প্রেয়সী পর্ব-১১

0
1325

#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখনীতেঃmoumita_mehra
#পর্বঃ১১

২১.

বাবা কে ইন্ডিয়া নেওয়ার সকল কার্যক্রম শেষ। রাত এখন ৩ টা। বাবার কেবিনের সামনে সবাই জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু অপরিচিত মুখেরও দর্শন মিলছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। কিন্তু আমি চিনতে পারছিনা তাদের। অবাক চোখে সবার পানে তাকাচ্ছি থেকে থেকে।
হঠাৎ কোনো পরিচিত মুখ দেখে থমকে গেলাম। সেদিনের সেই আন্টি রাফিদ ভাইয়ার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কপালে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। বারবার দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। তার পাশেই দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোককে বারবার কিছু বলছেন। চিন্তার ভাজে তার ফর্সা মুখখানা রক্তশূণ্য হয়ে আছে। আমার পাশেই নিতু আপু দাঁড়িয়ে। তাই নিতু আপুকেই জিজ্ঞেস করে বসলাম,

—-” উনারা কারা? আর ঐ ভদ্রমহিলাকে তো আমি চিনি। উনি রাফিদ ভাইয়ার সাথে কি করছেন?”

নিতু আপু ভদ্রমহিলা আর ভদ্রলোককে দেখিয়ে বললেন,

—-” উনারা রাফিদের বাবা-মা। আর ঐ পাশে সুন্দর মতো যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে উনি রাফিদের কাজিন। হিমাদ্র ভাইয়া।”

আমি আবারও তাকালাম তাদের দিকে। আন্টিকে দেখে সেদিনের কথা গুলো মনে পড়ে গেলো। উনি উনার ছেলে রাহিয়ান বলতে রাফিদ ভাইয়াকেই বুঝিয়েছিলেন? আর উনার পাশের ভদ্রলোক উনার হাজবেন্ড?

হঠাৎ আন্টির চোখে চোখ পড়লো। আমি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে শুঁকনো হাসি দিলাম। উনি কিছুক্ষন টলমল চোখে তাকিয়ে থেকে বড় বড় ধাপ ফেলে এগিয়ে আসলেন আমার দিকে। আমি দাঁড়িয়ে গিয়ে মুখে শুঁকনো হাসি দিয়েই তাকালাম তার দিকে। কিছু বলতে যাবো তার মধ্যেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।উনার ছোঁয়া পেয়ে সারা শরীর হঠাৎ শীতল হয়ে উঠলো। মন যেন আত্নচিৎকার পেড়ে বলে উঠছে, এই ছোঁয়া কেবল আমার মায়েরই হতে পারে।” ভেতরটা ডুকরে উঠলো আমার। খুব ইচ্ছে হলো এই অপরিচিত আন্টিকে মা বলে ডাকতে। আমি মনে মনে ভাবলেও আন্টি মুখেই মা বলে ডেকে উঠলেন আমায়। হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। আমি হতবিহ্বল হয়ে গেলাম আন্টির কার্যকলাপে। মনে মনে প্রশ্ন তৈরি করতে পারলেও মুখে আনতে পারলাম না সেসব। উনার কান্নাতে যেন আমার মনটাও ভেঙে যাচ্ছে। উনি শক্ত করে আগলে ধরলেন আমায়। কান্নাজড়িত কন্ঠেই বলতে লাগলেন,

—-“আমার নিধি। তুই আামর নিধি! হিসেব নেই কতগুলো বছর ধরে পাগলের মতো খুঁজে বেড়িয়েছি তোদের। না জানি কোথায় কোথায় খুঁজেছি আমার অভিমানি বোনটাকে। সেই যে গেলো বাড়ি ছেড়ে আর কখনো এমুখো ফিরলোই না! বাবা মা কেমন করে পথ চেয়ে বসে থাকতো ওর।”

কথা গুলো বলে আবারও কাঁদতে লাগলেন তিনি। আমি উনার কথা গুলো ঠিক বুঝতে পারলাম না। শুধু শুনে যাচ্ছি। ভেবে যাচ্ছি কি বলছেন তিনি?

