বাড়ির নাম বৃষ্টিলেখা পর্ব-১০

0
528

#বাড়ির_নাম_বৃষ্টিলেখা
#পর্ব-১০
বৃষ্টি ফোন কানে নিয়েই দাঁড়িয়ে রইলো। ওপাশে আবিরও কোনো কথা বলছে না। পলিন বলল,

“বুবু বিল বাড়ছে তো। ”

বৃষ্টি গলার স্বর স্বাভাবিক করে বলল,

“তুমি বাড়ি আসবে কবে?”

আবির যন্ত্রের ন্যায় জবাব দিলো, এক্ষুনি।

বৃষ্টি কঠিন গলায় বলল, যে ঝামেলা পাকিয়েছো সেটা এসে নিজে সামাল দাও।

“আচ্ছা।”

বৃষ্টি ফোন রেখে দিলো। আবির এখনো ফোন টা কানে ধরে বসে আছে। নিজের ভেজা গালে হাত দিয়ে অবাক হলো। কখন যে চোখ দিয়ে পানি ঝড়লো টেরই পেল না। আজকের দিনটায় ওর জীবনে এরকম কিছু ঘটবে সেটা তো কল্পনায়ও ভাবতে পারে নি৷ আবির ফোন রেখে হাত বাড়িয়ে পানির জগ টা নিলো। হাত কাঁপছে। আনন্দ নাকি উত্তেজনায় সেটা বুঝতে পারছে না। অল্প পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো। ভাগ্যিস রুমমেট রা কেউ নেই তাহলে লজ্জায় পড়ে যেত।

আবিরের ধাতস্থ হতে অনেক সময় লাগলো। ওর জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটছে যেগুলো ঘটার কথা না। সব কিছু ভালোয় ভালোয় হয়ে যাক তবেই নিশ্চিন্ত।

***
পলিন রিকশায় উঠে বৃষ্টির দিকে তাকালো। বৃষ্টির মুখ টা থমথমে। মনে হয় রেগে আছে। পলিন আর ঘাটালো না। কিন্তু ওর যে কথা না বলতে পারলে ভালো লাগে না! তাই বলল,

“বুবু এখন কী করবে?”

“কিসের কী করব?”

“টুকু ভাই?”

“ওই ব্যটা নিজে সামলাম। যাকে সঙ্গে নিয়ে বিয়ে করেছে সে এসে সামলাক। আমি কিছু জানিনা।”

পলিন নিঃশব্দে হাসলো। বৃষ্টি বলল,

“হাসছিস কেন!”

“আবির ভাই সারাজীবন টুকু ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। টুকু ভাইয়ের কারনে আজ তুমি তার সঙ্গে কথা বললে। আমার তো মনে হয় আবির ভাই টাকা পয়সা জমিয়ে টুকু ভাইকে তাজমহল টাইপ কিছু বানিয়ে দিবে। নাম দিবে টুকু মহল। ”

পলিন ভেবেছিল বৃষ্টি খুব বকা দিবে। কিন্তু সেটা না করে ও হেসে ফেলল। পলিনও হাসলো। মনে মনে আবিরের কথা ভাবলো। ওই বেচারা বেঁচে আছে কী না কে জানে! খুশিতে মরেও তো যেতে পারে!

***
ওরা স্বাভাবিক ভাবেই বাড়িতে ঢুকলো৷ বৃষ্টি পলিন কে বলল,

“এক্ষুনি কিছু বলিস না কেমন! আরেকটু ভেবে বলা যাবে।”

পলিন মেনে নিলো। টুকুকেও আপাতত চুপ থাকতে বলা হয়েছে। টুকু অবশ্য মানতে বাধ্য হয়েছে। তবে তার মুখ দেখে বোঝা গেছে যে চুপ করে থাকতে খুব কষ্ট হবে।

***
পলিন টুকুর সঙ্গে আবারও কথা বলল। টুকু বেশীক্ষন চুপ থাকতে পারে নি। পলিন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সব কথা পেট থেকে বের করেছে। টুকুর থেকে সব কথা শুনে বৃষ্টিকে বলল,

“বুবু টুকু ভাইয়ের কেস তো বাবা, মায়ের মতো। শুনবে?”

“কী কেস?”

“টুকু ভাই যে মেয়েটাকে বিয়ে করেছে সে খুব অসহায়। একটা গার্মেন্টসে চাকরি করে। বোনের বাসায় থাকে। সেখানে দুলাভাই টা খুব অসভ্য। একদিন তো অসভ্যতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে মেয়েটা টুকু ভাইয়ের কাছে এসেছে।”

বৃষ্টির মন নরম হলো। বলল,

“ইশ! মেয়েটা এখন কোথায় আছে বলেছে?”

“বলেছে কোন এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে এসেছে। কার আত্মীয় জানিনা। ”

বৃষ্টি বলল,

“ছোট মা’কে ব্যাপার টা জানাবো?”

“আমারও তাই মত। মাকে জানাও।”

বৃষ্টি বলল, না থাক।

“কেন?”

“আবির ভাই আসুক। আগে তার সঙ্গে ব্যাপার টা নিয়ে আলোচনা করে নেই। সেই তো নষ্টের মূল।”

পলিন হেসে ফেলল শব্দ করে।

বৃষ্টি বলল, তুই সব কথায় এমন হাসিস কেন?

“তোমার মুখে আবির ভাই শুনতে কেমন যেন লাগছে। তুমি বরং আবির ডেকো।”

“কী আশ্চর্য! আবির ডাকব কেন!”

“আবির ভাই তো তোমার সত্যিকারের ভাই না। ”

“তুই খুব ফালতু কথা বলিস পলু। ভুলে যাস যে আমি তোর বড়।”

পলিন ঠোঁটে আঙুল চেপে বলল, আর একটা কথা বলে চুপ করে থাকব।

“কী?”

“তুমি কী আবির ভাইয়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলবে?”

বৃষ্টি রক্তচক্ষু নিয়ে পলিনের দিকে তাকালে পলিন হেসে ফেলল। বলল,

“আচ্ছা চুপ থাকলাম। ”

****
সন্ধ্যেবেলা পলিন কে পড়াতে আতিফ এসেছে৷ ওর অবশ্য তাতে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কারণ ও নিশ্চিত আতিফ ও’কে দুদিনের বেশী পড়াতে পারবে না। কারন পলিন কে অংক বেটে খাওয়ালেও ও পারে না। আতিফ আসতেই পলিন জিজ্ঞেস করলো,

“কেমন আছেন?”

আতিফ একটু সরু চোখে তাকালো। তারপর বলল,

“ভালো। ”

“আপনাকে কী স্যার বলে ডাকব নাকি ভাইয়া?”

“তোমার যা ইচ্ছে।”

“তাহলে ভাইয়া বলে ডাকি। আপনার চেহারা দেখে স্যার মনে হয় না।”

এই কথার উত্তরে আতিফ কিছু না বলে বলল,

“এ স্কয়ার প্লাস বি স্কয়ারের সূত্র বলো তো।”

পলিনের মুখ টা শুকিয়ে গেল। বলল,

“সূত্র পারি কিন্তু আপনাকে দেখে ভুলে গেছি।”

“আমাকে দেখে নাকি স্যার মনে হয় না। তাহলে ভুলে গেলে কেন!”

“আসলে সূত্র বলতে পারি না। তবে লিখতে পারি।”

“তাহলে লিখে দেখাও। ”

পলিন সত্যি সত্যি লিখে দেখালো। আতিফ বলল,

“পলিন দুটো কথা মন দিয়ে শোনো।”

“আচ্ছা শুনান।”

“আমি যতক্ষন পড়াব ততক্ষন পড়া বাদে অন্য কথা বলবে না। আর দ্বিতীয় কথা হলো মনোযোগ দিয়ে পড়বে। ”

“আচ্ছা। তবে পড়ানো শেষ হলে কী আপনার সঙ্গে কথা বলা যাবে?”

আতিফ এক পলক পলিন কে দেখলো। পলিন মিটিমিটি হাসছে। এই মেয়ে চূড়ান্ত রকমের বদমায়েশ সেটা এই ক’দিনে বুঝে গেছে। তবে আতিফ কে ও যতটা বোকা ভেবেছে ততোটা বোকা আতিফ না। সেটাও এবার টের পাবে এই মেয়ে। আতিফ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে পড়াশোনার বাইরে ওর সঙ্গে একটা কথাও বলবে না। তাছাড়া ওর মা কতো আশা করে পড়াতে দিয়েছে সেটারও মান রাখা উচিত।

প্রথম দিন পড়ানোতে ঝামেলা হলো না। আতিফ কে চা দেয়া হলে আতিফ সেটা খেলো না। পলিন চোখ কপালে তুলে বলল,

“একি আপনি চা খাবেন না?”

“না।”

“খাবার নষ্ট করতে নেই। খাবার যারা নষ্ট করে তারা ইবলিশ শয়তানের আত্মীয়। ”

“তাহলে তুমি খেয়ে নাও। আর ইবলিশ শয়তানের আত্মীয় হতে আমার সমস্যা নেই।”

পলিন বলল,

“আমি চা খাই না। আপনি খেয়ে নিন। আজ চা আমি বানাই নি। ভয় নেই।”

আতিফ আড়চোখে তাকালো। পলিন মিটিমিটি হাসলো। আতিফ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ভয়ে ভয়ে চুমুক দিলো। পলিন হেসে ফেলল। আতিফ বলল,

“হাসছো কেন?”

“আপনি এমনভাবে চা খাচ্ছেন মনে হচ্ছে যেন বিষ খাচ্ছেন।”

“তুমি কী সবসময় ই বেশী কথা বলো?”

“না। যারা ভাবে আমার সঙ্গে কথা বলবে না তাদের সঙ্গে বলি। একটু ভাব দেখাই যে গায়ে পড়া মেয়ে।”

আতিফ অবাক হলো। এই মেয়ে ফেল্টুস হলে কী হবে! গুছিয়ে কথা বলতে ওস্তাদ।

চলবে….