#প্রেয়সী 🤎🥀
#moumita_mehra
#পর্বঃ২৫
৪৮.
সবার চোখ এড়িয়ে ছাদ থেকে নেমে এলাম আমি। ড্রয়িং রুমের পাশ থেকে হেঁটে যেতেই চোখ পড়ল রিম্মি আপুর হবু শশুর – শাশুড়ীর দিকে। দুজনে একসাথে পাশাপাশি বসে সুখ দুঃখের আলাপ পাড়ছেন। মানুষ দুটো খুব অমায়িক। একজন আরেকজন প্রতি খুব সফ্ট। তাদের দুজনের নাকি বরাবরই সাপে নেউলে সম্পর্ক ছিলো। কেউ কাউকে চোখের নীলেও সহ্য করতে পারতেননা। কিন্তু এই বাহ্যিক সম্পর্কের চেয়ে আত্মিক সম্পর্কটা ছিলো বেশ গভীর। দুজন দুজনকে হঠাৎই ভীষণ ভালোবেসে ফেলেন। একজন আরেকজনের মায়ায় জড়িয়ে গেলেন। একজন আরেকজনকে হারানোর ভয়ে সর্বদাই তটস্থ হয়ে থাকতেন দুজনে। তবুও মুখ ফুটে কেউ কখনো কারোর মনের কথা বলতে পারেননি। হঠাৎ এলো সেই দিন, দু’জনের মনের কথা একে অপরকে বলে ফেলার সেরা সুযোগ টা হাতে পেলো দু’জনেই। কিন্তু পরিস্থিতিটা ছিলো তাদের বিপক্ষে। আন্টির বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো। আঙ্কেল পাগলের মতো রাতদিন ছটফটিয়ে মরতে লাগলো। হঠাৎ আরেক কান্ড হলো। আন্টির বিয়ের রাতে কিছু লোক আন্টিকে তুলে নিয়ে গেলো। আর আঙ্কেলের কাছে সে খবর পৌঁছতেই পাত্রের থেকেও আগে পৌঁছে গেলো আঙ্কেল। লোকগুলোর হাত থেকে আন্টিকে উদ্ধার করে যখন বাড়ির পথ ধরে তাকে নিয়ে আসা হচ্ছিলো তখন আন্টি কান্নায় ভেঙে পড়ে আঙ্কেলকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে, এই লোক গুলো আমারই ঠিক করা। আমি চাই না এই বিয়েটা করতে! আমি তোকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি! তুই প্লিজ আমায় নিয়ে আর বাড়ি ফিরিস না। নিয়ে চল তোর সাথে। আমি তোর সাথে যেতে চাই।”
আঙ্কেল হতবাক হয়ে আন্টির কথা গুলো শুনে হঠাৎই আন্টির গাল বরাবর চড় বসায়। আন্টি ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে গেলো। আঙ্কেলের চোখে চোখ রাখতে না পেরে মাথা নীচু করেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। কিন্তু আঙ্কেল নরম হলো না। আন্টিকে জোর করেই বাড়ি নিয়ে গেলো। অতঃপর তার ঠিক করা পাত্রের সাথেই আন্টির বিয়ে পড়াতে বলল।
—-” নিধি? ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছো মামনি? এদিকে এসো না?”
দূর থেকেই ভেসে আসলো আন্টির গলা। আমি চোখ ঝাপটে আন্টির দিকে তাকালাম। তাদের বাকি কাহিনি টুকু ভাবার আগেই ঘোর কেটে গেলো আমার। আন্টির সাথে ঠিক করা পাত্রের বিয়ে হলে তবে তারা দুজনে আজ একসাথে কি করে? বাকি গল্প টুকু বলার পূর্বেই কিভাবে যেন থেমে গেলেন তারা। শেষ টুকু শোনা হলো না! আচ্ছা এখন গিয়ে কি শুনে নিবো শেষটুকু?
—-” এসো এসো?”
