বন্য প্রণয় পর্ব-১৩+১৪

0
491

#বন্য_প্রণয়
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_১৩

( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
ড্রয়িং রুমে সবাই মিলে সমবেত হয়েছে। তাহমির বাবা বেশিরভাগ সময় কাজের সূত্রে শহরের বাইরে থাকেন। আজকেও তেমনই বাড়িতে নেই উনি। হঠাৎ শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে আসায়, গতকাল কেউ কোনো প্রশ্ন না করলেও আজকে সবাই একসাথে বসেছে আলোচনা করতে। তৃষা বসেছে তাহমির পাশে,আয়ান দাঁড়িয়ে আছে এককোনায়। সামনাসামনি বসেছেন তাহমির মা। সহন যা-ই অন্যায় করুক বাবার বাড়িতে কীভাবে বলবে সেসব? তাতে যে নিজেরই মানসম্মান খোয়া যাবে।
” কী চুপচাপ বসে রইলি কেনো তাহমি?”
মায়ের প্রশ্নে নড়েচড়ে উঠলো তাহমি। তৃষা তাকিয়ে আছে বোনের দিকে। তাহমি খানিকটা সময় নিয়ে বলতে লাগলো।
” মা আমি কিছুদিন সহনের থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছি। মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য বোঝে না। আমাদের পূর্ব পরিচয় থাকলেও বিয়েটা হয়েছিল হুট করে। তাই স্বাভাবিক সম্পর্কে নেই আমরা। আমার অনুপস্থিতিতে যদি সে আমার মূল্য বোঝে তবেই আমি তার সংসারে ফিরবো। ভালোবাসাহীন সম্পর্কে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
মেয়ের কথায় কোন ভুল খুঁজে পেলেন না আমেনা।
” তুমি ঠিক করেছো আপু। তবে আমার বিশ্বাস সে আসবে।”
আয়ান পাশ থেকে বললো। তৃষা জবাবে বলে,
” আসলে আসবে। ঠিকঠাক মতো টাইট দিবা আপু।”
” চুপ কর তোরা দু’টো। শোন মা তাহমি, তোর সাথে আমি একমত। কিন্তু ছেলেটা তোর কাছে এলে ফিরিয়ে দিবি না। সম্পর্ক হলো একটা গাছের মতো। খেয়াল রাখতে হবে, পরিচর্যা করতে হবে। এবং সেটা দু’জনকেই করতে হবে। তুই নিয়মিত স্কুলে যা আর বাসায় ওদের সাথে সময় কাটাবি। তাহলে আর খারাপ লাগবে না।”
” ঠিক আছে মা।”
” হ্যাঁ হ্যাঁ! জানিস তৃষু আবার প্রে…”
মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে অনিকের কথাটা বলতেই যাচ্ছিল আয়ান। কিন্তু তৃষা ইশারা করতে চুপ করে গেলো। তৃষার গ্রাজুয়েশন শেষ হলে একেবারে পারিবারিক ভাবেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে অনিক।
” তৃষা আবার কী করলো আয়ান?”
তাহমির প্রশ্নে থতমত খেলো আয়ান। কী বলবে এবার? আমেনা ইসলাম উঠে দাঁড়ালেন। বিরক্ত হয়ে বললেন, ” ওদের কথা বাদ দে তুই। আমি গেলাম ঘুমুতে। ঔষধ খেয়েছি তো ঘুম পাচ্ছে। ”
” আচ্ছা মা যা-ও। ”
আমেনা ইসলাম চলে যেতেই দুই ভাইবোনের দিকে দৃষ্টিপাত করলো তাহমি।
” এই তৃষা আয়ান কী বলছিল রে? প্রেমটেম করছিস বুঝি? আয়ান সেটা জানিস? তাহলে কি তোরও বউ ঠিক হয়ে গেছে? ”
” আরে এ আপা না না! আমি ওসব প্রেমটেম করি না। সোজা বিয়ে করবো। আগে একটা চাকরি পাই তারপর। তৃষা করছে প্রেম। তা-ও ডাক্তার সাহেবের সাথে। ”
আয়ান এগিয়ে এসে সোফায় বসেছে। তৃষা পাশেই ছিলো। গোপন তথ্য ফাঁস করার অপরাধে ভাইয়ের হাতে চিমটি কাটলো সে। ব্যথায় ‘আহহ’ করে উঠলো আয়ান। কিন্তু শুধু চোখ পাকিয়ে তাকিয়েই ক্ষান্ত হলো আজ। কারণ বড়ো বোন সামনে আছে। তাহমি কিছুটা গম্ভীর হলো। তা দেখে তৃষা মোটামুটি চিন্তায় পড়ে গেছে। বোন কি তাহলে রাগারাগি করবে তার সাথে?

