#প্রেয়সী ♥️🥀
#moumita_mehra
#পর্বঃ২৪
৪৬.
শাড়ির কুঁচি আগলে দাঁড়িয়ে আছি সিঁড়ির পাশে। গুনে গুনে ঠিক পাঁচখানা সিঁড়ি আসিফ ভাইয়ের বাসার সামনেটাতে। আর এদের দূরত্বও বেশি হলে আট দশ ইঞ্চি! কিন্তু আমার কাছে কেবল এটাই মনে হচ্ছে এদের দূরত্ব কম করে হলেও শ-ফুট। মানে আসমান থেকে জমিন অব্দি এদের দূরত্ব। বিপত্তিটা ঠিক সেখানেই! শাড়িতে ভয়ংকর ভাবে পা জড়িয়ে আছে। ধাপ ফেলে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে পারছি না। আর এদিকে এক এক করে সবাই ভেতরে চলেও গেলো। কেউ একবারও আমার কথা ভাবলো না। কেন এতো নিষ্ঠুর সবাই?
—-” এক্সকিউজ মি মিস? ক্যান আই হেল্প ইউ?”
বকের মতো লম্বা গলাটা উঁচিয়ে কেউ বলে উঠলো কথাটা। আমার চোখ জোড়া ততক্ষণে সতর্ক হয়ে উঠলো। অপরিচিত গলা। চাতক পাখির মতো উল্টেপাল্টে চোখ জোড়া ঘুরাতেই দরজার পাশ থেকে তার অস্তিত্ব পাওয়া গেলো। লম্বাচওড়া শরীরের অধিকারি এক যুবক দাঁড়িয়ে। মাথার চুল গুলো আসিফ ভাইয়ের ন্যায় কোঁকড়ানো। চেহারাটা বেশ চোখা। টানা টানা চোখ। স্বভাবে মেয়েলি ভাব মনে হলেও একদমই তা নয়। সুপুরুষের ন্যায় চলতে চলতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
—-” আসুন?”
আমি বেকুবের ন্যায় তাকিয়ে আছি। কিছু সেকেন্ড আগেই হেল্প করার জন্য বলে এখন ডিরেক্ট হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ আগানো ব্যাক্তিত্ব দেখা যাচ্ছে।
আমি মেকি হাসলাম। তার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে স্বাভাবিক কন্ঠেই বললাম,
—-” নো থ্যাংক্স।”
—-” আই থিংক, এটাই আপনার ফার্স্ট টাইম?”
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। বিরক্ত গলায় বললাম,
—-” মানে?”
ছেলেটি আমার শাড়ির দিকে ইশারা করে বলল,
—-” শাড়ি।”
আমি আবারও মেকি হাসি জুড়ে বললাম,
—-” জ্বি না। এটাই লাস্ট টাইম।”
—-” মানে?”
—-” শাড়ি।”
ছেলেটা হা করলো আরও কিছু বাক্য আওড়াবে বলে। কিন্তু সে সুযোগটা বেশ শক্তপোক্ত ভাবে আর মিলল না! তার আগেই সুরেলা কণ্ঠে ভেসে আসলো রাহিয়ান ভাইয়ার ডাক।
—-” হেই কেশব?”
পেছন থেকে উনার কাঁধের সাথে আমার কাঁধ মিলতেই কেঁপে উঠলাম আমি। ঘাড় ফিরিয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনার শরীরের গন্ধে বিদ্ধ হলো মন।
—-” হ্যালো রাহিয়ান। হাউ আর ইউ ডুড?”
বত্রিশ পাটি দাঁত কেলিয়ে হ্যান্ডশেক করতে হাত এগিয়ে দিলো কেশব নামের ছেলেটি। মাতাল হেসে রাহিয়ান ভাইয়াও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে কোলাকুলি করলেন তার সাথে। অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন রাহিয়ান ভাইয়া,
—-” তুমি এখনো এখানে কি করছো? ভেতরে যাওনি?”
উনার শান্ত ভঙ্গিতে করা প্রশ্নে আমার ভেতরটা কাঁপতে লাগলো। আবারও কোন ঝড় অপেক্ষা করছে আমার জন্য কে জানে?
কথার মাঝে নাক গলিয়ে বলে উঠলেন কেশব,
—-” উনার মেইবি শাড়িতে প্রবলেম হচ্ছিলো তাইনা মিস?”
