প্রেম প্রেম পায় পর্ব-১০+১১

0
316

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব দশ

১০.
ফায়াদের কথায় কাশি উঠে গেল অপরাজিতার।যেন তেন কাশি না একেবারে দম আটকানো কাশি । এই গম্ভীর, কথা কম বলা নিরামিষ ডাক্তার ফ্লার্ট ও করতে পারে? তাও একেবারে হৃদয় ভেদ করা ফ্লার্ট!! ভাবতেই অপরাজিতার কাশি যেন আরো বেড়ে গেলো।তার কাশি দেখে ফায়াদ অস্থির হয়ে উঠলো। টেবিলে পানির বোতল ছিল। সে একটা বোতল ছুটিয়ে পান খাওয়ালো অপরাজিতা কে। কাশি একটু কমতেই স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়লো সে। নিজের জায়গায় ঠিক করে বসে অপরাজিতার পানে দৃষ্টি দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘এভাবে রিয়েক্ট করলে কেন?’

অপরাজিতা এখনো পানি খাচ্ছে। খাবার নিয়ে এসেছে একজন।খাবার রেখে গেলো। কিন্তু অপরাজিতা এখনো পানি খাচ্ছে। কোনো কথার জবাব দিচ্ছে না।
শেষে ফায়াদ তার বোতল টা কেড়ে নিল।

‘আরে পানি খা..’

‘খাবার খাও’

‘আচ্ছা’

শান্ত এই কন্ঠ শুনলে অপরাজিতা আর দিরুক্তি করতে পারে না। তাছাড়া একটু আগে যা করলো এই লোক! গালে হাত বুলিয়ে দাওয়া আর সে সব আদুরে দুষ্টু শব্দ যেন মাথায় গেথে বসে গেল। ভাবতে লজ্জাও লাগছে৷
আচ্ছা! ফায়াদ যদি কখনো অপরাজিতাকে ভালোবাসি বলে তাহলে অপরাজিতার কি হবে? সামান্য ফ্লার্ট এই অপরাজিতার গরম লেগে গেছে। আচ্ছা ফ্লার্ট তো শব্দ দিয়ে করতে পারতো। চুল গুছিয়ে দেওয়া, গালে হাত বুলিয়ে চোখে চোখ রেখে বলা টা তো হৃদয়ে ছুড়ি চেপে ধরার মতো।ইশশ!
এগুলো ভাবছে আর খাচ্ছে অপরাজিতা।খাওয়া আর ভাবা ছাড়া অন্যদিকে মন আপাতত তার নেই। তার ভাবনাতে ফায়াদ এতোটাই বিচরণ করছে যে বাস্তব ফায়াদ পাত্তা পাচ্ছেনা ।
ফায়াদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে অপরাজিতা কে। কিন্তু অপরাজিতার কোনো খবর নেই৷ বেশ কিছুক্ষন পর অপরাজিতার হুশ হলো। সে যে খেতে আর ভাবতে গিয়ে পাশের জনকে ভুলেই বসেছে তার মাথায় এখন খেলেছে বিষয়টা।পাশে তাকাতেই দেখতে পেল ফায়াদ তার পানের চেয়ে আছে। অপরাজিতা ফায়াদের পানে তাকাতেই ফায়াদ একটা হাসি দিয়ে উঠে দাড়ালো। দাঁড়িয়ে অপরাজিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘বাকিটুকু শেষ করে এখানেই বসো।বিল দিয়ে আসছি।’

বলে সে মিটিমিটি হাসতে হাসতে চলে গেল। ফায়াদের কথা শুনে সে টেবিলের দিকে নজর দিল। টেবিলে তাকিয়ে তার কান্না করতে ইচ্ছা করছে৷ এতো গুলা খাবার সে একাই খেয়ে ফেলেছে। অল্প আছে কিছু এখনো। এজন্যই কি ফায়াদ হাসছিল?
ভাবতেই অপরাজিতার লজ্জাতে সব খাবার আবার পেট থেকে বের করতে ইচ্ছে করছে৷ সে ভাবলো,
‘উনি যদি আমাকে খাদক ভাবে?’

