ফিরে আসা ২ পর্ব-০১

0
202

#ফিরে_আসা২

লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

“আমার বাচ্চা পেটে নিয়ে তুমি আরেক পুরুষের সাথে রাত কাটিয়ে এসেছো? এত সাহস তোমার?” অগ্নিকন্ঠে বলে উঠলো আরশাদ।

অরা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “তুমি ভুল বুঝছো আরশাদ। আমি কখনোই এমনটা করতে পারি না।”

অরার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে এসে আরশাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “নিজের চোখকেও অবিশ্বাস করবো তাহলে? আমি নিজের চোখে দেখেছি তোমার কুকর্ম!”

অরা ব্যাকুল কণ্ঠে বলল, “তুমি ভুল দেখেছো আরশাদ। আমি তো…”

আরশাদ অরার একেবারে কাছে এসে শক্ত করে তার বাহু চেপে ধরে বলল, “চুপ! আর একটা কথাও না। খুব ভালো করে চেনা আছে তোমার মতো মেয়েদের। নারী জাতটাই এমন। এদের যতই ভালোবাসা হোক না কেন, দিনশেষে এরা চরিত্রহীনই থেকে যাবে। সুযোগ পেলেই আরেক পুরুষের গায়ে ঢলে পড়তে এদের এক সেকেন্ডও সময় লাগে না। তুমিও তার ব্যতিক্রম নও।”

অরা চুপ করে আছে। কিছু একটা বলতে চাইছে, তবে আরশাদের নিক্ষেপ করা অগ্নিদৃষ্টি তাকে বাঁধা দিচ্ছে বারবার।

আরশাদ রাগে ফেটে পড়ে বলল, “এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে তুমি। আর কোনোদিন তোমার চেহারাও দেখতে চাই না আমি।”

আরশাদের এ কথায় অরা যেন আকাশ থেকে পড়লো। একরাশ অবিশ্বাস খেলে বেড়াচ্ছে তার চোখেমুখে। কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইছে আরশাদের বলা ওই শব্দগুলোকে।

অরা বিস্ময়জড়িত গলায় বলল, “এসব কী বলছো তুমি আরশাদ?”

আরশাদ হুংকার দিয়ে বলল, “Get out!”

তড়িৎ গতিতে চোখ মেলে তাকালো আরশাদ। চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে ওঠা দৃশ্যগুলো তাহলে স্বপ্ন ছিল? স্বপ্ন মানেই তো এলোমেলো কতগুলো দৃশ্য। বেশিরভাগ সময়ই স্বপ্নের কোনো না কোনো পর্যায়ে ঘুমের ঘোরেই আরশাদ টের পেয়ে যায়, চোখের সামনে যা ঘটছে তার সঙ্গে বাস্তবের কোনো যোগসূত্র নেই। তবে আজকের এই স্বপ্নটা যেন একেবারেই ব্যতিক্রম।

পুরোটা স্বপ্ন যেন জীবন্ত হয়ে ভেসে উঠছে চোখে সামনে। নিজের বলা প্রত্যেকটা কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে আরশাদ। চোখ ঘুরিয়ে পাশে তাকালো সে। তার গায়ের ওপরে একটা হাত তুলে দিয়ে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেছে অরা। মেয়েটার চোখেমুখে বিচিত্র এক শান্তির আভাস। কেবলমাত্র এই মুখটা দেখলেই দিনের সকল ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে। এই মেয়েটার ভালোবাসার নীড়ে একমাত্র আশ্রয় তার। অথচ তাকে নিয়েই এমন বাজে একটা স্বপ্ন কেন দেখলো আরশাদ?

আবারও ঘুমোতে চেষ্টা করলো সে। কিছুতেই ঘুম নেমে আসছে না দুচোখে। কেবল ওই স্বপ্নটাই অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে মস্তিষ্কে। ঘুম থেকে জেগে উঠলে না-কি মানুষ স্বপ্নের নব্বই শতাংশ ভুলে যায়। তবে আজ কেন আরশাদ কিছুতেই ভুলতে পারছে না ওই কুৎসিত স্বপ্ন?