আমি শক্ত চোখে তাকালাম লোকটির দিকে। কিছু বলবো তার আগেই বলে উঠলেন রাহিয়ান ভাইয়া,
—-” কাউকে ডাকলে না কেন?”
আমি ঢোক গিললাম। শাড়ির কুঁচি ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। চোখে মুখে ভারি ইনোসেন্ট ভাব এনে ঠোঁট উল্টে বললাম,
—-” সবাই তো চলে গেলো আমাকে রেখে। তাই ডাকতে পারিনি।”
আমার কথায় ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলেন কেশব। কিন্তু রাহিয়ান ভাইয়া নির্বিকার। আমি আঁড়চোখে রাহিয়ান ভাইয়ার ভাব ভঙ্গিমা পর্যবেক্ষণ করছি। কিছু বলবেন নাকি দেখাবেন?
আমাকে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েই হাত বাড়িয়ে দিলেন রাহিয়ান ভাইয়া। আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। কিছু বলার বোধশক্তি আপাতত শূন্য। আমার রিয়াকশনে তার কিছু গেলো আসলো না। তিনি নিজ থেকেই টেনে নিলেন আমার হাত। তার হাতের ছোঁয়ায় ঘোর কাটলো আমার। চমকে উঠে পরিস্থিতি বোঝার আগেই হাঁটা ধরলেন তিনি। আমিও তাড়াহুড়োর উপর উনার পায়ের সাথে পা ফেলতে নিলাম। কিন্তু বিপদ যে কখনো নিধির পিছু ছাড়বেনা তা যে ভুলেই যাই। এক সিঁড়ি, দুই সিঁড়ি হিমশিম খেয়ে পেরিয়ে উঠতে পারলেও তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই কুঁচি পড়লো পায়ের নীচে। আমার ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো কুঁচি খুলে পড়ার ভয়ে। আর সে কেঁপে উঠলো আমি হুমড়ি খেয়ে পড়ে মাথা ফাটার ভয়ে। শাড়ির কুঁচি খুলে পড়বে ভাবতে ঝুঁকে গেলাম আমি। কিন্তু নিজের উপর কন্ট্রোল রাখতে পারলাম না। তবে নীচেও পড়লাম না। রাহিয়ানের শীতল হাতটা উদাম পেটে এসে ঠেকলো আমার। আমার শরীরের সমস্ত ভার আপাতত তার হাতের উপরই আছে। তৎক্ষনাৎ টনক নড়লো আমার। উনার ছোঁয়ায় অসহ্য ভাবে পুড়ছে মন। তাড়াহুড়ো করে আবারও উঠতে নিলেই উনার হাতটা আমার পেট ছুঁয়ে আরও গভীর ভাবে আঁকড়ে এলো। বুকের ভেতরটায় ক্রমশই ধুরুম ধরুম করে ঢাক ঢোল পেটাচ্ছে।
আচমকা কেশবের বিচলিত কন্ঠ পাওয়া গেলো।
—-” ও গড এটা কি হলো?”
রাহিয়ান ভাইয়া আর সহ্য করলেন না আমার শরীরের ভার। দু’হাতে আমার কোমর চেপে সোজা করে দাঁড় করালেন আমায়। আবারও তার ছোঁয়া। আবারও কেঁপে উঠলাম আমি। শাড়ির কুঁচিটা শক্ত করে ধরে উনার থেকে পিছিয়ে আসতে নিলেই উনি হাত ধরে ফেললেন আমার। খানিক ধমকের সুরে বলে উঠলেন,
—-” একটু ঠিক করে হাঁটতেও পারোনা তুমি?”
আমার কি দোষ? আমি তো ঠিকই হাঁটছিলাম! যত তাড়া তো উনারই ছিলো! তবুও সব দোষ নিধির!
