প্রেম এসেছিলো নীরবে পর্ব-২৪+২৫

0
771

#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(২৪+২৫)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
—” আপনি আমাকে কিভাবে ধোকা দিতে পারেন অর্থ ভাইয়া?কিভাবে?যদি ধোকাই দিবেন তাহলে ভালোবাসার এতো অভিনয় কেন করলেন?কেন?”
কথাগুলো বলেই ফুফিঁয়ে কেঁদে উঠলো প্রাহি।আজ মনে বড় ব্যাথা ওর।নিজের সবচেয়ে আপন ভালোবাসার মানুষটা আজ ওকে জীবনের বেঁচে থাকার সম্পূর্ণ আশা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।কিভাবে পারলো লোকটা ওকে এভাবে ঠকাতে।ও যে লোকটাকে ভালোবেসে ফেলেছে।এখন কি করবে প্রাহি?কি করবে?অর্থ বাঁকা হেসে প্রাহির সামনেই ইলফার কোমড় জড়িয়ে ধরলো।চুমু খেলো ইলফার গালে।তারপর প্রাহিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—” ওহ কামন প্রাহি।তুমি আমার মোহ ছিলে।যা কেটে গিয়েছে।এখন তোমার মাজে আমার কোন ইন্টেরেস্ট নেই।একটু ছুলেই তুমি ছাড়াছাড়ি শুরু করে দেও।আই ডোন্ট লাইক দিস।আমার জন্যে ইলফাই ঠিক আছে।লুক এট হার,ইলফা ইজ মাচ প্রিটি দেন ইউ।সি ইজ গোর্জিয়াস বিউটিফুল,সেক্সি লেইডি।এন্ড আই লাভ হার।নট ইউ।এখন আমার একটাই লাস্ট কাজ আর সেটা হলো……!”
বাকি কথা বলার আগেই অর্থ প্রাহিকে পাহার থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।প্রাহি আর্তনাদ চারদিকে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।আর অর্থ আর ইলফা মুখে শয়তানি হাসি।

ঘুম থেকে চিৎকার করে লাফ দিয়ে উঠলো প্রাহি।সারা শরীর ওর ঘেমে নেয়ে একাকার।ওর এমন চিৎকারে পাশে ঘুমিয়ে থাকা হিয়া আর ইশিও উঠে বসেছে।হিয়া অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,
—” কি হয়েছে প্রাহি?এভাবে চিৎকার করলি কেন?ভয় পেয়েছিস বলনা?”
প্রাহি কিছুই বলছে না শুধু বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে।দম আটকে আসছে ওর।চোখ দিয়ে অবিরাম অস্রুকনা গড়িয়ে পরছে।হাতপা ঠান্ডা হয়ে আসছে।বুকের মাজে অসহ্য যন্ত্রনা করছে।হৃদপিন্ড যেন কেউ খামছে ধরেছে।ওর শরীরের এমন অস্থির আন্দোলন দেখে ভয় পেয়ে যায় হিয়া আর ইশি।ইশি প্রাহির গালে হাত দিতেই চমকে উঠে।প্রাহির শরীরের আগ্নেয়গিরির ন্যায় উত্তপ্ত হয়ে আছে।ইশি ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
—” হিয়া প্রাহির তো জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।ব্যাথার কারনেই বোধহয় জ্বর এসেছে।কি করবি এখন?”
