বিধুর রজনী পর্ব-৯+১০

0
173

#বিধুর_রজনী
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৯]
_______________
১৭.
যুদ্ধে জয়ের আনন্দে মত্ত আজ সারা প্রাসাদ যদিও রাজ্যে জুড়ে আজ মিষ্টান্ন খাবারের বিতরণ চলছে তাতে খুব একটা প্রজারা খুশি নন।কেননা সম্রাট আব্বাস যে রাজ্যে দখল করে সেই রাজ্যে বেড়ে যায় অনাচার।যেসব ভূমি নিষ্কর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সেসব জমি’তেও কর দিতে বাধ্য করা হচ্ছে প্রজাদের।সম্রাট আব্বাসের খাজনা আদায়ের কৌশল বেশ কঠোর।যারা খাজনা দিতে অস্বীকৃতি জানায় তাদের চামড়া তুলে লবণ সিঞ্চন করা হয়।সন্ধ্যায় সম্রাট আব্বাস, উজির হাযম,শাহজাদা ইবনুল সহ নয়জন আমীরকে নিয়ে শরাব পানের আসর বসেছে।সম্রাট আব্বাসের মেজাজ আজ বেশ ফুরফুরে।উদয় নগরী দখল করলেও পরাজিত সম্রাট ওয়াহাব এবং মেসবাহ পালিয়ে যান।হর্ম্যে থাকা সম্রাজ্ঞী দাস-দাসী সকল’কে বন্দি করা হয়।তাদের মাঝে কাউকে নর্তকীদের আসরে নিযুক্ত করা হয়।
সম্রাট আব্বাসের হাতে স্বর্ণের পানপাত্র তিনি তা এগিয়ে দিলেন উজিরের নিকট।উজির হাযম মাথা নত করে পাত্র ভরতি করে শরাব এগিয়ে দিলেন।নয় জন আমীরের মাঝে একজন আমীর বলে উঠেন,

” জাহাঁপনা অনুমতি পেলে কিছু কথা বলতে চাই।”

” অনুমতি দেওয়া হলো।”

” রাজ্যে বিস্তার করলেই যে হবে না।আপনার রাজ্যের উন্নয়ন খুব একটা যে হয়েছে তা কিন্তু নয়।”

” আপনি কি বলতে চাইছেন স্পষ্ট ভাষায় বলুন।”

” আমি বলতে চাইছি যে আহমেদাবাদ রাজ্যের খোঁজ রেখেছেন?তারা কিন্তু সব দিক থেকেই স্বাবলম্বী এবং শক্তিশালী।আমাদের রাজ্যে নাট্যশালা নেই,ভালো চিত্রকর নেই,মান সম্মত কবি নেই,নাম করা মহল ইমারত নেই।সবচেয়ে বড় কথা আমরা মুসলিম আমাদের রাজ্যে জুড়ে মসজিদ সংখ্যা মাত্র এক।”

আমীরের কথায় স্বর্ণের পানপাত্র পাশে রেখে চিন্তিত ভঙ্গিমায় থুতনিতে হাত রাখেন সম্রাট।

” এই কথাতো আমি আগে ভেবে দেখেনি।উজির হাযম এই বিষয়ে আপনি কি বলেন?”

” আমার একই বক্তব্য জাঁহাপনা।আমাদের রাজ্যে স্থাপত্য-কীর্তি’র দিক দিয়ে পিছিয়ে।”

” বেশ তবে এই দায়িত্ব আমার পুত্র ইদ্রীসকে দেওয়া হবে তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবেন উজির হাযম।”

” যথা আজ্ঞা জাঁহাপনা!”

অতিরিক্ত শরাব পানে নেশা ধরে যায় শাহজাদা ইবনুলের তাই আমীর এবং সম্রাটের কথা কানেই তুললেন না তিনি।মনে মনে চলা একটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত দেখাচ্ছে।তাই অপেক্ষা না করেই সম্রাট আব্বাসকে বলেন,

” গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আপনাকে এখনো অবগত করা হয়নি পিতা।অনুমতি পেলে কথাটি বলতে চাই।”

” বেশ অনুমতি দেওয়া হলো।”

শাহজাদা ইবনুল শরাবের পাত্রটি দূরে সরিয়ে রাখলেন।মাথাটা কেমন ঝিরঝির করছে।সুস্থ ভাবে কথা বলার একটুও জো নেই।তবুও নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে কথা বলার চেষ্টাশীল থাকেন।

” প্রত্যুষে শেহজাদী আরওয়ার কক্ষে জানলা বেয়ে প্রবেশের সময় আমার প্রহরীদের হাতে একজন আগন্তুক আটক হয়েছেন।আপনি চাইলে তাকে এখানে হাজির করা হোক।”