—-” ঠিক করে হাঁটো।”
কেশব রাহিয়ানের কথার রেশ টেনে বলে উঠলেন,
—-” হ্যাঁ, প্লিজ আপনি সাবধানে হাঁটুন। এক্ষনি কিন্তু একটা এক্সিডেন্ট ঘটে যেতে পারতো।”
কেশবের কথায় বিশেষ পাত্তা দিলাম না আমি। রাহিয়ান ভাইয়ার হাত ধরে বাকি সিঁড়ি দুটো পার করতেই উনার হাত ছেড়ে নিজে নিজেই চলে এলাম ভেতরে। সবাই গোল করে বসে আছেন। আমরা ভেতরে আসতেই উঠে এলেন আসিফ ভাইয়া আর ফাহিম ভাইয়া। আসিফ ভাইয়া আমাকে বসতে ইশারা করে রাহিয়ান ভাইয়া কে নিয়ে এগিয়ে গেলেন। ফাহিম ভাইয়া পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরল। আমি তাকাতে তাকাতে ভাইয়া এসে আমার পাশে দাঁড়াল। গলার স্বরটা খানিক নীচু করে বলল,
—-” মাঝপথে হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে? আর আমাদের হুতুমপেঁচার সাথে কি করে এলি?”
আমি দাঁতে দাঁত চেপে কনুই দিয়ে গুঁতো মারলাম ভাইয়ার পেট বরাবর। ভাইয়া ব্যাথায় গুঁজো হয়ে গেলো কিঞ্চিৎ। নিঃশ্বাস চেপে মনে মনে আর্তনাদ করছে ঠিকই। আমি রাগি গলায় বললাম,
—-” আমায় সবাই এভাবে ফেলে এসে আবার জিজ্ঞেস করছো?”
ফাহিম ভাই মৃদুস্বরে নিঃশ্বাস ফেললো। হাসফাস করতে করতে বলল,
—-” সরি রে বনু! আসলে হয়েছে কি নতুন একটা গফ পটিয়েছি বুঝলি! তার সাথেই ম্যাসেজ টাইপিং হচ্ছিল আর কি! তাই পেছন থেকে তোকে ঠিক খেয়াল করে নিয়ে আসতে পারিনি!”
আমি ছলছল চোখে তাকালাম। মেকি সুরে বললাম,
—-” আজ গফ পেলে বলে বনুকে ভুলে গেলে ভাইয়া? দেখো আজই তোমার ব্রেকআপ ঘটিত ঘটনা ঘটে যাবে!”
আমার কথায় ভাইয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। কতক্ষণ আমার দিকে তাকাচ্ছে তো কতক্ষণ তার ফোনের দিকে। তার শঙ্কিত মন বারবার ডুকরে উঠছে আর বলছে,
—-” ব্রেকআপ টা কি সত্যিই হয়ে যাবে?”
৪৭.
খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে চলে এলাম আসিফ ভাইয়াদের ছাদে। ছাদটা খোলা পরে থাকলেও অসম্ভব সুন্দর তার আকৃতি। তবে তারউপরও করা হয়েছে অসাধারণ ডেকোরেশন। ছাদের মাঝ বরাবর দোলনাটা মরিচ বাতিতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। তার দু-পাশে বড় আকারের নানাজাতের ফুলের টব। গাছের প্রতিটি ডালে ডালে ফুলের কলি সাথে অসংখ্য ফুলও বিদ্যমান। শুধু তাই নয়, ছাদের চারকোনে চারটি নারকেলের চারাগাছের সাথেও মরিচ বাতি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। আর থেকে থেকে থেকে জ্বলে চলেছে তা। আমার মন জুড়িয়ে গেলো নিমিষেই।
—-” ওয়াও জিজু। দিস প্লেস আর… ওয়াও ওয়াও।”
হাত তালি দিয়ে আমোদিত গলায় কথাটা বলে উঠলো ফাহিম ভাইয়া। আসিফ ভাইয়া মৃদু হেসে রিম্মি আপুর দিকে তাকালো। মাথা চুলকে বলল,
—-” তোমার বোনের খুশিতে সামান্য চেষ্টা আর কি!”
