বন্য প্রণয় পর্ব-০২

0
291

#বন্য_প্রণয়
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_২
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

রাতের আঁধার ফুরিয়ে দিনের আলো ফুটেছে চারদিকে। গ্রামাঞ্চলে এখনো একটু-আধটু শীতল ভাব থাকলেও শহুরে জীবনে তার বালাই নেই। আয়ান ঘুম থেকে উঠেছে আজ একটু তাড়াতাড়ি। কালকে থেকে রমজান শুরু। আর রমজান আসলেই নিজেকে সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত রাখে সে। রমজানে কারো পরিবর্তন দেখলে ঠান্ডা, বিদ্রুপের সহিত হাসাহাসি করা উচিত নয়। কারণ রমজান মাস আসে মানুষকে পরিবর্তন করতে। ফোনের স্ক্রিনে সময় দেখে নিলো আয়ান। সকাল সাতটা চল্লিশ বেজেছে! তাহলে এরমধ্যে নিশ্চয়ই তৃষাও ঘুম থেকে উঠে গেছে? আনমনে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো আয়ান। তৃষা আয়ানের ছোটো বোন৷ বয়সে দু’বছরের ছোটো বড়ো হওয়ায় সম্পর্কটা মারকাটারি টাইপের।
” ভাইয়া! এই ভাইয়া!”
তৃষার গলার আওয়াজ শুনতেই আয়ান বিছানায় মরার মতো পড়ে রইলো আবারও। তৃষা এসে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখলো তার গুণধর ভাই এখনো শুয়ে। তাহমি শ্বশুর বাড়ি গেছে মাত্র একদিন তবুও মনে হয় কতদিন দেখা হয়নি! তাহমি তৃষা ও আয়ানের বড়ো। তিন ভাইবোনের সংসার থেকে একজন দূরে সরে যাওয়ায় তৃষার মনটা বেশ খারাপ। তাই তো সকাল সকাল এলো ভাইয়ের কাছে আদর খেতে। তৃষা তবুও আবারও ডাকলো আয়ানকে।
” ভাইয়া? ভাইয়া? একটু উঠবি? আমার না মনটা কেমন কেমন করছে। একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি? দে না প্লিজ!”
বোনের এমন আবদার শুনে আর শুয়ে থাকতে পারলোনা আয়ান। দু’জনের মধ্যে যেমন ঝামেলা হয় তেমনি ভালোবাসাও প্রখর। তাহমির সাথে অবশ্য এতটা সখ্যতা ছিলো না ওদের। সারাদিন বাইরে কাজ করে বিকেলে বাসায় ফেরার পরে সন্ধ্যায় যা আড্ডা হতো তিন ভাইবোনের। কিন্তু বেশিরভাগ সময় তৃষা আর আয়ানই বাড়ি মাথায় করে রাখতো। আয়ান অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে আছে আর তৃষা অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছে।
” কী হয়েছে তৃষু? মন খারাপ? আয় এদিকে। শো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”
ভাইয়ের ডাকে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো তৃষা। ভেবেছিল একবার তাহমিকে কল দিবে। কিন্তু সকাল সকাল কল দিলে যদি দুলাভাই কিছু মনে করে? সেজন্য আর কল দিলো না। আয়ানের স্নেহভরা স্পর্শে কিছুক্ষণের মধ্যেই তৃষা ঘুমিয়ে গেলো। ঘুমন্ত বোনের মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো আয়ান। কিছুক্ষণ বাগানে হাঁটবে বলে ঠিক করেছে সে।

