ফুল শর্য্যায় ছ্যাকা পর্ব-১৪

0
1468

গল্পঃ #ফুল_শর্য্যায়_ছ্যাকা
লেখকঃ #রাইসার_আব্বু
#পর্ব_১৪
— এই কথা কী হলো কথা বলো, চোখ বন্ধ করে আছো কেনো? চোখ খুলো প্লিজ।এই দেখো, তোমাকে বুকে নিয়েছি আর কখনো ছেড়ে যাবোনা। প্লিজ কথা বলো। তুমি না আমার জীবন, কথা বলো। আর কষ্ট দিবোনা, এই কান ধরছি, আর কখনো তোমায় কষ্ট দিবোনা। তবু একটি বার তাকাও আমার দিকে।

— মামা, মামা এমবুলেন্স ডাকেন প্লিজ।

— এদিকে এমবুলেন্স করে কথাকে নিয়ে যাচ্ছি। বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে চোখের পানিগুলো কথার মুখের ওপর টপটপ করে পড়ছে।

—কথাকে নিয়েই, I c u এডমিন করলো। বাহিরে বসে আছি। শৈশবের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠছে।ভেসে ওঠছে স্কুল ফাঁকি দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে কদম ফুল পারা। ছোট বেলায় বউ জামায় খেলা। সব কিছু যেনো স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে।। অজানা এক ভয় মনের মাঝে কাজ করছে।

— “বাবা এভাবে কান্না করলে কি কথা ভালো হবে। তোমাকে না শক্ত হতে হবে। তুমিই ভেঙ্গে পড়ছো! (মামা)

— মামা কী করবো বলেন? কথাকে ছাড়া যে কিছু ভাবতে পারিনা।

— বাবা আল্লাহকে ডাকো। আর এভাবে বাচ্চা ছেলের মতো কান্না করোনা। ( মামা)

— মিঃ রাজ! রোগীর আপনি কি লাগেন?( ডাক্তার)

– কি বলবো ভাবতে পারছিনা।কথা তো আমার কাছে ডির্ভোস চেয়েছিল। আমি তো কথাকে ডির্ভোস ও দিয়েছিলাম। নাহ! কথা তো পরে ডির্ভোস পেপার ছিঁড়ে ফেলেছে।

— এইযে মিঃ রাজ, কোথায় হারিয়ে গেলেন? পেশেন্ট আপনার কী লাগে?

— যে I C U শুয়ে আছে সে হচ্ছে মিমেস রাজ। আমার স্ত্রী।

— শুনেন তাহলে আপনার স্ত্রীর অবস্হা খুবই সংকোচ জনক। কিছু টেস্টের রির্পোট এসেছে। বাকিগুলো আসলে বলতে পারবো সে বাঁচবে কি মরবে!

— প্লিজ ডাক্তার এমন কথা বলবেন না! তোকে ছাড়া যে আমি বাঁচবোনা।

— রাজ, পেসেন্ট কে বাঁচানোই আমাদের প্রথম কর্তব্য ।রাজ কি করবো বলেন আপনার স্ত্রী ব্রেন স্টক করেছে। সম্ভবত ঠিকমতো খায়নি, ঘুমায়নি। তার পাশাপাশি তীব্র ডিপপেশন কাজ করেছে।

— ডাক্তার যে ভাবেই হোক কথার যেনো কিছু হয়।তাহলে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা।

— রাজ আপনাকে একটা কথা বলবো?

— হুম, স্যার বলেন।

— মিঃরাজ যদিও পারিবারিক বিষয়ে কথা না বলাই উচিত তবে পেশেন্টের সবদিক বিবেচনা করে বলতেই হয়। আপনি কি, আপনার স্ত্রীকে মানুষিক টর্চার করেন? মানুষিক টর্চার এর জন্যই ব্রেন ষ্টক হয়।

—–হুম ডাক্তার আমার কলিজার টুকরাটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, অনেক কাদিয়েছি । প্লিজ যেভাবেই হোক ওকে বাঁচান। নইলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।।

— রাজ আল্লাহকে ডাকেন। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো।( ডাক্তার)

— ডাক্তার চলে যাওয়ার পর ক্রিং ক্রিং করে ফোনটা বাজছে।।

— অনেকটা সংশয় নিয়ে ফোনটা ধরলাম।

— হ্যালো” রাজ” তুমি কোথায়?

– জি! ম্যাডাম , আমি হসপিটালে আছি।

— রাজ তুমি আমার ডেস্কে আসো! (সাথী)

— হুম! আসছি!!

— আসতে পারি ম্যাডাম?

— হুম, রাজ আসো!

