প্রেম প্রয়াস পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0
954

#প্রেম_প্রয়াস
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১১(শেষ)

‘নিহান এখানে কেন? কে ডেকেছে একে আবার?বাবা আর আম্মুর সঙ্গে এসেছে নাকি কিন্তু কেন এলো?

– আমি ইনভাইট করেছি তাই এসেছে।

তাশফা অবাক দৃষ্টিতে রাদিফের দিকে তাকিয়ে আছে তারমধ্যে নিহান তাদের কাছে এসে গেছে হাতের গিফটের প্যাকেটটা রাদিফের দিকে এগিয়ে দিয়ে,
– কেমন কাটছে নতুন জীবন?

– বেশ ভালো আবার তার সাথে সাথে আমি অতিষ্ট।

– নিশ্চই তাশফার দুষ্টুমির কারণে?

তাশফা ওদের দু’জনের কথা শুনছে তাশফার চোখে অনেক প্রশ্ন জমে আছে যা বুঝতে রাদিফের বেশিক্ষণ লাগল না। রাদিফ নিহানকে দেখিয়ে তাশফাকে বলল,
– নতুন করে তো চেনাতে হবে না নিহানকে তুমি চেনো তবে ওর আরেকটা পরিচয় আছে।

তাশফা কপালটা বেশ ক্ষানিকটা কুঁচকালো।রাদিফ হেসে,
– নিহান আমার কলেজ লাইফের বন্ধু একসঙ্গেই কলেজ আর ভার্সিটি পার করেছি।

– আগে তো বলেননি!

রাদিফ উৎসাহিত কন্ঠে,
– সারপ্রাইজ।

নিহান হাস্যজ্জল মুখে বলতে লাগল,
– দেখো তাশফা বন্ধুর বউ হিসেবে কিন্তু তোমাকে ভাবী বলতে পারবো না এমনিতেও আমাদের আলাদা আরেকটা সম্পর্ক আছে খালাতো ভাই-বোন।

তাশফা প্রতিত্ত্যুরে মুচকি হাসলো।নিহান বলল,
– আচ্ছা রাদিফ আন্টি কোথায়?

রাদিফ হাতের ইশারা দিয়ে দেখিয়ে,
– ওইতো ওখানে।

– আচ্ছা তাহলে আন্টির সঙ্গে দেখা করে আসি।

– হুম যা।

নিহান রাদিফের মায়ের কাছে চলে গেল তাশফা কোমড়ে হাত দিয়ে,
– নিহান যে আপনার বন্ধু আমায় বললেন না কেন?

– তখন যদি বলে দিতাম তাহলে সারপ্রাইজ পেতে কিভাবে?

– আপনি আগে থেকেই জানতেন নিহানের সঙ্গে আমার বিয়ে।

– আরে না আমি শুধু জানতাম নিহান বিয়ে করছে আমায় দাওয়াত দিয়েছিল আর যখন তোমার বিয়ে আটকাতে গিয়েছিলাম তখন জানতে পেরেছি তোমার সঙ্গে নিহানের বিয়ে এজন্যই খুব সহজে বিয়ে ভাঙা গেছে।

– ওহ।

ভালোয় ভালোয় রিসেপশন শেষ হয়ে গেছে খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার যার মত চলে গেছে।তাশফার বাবা-মায়ের অনুরোধে রাদিফ তাদের বাড়িতে যেতে রাজি হয়েছে। দু’দিন থেকেই রাদিফ তাশফাকে নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে তবে নিজের বাড়ির হাওয়া পেয়ে তাশফার বাঁদরামি বেড়ে গেছে।
________________
মাঝরাত রাদিফ ঘুমাচ্ছে কিন্তু মুখে কখন ধরেই সুড়সুড়ি লাগছে।চোখ জোড়া কোনভাবেই খুলতে পারছে না ঘুমের জন্য কিন্তু সুড়সুড়িটা এবার বেশ গভীর হয়েছে কেউ তার গালে চুমু খাচ্ছে। রাদিফ ঘুমকে এড়িয়ে চোখ জোড়া খুলে ফেলতেই অবাক হয়ে গেছে।তাশফা রাদিফের মুখের উপর ঝুঁকে আছে ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি চোখে মায়াভরা নেশা। রাদিফ একটা ঢুক গিলে,

– কি হচ্ছে এসব? চুমু খাচ্ছো কেন? ভূতে ধরেছে নাকি কিছু খেয়েছ?