রিম্মি আপু লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
—-” থ্যাংক্যু।”
বউমনি বলল,
—-” তোমরা দুজন যাও না ওখানে। দোলনায় গিয়ে গল্প করো। আমরা না হয় এপাশটাতে আড্ডা দিচ্ছি।”
বউমনির কথায় মাথা দুলালো আসিফ ভাই। পাশ থেকে কেশব উৎসাহিত গলায় বলল,
—-” হ্যাঁ হ্যাঁ পার্ফেক্ট। ভাইয়া, ভাবিজি তোমরা যাও তোমাদের মতো করে টাইম স্পেন্ড করো। আমরা ঐদিকটা-তে বসি।”
আসিফ ভাই আর রিম্মি আপু দোলনার দিকে এগিয়ে যেতেই আমরাও অন্যপাশে চলে এলাম।আমি সবাইকে রেখে আগে গিয়ে ছাদের কার্নিশে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম। আমার পাশ ঘেঁষেই ফাহিম ভাইয়া দাঁড়ালো। ভাইটা আমার ভীষণ বিচলিত আমার অভিশাপে। কপাল খানা কুঁচকে রয়েছে অনেক্ষন যাবৎ। বারবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে আমার পানে। কিন্তু সে দৃষ্টি কেবল অস্থির। মানে এটা বুঝাতে চাচ্ছে,” বনু তোর এই ছোট খাটো অভিশাপ টা তুলে নে-না? আমার যে ভীষণ চাপ চাপ ফিল হচ্ছে!”
আমার এমন ভাবনাতে আমি নিজে নিজেই হেসে ফেলি।
—-” সম্পর্কে কিন্তু আপনি আমার একমাত্র বেয়ান হবেন নিধি। জানেন তো,বাঙালিরা বেয়াই-বেয়ানের আত্মীয়তা কিভাবে পূর্ণতা দেয়?”
ঠেস মেরে বত্রিশ পাটি দাঁত কেলিয়ে কেশব কথাটা ছুঁড়ে মারলো আমার দিকে। আমি ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালাম তার দিকে। জোরপূর্বক হাসলাম ঠিক তবে আশেপাশে রাহিয়ান ভাইয়ার অগ্নি দৃষ্টির তাপ থেকে বাঁচার ছলেই জবাব দিলাম না। জবাব দিলেই আরেক কথা উঠবে আর তারপর তার পিঠে আরেক কথা। কথাই কথা। থামাথামির আর কোন পথ থাকবেনা।
—-” আপনাকে কিন্তু রেড কালারে বেশ মানিয়েছে বেয়ান।”
—-” ধন্যবাদ।”
কমপ্লিমেন্ট দিলো। তাই খুশিতে একটু শুকরিয়া আদায় করলাম। পাশ থেকে ফাহিম ভাইয়া আমাকে একবার ভালো করে দেখে নিয়ে বলল,
—-” তুই আজ রেড কালার পড়েছিস নাকি?”
আমি হা করে তাকালাম। বলে কি ভাইয়া? এতক্ষণেও ওর চোখে পড়লো আমি কি কালার পড়েছি?
—-” না রেড কালার পড়েছি!”
—-” অ্যাঁ!”
—-” হ্যাঁ।”
ফাহিম ভাইয়ার থতমত খাওয়া মুখ টা দেখে হেসে উঠলাম আমি। বউমনি হাসতে হাসতে বলল,
—-” তোমরা পারও বটে। তা কেশব কতদিনের জন্য আছো এদেশে?”
কেশব চকচকে দাঁতের হাসি দিয়ে বলল,
—-” অনলি সিক্স মান্থ বউমনি।”
—-” কেন? এতো কম থাকলে মনে ভরবে বলো? এতো সুন্দর একটা দেশ ছেড়ে যে কি করে থাকো ভাই?”
কেশব মাথা চুলকালো। আঁড়চোখে হয়তো দেখলো আমাকে। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
—-” এবার গিয়ে একদম পারমানেন্টলি চলে আসবো সিওর। এদেশে থাকার একদম শক্তপোক্ত একখানা কারন অবশেষে জোগাড় করে ফেলেছি বউমনি।”
—-” তাই নাকি? তা কি সেই কারন? হু? বলো বলো?”
ফাহিম ভাই আমর দিকে সরু চোখে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড কেশবের দিকে স্থির দৃষ্টি দিয়ে পূণরায় আমার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
—-” বেটা কি কোনো কারনে তোর কথা বলতে চাচ্ছে নাকি রে?”