” আপনি কে বলছেন? সহন কোথায়?”
সাত-সকালে ফোনের রিংটোনের আওয়াজ শুনতেই ঘুম ভেঙে গেছিল তাহমির। ঘুমকাতুরে চোখে আশেপাশে তাকিয়ে খেয়ালে আসে সে এখন বিবাহিতা এবং শ্বশুর বাড়ি আছে। কিন্তু বর কই? রাতের কথা মনে পড়তেই দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করেছিল তাহমি। ফ্লোরে শুয়ে আছে সহন। পাশে ফোনটা অবিরত বেজে যাচ্ছে। যদিও অন্যের জিনিস না বলে ধরা উচিত নয় তবুও কেনো জানি হুড়মুড়িয়ে উঠে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়েছিল সে। স্ক্রিনে ‘Nila’ নামটা দেখতেই সকাল সকাল মেজাজ বিগড়ে গেলো তাহমির। কল রিসিভ করতে ‘হ্যালো’ বলতেই অপর পাশ থেকে শুনতে পেলো উক্ত কথাটি।
” আমি তোমাদের বিচ্ছেদের কারণ। শোনো মেয়ে তুমি আমার বয়সে ছোটো। ভালো করে লেখাপড়া কমপ্লিট করে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নাও। গতকাল আমার আর সহনের বিয়ে হয়ে গেছে। বিশ্বাস না হলে আজকে এসে দেখে যাও।”

বিপরীত দিকের ভদ্রমহিলার কথোপকথন শুনে নীলা থমকাল। আসলেই কি সহন বিয়ে করেছে? কিন্তু কীভাবে? ছেলেটা তো তাকে পাগলের মতোই ভালোবাসে!
” আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আপনি কি ওর কোনো বান্ধবী? ”
” এই বোকা মেয়ে বান্ধবী হলে এতো সকালে ওর রুমে কী করতাম বলো? ”
নীলার মেজাজ বিগড়ে গেলো। সহসাই রেগে কিছু গালিগালাজ করলো।
” চুপ বে*ডি। আমার হবু জামাইয়ের ফোন নিয়া ফাইজলামি? মা*গি তুই ফোন সহনকে দে।”
তাহমি অবাক হলো। একটা মেয়ের ব্যবহার এরকম হতে পারে? সহনের দিকে তাকিয়ে রাগে বোম হয়ে ফোন কেটে দিলো তাহমি৷ এসব মেয়েদের সাথে ঝামেলা করে লাভ নেই। যা ভেবেছিল তাই! সহনের গার্লফ্রেন্ড মোটেও সুবিধার না। তাহমি দ্রুত নীলার নম্বর ব্লক লিস্টে এড করে নম্বরটা পাল্টে আবারও সেইভ করলো। তাহমির একটা পুরনো বন্ধ সিমের নম্বর ছিলো সেটা। যাতে সহন যদি কল করেও তবুও বন্ধ পায়। কিন্তু ওপাশ থেকে যদি নীলা অন্য কোনো সিম দিয়ে কল দেয় তখন? পরের কথা পরে হবে। এসব ভেবে ফোন ঠিক জায়গায় রেখে গোসল সেড়ে নিলো তাহমি। সকালে গোসল করা তার অভ্যাস।
ঘুম ভেঙে নিজেকে ফ্লোরে শুয়ে থাকতে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলে সহন। গতকাল রাতের ঘটনা স্মৃতিপটে ভেসে উঠতেই আশেপাশে তাকিয়ে দেখে। তাহমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে ব্যস্ত। সহন উঠে গিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোলো।
” সহন এদিকে এসো তো।”
ঠোঁট বাকিয়ে বললে তাহমি। সহন ভ্রু নাচিয়ে শুধালো,
” হঠাৎ তুই থেকে তুমি? ”
” এখন তুমি আমার স্বামী তো। আর স্বামীকে তুই করে ডাকা কেমন লাগে না? এজন্য। ”
সহনের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো তাহমি। সহন তড়িৎ গতিতে ফিরলো সেদিকে। কে জানে আবার কী করবে এই মেয়ে!
” কিছু বলবি? নইলে সর গোসল সেড়ে আসি।”
” গোসল যখন করতেই হবে কারণে করে,অকারণে কেনো?”
” তাহমি! নির্লজ্জতা ছাড় এবার তুই। মেয়ে মানুষ তুই একটু লাজলজ্জা তো থাকা লাগে। ”
” আমি মানুষ, নট মেয়ে মানুষ। ”
” হ ভাই। আচ্ছা তুই তো আমাকে ভালোবাসিস না। তাহলে এভাবে সংসার করার জন্য উঠেপড়ে লাগলি কেনো?”
তাহমি হুট করেই দু’হাতে গলা আঁকড়ে ধরলো সহনের। সহন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। এই মেয়েকে বারণ করলে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে সেই কাজ করে।
” দেখ সহন তোকে আমি কখনো ওই নজরে দেখিনি৷ তুই জানিস তো কলেজ কিংবা ভার্সিটি নিয়ে দু’টো প্রেমও করেছিলাম। সুতরাং তোকে আগ থেকে ভালোবাসার প্রশ্ন আসে না। ”
” তাহলে? ”
” তাহলে কী? বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক। আমরা এখন সেই সম্পর্কে আছি। আমি তোমার সাথেই সংসার করবো এবং তুমিও করবে। আর শোনো মাঝে মধ্যে তুই হয়ে যাবে৷ আস্তে আস্তে তুমি বলা অভ্যাস করবো।”
সহনের মাথা ঘুরছে। তাহমির পাগলামি তার জন্য চূড়ান্ত শাস্তি। নীলা কল দিয়েছিল গতকাল রাতে। কিন্তু ঘুম চোখে ঠিকঠাক কথা বলতে পারেনি সহন। কল ব্যাক করতে হবে। সামনা-সামনি দেখা করে মেয়েটাকে সবকিছু বলে সামলাতেও হবে সহনকে। এসব কথা খেয়ালে আসতেই তড়িৎ গতিতে তাহমিকে দূরে সরিয়ে দেয় সহন।
” তোর যা ইচ্ছে কর। আমি এখন গোসল করতে গেলাম।”
সহন আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুত বাথরুমে চলে যায়। তাহমি ভেজা চুলগুলো ভালো করে ঝেড়ে মুছে ঘর থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরের দিকে এগোতে থাকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে তার শ্বাশুড়ি ইতিমধ্যে চা,নাস্তা তৈরি করে ফেলেছেন। তাহমিকে দেখেই ফরিদা হেসে বলে ওঠেন,
” ঘুম ভেঙেছে? ফ্রেশ না হয়ে এলে হয়ে এসো। নাস্তা রেডি আছে। ”
” আন্টি তুমি আমাকে তো আগের মতোই ট্রিট করছো! এখন কিন্তু আমি তোমার ছেলের বউ। একটু শ্বাশুড়ি শ্বাশুড়ি ভাব নিবা না?”
” ভাবসাব পরে নিবো। আগে একটু ভালো ব্যবহার করি। দু’দিন পরে দেখবি আমার আসল রূপ। ”
ফরিদা খানের কথা শেষ হতেই তাহমি ও তিনি একসাথে হেসে উঠেন। সহনের মায়ের সাথে তাহমির আগে থেকেই সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলো। এখন সেটা আরও গাঢ় হচ্ছে।
” হুম বুঝলাম। তোমার ছেলেটা তোমার মতো কেনো হলোনা বলো তো?”
” কেন? কিছু বলছে ও? না-কি অন্য সমস্যা? ”
” বলবে কী? আমার থেকে পালাই পালাই করে। অন্যত্র সম্পর্কে আছে তোমার ছেলে। মেয়েটা বিশেষ সুবিধার ঠেকলো না আমার। ”
সহনের মা নববিবাহিতা তাহমির কথায় হকচকিয়ে গেলেন। সবকিছু কতটা স্বাভাবিকভাবে বললো মেয়েটা!
” তাহমি আমরা কিছু জানতাম না। আমি সহনের সামনে কথা বলবো।”
” দরকার নেই। আমি আর সময় মিলে সবকিছুই ঠিক করে নিবো। আপাতত তুমি নাস্তা দাওও ক্ষুধা লেগেছে খুউব।”

চলবে,