হিয়া ততোক্ষনে গায়ে উড়না জড়িয়ে নিয়েছে।রুমে র দরজা খুলে যেতে যেতে বলে,
—” আমি অর্থ ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আসছি।তুই একটু ওকে সামলা।”
ইশি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।হিয়া যেতেই ইশি প্রাহিকে সুইয়ে দিয়ে ও উঠে ওয়াশরুমে মগ ভর্তি পানি এনে রুমাল দিয়ে প্রাহির গলা,ঘার মুছে দিলো। অসম্ভবভাবে ঘেমে গেছে মেয়েটার শরীর।জলপট্টিও দিতে পারবে না।কারন মাথায় ব্যান্ডেজ করা।
হিয়া গিয়ে অর্থ’র দরজার সামনে দাড়ালো দু তিনবার নক দিতেই দরজা খুলে বের হলো অর্থ।ও এখনো ঘুমায়নি।অফিসার কাজ করছিলো।হিয়া এতো রাতে এভাবে অস্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ও নিজেও ঘাবড়ে যায়।প্রাহির কিছু হলো নাতো আবার?অর্থ দ্রুত বলে,
—” কি হয়েছে হিয়া? এভাবে হাপাচ্ছিস কেন?”
হিয়া হাপাতে হাপাতে বলে,
—” ভাইয়া তুমি চলো আগে আমাদের রুমে চলো।”
হিয়া বলেই দ্রুত ওদের রুমের দিকে চলে গেলো।অর্থও নিজের রুমের গেট লক করে ছুটলো প্রাহিদের রুমে।গিয়ে দেখে প্রাহি বিছানায় নিস্তেজ হয়ে সুয়ে আছে।বিধ্বস্তপ্রায় যন্ত্রনাময় ফ্যাকাশে মুখশ্রী।অর্থ হৃদয়টা যেন কেউ যন্ত্রনার পাথর দিয়ে থেতলে দিলো।তাড়াতাড়ি প্রাহির কাছে গিয়ে ওকে টেনে বুকের মাজে নিয়ে বলে,
—” এই প্রাহি? কি হয়েছে?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?হিয়া ওর কি হয়েছে?”
হিয়া কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,
—” আমরা ঘুমোচ্ছিলাম।হঠাৎ ও চিৎকার করে উঠিলো।উঠে দেখলাম ও কেমন যেন করছে।গায়ে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।”
অর্থ আর কথা বাড়ালো না।বিছানা থেকে নেমে প্রাহিকে আলগোছে কোলে নিয়ে হিয়া আর ইশির উদ্দেশ্যে বলে,
—” আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।রুম লক করে দে।আর ভোরের আগে ফোন করলে রুম খুলে দিস।জ্বর কমলে রেখে যাবো।আমার কাছেই রাখতাম।বাটা মানুষ খারাপ বলবে।বুজেছিস?চিন্তা করিস না ঘুমিয়ে পরিস।”
ইশি প্রাহি সহমত পোষন করলো।অর্থ প্রাহিকে নিয়ে নিজের রুমে ডুকলো।প্রাহিকে সুইয়ে দিয়ে ওর গায়ে কম্বল দিয়ে দিলো।প্রাহির চোখে মুখে পানির ছিটা দিতেই পিটপিট করে চোখ খুলে প্রাহি।প্রাহি চোখ খুলতে দেখে শ্বাস ছাড়লো অর্থ এতোক্ষন মনে হচ্ছিলো দম আটকে আসছে।অর্থ আদুরে কন্ঠে বলে,
—” ভয় পেয়েছিলে প্রাহি?ঘুমের ঘোরে চিৎকার কেন করছিলে?”
প্রাহি ওর নিস্তেজ শক্তিহীন শরীরটা নিয়েই চটজলদি উঠে অর্থকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর ফুফিঁয়ে কেঁদে উঠে।কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
—” আপনি আমাকে রেখে আর কাউকে ভালোবাসেন না আমি জানি।আমি ব্যাথা পেলে তো আমার থেকে বেশি কষ্ট আপনার হয় আপনি তাহলে আমাকে মেরে ফেলবেন কিভাবে বলেন?বলুন না?আপনি আমাকে ভালোবাসেন না?আমি মরে যাবো বলুন না?”