আমার ভাবনার মাঝে আবারও কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলেন তিনি,

—-” আজ যখন পেয়ে গিয়েছি তোদের আর কখনো কাছ ছাড়া করবো না দেখে নিস। তোকে আর তোর বাবাকে আমার কাছে নিয়েই রাখবো। কখনো আর হারাতে দেবোনা রে মা। তাকে তো হারিয়েই ফেলেছি কিন্তু তোকে… তোকে আর কিছুতেই হারাতে দিবো না!”

আমি সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। উনার মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বললাম,

—-” আপনি এসব কি বলছেন আন্টি?”

উনি হঠাৎ-ই হেসে ফেললেন। বোধকরি সুখের হাসি হাসলেন। আমার দু’গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেয়ে স্নেহভরা কণ্ঠে বললেন,

—-” আন্টি কি রে? বল বড় খালামনি! আমি তোর অভাগী মায়ের বড় বোন রে।”

বুকের ভেতরটা ধুকধুক করে উঠলো। স্ব জোরে আঘাত হেনে গেলো মনে। উনার কথাটা আরেকবার মাথার মধ্যে বেজে উঠতেই আরও এক দফা ধাক্কা খেলাম যেন। হকচকিয়ে উনার হাত চেপে ধরলাম। একরাশ বিষ্ময় আর উত্তেজনায় প্রশ্নবিদ্ধ মুখ নিয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি আবারও হেসে ফেললেন। চোখ থেকে ঝড়ে যাওয়া জল গুলো মুছতে মুছতে হাসলেন। মাথা নেড়ে বললেন,

—-” তুই আমার কলিজার টুকরার একমাত্র স্মৃতি মা। কতকত জায়গায় খুঁজেছি তাকে তার সত্যিই যে কোনো হিসেব নেই।”

আমি এবার কান্নার বেগ চেপে রাখতে না পেরেই ঝাপটে ধরলাম বড় খালামনিকে। শব্দ করে কেঁদে উঠতেই আরেকজোড়া স্নেহের হাত পড়লো আমার মাথার উপর। মাথা তুলে তাকাতেই দেয়ালে টানানো মায়ের ছবিটার অনুরূপ আরেকজনকে আবিষ্কার করলাম। মনের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠতেই বড় খালা মনি বলে উঠলেন,

—-” এটা তোর মেঝ-খালামনি।”

আমার চোখ জোড়া আবারও ঝাপ্সা হয়ে এলো। আমার মা নেই কে বললো? এই তো পেয়ে গিয়েছি দু-দুটো মা। মেঝ-খালামনিও কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলেন আমায়। ক্ষণিকের জন্য বাবার শোক ভুলে গেলাম। আস্তে আস্তে আরও অনেককে পেলাম। সবই আমার নানু বাড়ির মানুষ। জানতে পারলাম বড় খালামনির একজনই রাজপুত্র। রাহিয়ান রাফিদ। বাইরে তিনি রাফিদ নামে খ্যাত হলেও পরিবারের সবার কাছে তিনি রাহিয়ান নামেই খ্যাত। মেঝ-খালার দুই সন্তান। রিমলি আপু আর ফাহিম ভাইয়া। ফাহিম ভাইয়া রাফিদ ভাইয়ার থেকে একবছর জুনিয়র আর রিমলি আপু তিন বছর। আমাদের মামুও আছেন নাকি তিন জন। কিন্তু কেউ কারোর সাথে যোগাযোগ রাখেননি৷ তিনজনেই নানা-নানুকে ছেড়ে তাদের বউ বাচ্চা নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন। নানা নানু মারা গিয়েছেন বছর পাঁচেক আগে। নানি নাকি মায়ের শোকেই প্যারালাইজড ছিলেন বহুবছর। হঠাৎ একদিন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন। আর নানুর শোকে নানাও গত হলেন। মায়ের তার পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার সঠিক কারন এখনো জানতে পারলাম না। মনে মনে ভাবলাম, এতো সুন্দর একটা পরিবার রেখে কেউ কি এভাবে চলে আসতে পারে? সেদিন হঠাৎ বড় খালামনির সাথে যখন দেখা হয়েছিলো, তখন তিনি কারোর একটা এনগেজমেন্টে যাচ্ছে বলেছিলেন সেটা রিমলি আপুরই এনগেজমেন্টে ছিলো নাকি। হসপিটাল আপাতত আমাদের গুষ্ঠির মানুষ দিয়েই ভর্তি। বাবার সেন্স ফিরতে বড় খালামনি আর মেঝ-খালামনিকে দেখতেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। মা-যে আর বেঁচে নেই সেই কথা স্বরণ করে আবারও কাঁদলেন সবাই। আমি পাথর হয়ে এক কোনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সবটা। বাবার কাছে যেতে সাহস হচ্ছিলো না। বাবাকে জোড় গলায় বলতেও ইচ্ছে করছিলো না “বাবা জলদি ঠিক হয়ে উঠো!” কেননা মানুষ তখনই কাউকে হারায় যখন সে তাকে খুব বেশি করে চায়। যাকে অতিরিক্ত ভালোবাসা হয় সেই ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। এই ভয়টাই কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো আমায়। বাবার সাথে কথা বলে এক এক করে সবাই বেরিয়ে গেলেন। গেলেননা শুধু বড় খালামনি আর রাফিদ ভাইয়া। বুঝতে পারছিলাম না কি করবো? দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি বাবার কাছে যাবো? বাবার টলমল চোখে আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো। বড় খালামনি কিছু একটা বলছেন বাবাকে। বাবা শুনছে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। রাফিদ ভাইয়া মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে শুনছে মায়ের কথা। তাদের আলাপন আমার কান অব্দি এসে পৌঁছচ্ছে না অবশ্য। বাবা নিঃশ্বাস টেনে আবারও ছেড়ে দিলো। মুখে স্নিগ্ধ কোমল হাসি এঁটে আমাকে হাত ইশারায় কাছে ডাকলো। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। কেন জানিনা আমার পা আমার সঙ্গ দিচ্ছে না! আমায় বাবার কাছ অব্দি এগিয়ে যেতে সাহায্য করছেনা। রাফিদ ভাইয়া হইতো আমার অবস্থা বুঝে এগিয়ে এলেন। আমার হাত ধরে বাবার কাছে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললেন,

