বিচ্ছেদময় সুখ পর্ব-০৩

0
371

#বিচ্ছেদময়_সুখ — [৩]
মুনিয়া মিরাতুল নিহা
(অন্যত্র পোস্ট নিষিদ্ধ)
________________________

সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠতেই স্নিগ্ধ বাতাস এসে গায়ে দোলা দিয়ে মনটা সতেজ করে তুললো এক নিমিষেই। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকাল সকাল স্নিগ্ধ প্রকৃতির কোমলময়ী, শান্ত রূপ অবলোকন করছি। এমন সময়েই মায়ের গলার আওয়াজ পেলাম। কলেজে যাবার জন্য ডাকছে বেলা হয়ে যাচ্ছে। আমিও আর দেরি না করেই রেডি হয়ে চললাম কলেজের উদ্দেশ্য। কিছুদূর হেঁটে যেতেই দেখা হলো তন্ময় ভাইয়ার সঙ্গে উনি বাইকে করে কোথাও যাচ্ছিলেন আমাকে দেখতে পেয়েই গাড়ি থামিয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন।

-‘ চলো তোমাকে পৌঁছে দিই?’

-‘ আমি হেঁটেই যেতে পারবো। আপনাকে অতো উপকার করতে হবে না। ‘

-‘ রৌদ্রে হেঁটে যাচ্ছো তাই বললাম।’

-‘ তাতে আপনার কি?’

-‘ তোমার সমস্যা কি বুঝি না! আমার সঙ্গে এরকম কেনো করো? যখনই কোনো কথা বলি কিরকম ভাবে যেনো উত্তর দাও! ‘

তন্ময় ভাইয়া এভাবে কখনো কথা বলেনি কিন্তু আজ বলেছে মানে আমার ব্যাবহারে উনার খারাপ লেগেছে। কিন্তু আমি কি করবো? উনাকে দেখলেই আমার অযথাই খারাপ ব্যাবহার চলে আসে। আজকে বোধহয় উনার সত্যিই খারাপ লেগেছে। আমিও আর তর্ক করলাম না উঠে পড়লাম উনার বাইকে।

-‘ এইভাবে না বসে একটু ধরে বসো নইলে একেবারে উড়ে চলো যাবে মিরা মনি? ‘

-‘ আপনাকে না বলেছি এসব মিরা মনি টনি বলবেন না আমাকে। কলেজের স্টুডেন্ট আমি পিচ্চি নই হুহ্।’

মিরার কথা শুনে তন্ময়ের মুখে স্মিত হাসি যা মিরার বোধগম্য হলো না।

-‘ সে তুমি কলেজের ছাত্রী হলেও তোমার ছেলেমানুষি এগুলো কিন্তু এখনো আছে। তাই তো তোমাকে মনি বলতেই বেশি ভালো লাগে বুঝেছো? ‘

-‘ হুম হয়েছে বাইক স্টার্ট দিন তো। ‘

-‘ হ্যাঁ তারপর তুমি পড়ে যাও আর আমি ফেঁ’সে যাই!’

-‘ মানে?’

-‘ ধরে বোসো। ‘

তন্ময়ের কথায় উনার পিঠে এক হাত দিয়ে ধরে আর হাত গাড়ির একটা অংশো ধরে বসলাম। উনি বাইক স্টার্ট দিলেন।

মিরা চলে যাবার পর অতি সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে মিরাকে যতোদূর অব্দি দেখা যায় ততোদূর অব্দি পর্যবেক্ষন করলো সে এক জোড়া চোখের পুরুষ! তার প্রেয়সীকে অন্য ছেলের সঙ্গে দেখে যে তার মোটেও ভালো লাগছে না সেটা তার চক্ষুজোড়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপাততো।
—————————

কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বেরোলাম লিপিদের বাড়ির উদ্দেশ্য। হাতে একটা খাতা নিয়ে কিছু নোটস নিতে যাবো বলে বেরিয়েছি কিন্তু আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রুহিনের সঙ্গে কথা বলা! সে কাল রাত্রে ভালো করে ঘুমাইওনি উনার প্রশ্ন-উত্তরের আশায়। সেই সঙ্গে ভ’য়ও করেছে যদি উনি তিশাকে ভালোবাসি বলেন? কিন্তু সত্যি যতোই তিতে হউক আমি মেনে নিবো।
লিপিদের বাড়িতে পৌঁছাতেই দেখতে পেলাম ড্রয়িং রুমোর দরজা হাট করে খোলা আছে। কয়েকবার লিপির নাম ধরে ডাকতেও লিপি সাড়া দিলো না। বাড়িতে কি কেউই নেই? কিন্তু লিপিতো বলেছিলো ও থাকবে বাসায়। আমি ড্রয়িং রুমের পাশ কাটিয়ে লিপির রুমে যাবার জন্য সিঁড়ি বেয়ে ওঠতেই চোখ পড়লো লিপির মা ঘুমাচ্ছেন আর চাচা বোধহয় বাহিরে! তারপর রুহিন ভাইয়ার রুমের দিকে উঁকি মা’র’তেই দেখতে পেলাম উনি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে আর কানে হেডফোন গুঁজে হাসছে! মানে কারো সঙ্গে কথা বলছে নিশ্চয়ই। চাচি ঘুমাচ্ছে সুযোগের স্বদব্যােহার করতে আমি ঢুকে পড়লাম উনার রুমে। আমার প্রশ্নের উত্তর জানতে। যাতে কেউ দেখে খারাপ না ভাবে সেজন্য রুমে ঢুকেই দরজায় ছিটকিনি এটে দিলাম। আমার দরজায় ছিটকিনি লাগানোর শব্দ শুনে রুহিন পিছন ফিরে তাকিয়ে আমাকে দেখতে পেয়ে চায়ের কাপ পা হাত থেকে ফে’লে দিলেন!

-‘ এই যে জনাব? সবসময়ই তো আমাকে পিচ্চি, ছেলেমানুষী এসব বলেন এখন নিজে এত্তোবড়ো একটা দা’ম’ড়া যুবক হয়েও একটা চায়ের কাপ সামলাতে পারেন না নাকি?’

-‘ আশ্চর্য তুই হুট করে এলি তোকে এই মুহুর্তে এক্সপেক্ট করিনি তাই পড়ে গেছে। ‘

-‘ তা কাকে এক্সপেক্ট করেছিলেন বলুন তো? ‘

-‘ এতো কিছু না ঝেড়ে বলে ফেল কি জন্য এসেছিস!’

এই তো সঠিক প্রশ্ন জিগেস করেছেন উনি, আমিও আর সময় নষ্ট করবো না মনে এক বুক সাহস সঞ্চয় করে কালকের ন্যায় সব গড়গড় করে বলে ফেলবো।

-‘ ভালোবাসি আপনাকে! বলে ফেলুন তিশাকে ওভাবে ধরেছিলেন কেনো? আর চাচি কি বললো? আপনি কাউকে পছন্দ করেন? তাকে বিয়ে করতে চান? কে সে মেয়েটি? ‘

আমার প্রশ্ন শুনে রুহিন থম মে’রে বসে রয়েছে কোনো উত্তর না দিয়ে! আমার বিরক্তের মাত্রা বাড়ছে সে সঙ্গে ভ’য়ও হচ্ছে যদি কেউ এসে পড়ে? সময় তো বয়েই যাচ্ছে! বি’পদের নাম বলতে না বলতে বি’প’দ!

-‘ কিরে রুহিন দরজা লাগানো যে? কিছু হয়েছে?’

রুহিন আমার মুখে হাত দিয়ে চে’পে ধরে চাচিকে “না” উত্তর দিলো! এদিকে আমার দম বন্ধ কর অবস্থা আবার রুহিনকে এতোটা কাছ থেকে অনুভব করতে পারছি। চোখজোড়া উনার দিকে আবদ্ধ হয়ে আছে!
বেশ একটা আলাদা অনুভুতি লাগছে মনের ভেতর!

-‘ তোর এই এত্তো প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে এসেছিস কেনো আমার কাছে হ্যাঁ? আমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলিস আবার রাস্তাঘাটে অন্য ছেলেদের বাইকে ওঠিস এতো কেনো?’

-‘ এক মিনিট, এক মিনিট আপনি আমার উপর ন’জ’র রাখেন তাহলে?’

-‘ না ন’জ’র রাখবো কেনো? সকালে দেখেছি তাই বললাম। ‘

-‘ সেটা আপনার চোখের ভুল, হয়তো পিছন থেকেই দেখেছেন আর বোঝেননি ওটা আপনারই ভাইয়ের বাইক ছিলো আর আমি উনার বাইকেই ওঠেছি। তন্ময় ভাইয়া এতো করে বলছিলো না ওঠে থাকতে পারিনি। আর আপনি কি সব ভাবছেন। ‘

আমার কথা শুনে রুহিন এটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন! যার অর্থ আমি বুঝলাম না। আমি এসেছি প্রশ্নের উত্তর জানতে।

-‘ দেশে ছিলাম না তাই চিনতে পারিনি, এটা তন্ময়ের বাইক ছিলো। এখন তোর প্রশ্নের উত্তর জানতে চাস তাই না? তো ঠিকআছে কালকে এই ঠিকানায় চলে আসবি বিকেলের দিকে তোর প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি, আপাততো মা’থা খারাপ করিস না। ‘

রুহিন আমার হাতে কাগজে একটা ঠিকানা ধরিয়ে দিলো। এই ঠিকানা টা হচ্ছে সামনের পার্ক ছেড়ে রুহিনদের ছোট্ট একটা বাড়ি সেখানটার। কিন্তু এটা তো উনি এখন লেখেন নি? মানে আগ থেকে লিখে রেখেছিলো এটা কি উনার কোনো প্ল্যান? যা হোক গিয়ে
আমিও খুশি মনে ঠিকানা হাতে নিয়ে রুহিন ভাইয়ার রুম থেকে বেরোতেই লিপিকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম! ভাগ্যিস লিপি ছিলো এর জায়গায় অন্য কেউ হলে আমার তো হা’র্ট অ্যা’টা’ক হয়ে যেতো ভ’য়ের চোটে! লিপি কিছু বলার আগেই ওর রুমে চলে গেলাম।

-‘ কিরে বান্ধবী তুই আমার আর বাড়িতে এসে যাস রুহিন ভাইয়ার ঘরে?’ 😒

-‘ আরে রা’গ করিস না! একটু কথা বলতে গেছিলাম। ‘

-‘ আচ্ছা ঠিকআছে। এখন বল কি কথা হলো? ‘

-‘ সারপ্রাইজ আছে কালকে বলবো একেবারে। ‘
———————-
লিপির কাছে টুকটাক কথা বলে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম, হাঁটার পথেই একটা পার্ক পড়ে আর সেখানে ফুচকা, ঝালমুড়ি এসব পাওয়া যায়। আপাততো আমার বেশ ফুচকা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই পার্কের ভেতর যেতেই তিশা আর ওর সঙ্গে একটা ছেলেকে দেখতে পেলাম! ওম্মা রে এতো দেখি ফার্স্টের উপর ফার্স্ট! সেদিন রুহিন ভাইয়ার সঙ্গে আবার আজকে এই ছেলের হাত ধরে বসে আছে! শুধু তাই নয় হাতে আবার গোলাপ ফুল আছে যেটা এক্ষুনি বিনিময় করলো একে অপরকে আমারই চোখের সামনে! বুঝতে পারছি না আমি কি চোখে আদৌ সঠিক দেখছি না-কি ভূল? আর একটু এগিয়ে দেখতে ওদের বেঞ্চের পিছনের ঝো’পে গিয়ে দাঁড়ালাম ওদের কথা শুনতে যা শুনলাম এবার মনে হচ্ছে আমি চোখে ভুল দেখার বদলে কানেও বোধহয় ভুল শুনছি! ছেলেটা আই লাই ইউ বলছে তিশাকে আর তিশা হাসছে!
এটা যদি তিশার বয়ফ্রেন্ড হয় তো রুহিনকে সেদিন ওমনে ধরলো কেনো? আর রুহিনকে নিয়ে যা স’ন্দে’হ করছি সেটা সঠিক হলে এখন আই লাভ ইউ এসব কি! মা’থা গুলিয়ে যাচ্ছে সব! আপাততো ফোনটা বের করে টুক করে তিশার রো’মা’ন্টি’ক একটা ছবি তুলে চ’ম্প’ট দিলাম সে জায়গা থেকে। কালকে যদি রুহিন বলেও না যে সে তিশাকে পছন্দ করে তো এটা দেখাবো তারপর দেখবো কি রিয়্যাকশন দেন উনি!

#চলবে