অর্থ বুজলো প্রাহি খারাপ কোন স্বপ্ন দেখেছে।প্রাহির মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো।প্রাহির শরীরের মাত্রারিক্ত উষ্মতা যেন ওর শরীর পুড়িয়ে দিচ্ছে।কিন্তু এতে অর্থ’র কিছুই যায় আসে না।অর্থ প্রাহির চুলের ভাঁজে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে বলে,
—” লিসেন প্রাহি।আমি জানি না তুমি স্বপ্নে কি দেখেছো না দেখেছো।বাট ট্রাস্ট মি এই আমি অর্থ পুরোটাই তোমার।আর তুমি আমার।আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসি না।হাজারও মেয়েদের ভীরে আমি তোমাকেই ভালোবাসি,তোমাতেই মুগ্ধ হয়।তাহলে কেন অযথা ভয় পাচ্ছো?”
প্রাহি অর্থ’র কথাগুলো শুনে অর্থকে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরলো। অর্থ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
—“দেখি আমাকে একটু ছাড়ো তো,আমি মেডিসিন আনছি।”
প্রাহি নিভু নিভু চোখে তাকালো, আড়ষ্ঠ কন্ঠে বলে,
—” নাহ,আপনি কোথাও যাবেন না।আপনি গেলেই ওই ইলফা আপনাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবে।”
অর্থ এতোক্ষনে বুজলো প্রাহির মনে ইলফাকে নিয়ে ভয় ডুকে গেছে।ইলফাকে নিয়ে প্রাহির মনে অনেক ভয়।অর্থ কিছু একটা ভাবলো।তারপর বললো,
—” ইলফা আমাকে তার কাছে নিয়ে গেলে তোমার কি প্রাহি?”
প্রাহি ঠোঁট উলটে বলে,
—” আমারই তো সব!”
—” কেন আমাকে নিয়ে গেলে কি হয়েছে?তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।তাহলে ইলফার কাছে গেলে তোমার কি?”
প্রাহি মাথা তুলে তাকালো।ওর চোখে অর্থকে হারিয়ে ফেলার ভয় স্পষ্ট।চোখে পানি টলমল করছে।কান্নারত কন্ঠে বলে,
—” কে বলেছে ভালোবাসি না?আমি তো আপনাকে অনেক ভালোবাসি।আমার নিজের থেকেও বেশি।আপনি যাবেন না ওই ইলফার কাছে।আমি আপনাকে যেতে দিবো না।”
অর্থ হাসলো।তৃপ্তির সেই হাসি।কোনকিছু নিজের করে পাওয়ার সন্তুষ্টজনক হাসি।ভালোলাগায় মনটার চারপাশ ছেয়ে গিয়েছে।অসহ্য সুখে ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছে।শেষমেষ ওর পিচ্চি পাখিটার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনতে পারলো।অর্থ জানে প্রাহি জ্বরের ঘোরেই ওর মনের কথা বলেছে।কারন সজ্ঞানে তো আর জীবনেও এই মেয়ের মুখ থেকে ও ভালোবাসি শুনতে পারবে না।তাই তো এই বুদ্ধি খাটালো।
প্রাহিকে আলগোছে সুইয়ে দিয়ে।অর্থ ওর লাগেজ হতে মেডিসিন বাহির করে প্রাহিকে খাইয়ে দিলো।সারারাত অর্থ প্রাহির সেবা করলো।ভোরের দিকে প্রাহির জ্বর ছেরে দিলে অর্থ প্রাহিকে কোলে নিয়ে হিয়াকে বলে ওদের রুমে রেখে আসে।আর বলে ওর একটু খেয়াল রাখতে।তারপর অর্থ নিজেও চলে যায় ঘুমোতে।