আবারও ডাকলেন আন্টি। আমি নড়েচড়ে দাঁড়ালাম। গলা খাঁকারি দিয়ে ছোট্ট করে হাসলাম। আসল কথা হলো আমি তাদের ব্যক্তিগত সময়ের মাঝে এই মুহুর্তে ঢুকতে চাচ্ছি না। আমি আন্টির দিকে তাকিয়ে আমতাআমতা করতে লাগলাম। হঠাৎই আমার ফোনের দিকে চোখ পড়লো। মনেমনে এসেও পড়লো একখানা তরতাজা বুদ্ধি। আমি ফোনটা তুলে মিনমিনে গলায় বললাম,
—-” ফোন! আমার একটা কল এসেছে আন্টি। আমি কথা বলে এক্ষুনি আসছি।”
আন্টি অমায়িক হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন। আমিও আর দাঁড়িয়ে না থেকে বাইরে চলে এলাম। বাড়ির মেইন গেট থেকে বাইরের গেট অব্দি আলো জ্বলছে। এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত সবই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু রাহিয়ান ভাইয়াকে কোথায় দেখা যাচ্ছে না আশেপাশে। গেলেন কোথায় মানুষটা? আমি শাড়ির কুঁচি ধরে সাবধানে হাঁটা ধরলাম। এই মুহুর্তে উনাকে চোখের সামনে রাখাও যেন আমার স্বস্তির কারন হবে। কিন্তু কেন? জানা নেই। ধীরপায়ে এগিয়ে এসে বাইরের গেটে পা রাখতেই চোখ এড়ালো না উনার কালো গাড়িটা। গাড়ির উপর অন্যমনষ্ক হয়ে বসে আছেন তিনি। উনার গোছালো চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। বাতাসের তান্ডবে মৃদু ভাবে উড়ছে তা। ভাঁজহীন শার্টের হাতা দুটোতে ভাঁজ পড়ে গিয়েছে। ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে, উনার কি মন খারাপ?
আমার বুক চিঁড়ে তপ্ত শ্বাস বের হলো আমারই মনের অগোচরে। আমি উল্টো পথ ধরলাম। উনার একাকী সময়টাতে আর হস্তক্ষেপ করে উনাকে বিরক্ত না-ই বা করলাম।
—-” শাড়ি পড়াটা কি খুব বেশি দরকার ছিলো?”
উনার শান্ত কন্ঠ বিচলিত করল আমার মন। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে পুড়লো যেন। আমি থমকে দাঁড়ালাম। শুঁকনো গলাতেই ঢোক গিললাম। পেছন মুড়ে উনার দিকে তাকাতে তাকাতে আবারও বলে উঠলেন তিনি,
—-” যে জিনিসে অশান্তি হয় তা না পড়াই শ্রেয়।”
—-” রিম্মি আপু জেদ করলো বলেই তো পড়লাম।”
আমিও শান্ত কন্ঠে জবাব দিলাম। উনি মুখ তুলে তাকালেন আমার দিকে। কিছুক্ষন একই ভাবে চেয়ে থেকে চোখ ফেরলেন। কঠিন গলায় বললেন,
—-” কেশব তো দেখি তোমাকে চোখে হারাচ্ছে।”
—-” তাতে আমার কি দোষ? (অভিমানী কন্ঠে)
দু’হাতে ভর করেই নেমে এলেন উনি। অন্ধকারে আন্দাজে পা ফেলে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। ভরাট কন্ঠে বললেন,
—-” তোমার এই শাড়ি। তুমি কি জানো রেড ওর ফেভারিট কালার। রেড ওর দুর্বলতা। আর আজ তো আরও বেশি প্রিয় হয়ে গেলো এই কালার। এই শাড়ি, আর এই শাড়ি পরিহিত নারী।”
আমি ধাক্কা খেলাম। শুঁকনো মুখে বললাম,
—-” সেটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত সমস্যা! আমি নিশ্চয়ই এই রঙ পড়ায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দোষী হয়ে যায় নি!”
—-” ওর থেকে দূরে থাকবে!”
আবারও হুমকি! আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—-” আমি কেন দূরে থাকবো। সে কি করছে বা করবে তার দায়ও নিশ্চয়ই আমার নয়! আপনি সবসময় আমাকেই কেন….”
—-” আমি বলেছি তো ব্যস। তুমি ওর থেকে দূরে থাকবে মানে দূরে থাকবে।”(দাঁতে দাঁত চেপে)
—-” অসম্ভব!”
কথাটা মুখ ফসকে বলে ফেলেই বিপদ বাড়ালাম বুঝি! মনেমনে ঠিকই এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে উনার ঝাঁঝ সহ্য করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম। কথা বলার আগে তো জীবনে একবার ভেবে বললাম না। যা মাথায় আসতো তাই গড়গড় করে বলে এসেছি।
উনি চোখের মাঝে সূর্য এঁটে তাকালেন আমার দিকে। রাগে বিদিশা হয়েই আমায় ঠেসে ধরলেন উনার গাড়ির সাথে। আমার আত্মা হুড়মুড় করছে বেরিয়ে আসার জন্য! ভয়ে আমার সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে উঠল।
উনি আমার হাত দুখানা শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,
—-” তুমি আমার কথার অমান্য করছো? কেশবের সাথে কথা বলার জন্য আমাকে অসম্ভব বলছো? হাউ ডেয়ার ইউ ইডিয়ট? আমি তোমাকে যেহেতু বারন করেছি তুমি ওর সাথে কথা বলবেনা তো বলবে না! ওর থেকে দূরত্ব রাখবে তো রাখবে ব্যস! আমি আর কিছু শুনতে চাই না! আর নেক্সট টাইম থেকে যদি দেখি আবারও শাড়ি পড়ে কোথাও বের হয়েছো তবে তুমিও দেখবে রাহিয়ান কি কি করতে পারে? জিন্দা মাটিতে পুঁতে ফেলবো তোমাকে!”
আমার দম আঁটকে গেলো। লোকটা স্বাভাবিক সেন্সে নেই তা ঠিক বুঝতে পারছি! আমার হাত দু’খানা মড়মড় করে ভেঙে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। আমি ব্যাথায় আরও বেশি সিঁটিয়ে রইলাম। তারউপর উনার এই ধাঁচের কথা! কোন খুশিতে যে নাচতে নাচতে এলাম উনার এখানে খোদা মালুম!
আচমকাই কিছু না বলে একটানে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন আমায়। উনার কাঁপা কাঁপা হাত টা আমার শাড়ি ভেদ করে পেটর উপর রাখতেই আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে এলো। অনুভূতির মাত্রাতিরিক্ত তেজ সহ্য করতে না পেরেই দু’হাতে খামচে ধরলাম উনার শার্ট। উনি উনার অন্য হাতটাও চেপে ধরলেন আমার পেটে। আমার সহনশক্তি লোপ পেলো। অনুভূতি শক্তি ভারি হয়ে উঠলো। আমি নিঃশ্বাস আঁটকেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তাকে। উনার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার তীব্র ইচ্ছে জাগলেও সামলে নিলাম নিজেকে! হাতে গোনা কিছু মুহুর্ত উনাকে জড়িয়ে ধরে জোর করেই ছাড়িয়ে নিলাম নিজেকে। আর এক মুহুর্তও নিজেকে উনার সামনে রাখার দুঃসাহস করতে পারলাম না৷ উনার থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে এক দৌড়ে চলে এলাম বাসার ভেতর। সিঁড়ির পাশ থেকে সোজা গিয়ে আমাদের জন্য সাজিয়ে রাখা গেস্ট রুমে ঢুকেই দরজা আঁটকে দিলাম। বুকের ভেতরটা থেকে থেকে লাফ মারছে। হাত পা তো সেই থেকেই কেবল কেঁপেই চলেছে। নিঃশ্বাস গুলো ভয়ংকর ভাবে জড়িয়ে আসছে। জমে যাচ্ছি আমি! বিছানায় বসে জোরে জোরে দম ফেলতেই অপরিচিতর ম্যাসেজের কথা গুলো আরও একবার মাথার মধ্যে বেজে উঠলো,
—-” আমার বড় সাধ হয়
তোমার নিঃশ্বাস আটকায়ে দেখি,
তুমি মর, না আমি!
ইঁচালি-বিঁচালি শরীরের,
ভাঁজে ভাঁজে ~~
আগুন জ্বালায়ে দেখি,
তুমি পোড়,না আমি!”
৪৯.
জমিয়ে কাজ চলছে নবীন বরন প্রোগ্রামের। কানাঘুঁষায় শোনা গেলো সিনিয়রদের লিডার রাহিয়ান রাফিদ এই প্রথমবার সব কিছু নিয়েই ভীষণ হেলাফেলা করছেন যা এর আগে কখনো কোনো কাজেই করেননি। কারন? কারোর জানা নেই। এমনকি স্বয়ং রাহিয়ান রাফিদেরও জানা নেই। অনেকেই কৌতুহল বশত আলোচনায় বসে যাচ্ছে এরকমটা হওয়ার কি কারন? সেকি প্রেমে পড়েছে নাকি ছ্যাঁকা খেয়েছে ব্যাকা হয়েছে। এমন কথায় বেশিরভাগ জনগন সেইরাম ভাবে চটে যাচ্ছে। রাহিয়ান রাফিদকে ছ্যাঁকা দেওয়ার মতো কোনো মেয়ে আজও অব্দি এই ভুবনে জন্মায়নি! এর মানে বুঝছেন তো? তাকে ছ্যাঁকা দেওয়া অসম্ভব। কেননা, লাখো মেয়ে নিজেই তো প্রতিনিয়ত ছ্যাঁকা খেয়ে মরে যাচ্ছে একা একা!