—-” বাবার সাথে কথা বলো। কিছুক্ষণ বাবার সাথে থাকো।”

কথাগুলো আমায় বলেই তৎক্ষনাৎ বড় খালামনির উদ্দেশ্যে বললেন,

—-” মা চলো আমরা বাইরে অপেক্ষা করি।”

বড় খালামনি উঠে দাঁড়ালেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম স্বরে বললেন,

—-” বাবার সাথে কথা বল মা। এভাবে গুমড়ে থাকিস না।”

কথাটা বলেই চলে গেলেন তারা। তাদের যাওয়ার পানে একবার তাকিয়ে বাবার দিকে তাকালাম আমি। বাবার চোখ মুখ শুঁকিয়ে আছে। মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যতিরেকে বাবার শুঁকনো মুখটা দেখতে কষ্ট হচ্ছে আমার। খুব কষ্ট হচ্ছে। বড় খালামনির বসে থাকা জায়গাটায় বসে বাবাকে হাতের উপর হাত রাখলাম। কান্নার বেগ চেপে অভিযোগের সুরে বললাম,

—-” ভালোই তো পারো নিধিকে ভয় দেখাতে। মাঝেমধ্যে যে দশ বারো সেকেন্ডের জন্য চোখ বুঁজে বলতে নিধি তোর বাবা হারিয়ে গিয়েছে! সে অব্দিই তো ঠিক ছিলো,,, আজ হঠাৎ এতো গুলো ঘন্টা পার হওয়ার পরও কেন চোখ খুললেনা? কি ভেবেছিলে? সত্যিই হারিয়ে যাবে? নিধিকে একা নিঃসঙ্গ করে মিসেস খানের সঙ্গী হবে? শুনো মি. খান আমি তোমায় সাফ সাফ বলে দিচ্ছি, নিধিকে একা নিঃসঙ্গ করে হারিয়ে যাওয়ার চিন্তা এবার বাদ দাও। তোমায় ছাড়া নিধির খুব কষ্ট হয়। সে-কথা হয়তো নিধি কখনো মুখ ফুটে বলবে না তোমায় কিন্তু তোমাকে বুঝতে হবে। বাবাকে ছাড়া নিধি একদিনও বাঁচতে পারবেনা মি. খান। এই কথা একদম মগজে ঢুকিয়ে নিবে। তুমি হয়তো জানো না মি. খান, তোমার ঐ দশ বারো সেকেন্ড চোখ বুঁজে থাকা সময়টাও নিধিকে কি করে নিঃসঙ্গ করে তুলতো? কি করে অসহায় করে তুলতো? খেলাটা হয়তো তোমার কাছে মজার ছিলো কিন্তু নিধির কাছে কখনোই মজার ছিলো না। খুবই যন্ত্রণাদায়ক ছিলো। আজও বড্ড যন্ত্রণাদায়ক তোমার এই চোখ বুঁজে থাকার খেলাটা। আমি কিন্তু মিসেস খান কে অভিযোগ করবো। তুমি বড্ড বেশি করছো নিধির সাথে,,,ব..বড্ড বেশি…”

