বাড়ির নাম বৃষ্টিলেখা পর্ব-০৯

0
390

#বাড়ির_নাম_বৃষ্টিলেখা
#পর্ব-৯
টুকুর বাড়ি আসার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। মাঝেমধ্যে দুইমাসেও দেখা যায় না। আবার মাঝেমধ্যে কী না মাসে দুবারও এলো। এই মাসে এসে দুদিন থেকে চলে গেছিলো এখন আবার এলো। বাড়ির লোক ওর এই আচরণে অভ্যস্ত। তাই কেউ কোনো প্রশ্ন করলো না। টুকু বাড়ি ফিরলো সকালে। ফিরে কিছুক্ষনের মধ্যেই বৃষ্টির খোঁজ করলো। বৃষ্টি কলেজে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছিলো। টুকুর ডাক পেয়ে ছুটে এসে বলল,

“খুব জরুরী কিছু বলবে? কলেজ থেকে ফিরে শুনি?”

টুকু মাথা চুলকে বলল,

“আমি তোর সঙ্গে কলেজ অবধি গেলে সমস্যা হবে? কথা বলতে বলতে যেতাম আর কী….

“না সমস্যা কিসের! চলো যাই।”

টুকুর কথা বলা নিয়ে বৃষ্টি খুব একটা মাথা ঘামালো না। টুকু নির্ভেজাল মানুষ। লোকজনকে যেমন ঝামেলা দেয় না তেমনি নিজেও ঝামেলা করে না। বৃষ্টি ছোট থেকেই দেখে এসেছে এমন।

রিকশা খুঁজতে গেলে টুকু বলল,

“তুই যদি আজ কলেজে না যাস তাহলে কী খুব সমস্যা হবে?”

বৃষ্টি এবার সরু চোখে তাকালো। বলল,

“ব্যাপার টা কী টুকু ভাই? ”

টুকু মাথা চুলকে বলল, চল হাটতে হাটতে বলি।

হাটা শুরু করলেও টুকু প্রথমে চুপ করে রইলো। বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো,

“তুমি কী কোনো বিপদে পড়েছো টুকু ভাই? ”

“না না সেরকম কিছু না। আসলে…

“একটু পরিষ্কার করে বলবে!”

টুকু হাটতে লাগলো। ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

“একটা মেয়ে বুঝলি….

বৃষ্টি অবাক হলো। এতক্ষনে ব্যাপারটা খানিক বুঝতে পারলো। টুকু একটা মেয়ের কথা বলবে বলে এতো সংকোচ করছে। বৃষ্টি হেসে ফেলল। বলল,

“মেয়েটা দেখতে কেমন?”

টুকু লজ্জা পেল। বলল,

“ভালোই।”

“আর নাম?”

“নিলুফার।”

“বাহ! চমৎকার নাম। বাড়িতে বিয়ের কথা বলতে হবে তাই তো?”

টুকু চুপ করে রইলো। বৃষ্টি আশ্বস্ত করে বলল,

“আরে চিন্তা কোরো না। আমি ছোট মাকে বলব।”

টুকু গলা খাকারি দিয়ে বলল,

“বৃষ্টি আমি বিয়ে করে ফেলছি।”

বৃষ্টি বজ্রাহত হয়ে তাকিয়ে রইলো। টুকু বলল,

“দুদিন আগে।”

“তোমার মাথা ঠিক আছে তো!”

“একটু সমস্যায় পড়ে গেছিলাম বুঝলি। তাই তাড়াহুড়ো করে…..

“বাড়ির লোককে না জানিয়ে বিয়ে করেছো আবার সেটা আমাকে বলতে আসছো। বাড়িতে কেন বলছো না!

“বাড়িতে কিভাবে জানাবো… আমার তো ভয় করে!”

বৃষ্টির মেজাজ খারাপ হলো। বিয়ে করার সময় ভয় পায় নি অথচ বিয়ের খবর জানাতে ভয় পাচ্ছে।

বৃষ্টি কঠিন গলায় বলল,

“একা একা বিয়ে করতে পারলে তাতে ভয় হলো না। আর এখন ভয় পাচ্ছো! অদ্ভুত! ”

“একা না। আবির ছিলো সঙ্গে। ”

বৃষ্টি হতভম্ব গলায় বলল,

“কী?”

“হ্যাঁ। ”

বৃষ্টির মাথা কাজ করছে না। আবির শয়তান টা টুকু ভাইয়ের বিয়ে দিয়েছে। না জানি সামনে কতো ঝামেলা অপেক্ষা করছে। বৃষ্টি বলল,

“রিকশা ডাকো টুকু ভাই। পলুর স্কুলের দিকে চলো। আমার মাথা কাজ করছে না।”

****
বৃষ্টির বাবা ওকে স্কুলে দেখে বলল,

“কি রে তুই এখানে? ”

বৃষ্টি বলল,

“বাবা কলেজ থেকে একটা বই কিনতে বলেছে আর্জেন্ট। আজ ই লাগবে। তাই পলুকে নিয়ে যাব ভাবছিলাম।”

“ওই বদমায়েশ টাকে যখন তখন নিতে আসবি না৷ পড়ালেখায় ঠনঠন। এ প্লাস বি হোল স্কোয়ারের সূত্র জিজ্ঞেস করলে আসমানে তাকিয়ে থাকে। আবার মাইর খাবার সময় বলে হাতে না পিঠে মারেন। আজ যেতে দিচ্ছি কিন্তু এরপর আর আসবি না।”

“আচ্ছা।”

পলিন বৃষ্টিকে দেখে হেসে বলল,

“ভালো হয়েছে এসেছো৷ এখন আচাড় খাওয়াও।”

“এই তুই এ প্লাস বি হোল স্কোয়ারের সূত্রও পারিস না?”

“পারি কিন্তু স্যার রা জিজ্ঞেস করলে ভুলে যাই।”

“একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে। ”

“তোমার ভাঙা বিয়ে আবার জোড়া লেগেছে?”

“চুপ কর। চল আমার সঙ্গে বলছি।”

***
টুকুকে স্কুলের ভেতরে নিয়ে যায় নি বৃষ্টি৷ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। বৃষ্টি পলিন কে শুধু বিয়ের কথা বলল। পলিন এসে টুকুকে সরাসরি বলল,

“টুকু ভাই তোমার না অনেক লজ্জা! তাহলে বিয়ে করলে কিভাবে? তখন লজ্জা পাও নি?”

টুকু সঙ্গে সঙ্গে লজ্জা পেয়ে গেল। বৃষ্টি বলল,

“তোর পেয়ারের আবির ভাই এর সঙ্গে যুক্ত। সে নাকি এই বিয়ে দিয়েছে।”

পলিন টুকুকে জিজ্ঞেস করলো,

“আবির ভাই তোমাকে জোর করে বিয়ে দিছে?”

“না। আমিই ওকে অনুরোধ করেছিলাম যেন থাকে।”

“ওহ এজন্য এতো তাড়াহুড়ো করে গেল। আমাকে বলেছিল যে কাজ আছে তাই যাচ্ছে। কিন্তু কাজের বদলে সে যে আরেক যুদ্ধের ব্যবস্থা করেছে সেটা তো বলে যায় নি। ”

“সেটাই তুই ফোন করে জিজ্ঞেস করবি।”

“আমি কেন করব!’

“কারণ টুকু ভাই ঠিকঠাক বলতেই পারছে না। একটা কথা বলে দশ মিনিট থেমে থাকে। ”

টুকু তখনও মাথা নিচু করে আছে।

****
ওরা অন্যজায়গার ফোনের দোকানে গেল আবিরের সঙ্গে কথা বলতে। বৃষ্টি পলিন কে বলল,

“দুই মিনিটের মধ্যে কথা শেষ করবি। বেশী কথা বাড়াবি না।”

“আচ্ছা।”

দু’বার রিং হতেই আবির ফোন ধরলো। পলিন বলল,

“আমি পলিন। টুকু ভাইয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য ফোন করেছি।”

“টুকু বাড়ি গিয়ে আমাকে ফাসিয়েছে?”

“হ্যাঁ। ”

“আমি ওকে খুন করে জেলের ভাত খাব। ”

“সেটা তোমার ইচ্ছা। তুমি জেলের ভাত খাও, বা কয়েদখানার ভাত খাও সেটা জেনে আমার কাজ নেই। আমার কথার জবাব দাও।”

আবির কঠিন গলায় বলল,

“চার ফুটের মেয়ে আমার কাছে জবাব চাচ্ছিস। বাড়ি এসে তোর জিভ কেটে নদীতে ফেলে দেব। ”

“তোমার আচরণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো হয়ে যাচ্ছে…….

পলিন কথা শেষ করতে পারলো না। বৃষ্টি ফোন কেড়ে নিয়ে বলল,

“আবির ভাই তুমি টুকু ভাইকে প্রশ্রয় কেন দিলে!”

আবিরের গলা কেঁপে উঠলো। বলল,

“কে?”

বৃষ্টি বেখায়েলে বলল,

“আমি বৃষ্টিলেখা!”

আবির অস্ফুটস্বরে বলল, বৃষ্টি!

বৃষ্টি সম্বিত ফিরে পেল। ঘটনার আকস্মিকতায় ও নিজেই হতভম্ব। পলিন অবাক গলায় বলল,

“টুকু ভাই দেখো বুবু আবির ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছে।

টুকু নিজেও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

ফোনের ওপাশে থাকা আবিরের চোখ ভিজে উঠেছে। নয় বছর পর!

চলবে…..