আমি আর রাই ভার্সিটির আর্টকলা ভবনের নিচতলায় বসে আছি। আর রাহিয়ান ভাইয়াকে নিয়ে এতো এতো আলোচনা সব আমাদের পাশে বসেই হচ্ছে। রাই আমাকে খোঁচা মেরে নাকি সুরে বলল,
—-” তোর ইচ্ছে করছেনা মেয়েগুলোর চুলগুলো টেনে উগলে নিয়ে আসতে?”
আমি হতবাক হয়ে বললাম,
—-” কেন?”
রাই অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
—-” তুই আমাকে এখনো জিজ্ঞেস করছিস ‘কেন’? তুই কি সত্যি বুঝতে পারছিস না?”
আমি ভ্রু কুঁচকে ফেললাম। মেয়েগুলোর দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে পূণরায় রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—-” না! কি হয়েছে বুঝলাম না তো কিছু?”
রাই রাগে ফুঁসছে। গাল ফুলিয়ে বলল,
—-” তোর জায়গায় আমি থাকলে না ঠিকই ওদের চুল ছিঁড়ে নিয়ে চলে আসতাম। রাহিয়ান ভাইয়ার ছ্যাঁকা খাওয়া বা প্রেমে পড়া অব্দি তো ওদের কথা ভালোই লেগেছে কিন্তু এখন? এখন উনাকে স্বপ্নের পুরুষ ভেবে কেমন হাহুতাশ করে মরছে দেখ!”
আমি ফিক করে হেসে দিলাম। রাইয়ের চটে যাওয়ার কারন হয়ত ধরতে পেরেছি আমি। তাই খোঁচা মারার সুরে বললাম,
—-” তোর উনাকে কেমন লাগে?”
রাই নেভানো চোখে তাকালো। আহত গলায় বলল,
—-” রূপ ভাইয়াকে দেখার আগে উনাকে দেখলে হয়ে যেতো কাজটা। কিন্তু কি করার?”
—-” তোর তো তাও একজন আছে। কিন্তু ওদের দেখ, তোর মতো ওদের তো কেউ নেই! যে আছে সে হলো রাহিয়ান ভাইয়া! কাছে টেনে সোহাগ তো আর করতে পারবেনা তাই দূর থেকেই এমন করছে। কি আর করার? যার যা খুশি করতে দে না?”
রাই নড়েচড়ে বসলো। আমার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় প্রশ্ন করল,
—-” তোর কি আসলেই খারাপ লাগছেনা?”
আমি পূর্নদৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম রাইয়ের পানে। না সূচক মাথা নেড়ে বললাম,
—-” না, হঠাৎ খারাপ কেন লাগবে? আমার তো শুনে বেশ মজাই লাগছে!”
রাই মুখ বাঁকাল। চোখ দুটো সরু করে বলল,
—-” এই একই প্রশ্ন আগামী সপ্তাহে আমি তোকে আবারও জিজ্ঞেস করবো এন্ড আমি ড্যাম শিওর তুই ভিন্ন উত্তর দিবি।”
—-” মানে?”
—-” কিছু না। চল ক্লাসে যাই, তিনতলা অডিটোরিয়ামে তোর নাচের প্রাকটিস হবে।”
নাচের কথা শুনলেই তাল উঠে যায় আমার। আই লাভ নৃত্য। আমি আর কথা বাড়ালাম না। আমোদে মেতে উঠে রাইকে নিয়ে চলে গেলাম তিনতলায় অডিটোরিয়ামে।
অডিটোরিয়াম রুমটা যথেষ্ট বড়। কিন্তু আজ নাচের প্রাকটিসের জন্য আসা স্টুডেন্টদের ভীরে ভরপুর হয়ে উঠেছে জায়গাটা। আমি রাইকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলল অনন্যা আপুর। সাথে বাঁকা মুখওয়ালি অরিন আপুও রয়েছেন। বুক ধড়ফড় করছে যেন রাহিয়ান ভাইয়া না থাকেন। সায়তানকা নাম লিয়া তো সায়তান হাজির। তাদের পুরো গ্যাং-ই সাউন্ডবক্সের পাশে রাউন্ড হয়ে বসে আছেন চেয়ারে। আমাকে দেখতেই স্রেফ একবার তাকালেন উনি। আর ফিরে তাকালেন না আমার দিকে। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে নাচের টিচার মারুফা ম্যামের দিকে এগিয়ে যেতেই ডেকে উঠলেন আরফান ভাইয়া। ঝামেলার শুরুটা সব সময় এই ব্যাক্তির থেকেই হয়। রাহিয়ান ভাইয়ার ওয়ার্নিংয়ের কথা মনে পড়তেই তার ডাক সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করে নিজের গন্তব্যেই হেঁটে চললাম। কিন্তু না নিধি থাকবে যেখানে বিপদ যাবে সেখানে! মেনে নিতে শিখ প্রিয়! নিজের মনকে বুজ দিতে দিতেই সামনে এসে খাম্বা হয়ে দাঁড়ালেন আরফান ভাইয়া। আমি ভয়ে ভয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা চালালাম। আঁড়চোখে রাহিয়ান ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি রেখেছি! তিনি তার সম্পূর্ণ ধ্যান জ্ঞান ফোনের মাঝে ডুবিয়ে বসে আছেন। এদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে তাতে যেন তার কোনো মাথা ব্যাথাই নেই।
—-” তুমি নৃত্যকলাতে নাম দিয়েছো?”
আরফান ভাইয়ের সহজসরল প্রশ্ন। আমি ঢোক গিলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। আরফান ভাই খুশিতে আটখানা হয়ে অনন্যা আপুকে ডাক দিলেন। অনন্যা আপু বসে থেকেই ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইলেন কি হয়েছে। আরফান ভাইয়া তার সঠিক জবাব না দিয়েই আবারও ডেকে উঠলেন। অনন্যা আপু তার ডাকে অতিষ্ট হয়েই উঠে এলেন।
—-” কি রে কি হলো তোর হঠাৎ?”
—-” তুই নাচে তোর লাস্ট একটা পার্টনার খুঁজছিলিস না? নিধিও তো নাচবে। তুই ওকেই নিয়ে নে তোর টিমে?”
অনন্যা আপু মিষ্টি হেসে আমার দিকে তাকালেন। জিজ্ঞেস করলেন,
—-” তাই নাকি? নিধি নৃত্যকলাতে নাম লিখিয়েছো?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
—-” হ্যাঁ আপু। তাই ম্যামের কাছেই যাচ্ছিলাম কোন দলে কি গানে নাচ হবে সেটা কনফার্ম করতে।”
—-” যাক তাহলে তো হয়েই গেলো। তোমাকে আর ম্যামের কাছে যেতে হবেনা তুমি বরং আমার সাথে চলো। আমার টিমে পুরো ছয়জন কমপ্লিট। আর একজন হলেই ডান। আচ্ছা তুমি নাচ কেমন পারো? একটু ভালো নাকি বেশি ভালো?”
আমি মুখ খোলার আগেই পাশ থেকে উৎসাহিত কন্ঠে বলে উঠলো রাই,
—-” এক কথায় চমৎকার আপু। আমি হলফ করে বলতে পারি নিধির মতো এতো ভালো ডান্সার হোল এরিয়াতে তুমি পাবেনা!”
রাইয়ের কথায় গর্বে বুক ফুলে যাওয়ার কথা আমার। কিন্তু আমি যে তা পারছিনা। ভয় হচ্ছে হুতুমপেঁচাকে নিয়ে! আমার সাধের নাচেও আবার বাগড়া দিয়ে বসবে না তো?
আমার মনকে স্বস্তি দিয়েই বাঁধা দিলেন না তিনি। রাইয়ের মুখে আমার ছোট থেকে বড় হওয়ার সাথে সাথে নাচের সম্পর্কটাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করলো যে সেও খুশি হয়ে অভিনন্দন করলেন। সবার দৃষ্টির অগোচরেই মাতাল হেসে ছোট্ট করে বলে গেলেন,
—-” অল দ্যা বেস্ট।”
#চলবে____________________