——
স্নিগ্ধ পরিবেশ,এলোমেলো হাওয়া বইছে,সমুদ্রের গর্জন যেন কোন সুরেলা গীতের মতো শুনাচ্ছে।সমুদ্র সৈকতের বালির ওপর খালি পায়ে হাটছে প্রাহি।আজ সবাই ঘুরাঘুরি করবে। কারন কাল থেকেই হিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু।কাল মেহেদি অনুষ্ঠান।আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেও কাল রাতের স্বপ্নের কথা ভেবে ভয় মনটা একটু খানি হয়ে ছিলো প্রাহির।অর্থ তা বুজতে পেরেই আজ সবাইকে নিয়ে ঘুরার প্লানিং করলো।প্রাহিকে নিয়ে আজ সারাদিন ঘুরবে ও।মেয়েটার মন খারাপ ওর ভালো লাগে না।বুকটা বড্ড পুড়ায় ওর।অসহনীয় ব্যাথা হয় বুকে। প্রাহি যখন আনমনে এসব ভাবছিলো হাতে ডাব নিয়ে সেখানে আসে অর্থ।প্রাহির দিকে তাকাতেই ভ্রু-জোড়া কুচকে ফেলে সে।এই মেয়েটার জ্বর সেরেছে মাত্র কয়েকঘন্টা।তাও শরীর অনেক দূর্বল।শুধু মাত্র মন ভালো না ওর তাই অর্থ ওকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছে।আর এই মেয়ে নাকি খালি পায়ে হেটে বেড়াচ্ছে।ডাবগুলো বালির মাজে সাবধানে গেঁধে রাখলো যাতে না পরে যায়।তারপর প্রাহির জুতো জোড়া নিয়ে প্রাহির পায়ের কাছে দিয়ে।একপ্রকার ধমকে উঠে বলে,
—” এই মেয়ে তোমার কোন কমনসেন্স নাই?এমন কেন তুমি?যেই একটু চোখের আড়াল হলাম ওমনি তুমি বেখায়ালি হয়ে গেলে! এতো কেয়ারলেস কেন তুমি?তাড়াতাড়ি জুতো পায়ে দেও।”
প্রাহি ছলছল চোখে অর্থ’র দিক তাকালো।বুকটা ধ্বক করে উঠলো অর্থ’র।চিনচিনে ব্যাথা যেন বুকের বা’পাশটা গ্রাশ করে নিলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো মানুষজন অনেক দূরে ওদের থেকে তাই দ্রুত প্রাহিকে নিজের বাহুডোরে নিয়ে নিলো।বললো,
—” কেন ভয় পাচ্ছো প্রাহি?অযথা একটা স্বপ্ন নিয়ে এভাবে কেঁদোনা।আমার বুকে ব্যাথা হয় তুমি কাঁদলে।আমি তোমার প্রাহি।শুধু এবং শুধুই তোমার।”
প্রাহি হালকা আওয়াজে কেঁদে উঠে দুহাতে অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরলো।অর্থ ওর থেকে লম্বা হওয়ায় অর্থ প্রাহির কোমড় জড়িয়ে ধরলো।ফলে প্রাহির পাজোড়া শূন্যে ভাসছে।প্রাহি শান্তিতে অর্থ’র কাধে মাথা গুজে দিলো।তারপর কাঁদতে লাগলো।অর্থ প্রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,
—” কাঁদেনা,কাঁদেনা লক্ষিটি। আমি আছিতো।”