একবার ঘুম ভেঙে গেলে সহজে আর ঘুম আসতে চায় না। আরশাদ গায়ের ওপর থেকে সাবধানে অরার হাতটা সরিয়ে উঠে বসলো। ছোট ছোট পা ফেলে এসে দাঁড়ালো ব্যালকনিতে। রাতের নিস্তব্ধ শহরটা এখান থেকে পরিষ্কার দেখা যায়। ল্যাম্প পোস্টের ক্ষীণ আলো এসে পড়েছে ব্যালকনিতে। দূর থেকে একটা কুকুরের ডাক ভেসে আসছে। প্রকৃতি আজ হঠাৎ এমন ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি করলো কেন?

ধীরস্থিরভাবে একটা সিগারেট ধরালো আরশাদ। মাথা থেকে কিছুতেই স্বপ্নটাকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। স্বপ্ন না-কি মানুষের অবচেতন মনের ভাবনাগুলোর প্রতিচ্ছবি। এমন তো নয় আরশাদ অরাকে প্রবলভাবে সন্দেহ করে। সন্দেহ তো দূরে থাক, অরাকে নিয়ে কোনপ্রকার নেতিবাচক চিন্তা তার মনকে স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারে না। তাহলে কেন?

‘কেন’র উত্তরটা অবশ্য আরশাদের জানা। নওশীনের দেওয়া ওই ক্ষতচিহ্নগুলো আজও ভুলতে পারেনি তার অবচেতন মন। নওশীন, আরশাদের প্রথম ভালোবাসা। যাকে মন থেকে ভালোবেসে জীবনের সর্বোচ্চ স্থানটা দিয়েছিল আরশাদ। নওশীন সেই স্বপ্নের মতো করেই আরশাদের বিশ্বাস চুরমার করে ভেঙে চলে যায় আরেক পুরুষের কাছে।

নওশীনের সঙ্গে ডিভোর্সের পর দীর্ঘ একটা সময় আরশাদের মনে এই বিশ্বাস স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিল যে, পৃথিবীর সব নারী বুঝি একই রকম। চরিত্রহীন, বিশ্বাসঘাতক। ভালোবাসার কোনো মূল্য তাদের কাছে নেই। এরপর তো অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। তার জীবনে আলো ছড়াতে এলো অরা। অরার উপস্থিতি আরশাদকে শেখালো, পৃথিবীর সব নারী একই রকম নয়। নারীর ভালোবাসা পৃথিবীর সুন্দরতম বস্তু।

নওশীনের দেওয়া সেই আঘাত থেকে আরশাদ সেরে উঠলেও হয়তো তার অবচেতন মনটা এখনো সেরে উঠতে পারেনি। মনে মনে এখনো তার ওই একটাই ভয়। ভালোবাসায় হেরে যাওয়ার কিংবা ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। সেকারণেই হয়তো এমন একটা স্বপ্নের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো আজ।

“তুমি এখানে কী করছো?”

পেছন ফিরে তাকালো আরশাদ। অরা ঘুমজড়ানো চোখে দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনির দরজা ঘেঁসে।

আরশাদ তড়িৎ গতিতে সিগারেটটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে বলল, “তুমি উঠে আসতে গেলে কেন অরা?”

অরা তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, “আগে আমি প্রশ্ন করেছি।”

আরশাদ ইতস্তত করে বলল, “ঘুম ভেঙে গেল তাই…”

অরা ব্যালকনিতে প্রবেশ করতে করতে বলল, “ঘুম ভেঙে গেলে বুঝি চুপি চুপি উঠে এসে সিগারেট ধরাতে হয়।”

ধরা পড়ে গিয়ে আরশাদ সামান্য হেসে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে, আর স্মোক করবো না। প্রমিজ।”

অরা অভিমানী স্বরে বলল, “এই প্রমিজ তুমি দিনে হাজারবার করো আর হাজারবার ভাঙো।”

আরশাদ কিছুই বলল না। নিজের মোহনীয় হাসিটা হেসে বুকে টেনে নিলো অরাকে। অরাও বাধ্য মেয়ের মতো আরশাদের বুকে মাথা রেখে তার শান্ত হৃদয়ের ধুকপুক শুনতে ব্যস্ত হয়ে গেল।

