচ্ছি অনেক কিছুই কিন্তু বলা হয়ে উঠছে না। কথাগুলো মুখ নিসৃত হবার পূর্বেই গলায় এসে জোট পাকিয়ে যাচ্ছে।
.
মামুন ভাইয়া দিদুনের কথা শেষ হতেই মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলেন। আম্মু আব্বু আমাদের নিয়ে দিদুনের ঘরের দরজা চাপিয়ে দিয়ে চিন্তিত মুখ নিয়ে নীবিড় ভাইয়ার দিকে তাকালো।
দরজার বাহিরে বেরোতেই নিত্য আপু, রাত্রি,রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম আমি। তার মানে এতোক্ষণ ওরা ভেতরের সব কথাই শুনেছে!
.
আম্মু নীবিড় ভাইয়ার মাথায় একবার আর আমার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
—- জানি না আম্মা ঠিক কোন কঠিন পরীক্ষায় ফেলছে তোদের! সফল হোস বাবুই!
.
নীবিড় ভাইয়া মুচকি হেসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
—- তোমরা পাশে থাকলে আর কিছু চাইনা মামনি! আমাদের জোড়া তো ওই উপর থেকে সেটিং করা আছে। দিদুনের এই ছোট খাটো পরীক্ষায় ফেইল করবো না আমি। ডোন্ট ওয়ারি!
.
🍁
.
রাত ২ টা বেজে ১৬ মিনিট….
আমার চোখে ঘুমের টিকিটিও নেই! সারারাত টেনশন আর কথা বলতে বলতেই নিত্য আপু আর রাত্রি একটু আগেই ঘুমিয়ে পরেছে। তবে শুধু ঘুমোতে পারিনি আমি! অদ্ভুত সব ভাবনা এসে জমে যাচ্ছে মনে কোঠায়। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে আমার। এ কোন গোলকধাঁধায় বসবাস করছি আমি? যেথায় নেই আমার কোনো হস্তক্ষেপ নেই কোনটা স্বইচ্ছে!
আমি আর ভাবতে পারছিনা। প্রকৃতির হাওয়াটা গায়ে মাখানোর বড্ড প্রয়োজন এখন। যদি পারতাম কোনো কিছুর বিনিময়ে নিজের সব দুশ্চিন্তা, মন খারাপের কারণ ধুয়ে মুছে খিলখিল করে হাসতে তবে তাই করতাম।
.
ছিমছাম দোতলা পেড়িয়ে ছাদের সরু পথে একপা দুপা করে এগিয়ে যাচ্ছি! সচরাচর এতো রাতে একা একা কোনোকালেই আমার সাহস হয় না ছাদে আসার। তবে আজ যেনো কোনো ভয়ই কাজ করছে না মনের ভেতর।
.
ছাদে যেতে এক নীরব, স্থির ছায়াকে আবিষ্কার করলাম আমি। সেই ছায়া মানবটি উল্টো দিকে ঘুরে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে। নিশি রাতের হিমেল হাওয়ায় তার অবাধ্য চুল গুলো ঢেউ খেলিয়ে উড়ছে! চাঁদের আলোয় তার শরীরে এক অদ্ভুত রূপ এসে ভর করেছে।
সেই ছায়া মানবটিকে চিনতে আমার বেশি বেগ পেতে হলো না। নিজের সবথেকে আপন মানুষটাকে না চিনলে আপন কথাটা নিতান্তই বেমানান!
.
ধীর পায়ে আমার সেই ছায়ামানবের পেছনে গিয়ে ঘাড়ে হাত রাখতেই অস্ফুট সুরে মৃদু আওয়াজে বলে উঠলেন,
—- এখনোও ঘুমোও নি?
.
সাথেসাথেই চমকে উঠলাম আমি। না দেখেই চিনলন কিভাবে আমায়? তবে কি উনি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছেন আমার অস্তিত্ব?
উনি আকাশের পানে চেয়েই মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
—- তুমি এসেছো আর আমি বুঝবো না তা কি করে হয়?
.
আমি উনার প্রশ্নের কোনো জবাব দিলাম না। বরং আমার দৃষ্টি তো উনার সেই মায়াবী চোখে। যেথায় উনার ব্যথিত নোনাজলগুলো জমাট বেঁধে চিকচিক করে উঠছে।
তবে কি উনি কাঁদছেন? কিন্তু কেনো?
.
—- একি আপনি কাঁদছেন?
.
উনি কোনো উত্তর না দিয়ে আচমকাই পেছনে ফিরে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমায়। আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে চাপা কন্ঠে বলে উঠলেন,
—- আমায় ছেড়ে যাবে না তো অনন্যা?
.
.
.
চলবে………………💖