প্রেয়সী পর্ব-৩০

0
1039

#প্রেয়সী 🤎🥀
#moumita_mehra
#পর্বঃ৩০

৫৮.

হলুদে হলুদে পুরো বাড়ি এখন হলুদময় হয়ে আছে। যেদিকেই তাকাই সেদিকেই হলুদ। চোখেও এখন শষ্যে ফুল দেখছি। কেননা সেটাও হলুদ। এত হলুদ আর হলদেটে ভাবের মধ্যে নজর কাড়ল একটি মেয়ে। সে এই হলুদের নিয়ম ভঙ্গ করেই টকটকে লাল একখানা গাউন পরে দাঁড়িয়ে আছে। সুইমিং পুলের পাশে দাঁড়িয়ে কাউকে একটা ফোন করছে। দেখে বেশ রাগান্বিত লাগছে। তার রাগটা আসলে কিসের জন্য সেটাই নিরীক্ষণ করতেই হলুদের বাটি হাতে এগিয়ে গেলাম আমি। মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দরী। এমনি ভীষণ ফর্সা তার উপর রোদের প্রখরতায় তার সাদা গাল দুটো রক্তিম হয়ে উঠেছে। তাই এখন দেখতে আরও বেশি কিউট লাগছে। বয়সটা বোধ করি আমার কাছাকাছি বা বড়ও হতে পারে। আজকাল চেহারা দেখে বয়স বিচার করা একদমই সম্ভব হয় না। মেয়েটার রাগের সাথে সাথে বিরক্তিটাও ধাপ দিয়ে বেড়ে চলেছে। কারনটা হয়ত আমি বুঝতে পারছি।

—-” হাই আপু। এতো রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছো? ঘেমে-নেয়ে তো একাকার হয়ে যাচ্ছো?ভেতরে যাবে?”

আমি স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই মেয়টাকে দু-চারটে প্রশ্ন একসাথেই করে ফেললাম। মেয়েটা ব্যাপারটা কিভাবে নিলো বোঝা গেলো না। সে আমার দিকে তাকিয়ে আমার পা থেকে মাথা অব্দি চোখ বুলালো। অতঃপর মেয়েটা মৃদু হেসে বলল,

—-” নিধি.. রাইট?”

আমার স্বাভাবিক ভঙ্গিমা এবার অস্বাভাবিক হলো। কপালের মাঝে এসে জুটল অসংখ্য ক্ষুদ্র ভাজ। আমি বিরস মুখে বললাম,

—-” তুমি আমায় চেনো?”

মেয়েটা বিগলিত হাসল। মাথা নেড়ে বলল,

—-” হু খুব ভালো করে।”

আমি ভাবনায় আঁটকে গেলাম। মেয়েটা যেহেতু আমাকে খুব ভালো করে চিনে সেহেতু আমারও কি তাকে চেনাটা খুব জরুরি ছিলো না?

আমি মৃদুস্বরে বললাম,

—-” আচ্ছা আচ্ছা। আপু ভেতরে এসো না। এখানে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে তো ড্রেসের মতোই লাল হয়ে উঠেছো। তোমার সাথে কি আর কেউ এসেছে?”

আমার শেষ প্রশ্নে মেয়েটার বিগলিত হাসির ইতি ঘটল। মেয়েটা হঠাৎই ভীষণ রেগে গেলো। একপ্রকার ক্ষেপা গলায় বলল,

—-” আমি একাই এসেছি। তবে যার জন্য এসেছি তাকে বাদে এক এক করে সবার সাথে দেখা হয়ে গেলো।”

—-” কার জন্য এসেছো? তুমি কি রিম্মি আপুর বান্ধবী? ইশশ, আগে বলবে না? আর ওখানে একা একা কেন দাঁড়িয়ে ছিলে? কাউকে না চিনলে তো ডেকে জিজ্ঞেস করতে পারতে?”

মেয়েটা জবাবে ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। আমার সাথে সাথেই পা চালিয়ে রুক্ষ স্বরে বলল,

—-” না গো। রিম্মির আপুর বান্ধবী নই। রিম্মি আপুর ভাইয়ের বান্ধবী আমি। ও আমাকে ইনভাইট করে ডেকে পাঠিয়েছে। অথচ দেখো ওকে বাদে সারা দুনিয়ার লোকের সাথে দেখা হয়ে গেলো। এমনকি তোমারও দেখা পেলাম। অথচ ঐ অসভ্যের দেখা মিলল না।”

আমি হেসে উঠলাম মেয়েটার কথায়। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বলল,