— বসো এখানে। আর আমি আবারো বলছি আমাকে তুমি করে বলবা।

— আচ্ছা!! ঠিকাচ্ছে।

— রাজ ” রাইসার অপারেশনের সব কিছু রেডি করা হয়ে গেছে! চার ঘন্টা পর অপারেশন।

— আচ্ছা, আপনি সব কিছু রেডি করেন।

— আবারো! আপনি।

—- আচ্ছা! তুমি অপারেশনের সবকিছু রেডি করো।

— রাজ, তোমার এখানে একটা সাইন লাগবে।

— আচ্ছা! দাও করে দিচ্ছি।

— রাজ সাইন করে দিলে একটাবার তো পড়েও নিলেনা। জানো রাজ কাগজটাতে লেখা আছে তুমি সৎ জ্ঞানে কিডনী দিতে ইচ্ছে অপারেশনে তোমার মৃত্যু হলেও কেউ দায়ীনা।

-মুচকি হেঁসে বললাম কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়।

— রাজ তোমাকে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।

— ম্যাডাম ” রাইসার সেন্স ফিরেছে?।(সিস্টার)

— আচ্ছা তুমি যাও। রাজ তুমি আমার সাথে আসো।

— রাইসার কেবিনে গেতেই মনটা কেমন করে ওঠলো, অনেক শুকিয়ে গেছে মেয়েটা।

— বাবাই, ওই বাবাই মম কোথায়। আর তুমি পচা আমাকে কেনো বাসায় নিয়ে যাওনা। আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসে মনে হয়, মরে!!

— মামনি, মা আমার মরার কথা মুখে আনবেনা!

— বাবাই, ওই বাবাই আমি মরে গেলে মমকে কষ্ট দিয়োনা। মম তোমায় অনেক ভালবাসে। জানো বাবাই তুমি সেদিন চলে গেলে মম আমাকে বুকে নিয়ে অনেক কান্না করেছে। তোমার ছবি বুকে নিয়ে মম কান্না করে। বাবাই আমি মরে গেলে একদম ঝগড়া করবেনা, মমকে এওো এওো ভালোবাসবে। বাবাই, তুমি কাদঁছো কেনো। তুমি কাঁদলে আমারো যে কান্না আসে। একটি হাসো বাবাই, হাসোনা। বাবাই, আমার না তোমাকে আর মমকে ছেড়ে কোথাও যেতে মন চায়না। আমি বাঁচতে চায় বাবা, বাবা আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে, আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে যে বাবাই। বাবাই কপালে একটা পাপ্পি দিবা বুকে নিয়ে।

— হুম মহারানী পঁচা কথা বলেনা, তোমার কিছুই হবেনা এই বলে ছোট রাজকন্যাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। চোখের পানি বাঁধা মানছেনা। কপালে একটা পাপ্পি দিতেই, বাবাই আবারো তুমি কাঁদছে, এই দেখো আমি ভালো হয়ে গেছি। এবারতো হাসো তো একটু। এই বলে রাইসা আবার সেন্সলেন্স হয়ে যায় ।

— ডাক্তার, ডাক্তার অামার রাইসা কথা বলছেনা।

— ম্যাডাম, আপনি কানতাছেন কেনো? (সিস্টার)

— নাহ!এমনি, অপারেশন রেডি করো, হ্যারি অাপ! (সাথী)

— চোখের সামনে মেয়েটাকে বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অপারেশন বেডে মনে হচ্ছে কলিজাটা বের হয়ে যাচ্ছে।

— রাজ শক্ত হও বলে সাথী বের হয়ে গেলো।

— কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি,। এদিকে রাইসার কেবিন থেকে বের হয়ে , অপরিচিতার কেবিনে গেলাম।

— আমি যেতেই মিটিমিটি করে তাকালো,।

— কেমন আছো তুমি?

— অপরিচিতা ফ্যাল – ফ্যাল করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলতে চাচ্ছে মনে হচ্ছে।

–অপরিচিতা, তোমার রাইসার আর অপারেশন দোয়া করো ওর জন্য। অপারেশন যেন সাকসেস ফুল হয়।

— আমার কথা গুলো শুনে শুধু অপরিচিতার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

— নিজের অজান্তেই চোখের পানি মুছে দিতে গেলাম। অপরিচিতা আমার হাতগুলো তার মুখে চেপে ধরলো। বিড়বিড় করে কি যেন বলছে, আর চোখের পানি ফেলছে। হঠাৎ মনে পড়লো ” রাইসার কথা গুলো” বাবাই আমি চলে গেলে মমের সাথে ঝগড়া করবেনা। জানো বাবাই মম তোমাকে অনেক ভালোবাসে,তোমার জন্য মম কান্না করে বাবাই! মম তোমার ছবি বুকে নিয়ে কাঁদে। বাবাই মমকে কখনো কষ্ট দিয়ো না”। এসব কানে এসে বারি খাচ্ছে। কি করবো আল্লাহ। একদিকে আমার স্ত্রীর মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়ছে। অন্যদিকে মৃত্যুে পথযাএী এক ছোট বাচ্চার আর্তনাদ। কি করবো মাথা কাজ করছে না, কথা বাঁচবে তো। সব কিছু কেমন যানি মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

—-পাখি আজ রিসানের কাপড়- চোপড় গুছাতে গিয়ে আলমারিতে একটা ডাইয়ি দেখতে পায়।

— কারো পারসোনাল ডাইরি পড়া কি ঠিক হবে?

— এসব ভাবতে ভাবতে! ডাইরির প্রথম পাতা উল্টাতেই দেখি, পাখির ছবি।

– পাখি অবাক হ!! আজ থেকে ৭ বছর আগে রিসান, স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে তুলে ছিল। এসব ভাবতে ভাবতেই,

ডাইরির দ্বিতীয় পাতা উল্টাতেই পাখি লেখাগুলো দেখে অবাক হয়!

— প্রিয়তমেষু, আজ বৈশাখের প্রথম দিন। বৈশাখ যেমন নতুন বছরের সূচনা করে তেমনি, আজ তোমার সাথে বন্ধুত্ব করে নিজের জীবনের আরেকটি অধ্যায়ের শুভ সূচনা করলাম। পাখির হঠাৎ, মনে পড়ে যায় বৈশাখের প্রথম দিনে সে নীল শাড়ি পড়ে স্কুলে যায়, । আর সেইদিনই রিসানের সাথে পরিচয় তা থেকে বন্ধুত্ব।

— তার পরের পাতা বের হতেই, কথা মুগ্ধ নয়নে লেখা গুলো পড়ছে,

— জানো, পাখি আমি তোমাকে হয়তো ভালবেসে ফেলেছি, তোমাকে একদিন না দেখলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনা। মনটা যেন কেমন কেমন করে। তোমার চোখে নিজের পৃথিবীটা দেখেছি। জেনেছি নিজেকে তোমারি আবেশে,
কতযে লিখেছি কবিতা আমিযে সারাটা জীবন ভর কখনো বুঝিনি আমার মাঝেই ঘুমিয়ে রয়েছে পর। কখনো লিখিনি তেমন কবিতা বুঝিনি তাহার রূপ আমার ভিতরে লুকিয়ে সে’জন আমাকেই বলে চুপ! যেভাবে বলিব সেভাবে চলিবে সারাটা দুনিয়া থাক, ও’দিকে তোমার সারাটা জীবন রসাতলে যায় যাক। যদিও তোমাকে হাসায় কাঁদায় এমন রসিক জন! আত্মার সাথেই জরিয়ে রয়েছে, নামটি তাহার মন। শুননা কখনো তাহার আদেশ যদিবা মানুষ হও তোমার কাছে যে বিবেক রয়েছে তাহার দুয়ারে যাও।

— জানো পাখি যেদিন, তুমি আমাকে না বলে চলে যাও তখন সেদিন আমার স্বপ্নগুলো সব এলোমেলে হয়ে যা।সর্বপ্রথম সেদিন কান্না করেছিলাম। জানো প্রতিটা মোনাজাতে তোমাকে চাইতাম।খুব স্বপ্ন দেখতাম তোমাকে নিয়ে। যে আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হবে। তার পর একদিন তোমার সাথে বাসে দেখা, সেদিন মনে হয়েছিল সারা পৃথিবীর সব সুখ যেনো আমার চোখের সামনে। কিন্তু যখনি তোমাকে আমার ভালবাসার কথা বলতে যাবো ঠিক তখনি শুনি তুমি রাজকে ভালোবাসো। নিজের ভালবাসাকে সেদিন বুকের মাঝে চাপা দিয়ে বলেছিলাম তোমায় , সত্যি তোমার পছন্দ আছে। সেদিনের পর থেকে একটা রাতও ঘুমাতে পারিনি। ভেবেছি আর জীবনে কাউকে ভালোবাসবো না তোমার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো বুকে নিয়েই বাকি জীবনটা পার করে দিবো, । বড্ড বেশি ভালবাসি যে তোমায়।

— পাখি রিসানের ডাইরিটা পড়তে পড়তে, একসময় চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে যায়। ” পাখি ভাবতে লাগলো, আমি তো রাজকে ভালবাসি। কিন্তু সবার ভালোবাসা তো পূর্ণতা পায়না আমি না হয় রিসানের মাঝেই রাজকে খুজে নিবো। রাজের রক্ত যে রিসানের শরীলেও বইছে।

— ডাইরিটা রেখে পাখি শাওয়ার নিতে যায়!

— এদিকে রিসান ঘুম থেকে উঠে বিকেলে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কা দিতেই!

— অ্যা! অ্যা! করে পাখি চিক্কার দিলো।

— রিসান! তার দু হাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেললো..

