প্রেম প্রয়াস পর্ব-০৮

0
760

#প্রেম_প্রয়াস
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৮

‘ তাশফা অনেক হয়েছে এবার ঘুম থেকে উঠো বলছি।’

– আরেকটু ঘুমাই না এখনো তো সকাল হয়নি।

– কে বলেছে সকাল হয়নি? আজান হয়ে গেছে নামাজ আদায় করে তারপর ঘুমাবে।

তাশফা শুয়া থেকে উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো চোখে এখনো ঘুম রাদিফ আবারো ডেকে,
– তাড়াতাড়ি উঠো সময় শেষ হয়ে যাবে তো।

– তাকাতে পারছি না।

– চোখে পানি দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।

বলেই তাশফাকে টানতে টানতে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে পানি ছিটিয়ে দিল রাদিফ। তাশফার চোখ থেকে ঘুম চলে গেছে এবার রাদিফ তার উদ্দেশ্যে,

– পোশাক পাল্টে ওযু করে আসো।

– আপনি করবেন না?

– আমি করেছি।

রাদিফ গিয়ে দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে দিল তাশফাও ওযু করে আসতেই দু’জনে মিলে ফজরের নামাজ আদায় করে নিল। তারপর রাদিফ গিয়ে দুই কাপ চা বানিয়ে নিয়ে এসে একটা কাপ তাশফার হাতে দিয়ে বেলকুনিতে চলে গেল তাশফাও পিছনে পিছনে গিয়ে,

– ভোরের সকাল তো অনেক সুন্দর!

– আজ প্রথম দেখলে নাকি?

– আগেও দেখেছি তবে কবে দেখেছি মনে নেই আসলে আমি একবার ঘুমালে নিজে নিজে উঠতেই পারি না,আম্মু আমাকে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠাতো।

– ঘুম থেকে উঠে কি করতে?

– ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে প্রাইভেটে যেতে হতো আর তারপর কলেজ করে আবারো প্রাইভেট উফ তারপর বাড়ি কত কষ্ট করতে হতো তবে যাই হোক এবার কষ্টটা কমেছে।

– কিভাবে?

– এখন বিয়ে হয়ে গেছে আর প্রাইভেট, কলেজ করতে হবে না শান্তি।

– তোমার চিন্তায় সেগুড়ে বালি কাল থেকে আগের মতোই রাকার সঙ্গে কলেজ আর প্রাইভেটে যাচ্ছো তুমি।

তাশফা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
– এগুলো আপনাকে বাবা,আম্মু বলেছে তাই না?

– কারো কথায় রাদিফ চলে না আমি চাই আমার বউ শিক্ষিত হোক তাই তোমাকেও পড়াশোনা করতে হবে নেক্সট টাইম এসব চিন্তা মাথায়ও আনবে না।

চা টুকু শেষ করে রাদিফ গোসল করতে চলে গেল। তাশফা বিছানায় বসে পা দোলাচ্ছে, রাদিফকে তৈরি হতে দেখে,

– কোথাও যাবেন নাকি?

– হুম অফিসে যাবো।

– আপনি না অফিসে ছুটি নিয়েছেন।

– তিনদিনের ছুটি নিয়েছিলাম ছুটি শেষ অফিসে অনেক কাজ জমে আছে।

– ওহ

– দুপুরে খাবার খেয়ে নিবে আর হ্যা দুষ্টুমি করবে না।

তাশফা মুখ বাঁকিয়ে,
– এমন করে বলছেন যেন কোন বাচ্চা বাড়িতে রেখে যাচ্ছেন।

রাদিফ পারফিউম দেওয়া শেষ করে,
– তুমি তো বাচ্চাই সারাক্ষণ ছুটাছুটি আর দুষ্টুমি করো।

– মোটেও না।

– হুম রাতে বাড়িতে ফিরলেই জানতে পারবো।

তাশফা এবং মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল রাদিফ।
__________________
কেটে গেল তিনদিন এই তিনদিনে রাদিফ তাশফার জন্য অতিষ্ট। তাশফাকে কাঁদানোর জন্যই তাশফা শোধ তুলেছে তবে রাদিফও তাশফাকে বেশ জব্দ করেছে। তাশফার পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না সবসময় ফাঁকিবাজ রাদিফও এ’কদিন নিজ দায়িত্বে তাশফার পড়াশোনার খেয়াল রেখেছে। আজও এক অবস্থা তাশফাকে ইংরেজি পড়তে দিয়ে গেছে রাদিফ,বেচারি তাশফা সামনে বই রেখে কলম কামড়ে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে গভীর ভাবনায় মগ্ন।

রাদিফ এসে বউয়ের এমন অবস্থা দেখে ধমকের সুরে,
– সামনে বই রেখে কি ভাবছো?

তাশফার হুস ফিরতেই জোরপূর্বক হেসে,
– কিছু না।

– আচ্ছা এবার বইটা দাও।

– আপনি পড়বেন নাকি?

– আমি পড়বো কেন? তোমাকে যেই পড়াটা দিয়ে গেলাম সেটাই এখন আমায় দাও দেখি কেমন শিখেছ।

– ইংরেজি ভালো লাগে না অন্য বই বের করি।

– অন্য বই আজ নয় আজ শুধু ইংরেজি।

– ইংরেজি পড়তে আমার ভালো লাগে না।

– পারলে তো ভালো লাগবে তুমি তো ইংরেজিতে দুর্বল এইভাবে চললে পরীক্ষায় ফেলটু মারবে।

– শুনুন আমি ইচ্ছে করেই ইংরেজি পড়ি না কারণ আমি বাংলাকে ভালোবাসি হুহ।

– হ্যা এখন কত কিছু বলবে এসব বাদ দিয়ে ঠিক মত পড়াশোনা করো।

তাশফা মনে মনে রাদিফকে হাজারটা গালি দিয়ে পড়ায় মনোনিবেশ করল। পড়া শেষ করে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
_______________
প্রতিদিনকার মতোই রাদিফ আর তাশফা মিলে ফজরের নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ একসঙ্গে গল্প করে নাস্তা করে রেডি হয়ে নিল। রাদিফ রাকা আর তাশফাকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে অফিসে চলে যায় রোজ আজও ব্যতিক্রম হলো না। অফিসে এসে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে রাদিফ।তাশফা আর রাকা ক্লাসে বসে আছে ক্লাসগুলো মনোযোগ সহকারে করছে।

কলেজ শেষে তাশফা আর রাকা একসাথে বের হলো বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে হুট করে তাশফা বলে উঠলো,
– রাকা বাবু তুই বাড়িতে চলে যা।

– তুই কোথায় যাবি?

– তোর ভাইকে বিরক্ত করতে।

– পাগল হয়েছিস ভাইয়া এখন অফিসে বিরক্ত বাড়িতে আসলে করিস।

– এতক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবো না তুই যা আমি শুধু যাবো বিরক্ত করবো তারপর বাড়িতে চলে আসব।

বলেই উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করল তাশফা। পেছন থেকে রাকা চেঁচিয়ে,
– তাশু আবারো দুষ্টুমি শুরু করে দিলি।

বিরক্ত নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল রাকা। রাদিফ অফিসে লাঞ্চ করে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। তার পি.এ দিশা অনুমতি ছাড়াই ভেতরে প্রবেশ করে,

– স্যার আপনাকে কিছু ফাইল দিয়েছিলাম সাইন করার জন্য ওগুলো কি দেওয়া যাবে।

– হুম আমি দেখে সাইন করে দিয়েছি ড্রয়ারে আছে নিয়ে যান।

তাশফা দরজায় উঁকি দিয়ে,’আসব?’

পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে রাদিফ সামনে তাকাতেই তাশফাকে দেখে কিছুটা চমকে গিয়ে,
– আসো।

দিশার দিকে তাকিয়ে,
– আপনি এবার যেতে পারেন।

দিশা মুখটা মলিন করে তাশফার দিকে রাগি দৃষ্টি দিয়ে চলে গেল।তাশফা ভেতরে আসতেই রাদিফ ব্রু নাচিয়ে,
– আমাকে মিস করছিলে নাকি? কলেজ ছুটির পর চলে আসলে।

– উহু না আসলে তো আর আপনার পি.এ কে দেখতে পেতাম না।

– আবারো সন্দেহ!

– পি.এ চেঞ্জ করুন তাহলে আর সন্দেহ করবো না।

– বললাম তো ঝামেলা আছে এছাড়া দিশা তো খারাপ না।

– হ্যা এখন তো ওই মেয়ে ভালো সারাক্ষণ লেগে থাকে তো আপনার সাথে।

– আবারো আজগুবি কথা।

– হু আমার কথা তো আজগুবি যান আপনার সাথে আর কোন কথা নেই আড়ি থাকুন আপনি।

বসা থেকে উঠে সামনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রাদিফ দ্রুত সামনে এসে,
– যাচ্ছো কোথায়?