শেষ কথাগুলো খুব বিশ্রি ভাবে দলা পাকিয়ে গেলো গলায়। ঢোক গিলেও আর কিছু বলা সম্ভব হলোনা। বাবা হু হু করে কেঁদে উঠলো। বাবার কান্না দেখে এবার আর আমার পক্ষেও সম্ভব হলোনা নিজেকে সামলে রাখা। আমিও শব্দ করে কেঁদে উঠে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। নিধি কখনো কাঁদে না! কিন্তু আজ কেন জানি না কান্না না করে থাকতে পারছিনা! মনে হচ্ছে কান্না না করলে একবুক কষ্ট নিয়েই মরে যাবো আমি। কিছুতেই এতো কষ্ট নিয়ে বাঁচা সম্ভব হবেনা। কিছুতেই না!

২২.

—-” আমি বাবাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা প্লিজ! আমাকেও নিয়ে চলো সাথে।”

আমার কথা শুনে সবাই এক দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে। বাবাকে নিয়ে এক্ষনি বের হচ্ছেন বড় খালু আর বড় খালামনি। সঙ্গে মেঝ-খালামনিও যাবেন বলছেন। কিন্তু আমাকে কেউ যাওয়ার কথা বলছেনা! কেন বলছেনা? আমাকে কেউ নিবেনা বলেই মনে হচ্ছে! কিন্তু বাবাকে ছাড়া আমি একা কি করে থাকবো?

বড় খালামনি আমার দিকে এগিয়ে এলেন। স্নেহময় কন্ঠে বললেন,

—-” নিধি! তুই ওখানে গিয়ে কি করবি মা? এই দেখ আমি তো যাচ্ছি। তোর বড় খালুও যাচ্ছেন,হিমাদ্রও যাচ্ছে,,আমরা কি তোর বাবার ঠিকঠাক ট্রিটমেন্ট করাতে পারবো না? নাকি ঠিকঠাক যত্ন নিতে পারবো না? আমাদের উপর কি তোর একটুও ভরসা নেই বলতো?”

—-” না গো খালামনি! তুমি এভাবে প্লিজ বলো না! তোমরা হয়তো আমার থেকেও ভালো যত্ন নিতে পারবে বাবার। কিন্তু আমি… আ..আমি তো এর আগে কখনো বাবাকে ছেড়ে থাকিনি!! আমি বাবাকে ছেড়ে থাকতেও পারবোনা প্লিজ… আমায় প্লিজ নিয়ে চলো খালামনি!”

মেঝ-খালামনি আমায় তার কাছে নিয়ে কোমল স্বরে বললেন,

—-” দেখ মা! আমিও যাচ্ছি বড় আপাদের সাথে,,,এতদূরের পথ আর তারউপর তোর শরীরটাও কিন্তু ঠিক নেই। তুই থাক এখানে,,এই দেখ এই যে তোর রিমলি আপু, রাহিয়ান ভাইয়া,ফাহিম ভাইয়া এরা সবাই আছে। তুই ওদের সাথেই থাকবি। সারাক্ষণ ওরা তোর সঙ্গে থাকবে মা। দেখবি একদমই তোর একা লাগবে না। বাড়িতে কিন্তু আরও লোক আছে,,,আদ্রিতা আছে। খুবই মিষ্টি মেয়ে ও। এতো গুলো মানুষের মাঝে দেখবি তোর বাবার কথা সেভাবে মনেই পড়বেনা। শোন মা, পাগলামি করিসনা লক্ষিটি। ওখানে তো বাবার ট্রিটমেন্ট হবে বল? এখন যদি তোকেও নিয়ে যাই তবে আমরা কতদিকে দেখবো? বাবাকে দেখবো নাকি তোকে দেখবো?”

