বন্য প্রণয় পর্ব-৩৮+৩৯

0
192

#বন্য_প্রণয়
#পর্ব_৩৮
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

” তাহমি? তাহমি এদিকে আয়। দেখ কারা এসেছে। আস্তে আস্তে আসবি কিন্তু। ”
শাশুড়ীর হাঁকডাক শুনে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো তাহমি। বসার ঘরে বসে আছে তৃষা,অনিক ও আমেনা ইসলাম। বোরকা পরেই আছে তৃষা এখনও। ও বাড়িতে পৌঁছেই এখানে এলো তৃষা ও অনিক।
” কেমন আছিস তৃষা? অনিক কেমন আছেন? ”
তাহমি তৃষার সামনাসামনি সোফায় বসলো। ফরিদা খান এরমধ্যেই হালকা নাস্তা পরিবেশন করেছেন।
” আলহামদুলিল্লাহ আপাই। আমরা বেশ ভালো আছি। তোমার শরীরের খবর কী? ”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ”
আমেনা ইসলাম তাহমির পাশে বসলো এসে। মেয়েকে ভালো করে দেখে নিলো একবার। আমেন ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললেন,
” তাহমি মা কতো বড়ো হয়ে গিয়েছিস তোরা! তোর বাবা খবরটা শুনে একদিন আগেই ফেরার জন্য চেষ্টা করছে। কাজকর্ম না থাকলে কখন আসতো তোর কাছে। ”
” সমস্যা নেই মা। আমি তো আছিই। বাবা ধীরেসুস্থে কাজ করুক। ”
” তোমরা কিছু খাচ্ছ না কেনো? তৃষা নাও নাও নতুন জামাইকেও খেতে বলো।”
ফরিদা খান বললেন তৃষাকে। অল্পস্বল্প খেলো ওরা। তারপর তাহমিকে নিয়ে নিজেদের বাড়ির দিকে এগোলো। সহন দুপুরে যাবে একেবারে। বিকেলবেলা আর অফিসে যাবে না।

অন্য দিকে বাসায় এসে কাউকে না দেখে অনিমা হাজারটা প্রশ্ন করে ফেলেছে আয়ানকে। বেচারা আয়ান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। দরজা খুলেই রেখেছে সবাই ফিরবে সেজন্য। অনিমা ড্রয়িং রুমে হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন মতবাদ প্রকাশে ব্যস্ত।
” শুনছো?”
” হ্যাঁ বলো। কান থাকায় তো বিপদে পড়ে গেছি! না থাকলে তো আর শুনতাম না।”
আয়ান নীরস গলায় বললো। অনিমা দিলো মুখ ভেংচি। এগিয়ে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আয়ানকে। ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে নিঃশ্বাস ফেললো বারকয়েক। উষ্ণ ছোঁয়ায় কেমন অস্থির লাগছে আয়ানের। এখন যদি কেউ এসে দরজার সামনে এসব দেখে কী ভাববে? আয়ান এসব ভেবে অনিমাকে নিয়ে সোফায় বসালো। নিজেও বসলো পাশে। অনিমা এতদিনে একটুও ফাঁকা জায়গায় পায়নি আয়ানকে। আজ তাই নিরিবিলিতে পেয়ে সর্বোচ্চ জ্বালিয়ে মারবে বলেই হয়তো প্রতিজ্ঞা করেছে সে।
” শোনো না, আসো একটা কিস করো।”
” কোথায় করবো বলো?”
” তোমার যেখানে ইচ্ছে। ”
অনিমার সহজ সরল প্রত্যুত্তরে আয়ান ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ইশারায় বক্ষ বিভাজনের দিকে দেখিয়ে বললো,
” ওখানে কিস করবো। আসো। ”
অনিমা তড়িৎ গতিতে সোফা থেকে উঠে অন্য দিকে গিয়ে দাঁড়ালো। আয়ান হাসছে ওর অবস্থা দেখে। সারাক্ষণ জ্বালিয়ে মারা মেয়েটা যদি উল্টো এমন করে তবে মজা লাগবার কথাই।
” খবরদার বললাম এদিকে আর ইশারা করবে না । অসভ্য হয়ে যাচ্ছ তুমি। কপাল,গাল,ঠোঁট থাকতে নজর অন্য দিকে যায় কেন? ”
আয়ান বসা থেকে উঠে ধীর পায়ে অনিমার দিকে এগোচ্ছে।
” নজরের কী দোষ বলো? এতো আকর্ষণীয় হলে তো সবদিকেই নজর যাবে। কাছে এসো লাভ বাইট দিচ্ছি। ”
” না, না আআআ।”
” ইয়েস। ”
আয়ান ঠোঁট টিপে হাসতে হাসতে অনিমার দিকে এগোচ্ছে আর অনিমা এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় দরজায় কারো উপস্থিতি পেয়ে হকচকিয়ে গেল দুজনই। সবাই এসে গেছে। দুপরে সবাই একসাথে কবজি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়া করলো। বিকেলের দিকে অনিমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে গেলো আয়ান। রাতে ছাঁদে সবাই মিলে আড্ডা দিবে বলে ঠিক করেছে সহন ও অনিক। আয়ান সেই মতো সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার আগে কিছু খাবার কিনে নিয়ে এসেছে। আগুন জ্বেলে সবাই বসে খাবে আর আড্ডা দিবে। যদিও শীতকালে আগুনের পাশে বসে মানুষ কিন্তু ওদের গরমেও এমন কাজ করা লাগবে।
সন্ধ্যা হতেই আয়ান,সহন,তাহমি,অনিক ও তৃষা ছাদে চলে এসেছে। আকাশে আজ ভরা পূর্নিমা, দূর থেকে দিনের আলোর মতো সবকিছু স্পষ্ট লাগছে। দুই বোনই থ্রিপিস পরে আছে আর ছেলেরা টিশার্ট আর লুঙ্গি / হাফপ্যান্ট। সবাই গোল হয়ে বসলো। অনিমাকে ভীষণ মিস করছে আয়ান। মেয়েটা থাকলে ভীষণ কথা বলতো। মাঝে মধ্যে তাকে বিব্রতও করতো বটে।
” কী ব্যাপার শালাবাবু? হবু বউকে মিস করছো বুঝি?”
সহনের প্রশ্নে অনিক হেসে উঠলো। আয়ান খানিকটা লজ্জা পেলো হয়তো।
” আরে না। চলো আমরা বরং আন্তাকসারি খেলবো। ”
তাহমি বললো, ” ঠিক আছে । কে প্রথমে গান গাইবে তাহলে? ”
তৃষা অনিককে দেখিয়ে বললো,” ডাক্তার সাহেব আগে শুরু করুন। তারপর দুলাভাই হুহ্। ”

” বেশ তাহলে শুরু করলাম–

তুমি মোর জীবনের ভাবনা
হৃদয়ের সুখের ডোলা
নিজেকে আমি ভুলতে পারি
তোমাকে যাবে না ভোলা

দুঃখ সুখের পাখি তুমি
তোমার খাঁচায় এই বুক
সারা জীবন নয়ন যেন
দেখে তোমার এই মুখ
কন্ঠে আমার দাও পরিয়ে
সোহাগের মিলন মালা

ভালোবাসার নদী তুমি
আমি তোমার দুই কুল
পাগল তুমি ফোটাও যে ফুল
আমি তোমার সেই ফুল
প্রেমের তরে সইবো বুকে
লক্ষ কাঁটার জ্বালা।”

” ল দিয়ে গান শুরু করো কেউ এবার। ”
আয়ান বললো। সহন একটু ভাবলো তারপর গান শুরু করলো সে,

“লাল লা লা লা লা লা লা লা লা

লা লা লা লা লা লা লা লা লা লা লা

যদি বারে বারে একই সুরে

প্রেম তোমায় কাঁদায়
তবে প্রেমিকা কোথায়

আর প্রেমই বা কোথায়?

যদি দিশেহারা ইশারাতে

প্রেমই ডেকে যায়
তবে ইশারা কোথায়

আর আশারা কোথায়?”

হাসি আনন্দে দুটো দিন সবাই একসাথে কাটাল। সহন যেহেতু বৃহস্পতিবার দুপুরে এসেছিল, শুক্রবার কাটিয়ে একেবারে শনিবারে অফিসে গিয়েছে। তাহমিকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে আয়ান। তৃষা ও অনিক যাবে আর একদিন পরে। তৃষা ও অনিকের সম্পর্কে আগের চেয়ে বন্ডিং ভালো হয়েছে। অনিক আগের মতো পাগলামি করে না এখন। আর না তো নিজে থেকে তৃষাকে বিরক্ত করে।

পড়ন্ত বিকেল। বাগানে দাঁড়িয়ে গাছগুলো পর্যবেক্ষণ করছে অনিমা। গাছ ভীষণ ভালোবাসে মেয়েটা। বিশেষ করে ফুলের গাছ। বাগানে হরেকরকম ফুলের গাছ আছে। তার মধ্যে গোলাপ,ডালিয়া, অপরাজিতা, মাধবীলতা অনিমার বেশি প্রিয়। তবে সবচেয়ে বেশি প্রিয় যে ফুল সেটা হলে বকুল। বাগানের পশ্চিম দিকে একটা বকুল গাছ আছে। অনিমা প্রতিদিন নিয়ম করে একবার বকুল গাছটার নিচে গিয়ে ফুল কুড়িয়ে নিয়ে আসে। কিছু ফুল বইয়ের ভাঁজে রাখে আর কিছু ফুল বালিশের পাশে। আসলে এই গাছটা অনিমার মা রোপণ করেছিলেন। সেই জন্য এই গাছের সংস্পর্শে গেলে কেমন একটা মানসিক শান্তি পায় মেয়েটা।

” অনিমা!”
আচমকা বাবার ডাকে চমকে উঠলো অনিমা। এই সময় খুব কম বাসায় থাকেন সত্তার শেখ। অনিমা বাবার দিকে এগোলো কয়েক কদম।
” জি বাবা। তুমি এখানে এলে যে? কিছু বলবে?”
মেয়ের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলেন সত্তার শেখ। কেমন জানি লাগছে উনাকে আজ। অনিমা বিষয়টা বুঝতে পেরে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
” বলছিলাম তুই বরং বিয়েটা এখুনি করে নে মা। এমনিতেই এক বছর পরে বিয়ে হবে। তারচে এখুনি কর। শুধু শুধু দূরে দূরে থেকে দু’জন কষ্ট পাবি কেনো!”
অনিমা জানে নিশ্চয়ই তার বাবা অন্য কোনো কারণে এতো তাড়াহুড়ো করছে।
” বাবা আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ”
” তবুও! ”
” ঠিক আছে। তোমার যা ভালো মনে হয়। আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য তোমার এতো তাড়া!”
অভিমানী সুরে বললো অনিমা। মেয়ের মাথায় চুমু খেলেন সত্তার শেখ। দু-চোখ ছলছল করছে উনার। অনিমা চুপ করে আছে।
” পারলে আজীবন আমার কাছে রাখতাম তোকে। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয় অনিমা। আমি সন্ধ্যায় যাবো আয়ানদের বাসায়। এখন কল দিবো আয়ানকে। আনুষ্ঠানিকভাবে আমি তো বিয়ের কথা বলতে যেতে হবে তো।”
” আচ্ছা বাবা।”

চলবে,

#বন্য_প্রণয়
#পর্ব_৩৯
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

দুই পরিবারের সবাই একসাথে বসে অনিমা ও আয়ানের বিয়ের দিন,তারিখ ঠিক করেছে। অনিমার বাবা বিয়েটা তাড়াহুড়ো করে দিতে চাইলেও শেষমেশ সেটা হলো না। কারণ অনিমার পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে আয়ান কোনোভাবে বিয়ে করতে রাজি না। বিয়ে করলে অবশ্যই অনিমার পড়ালেখার মন মানসিকতা একটু হলেও বিগড়ে যাবে। সেসব আয়ান চায় না। কেউ না জানুক আয়ান তো জানে না এখুনি বিয়ে হলে, অনিমা বই পড়ার বদলে সারাদিন তাকেই পড়ার চেষ্টা করবে! সেজন্য ঠিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই বিয়েটা হবে। তাই শেষমেশ সত্তার শেখও সেটাই মেনে নিয়েছেন। আয়ান সবকিছু সাইডে রেখে মনোযোগ দিতে বলেছে অনিমাকে। সংসার করাই একমাত্র লক্ষ্য না করে নিজের যোগ্যতা অর্জনের দিকেও মনোযোগী হতে হবে অনিমাকে।

দেখতে দেখতে মাস ছয়েক কেটে গেছে। তাহমির পেটটা আগের তুলনায় উঁচু হয়ে গেছে। সেই নিয়ে ভীষণ লজ্জা লাগে ওর। আগে যদিও তেমন লাজলজ্জা ছিলো না কিন্তু এই অবস্থায় কারো সামনে যেতে ভীষণ লজ্জা লাগে তাহমির। সেজন্য শ্বশুরের সামনে পরে না বললেই চলে। আর স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছে। সহন তো বলছিল চাকরি ছেড়ে দিতে। কিন্তু স্কুলের সবাই তাহমিকে খুব ভালোবাসেন। তাই যতদিন ইচ্ছে ছুটিতে থাকলেও দিনশেষে তাদের সাথে তাহমিকে রাখতে চান স্কুল কমিটি। তাহমিও তাই চাকরি ছাড়েনি।
ভর দুপুরবেলা। দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে ঘরে এসে বিছানায় বসলো তাহমি। আজ শুক্রবার হওয়ায় সহনও বাসায় আছে। সহনের খাওয়া শেষ হয়নি এখনো। শরীরটা কেমন অস্থির লাগছে তাহমির। শুয়ে,বসে কিংবা দাঁড়িয়ে কোনোভাবে শান্তি পাচ্ছে না। মাঝে মধ্যে মেজাজ হুটহাট বিগড়ে যাচ্ছে। নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগে তাহমির। হঠাৎ হঠাৎ মুড সুইং হয়।

” কী রে? এভাবে বসে আছিস কেনো? অস্বস্তি লাগছে? ”
সহনের প্রশ্নে ভাবনায় লাগাম টেনে সামনের দিকে দৃষ্টিপাত করলো তাহমি। সহন দাঁড়িয়ে আছে তাহমির একটু সামনেই। কিন্তু ভাবনার অতলে ডুবে থাকার জন্য সহনের উপস্থিতি টের পায়নি এতক্ষণ।
” একটু। ”
” হুম বুঝলাম। মন খারাপ করিস না। এ-সময় এমন হয়। সমস্যা নেই তোর যখন যা মন চায় তাই কর। ইচ্ছে করলে আমার চুলগুলো উগড়ে দিস আবার ইচ্ছে হলে জিনিসপত্র ভাঙচুর করিস। ”
সহন ভ্রু নাচিয়ে বললো। তাহমির কপালে বিরক্তি সূচক রেখা ফুটে উঠলো। এটাই সমস্যা! সামান্য সামান্য বিষয় বিরক্ত লাগে। মাঝে মধ্যে আবার খুব ভয় করে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক মতো না হয়?
” এসব ইচ্ছে করে না। তুই সর এসব কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না। ”
সহন ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চিরুনি আর একটা চুল বাঁধার ক্লিপ নিয়ে এসে তাহমির পেছনে বসলো। এলোমেলো হয়ে আছে সব চুল। ঠিকমতো নিজের যত্ন নিচ্ছে না মেয়েটা। সহন আস্তে আস্তে চুলগুলো আঁচড়ে দিতে লাগলো।

” থাক রাগ করিস না। ঠান্ডা হয়ে বস। চুলগুলো বেঁধে দিচ্ছি তারপর শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা কর বরং।”

” এতো কেয়ার করিস কেনো হুহ্? শুধু বেবির জন্য? ”
” নাহ। বেবি এবং বেবির মা দু’জনের জন্য। দুজনেই আমার কাছে ভীষণ ভীষণ প্রিয়।”
চুল বাঁধা শেষ করে ফের চিরুনি ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে আসলো সহন। তাহমি ততক্ষণে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়েছে। সহনও তাহমির পাশে শুয়ে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
” বরটা আমার এতো ভালো আগে বুঝলে কলেজে থাকতেই বিয়ে করে নিতাম রে।”
” ভাই রে ভাই তুই তখন এসব নিয়ে ভাবতি? তুই তো ছেলেদের সাথে মারামারি করতেই বিজি থাকতি।”
সহনের ভ্যাবাচেকা মার্কা চেহারা দেখে তাহমি খিলখিল করে হেসে উঠলো।
” আমি তোর বউ। ভাই হই না। তুই আমাকে ভাই ডাকলে ছেলেমেয়েও কিন্তু মা রেখে মামা ডাকতে পারে! ”
” হুঁশ! আমি তো এমনি বললাম। পুচকু সোনা এলে কি তখন এসব বলে ডাকবো?”
” কী জানি!”
” জানতে হবে না। বিশ্রাম নিয়ে নে সন্ধ্যায় আমার জন্য ফুচকা আর চটপটি আনতে হবে কিন্তু। ”
সহন শুয়ে তাহমির একটা হাত নিজের বুকের উপর রেখে বললো,
” ঠিক আছে মহারাণী, আপনার আদেশ শিরোধার্য করা হলো।”
তাহমি মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করলো। দুপুরে খাওয়ার একটু না ঘুমালে শরীর কেমন ম্যাজম্যাজ করে।

বিকেলের ম্লান রোদে পার্কের বেঞ্চে বসে আছে আয়ান ও অনিমা। অনিমার হাতে এতগুলো শপিং ব্যাগ ছিলো কিন্তু সেগুলো আপাতত আয়ানের হাতে অবস্থান করছে। বিষয়টা আয়ানের জন্য বেশ কষ্টকর। অনিমা শপিং করতে এসে আয়ানের সাথে মিট করে কিন্তু শপিং করার টাকা বাবার কাছ থেকে আনে সে। আয়ান তো বেকার! চাইলেও প্রেয়সীর শখ,আহ্লাদ পূর্ণ করতে পারে না। এজন্য মন খারাপ লাগছে আয়ানের। অনিমার চোখমুখ দেখে খুব আনন্দিত মনে হচ্ছে তাকে। আয়ান নিজে থেকে কিছু জিজ্ঞেস করবে না। কারণ অনিমা যা বলার নিজে থেকেই বলবে সেটা আয়ান ভালো করে জানে।
” কালকে দুপুরে বাসায় চলে এসো।”
প্রফুল্লচিত্তে বললো অনিমা। মন তার বেশ উড়ুউড়ু, মেজাজ ফুরফুরে। আয়ান কৌতুহল বশত শুধালো, ” কেনো?”
” আব্বু যেতে বলেছেন তাই। ”
” তাহলে যাবো। ”
” কেনো আমি বললে কি যেতে না? আগের মতো কি দুষ্টমি করি আমি? ”
” সেটা নয়। আঙ্কেল যখন ডেকেছেন তখন জরুরি কিছু বলার জন্যই। তাই যাবোই সেটা বললাম। ”
” হুম বুঝলাম। চলো এখন বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে এসো। এখন থেকেই বউয়ের ব্যাগ বইতে শেখো।”
বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো অনিমা। সাথে আয়ানও ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছে।
” সে আর বলতে? পুরুষ মানুষের অন্যতম ডিউটি তো শখের নারীর ব্যাগপত্র টানা। তো চলো আরকি!”
অনিমা হেসে সামনে এগোতে লাগলো। আয়ানের ভীষণ বিব্রত লাগে অনিমার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে। সামনেই বিয়ে অথচ এখন পর্যন্ত একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেনি সে। কোন বাবা তার মেয়েকে এরকম একটা বেকার ছেলের হাতে তুলে দিতে চায়? নেহাৎ অনিমার বাবা ভালো মানুষ এবং নিজের অঢেল সম্পত্তি রয়েছে বলেই আয়ানের সাথে বিয়ে দিতে হয়তো রাজি হয়েছেন। নিজের সবকিছু মেয়ের বলে আয়ানের চাকরি নিয়ে হয়তো মাথা ঘামাচ্ছেন না তিনি। কিন্তু কালকে যদি হঠাৎ সেসব নিয়ে কিছু বলে? তাহলে কী বলবে আয়ান? চাকরির জন্য যে চেষ্টা করছে না তেমনটা নয়।
” কী হয়েছে? এভাবে হাঁটছ কেনো?”
অনিনার কথায় সংবিৎ ফিরে পেলো আয়ান। আনমনে হাঁটার ফলে অদ্ভুত মনে হয়েছে অনিমার কাছে।
” কিছু না। চলো।”
অনিমা আর ভাবল না আর আয়ানের অন্যমনস্কতার কারণ কী!

রাত হলে নিস্তব্ধতায় ছেয়ে যায় গোটা পৃথিবী। নিশাচর পাখিরা উড়ে বেড়ায় যেখানে সেখানে। গ্রীষ্মের আগমনে উত্তপ্ত ধরণীর বুক। গরমে হাসফাস করছে প্রাণীকুল। এরমধ্যে আবার লোডশেডিং হয় প্রচুর। এমনও হয় যে ঘন্টায় দুই থেকে তিনবার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করে। সেই নিয়ে বিরক্ত তৃষা। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে রাত একটার সময় সে। শর্ট টপসের সাথে প্লাজু পরেছে সে,চুলগুলো উপরে তুলে খোঁপা করা। আকাশে অল্পবিস্তর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বৈশাখের কালবৈশাখী ঝড়ে প্রায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে এক একটা শহর কিংবা গ্রাম। কিন্তু তৃষাদের এদিকে বৃষ্টি হয় না তারপর ঝড়! ঘুমের ঘোরে পাশে হাত রাখতেই তৃষার উপস্থিতি টের না পেয়ে ঘুম ভেঙে গেলো অনিকের। চোখ ঢ’লে ঢ’লে বিছানা থেকে উঠে বসলো অনিক। বিদ্যুৎ নেই! গরমে ঘামিয়ে গোসল করিয়ে দিয়েছে অনিককে। বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতড়ে ফ্লাশলাইট জ্বেলে দিলো অনিক। না ঘরে নেই মেয়েটা! তবে কি বারান্দায় না-কি একা একাই ছাদে চলে গেলো আবার? ঘুমের বারোটা বাজিয়ে বিছানা থেকে উঠে বারান্দার দিকে এগোলো অনিক৷

চলবে,