– কিছু খাইনি তবে প্রেম রোগে ধরেছে।

– এভাবে চুমাচুমি করাকে প্রেম বলে নাকি? এক ঘুমন্ত অবলা পুরুষকে পেয়ে এমন করে অত্যাচার করতে লজ্জা করছে না?

– এগুলোকে অত্যাচার বলে না এগুলোকে ভালোবাসা বলে।

– কে বলেছে?

– বিকেলে একটা মুভিতে দেখেছি নায়িকা ঘুমাচ্ছিল নায়ক গিয়ে চুমু খাচ্ছে রাকা বলেছে এটাই ভালোবাসা আপনি তো আনরোমান্টিক তাই আমিই দিলাম।

– আহা কি রোমান্টিক বউ আমার।

– যাহ গলায় কামড় মারতেই তো ভুলে গেছি।

– কিহহ! কামড় মারবে কেন?

– মুভিতে দেখেছি কামড় দিয়েছে গলায় কি যেন একটা নাম বলল?

রাদিফ ব্রু নাচিয়ে,
– লাভ বাইট?

– হুম আপনাকেও দেই।

রাদিফ দ্রুত তাশফার হাত ধরে নিজের সঙ্গে আবদ্ধ করে,
– ওগুলো মুভি আর মুভি কখনো সত্যি হয় না মানুষ কখনো মানুষকে কামড় দেয় না।

– কিন্তু..

– আর কথা শুনতে চাই না চুপ করে ঘুমাও।

– প্রতিদিনই তো ঘুমাই।

– আজও ঘুমাও।

– আনরোমান্টিক বজ্জাত লোক একটা।

– গালি দিয়ে লাভ নেই ঘুমাও।

আরো কিছুক্ষণ বিড়বিড় করে রাদিফকে বকা দিয়ে ঘুমিয়ে গেল তাশফা। তাশফা ঘুমাতেই রাদিফ তাশফার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে,

– তোমার আচার-আচরণ ভাবনা কাজ-কর্ম এখনো বাচ্চাই আছে কি করলে নিজেই হয়তো বুঝলে না।
_______________
দিনগুলো খুব দ্রুত পেরিয়ে যায় তাশফা আর রাকার পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে এসেছে। সবসময় তাশফা পড়া ফাঁকি দিলেও পরীক্ষার আগে সিরিয়াস হয়ে যায় এবারও তাই হয়েছে।তাশফা আর রাকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দেখতে দেখতে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে তাশফা আর রাকা পড়াশোনায় ব্যস্ত রাদিফ তাদের পরীক্ষা দিতে নিয়ে যায় আবার নিয়ে আসে। পরীক্ষার জন্য তাশফার দুষ্টুমি অনেকটা কমে গেছে খুব শান্ত মেয়ে হয়ে গেছে।

একপর্যায়ে সবগুলো পরীক্ষা শেষ হয়েছে ওদের দু’জনের পরীক্ষাই বেশ ভালো হয়েছে। রেজাল্ট দেওয়ার আগ পর্যন্ত বেশ লম্বা একটা ছুটি কিছুদিনের জন্য পড়াশুনাও করতে হবে না।

ড্রয়িং রুমে বসে রাকা আর তাশফা টিভি দেখছে।রাদিফ সকালেই অফিসে চলে গেছে দুপুরে খাবার খেয়ে ওদের মা ঘুমিয়ে গেছেন আর ওরা দুই বান্ধবী মিলে টিভি দেখতে ব্যস্ত। হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠল রাকা তাশফার উদ্দেশ্যে,

– কিরে তাশু এই সময়ে বাড়িতে আবার কে আসলো?

– তুই যেখানে আমিও সেখানেই তাহলে আমায় জিজ্ঞেস করছিস কেন আমি কিভাবে জানবো?

– আচ্ছা আচ্ছা আমি গিয়ে দেখে আসছি।

বলেই রাকা উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই রাদিফ ভেতরে প্রবেশ করল।রাকা প্রশ্ন করল,
– কি ব্যাপার ভাইয়া আজ এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসলি!