— পাখি এখনো অ্যা অ্যা করছে।

— রিসান কি হলো দেখতো!? (মা)

— মা দেখা যাবেনা!

– রিসান দেখা যাবোনা মানে? আচ্ছা আমি যাচ্ছি। ( রিসানের মা)

— মা তোমার আসতে হবে না আমি দেখছি।

– পাখি এ দিকে দরজাটা লাগিয়ে! রিসান কিছু দেখোনি তো?

— কেমনে দেখবো! চোখ তো বন্ধ হাত দিয়ে।

— আচ্ছা চোখ খুলো! কিছু দেখছো!

— হুম! তোমার!!!!?? টাওয়াল পেচানো!

— কিহ্ তোকে সত্যি ভালো মনে করেছিলাম। বিয়ের আগে সব দেখে নিলি। আল্লাহ আমার বিয়ে হবেনা, আমি কি করবো, এই বলে পাখি রিসানকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।

— রিসান মনে মনে ভাবছে! নিজেই দেখতে বলে আবার নিজেই লুচু বলে। মেয়েদের মনে যে কি আছে! যা হবার হয়েছে, ফ্রিতে সিনেমা দেখা হয়েছে!

— পাখি শাওয়ার নিয়ে নীল শাড়ি পড়ে বের হচ্ছে! অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ পাখিকে অনেক সুইট, আর মায়াবী লাগছে।

— ওই লুচু কি দেখো ওমন করে?

— পরী দেখি পরী!

“– ওহ আচ্ছা দেখো তাহলে!

— কেমনে দেখবো! ?আগের মতো টাওয়াল পড়ে আসো!

— জাহ! বদমাইশ আমার বুঝি লজ্জা করেনা।

—- এদিকে রাত ১০ টা বাজতে আর ১.৩০ মিনিট আছে। আমি এশার নামায পড়ে, দুই রাকাত নফল নামায পড়ে আল্লাহর কাছে দুটি হাত উঠিয়ে বলতে লাগলাম ” হে পরম দয়ালু রাহমানির রাহিম , আজ একটা ফুলের মতো পবিএ শিশুর অপারেশন। আল্লাহ অপারেশন যেনো সাকসেন্স হয়। তার সাথে আমার কলিজার টুকরা ” কথা যেনো সুস্হ হয়ে যায়। আল্লাহ জানিনা বাঁচবো কি মরবো। হয়তো আজকের পর কখনো পৃথিবীর আলো দেখা হবেনা! তুমি আমার স্ত্রী টাকে তোমার রহমতের নিচে জায়গা দিয়ো। এতিম তো ছোটবেলা থেকে নিজের জন্য কি চাইবো বলো! আমার জন্য শুধু তোমাকে চাইলাম। অপরিচিতা যেনো রাইসাকে নিয়ে বাঁচতে পারে। যদি আমাকে পছন্দ হয় তোমার করে নিয়ে কোন আপওি নেই। এতিমের একটায় অনুরোধ আমার জীবনের বদলে তোমার কাছে তিনটি মানুষের মুখে হাঁসি চায়। আমিন।

— ঘড়িতে তাঁকিয়ে দেখি রাত ৯ টা, চোখ মুছে কথার কেবিনে গলাম। কথার দিকে তাকাতে বুক ফেঁটে কান্না আসছে। জানিনা আজকের পর হয়তো এই চাঁদ মুখটা আর দেখা হবে। শুনতে পারবো না! আমাকে তোমার বুকে একটু জায়গা দাও! চোখ দুটি দিয়ে অবিরাম বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। মনের মাঝখান টা অজানা ঝড়ে তুলপাল হয়ে যাচ্ছে। কথার মাথার কাছে বসে মাথার হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

— মনের অজান্তেই বলে ফেললাম! যদি আর ফিরে না আসি ক্ষমা করে দিয়ে এতিমটাকে! খুব ইচ্ছে করছে। কথাকে জড়িয়ে ধরি বলি! কোথাও যাবোনা তোমায় ছেড়ে। সারাজীবন বুকে আগলে রাখবো। নিজের অজান্তেই কথার কপালে আলতো করে ভালবাসার স্পর্শ একে দিলাম।

— আপনি আসেন আপনার অপারেশন শুরু হবে। (সিস্টার)

— আচ্ছা চলুন এই বলে ICU থেকে বের হতেই দেখি কে যেনো হাতের আঙ্গুলটা ধরে রেখেছে।

— পিছন দিকে তাকাতেই দেখি কথা, হাতের কানি আঙ্গুল টা ধরে রেখেছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। মাক্সটা খুলতে চাচ্ছে।
হাতটা ছাড়িয়ে! একটু জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুপু দিয়ে বললাম আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবোনা। আমি আবার আসবো জীবন। কথার চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বের হতেই দেখি রিসান আর পাখি দরজায় দাঁড়ানো।

— দোস্ত কেমন আছিস?( আমি)

— তোর মতো যার বন্ধু আছে সে ভালো না থেকে কী আর পারে।

— এই পাখি তুমি কাদছো কেনো?