প্রাহি হালকা করে মাথা উঠালো।মাথা উঠিয়ে সামনে চোখ যেতেই দেখে ইলফা ওদের দিক তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন ওকে সেই দৃষ্টির আগুনে ধ্বংশ করে দিবে।প্রাহি ভয় পেয়ে যায়।ভয় পেয়ে অর্থকে আরো জোড়ে আকড়ে ধরে।অর্থ’র ঘারে প্রায় প্রাহির নখ গেঁধে যাওয়ার উপক্রম।অর্থ হালকা ব্যাথা পেলেও টু শব্দ করলো না।ইলফা প্রাহিকে আঙুল উঠিয়ে শাষিয়ে গেলো যে,ওকে পরে দেখে নিবে।প্রাহিকে তাড়াতাড়ি অর্থকে ছেড়ে নিচে নেমে দাড়ালো।প্রাহি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো।অর্থ হালকা হেসে প্রাহির মুখটা উঁচু করে দুহাতে প্রাহির চোখের জল মুছে দিলো।তারপর প্রাহিকে চোখের ইশারায় ডাবগুলো দেখালো।প্রাহি জোড়পূর্বক হাসলো।অর্থ প্রাহির হাত ধরে বালুর কাছে আসলো অর্থ নিজের গায়ে ব্লেজারটা খুলে সেটা বালির উপর বিছিয়ে দিলো।প্রাহি অবাক হয়ে দ্রুত বলে,
—” আরে কি করছেন? এটা তো নষ্ট হয়ে যাবে।”
অর্থ প্রাহি বাহু ধরে ব্লেজারের উপর বসিয়ে দিয়ে নিজেও প্রাহির পিছনে গিয়ে বসলো।প্রাহির পিঠ অর্থ’র বুকে ঠেকানো।অর্থ প্রাহির কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
—” এই আস্তো তুমিটা আমার কাছে সবচেয়ে দামি।তোমার ভালোর জন্যে আমি নিজেকেই বিলিয়ে দিতে পারি সেখানে এই সামান্য ব্লেজারই বা এমন কি?”
প্রাহির হাসলো।লাজুক সেই হাসি।গালদুটো রক্তিম আভা ধারন করলো।শরীরে মৃদ্যু কম্পন। অর্থ তা দেখে হাসলো।মেয়েটা লজ্জা পেলে এতো সুন্দর লাগে তখন। মন চায় ওকে তখন বুকের মাজে একদম ডুকিয়ে রাখতে।
প্রাহি পরম আবেশে অর্থ’র উষ্ম আলিঙ্গনে নিজেকে জড়িয়ে নিলো।তারপর চরম এক সুখময় ভালোলাগা নিয়ে দুই কপোত কপোতী সমুদ্রবিলাশ করতে লাগলো।
——-
প্রাহিকে কিভাবে শেষ করবে তারই প্লানিং করছিলো ইলফা আর ওর মা।কাল রাতের চরম অপমানের বদলা নিবে ওরা।ওই পুচকে মেয়েটাকে একেবারে জানে মেরে ফেলবে।ইলফা রাগে ফুসতে ফুসতে বলছে,
—” ওই মেয়েকে মরতে হবে মা।যেকোনভাবে মরতে হবে।আমার অর্থকে ওই মেয়ে কখনো পাবে না।দরকার পরলে আমি..আমি অর্থকেও মেরে ফেলবো।তাও ওই প্রাহিকে আমার অর্থকে নিতে দিবো না।ওই প্রাহিকেও মেরে ফেলবো সাথে অর্থকেও।”
ইলফার মা ঘাবড়ে গেলেন।তিনি খারাপ ঠিক আছে কিন্তু এতো খুন খারাপির থেকে তিনি একশো হাত দূরে থাকে।আর তার মেয়েই কিনা এইসব করতে চাচ্ছে।তিনি ইলফাক্র বুজানোর জন্যে বলেন,
—” ইলফা মা এইভাবে জেদ করে না।অর্থ তোর হবে না।আমি তোকে এর থেকেও বড়লোক আর সুন্দর ছেলে দেখে বিয়ে দেবো।তাও এইসব করিস না মা।”
ইলফা নাক মুখ কুচকে ধমকে উঠে ওর মাকে,
—” উফফ মা! জাস্ট সাট আপ।তুমি তোমার এইসব ফাউল কথা আমার সামনে বলবে না।তুমি….!”
হঠাৎ কথার মাজে ইলফার ফোন বেজে উঠে।প্রাইভেট নাম্বার।ভ্রু জোড়া কুচকে ফেলে ইলফা।এটা আবার কে?এই নাম্বার থেকে তো কেউ তাকে কখনো ফোন করেনি।তাহলে?