অরার চুলে হাত বুলিয়ে দিলো আরশাদ। প্রেগন্যান্সির শুরু থেকে মেয়েটা রাতে এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারছে না। প্রতিরাতেই কোনো না কোনো অসুস্থতা লেগেই থাকে। বহুদিন পর আর রাতে নির্বিঘ্নে ঘুমোতে পেরেছিল মেয়েটা। সেই ঘুমটাও ভেঙ্গে গেল তার কারণে। অরার বিচিত্র এক স্বভাব হলো ঘুমের মাঝে একটু পর বিছানায় হাত রেখে নিশ্চিত পাশে আরশাদ আছে কিনা। থাকলে ঘুমটা আর ভেঙে যায় না, অক্ষতই থাকে। আরশাদ পাশে থাকেলই চমকে উঠে পড়ে অরা। বলাই বাহুল্য, বিয়ের এই দুই বছরে অরা পুরোপুরি নির্ভর হয়ে পড়েছে তার প্রিয় মানুষটার ওপরে।

আরশাদ অনুতাপমাখা কণ্ঠে বলল, “তোমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলাম না?”

অরা আরশাদের বুকে মুখটা লুকিয়ে রেখেই বলল, “অসুবিধা নেই। আবার ঘুম পাড়িয়ে দাও।”

রাত সাড়ে তিনটা। ঘুম ভাঙার জন্যে একেবারেই উপযুক্ত সময় নয়। একটু পরেই আবারও জেগে উঠতে হবে আরশাদকে। আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তার পরবর্তী সিনেমা ‘ডাকনাম’ – এর শুটিং। সাধারণ মানুষেরা মনে করে সেলিব্রিটির জীবন মানেই শান্তির ছড়াছড়ি। যখন তখন শুটিং সেটে যাবে, দায়সারা ভাবে অভিনয় করবে। এতটুকুতেই একরাশ খ্যাতি এসে লুটিয়ে পড়বে তাদের পায়ের কাছে।

অন্যান্য সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে এমনটা হয় বটে। তবে আরশাদ সাধারণ কোনো সেলিব্রিটি নয়। কাজের প্রতি তার একাগ্রতা তাকে আজ বানিয়েছে সুপারস্টার আরশাদ হক। ইন্ডাস্ট্রিতে সাফল্যের শিখরে অবস্থান করা সত্বেও আজ পর্যন্ত শুটিং সেটে কোনোদিন দেরি করে পৌঁছায়নি সে। অভিনয় নিয়ে করেনি কোনো হেলাফেলা। সে কারণেই বোধ হয় সেরা অভিনেতার পুরস্কারটা প্রতিবছর তার নামেই লেখা হয়।

আরশাদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো অরা। একটা পা উঠিয়ে দিলো তার গায়ের ওপরে। ভাবতেও অবাক লাগে, যে আরশাদকে একটা সময়ে সে রীতিমত ভয় করে চলতো, আজ তার গায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে ঘুমোচ্ছে সে।

আরশাদ হঠাৎ অরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, “অরা? তুমি আমাকে ভালোবাসো?”

কেবল ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল অরা। আরশাদের এমন প্রশ্নে আবারও বাস্তবে ফিরে এলো।

হাই তুলতে তুলতে বলল, “এই প্রশ্নের উত্তর তোমার জানা।”

“আবার জানতে ইচ্ছা করছে। তোমার মুখে বারবার ওই কথাটা শুনতে ভালো লাগে।”

অরা হাসিমুখে বলল, “বাসি তো। তোমাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসি।”

কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে আরশাদ আবারও বলল, “কতটা ভালোবাসো?”

অরা হেসে উঠে বলল, “এসব কী ছেলেমানুষী শুরু করলে আরশাদ?”

আরশাদ ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বলল, “এটাই শেষ প্রশ্ন। উত্তরটা দিয়েই তুমি ঘুমিয়ে পড়বে। আর বিরক্ত করবো না।”

অরা খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, “ইউনিভার্স কতটা বড় তুমি জানো?”

“না।”

“আমরা কেউই জানি না। তবে এটা জানি, ইউনিভার্সটা বিশাল। প্রায় অসীমের কাছাকাছি। আমিও ঠিক সেভাবেই জানি তোমাকে প্রচুর ভালোবাসি। তবে সেই ভালোবাসার প্রাচুর্য কতটুকু আমিও নিজেও জানি না।”

আরশাদ মুগ্ধ গলায় বলল, “এত সুন্দর করে কথা বলতে শিখলে কোথা থেকে?”