গতকাল থেকে ছটফট করছে সহন। বারবার কল করেও ফোন বন্ধ পেয়েছে। নিজের মা-ও তাহমির হয়ে কথা বলছে। গতকাল সকালে সারা বাড়িতে তাহমিকে না পেয়ে মায়ের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল সহন। তিনি তখন নিজের ঘর পরিষ্কার করছিলেন।
” মা তাহমি গেলো কই?”
” দরকার কী?”
” দেখছি না তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
” সে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছে। তুই এবার যাকে ইচ্ছে বিয়ে করিস।”
রাগে গজগজ করতে করতে সহনকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন সহনের মা।
নীলার কথা মনের ভুলেও ভাবতে চায় না সহন। তাহমির সাথে যতই ঝামেলা ডাকুক সবকিছুর আড়ালে একটা সফট অনুভূতি আছে ওর জন্য। তারচে বড়ো কথা তাহমি তার স্ত্রী! মেয়েটা যে কেনো রাগ করে চলে গেলো সেটাও বোধগম্য হচ্ছে না। যদি কাছে আসার জন্য রাগ করতো তবে নিজে আশকারা দিতো না। নিশ্চিত অন্য কিছু ঘটেছে। নাহ! ঘরে বসে এসব ভাবলে চলবে না। সহন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ন’টা বাজে। তাড়াতাড়ি গায়ের টি-শার্ট পরিবর্তন করে কালো রঙের একটা শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরে রেডি হলো সহন। মায়ের কাছে আর না গিয়ে বাবাকে বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় সে।

রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে বিছানায় শরীর এলিয়ে অনিকের নম্বরে কল দিলো তৃষা। তাহমি আসার পর থেকে তেমন কথা বলা হয়নি। কিন্তু পরপর দু’বার কল বেজে গেলো। অনিক রিসিভ করেনি। এরমধ্যেই কলিংবেলের আওয়াজ ভেসে এলো তার কর্ণকুহরে। তৃষা বালিশের পাশে ফোন রেখে দরজা খোলার উদ্দেশ্য বসার ঘরের দিকে এগোলো। আয়ান বসার ঘরেই টিভি দেখছিল। তাই তৃষা পৌঁছুনোর আগেই আয়ান দরজা খুলে দিলো। সহনকে দেখে আয়ানের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। বিয়ের পর এই প্রথম সহন এ বাড়িতে এলো।
” কী অবস্থা শালাবাবু? কেমন আছো? ”
” আলহামদুলিল্লাহ দুলাভাই। আগে ভেতরে আসুন। তারপর বলুন, আপনি কেমন আছেন? ”
সহন ভিতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে এদিকওদিক তাকাচ্ছে। আয়ান দরজা আঁটকে ততক্ষণে সহনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তৃষাও এরমধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়েছে।
” আছি কোনো প্রকার। বউ রেগে বাবার বাড়ি গেলে যেমন থাকা যায় তেমনই। ”
তিনজন একসাথে হো হো করে হেসে উঠলো। তৃষা ভেংচি কেটে বললো, ” হয়েছে হয়েছে। এখন গিয়ে রাগ ভাঙান আপুর। আপু ঘরেই আছে। ”

” আমার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি কোথায়?”
” আব্বু বাসায় না। আম্মু ঘুমিয়ে গেছেন। কালকে দেখা করে নিবেন বরং। ”
” তাহলে তোমার আপুর ঘরটা দেখিয়ে দাও।”
” চলুন।”
তৃষার পেছন পেছন তাহমির ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সহন। তৃষা ওকে রেখে নিজের ঘরের দিকে এগোলো।
শুয়ে শুয়ে ফেইসবুকে রিলস দেখছে তাহমি। হঠাৎ দরজা ঠেলে ভেতরে কেউ প্রবেশ করার শব্দে সেদিকে তাকাল। এমনিতে দরজা লক করে রাখে না তাহমি। সহনকে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো মেয়েটার। কিন্তু শোয়া থেকে উঠলো না তবুও। সহন হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এলো তার দিকে।
” কেমন আছিস তাহমি? এভাবে না বলেকয়ে কেউ চলে আসে? ”
” তুই এখানে এসেছিস কেনো? ”
সহন আস্তে করে তাহমির পাশে বসলো।
” তোকে বড্ড মিস করছিলাম তাই। ”
” আজাইরা কথা বলবি না।”
” সত্যি! ”
” তুই চলে যা। নইলে কিন্তু! ”
সহন তাহমির দিকে ঝুঁকে বললো, ” নইলে কি কামড়ে দিবি? নাকি কিস করবি?”