—-” ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ! খুব রাগ হচ্ছে তো ওর উপর তাই একটু…”

আমি মৃদু হেসে আস্বস্ত করলাম মেয়েটাকে। না সূচক মাথা নেড়ে বললাম,

—-” সমস্যা নেই আপু আমি বুঝতে পারছি ব্যাপারটা।”

—-” তুমি কিন্তু সত্যি ভীষণ কিউট নিধি। ফাহিম আমাকে সবসময় তোমার কথা বলে। ওর সাথে যখন কথা হবে তখনই নিধি এই করেছে,নিধি ঐ করেছে এটা সেটা বলতে বলতে কানের পোকা বের করে দেয়। ওর থেকে তোমার কথা শুনতে শুনতে একদম মুখস্থ করে ফেলেছি।”

কথাটা বলেই মিষ্টি হাসল মেয়েটা। আমি অসহায় কন্ঠে বললাম,

—-” আমার ভাইটা আমার কথা বলে তোমায় খুব বিরক্ত করে তাই না?”

মেয়েটা গোলগাল চোখ পাকিয়ে না সূচক মাথা নেড়ে হাসল। আমার গালে হাত রেখে বলল,

—-” একদমই নয়। আমি তো বলব তোমার ভাই তোমার প্রশংসা আমার কাছে একটু কমই করে। তোমার মতো আমার একটা বোন থাকলে আমি হয়তো ওর থেকেও বেশি বেশি বলতাম।”

—-” এতো হাওয়া দিওনা না বোন। পরে দেখবে বেলুনের মতো ফুলে উঠে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছি!”

মেয়েটা হেসে ফেলল ফিক করে। আমি তাকে বসতে ইশারা করে বললাম,

—-” সরি টু সে ফাহিম ভাইয়া বাসায় নেই। দুই ভাই মিলে একটু বেরিয়েছে। মেঝ খালু, মানে ফাহিম ভাইয়ার বাবার খুব কাছের একজন বন্ধু আছেন। শুনেছি উনি ভীষণ অসুস্থ। বিয়েতে আসতে পারবেনা বলে না করে দিয়েছেন। তাই মেঝ খালুর ক’টা দিন ধরে খুব মন খারাপ। আর তাই তারা দুই ভাই খালুকে কিছু না জানিয়েই তাকে নিতে চলে গেছেন। কিছুক্ষনের মধ্যে হয়তো চলেও আসবেন তাকে নিয়ে। তুমি প্লিজ রেগে থেকো না আমার ভাইটার উপর। কারন আমার ভাইটা কিন্তু ততটাও কেয়ারলেস নয় বুঝলে?”

মেয়েটা মাথা নীচু করে মুচকি হাসলো। আমি আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বললাম,

—-” আপু তুমি দু’মিনিট বসো আমি তোমার জন্য একটু জুস নিয়ে আসি। তুমি অনেক্ষন রোদে বসে ছিলে। নিশ্চয়ই গলা শুঁকিয়ে গেছে। একটু জুস খেলে ফ্রেশ লাগবে।”

আমি উঠতে নিলেই মেয়েটা বাঁধ সাধল। বলল,

—-” কোথাও যেতে হবেনা তোমায়। তুমি বসো তো।”

—-” একটু জুস নিয়ে আসতাম?”

—-” উঁহু, লাগবে না। আমি ঠিকাছি। আমরা বরং একটু গল্প করি কি বলো?”

আমি মুচকি হেসে বললাম,

—-” সে না হয় করছি কিন্তু মেহমানকে এভাবে খালি মুখে বসিয়ে রাখতে আমার ভীষণ অস্বস্তি লাগছে আপু। তুমি একটু বসো আমি যাবো আর আসব।”

” নিধি কি করছ গো? মা ডাকছে তোমায়?”

বউমনির গলা ভেসে আসতেই ঘাড় ফিরিয়ে তাকালাম দু’জনেই। বউনি প্রথমে মেয়েটাকে খেয়াল না করলেও হঠাৎ দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করল, কে?

আমি হাসি মুখে বললাম,

—-” বউমনি এটা হলো আমাদের ফাহিম ভাইয়ার ফ্রেন্ড। আপু, এই হলো আমাদের সবার একমাত্র বউমনি।”

দু’জনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসল। বউমনি বলল,

—-” আই থিংক আমি তোমাকে চিনি।”

মেয়েটা লজ্জামিশ্রিত হেসে বলল,

—-” হু।”

—-” তুমি হিয়া তাইনা?”

মেয়েটা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই আমারও চোক জোড়া গোলাকার হয়ে এলো। আমি হিয়ার আপুর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,

—-” তুমিই সেই হিয়া আপু। মানে ফাহিম ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড।”

হিয়া আপু এবার লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। জবাবে কিছু বলতে নিলেই আমি তীক্ষ্ণস্বরে বললাম,

—-” তাহলে এতক্ষণ কেন বললেনা আমায়? আমি তো আরও ভাবলাম তুমি ভাইয়ার কমন ফ্রেন্ড বা কিছু।”

হিয়া আপু মৃদুস্বরে বলল,

—-” আমি তো তোমার সাথে কথা বলতে বলতে ভুলেই গিয়েছি আমি কার ফ্রেন্ড আর কার গার্লফ্রেন্ড!”

হিয়া আপুর কথায় হেসে ফেললাম আমি আর বউমনি। বউমনি আমার কাছে এসে আমাকে আগলে ধরে বলল,

—-” খুবই স্বাভাবিক হিয়া। আমাদের এই মেয়েটা এতো ভীষণ সুইট যে সবাই তার কথার ফাঁদে পড়ে সব ভুলে যায়।”

আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,

—-” হু বলেছে তোমায়। আমি মোটেও সুইট নই আর হিয়া আপুর মতে কিউটও নই। দেখো, তোমরা দুজন কত কিউট দেখতে৷ দেখলে যেন সারাজীবন দেখতেই ইচ্ছে করবে।”

হিয়া আপু আমার দিকে এগিয়ে এসে আস্তে করে বলল,

—-” কে বলল এই কথা? আমি তো শুনেছি, রাহিয়ান ভাইয়া এই মেয়েটাকে হারানোর ভয়ে সারাদিন কেবল হুমকির উপরই রাখে, এই ছেলের সাথে কথা বলবে না! ঐ ছেলের সাথে কথা বলবে না! এই ছেলে কিছু বললে ফিরে তাকাবে না! ঐ ছেলের থেকে একশ হাত দূরত্ব রেখে চলেবে! যার বউয়ের প্রতি এতো কেয়ার সে বউ কিউট আর সুইট না তো কি বলোতো?”

এই দুজন মিলে এখন আমায় লজ্জায় ফেলার ফন্দি আঁটছে। আমি নড়েচড়ে উঠে বললাম,

—-” খালামনি আমায় ডাকছে না? আমি য,,যাই তার কাছে।”

কথাটা বলেই কোনো মতে বেরিয়ে এলাম তাদের ছেড়ে। পেছন থেকে অবশ্য তাদের হাসির শব্দ হাওয়ার সাথে তাল খেলে ভেসে আসছিলো।

৫৯……

গম্ভীর মুখ করে বসে আছেন রাহিয়ান। রেগে আছেন নাকি ক্ষেপে আছেন বোঝা যাচ্ছে না। ছেলের হঠাৎ এতো গম্ভীরতা খালামনি ধরতে না পেরেই আমাকে পাঠিয়ে দিলেন সিংহের গুহায়। আমি এক কোনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আর উনি বেডের উপর মাথা চেপে বসে আছেন। এই নিয়ে তিনবার জিজ্ঞেস করে ফেলেছি কি হয়েছে? কিন্তু বান্দা মুখ খুলছে না। উনার রাগটা বরাবরই খুব বেশি। হঠাৎ এমন ভয়ংকর ভাবে রেগে যান যে বড় খালামনিও ছেলের ধারে কাছে ঘেঁষতে ভয় পান। রিম্মি আপুর হলুদের সব নিয়ম শেষ হলো ঘন্টাখানিক পেরিয়েও গেলো। ফাহিম ভাইয়া আর উনি মেঝ খালুর বন্ধু খোরশেদ আলম সাহেবকে নিয়ে এসেছেন আরও দু’ঘন্টা আগে। খোরশেদ আলম সাহেব আপাতত বিয়ের ক’টা দিন আমাদের সাথেই থাকবেন বলে স্থির করল মেঝ খালু। হিয়া আপু আর ফাহিম ভাইয়া একসাথেই বের হলো হলুদ শেষ হতেই। সবাই এখন যার যার রুমে রেস্ট নিচ্ছেন। আমার একান্ত ব্যক্তিগত রুমটা দখল হয়েছে ফাহিম ভাইয়ার দাদা বাড়ি গোষ্ঠীর আণ্ডাবাচ্চা দিয়ে। মোটমাট আটজন থাকবে ঐ রুমে। এখন আমার থাকার জায়গা ঠিক কোন রুমে হবে আমার নিজেরও অজানা। খানিক্ষন আগে কেশব এসেছিলেন। ভালো ভালো বক্তব্য দিয়ে গেলেন আমার আর রাহিয়ানের আগামি জীবন নিয়ে। কথা গুলো শুনতে ভালো লাগলেও হজম করতে পারেননি রাহিয়ান। কেশব একটা ঝামেলা পাকাবে বলে তার ধারনা। কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা, কেশব ঝামেলা পাকালেও বা কি লাভ? রাহিয়ানের হাতে একটা ঘুষি খেলেই উনি জায়গায় ফিট হয়ে যাবে। অযথা ঝামেলা করে নিজেই ঝামেলায় পড়ার কোনো মানে আমি দেখছি না। সব ভাবনাগুলো একত্রে শেষ করেই গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লাম। উনার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলাম,

—-” আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে? আমি কি আপনার জন্য একটু লেবুর শরবত করে আনবো? নাকি আদা দিয়ে চা করে আনবো? দু’টোতেই আশা করি উপকার হবে।”

—-” না! আমার এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে মায়ের রুমে গিয়ে রেস্ট নাও। সারাদিন অনেক কাজ বাজ করেছো। নিশ্চয়ই শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে।”

গম্ভীর স্বরে জবাব এলো উনার। আমি ছোট্ট করে হাসলাম। আস্তেধীরে তার পাশে গিয়ে বসে তার কাঁধে হাত রাখলাম। মৃদুস্বরে বললাম,

—-” খুব বেশি চিন্তিত? আচ্ছা বলুন তো পৃথিবীতে কি এমন ভয়ানক ব্যাপার ঘটে গেলো যে আপনি চিন্তায় মুখই তুলতে পারছেন না? হয়েছে টা কি একবার বলা যায় না হু? যা ঘটেছে তা শুনলে কি ফিট খাবে নিধি?”

উনি সোজা হয়ে বসে আমার মুখ চেয়ে ম্লান হাসলেন। আমার হাতটা তার হাতের মুঠোয় বন্ধি করে নিয়ে বললেন,

—-” যা ঘটেছে তা পুরোটা আমিও জানিনা। তবে এটুকু জানি তার পুরোটা জানলে পরপর অনেক গুলো লাশ পরবে।”

আমার বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে পুড়ল। আমি থমকানো গলায় বললাম,

—-” কি বলছেন এসব?”

উনি কোমল শান্ত চাহনি দিয়ে বললেন,

—-” তুমি,
ভাদ্রের আকাশের উড়ো চিঠি,
মিটমিট হেসে ভেসে চলা শুভ্র মেঘ,

তুমি,
এলোমেলো চাওয়ায় পিতল হৃদয়
শীতল করা দখিণা হাওয়া~~

তুমি,
পালতোলা নৌকায় চলা বহুদূর
মোহিত করা আশ্বিনের ঘন কাশফুল।

তুমি, প্রেয়সী~~~ হে মোর প্রেয়সী!

(প্রেয়সী 🥀অংশবিশেষ)

আমি কপাল খানা কুঁচকে ফেললাম তৎক্ষনাৎ। প্রথমে হুমকি পরক্ষনেই শান্ত ভঙ্গিতে কবিতা আবৃত্তি! আমি বুঝিনা এই মানুষটাকে। কখন কি যে করে আর কখন কি যে বলে সত্যি বুঝতে পারিনা!

উনি হঠাৎ তার মাথার সিল্কি চুলগুলোকে হাতের ন্যায় আচঁড়ে দিতে দিতে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলেন,

—-” এভাবে কি দেখছো? হঠাৎ প্রেমে পড়লে না কি আমার? মাই গুডনেস, নীলাদ্রিতা কি তবে রাহিয়ানের প্রেমে পড়েই গেলো? এই কে কোথায় আছো দেখে যাও শুনে যাও…”

আমি লাফ মেরে উঠে গেলাম উনার কাছ থেকে। উনার ছেলেমানুষী দেখে উপরে উপরে রাগে ফেটে পড়লেও ভেতরে ভেতরে হাসিতে পেট ফেটে যাওয়ার জোগাড়। আমি তেতে উঠে বললাম,

—-” নীলাদ্রিতার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তাই না? পৃথিবী তে এতো এতো ছেলে থাকতে সে কিনা প্রেমে পড়বে এমন একজন একরোখা মানুষের। যে কিনা সারাদিন হুমকিধামকি দিয়ে ভালোবাসে। আমার বয়েই গেছে আপনার প্রমে পড়তে! আমি তো প্রেমে পড়ব হুমায়ুন আহমেদ স্যারের মতো মানুষের। যে তার প্রেয়সীকে ভেবে উপন্যাসের গোটা গোটা অসংখ্য বই লিখে ফেলবে! যার কাছে তার প্রেয়সীর প্রশংসার শেষ থাকবে না! যে কিনা শুধু তার প্রেয়সীকেই ভাববে!তাকে ভাবতে ভাবতে একসময় মরেও যাবে।”

—-” মরে যাবে?”

—-” নাআ.. না মানে মরবে না! বেঁচে থাকবে। অজস্র বছর বেঁচে থাকতে চাইবে তার প্রেয়সীর জন্য।”

উনি মুচকি হেসে উঠে এলেন। আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল ভেদ করে পেটের উপর হাত রাখতেই কেঁপে উঠলাম আমি। উনার থেকে ছাড়িয়ে আসতে নিলেই আরও শক্ত করে জড়িয়ে দাঁড়ালাম উনি! অতঃপর আমার কাঁধে উপর মুখ রেখে আস্তে করে বলতে লাগলেন,

—-” সবাই তার প্রেয়সীর সাথে অজস্র বছর বেঁচে থাকতে চায়। কিন্তু আমি চাই মরতে!নিষ্ঠুরতায় ছাপিয়ে যাওয়া এই পৃথিবীকে ছেড়েছুড়ে তোমায় নিয়ে এমন এক জায়গায় বাস করতে চাই যেখানে মানুষ একবার গেলে আর কখনও ফিরে আসে না। যেখানে জন্ম আছে তবে মৃত্যু নেই। সেখানে সুখ আছে কিন্তু দুঃখ নেই। আমি তোমায় সেখানে নিয়ে যেতে চাই প্রেয়সী। যাবে আমার সাথে?”

মানুষ টা বড্ড অদ্ভুত রকমের কথা বলছে। বুকের ভেতর কাঁপছে উানর কথায়। ভয় লাগছে! আবারও কি কিছু খারাপ ঘটতে চলেছে আমার জীবনে? আবারও কি কোনো প্রিয়জনকে হারাতে হবে?

পেছন থেকে আমার খোলা চুল গুলোকে পাশে সরিয়েই ঘাড়ে মুখ ডুবালেন রাহিয়ান। আমি কেঁপে উঠে তার থেকে দূরত্ব করতে নিলেই কোমর চেপে আরও কিছুটা লেপ্টে নিলেন নিজের সাথে। ভয়ানক অনুভূতিতে দম বন্ধ হয়ে এলো আমার। শরীরের প্রতিটি শিরায় উপশিরায় উনার ছোঁয়ায় কিলবিল করে উঠলো রক্ত। ভালো লাগায় চোখ জোড়া আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে গেলো আমার। উনি ঘাড় থেকে মুখ তুলে আমার চুল গুলো আবারও ছেড়ে দিলেন আমার পেছন দিকে। চুল গুলোর মাঝেই উনার কোমল ঠোঁটে চুমু খেয়ে গাঢ় নিঃশ্বাস ছাড়লেন। নিজের অনুভূতি গুলোকে আঁটকে নিয়েই মৃদুস্বরে বললেন,

—-” আম সো স্যাড নীলাদ্রিতা। প্লিজ ডোন্ট লিভ মি! আই লাভ ইউ সো মাচ।”

আমার সাড়া শরীর শিউরে উঠল তার কন্ঠে। কিছু বলতে নিলেই উনি আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। কাঁধ থেকে হাত জোড়া তুলে আমার দু’গালে আলতো করে রাখতেই আমি আরেকদফা কেঁপে উঠলাম। মনের ভেতরের ঢিপঢিপ আওয়াজ গুলো হয়তো উনিও শুনতে পাচ্ছেন। অনুভব করতে পারছেন। তাই আমাকে আর অস্বস্তি তে না ফেলে কপালের মাঝে ছোট্ট করে একটা চুমু খেয়ে জড়িয়ে নিলেন বুকে। উনার বুকে মাঝে মাথা রাখতেই কান খাড়া হয়ে গেলো আমার। উনার বুকের মাঝের ঢিপঢিপ শব্দ যে আমার অনুভূতিকেও হার মানাবে। কান পেতে এই শব্দের সাক্ষী হতে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করল। তাই আমিও দুহাতে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলাম তাকে। না চাইতেও মনটা ফাল পেড়ে আগ বাড়িয়ে বলে উঠলো,

—-” ভালোবাসি।”

উনি বুঝি প্রশান্তির হাসি হাসলেন। তৎক্ষনাৎ উনার হাতের বাঁধন টুকু আরেকটু শক্ত হলো।

#চলবে____________________