– দরকার ছিল তাই এসেছি।

– বুঝতে পেরেছি কি দরকার।

রাদিফ কপাল কুঁচকে,
– কি?

– তাশুকে মিস করছিলি তাই না? এত সুন্দর দুষ্টু একটা বউ মিস করাটা স্বাভাবিক।

– মাথায় একটা গাট্টা মারব খুব পাকা হয়ে গেছিস।

– সত্যি কথা সবার কাছেই তেতো তবে তোর ভাগ্য ভালো।

– কেন কেন!

– আমি মেয়ে সেই জন্য।

– ছেলে হলে কি হত?

– আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে তুই কি আর তাশুরে পাইতি নাকি আমি নিজেই তাশুরে বিয়ে করে ফেলতাম আর তুই হয়ে যেতি তাশুর ভাসুর।

রাকার মাথায় আস্তে একটা চাপড় মেরে,
– তোর চিন্তা ভাবনা গুলোও তাশফার মত বাচ্চা বাচ্চা হয়ে গেছে।

রাদিফ ঘরে চলে গেল তাশফা রাদিফকে দেখে রাকাকে জিজ্ঞেস করল,
– ব্যাপার কি তোর ভাই এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে।

– মনে হয় তোরে মিস করছিল।

– তোর ভাই আমাকে মিস করবে কেন?

– তোরে করবে না তো কাকে করবে তুই তো একমাত্র পিচ্চি বউ।

তাশফা নিরব,রাকা চোখ মেরে,
– তাশু বাবু তুই প্রমাণ করে দিলি বান্ধবীর ভাই মানে জামাই।

– হুহ এবার ভাবী বলে ডাক।

– পারবো না বান্ধবীরে আবার কিসের ভাবী ডাকবো দূর।

– হুশ…

– এখনো এখানে বসে আছিস কেন? যা ভাইয়ার কাছে যা।

– তোর কি চুপ থাক অসভ্য মেয়ে।

– এখন তো আমি অসভ্য।

দু’জনে কিছুক্ষণ ঝগড়া করে নিজেদের ঘরে চলে গেল। ওদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক এমনি এই ঝগড়া, মারামারি আবার কিছুক্ষণ পরেই গলায় গলায় ভাব কেউ কাউকে ছাড়া বেশিক্ষণ থাকতেই পারে না।

রাদিফ বাড়ির সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে বিকেলের দিকে নাকি অতিথি আসবে কিন্তু কারা আসবে তা এখনো বলেনি। রাকা আর তাশফা বেশি আগ্ৰহী দেখার জন্য কোন অতিথি আসবে।

অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য রাদিফ সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। বিকেল হয়ে গেছে দরজায় কলিং বেল বাজতেই রাদিফ গিয়ে দরজা খুলে দিল ভেতরে পরিচিত মানুষদের দেখেই রাকার ভেতরটা কেঁপে উঠল। রাদিফ সবাইকে সোফায় বসাতেই রাদিফের মা উপস্থিত হয়ে,

– রাদিফ উনারা এখানে? তুই না বললি অতিথি আসবে।

– আম্মু উনারাই সেই অতিথি।

রাদিফের মা আরো কিছু বলতে যাবেন তার আগেই বসা থেকে একজন মহিলা উঠে গিয়ে উনার হাত ধরে,

– আপা আগের কথাগুলোর জন্য আমরা লজ্জিত নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছি আসলে ওইভাবে কথা গুলো বলা উচিত হয়নি বয়স হয়েছে কি বলতে কি বলে ফেলেছি।

– মানুষ মাত্রই ভুল হয় তবে আপনারা বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক।

– আমি আমার ভুলটা শুধরে নিতে চাই রাকা মা’কে নিজের ছেলের বউ করে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই।

– কিন্তু আমার মেয়ে আপনাদের মন মত নয় অযোগ্য।

– বললাম তো আপা আর লজ্জা দিবেন না কেউই যোগ্য কিংবা মন মত হয় না নিজের মন মত করে নিতে হয় এবং মানিয়ে নিতে হয় আমার কোন মেয়ে নেই দু’টো ছেলে বড় ছেলেকে বিয়ে করিয়ে একটা মেয়ে এনেছি এবার আপনার মেয়েটাকেও আমার চাই।