আমার মস্তিষ্ক সতর্ক হয়ে উঠলো। আমি ভাইয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই ভাইয়া আবারও ফিসফিস করে বলল,
—-” আরে বেদ্দপ মাইন্ড খাইছ না! বেটা কিন্তু বেশি সুবিধার পাত্র নয় বনু। সো সাবধান।”
আমি মুখ বাঁকিয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। কেশব হঠাৎ আমার কথা কেন বলতে যাবে? উনার সাথে আমার দেখাই তো হলো ঘন্টা দুয়েক। আমি মন ডুবালাম না ভাইয়ার কথায়। আর কারোর কথা কানে তুলতে ইচ্ছে হলো না। আজ পরিবেশ টা সত্যিই ভীষণ মনোরম। কতক্ষণ পরপর বাতাসের মৃদু ঝাঁপটা সেই সাথে ফুলের সুভাষ। মন ভরে ওঠে। সবাইকে রেখে আমি চলে গেলাম ঐপাশটাতে। এপাশে আলো আসতে বেশ বাঁধা পায়। পুরো জায়গাটা অন্ধকারই বলা যায়। একা এসে চুপটি করে দাঁড়িয়ে পড়লাম। দু’হাত দু’দিকে মেলে দিয়ে বাতাসের গন্ধ নিতে লাগলাম। ক্ষনিকের উত্তেজনা চেপে রাখতে না পেরে মৃদুস্বরে বলেই উঠলাম,
—-” জিবন এতো সুন্দর কেন?”
ম্যাসেজের টুংটাং শব্দে আমার ভাবনার সুতো ছিঁড়ল। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের ভাজেই ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে অপরিচিতর ছোট্ট একটা ম্যাসেজ। ফোনটা কাছে এনে অন করতেই ভেসে উঠলো লেখাগুলি,
—-” আমার বড় সাধ হয়
তোমার নিঃশ্বাস আটকায়ে দেখি,
তুমি মর, না আমি!
ইঁচালি-বিঁচালি শরীরের,
ভাঁজে ভাঁজে ~~
আগুন জ্বালায়ে দেখি,
তুমি পোড়, না আমি!
লেখাটা পড়তেই নিঃশ্বাস আঁটকে এলো আমার। ফোনের সাইড বাটনে চাপ দিয়ে ফোনটাই অফ করে দিলাম। এক্ষনি হয়তো তার কলও আসতে পারে! কিন্তু আমি চাইনা তার সাথে কথা বলতে। উনার পাঠানো কবিতায় আমার সমস্ত অনুভূতি মাঝপথেই শূন্য হয়ে গেলো। কথা গুলো ধারালো সূচের মতো বিধে গেলো মনে। বারবার প্রতিধ্বনি করতে লাগলো উনার বাক্য গুলো।
——–” আমার বড় সাধ হয়
আমার বড় সাধ হয়!
তোমার নিঃশ্বাস আটকায়ে দেখি,
তুমি মর, না আমি!
আমার বড় সাধ হয়!
সাধ হয়! তুমি মর, না আমি?
ইঁচালি-বিঁচালি শরীরের,
ভাঁজে ভাঁজে ~~
আগুন জ্বালায়ে দেখি,
তুমি পোড় না আমি!
পোড় তুমি! পোড়!
তুমি পোড়, না আমি?
বাক্য গুলোতে অতিষ্ঠ হয়েই কান চেপে ধরলাম আমি! বিচলিত মনে আশেপাশে তাকাতে লাগলাম!! অস্থিরতায় ঘেমে নেয়ে উঠলাম এমন সুন্দর পরিবেশেও। বাতাসের মৃদু গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো মন। ছাদের কার্নিশে পিঠ ঠেকিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস ফেললাম। দু’হাতে মুখ মালিশ করে শাড়ির আঁচল তুলতে নিয়েই অনুমান হলো আমার অবাধ্য আঁচল খানা তো অনেক আগেই তুলে রেখেছিলাম। আর আমার পেটের বেশিরভাগ অংশই খালি পড়ে আছে। বুকের ভেতর টা আচমকাই ধক করে উঠলো। তবে কি তার এই কবিতার মূল লক্ষই হলো আমার জ্ঞান ভাণ্ডারকে শিক্ষা দেওয়া?
—-” ইঁচালি-বিঁচালি শরীরের,
ভাঁজে ভাঁজে ~~
আগুন জ্বালায়ে দেখি,
তুমি পোড় না আমি?”
কথাটা আরও একবার বাজতে বাজতে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিল। আচমকাই ভেতর টা ধুকপুক করে উঠল।জানিনা, কি ভেবে রাহিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কিন্তু রাহিয়ান ভাইয়ার দাঁড়িয়ে থাকা জায়গাটা আপাতত শূন্য পড়ে আছে। কোথায় গেলেন উনি? এই তো এক্ষুনি এখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
#চলবে_______________