ইলফা ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো সাথে সাথে ভরাট গলার একটা পুরুষালি কন্ঠ বলে উঠলো,
—” যা করার প্লানিং করছিস তা ভুলে যা।প্রাহির কোন ক্ষতি তুই করবি না।যদি প্রাহিকে কিছু করিস তাহলে তোকে আমি জানে মেরে দিবো।একদম জানে মেরে দিবো।”
ইলফা ভয় পেয়ে যায়।কাঁপা কন্ঠে বলে,
—” আপ…আপনি কে?”
লোকটা হাসলো।খুবই কুৎসিত আর বিশ্রি শোনালো সেই হাসি।ইলফা সেই হাসির আওয়াজ শুনে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।লোকটা বলে,
—” আ’ম কিং ওফ ডার্ক ওয়ার্ল্ড।দ্যা ব্লাকহান্টার।”
তৎক্ষনাৎ ফোনটা কেটে গেলো।ইলফা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ওর মায়ের দিকে তাকালো।এই লোকটা তো সেই যে ওর বাবাকে মেরে ফেলেছে।ও জানে এটাই কারন ওর বাবাকে যখন মৃত অবস্থায় তারা পেয়েছিলো তখন ওর বাবার হাতে একটা চিরকুট ছিলো সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে ব্লাক হান্টার লিখা ছিলো।ইলফা ভয়ে চোটে দ্রুত কাউকে ফোন লাগালো।তারপর কাঁপা গলায় বলে,
—” তোমা..তোমাদের যেই কাজ দিয়েছিলাম।তা ক্যান্সাল করো।টেন্সন করবা না।কাজ ছাড়াই তোমরা টাকা পাবে।তবে কাজটা করবে না।ওকে,রাখি।”
ইলফা মা বুজার চেষ্টা করছে।কে এমন ফোন করলো যে উনার মেয়ে এইভাবে ভয় পাচ্ছে।তিনি কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই ইলফা ‘ আমার ভালো লাগছে না!’ বলে চলে গেলো।ইলফার মা চিন্তিত হয়ে নিজেও মেয়ের পিছনে চলে গেলেন।তা দেখে আড়াল থেকে একটা লোক হাসলো।হিংস্র সেই হাসি।বাঁকা হেসে বলে,
—” ছোট থেকে নিজের শিকারকে খাইয়ে দাইয়ে যত্ন করে এই পর্যন্ত আনলাম।আর তোর মতো দুদিনের আশা মেয়ে নাকি আমার শিকারকে শিকার করতে আসছিস।শিকার তো আমি করবই শুধু সময়ের অপেক্ষা।আর মাত্র একটা বছর।তারপর সব রাজত্ব আমার। আমার এতো বছরের কষ্ট সফল হবে।তারপর প্রাহিকে তো মারবই সাথে ওই অর্থকেও শেষ করবো।আমার প্লান গুলো সব ঘুরানো লাগছে তোর জন্যে।যেই প্লান করেছিলাম সেখানে আমার প্রাহিকে মারা লাগতো না।কিন্তু শুধু মাত্র তোর কারনে অর্থ সিকদার।শুধু মাত্র তোর জন্যে আমার এতো বছরের প্লানিং বিফলে গেলো।এখন তোর প্রানপাখিকে তোর ভুলের কারনে তোর চোখের সামনে তিলে তিলে মরতে দেখবি।সাথে তোকেও মরতে হবে।শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।আমাকে দেখে তুই জীবনের সবচেয়ে বড় ঝটকাটা তুই খাবি অর্থ তারপর তোর ভালোবাসাকে মারবো।তুই কাতরাবি অনেক আকুতি মিনুতি করবি।আমি পৈচাশিক আনন্দ পাবো।তারপর তুইও শেষ। হাহাহহাহাহা!”
লোকটা ভয়ানকভাবে হাসতে লাগলো।ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে অর্থ আর প্রাহির জীবনে।আবার কোন ঝর আসতে চলেছে।
#চলবে_______
কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।