রাদিফের মায়ের দৃষ্টি রাদিফের দিকে রাদিফ মায়ের দিকে তাকিয়ে,
– উনারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন এছাড়া আরিয়ান আমার অফিসে গিয়ে আমাকে অনেকবার অনুরোধ করেছে যাতে ওদেরকে মেনে নেই সেও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে মাফ চেয়েছে আর আম্মু তুমিই তো বলো মাফ চাইলে মাফ করতে হয়।

– হুম।

আরিয়ানের মা গিয়ে বসলেন হাস্যজ্জল মুখে,
– এবার বিয়ের কথা বার্তা শুরু করা যাক।

– হুম তবে বিয়েটা যখন রাকা আর আরিয়ানের সেহেতু রাকার মতামত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আরিয়ানের বাবা সহমত পোষণ করে,
– হ্যা অবশ্যই রাকা মা কোথায় তাকে এখানে আনা হোক।

– আচ্ছা আম্মু তুমি উনাদের সঙ্গে কথা বলো আমি গিয়ে রাকাকে নিয়ে আসছি।

রাদিফ উঠে রাকার ঘরের দিকে পা বাড়ালো। আরিয়ানের বাবা-মা রাকার মায়ের সঙ্গে কথা বলছেন।রাকা বিছানায় বসে আছে রাদিফ ভেতরে প্রবেশ করল তাশফাও বসে ছিল।রাদিফ তাশফার দিকে তাকিয়ে,

– রাকার সঙ্গে আমার কথা আছে তুমি ঘরে যাও।

তাশফা মাথা নাড়িয়ে চলে গেল এবার রাকা বলল,
– আবার কেন উনাদের আনলে ভাইয়া আমি তো সব ভুলে যাচ্ছিলাম আরিয়ানের সঙ্গেও সব কিছু শেষ করে দিয়েছি কবেই।

– ভুলে যাস না আমি তোর বড় ভাই তোর কোনটা পছন্দ কোনটা অপছন্দ কখন মন খারাপ থাকে আর কখন মন ভালো আমার থেকে কেউ ভালো করে জানে না। সবার সামনে হাসি খুশি থাকলেও ভেতরে ভেতরে যে তোর ভেতর কষ্ট আমি জানি।দিনে হাসলেও দিনশেষে যে চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজাস আমার জানা কিন্তু দেখেও না দেখে ছিলাম কারণ আমি চেয়েছিলাম আরিয়ান আমার কাছে আসুক নিজের ভুল স্বীকার করুক। আরিয়ান নিজের ভুল স্বীকার করেছে অনেকবার আমার কাছে মাফ চেয়ে তোকে চেয়েছে এমনকি ওর বাবা-মাও শেষে আমার কাছে এসেছিল তারপর আর না করতে পারিনি তবে আজও আমি তোকে জোর করব না নিজের মনের কথা শুন আর হ্যা আমার আর মায়ের কোন আপত্তি নেই।

রাকা ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে চোখের পানি যেন এখনি পরে যাবে।রাদিফ আলতো করে বোনকে জড়িয়ে ধরে,
– এখন কি কান্না করার সময়? আমি চাই আমার বোন যেন সবসময় হাসি খুশি থাকে।

চোখের পানি মুছে দিয়ে,
– তাহলে যাওয়া যাক?

– আমি ওখানে যাবো না ভাইয়া যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তুমি নিয়ে নাও তুমি যা বলবে তাই করব।

– তাহলে আমি গিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলি?

রাকা মৃদু হাসলো রাদিফ বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বাইরে আসলো।দুই পরিবার মিলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলেছে কিন্তু আরিয়ানের মনে চাপা কষ্ট এখনো লুকিয়ে আছে রাকাকে দেখতে না পেয়ে।রাদিফ এবং রাদিফের মা জোর করলেও আরিয়ানের বাবা-মা রাতের খাবার খাননি চলে গেছেন।

বাড়িতে বিয়ের উৎসব লেগেছে বোনের বিয়ের জন্য রাদিফ অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যার কারণে তাশফাকে ঠিক মত সময় দিতে পারছে না তবে তাশফার এতে কোন আক্ষেপ নেই সে তো প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর বিয়ের জন্য অনেক এক্সাইটেড।

বিয়ের দিন চলে এসেছে অনেক এলাহী আয়োজন করা হয়েছে নিজের বোনের বিয়ে অনেক জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দিচ্ছে রাদিফ।আরিয়ানের পরিবার,আত্মীয়-স্বজন এত আয়োজন দেখে চমকে গেছে তারা যতোটা ভেবেছিল তার থেকেও বড় আয়োজন করা হয়েছে।ভালোয় ভালোয় বিয়েটা শেষ হয়ে গেছে এবার বিদায় পালা রাদিফের এবার অনেক কষ্ট হচ্ছে অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রাখছে কারণ সে নিজেকে সামলাতে না পারলে রাকা আরো কান্না করবে। বিদায়ের সময় রাকা অনেক কান্না করছিল তাশফাও কেঁদে দিয়েছিল একসময় রাকাকে নিয়ে আরিয়ানের গাড়িটা চলে গেল দৃষ্টির বাইরে।

রাকার মায়ের অবস্থা খারাপ মেয়ে চলে যাওয়ায় বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তাশফাই উনাকে সামলিয়েছে জোর করে খাবার আর ওষুধ খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে ঘুমানোর পর নিজের ঘরে গিয়েছে। রাদিফ বিছানায় আধশোয়া হয়ে কপালে হাত দিয়ে রেখেছে তাশফা ধীর পায়ে কাছে গিয়ে,

– রাতে খাবেন না?

– না তুমি খেয়ে শুয়ে পড়।

তাশফা ঘরের বাইরে চলে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলো হাতে খাবারের প্লেট।রাদিফের পাশে বসে,
– না খেলে অসুস্থ হয়ে যাবেন আপনার মত এত বড় মানুষকে আমি কিভাবে সেবা করব বলুন তো?

রাদিফ সোজা হয়ে বসে,
– সেবা করতে হবে না আমারটা আমি বুঝে নিব।

তাশফা কথার ফাঁকেই এক লোকমা খাবার রাদিফের মুখে জোর করে ঢুকিয়ে দিয়ে,
– আপনারটা আমি বুঝবো আপনি খাবেন কি খাবেন না সেটাও আমি ডিসাইড করব।

রাদিফ মুখের খাবার শেষ করে,
– জুলুম করছো আমার সঙ্গে এভাবে কেউ মুখে খাবার দেয়।

– আপনি যদি ভালোয় ভালোয় খেতেন তাহলে তো আর এভাবে খাওয়াতে হতো না। এত কথা ভালো লাগে না ভালো ছেলের মত খাবার খেয়ে নিন নইলে খবর আছে।

রাদিফ বাধ্য হয়ে তাশফার হাতে খাবার খেয়ে নিল তবে আজ তাশফাকে সে নতুন এক রূপে আবিষ্কার করল যার মধ্যে দায়িত্বশীল বউয়ের রূপ ফুটে উঠেছে।

– তুমি খাবে না?

– আমি কি আপনার মত নাকি পেটকে কষ্ট দিব মা’কে খাইয়ে খেয়ে নিয়েছি।

তাশফা গিয়ে প্লেট রেখে পুনরায় ঘরে এসে লাইট নিভিয়ে দিয়ে একপাশে শুয়ে পড়ল।
________________
হালকা কাজের শাড়ি এবং কিছু গহনা দিয়ে সাজিয়ে রাকাকে আরিয়ানের ঘরে বিছানায় বসানো হয়েছে।ঘর পুরোপুরি ফাঁকা দরজার আওয়াজ শুনে রাকা সামনে তাকাতেই আরিয়ানকে দেখতে পেল। আরিয়ান এসে রাকার পাশে বসে অপরাধী গলায়,

– এখনো কি আমার উপর অভিমান করে আছো? আমাকে কি মাফ করা যায় না? জানো তুমিহীনা প্রত্যেকটা মুহূর্ত আমার বিষন্নতায় ছেয়ে ছিল একটা অস্বস্তিতে কেটেছে দিনগুলো।

রাকা আরিয়ানের দিকে তাকাতে পারছে না হয়তো লজ্জায় নয়তো অভিমানে।রাকার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে আবারো বলতে লাগল,
– কি হলো কিছু বলছো না কেন আমি তো নিজের ভুল স্বীকার করেছি ভাইয়ার কাছেও মাফ চেয়েছি তাহলে।

– তোমার প্রতি আমার কোন অভিমান অভিযোগ নেই।

আরিয়ান নিজের হাতটা বাড়িয়ে,
– কথা দাও সারাজীবন এভাবেই আমার পাশে থাকবে আর আমাকে ভালোবাসবে।

রাকা আরিয়ানের হাতটি মুঠোবন্দী করে,
– কথা দিলাম।

ঘরে পুরোপুরি নিস্তব্ধতা ডিম লাইটের আবছা আলোয় দু’জন মানুষের অবয়ব দেখা যাচ্ছে কিন্তু কারো সাথে কারো কথা নেই। আচমকা রাদিফ তাশফাকে এক টানে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিল।তাশফার শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হয়ে আসছে নিস্তব্ধতা ভেঙে রাদিফ বলতে লাগলো,

– তাশফা রানী কি আমার উপর রাগ করেছে?

তাশফা কিছু বলল না চুপ করে আছে রাদিফ পুনরায় বলল,
– আজ তোমাকে জামদানী শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছিল চোখ ফেরানো দুষ্কর ছিল।

– আপনি তো ব্যস্ত ছিলেন আমার দিকে তাকানোর সময় পেলেন কিভাবে?

– যত ব্যস্তই থাকি না কেন তোমার জন্য আমি সবসময় ফ্রি।

– হুহ এই জন্যই এ ক’দিন ঠিক মত ফিরেও তাকাননি কথা বলারও সময় পাননি ইগনোর করেছেন।

– বিয়ের সব কাজ একা সামলাতে হয়েছে তাই সময় দিতে পারিনি তাই বলে এই নয় যে তোমার খবর রাখিনি। তুমি খেয়েছ,কি করছো, কিভাবে সেজেছো কি পরেছো সব কিন্তু আমার জানা।

– কেয়ারিং হাজব্যান্ড।

– তুমি কেয়ারিং বউ হতে পারলে আমিও কেয়ারিং হাজব্যান্ড।

– হুম এবার প্রেম প্রয়াস করে ফেলুন।

– প্রেম প্রয়াস এটা আবার কি?

– এটা মানেই জানেন না সারাক্ষণ গম্ভীর হয়ে থাকলে জানবেন কি করে।

– তুমি তো জানো তাহলে বলে দিলেই হয়।

– প্রেম শব্দটির অনেক অর্থ আছে তবে আমার কাছে প্রেম মানে প্রণয়, ভালোবাসা আর প্রয়াস অর্থ প্রচেষ্টা দু’টো মিলিয়ে হচ্ছে ভালোবাসার প্রচেষ্টা।প্রেম প্রয়াস অর্থ ভালোবাসার প্রচেষ্টা আমি আপনাকে আগে থেকেই ভালোবাসি তাই নতুন করে প্রচেষ্টা করতে হবে না কিন্তু আপনি তো বাসেন না তাই আপনার জন্য প্রেম প্রয়াস।

– পিচ্চিটা আর কিছু পারুক না পারুক ভালোবাসা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে দেখছি।

– আপনার জন্যই জানতে হয়েছে এবার বলুন কবে আমার প্রতি আপনার প্রেম প্রয়াস সফল হবে?

– ওসব প্রেম প্রয়াস করতে পারবো না তবে তোমাকে সবসময় এমন রূপে এমন করেই আমার জীবনে চাই সবসময় এমন থেকো আমার পিচ্চি বউ।

– হুম থাকব আপনি বললেও থাকব না বললেও থাকব তবে আমায় আর পিচ্চি বলবেন না আমি বড় একটা মেয়ে।

– তুমি সবসময় আমার কাছে আমার পিচ্চি তাশফা রানী হয়েই থাকবে।

– দূর বজ্জাত লোক একটা।

দু’জনেই হেসে দিল নতুন করে নতুন রূপে শুরু হলো তাদের জীবন।

(~~সমাপ্ত~~)