তাহমি হাত দিয়ে সহনকে দূরে সরিয়ে দিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে, ” তোকে স্পর্শ করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। ”
” এহহ! একদিন আমিই বলেছিলাম এই কথাটা। তাই আজকে আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিলি?”
” হুম দিলাম। ”
তাহমির বিরক্তি উপেক্ষা করে সহন তাহমির দিকে আবারও ঝুঁকে থুতনিতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তড়িৎ গতিতে শোয়া থেকে উঠে বসলো তাহমি। কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
” এসব গিয়ে নীলাকে করবি। লাগলে খাট ভেঙে ফেলিস। চরিত্রহীন একটা! ”
সহনের হাসে পাচ্ছে ভীষণ। ঠোঁট টিপে হাসছে সে। তাহমির জেলাস হওয়া দেখে যেমন ভালো লাগছে তেমনি আবার কৌতুহল জাগছে। নীলা কথা তো প্রথম দিন থেকেই জানে তাহমি। তাহলে কী এমন হলো যে বাড়ি ঘর ছাড়লো?
” খাট ভেঙে ফেললে শোবো কোথায়? তারচে চল ফ্লোর করি।”
সহনের কথায় তাহমির অক্ষিকোটর থেকে বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ছেলেটাকে দেখে মনে হয় ভদ্র। আচরণেও এতদিন মনে হয়েছে তাই। কিন্তু এটা যে এতটা বজ্জাত তা তো জানতোই না!
” চুপপপ! অশালীন কথা। এসেছিস কেনো? ”
” তোকে বাড়ি নিয়ে যাবো তাই। ”
” আমি আর ফিরবো না। আর তুই আমাকে খবরদার স্পর্শ করবি না। তোর গায়ে পরনারীর স্পর্শ! ”
” তাহলে আমিই এখানে থেকে যাবো। আর সব সময় করবো লাগলে চৌদ্দ বার করবো মানে স্পর্শ করবো আরকি। নীলার সাথে আমার কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না তাহমি।”
” তুই যাবি নাকি আমি বেরিয়ে যাবো ঘর থেকে? ”
” আচ্ছা তুই যা!”
তাহমির রাগে নিজের চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। পারলে তো সহনের সারা গায়ে কামড়ে দিতো। কিন্তু এসব কিছুই না করে বিছানা থেকে উঠে দরজার দিকে এগোলো সে। সহনও উঠলো দ্রুত। হাত ধরে হেঁচকা টানে সোজা দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো সহন। দু’জনের নাকে নাক রেখে ঠোঁট প্রায় ছুঁইছুঁই অবস্থা। তাহমির অস্থির লাগছে। তাহমি কিছু বলার আগেই সহন তাকে আঁটকে দিলো। গাঢ় চুম্বনে আবিষ্ট হলো দু’টো ঠোঁট। একটু পর ছাড়লো সহন। এতক্ষণ ছটফট করছিল তাহমি। গায়ের জোরে সহনের সাথে সে পেরে ওঠেনি।
” নীলার সাথে এসব করা শেষ তাই মজা না পেয়ে আমার সাথে করছিস না? জোর করে তুই এসব করলেও আমার মনে তোর জন্য শুধু ঘৃণা অবশিষ্ট আছে। ”
” তাতেই হবে বউ। ভালোবাসা না থাকলেও কিছু তো একটা আছে! আমি এবার সহনশীল হয়ে বউকে সামলাবো। যতদিন না তুই নিজে থেকে আমার সাথে ফিরে না যাবি, ততদিন আমিও এখানে থাকবো। ”
” আগে হাত ছাড় তারপর কথা বল। গায়েপড়া বেডা মানুষ। ”
চলবে,

#বন্য_প্রণয়
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_১৪

( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে তৃষা। কখনো ডানে ফিরে শোয় তো কখনো বামে। আবার সোজা হয়ে শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে। মোটামুটি গরম পড়ে আজকাল। তাই মাঝে মধ্যে ফ্যান চলে। এখনও চলছে। গরমের মধ্যে কম্বল মুড়ি দিয়ে বাতাস খাওয়া তৃষার স্বভাব। সেই ঘন্টাখানেক আগে কল দিয়েছিল অনিককে। এখনো কল ব্যাক করলোনা না মানুষটা। আছে তো ওহিদের বাসায়। তাহলে কীসের এতো ব্যস্ততা? সারারাত অপেক্ষা করতে করতে ফজরের পরে ঘুমিয়ে পড়ে মেয়েটা।