“তোমার কাছ থেকে।”

আরশাদ প্রচ্ছন্ন একটা হাসি হেসে ঠোঁট ছোঁয়ালো অরার কপালে।

আরশাদ কৌতুহল নিয়ে বলল, “জিজ্ঞেস করলে না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি?”

“না।”

“কেন?”

“এসব বোকা বোকা প্রশ্ন শুধু তোমার মাথাতেই ঘোরে। আমি জানি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো।”

আরশাদকে জড়িয়ে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল অরা। সেই একই রাজ্যে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে আরশাদ নিজেও। ভীষণ রাগ হচ্ছে, অনবরত আরশাদ অমন একটা স্বপ্ন দেখার জন্যে নিজেকে নিজেই দোষারোপ করে যাচ্ছে। যদিও সে জানে মানুষ নিজের স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তবুও বারবার মনে হচ্ছে, “এমন একটা স্বপ্ন আমি কী করে দেখলাম?”

স্বপ্নের ব্যাপারটা আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলাই উত্তম। বাস্তবের সঙ্গে যার কোনপ্রকার যোগসূত্র নেই, তাকে নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কী আছে?

অ্যালার্মের শব্দ কানে বাজতেই ঘুম ভেঙে গেল অরার। আগে অ্যালার্ম বাজার সঙ্গে সঙ্গে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তো অরা। ঘুম থেকে উঠে বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার মতো মেয়ে সে নয়। তবে আজকাল সবকিছুই যেন কেমন বদলে বদলে যাচ্ছে। রাতে একগাদা ওষুধ খেতে হয় তাকে। ওষুধগুলোতে সম্ভবত ঘুমের প্রভাব থাকে। ঘুম ভাঙার পরেও বিছানায় পড়ে থাকতে ইচ্ছা করে। বিচিত্র এক আলস্য ঝেঁকে ধরে পুরো শরীরটাকে।

পাশ ফিরে তাকালো অরা, আরশাদ নেই। এটাই তো স্বাভাবিক। এখন সকাল আটটা, আরও দুঘন্টা আগে সে বেরিয়ে গেছে শুটিংয়ের উদ্দেশ্যে। মনের মাঝে নিমিষেই কালবৈশাখীর কালো মেঘ এসে জড়ো হলো। ছেলেটার মুখ দেখে দিনের শুরু করলেও, দিনটা যেন শুরু হয় না।

আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো অরা। মনের অজান্তেই তার চোখদুটো গিয়ে পড়লো বেডসাইড টেবিলে। আরশাদের অ্যাস্ট্রের সঙ্গে চাপা দিয়ে রাখা একটা হলুদ রঙের চিরকুট।
অ্যাস্ট্রে সরিয়ে চিরকুটটা হাতে নিলো অরা। ভাঁজ খুলতেই চোখে পড়লো মুক্তার মতো অক্ষরে লেখা, “Good Morning Sunshine. Have a beautiful day ahead.”

অরার ঠোঁটে ফুটে উঠলো চওড়া একটা হাসি। সে মানুষটার হাজার ব্যস্ততা। শুটিং, ডাবিং, মিটিং, ইন্টারভিউয়ের মাঝে যার দম ফেলার সময় নেই, তার ঠিকই মনে রইলো দিনের শুরুতে বউয়ের মুখে হাসি ফোটানোর কথা।

চিরকুটটা নিয়ে আলমারিতে তুলে রাখলো অরা। আরশাদ প্রায়ই এমন চিরকুট লেখে তার অরার উদ্দেশ্যে। চিরকুটগুলো জমানো অরার অন্যতম শখে পরিণত হয়েছে।

ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে অরা। হঠাৎ কী যেন মনে করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো নিজেকে। সবে মাত্র দুমাস চলছে। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই তার ভেতরে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে একটা প্রাণ। এই সময়টাতে না-কি মেয়েদের চোখেমুখে বিচিত্র এক উজ্জ্বলতা ফুটে ওঠে। কই! অরা তো দেখতে পায় না সেই উজ্জ্বলতা। নিজেকে ঠিক আগের মতোই মনে হয় নিজের কাছে।

নিজেকে দেখতে দেখতে অরা বোধ হয় সময়ের হিসাব ভুলেই গেল। ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। পাশের ঘরে আয়েশি ভঙ্গিতে ঘুমাচ্ছে কথা। বেডসাইড টেবিলে রাখা অ্যালার্ম ক্লক অনবরত বেজেই যাচ্ছে। প্রতিরাতে অরা এটাতে অ্যালার্ম সেট করে রাখে। যদিও সে খুব ভালো করে জানে, এ কর্ম বৃথা কর্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী
অ্যালার্ম ক্লকও এই মেয়ের ঘুম ভাঙাতে ব্যর্থ হবে।

অরা অ্যালার্ম বন্ধ করে কথার গায়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল, “এই কথা! ওঠ!”