” আগে সেই প্রহরীকে নিয়ে এসো আমি তার মুখে ঘটনার বৃত্তান্ত শুনতে চাই।”

সম্রাটের কথা শুনে উজির হাযম বলেন,

” কিন্তু সেই সুযোগ তো আর নেই জাঁহাপনা।কিছুক্ষণ আগেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন।শেহজাদী ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে কতল করেছিল।”

সম্রাট আব্বাসের মাঝে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।সামান্য একজন প্রহরীর মৃত্যুতে তিনি কেন ব্যথিত হবেন?”
শরাবে চুমুক দিয়ে সম্রাট বলেন,

” উজির প্রহরীদের বলো আগন্তুক’কে নিয়ে আসতে।

কিয়ৎক্ষণের মাঝেই তাসবীরকে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন প্রহরীরা।তাসবীরের বেশভূষায় বেশ অবাক হন সকলে।কর্তনী দিয়ে ছাঁটাই করা চুল।দাঁড়ি ছাড়া মসৃণ গাল,ঠোঁটের উপর থাকা গোঁফ একদম ছাটাই করা বেশ অদ্ভুত দেখতে লাগছে যুবকটিকে।কক্ষে প্রবেশ করেই নত মস্তকে সম্রাট’কে কুর্নিশ করেন তিনি।তার হাসি হাসি মুখ দেখে আমীররা সকলে বেশ অবাক হয়।সম্রাট আব্বাস ভ্রু কুচকে প্রশ্নাত্মক চোখে বলে,

” দাঁড়ি,গোঁফ,চুল কোথায়?

” সম্রাট আপনার প্রহরীর বেদম প্রহারে সব থেঁতলে গেছে।কবিরাজ মশাই চিকিৎসা করতে বেশ কষ্টসাধ্য হচ্ছিল তাই নরসুন্দর’কে এনে এই হাল করেছেন।”

তাসবীরের নিশ্চিত মনের কথার তালে বেশ খানিকটা অবাক হলেন সম্রাট।যুবকটির মাঝে নেই কোন ভয় সে যেন নিরপরাধে দাঁড়িয়ে আছে সম্রাটের সম্মুখে।

” তোমার পরিচয় কি যুবক?”

” আমি তাসবীর।মা বাবা কে বা কারা আমি জানি না।তবে আমি একজন কবি,চিত্রকর।আমার বিষয়ে অনন্য রাজ্যে খোঁজ নিলে জানবেন কেমন গুণগান রয়েছে।রাজা হরিনারায়ণের নাম শুনেছেন?তিনি আমার কবিতার ভক্ত আমাকে একটি কষ্টি পাথরের মূর্তি উপহার দিয়েছিলেন এছাড়াও জায়গির দিয়েছেন।তারপর দক্ষিণ রাজ্যের রাজকন্যা আমার কবিতায় মুগ্ধ হয়ে রুবি পাথর উপহার দিয়েছেন।আপনি দেখবেন সেই রুবি পাথর!

তাসবীর চটপট হাতে রুবি পাথর বের করতে উদ্যত হয় কিন্তু বিরক্ত হয়ে সম্রাট আব্বাস তাকে থামিয়ে দেন।

” আহ তুমি অনেক বেশি কথা বল।আমি জানতে চাই আমার মেয়ের কক্ষে গোপনে কেন প্রবেশ করতে চাইছিলে?”

ইদ্রীস’কে বলা একই মিথ্যা সাজিয়ে গুছিয়ে সম্রাট আব্বাসকেও বললেন তাসবীর।সম্রাট আব্বাস বোকার মত তা বিশ্বাস করে নিলেন।একজন দূত’কে পাঠানো হলো দুইদিনের মাঝে তাসবীরের সম্পর্কে খোঁজ নিতে।তাতে বেশ নিশ্চিন্ত আছেন তাসবীর। সবাই তাকে চিত্রকর এবং কবি হিসেবেই চেনেন তাহলে কিসের ভয় তার!

” এই আসরে আপনারা কবিতা শুনবেন?”

” বেশ শুরু করো।”

তাসবীর তার মুগ্ধকর কন্ঠে সবার সামনে কবিতা পেশ করলেন।এত নিখুঁত ছন্দময় কবিতা শুনে আমীর’রা মারহাবা মারহাবা ধ্বনি তুলেন।ওপর দিকে নেশাগ্রস্ত হয়ে আসরে কি হচ্ছে শাহজাদা ইবনুল রাশীদ বুঝতেই পারছেন না।যদি তিনি আজ সুস্থ মস্তিষ্কে উপস্থিত থাকতেন তাহলে তাসবীরের হয়তো নিস্তার থাকতো না। অতিরিক্ত শরাব পানে দেয়ালে ঢলে পড়লেন শাহজাদা ইবনুল রাশীদ।তিনি ঝাপসা কণ্ঠে বলেন,মারহাবা মারহাবা মারহাবা!

১৮.
শেষ দুপুরের মিঠে রোদ জলাশয়ের পানিতে পড়ে ঝকমক আভা তুলছে।বেশ কয়েকটি রাজহাঁস জলকেলিতে ব্যস্ত।শেহজাদী আরওয়া তার দিঘল কেশ ঘাসে বিছিয়ে রৌদ্র পোহাতে ব্যস্ত।হাঁটুতে থুতনি রেখে নিঃশব্দে রাজহাঁসের প্রমোদ দেখছেন।মাঝে মাঝে জলাশয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছেন হাঁসের খাদ্য।চারিদিকে ফুটে আছে বেশ হরেক রকমের রঙিন ফুল।রাজমহলের বাইরের এই স্থান শেহজাদী আরওয়ার বেশ প্রিয় জায়গা বলা চলে।মাঝে মাঝেই এখানে এসে একা প্রহর গুনেন।লেখনীতে পলি আনান। তাসবীর খাসদাসী লতার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন শেহজাদী আরওয়া জলাশয়ের কাছে আছেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি থাকবেন এই জলাশয়ের আশেপাশে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ।ফুলের বাগানের শেষ কোনায় দু’জন দাসী দাঁড়িয়ে আছে এরা নিশ্চয়ই শেহজাদীর অপেক্ষায় আছেন।তাসবীর সুযোগ বুঝে তাদের সামনে দাঁড়ালেন।

” শেহজাদী জলাশয়ের কাছে আছেন?”

” জ্বি তবে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ।”

” সে কি কথা শেহজাদী নিজে আমায় আসতে বলেছেন।তিনি আমার মুখে শের শুনবেন।আমি তাহলে যাই”

” শেহজাদীর অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবেনা।”

“গতকাল প্রহরীর কথা ভুলে গেছেন?কি করে তাকে হ/ত্যা করা হয়েছে?আমাকে প্রবেশ করতে না দিলে এবার হয়তো…..”

তাসবীরের কথায় ভয় পেয়ে গেলো দাসীরা।তারা আর কথা না বাড়িয়ে তাসবীরকে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয়।

তাসবীর মেঠো-পথ হাটতে হাটতে কাঙ্ক্ষিত স্থানে উপস্থিত হয়।তবে শেহজাদীর অন্যরকম নজর কাড়া সৌন্দর্য দেখে থমকে যান তিনি।দিঘল কেশ বিছিয়ে কেমন রাজকীয় ভঙ্গিমায় বসে আছেন আরওয়া।সাজহীন অকৃত্রিম সৌন্দর্যে বেশ সতেজ লাগছে তাকে।তাসবীর চুপচাপ শেহজাদীর পাশে বসেন কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেন,

” মাশাল্লাহ আর কত ভাবে অসাড় করবেন আমায়?সহ্য করার ক্ষমতা যে লোপ পেয়েছে।”

শেহজাদী চমকে তাকালেন।দ্রুত পিছিয়ে গেলেন তাসবীরের সামনে থেকে।ছড়ানো কেশ দু’হাতের সাহায্যে এগিয়ে নিয়ে মুড়িয়ে রাখলেন কোলে।কাঁধে থাকা উত্তরীয় তুলে নিয়ে ঢেকে দিলেন শির।হঠাৎ ভয় পেয়েছে এমন ভাবে নিশ্বাস নিলেন বেশ কয়েকবার।

” এখানে এসেছেন কেন তাসবীর?চলে যান ভাইজান’রা দেখলে রক্ষে থাকবে না।”

” আসবে না কেউ।দাসীরা পাহারায় আছে।”

“কিন্তু… ”

” এত কথা বলবেন না যা হবার হবে।এই কেশ কতদিনের সাধনার?খোপার আদলে কখনো আমার চোখেই পড়লো না।”

তাসবীরের কথার প্রত্যুত্তর করলেন না শেহজাদী।হঠাৎ মুখে হাত দিয়ে ফিক করে হেসে উঠলেন তিনি তার হাসিতে চমকে উঠেন তাসবীর।এতদিনে আজ সৌভাগ্য হলো এই রূপমাধুরী’র হাসি দেখার।তাসবীর বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলেন শেহজাদীর দিকে তাতে বেশ লজ্জা পেলেন শেহজাদী।

” আমি হাসছি কেন জানতে চাইবেন না তাসবীর?”

” প্রয়োজন নেই।আপনি হাসতে থাকুন।”

” চুল,দাঁড়ি,গোঁফ ছাড়া আপনাকে ভীষণ হাস্যকর লাগছে।এ রূপ যে আমার ভালো লাগছেনা খুব দ্রুত আগের রূপে ফিরে আসুন।”

তাসবীর নিজেও হাসলেন।তবে মুহূর্তে মুখের হাসি মিলিয়ে গেল শেহজাদীর।তা দেখে ভ্রু কুঁচকলেন তাসবীর।

” কি হয়েছে?”

” সম্রাট সাঈদ আমার নিকট চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি অতিদ্রুত বিবাহ কার্য সম্পূর্ণ করতে চান।এবং বিবাহের আগে তিনি আমার কাছে তিক্ত সত্যি প্রকাশ করে দিয়েছেন।”

” কোন সত্য?”

” তেলিকোনা রাজ্যের সম্রাট সাঈদ আর উনার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আহমেদাবাদের সম্রাটের।আমার পিতা একবার নয় দুইবার নয় কাটায় কাটায় তিন বার আহমেদাবাদের সম্রাটের কাছে পরাজিত হন।এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভে আছেন পিতা মনে মনে জেদ চেপেছেন যে করে হোক আহমেদাবাদের সম্রাট’কে পরাজিত করে রাজ্যে দখল করবেন।আর বিষয়টি সহজ করতে সম্রাট সাঈদের সাহায্য অতি জরুরি।আর তাই সম্রাট সাঈদকে শর্ত দিয়ে বসেন যে করে হোক আহমেদাবাদের সম্রাটকে হারাতে সাঈদকে সাহায্য করতে হবে।তাছাড়া মারাঠাদের উৎপাত বেড়েই চলেছে।তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া একা হাতে সম্ভব নয় তাই সম্রাট সাঈদ মারাঠা দমনে সাহায্য করবেন।এসব শর্ত যদি সম্রাট সাঈদ মানতে পারেন তবেই আমাকে বিয়ে কর‍তে পারবেন।”

সব কিছু শুনে শরীরে তীব্র ভাবে জ্বলে উঠলো তাসবীরের।ভেতরের সুপ্ত রাগ তিনি বাইরে প্রকাশ করলেন না ভুলেও বরং রইলেন চুপচাপ।

” তার মানে চুক্তির বিয়ে!”

” চুক্তি সম্রাট সাঈদ করেননি করেছেন আমার পিতা।”

তাসবীর নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলেন জলাশয়ের দিকে।রাজহাঁসেরা জল কেলিতে ব্যস্ত।হিজল গাছ থেকে ফুল ঝরতে ঝরতে যেন চাদর তৈরি করছে পুকুরে।এই মনোরম সভাতেও প্রকৃতি উপভোগ কর‍তে পারছেন না তাসবীর।মনের ভেতর যে উত্তাল ঢেউয়ের খেলা চলছে তা আর দেখে কে?

” এত শত চুক্তির মাঝে আপনি কি চান শেহজাদী?”

তাসবীরের প্রশ্নের উত্তর দিতে থমকালেন না শেহজাদী বরং দ্বিধাহীন চিত্তে বলে,

” আপনাকে চাই বিশ্বাস করুন তাসবীর আমি আপনাকে চাই।”

” আমার সাথে পথ চলা যে কঠিন শেহজাদী আমি জাঁকজমক পূর্ণ জীবন পছন্দ করিনা।এই রাজ্যে থেকে আরেক রাজ্যে এভাবেই যাযাবর দিন কাটে আমার।”

” যার সাথে খানিকটা সময় ব্যয় করলেও মন স্থির থাকে তাকে আমি ছাড়তে পারবো না তাসবীর।”

” আরওয়া আপনি কি আমায় কথা দিচ্ছেন আগামী জীবনের জন্য আমার হবেন?”

” আমি কথা দিচ্ছি সব বাঁধা পেছনে ফেলে আমি আপনার সঙ্গেই যাব।”

গা দুলিয়ে হাসলেন তাসবীর।গাছ থেকে বেশ কয়েকটি ফুল ছিঁড়ে শেহজাদীর কোলে রাখলেন।

” ঘোমটা’টা কি সরানো যায়?আমি আপনার দিঘল কেশের প্রেমে মূর্ছা গেছি।”

ঠোঁট বাকিয়ে হাসলেন শেহজাদী আরওয়া।ঘোমটা সরিয়ে আগের মতো ঘাসে বিছিয়ে দিলেন চুল।তাতে অবশ্য তাসবীর সাহায্য করেছে।দিঘল কেশে একে একে ফুল সাজিয়ে দিলেন তাসবীর।আরওয়ার রাজকীয় ভাব ভঙ্গিমায় তাসবীর পুনরায় মুগ্ধ হলেন।

” আপনার এই কোমল হাতটা ধর‍তে পারি শেহজাদী?”

” আজীবন পারবেন তাসবীর।”

আরওয়ার লাজুক হাসির কথায় মিহি হাসলেন তাসবীর।বেশ খুবলে ধরলেন শেহজাদীর হাত পৃষ্ঠ দেশে নরম ওষ্ঠের মাধ্যমে খেলেন চুমু।

” ছাড়ছি না,ছাড়ছি না আমি এই হাত।”

” আপনি কেন রাজপুত্র হলেন না তাসবীর?না থাক আপনি সম্রাট হতেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে টগবগিয়ে এসে এই অলকপুরী রাজ্যে থেকে আমায় নিয়ে যেতেন।আপনি তো জানেন এখানে আমার কদর কেউ করে না।সবাই আমাকে অভিশপ্ত ভাবে।আমি ভাবি খুব ভাবি কোন এক রাজপুত্র আসবে আর আমায় নিয়ে চলে যাবে এই দম বন্ধকর রাজ্যে থেকে।”

হতাশার শ্বাস ছেড়ে কথাটি বললেন আরওয়া।তাসবীর নিশ্চুপ কথাটি শুনলেন পুনরায় শেহজাদীর হাতে চুমু খেলেন।আশ্বাস স্বরে বলেন,

” আল্লাহ যা চান এই জগৎ সংসারে তাই হবে।কারো কথা মনে ধরে একদম কষ্ট পাবেন না আরওয়া।”
#চলবে_____

#বিধুর_রজনী
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১০]
_____________________
১৯
সম্রাট সাঈদের চিঠির উত্তর পাঠালেন না শেহজাদী বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেন সাঈদ।যাকে বিবাহ করবেন যে মেয়ে তার স্ত্রীর মর্যাদা লাভ করবে সেই মেয়ে যদি হয় এতটা উদাসীন তাহলে সম্রাট কি ক্ষুব্ধ না হয়ে পারেন!শেহজাদী তখন খাস দাসী লতাকে নিয়ে গল্পগুজবে ব্যস্ত কক্ষে সে সময় প্রবেশ করেন একজন দাসী।

” আসবো শেহজাদী?”

” এসো।”

দাসী নত মস্তকে কুর্নিশ করলেন শেহজাদিকে।

” সম্রাট আপনাকে স্মরণ করেছেন।তিনি আপনার জন্য নিজ কক্ষে অপেক্ষা করছেন।”

” আসছি আমি।”

দাসী পুণরায় মাথা নত করে চলে গেলেন।শেহজাদী চিন্তিত মনে এগিয়ে গেলেন সম্রাটের কক্ষে।

” আসবো পিতা?”

” হুম। ”

শেহজাদী কক্ষে প্রবেশ করে নত মস্তকে কুর্নিশ করলেন তার পিতা’কে।
সম্রাট আব্বাসের চোখ মুখ কেমন যেন রাগী ভাব ধারণ করেছে।দু’হাত পেছনে মুড়িয়ে কক্ষ জুড়ে পাইচারি করছেন তিনি।সম্রাটের রাগী রাগী ভাব শেহজাদী ধরতে পারলেও তবে রেগে যাওয়ার কারন বুঝতে পারলেন না।

” সাঈদ তোমাকে পত্র পাঠিয়েছে?”

” জি।”

” কতদিন হলো পত্র পাঠানোর?”

” নয়দিন হয়েছে পিতা।”

” তুমি কি তার পত্রের প্রত্যুত্তর পাঠিয়েছ?”

” জি না।”

ফসফস শব্দে শ্বাস ছাড়লেন সম্রাট।পাইচারি থামিয়ে এগিয়ে এলেন মেয়ের সম্মুখে।নিজের রাগ সংবরণ করার চেষ্টা করলেন খুব করে।

” কেন পাঠাও নি?সে পত্রে কি লিখেছে আমার জানা নেই।তবে তোমাকে কিছু প্রশ্ন করেছে তার উত্তর পাওয়ার আশায় সে দিন গুনছে তুমি কেন পত্র পাঠাওনি?”

” প্রয়োজন বোধ করিনি।”

” চুপ করো।সম্রাট সাঈদ দূত পাঠিয়েছে সে যত দ্রুত সম্ভব তোমার পত্রে তার প্রশ্নের উত্তর চায়।এক্ষুনি পাঠাগারে যাবে আমি দোওয়াতদার’কে পাঠাচ্ছি সে সব কিছুর ব্যবস্থা করে দেবে।তুমি নিজ হাতে পত্র লিখবে। যাও।”

শেহজাদী নত মস্তকে পুণরায় বেরিয়ে যান কক্ষ ছেড়ে।প্রচন্ড ক্রোধে শরীর জ্বলছে তবুও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চুপচাপ এগিয়ে যান পাঠাগারের দিকে।
.

‘ মহান তেলিকোনা রাজ্যের – সম্রাট সাঈদ,

আপনি আমার পত্রের উত্তরের অপেক্ষায় আছেন যেনে ব্যথিত হলাম।এই রহস্যময় ধরণি সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ তায়ালা।তিনি আমাদের মানুষ জাতির সৃষ্টি করেছেন।আমরা প্রত্যেকেই একে অপরের থেকে ভিন্ন।আমাদের চাওয়া পাওয়া গুলো ভিন্ন অথবা অভিন্ন।
তেমনি আমার চাওয়া পাওয়া হয়তো অনন্য রাজ্যের শেহজাদীদের তুলনায় ভিন্ন।আমি যাকে বিবাহ করতে চাই সে রাজ্য জয়ে নয় বরং সে শুধু আমার মন জয়ের ধ্যানে থাকবে।দিনমণি’র সমাপ্তি জানিয়ে যখন দীর্ঘ রজনী এই পৃথিবীর বুকে ধরা দেবে তখন সে আফিমের নেশায় কিংবা শরাব পানের নেশায় আচ্ছন্ন না থেকে আমার ভালোবাসার নেশায় আচ্ছন্ন থাকবেন।আমি তাকে বিবাহ করতে চাই যার কাছে তার পিতা মাতার পর আমার মূল্য সবচেয়ে বেশি থাকবে।আমি এমন কাউকে চাই না যার সান্নিধ্যে পেতে হলে আমাকে দিনে চার,পাঁঁচ বেলা কুর্নিশ করতে হবে।আমি অতি সাধারণ কাউকে চাই।আপনি নিঃসন্দেহে অসাধারণ ব্যক্তি বেশ অল্প বয়সে সিংহাসন আহরোণ করেছেন,রাজ্যে দখলে আপনি পটু তবে আমার মন দখলে পটু হতে পারেন নি।আমার চাওয়া পাওয়া বিবেচনায় রেখে মর্জনা করবেন আমায়।
ইতি শেহজাদী আরওয়া নূর ‘

পত্রটি পড়ে বেশ মুগ্ধ হলেন সম্রাট সাঈদ।তিনি হাসলেন রহস্যপূর্ণ ভাবে।তৃষ্ণার্ত হাতের ছোঁয়ায় বার বার ছুঁয়ে দিলেন আরওয়ার পত্রটি।পুণরায় দোয়াত কাগজ হাতে তুলে লিখতে বসে গেলেন,

‘ অপ্সরী শেহজাদী আরওয়া নূর

আমার চোখে আপনি ফুলের মতো কোমল আদুরে।তাই বলছি নিশ্চিন্ত মনে আমার জীবনের সঙ্গীসাথি হোন।এ দেহে যত দিন প্রাণ থাকবে ঠিক ততদিন নিজের ছাঁয়ায় মিশিয়ে রাখবো আপনাকে।

ইতি সম্রাট সাঈদ। ‘

সম্রাটের সাঈদের চিঠি পড়ে বেশ অবাক হলেন আরওয়া।মানুষ’টাকে দূরে সরানোর রাস্তা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।তাসবীরের সাথে এই মুহূর্তে দেখা করা ভীষণ জরুরি হয়ে পড়েছে কিন্তু ছেলেটার দেখা পাবে কি করে?দেখা করলে আরেক বিপদ সম্রাট আব্বাসের কানে বিষয়টি প্রহরীরা পৌঁছে দেবে।শেহজাদীর ভাবনার মাঝে ছুটে এলেন খাসদাসী লতা।তার বিচলিত মুখচ্ছবি দেখে বেশ ভড়কালেন শেহজাদী।

” কি হয়েছে লতা এভাবে ছুটছো কেন?”

“একজন গর্ভবতী দাসীর বেদনা উঠেছে…”

কথা শেষ করার আগেই থেমে গেল লতা।সে খুব করে শ্বাস নিচ্ছে।নিজেকে স্থির করে পুণরায় বলতে শুরু করে,

” মেয়েটা খুব ছটফট করছে শেহজাদী।”

” দ্রুত ধাত্রী’কে খবরদাও?”

” দিয়েছিলাম কিন্তু বড় শাহজাদা ধাত্রী’র প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন।আর গর্ভবতী দাসীকে নিয়ে প্রাসাদ ছেড়ে চলে যেতে বলেছে।তিনি সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন একজন দাসীর সন্তান এই প্রাসাদে হবে না।আপনি কিছু একটা করুন শেহজাদী মেয়েটা ম-রেই যাবে।”

শেহজাদী আরওয়া ক্ষুব্ধ হলেন।গায়ের উত্তরী ভালোভাবে জড়িয়ে দিয়ে লতাকে সঙ্গে নিয়ে যান শাহজাদা ইবনুলের কাছে।

” এ আমি কি শুনছি ভাইজান ধাত্রীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন কেন?”

শাহজাদা ইবনুল কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন লতার দিকে।মেয়েটা ভয়ে চুপসে শেহজাদীর পেছনে দাঁড়ায়।ইবনুলের চাহনী বুঝতে পেরে শেহজাদী পুণরায় বলে,

” ধাত্রীকে প্রবেশ করতে দিন ভাইজান প্রসব বেদনায় মেয়েটি মা/রাও যেতে পারে।”

” এসব তোমাকে বুঝতে হবে না আরওয়া।তুমি তোমার কক্ষে যাও আমি আমার ফরমান জারি করেছি এই প্রাসাদে একজন দাসীর জন্য কোন ধাত্রী প্রবেশ করতে পারবে না।”

” আপনি যদি সম্রাট আব্বাসের পুত্র হোন ভুলে যাবেন না আমিও সম্রাট আব্বাসের কন্যা।ফরমান জারি করার ক্ষমতা আমারো আছে।আমি বলছি ধাত্রী প্রবেশ করবে এবং দাসীর বাচ্চা এই প্রাসাদেই হবে।”

দুই ভাই বোনের বাদপ্রতিবাদের মাঝে সেখানে উপস্থিত হন সম্রাজ্ঞী শাহাবা।শাহজাদা ইবনুলকে অনেকবার বোঝানো স্বত্ত্বেও কিছুতেই ধাত্রীর প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।বাধ্য হয়ে শেহজাদী আরওয়া সম্রাট আব্বাসের নিটক অভিযোগ পেশ করে এবং ধাত্রীর প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি নিঃসংকোচে অনুমতি দেন।

ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে অবশেষে দাসীর কোল আলো করে আসে একটি কন্যা সন্তান।কক্ষের বাইরে তখন উপস্থিত ছিল আরওয়া,শাহাবা এবং আরওয়ার ফুফু আসমা।লতা সফেদ কাপড় জড়িয়ে বাচ্চাটিকে নিয়ে কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে আসে এবং শেহজাদীর সম্মুখে দাঁড়ায়।

” বাচ্চার মা বলেছেন প্রথমে যেন আপনার কোলে দেওয়া হয় আর আপনি বাচ্চাটির পছন্দ মতো নাম রেখে দিন শেহজাদী।”

শেহজাদী আরওয়া চমকে গেলেন।সদ্য জন্মানো শিশু এর আগে কখনো কোলে নেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা হয়নি তার।উচ্ছ্বসিত হয়ে কাঁপা-কাঁপা দু’হাত এগিয়ে দিলেন শেহজাদী।কিন্তু এত আনন্দঘন মুহূর্তে বাদ সাধলেন শেহজাদীর ফুফু আসমা।

” এই এই খবরদার শেহজাদীর কোলে কিছুতেই বাচ্চাকে দেবে না।বলা তো যায়না এই মেয়ের ছাঁয়া পড়লে বাচ্চাটা আর বেঁচেও থাকবেনা।”

যতটা আনন্দ নিয়ে হাত বাড়ালেন ঠিক ততটা অপমানে হাত সরিয়ে নিলেন আরওয়া।নত মস্তকে চোখ বন্ধ করে হজম করলেন সবটা।শাহাবা খানিকটা রেগে গেলেন ফুফু আসমা উপর,

” এ কেমন কথা আপা।আমার মেয়েটাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই বলতে পারেন না।আমার আরওয়া কতটা লক্ষ্মী সেটা আমি জানি।দুই পুত্রের পর দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে যখন কোল আলো করে আমার আরওয়া মা এলো তখন এই ভুবনের সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি আমি ছিলাম।”

” তুমি ছিলে শাহাবা কিন্তু আমার ভাই ছিল না।ভুলে গেলে তুমি সেদিনের কথা?”

” না আমি ভুলিনি।যা আল্লাহর পূর্বে নির্ধারিত তা হবেই সেটা অন্যের ভাগ্যে ফেলার কিছুই নেই আপা।”

” মুখে মুখে তর্ক দেখছি বেড়ে গেছে ভাইকে বলে নতুন সম্রাজ্ঞীর ব্যবস্থা করতে হবে।তখন সতীনের ঘর করতে পারবে?”

শাহাবা চুপ করে গেলেন।দাসী লতা গোল গোল চোখে তাদের ঝগড়া দেখছিলেন।শেহজাদীর প্রতি তাদের এত বিতৃষ্ণা কেন বুঝতে পারেনা সে।লতা দৃঢ় কন্ঠে বলে,

” যা হবার হবে শেহজাদী আপনি বাচ্চাটা কোলে নিন। এবং নাম দিন আপনার উচিলায় বাচ্চাটা এ ধরণির আলো দেখেছে না হলে এতক্ষণে….!”

শেহজাদী বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলেন।তীব্র অপমানে তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে।

” তোমার নাম দিলাম সোহাগী।যার অর্থ ভাগ্যবান।”

দাসী লতার হাতে বাচ্চাটিকে দিয়ে গলায় থাকা ভারী স্বর্ণের চেন খুলে বাচ্চাটির গলায় পরিয়ে দিল শেহজাদী।তা দেখে আসমা আরো ক্ষেপে গেল।কিন্তু তাতে গা লাগালো না শেহজাদী।

২০.
শেহজাদীর অপেক্ষার প্রহর ক্রমশ বাড়ছেই।আজ সারাটা’দিন তাসবীরের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।কিন্তু তাসবীরের সাক্ষাৎ মেলেনি।মনে জমানো কথাগুলো যতক্ষণ না তাসবীর’কে বলছে শান্তি নেই এক ফোঁটা শান্তিও মনে আসবে না।বাধ্য হয়ে লতাকে ডেকে পাঠালেন তিনি,

” লতা অতিথি তাসবীর কী প্রাসাদে আছেন?”

” এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না শেহজাদী।”

” খোঁজ নিয়ে জানাও যদি তিনি প্রাসাদে থাকেন তবে আমার কক্ষে আসতে বলো।”

লতা দ্রুত বেরিয়ে যায় তাসবীর’কে খবর দিতে।তাসবীর তার কক্ষেই ছিল শেহজাদীর বার্তা পেয়ে এক মুহূর্ত ব্যয় না করেই ছুটে যান শেহজাদীর কক্ষে।

” কেমন আছেন আরওয়া?”

” কোথায় ছিলেন আপনি?”

” আমার অপেক্ষায় ছিলেন বুঝি?”

তাসবীরের অসংগত হাসির মাঝে প্রত্যুত্তের করলেন না তিনি।বড় কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন তাসবীরের উপর।

” জরুরি কথা ছিল।সম্রাট সাঈদ যে পত্র পাঠিয়েছেন তার পত্রের উত্তর জানাতে আমি যে পত্র পাঠিয়েছি সেখানে স্পষ্ট জানিয়েছি আমি তাকে চাই না।কিন্তু তিনি ফের পত্র পাঠান।”

” সম্রাট সাঈদ কি লিখছেন পত্রে?”

” তিনি আমাকেই চান এবং আমি যেন তার সঙ্গীসাথী হই।কয়েকদিন পরেই বিবাহের দিন নির্ধারিত হবে আমি কি করবো তাসবীর?আমায় নিয়ে পালিয়ে যান এই ছাড়া পথ দেখছি না যে।”

” আগামীকাল উষালগ্নে সম্রাট আব্বাস আমায় প্রাসাদ ছেড়ে যেতে বলেছেন।আশা করি বুঝতে পারছেন আপনার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না।”

চাতক পাখীর ন্যায় ছটফটিয়ে উঠলেন শেহজাদী।

” এ হয় না আপনি আমায় ছেড়া চলে যাবেন?তবে আমার কি হবে?”

” যা বলছি শুনুন হরিৎ বনে যে বৈরাগী’র বসবাস….”

তাসবীরের কথা শেষ হওয়ার আগেই চমকে উঠলেন শেহজাদী।

” আপনি সেই বৈরাগী’কে চিনেন?”

” হ্যা চিনি।তার মাধ্যেমে আমি গোপনে খবর পাঠাবো আপনাকে।নির্ধারিত দিনে আপনি সেজে থাকবেন আর সেদিনি আমরা বিয়ে করবো।”

” বি…বিয়ে!”

” কেন আপনি কি মত পাল্টাচ্ছেন?”

” না না তা নয় আমি অপেক্ষায় রইবো আপনার।”

তাসবীর নিশ্চিন্ত মনে হাসলেন।তবে আরওয়া নিশ্চিন্তে হাসতে পারলেন না।মনে মনে চলছে দারুন চিন্তা।কি হবে এরপর!
#চলবে___