কল আসার অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ার অনুভূতিরা বিশ্রী।
সকালবেলা শরীরের উপর ওজন ওজন ফিল হতে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো তাহমি। গতকাল রাতে নিজে সোফায় শুয়ে সহনকে বিছানায় শুতে বলেছিল মেয়েটা। তাহলে কি অসভ্য ছেলেটা তার উপর শুয়েছে? না,না ওর ওজন নিশ্চয়ই এতটা কম নয়! তাহমি বুকের উপর তাকিয়ে দেখলো মিলু শুয়ে আছে। মিলু এ বাড়ির নতুন পোষা বিড়াল। ধবধবে সাদা গায়ের রঙ, বয়স অল্প। তাহমি তার দিকে তাকাতেই সে হাই তুলে মৃদু স্বরে ‘মিউ’ বলে ডাকলো।
” শালার বিড়ালের কী ভাগ্য! কোথায় বউয়ের বুকে মাথা রেখে আমি ঘুমবো, তা না উনি বুকের উপর বসে আছে। ”
সহন হাতে দুই কাপ চায়ের কাপ নিয়ে ঘরে ঢুকে দাঁড়াল। টি-টেবিলের ওপর কাপ দু’টো রেখে মিলুকে তাহমির উপর থেকে সরিয়ে ফ্লোরে ছেড়ে দিলো।
” তুই সরালি কেন ওকে?”
” কারণ ওই জায়গা আমার মিলুর না।”
সহনের ইশারায় লজ্জা পেলো তাহমি। পরক্ষণেই পূর্বের ঘটনা মনে পড়তে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। হুড়মুড় করে উঠে বসলো সে। কিছুটা রাগ প্রদর্শন করে বললো,
” একটা দিয়ে হচ্ছে না? না-কি ঠিকমতো দেয় না? নেহাৎ বাসায় কিছু বলতে পারিনি। তাই তোকে সহ্য করতে হচ্ছে। ”
সহন তাহমির পাশে হুট করে বসলো। হঠাৎ করে তাহমিকে ধরে নিজের কোলের উপরে তুলে বসালো। তাতে তাহমি দ্বিগুণ ক্ষেপে গেলো।
” সহন! বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।”
” উফ! আমার বউটা কত্ত হট,সুন্দরী। আগে কেনো চোখে পড়েনি বল তো? বাই দ্য ওয়ে,ঠোঁটের বাম দিকের তিলটা কিন্তু জোশ। ”
তাহমি না চাইতেও লজ্জা পাচ্ছে। এই লোকটা ভেতর ভেতর এতো অসভ্য কল্পনাও করেনি।
” ভালো করে কথা বল। চোখে পড়বে কীভাবে? চোখ তো নীলার দিকে ছিলো।”
” চুপ! আর একবারও ওর নাম নিবি না। আমি ওর কথা শুনতেও চাই না তাহমি।”
সহন তাহমির ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে চুপ করাতে বললো। তাহমি যেনো সহনের কথা শুনবে না বলেই প্রতিজ্ঞা করেছে।
” একশোবার বলবো,হাজারবার বলবো। তুই নীলার কাছে যা। নীলাকে হট বল। নীলাকে জড়িয়ে ধরর। নীলার সাথে সেক্…..!
তাহমি আরকিছুই বলতে পারে না। সহন রেগে গিয়ে তাহমির দুই হাত পেছনে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়েছে। তাহমি চেষ্টা করেও নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না। তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে ঠোঁটে। মিনিট দুয়েক পরে তাহমি মুক্তি পেলো। দ্রুত কোল থেকে নেমে সামনে দাঁড়াল তাহমি। আঙুল ছুঁইয়ে দেখলো ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে গেছে। তাহমির যেনো হঠাৎ করে কী হলো। সহনকে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলো একটা। সহন অবাক হলো কিছুটা। বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে রইলো তাহমির দিকে। যে মেয়েটা তাকে নিজে থেকেই আদরে সিক্ত করতো সে আজ এতটুকুর জন্য এমন আচরণ করলো?
” তুই খবরদার আমাকে স্পর্শ করবি না আরর।”
তাহমি দৌড়ে ওয়াশরুমের দিকে গেলো। চা টেবিলেই রইলো। তাহমিকে আর দেওয়া হলোনা সহনের। সকাল সকাল রান্নাঘরে গিয়ে শ্বাশুড়ির সাহায্য নিয়ে বউয়ের জন্য নিজের হাতে চা তৈরি করেছিল বেচারা।
তপ্ত দুপুরের রোদ উপেক্ষা করে হেঁটে চলেছে আয়ান। আজকে সন্ধ্যায় বাসায় সবাই একসাথে একটু আনন্দ করবে। তাই তাড়াতাড়ি টিউশন পড়াতে এসেছে। কিছুটা পথ এগিয়েই বড়লোক বাড়ির গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো সে। মাত্র সপ্তাহ হয়েছে এ বাড়িতে পড়াতে শুরু করেছে সে। তবে বাড়ির মানুষগুলো খুব ভালো শুধু ছাত্রীটি বেশি পাকা!
” হাই ইয়াং ম্যান! হাউ আর ইউ?”
বসার ঘরে সোফায় বসে আছেন তমাল আহমেদ। উনারই একমাত্র মেয়ে অনিমা আহমেদকে পড়াতে আসে আয়ান। এই নিয়ে দশজন শিক্ষক পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়ের কিছুতেই পড়ালেখায় মন বসে না। এবার এসএসসি দিবে। কিন্তু বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত বুঝে মেয়েটি। সাথে ঠোঁটকাটা তো বটেই। মা মরা মেয়ে বলে ছোটো থেকে আদরে আদরে বাঁদর তৈরি হয়েছে একেবারে।
” আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন আঙ্কেল? ”
” এইতো ভালোই। যাও যাও অনিমা রুমেই আছে। দেখো গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানাতে পারো কি-না! ”
” আমি চেষ্টা করবো আঙ্কেল। ”
আয়ান দ্রুত পায়ে এগিয়ে অনিমার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। খাটের উপর দাঁড়িয়ে একা একাই গান ছাড়া নাচছে মেয়েটা। আয়ান ভড়কে গেলো কিছুটা। তবে মেয়েটা যে নরমাল না সেটা সে জানে।
” অনিমা! কী করছো এসব?”
আয়ান কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে ধমকের গলায় বললো। অনিমা ধুপ ধাপ করে খাট থেকে নেমে আয়ানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত ধরে টেনে বিছানায় বসালো। আয়ানের রাগ যেনো তার কাছে কোনো বিষয় না।
” হেই আয়ান স্যার আমরা কাপল ডান্স করতে পারি? আপনি যদি পাঁচ মিনিট আমার সাথে ডান্স করেন তাহলেই আজকে আমি মন দিয়ে পড়তে বসবো।”
অনিমার কথায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইলো আয়ান। জীবনে কোনো মেয়ের হাত অবধি ধরলো না যে ছেলে আজ তাকে মেয়েদের সাথে কাপল ডান্স করতে হবে? আয়ানের ভ্যাবলা চেহারা দেখে অনিমা চোখ টিপ্পনী দিলো। ফলে আয়ানের কাশি শুরু হয়ে গেছে। অনিমা পানি দিলো আয়ানকে। পানি খেয়ে অনিমার দিকে দৃষ্টিপাত করলো আয়ান।
” অনিমা আমি তোমার টিচার তবে ডান্স টিচার নই।”
” সমস্যা কী? শিক্ষক তো বটে! আসুন আসুন।”
” অনিমা….”
অনিমা কোনো মানা না শুনে আয়ানকে দাঁড় করিয়ে নিজের হাত রাখলো তার কাঁধে ও পিঠে। এবার আয়ানের ধরার পালা। কিন্তু এভাবে মেয়েদের স্পর্শ করা তার ধাঁচে নেই। ফলে বিব্রত হলো কিছুটা। কিন্তু কিছু করার নেই। এই মেয়ে যে কতটা ত্যাড়া সেটা হাড়েহাড়ে টের পেয়ে গেছে আয়ান। এই মাসটা পড়ানোর পরে এমনিতেই এখানে আর পড়াতে আসবে না বলে ঠিক করলো আয়ান।
” আরে ধরুন তো! দাঁড়ান গান প্লে করি।”
অনিমা ফোন বের করে একটা হিন্দি গান প্লে করে আবারও আয়ানকে ধরে। আয়ানও শেষমেশ অনিমার কোমরে ও কাঁধে হাত রেখে ওর তালে তাল মেলাতে থাকে। নেহাৎ টিউশনির টাকাটা অগ্রিম নিয়ে ফেলেছে আয়ান। নইলে কখনও এই পাগলের পাগলামি সহ্য করতে হতোনা তাকে।
সারাদিন তাহমি নিজের ঘরে আসেনি। দুপুরে খাওয়াদাওয়া শেষে তৃষার ঘরে গিয়ে দুবোন কথাবার্তা বলেছে। তৃষার অবশ্য মনটা ভালো না। বোন আসাতে ওহিদের বাসায় যাওয়া হয়নি দু’দিন। অনিকের কী হয়েছে বুঝতে পারছে না তৃষা।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে কীভাবে বউয়ের রাগ ভাঙাতে পারবে সেসব ভাবছিল সহন। সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। সন্ধ্যা হওয়ার আগ মুহুর্ত। হঠাৎ ফোনের আওয়াজে ভাবনার ছেদ ঘটে তার। কলার আইডি দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। দ্রুত কল কেটে দিলো সে। ভুলবশত চাপ লেগে নীলার নম্বরের ডিটেইলস সামনে এলো। চমকে উঠল সহন। লাস্ট কল তো ওইদিন রাতের ছিলো, যেদিন তাহমির সাথে ছিলো! কিন্তু সহন তো কল রিসিভ করেনি। সহন কিছু একটা ভেবে কল রেকর্ড চেক করতে লাগলো। সৌভাগ্যক্রমে সহনের কল রেকর্ড অপশন চালু করা। তাই খুব একটা সময় লাগলো না সেদিন রাতে ঠিক কী বলেছিল তাহমি। যা ভেবেছিল তাই! নীলার শেষ কথাগুলো শুনেই ভুল বুঝেছে তাহমি।

” আপু আমি একটু কল রিসিভ করে কথা বলি?”
দুই বোন বারান্দায় দাঁড়িয়ে সূর্য অস্ত যাওয়া দেখতে দেখতে টুকটাক কথা বলছিল। এমন সময় অনিকের কল এলো।
” অবশ্যই! তুই কথা বল আমি আসছি।”
তাহমি বারান্দা থেকে সরে যেতেই কল রিসিভ করলো তৃষা। লম্বা শ্বাস নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো। নিজের অস্থিরতা প্রকাশ করতে চায় না সে।
” আসসালামু আলাইকুম। ”
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম। তৃষা একটা খারাপ সংবাদ আছে। ”
” কী হয়েছে? আপনি ঠিক আছেন? বাসার সবাই ঠিক আছে তো!”
” ওহির বাবা গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে। খুবই বাজে অবস্থা। আমরা সবাই সেখানে আছি। গতকাল দুপুরে ঘটেছে এই ঘটনা। ”
” ইন্না-লিল্লাহ! আপনি দিনা আপু আর ওহির দিকে খেয়াল রাখবেন। আর নিজের দিকেও।”
” চিন্তা করতে হবে না তোমাকে। কল না পেলেও মন খারাপ করো না। কথা হোক বা না হোক প্রতিদিন আমি আছি। ”
” আমি জানি। অনুভব করতে পারি সেটা। শুধু বিপদ-আপদের ভয় হচ্ছিল। তাই হলো।”
” দোয়া করো। আপাতত রাখছি। বুঝতেই পারছো ওহিকে সামলাতে হচ্ছে সাথে দিনাকেও।”
” আচ্ছা। সময় পেলে আপডেট জানাবেন। ”
” ওকে। টাটা।”
” আল্লাহ হাফেজ।”
মনটা খারাপ হয়ে গেলো তৃষার। ওহির মতো ছোটো মেয়েটা কতটা কষ্ট পাচ্ছে? আর দিনা আপুও কতো ভালো মানুষ।
চলবে,