কথার কোনো নড়াচড়া নেই। ঠিক আগের ভঙ্গিতেই ঘুমিয়ে রইলো মেয়েটা। প্রতি সকালে কথাকে ঘুম থেকে ওঠাতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয় অরাকে।

“কথা! ওঠ না সোনা। স্কুলে যাবি না?”

কথা ঘুমজড়ানো কণ্ঠে বলল, “আজকে না যাই?”

“আজ তো তোর ক্লাস টেস্ট আছে। আজকে যেতেই হবে সোনা। বাসায় ফিরে না হয় আবার ঘুমিয়ে পড়বি।”

দীর্ঘ যুদ্ধ শেষে কথার ঘুম ভাঙাতে সক্ষম হলো অরা। এরপর যত্ন নিয়ে তাকে ব্রাশ করিয়ে দিলো, চুল বেঁধে দিলো। স্কুলের জন্যে তৈরি করে দিলো, রুটিন মিলিয়ে স্কুলের ব্যাগ গুছিয়ে দিলো।

মাঝে মাঝে অরার মনে হয়, সে যদি কথার মা হতো তাহলে খুব ভালো হতো। কথা তো তার সন্তানই। গর্ভে যে আছে তাকে নিজের প্রথম সন্তান বলে মনে হয় না, সে তো অরার দ্বিতীয় সন্তান। রক্তের সম্পর্কই মুখ্য নয়, রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও মনের জোরে আপন করে নেওয়া যায় একটা মানুষকে। যেমন কথা আপন করে নিয়েছে অরাকে আর অরা কথাকে।

কথাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে অরা চলে সোজা চলে গেল অফিসে। এই অবস্থায় অফিস করা নিয়ে আরশাদের হাজার আপত্তি। প্রেগন্যান্সির দুমাসও পেরোয়নি, অথচ এখনই আরশাদ অরাকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে পাঠিয়ে দিতে চাইছে।

যদিও এই সত্যি আরশাদও স্বীকার করে যে, কে ফিল্মস অরাকে ছাড়া প্রাণহীন। অরার নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্ত ছাড়া কে ফিল্মস বলতে গেলে অচল। নিজের প্রোডাকশন হাউজের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আসনটা অরার জন্যে ছেড়ে দিয়ে কোনপ্রকার ভুল করেনি আরশাদ।

‘কে ফিল্মসের’ ব্যানারে ঠিক এই মূহুর্তে নির্মাণাধীন হয়েছে নয়টি সিনেমা। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সিনেমা। একটা সিনেমা আবার নির্মাণের একেক পর্যায়ে রয়েছে। কোনোটার শুটিং চলছে, কোনোটার ডাবিং। আবার কোনোটা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সেই সবগুলো সিনেমার সার্বিক তদারকি করা নিতান্ত সহজ ব্যাপার নয়। অরা সেই কাজটিই ধৈর্যের সঙ্গে করে আসছে।

দিনভর মিটিংয়ের মাঝে ডুবে থাকলেও সময়মতো কথার স্কুল ছুটি শেষে তাকে বাড়িতে দিয়ে আসতে ভুললো না অরা। কথার জন্যে নতুন একজন গভর্নেন্স রাখা হয়েছে। মেয়েটার নাম পায়েল। অল্প কিছুতেই কথার সঙ্গে মেয়েটা বন্ধুর মতো মিশে গেছে। অরা যখন বাড়িতে থাকে না, পায়েলই তখন তার খেয়াল রাখে।

অফিসে ফিরে আবারও পরপর কতগুলো মিটিং সেরে নিলো অরা। আজও সময়মতো লাঞ্চ করতে ব্যর্থ হলো সে। গত কয়েকদিন ধরেই এই কান্ড ঘটাচ্ছে অরা। দীর্ঘ মিটিংয়ের প্রভাবে সময়মতো লাঞ্চ করতে পারছে না, ওষুধগুলো খেতেও হচ্ছে দেরি। ভাগ্যিস ব্যাপারটা আরশাদ জানে না। জানলে এতক্ষণে খবর করে দিতো তার।