– বাড়িতে।

– আমিও যাবো একটু বসো।

– আপনি কি বাড়ি চিনেন না, আমার বসতে হবে কেন।

– আচ্ছা মেয়ে পি.এ পাল্টে ছেলে পি.এ আনবো এবার হ্যাপি?

তাশফা ঠোঁট উল্টে,
– উহু।

– কেন?

– যেদিন পাল্টাবেন সেদিন খুশি হব।
__________________
এশার নামাজ পড়ে তাশফা আর রাকা বসে গল্প করছে। রাকা করুন দৃষ্টিতে তাশফাকে অনুরোধ করে,
– তাশু ভাইয়াকে বল না আরিয়ানের কথাটা।

– কতবার বলবো উনাকে এসব বলার মত সাহস নেই এমনিতেই উনার চোখে আমি বাচ্চা।

– বান্ধবীর জন্য সামান্য একটা কাজ করতে পারবি না কত মানুষ তো নিজের কিডনী পর্যন্ত দিয়ে দেয়।

– তাহলে তুই কিডনী চাইতি দিয়ে দিতাম।

– উফ আমি সিরিয়াস তাশু।

– এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইছিস কেন?

– বিয়ে করতে চাইছি না আমি শুধু চাইছি ভাইয়া বিষয়টা জানুক আর পারিবারিক ভাবে বিয়েটা পাকা হোক।

– আরিয়ান ভাইয়াকে বল তার পরিবার নিয়ে যাতে চলে আসে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।

– আরিয়ান তার পরিবারকে বলবে কিন্তু ভাইয়া জানার পর কারণ ভাইয়া এখনি আমাকে বিয়ে দিতে চায় না।

– তাহলে আর কি পরে করবি বিয়ে।

– পরে দেরি হয়ে যাবে কারণ আরিয়ানের বাবা ছেলের বউ হিসেবে বন্ধুর মেয়েকে পছন্দ করে রেখেছে।

– ওহ এই ব্যাপার আচ্ছা আজ বলবো।

রাতে খাবার খেয়ে শাশুড়ির হাতে হাতে সাহায্য করে ঘরে চলে আসে তাশফা। রাদিফ বিছানার এক পাশে বসে মোবাইল টিপছে তাশফা সোজাসুজি বসেছে কিভাবে শুরু করবে ভাবছে। রাদিফ মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে,
– কিছু কি বলবে?

– না।

– তাহলে এভাবে বসে আছো কেন? শুয়ে পড়ো কাল কলেজ যেতে হবে তো।

– আসলে আমার একটা কথা বলার ছিল।

– হুম বলো।

– আগে প্রমিস করুন রাগ করবেন না আর কাউকে বকাও দিবেন না ভেবে তারপর মতামত দিবেন।

রাদিফ ব্রু জোড়া খানিকটা কুঁচকে,
– আচ্ছা বলো।

তাশফা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
– রাকা একটা ছেলেকে ভালোবাসে কিন্তু আপনাকে ভয়ে বলতে পারছে না।

– ছেলেটা নিশ্চই আরিয়ান?

– আপনি চিনেন!

– না তোমার মুখেই তো নাম শুনেছিলাম।

– ওহ।

– কতদিনের পরিচয় ওদের? চেনা-জানা হলো কিভাবে?

– পরিচয় দু’বছরের তবে সম্পর্ক একবছর, আরিয়ান ভাইয়া কোথায় যেন রাকাকে দেখেছিল তারপরেই রাকাকে তার পছন্দ হয়ে গেছে রাকাকে বলার পর রাকা রাজি হয়নি প্রায় একবছর ধরে রাকার পিছনে ঘুরার পর রাকারও একসময় আরিয়ান ভাইয়াকে ভালো লাগে আর রাজি হয়ে যায়।

– ভালোই তো।

– আপনি আরিয়ান ভাইয়ার পরিবারের সাথে কথা বলবেন? রাকাকে বলবো ঠিকানা আর ফোন নাম্বার এনে দিতে?

– কেন কথা বলবো?

– ওদের বিয়ের ব্যাপারে।

– আমি এখন রাকার সাথে কথা বলবো।

– এত রাতে?

– মাত্র সাড়ে নয়টা বাজে তোমার ঘুম পেলে ঘুমিয়ে যাও আমি কথা বলে আসছি।

– বকবেন না কিন্তু।

– বকা দিবো কেন? শুধু কথা বলবো।

রাদিফ উঠে ঘর থেকে বের হয়ে গেল রাকার ঘরের উদ্দেশ্যে। তাশফার কিছুটা ভয় হচ্ছে তাই সেও পেছনে পেছনে যাওয়া ধরলো।

চলবে……