ফায়াদ এসে পড়লো বিল দিয়ে।
‘খাওয়া শেষ হলে….’

কথা শেষ হওয়ার আগেই অপরাজিতা বলল,
‘দেখুন! আমি কিন্তু খাদক না। আমাকে খাদক ভাব্বেন না।’

অপরাজিতার কথা শুনে ফায়াদের জোড়ে হাসতে ইচ্ছা করছে কিন্তু সে হাসি চেপে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
‘খাদক ভাবার কি আছে? তুমি খেতে পছন্দ করো এটা আমি আগে থেকেই জানি’

অপরাজিতা অসহায় চোখে তাকালো। সে আসলেই খেতে ভালোবাসে। তাই বলে পাশের জনকে খেয়ালই করলো না আজকে?সব দোষ উনারই তো। উনার ভাবনাতেই উনাকে ভুলে গিয়েছে।
অপরাজিতার মনোভাব বুঝতে পেরে ফায়াদ স্বাভাবিকভাবে বলল,
‘এতো লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। তোমার জন্যই সব অর্ডার করেছিলাম।আমি একটা কফি খেয়েছি।’

ওখান থেকে বের হয়ে ফায়াদ অপরাজিতা কে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।অপরাজিতা গাড়িতে বসে বলল,
‘গাড়ি কেন?’

‘এলাকার মধ্যে ছেলে নিয়ে ঘুরবে?’

অপরাজিতা আর দিরুক্তি করলো না।অনেক্ষন নিরবতা চলল গাড়ির মধ্যে। নিরবতা ভাঙতে অপরাজিতা বলল,
‘আমরা কোথায় যাচ্ছি?’

ফায়াদ ড্রাইভ করতে করতে বলল,
‘কোথায় যেতে চাও?’

‘আপনি আমার সাথে এতো ভালো বিহেব কেনো করছেন?’

কাঙ্ক্ষিত উত্তর না পেয়ে একপলক তাকালো অপরাজিতার দিকে। আবারো ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
‘খারাপ বিহেব করেছি কবে?’

অপরাজিতা ঢোক গিলে কিছুটা হাসফাস করে বলল,
‘না মানে!আপনি এরকম করলে তো আমার প্রেম প্রেম পায়’

তারা এসে পৌছালো। গাড়ি থামিয়ে এবার অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে খুবই স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘তো করো প্রেম!’

অপরাজিতা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,
‘কার সাথে?’

ফায়াদ মুচকি হেসে বলল,
‘যার সাথে তোমার ইচ্ছা!’

অপরাজিতা অবাক হলো। সে এতোটাই অবাক হলো যে কথা বলতে ভুলে গেল।ফায়াদ সময় দিল অপরাজিতা কে। বেশ কিছুক্ষন পর অপরাজিতা বলল,
‘আগে তো কখনো এটা বলেন নি?’

ফায়াদ তার সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বলল,
‘আমি বাচ্চাদের সাথে প্রেম করি না।পরে দেখা যাবে তোমার সাথে তাল মিলালে পড়ালেখা সব হাওয়ায় আর তারপর তোমার বাপ এসে আমাকে বলবে আমি তার মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি।’
পরক্ষনেই অপরাজিতার দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল,
‘যদিও তুমি এখনো কিছুটা বাচ্চা তবে চলবে।’

বলে সে গাড়ি থেকে বের হলো। অপরাজিতা শিউরে উঠলো ফায়াদের দৃষ্টি দেখে। এটাই কি তার নিরামিষ ডাক্তার? তার ভ্রম নয় তো!নিরামিষ থেকে আমিষ হলো কবে এটা?সে অবাক এর উপর অবাক।
ফায়াদ গাড়ি থেকে বের হয়েছে খেয়ালে আসতেই সেও বের হলো। দেখলো ফায়াদ তার জন্যই দাঁড়িয়ে আছে।

‘ভাবনা শেষ? আসো সামনে একটা নদী আছে। একটু হাটতে হবে।’

তারা পাশাপাশি হাটতে লাগলো। অপরাজিতা ভিতরে ভিতরে খুব অস্থির হচ্ছে। আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যাচ্ছে। ফায়াদ খেয়াল করলো,
‘কি বলবা বলে ফেলো’

অপরাজিতা অস্থিরতা নিয়ে থেমে থেমে বলল,
‘আপনি কি আমাকে প্রপোজ করলেন?’

‘তাই মনে হচ্ছে?’

অপরাজিতা প্রশ্ন করলো,
‘না??’

ফায়াদ হেসে দিয়ে বলল,
‘হ্যা’

নদীর পারে এসে বসলো তারা। আকাশের পানে চেয়ে অপরাজিতা বলল,
‘স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।’

ফায়াদ তাকালো অপরাজিতার পানে। মেয়েটার চোখ অশ্রুতে টলমল করছে। কাঙ্ক্ষিত কিছু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পেয়ে গেলে অনুভূতি টা খুবই আবেগীয়।ফায়াদ অপরাজিতার গালে হাত দিয়ে তার দিকে ফিরালো। চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘স্বপ্ন নয়।’

অশ্রু কণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।সে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল,
‘তার মানে আমাকে আর আপনাকে হারানোর ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে না, তাই না?’

কথাটা শুনে ফায়াদের ইচ্ছা করলো মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিতে। মেয়েটা তাকে এতো ভালো কেন বাসে?সে তো এতো ভালোবাসা পাওয়ার মতো কিছু করে নি। তাকে হারানোর ভয় মেয়েটাকে না জানি কতোটা যন্ত্রণা দিয়েছে। সে ভীষণ নরম ও আদুরে সুরে উত্তর দিল,
‘না’

‘ভালোবাসেন?’

‘বাসবো’

অপরাজিতা আবারো আকাশে পানে চাইলো।এবার তার মুখে হাসি। প্রাপ্তির হাসি। ফায়াদের চোখে এক অন্যরকম দৃশ্য। আর লুকোচুরি নয়।অনুভুতিরা ডানা মেলে মুক্তভাবে উড়ুক।

‘আমি আপনার কাধে মাথা রাখি?’

ফায়াদ তার স্বভাবসুলভ গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘যদি না বলি?’

অপরাজিতা চমৎকার এক হাসি দিয়ে বলল,
‘শুনবো না’

বলে সে মাথা রাখলো ফায়াদের কাধে।হেসে দিল ফায়াদ। জীবনে সবকিছু নিয়ম মেনে হয় না। কিছু সময় নিয়ম ভঙ্গ করতেই আনন্দ। এই যে তার পাশের মেয়েটাকে ভালোবাসা তার নিয়মের মধ্যে ছিল না।তার জীবনসঙ্গি হিসেবে সে ম্যাচুরড কাউকে চাইতো কিন্তু তার অনুভূতি সব এই ইমম্যাচুর মেয়েটার মধ্যে। আর এতেই সুখ।

অপরাজিতা গুন গুন করছে,
‘হতে পারে এ পথের শুরু
নিয়ে যাবে আমাদের অজানায়
তুমি আমি আমাদের পৃথিবী
সাজিয়ে নিবো ভালোবাসায়।

ভালোবাসি বলে দাও আমায়
বলে দাও হ্যাঁ সব কবুল
তুমি শুধু আমারই হবে
যদি করো মিষ্টি এই ভুল।’

ফায়াদ ধীরে ধীরে আওড়ালো,
‘কবুল’

(চলবে)

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব এগারো

১১.
সন্ধ্যা হওয়ার একটু আগে দিয়ে ফায়াদ অপরাজিতা কে বাসায় পোছে দিল। গাড়িটা অপরাজিতার বাসা থেকে একটু দূরে থামিয়েছে।অপরাজিতা এখনো নামছে না। কিছু একটা ভাবছে ভীষণ মনোযোগ দিয়ে। ফায়াদ গাড়ির পিছনে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
‘বলো।’

অপরাজিতা ভাবনা থেকে ছুটে গিয়ে ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
‘জি?’

আগের মতো থেকেই বলল,
‘কিছু একটা ঘুরছে তোমার মাথায়। বলো।’

অপরাজিতা উড়না পেচাতে পেচাতে বলল,
‘আগে তো কখনো এরকম অনুভূতি দেখান নি৷ হঠাৎ? আর কেন?’

ফায়াদ এবার চোখ খুলল।সোজা হয়ে বসে অপরাজিতার দিকে ফিরল।তারপর তার সেই চমৎকার কণ্ঠে নরম সুরে বলল,
‘তুমি আমাকে এতো বছর থেকে চিনে এটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে আমি ভীষণ প্রাক্টিক্যাল একজন মানুষ।আবেগ দিয়ে কাজ টা আমি একটু কমই করি। তুমি আমাকে যখন অনুভুতি ব্যক্ত করো তুমি তখন মাত্র ক্লাস টেনে পড়।অতোটুকু একটা বাচ্চার ভালোবাসা নামক আবেগ নিশ্চয়ই আমার মতো যুবকের মনে জায়গা করতে পারবে না৷আর তুমি খুবই দুষ্ট আমি প্রথম দিন দেখেই বুঝেছি। তোমাকে বুঝালাম, ইগ্নোর করলাম তবুও তুমি থামলে না। বরং তোমার পাগলামি বেড়েই যাচ্ছে। ফোন দিতে, দেখতে আসতে। আমি জানতাম মানা করে লাভ নেই। তুমি মানবে না। একবার একটু কঠোর হলাম তাতে তোমার সে কি কান্না!!আমার এখনো মনে আছে। তাই ভেবেছিলাম আচ্ছা করুক যা ইচ্ছা। নিজের টা নিজে বুঝবে। এভাবে দেড় বছর গেল৷ তুমি যেভাবে ভালোবাসা ব্যক্ত করছিলে একটা সময় সেই ভালোবাসা আমাকে ভাবাতে লাগলো। যতোই হোক ছেলে মানুষ আমি। আমারো ইচ্ছে হয় কারো ভালোবাসায় বিচরণ করতে।কিন্তু তুমি আমার থেকে ভীষণ ছোট। কলেজে মাত্র তখন৷ আমি যদি সাড়া দিতাম তুমি সারাদিন আমাকে নিয়েই পড়ে থাকতে। তাই চাচ্ছিলাম না এক্সাম এর আগে কোনো প্রকারে কোনো ডিস্ট্রাকশন হোক তোমার।’

অপরাজিতা অবাক হয়ে শুনছিল। মনে মনে ভাবলো,
‘এই লোক এতোকিছু ভেবে অনুভূতি বলল।আর আমি তো ঠাস করে বলে দিসিলাম যে উনাকে আমার লাগবে। উনাকে পাওয়ার জন্য পড়ালেখা করলাম কতো পরিশ্রম করে। উনি তো ব্রিলিয়ান্ট মানুষ বুঝে গেল উনাকে পেলে পড়তাম না’

ফায়াদ একটু থেমে একটু বিচলিত ভাবে বলল,
‘তোমাকে আমি ভালোবাসি কিনা জানি না৷বাসলেও কতোটুকু তা আমার জানা নেই। শুধু এতোটুকু জানি তোমাকেই লাগবে আমার এখন।তোমার ভালোবাসা টুকু হারাতে চাই না।’

অপরাজিতার ইচ্ছে করছে খুশিতে নাচতে। কিন্তু এই মুহুর্তে সে নাচবে না। বাসায় গিয়ে নাচবে। ফায়াদ অপরাজিতার মনোভাব বুঝে স্বভাবসুলভ গম্ভিরকন্ঠে বলল,
‘কিন্তু আমি যেন কোনো কাজে কোনো গাফিলতি না দেখি। ‘

অপরাজিতার এবার নিজেকে নিজের শান্তনা দিতে হচ্ছে,’ ব্যাটা মাথা বসে বসে হুকুম করে।’
মুখে বলল,
‘আচ্ছা’

ফায়াদ এবার হালকা হেসে বলল,
‘বাসায় যাও’

বাধ্যমেয়ের মতো বলল,
‘আচ্ছা’

গাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে তার কিছু মনে পড়ায় অপরাজিতা আবার পিছে ঘুরে গাড়ির জানালায় নক করলো। ফায়াদ কাচ নামিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। অপরাজিতা জিজ্ঞেস করলো,
‘ওই বাক্সটার চাবি দিবেন না?’

ফায়াদ কিছুক্ষণ ভাবার ভঙ্গিতে বলল,
‘আগে শর্ত পূরণ হোক’

বলেই অপরাজিতাকে কোনোকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।অপরাজিতা হা হয়ে গেল।
‘শর্ত?’
পরক্ষণেই মনে পড়ে তার কান্না পাচ্ছে,
‘এ+ কি আমার শ্বশুরের ফ্যাক্টরি নাকি যে চাইলেই একটা দিয়ে দিবে!!ফাজিল ডাক্তার’

গাড়ি চালাতে চালাতে মুচকি হাসছে ফায়াদ। কখনো ভাবে নি সে এমন একটা পুচকি মেয়ে তে আটকাবে। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে অপরাজিতা যতই চেষ্টা করুক তার মন গলবে না। কিন্তু আগুন তো গলাতে জানে। সেই তো আটকে গেল! এখন যে এই মেয়েকেই লাগবে।মেয়েটা যেন প্রেম শিখাচ্ছে।
গাড়ি চালাতে চালাতে ফায়াদের মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা।
অপরাজিতা অনুভুতি ব্যক্ত করার পর থেকে ফায়াদ তাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতো। সে কোনো খারাপ বিহেব করতে চায় না। ইতিমধ্যে মেয়েটার সম্পর্কে তার জানা হয়ে গিয়েছিল। ভীষণ ভালো মেয়ে।সকলের আদরের মধ্যমনি। কিন্তু ভীষণ দুষ্ট। এভাবে কিছুদিন এড়িয়ে চলায় অপরাজিতা যেন আরো মরিয়া হয়ে উঠে ফায়াদের জন্য। তাই ফায়াদ একটু কঠোর হয়। অপরাজিতার নাম্বার ব্লক করে দেয়। তাকে চ্যাম্বারে ঢুকতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো না। ফায়াদ ভেবেছিল অপরাজিতা আর আসবে না। কিন্তু তার ধারনা ভুল বের হলো। সে যখন একদিন সকালে হাস্পাতালে আসলো। তার কেবিনের বাহিরে অপরাজিতাকে বসে থাকতে দেখলো। অবাক হলো সে। তার থেকে বেশি অবাক হলো অপরাজিতা তাকে দেখেই কান্না শুরু করে দিয়েছিল। মেয়েটার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল। কি বলবে সে বুঝতে পারছিল না। মেয়েটার কম বয়সের আবেগ মেয়েটাকে একদম কাবু করে ফেলেছিল।তারপর তাকে কেবিনে নিয়ে যখন ফায়াদ ঠান্ডা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেছিল,

‘তুমি কি এমনই করবে?’

অপরাজিতা কান্না করতে করতেই জিদ দেখিয়ে জোর কণ্ঠে বলল,
‘হ্যা’

তার কণ্ঠের জোর ই বলে দিয়েছিল সে থামবে না। ফায়াদ পরাজয় স্বীকার করেছিল এই পুচকি ফুলের কাছে।করতে দিয়েছিল তার ইচ্ছামতো। অপরাজিতার এই ছোট ছোট ভালোবাসা ধীরে ধীরে বড় ভালোবাসায় পরিণত হয়ে ফায়াদকে তাতে আবদ্ধ করে ফেলে৷
পুরোনো এই স্মৃতি মনে পড়তেই ফায়াদ নিজেকে শান্তনা দিল, ‘কিছু ক্ষেত্রে হেরে যাওয়া ভালো’

অপরাজিতা বাসায় প্রবেশ করতেই রামিসা বেগম থামালেন তাকে,
‘কোথায় ছিলি তুই?’

‘ঘুড়তে গিয়েছিলাম’

রামিসা মেয়েকে তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করে বললেন,
‘তুই রুমে গিয়ে বস তোর সাথে কথা আছে আমার’

অপরাজিতা রুমে গিয়ে টেনশনে অস্থির।মায়ের আবার কি হলো। তার তো এইচএসসি শেষ। এখন কি বিয়ে দেওয়ার পাইতারি করছে নাকি?এখন কি গল্প মুভির মতো তাকে জোর করে বিয়ে দিবে? তাহলে তার ডাক্তারের কি হবে? এরকম নানা ভাবনায় তার মাথা ঘুরাচ্ছে।
রামিসা হাতের কাজ শেষ করে অপরাজিতার রুমে গিয়ে দেখলে অপরাজিতা ভীষণ ভাবনায় ব্যাস্ত। তিনি অপরাজিতাকে ডাকতেই অপরাজিতা ফট করে বলে উঠলো,
‘আম্মু আমাকে জোর করে বিয়ে দিবা না বললাম’

সাথে সাথে তার মাথা একটা থাপ্পড় পড়লো।রামিসা পাশে বসে বললেন,
‘সারাদিন মাথায় এগুলাই ঘুরে?’

অপরাজিতা গাল ফুলালো। পরক্ষণেই আবার খুশি হয়ে বলল,
‘তার মানে এটা না? যাক আলহামদুলিল্লাহ ‘

রামিসা অপরাজিতাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
‘হুম ঘটনা অন্য কিছু।এবার তুই বল ছেলেটা কে?’

অপরাজিতার মুখটা চুপসে গেল। অপরাধে যেন ধরা খেয়েছে। আমতা আমতা করে বলল,
‘কিসের ছেলে?’

রামিসা মেয়ের মাথায় খুব আদূরে ভাবে হাত বুলিয়ে দিল।
‘ইশ আমার মেয়েটা কতো ইনোসেন্ট ‘
সাথে সাথেই আবার কন্ঠ শক্ত করে বলল,
‘থাপ্পড় খেতে না চাইলে সুন্দরভাবে বল।’

অপরাজিতা মা এর কাছে থেকে একটু দূরে সরে গেল।
অস্থির হয়ে বলল,
‘আম্মু!তুমি এমন টিপিকাল মায়েদের মতো করতেছো কেন?এখন কি আমাকে জোর করে অন্য কোথাও বিয়ে দিবা?’

রামিসা বাকাভাবে তাকালেন মেয়ের দিকে,
‘তোমার কি আমাকে বাংলা ছবির ভিলেন মা মনে হয়?তবে একটা কথা সিউর হলাম যে তুমি প্রেম করছো। অন্য কোথাও বিয়ে দেই কিনা সেটা পরে কিন্তু তুই যে আমাদের ধোকা দিচ্ছিস?’

অপরাজিতা মায়ের কাছে এসে অসহায় ভাবে বলল,
‘ধোকা দিচ্ছি না আম্মু বিশ্বাস করো।প্রেম করছি না। যাস্ট একজন কে পছন্দ করি৷’

মেয়ের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে রামিসার মায়া হলো।
‘সত্যি তো?’

‘হ্যা’

‘আচ্ছা উলটা পালটা কিছু যেন না শুনি তোর নামে৷ ছেলে যদি তোকে পছন্দ করে বলবি আমার সাথে দেখা করতে।’

বলেই তিনি বেরিয়ে গেলেন। রামিসা মেয়েকে ভালোভাবে চিনে। তার মেয়ে প্রেম করবে আর সে জানবে না এটা ভুল ধারনা অপরাজিতার।মেয়ের হুটহাট বেরিয়ে যাওয়া।রাতে ফোন এ কথা বলা।একা একা কান্না করা। তিনি কি দেখেনি এসব? অবশ্যই দেখেছেন। এখন দেখা যাক ছেলেটা কে। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করবেন তিনি।

(চলবে)