রিমলি আপু আর নিতু আপু আমায় বোঝাতে লাগল একই কথা। রিমলি আপু বলল,

—-” এই নিধি যাস না বোন। ছোট খালু একদম ফিট হয়ে খুব জলদিই ফিরে আসবে রে। আমরা আছি তো তোর সাথে। প্লিজ যাস না তুই।”

নিতু আপু বলল,

—-” হ্যাঁ রে নিধি। চাচাকে ট্রিটমেন্ট করিয়ে তো খুব জলদিই নিয়ে আসবে তাই না? তুই থেকে যা বোন। যাস না। তোর যদি ঐ বাড়িতে বেশি খারাপ লাগে তবে সব্বাইকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসবি। আমরা খুব মজা করে কাটাবো। দেখবি বাবা কাছে নেই বলে তোর একদমই মন খারাপ হবেনা।”

সবার বলার মাঝে রাফিদ ভাইয়াও গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,

—-” সবাই যখন বলছে তখন থেকে যাওনা নিধি। হয়তো সময়টা তোমার ততটাও খারাপ কাটবেনা যতটা তুমি ভাবছো।”

বাবার কথা মনে পড়লেই কারোর বারন কান অব্দি আসছেনা। কিন্তু পারলাম না নিজের জেদ ধরে রেখে বাবার পিছু পিছু যেতে। সবার অনুরোধের ভারে রাজি হয়ে গেলাম তাদের সাথে থাকতে।

ঘন্টা খানিকের মধ্যে বড় খালামনিরা ইমারজেন্সি টিকেটে চলে গেলেন বাবাকে নিয়ে। এদিকে বাবাকে চলে যেতে দেখে আমি আবারও কাঁদতে লাগলাম। মনটা মানছে না বাবাকে একা ছেড়ে দিতে। মন বলছে বাবার কিছু একটা হয়ে গেলেও আফসোস হবেনা এই ভেবে বাবা যে আমার কাছেই আছে। আমার চোখের সামনে আছে। কিন্তু এখন যে তাও নেই। বাবার কিছু একটা হয়ে গেলে নিধি আর বাঁচবে না। একদমই বাঁচবে না।

দশ মিনিট হলো বড় খালামনিদের বাড়িতে এলাম। ওদিক থেকে হিমেল ভাইয়া আর নিতু আপু চলে গেলো বাসায়। আর এদিকে রিমলি আপু আর ফাহিম ভাইয়া আমাদের সাথেই এলো। আমাকে পাঁচ জনে একসাথে থাকার মতো একটা রুম দিলো। এ-মাথা থেকে ও-মাথায় যেতেও আমার কয়েকমিনিট অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তখনকার মতোই চারিপাশ গোলকধাঁধার মতো লাগছে। বাসায় ফিরে রাফিদ ভাইয়াকে আর দেখা গেলো না। আদ্রিতা আপু আর রিমলি আপু আমাকে এই রুমে দিয়ে গেলো। আমার হাতে কয়েক সেট ড্রেস তুলে দিয়ে বলল, এখান থেকে একটা ড্রেস পড়ে জলদি ফ্রেশ হয়ে নিতে। আমিও সেই মোতাবেক জলপাই রঙের স্কার্টটা নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হতে হতে ফজরের আজানের ধ্বনিতে বুক ফুলে উঠলো আমার। ফ্রেশ হয়েই জলদি ওজু করে বের হয়ে আসলাম। ভেবেছিলাম আদ্রিতা আপুর থেকে একটা জায়নামাজ চেয়ে নিবো। কিন্তু সেই কষ্ট আর করতে হলো না। হাতের ডানেই একটা জায়নামাজ ভাজ করা দেখে মনে শান্তি এসে গেলো যেন। আর সাত পাঁচ না ভেবেই জায়নামাজ বিছিয়ে ফজরের নামাজের সাথে সাথে বাবার সুস্থতা কামনায় আরও চার রাকা’ত নফল নামাজ পড়ে ফেললাম। আল্লাহর দরবারে হাত তুলতেই দুনিয়ার সমস্ত দুঃখ কষ্ট যেন জড়ো হলো মনে। যত পারলাম সেজদা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহ কে বললাম। দিন শেষে নিধি কিছুই চায়না কেবল তার বাবাকে ছাড়া।

#চলবে____________________

[ ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ]