বাঁধনহীন সেই বাঁধন অকারণ পর্ব-০২

0
363

#বাঁধনহীন_সেই_বাঁধন_অকারণ|২|
#শার্লিন_হাসান

“এই মেয়েকে বিয়ে দিলে দুইদিন পর শোনা যাবে জামাইকে খু’ন করে এসে কথায়,কথা লাগিয়ে ঝগড়া করছে। দুনিয়া উল্টিয়ে যাক তাও দেখবো এই মেয়ে ঝগড়াই করে যাবে।”

ভরা মজলিসে মেঘকে ক*টাক্ষ করে কথাটা বলেছিলো রুদ্র।

রুদ্রর কথাগুলো কর্ণধার ভেদ করতেই অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো মেঘ । তার ভাইয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠানে তাদের বাড়ীতে এসে তাকেই অপমান সূচক বাক্য শোনাচ্ছে এই রুদ্র। গতকাল থেকে আজকের দিনে ছেলেটার নামে প্রচুর প্রশংসা শুনেছে মেঘ। সেই সাথে শুনেছে তার গম্ভীরতা সম্পর্কে । এমন ক*টাক্ষ করে বললো কথা গুলো মেঘের গায়ে লেগেছে ভীষণ। কেনো জানি স্যার জিনিসটা কয়েক মূহুর্তের জন্য মাথা থেকে উড়ে গিয়েছিলো।

তখন আবার আফরোজ বেগম এসে মেঘকে ধমক দিলো। বিয়ে বাড়ীতে কেউ ছোট বাচ্চার সাথে পার্টিস্প্রে নিয়ে ঝগড়া করে?
ধমক শোনে পার্টিস্প্রে টা ছুঁড়ে কয়েকটা স্ল্যাং ইউস করে নিজের রুমে চলে গেলো মেঘ। সাথে রুদ্রর চৌদ্দগৌষ্ঠি উদ্ধার করছে সে।

মেহরাব অতিথিদের সাথে কথা বলে মেঘের রুমের দিকে গেলো। বারকয়েক কড়া নাড়লো। একমাত্র বোন তার বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে এভাবে রুমে বসে থাকবে কেমন বেমানান লাগে। মেঘের দরজার সামনে এসে কয়েকবার নক করলো মেহরাব। কোন রেসপন্স করেনি মেঘ। আর ও কয়েকবার ডাকতে দরজা খুলে দিলো মেঘ।
মেয়েটা সামান্য বিষয় নিয়ে ও কান্না করেছে।

‘বোন চল রাখি তোর জন্য অপেক্ষা করছে। এখন অব্দি খায়নি তোর সাথে বসে খাবে বলে।’

‘রুদ্র স্যারকে বলবে আমাদের বাড়ীতে যাতে আর না আসে। হোক তোমার বন্ধু বা রিলেটিভ। এই ছেলে আসলে আমাকে আম্মুর কাছে বকা শোনাতে দুই বার ও ভাবে না।’

‘আসবে না। এখন চল তুই?’

‘চলো!’

মেহরাব মেঘকে একবাহু দিয়ে হালকা জড়িয়ে ধরে হাঁটতে লাগলো।
রাখি খাবার টেবিলে বসে আছে সাথে তার কাজিন মহল ও আছে। সবাই মেঘের জন্য ওয়েট করছিলো। মেহেরাব মেঘকে এনে রাখির পাশের চেয়ারে বসালো। তাদের টেবিলে রুদ্র খাবার সার্ভের দায়িত্বে আছে। মেঘকে আসতে দেখে নাক মুখ কুঁচকালো রুদ্র। রাখি মেঘকে দেখে আলতো জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ননদিনী সামান্য বিষয় নিয়ে কেউ কান্না করে? আর এতো রাগ করে?’

রাখির কথার জবাবে রুদ্র বললো,

‘ছোট বেলা থেকে ছিদকাদুনি মনে হয় তোমার ননদ।

‘আপু তোমার ভাই বেশী করছে কিন্তু! আমি চলে যাবো এখন।’

‘ভাইয়া! তুমি কিছু বলো না। ওকে চিকেনের দু’টো লেগ পিস দিও। তাহলে শান্ত হয়ে যাবে।

রাখির কথায় রুদ্র মাথা নাড়িয়ে মেঘকে চিকেনে দু’টো লেগ পিস দিলো।

‘বাচ্চা চিকেনের লেগ পিস নিয়ে খুশি থাকো। একদম কান্না করবে না হ্যাঁ? প্রয়োজনে আরো দেবো।’

রুদ্রর কথায় টেবিলে হাসির রোল পড়ে গেলো। শুধু মেঘ হাসলো না। চুপচাপ খেয়ে সরে আসলো ভিড় থেকে।
তাদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হৃদ, লিমা বিদায় জানিয়ে চলো গেছে। রাখির সাথে মেহরাব যাবে রাখিদের বাড়ীতে। মেঘকে মেহরাব চেন্জ করে হালকা জামা পড়ে রেডি হতে বলে দিয়েছে। এখানের জামেলা মিটমাট হতে চৌধুরী বাড়ীর বাকী মেহমান চলে গেছে। শুধু রুদ্র এবং তার কাজিন আরিশ রয়ে গেছে। তারা দু’জন মেহরাব, রাখির সাথে যাবে। মেঘ যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলো। ভারী লেহেঙ্গা ছেড়ে ব্লাক কালার থ্রি-পিস পরিধান করলো। মেহরাব ও ফ্রেশ হয়ে চেন্জ করে নিয়েছে। তারা চারজন তালুকদার বাড়ী থেকে চৌধুরী বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা দিলো। চৌধুরী বাড়ীর কারে করে তারা পাঁচ জন যাবে। আরিশ ড্রাইভিং করছে তার পাশের সীটে রুদ্র বসেছে। মেঘ মেহেরাব, রাখির সাথে পেছনে। গাড়ী স্টার্ট দিয়ে আরিশ মেঘকে দেখে খোঁচা মেরে বললো,

‘গরম লাগছে প্রচুর! কী জানি চৌধুরী বাড়ীর গেট দিয়ে গাড়ী প্রবেশ করবে নাকী আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে দৌড়াবে? যদি আমার গাড়ী পুড়ে যায় তাহলে মেহরাব তালুকদারকে সাথে তার বোন মারশিয়া জাহান মেঘকে গ্রেপ্তার করা হবে।’

আরিশের কথার জবাবে মেহরাব বললো,

‘গাড়ী পুড়বে না। এসি ছাড়ার পর তোর গরম লাগছে নির্ঘাত তোর শরীরে কারেন্ট বেশী আরিশ।’

‘কারেন্টের আশে-পাশে ঘেঁষে দেখি আমার শরীরে ও কারেন্ট চলে এসেছে।’

‘গাড়ী চালাচ্ছেন মন দিয়ে গাড়ী চালান। বেশী বকবক করলে গাড়ী থেকে ফেলে দেবো মিস্টার আরিশ চৌধুরী।’

ব্লুটুথ কানে গুঁজতে, গুঁজতে কথাটা বললো মেঘ।
মেঘের কথায় আরিশ আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ গাড়ী চালাতে লাগলো।
রুদ্র চুপচাপ, পেছনের বিবাহিত দম্পতি ও চুপচাপ। মেঘ গান শোনছে সাথে বাইরে দেখছে।
সাথে রুদ্রর এট্টিটিউড দেখে মুখ বাঁকাচ্ছে। এই ছেলে একটা শব্দ ও করেনি গাড়ীতে বসে। সে আছে নাকী নেই কেউ বুঝতে ও পারবে না।

‘কী যে এট্টিটিউড বাবা! একটু সাদা চামড়া আর পড়াশোনায় ভালো স্টুডেন্ট এখন চাকুরী নিয়ে স্টাবলিস্ট হয়েছে এই তো? ওহ্! ভুলে গেলাম যে উনার গার্লফ্রেন্ডের কথা। উনি তো আবার এক নারীতে আসক্ত! ফেসবুকের বায়ো দেখে তো তাই জানলাম।’

মেহরাব রাখি পূর্ব পরিচিত। রুদ্রর সাথে মেহরাবের বন্ধুত্ব অনেক পুরোনো সাথে রাখির সাথে রিলেশনের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়ে এখন তারা নতুন জীবনে পা রেখেছে। আরিশ তাদের এক ব্যাচ জুনিয়র। রুদ্রর মেঝো চাচার ছেলে। তবে তারা বন্ধুর মতোই মিশে। তাদের মাঝে রুদ্র একটু ভিন্ন টাইপ।

*****

চৌধুরী বাড়ীতে আসতে রাখির দাদী,কাকীমা কিছু নিয়ম পালন করলেন নতুন জামাইয়ের। রুদ্র সোজা নিজের রুমে চলে গেছে। সচরাচর এই বাড়ীতে আসে না রুদ্র। বোনের বিয়ে উপলক্ষে এসেছে তাও হলুদের দিন বিকেলে। মেঘ মেহরাবের সাথে আছে। তাদেরকে লিভিং রুমে বসিয়ে আরিশের মা অন্তি শরবতের গ্লাস ট্রে-তে করে আনলেন। সাথে হরেক রকমের ফল-নাস্তা দিলেন।

মেঘ শরবতের গ্লাস হাতে কয়েক চুমুক দিয়ে বাড়ীটা পর্যবেক্ষণ করলো। রাখির সাথে তার পূর্ব পরিচয় ছিলো না। বিয়ের কথা পাকাপোক্ত হওয়ার পর ফোনে দুইবার কথা হয়েছে। রুদ্রর সাথে পরিচয় তো দুইমাসের তাদের কলেজে নতুন জয়েন হয়েছে সেই তগিদে। মেঘ জানতো রাখির একটা ভাই আছে। তবে রুদ্র যে রাখির ভাই সেটা বিয়ের দিন জেনেছে। এই বিয়ে নিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটা পোহাতে হয়েছে মেহরাবকে। তার অন্যতম কারণ রাখির সৎমা। সাথে তাদের পরিবারের কিছু পাস্ট আছে সেজন্য।

মেঘ এক টুকরো আপেল নিয়ে ও সেটা রেখে দিলো পিরিচে। এই মূহুর্তে বসে থাকার ধৈর্য তার নেই। হেঁটে, হেঁটে পুরো বাড়ীটা দেখতে পারলে শান্তি হতো তার।

মেহেরাব ফ্রেশ হওয়ার জন্য রাখির সাথে তার রুমে গিয়েছে। তার পেছনে আরোহি রাখির চাচাতো বোন এসে মেঘর সাথে কথা বলতে আরম্ভ করলো। তাদের কয়েকঘন্টা আগে ও দেখা হয়েছে। আরোহী মেঘকে নিয়ে তার রুমে চলে গেলো।

মেঘ ফ্রেশ হয়ে আরোহীর সাথে বেলকনিতে গেলো। গোধুলির শেষ লগ্নে তারা সূর্য ডুবা দেখছে। ভাগ্যিস আরোহীর বেলকনির সামনে উন্মুক্ত ফাঁকা মাঠ। যেখানে সবুজ ছোট,ছোট ঘাস। নেহাৎ গাছপালা নেই সামনে নাহলে বেলকনিটা অন্ধকারে ডুবে যেতো সাথে এতো সুন্দর গোধূলি দেখা যেতো না।

মাগরিবের আজান হতে মেঘ নামাজ আদায় করে নিলো। আরোহীর সাথে সন্ধ্যায় লিভিং রুমে বসেছে। সাথে আরোহীর ভাই অর্ণব চৌধুরী ও আরিশ চৌধুরী ও বসেছে। মেঘের সাথে অর্ণবের বেশ ভাব জমেছে। তবে রুদ্রর দেখা পায়নি মেঘ। আর না রুদ্রর মা বাবার দেখা পেয়েছে।

তখন আরোহীর দাদী এসে তাদের সাথে বসলেন। মেঘকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলেন ফাইজা চৌধুরী।
কথার মাঝে মেঘ জিজ্ঞেস করলো,

‘দাদী তোমার বড় ছেলেকে তো দেখলাম না। মানে ভাবীর বাবাকে। ভাবীর মাকে ও দেখলাম না।’

‘ওরা ওদের বাড়ীতে আছে মেঘ।’

‘এটা তাহলে কার বাড়ী দাদী?’

‘এটা অর্ণবের বাবা আমার ছোট ছেলে আরিয়ান চৌধুরী এবং মেঝো ছেলে আফিয়ান চৌধুরীর বাড়ী।’

‘তাহলে রুদ্র স্যার এখানে কী করছে?’

‘রুদ্র তোমার স্যার হয় মেয়ে?’

‘হুম! আমাদের কলেজের ক্যামিস্ট্রির প্রফেসার।’

‘রুদ্রর যেহেতু জব হয়েছে এবার আলিশাকে বিয়েটা করে নিবে। ওর বাড়ীতে চলে যাবে। এখন যেতো কিন্তু রাখির শ্বশুর বাড়ীর লোকজন আসবে। অতিথি আপ্পায়ন কে করবে?’

‘ওহ! আলিশা বুঝি ওনার উডবি?’

‘হুম! ওদের তো তিন বছরের সম্পর্ক।’

‘ওহ্!’

মেঘ আর কথা বাড়ায়নি খানিক অবাক হলো। এই গম্ভীর মানুষটা ও কাউকে ভালবাসে? ওই আপুটা কীভাবে জানি স্যারকে ইমপ্রেস করলো। বলতে হবে আপুটার ট্যালেন্ট আছে। আর স্যারের বাবা মা থাকতে আলাদা থাকে কেন? কিশোরি মনে এক ঝাঁক প্রশ্ন এসে ভীড় করলো। সাথে নিজের কিছু ভাবনার প্রতি হাসি পেলো।

******

সবাই ডিনার করে যে যার রুমে চলে গেছে। রুদ্রকে শুধু ডিনারের সময় রুম থেকে বেরুতে দেখেছে মেঘ। তবে কারোর সাথে কোন কথা বলতে দেখেনি। চুপচাপ নিজের খাওয়া নিজে খেয়ে চলে গেছে রুমে। রুদ্রর এমন আচরণ প্রশ্ন জাগে মেঘের মনে। আরোহীকে জিজ্ঞেস করে কিছু জানা যাবে! ভাবতে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটলো। নিজের মনের অজান্তে রুদ্রকে নিয়ে তার এতো আগ্রহ! যার উত্তরটা মেঘের অজানা। রাগী একগুয়ে মেয়েটা কাউকে নিয়ে ভাবছে। এটা অন্যরকম ব্যাপার। যেখানে কেউ খু*ন করে মা*রা গেলে ও ভাবে না মেঘ,যে কেনো খু*ন হলো। সেখানে রুদ্রর সামান্য বিষয় নিয়ে এতো মাথা ঘামানো।

আরোহীর রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ। তার পেছনে আরোহী দুই মগ কফি নিয়ে হাজির হলো। এক মগ কফি মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘আমি বানিয়েছি! খেয়ে অবশ্যই বলবে কেমন হয়েছে।’

আরোহীর কথায় মেঘ মুচকি হেঁসে কফির মগ হাতে নিলো। এক চুমুক দিয়ে প্রশংসা করলো। এটা ওটা বলছে দু’জন। তাদের কলেজের কিছু ঘটনা নিয়ে কথা বলছে। দু’জন সবে কলেজে পা রেখেছে ছয়মাস হবে। কয়েকদিন পর আবার ইয়ার ফাইনাল। করোনার জন্য লেট করে কলেজে ভর্তি আবার তাড়াতাড়ি ইয়ারফাইনাল। মেঘ যে স্কুলে মাধ্যমিক দিয়েছে সেটার পাশের কলেজটায় উচ্চমাধ্যমিকের জন্য ভর্তি হয়েছে। স্কুল,কলেজের টিচার মিলে দু’টো পরিচালনা করেন। মৌনতা বজায় রেখে আরোহী বললো,

‘মেঘ তোমার কলেজে কোন পছন্দের কেউ আছে নাকী?’

মাথার নাড়িয়ে না বোধক বুঝালো মেঘ । ঠোঁটে কোণে তার লাজুক হাসি। আরোহী তার হাসি দেখে কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই বললো,

‘আছে নিশ্চয়ই কেউ! যদি না থাকতো অবশ্যই তুমি মুখে বলতে। সাথে তোমার কন্ঠে অন্যরকম ভাব থাকতো। বলো,বলো কে তোমার সেই মানুষ?’

‘বললে কী তুমি তাকে এনে দেবে?’

‘না হয়ত এনে দিতে পারবো না। তবে প্রস্তাব পাঠাতে পারি তার বাসায়।’

‘কেউ নেই মেয়ে। তবে একজন আছে যার প্রতি আমার ডিপার্টমেন্ট বা ইয়ারের বলো এমনকি সিনিয়র আপুরাও অনেকে উইক! আমি না।’

‘নিজেরটা ওদের নামে চালিয়ে দিচ্ছো। আই আন্ডাস্ট্যান্ড!

‘সেসব ছাড়ো না আরোহী। চাঁদটা দেখো?’

কথাটা বলে চাঁদের দিকে ইশারা করলো মেঘ। আরোহী ও চাঁদ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সময়টা ফাল্গুনের শেষের দিকে। ফাল্গুনের দক্ষিণা বাতাস বইছে। বেলকনির সামনের জায়গাটা যেহেতু ফাঁকা, শো,শো করে বাতাস আসছে। দু’জনের মাঝে পূর্ণ নিরবতা বিরাজমান।
মেঘের ফাল্গুন মাসটা ভালোই লাগে। তবে তার থেকে বেশী শ্রাবণ মাসটা ভালো লাগে। মেঘলা আবহাওয়া সাথে পূর্ণিমার চাঁদ। কখনো বা ঘন কালো মেঘের ভেতরে লুকিয়ে থাকা চাঁদটা তার নজরে পড়ে। তখন বেলকনিতে বসে চাঁদ দেখে সময় কাটে। শ্রাবণে বৃষ্টির পর আলাদা একটা কাঁচা মাটির গন্ধ আসে চারদিক থেকে। সব দিক দিয়ে বলতে গেলে মেঘ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে শ্রাবণ মাসের। প্রত্যেক বারের মতো এবারের শ্রাবণ মাসটা ও সে উপভোগ করবে। তবে কিছু একটা মনে আসতে হৃদয়ে ব্যথা অনুভব হলো। মৌনতা বজায় রেখে মেঘ আরোহীকে জিজ্ঞেস করলো,

‘আচ্ছা স্যার এমন গম্ভীর কেনো?’

‘মানুষের চঞ্চলতার পেছনে দু’টো কারণ থাকে বলে আমি মনে করি। প্রথমত সে বাবা-মায়ের আদুরে! দু:খ তাকে ছুঁতে পারে না। দ্বিতীয়ত মানুষ চঞ্চল থাকে পরিস্থিতির চাপে! বাস্তবতার ছাপ তার মাঝে সুস্পষ্ট হয় অনেক সময়। সেই পরিস্থিতির কষ্ট লুকাতে চঞ্চলতার অভিনয় করে থাকে। আর গম্ভীরতার পেছনে তো কারণে অভাব নেই। কেউ বাবা-মা হা’রিয়ে একা হয়ে যায়, অল্প বয়সে বাস্তবতার ছোঁয়া লেগে যায় জীবনে। একা থাকে, নিজেকে গম্ভীর করে ফেলে। আবার কিছু কষ্ট যেগুলো শেয়ার করতে পারে না, কারোর কাছে,। কিছু গোপন দু:খ! লুকানোর ভালো উপায় নিজেকে একা রাখা, গম্ভীর হওয়া! তাতে করে লোকে জানতে চায় না ভেতরে কী চলছে। বলে লোকটা এমনই। হাসি-খুশি থাকলে ও গম্ভীর। কষ্টে থাকলে ও গম্ভীর বুঝার উপায় নেই।’

‘ তুমি কেমন কথা বললে আরোহী? আমায় যে গোলকধাঁধায় ফেলে দিলে। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি স্যারের গম্ভীরতার পেছনের কারণ আর তুমি আমাকে গোলকধাঁধা বলছো!’

‘এই গোলকধাঁধার ভেতরে তোমার প্রশ্নের উত্তর আছে মেঘ। এখন খুঁজতে পারে তবে সবটা জানতে পারবে না। রুদ্র ভাই কখনো কিছু শেয়ার করে না। না তার পার্সোনাল লাইপ না তার ফ্যামিলি! আই মিন জেঠু,জেঠিমাকে নিয়ে। এখন খুঁজতে চাইলে শুধু টাইম ওয়েস্ট হবে। তার চেয়ে অপেক্ষা করো এই গোলকধাঁধার উত্তর নিজে তোমার কাছে পরিষ্কার হয়ে আসবে।’

#চলবে