— সেটা আপনার না জানলেও হবে।

— ও আচ্ছা!

— আসছিলাম আমি আমার আর রিসানের বিয়ের দাওয়াত দিতে। কিন্তু এসে যাহ্ শুনলাম নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম নাহ্।

— হা হা হা! কি এমন শুনলে যে, যার জন্য কান্না করা লাগে!

— রাজ! প্লিজ তুমি কিডনী ডোনেট করো নাহ্। ডাক্তার আপুর কাছে সব শুনেছি।। তোমার ফিরে আসার চান্স ৫০ পারসেন্ট। প্লিজ রাজ ভালবাসা নয় বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলছি! জেনে শুনে এমনটা করোনা। ( পাখি)

—- জানো পাখি? জন্মমের পর একটু বড় হতেই মাকে হারিয়েছি! যাকে নিজের চেয়ে বেশি ভালবাসছিলাম তার কাছ থেকেও অবহেলাই পেয়েছি। জানো বাসর রাতে কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীর কাছে শুনে তার স্ত্রীর মনের আকাশে অনজনের বসবাস কতটা কষ্ট পেতে পারে। আমি আমার ফুলশর্য্যার রাতে মেঝেতে শুয়ে শুয়ে স্মৃতি নামক ডাইয়িটা বুকে নিয়ে কেদেছি। জীবনে কাউকে কোন কিছু দিতে পারিনি,কেমনে দিবো বলো আমি নিজেই তো অন্যের কাধের বোঝা ছিলাম। এতিমরা সমাজের একটা বুঝা। তুমি না কলেজে থিকতে সবসময় জ্বালাতে ভালবাসি বলে, আসলে কী জানো কাউকে মন থেকে ভালবাসার পর অন্য কাউকে ভালবাসার ইচ্ছা টাই মরে যায়। তোমাকে বলেছিলাম নাহ্ আমার চেয়ে ভালো ছেলে পাবে সত্যি রিসান আমার চেয়ে শতগুণ ভালো। আচ্ছা বাদ দাও। জীবনে তো কাউকে কিছু দিতে পারলাম নাহহ্। জীবনে এই প্রথমবার একটা সুযোগ দিয়েছে আল্লাহ। জানো তো? অপরিচিতা তার স্বামী, ও বাবাকে হারিয়ে মৃত্যু পথযাএী তার শেষ অবলম্বনটাও যদি হারিয়ে যায় কেমনে বাঁচবে সে বলতে পারো? জানি পারবেনা।ছোট্ট মেয়েটা যে আমাকে তার বাবার আসনে বসিয়েছে, বাবাই বাবাই করে সারাক্ষণ বুকে আগলে রেখেছে তাকে তো কিছু দিতে পারিনি তাই কিডনী দিয়ে যদি সন্ধ্যা আকাশের তারাও হয়ে যায়। তাও নিজেকে ভাগ্যবান মনে হবে। আর রিসান সত্যি অনেক ভালো ছেলে তোমরা বিয়ে করে হ্যাপি হও। তোমাদের জন্য শুভ কামনা।

—– এই তোরা কাঁদছিস কেনো?

—–“সত্যি রাজ একটা মানুষ কতটা মহান হতে পারে তোকে না দেখলে হয়তো বুঝতাম নাহ্। খুব ইচ্ছে করছে তোর পা ছুয়ে সালাম করতে”।এই বলে পা ছুঁতে গেলেই, কি করছিস তুই না আমার দোস্ত তোর স্হান তো আমার বুকেতে।

— পাশে তাকাতেই দেখি ডাক্তার সাথী “চোখ মুছতেছে!

— রাজ সময় হয়ে গেছে! চলো ( সাথী)

— ম্যাডাম এক মিনিট!

— কেনো?

— আসতেছি! বলে কথার কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালো একটা চুমু দিতেই চোখের পানি কথার মুখে পড়লো। কথা এখনো ঘুমাচ্ছে! মনে মনে বললাম আসি ” কলিজার টুকরা ” আজ আমার জন্য তোমার এই অবস্হা।ক্ষমা করে দিয়ো!

— স্যার সবকিছু রেডি!! চলেন ” ( সিস্টার)

— হুম চলো! যাওয়ার আগে আরেকবার পিছন দিকে তাকালাম ” মায়াবী মুখটা ” আজ চোখের সামনে ভেসে ওঠছে!

— এদিকে পাখি আর রিসান নিরবে চোখের জল ফেলছে।

— দোস্ত তোরা দুজন সব জেনেও যদি এমন করিস তাহলে বল আমি কি করবো! ?

—-প্লিজ আর কাদবিনা! আমার কিছুই হবে না!

— ম্যাডাম আপনাকে একটা অনুরোধ করবো?

— “রাজ “তুমি আমাকে ম্যাডাম নাহ্ তুমি করে বলবে! প্লিজ! ম্যাডাম ডেকে কেনো অপমান করো! আজ আমি দেশের সবচেয়ে বড় সার্জারি ডাক্তার, তার পিছনে তুমি রয়েছো। সেদিন যদি দুর্ঘটনার পর ঠিক সময় হসপিটালে নিয়ে নাহ্ আনতে তাহলে হয়তো সাথী নামক মেয়েটি যে তোমার সাথে কথা বলছে তার অস্হিত্ব মাটির সাথে মিশে যেতো। তোমার রক্ত যে আমার দেহের প্রতিটি শীরায় – উপশিরায়। মিশে গেছে। প্লিজ তুমি করে ডেকো আমায়!( সাথি)

— আচ্ছা! আমার মেয়েটাকে শেষ বারের মতো একনজর দেখতে পারি?

— হুম! অবশ্যই।( সাথি)

— রাইসাকে অপারেশন ড্রেস পড়িয়ে রেখেছে! অক্সিজেন মাক্স এ ছোট্ট মুখটা আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে।মনে হচ্ছে ” বাবাই বাবাই করে মহারাণীটা ডাকছে আমায়!

— রাজ চলো এবার?

— হুম চলো!

—অপারেশন রুমে নিয়ে শুয়ে দিলো আমায়! মনে মনে বলছি আল্লাহ আমার কলিজায় টুকরার কথাকে তুমি দেখে রেখো। যদি আমাকে তোমার কাছে নিয়ে নাও। আর আমার জীবনের বদলে হলেও এই ছোট্ট ফুলটা যেনো ঝরে না যায়।

— দেখি হাতটা! এই বলে ডাক্তার কিসের যেনো একটা ইনজেকশন দিলো! তার পর আর কিছু মনে নেই।

— এদিকে সাথী তার জীবনের সেরা অপারেশনটি করতে যাচ্ছে! মনে মনে আল্লাহকে ডেকে বললো আল্লাহ কোনদিন কিছু চায়নি তোমার কাছে, আজ চাইবো ডাক্তার সাইন্স যেখানে শেষ তোমার রহমত সেখান থেকে শুরু । আল্লাহ তোমার রহমতে, করুণায় যেনো অপারেশন সাকসেস হয় এই বলে অপারেশর শুরু করলো।

—এদিকে, কথার সেন্স ফিরতেই! “রাজ “রাজ বলে চিল্লাতে লাগলো!!

— মা তোই নাহ্ অসুস্হ এভাবে রাজকে ডাকছিস কেনো! আরও বেশি অসুস্হ হয়ে পড়বি।

— বাবা ‘ আমার স্বামী কোথায়?

— বাহিরে গেছে এসে পড়বে তুই ঘুমা!

– বাবা আমার মন বলছে আমার” জীবনের” কিছু একটা হয়েছে বাবা! বাবা চুপ থেকোনা বলো বাবা?

— মারে! রাজ কিডনী ডোনেট করছে এখন অপারেশন থিয়েটারে! অপারেশন চলছে।

— বাবা আমার স্বামীর কিছু হলে আমি বাঁচবো না বাবা আমি মরে যাবো বাবা। আমি যে ওকে কষ্ট দিয়েছি। ওর ভালবাসার মূল্য দেয়নি, দেয়নি স্বামীর অধিকার। এতিম বলে কন্টাক্ষ করেছি। এখন ওর কিছু হয়ে গেলে আমি কি করে বাঁচবো বলে দাও বাবা?

— মারে ” কিছুই হবেনা। তুই কাঁদিস নাহ্ মা “।

— বাবা, আমি আমার জীবনের কাছে যাবো! নিয়ে যাওনা বাবা( কথা)

— বাহিরে রিসান, পাখি, রাজের মামা-মামী, আর কথা বসে আছে। কথা অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে বসে আছে আর আল্লাহকে মনে মনে ডাকছে। চোঁখের পানি গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে। কথার বাবা কথার মাথার হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে, মারে চিন্তা করিস না। আর কাদিস না আল্লাহকে ডাক তিনিই সবকিছু ঠিক করে দিবেন।

— দীর্ঘ তিন ঘন্টা অপারেশন চলার পর অপারেশন রুমের দরজা খুললো।

— পিন – পিনে নীরবতা, সবাই ডাক্তারের মুখের দিকে চেয়ে রয়েছে!

— ম্যাডাম,অামার জীবন কেমন আছে? আমার জীবনের কিছু হবেনাতো। ম্যাডাম, আমার জীবনকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আর কখনো কষ্ট দিবোনা। কি হলো ম্যাডাম কিছু বলেন প্লিজ?

ডাক্তার সাথীর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে এওোগুলো প্রশ্ন ছুড়ে দিলো (কথা)

— সাথী, কথার এমন কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছেনা, নিজের অজান্তেই চোখে পানি এসে গেছে!

— ম্যাডাম, আপনি কাঁদছেন কেনো!! আমার স্বামীর কিছু হয়নিতো? প্লিজ এভাবে আর নিরব থাকবেন না প্লিজ কথা বলেন। (কথা)

— আর, মিসেস রাজ চিন্তা করোনা আল্লাহর রহমতে, সবার ভালোবাসায় রাজের অপারেশন সাকসেস হয়েছে। (সাথী)

— আমি এখানে কেনো? ( রাইসা)

-মামনি তুমি তো হসপিটালে! (সাথী)

— ডাক্তার আন্টি, আমার বাবাই কোথায়, মম কোথায় মমের কাছে যাবো আমি নিয়ে চলো আন্টি! ( রাইসা) **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**…
— মামনী! তোমার আম্মুর কাছে যাবে?

— হুম ডাক্তার আন্টি নিয়ে চলো আমায়!

— মামনী এইযে, তোমার মম ( সাথী)

— মামনি, ও মামনি বাবাই কোথায়? বাবাইকে তুমি কি বকা দিয়েছো? বাবাইকে দেখছি না!

— অপরিচিতা, রাইসার কথা শুনে ঘুম থেকে সজাগ পেয়ে যায়,। রাইসাকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

— মামনী, বল না বাবাই কোথায়! আমার বাবাই কোথায় বলো না, বাবাইকে কেনো দেখতে পারছিনা! (রাইসা)

— রাইসার কথা শুনে অপরিচিতা কথা বলতে চেয়েও কথা বলতে পারছেনা ফ্যাল- ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

— ডাক্তার আন্টি আমার মম আমার সাথে কথা বলছেনা কেনো?

— মামনি তোমার মম এর ব্রেন হ্যামারিজ হয়ে গেছে তাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে! (ডাক্তার)

– আপনি মিথ্যা বলছেন, আমার মম আমার সাথে কথা না বলে থাকতেই পারবেনা।

— ঠিক বলেছিনা মম! ওই মম একবার মহারানী বলে ডাকোনা। বলোনা আমি রাগ করলে সুন্দর লাগে।

— কথা বলবে না আমার সাথে, আমি কি পঁচা তোমরা কেউ আমার সাথে কথা বলোনা। বাবাও কোথায় তাও বলছো। এখন যদি কথা না বলো আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাবো। যেখান থেকে কেউ ফিরে আসেনা। ওই মম তুমি কথা বলবেনা?

— আচ্ছা কথা বলা লাগবোনা নাহ্ তোমরা কেউ আমায় ভালবাসো নাহ্। বাবাই ও ভালবাসেনা আমায়,। এই বলে ফল কাটা ছুড়ি নিয়ে , বলতে লাগলো এই ছুড়ি দিয়ে হাত কেটে মরে যাবো।

— মামনি কি করছো? ( ডাক্তার)

— ডাক্তার আন্টি আপনি আমার কাছে আসবেন নাহ্। আপনি কাছে আসলে আমার গলায় চালাবো। বাবাই আমাকে ফেলে চলে গেছে মমও কথা বলছেনা কি করবো আমি চলে যাবো। এই বলে যখনি ছুড়িটা হাতে রেখে টান দিতে যাবে কাঁদতে কাদঁতে তখনি!

— মামনী, মা আমার কোথায় যাবে তোমার মমকে রেখে এই বলে অপরিচিতাকে রাইসাকে জড়িয়ে ধরলো।

— এদিকে অপরিচিতায় কথা বলা দেখে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাথী আর মনে মনে ভাবছে সত্যি আল্লাহ তায়ালা মা এবং সন্তানের মাঝে অদ্ভূত এক সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছে!

—- মামনী বাবাই কোথায়? তুমি কি বাবার সাথে ঝগড়া করেছে। মম বাবাইকে এনে দাওনা? (রাইসা)

— ম্যাডাম রাজের কি হয়েছে জানেন?

— রাজ রাইসাকে কিডনী দিয়েছে,আর ৩২২ নাম্বান কেবিনে আছে এখন।

— প্লিজ আমাদেরকে রাজের কাছে নিয়ে চলেন!

— আচ্ছা চলেন!

— রাজের পাশে সকলেই বসে আছে! কথা রাজের মাথার কাছে বসে আছে। এখনো রাজের সেন্স ফিরেনি।রাইসা রাজের কাছে গিয়েই বাবাই বাবাই বলে ডাকতে লাগলো। সবাই বাচ্চা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

— হঠাৎ রাজ অনুভব করছে তার মাথায় কে যেনো হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আস্তে আস্তে চোখ খুলতেই দেখে কথা কাদছে। আর রাইসা বাবাই, বাবাই করে ডাকছে।

— কথা তুমি, কাদছো কেনো?(রাজ)

— চোখের পানি মুছে দিলাম! আর কাদবে না তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও যাবোনা।

— বাবাই, তুমি আমাকে ভুলে গেছো! কথা বলোনা তোমার মহারানীর সাথে!

— কে বলছে আমার মহারানীকে ভুলে গেছি। এইতো মহারানী আমার কাছে এসো! । রাইসা কাছে আসতেই মহারানীর কপালে পাপ্পি দিয়ে বললাম মামনী এবার বাবাই কে দিবেনা?

— হুম আমার বাবাইকে দিবোনা কাকে দিবো! (রাইসা)

— রাজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তুমি আমার কলিজার টুকরাকে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। সত্যি বলতে তোমার সাথে মিশতে মিশতে তোমাকে বড্ড বেশি ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু সবার ভালবাসা পূর্ণতা পায়না তেমনটি আমারো। সত্যি তোমার মতো মানুষকে পা্ওয়া ভাগ্যের বিষয়। আর কথা আপু তোমার আর রাজের মাঝে আমার আসা ঠিক হয়নি। আমার জন্য তোমরা দুজন অনেক কষ্ট পেয়েছো। এই ছোট বোনটাকে ক্ষমা করে দিয়ো। রাজ শুধু তোমারি মাঝখানে আমি মরীচিকার পিছনে ছুটে ছিলাম। ভালো থেকো সবসময়। আর আমি যদি কখনো হারিয়ে যায় তাহলে আমার কলিজার টুকরা রাইসাকে দেখো রেখো কথা আপু! ( অপরিচিতা)

— কি বলছো এইসব! তোমার কোনো অপরাধ নেই ক্ষমা কেনো চাচ্ছো(! আমি)

— রাজ আমি আসি! (অপরিচিতা)

— বাবাই মম চলে যাচ্ছে! মম অভিমান করছে বাবাই তুমি না আমায় কথা দিয়েছো মমকে কষ্ট দিবেনা? ( রাইসা)

— মনে মনে ভাবছি আল্লাহ এ কোন বিপদে ফেললা।কি করবো আমি! কিছু না ভাবতে পেরে অপরিচিতা ডাকদিলাম, দাড়াও অপরিচিতা !

— অপরিচিতা করুণ দৃষ্টিতে ফিরে তাকালো আমার দিকে তাকালো!

— কথার দিকে তাকাতেই দেখি, কথা কাদঁছে।

— মামনি দেখেছো বাবাই তোমাকে কতো ভালবাসে! আর অভিমান করে থেকোনা! (রাইসা)

— হঠাৎ! পিছন থেকে কারো ডাক! অপরি!

— অপরিচিতা কারো কন্ঠে অপরি নামটা শুনতেই বুকটা করে ওঠলো! চার বছর আগের সেই চিরচেনা কন্ঠ!

—- অপরিচিতা কাপা – কাপা কন্ঠে বলে ওঠলো” রাফি

— অপরিচাতার মুখে রাফি নামটা শুনতেই সবাই বিস্মিত হয়ে গেলো।

— অপরিচিতা রাফির দিকে তাকাতেই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো ” রাফির কুলে একটা ফুট- ফুটে বাচ্চা! রাফিকে পাপ্পা বলে ডাকছে!

— অপরিচিতা মনে মনে ভাবছে তাহলে কি রাফি বিয়ে করেছে!

— অপরি কেমন আছো?

—– জি! ভালো আছি।তুমি?

— আলহামদুলিল্লাহ!

—- রাফি তোমার কুলে বেবিটা কার?

— অপরি এটা আমার মেয়ে রূপসা ইসলাম (রোজা)!

— অপরিচিতা নিজের চোখের পানিকে আড়ালে রেখে বললো। আচ্ছা রাফি বিয়ে করেছে ভালো। আমাকে একবার বললে তো পারতে?বেবীর মা কোথায়?

— “অপরি “রাফিয়া ইসলাম মনকে ভালোবেসেই বিয়ে করি। সেই ভালবাসায় ফসল হচ্ছে ” রিক্তা! তোমাকে কী ভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা —-

— ” রাফির কাছে এমন কথা শুনে অপরিচিতার বুকটা ফেটে যাচ্ছে! রাফি তাকে এতো ভালবাসার পরও না জানিয়ে তাও ভালবেসে বিয়ে করলো? আচ্ছা তোমার বউ “রাফিয়া ইসলাম মন” সে কোথায়?

চলবে…..