আজকের মিটিংগুলো শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। মাঝেমধ্যে অরার মনে বিচিত্র সব ইচ্ছারা খেলে বেড়ায়। এই যেমন এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে শুটিং সেটে গিয়ে আরশাদকে চমকে দিতে। দীর্ঘ ক্লান্তিময় দিনশেষে অরাকে দেখলেই প্রচ্ছন্ন এক হাসি ফুটে ওঠে আরশাদের ঠোঁটজুড়ে। সেই হাসিটা দেখার জন্যে যে কেউ পারে হাজার বছর তপস্যা করতে। আরশাদের সেই হাসি দেখার লোভেই অরা রওনা করলো উত্তরার শুটিং হাউজের উদ্দেশ্যে।

হাসি দেখার লোভ না থাকলেও অরাকে যেতেই হতো শুটিং সেটে। কারণ আরশাদের স্ত্রী হওয়ার সাথে সাথে সে দেশের সবথেকে বড় প্রোডাকশন হাউজ ‘কে ফিল্মসের’ সিইও। কাজের সুত্রে সকল সিনেমার শুটিং সেটেই তাকে যেতে হয়। এই যেমন আজ যেতে হচ্ছে।

অরা পা রাখার পর থেকেই শুটিং সেটে হইচই পড়ে গেল। সিইও ম্যাডাম এসেছেন বলে কথা। পরিচালক নিজে ছুটে আসলেন অরার সঙ্গে দেখা করতে। প্রোডাকশন ম্যানেজার ব্যস্ত হয়ে গেল অরাকে আপ্যায়ন করতে। হাজার মানুষের হাজার প্রকার পাত্তা মাঝেমধ্যে অসহনীয় হয়ে ওঠে। এত মানুষের পাত্তা পেতে তো সে এখানে আসেনি। যার কাছে পাত্তা চাইছে, তার কাছ থেকে পেলেই হলো।

সকলকে একপ্রকার পাশ কাটিয়ে অরা পা বাড়ালো আরশাদের গ্রিন রুমের দিকে। একটু পরেই শট শুরু হবে। এই সময়ে তার গ্রিন রুমে কারও থাকার কথা নয়। শট শুরুর আগ দিয়ে আরশাদ একা নিজের গ্রিন রুমে বসে রিহার্সেল করে।

অরা দরজায় একবার টোকা দিতেই ঘরের ভেতর থেকে ভেসে এলো আরশাদের বিরক্তিভরা কণ্ঠস্বর, “কে?”

অরা কিছুই বলল না। মুচকি হেসে আবারও টোকা দিলো। দুয়েকবার টোকা দিতেই আরশাদ বিরক্তির চূড়ায় পৌঁছে দরজা খুলে দিলো। তবে দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে তার সকল বিরক্তি কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। ঠোঁটে ফুটে উঠলো চিরচেনা সেই মোহনীয় হাসি। এই সময়ে অরাকে দেখবে বলে একেবারেই আশা করেনি সে। আরশাদের মনের মাঝে যেন বিচিত্র এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।

অরা কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আরশাদ তার হাত ধরে টেনে তাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে এলো। দরজাটা ফের বন্ধ করে দিতে তার এক সেকেন্ডও সময় লাগলো না। অরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরশাদ তাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো তার গলায়।

আরশাদের এমন আকস্মিক কান্ডে লজ্জায় জমে গিয়ে বলল, “এই! কী শুরু করলে তুমি? বলা নেই কওয়া নেই, কথায় কথায় শুধু অসভ্যতা!”

আরশাদ অরার গলায় মুখ ডুবিয়ে রেখেই বলল, “তুমি কি অন্তর্যামী?”

“কী?”

আরশাদ এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “মনের কথা বুঝতে পারো?”

“না তো।”

আরশাদ ঘোরলাগা কণ্ঠে বলল, “তাহলে বুঝলে কীভাবে, এই মুহূর্তে আমার ঠিক তোমাকেই দেখতে ইচ্ছা করছিল।”

অরা মুচকি হেসে বলল, “তোমার তো সারাদিন ওই এক ইচ্ছাই করে।”

অরাকে সাবধানে নিয়ে সোফায় বসলো আরশাদ। নিজেও বসলো তার পাশে। দুজনের মাঝে এক বিন্দুও দূরত্ব নেই। একেবারে অরার গা ঘেঁষে বসেছে আরশাদ। অরার একটা হাত নিজের হাতে বন্দী করে যত্ন নিয়ে তাতে ঠোঁটের স্পর্শ দিলো আরশাদ। অরার সারা শরীরে তরঙ্গের ন্যায় কী যেন খেলে গেল। কী অদ্ভুত ব্যাপার! বিয়ের এতগুলো দিন পেরিয়ে গেছে, অথচ অনুভূতিগুলো আজও প্রথমদিনের মতোই রঙিন।

আরশাদ উদ্বিগ্ন গলায় বলল, “একবার আমাকে জানিয়ে আসলে পারতে অরা।”

অরা অকপটে বলল, “জানালে সারপ্রাইজ দিতাম কী করে? তাছাড়া আগেভাগে জানলে তুমি শুধু শুধু টেনশন করতে, আর কাজ ফেলে রেখে একটু পর পর আমাকে ফোন করতে।”

আরশাদ তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, “শুধু শুধু না, তোমাকে নিয়ে টেনশন করার যথেষ্ট কারণ আছে। যেভাবে ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছো, কে বলবে তোমার মধ্যে আরেকটা মানুষ লুকিয়ে আছে।”

কথাটা বলতে বলতে আরশাদ হাত রাখলো অরার পেটের ওপরে।

অরা আরশাদের হাতের ওপর নিজের হাত রেখে বলল, “আরেকটা মানুষ লুকিয়ে থাকলে ছোটাছুটি করা যায় না না-কি?”

আরশাদ ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল, “তোমাকে নিয়ে সত্যিই আর পারি না। আমার একটা কথাও তুমি শোনো না। কতবার বলেছি এই সময়টা একটু সাবধানে থাকতে, প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হতে। কিন্তু না! ম্যাডাম আমার কথা শুনবেন কেন?”

“আমার কথা তুমি শোনো?”

“তোমার কোন কথা শুনলাম না?”

অরা থমথমে গলায় বলল, “কয় হাজারবার বলছি সিগারেট খাবে না? কাল রাতেও তো প্রমিজ করলে আর না-কি কোনোদিন সিগারেট খাবে না। কীসের কী? সারা ঘরে সিগারেটের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে।”

আরশাদ ইতস্তত করে বলল, “তুমি তো জানো এই জিনিসটা ছাড়া আমি থাকতে পারি না।”

অরা গাল ফুলিয়ে বলল, “বাবু আসছে বলে আমার জন্যে কত রেস্ট্রিকশন। রাত জাগতে পারবো না, ড্রাইভ করতে পারবো না, বেশিক্ষণ হাঁটাচলা করতে পারবো না। মালদ্বীপে বেড়াতেও নিয়ে গেলে না বাবু আসছে বলে। অথচ বাবুর বাবার জন্যে কোনো রেস্ট্রিকশন নেই। এটা কেমন কথা?”

অরার এমন ছেলেমানুষী ভঙ্গিতে করা অভিযোগে আরশাদ হেসে ফেলল। এরপর জ্যাকেটের পকেট থেকে সিগারেট কেস আর লাইটার বের করে অরার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। এগুলো এখন থেকে তোমার কাছে থাকবে। সিগারেট একেবারেই ছাড়তে তো আর পারবো না। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হলে তোমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে খাবো।”

তাদের এই কথোপকথন খুব একটা দীর্ঘ হলো না। মিনিট কয়েকের মাঝেই আরশাদের ডাক পড়লো শটের জন্যে। এদিকে অরাও প্রোডাকশন ম্যানেজারের সঙ্গে বাজেট নিয়ে বসলো। একটা সিনেমার শুটিংয়ে হাজারটা খরচ আছে। প্রতিদিনের জন্যে একটা নির্দিষ্ট বাজেট বেঁধে দেওয়া হয়। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব হলো, সেই বেঁধে দেওয়া বাজেটের মধ্যেই খরচটাকে সীমাবদ্ধ রাখা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রোডাকশন ম্যানেজাররা বাজেটে অতিরিক্ত খরচ দেখায়। অতিরিক্ত খরচ না হলেও দেখায়, কারণ অতিরিক্ত টাকাটা চলে যায় তার পকেটে।

অরা আজ মূলত এসেছে আজকের খরচ বাজেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে কিনা, পর্যবেক্ষণ করতে। আর প্রোডাকশন ম্যানেজারকে হুমকি দিতে। ভয়ঙ্কর কোনো হুমকি নয়। শুধুমাত্র তাকে জানিয়ে দেওয়া, বাজেটের মধ্যে খরচ সীমাবদ্ধ না রাখলে অরা চেকে সই করবে না। শুটিংয়ের প্রথম দিনে সকলকেই এমন হুমকি-ধামকির ওপর রাখতে হয়।

শুটিং শেষ হতে হতে লেগে গেল আরও ঘন্টাখানেক। আজ সারাদিনে বোধ হয় একটু বেশিই ধকল নিয়ে ফেলেছে অরা। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসছে। মাথা ভনভন করছে। চারপাশের সবকিছু যেন প্রচন্ড এক ঘূর্ণির ন্যায় ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রেগন্যান্সির প্রথম কয়েক মাসে এমনটা না-কি স্বাভাবিক ব্যাপার।

তবুও অরার এমন অসুস্থতায় ব্যস্ততার সীমা থাকে না আরশাদের মাঝে। বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে পুরোটা সময় আরশাদ বুকে আগলে রাখলো অরাকে। অনবরত মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

আরশাদ সেই ভোর বেলা উঠেছে, অথচ দিনশেষে তার মাঝে ক্লান্তির লেশমাত্র দেখা মিলল না। কথা আর অরা দুজনকেই সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে। তবে কথার ক্ষেত্রে যতটা কষ্ট হয়, অরার ক্ষেত্রে হয় তার কয়েকগুণ বেশি। অতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে বিনা বাক্য ব্যয়ে খেয়ে নিলো অথচ খাওয়ার প্রতি অরার যত অনীহা! যদিও বেচারির দোষ নেই। এই সময়টাই এমন। খিদে পায়, অথচ কিছু খেতে ইচ্ছা করে না।

তবুও আরশাদের জোরাজুরিতে শেষমেশ বাধ্য হয়ে খেয়ে নিলো অরা। কথাকে ঘুম পাড়িয়ে নিজেদের ঘরে ফিরে এলো আরশাদ। অরার শরীর এখন আগের থেকে কিছুটা ভালো লাগছে। তবুও বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে পড়ে আছে সে।

অরার পাশে বসতে বসতে আরশাদ চিন্তিত স্বরে বলল, “নাহ্! এবার তোমার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”

অরা বিভ্রান্ত স্বরে বলল, “ব্যবস্থা?”

“হুঁ। যাতে তুমি অযথা ছোটাছুটি করে বেড়াতে না পারো।”

অরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আরশাদ, আমি না প্রেগন্যান্ট। অসুস্থ নই। অসুস্থ মানুষেরা বাড়িতে হাত গুটিয়ে বসে থাকে।”

আরশাদ তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, “আর প্রেগন্যান্সির কারণে যে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছো?”

অরা চুপ করে রইলো।

অরার গা ব্ল্যাঙ্কেটে ঢেকে দিতে দিতে আরশাদ বলল, “এত বড় বড় কথা আমাকে বলে লাভ নেই। ডক্টর কী বলল মনে নেই? প্রথম তিনটা মাস একটু সাবধানে থাকতে হবে।”

এবারও চুপ করে রইলো অরা। তার চোখেমুখে কেবলই মুগ্ধতার বিচরণ। একটা মানুষ এতটা নিখুঁত হয় কী করে? সুপারস্টার আরশাদ হক সে। হাজার হাজার মানুষ ভালোবাসায় মোড়া তার জীবনটা। চাইলেই তো পারে সব দায়িত্বগুলো অবহেলা করে কেবল নিজের চাকচিক্যময় জীবনটা নিয়ে মেতে থাকতে। কিন্তু না! চাকচিক্যময় জীবনের আড়ালে যেন লুকিয়ে আছে অত্যন্ত সাধারণ একটি জীবন। যে জীবন কেবল ভালোবাসার মানুষগুলোকে কেন্দ্র করে ঘোরে।

(চলবে)

ফিরে আসা সিজন-০১ গল্পটি পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন।