বিবর্ণ নীলাম্বরী শেষ পর্ব

0
1300

#বিবর্ণ_নীলাম্বরী
#মম_সাহা

অন্তিম পর্ব (৩৪+৩৫)

বর্ণ অবাক হয়ে রেস্টুরেন্টে সদ্য প্রবেশ করা দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে। আর এই দুজন আর কেউ না মৌ আর দিগন্ত।

মৌ আর দিগন্ত বর্ণদের খেয়াল করে নি।বরং বর্ণদের থেকে পিছে একটা জায়গায় বসে পড়ে।মৌদের বসতে দেখে নীলা হাফ ছেড়ে বাঁচে। বর্ণ নীলার আচরণে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে
-‘নীলাম্বরী দেখেছেন আপনি? আপনার কাজিন মৌ আর দিগন্ত এক সাথে?’

নীলা মাথা নাড়িয়ে বলে
-‘হ্যাঁ দেখেছি।’

বর্ণ অবাক কন্ঠে বলে
-‘ওরা মনে হয় দুজন দুজনকে বেশ ভালো করে চেনে।তাই না?’

নীলা মুচকি হেসে বলল
-‘দুজন দুজনের পরিপূরক। ভালো না করে চিনলে হবে?’

নীলার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় বর্ণ। তারপর কিছু একটা ভেবে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে
-‘তার মানে কি? ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে?’

নীলা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।বর্ণ বিষ্ময় ধরে রেখেই বললো
-‘আপনি জানেন কীভাবে এটা?’

নীলা একবার দিগন্ত আর মৌয়ের দিকে তাকালো। তারপর চোখ ফিরিয়ে বর্ণের দিকে তাকিয়ে বলল
-‘আপাইয়ের গায়ের হলুদের দিন সকালে মনে আছে আমি দিগন্ত ভাইয়ার কল আসছিলো দেখে তাকে ফোন দিতে গেছিলাম তখন ফোনে ঝাপসা মনে হয় মৌ আপুর ছবি দেখে ছিলাম।তারপর রাতে জিজ্ঞেস করে ছিলাম যখন তখন দিগন্ত ভাইয়া বলে তার সাথে আপুর সম্পর্কের কথা।’

বর্ন অবাক হয়ে বলে
-‘আপনি ঠিকই বলেছেন মানুষ মানেই রহস্য।’

নীলা হেসে মাথা নাড়ালো।তারপর খুব সাবধানে তারা রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে। দিগন্ত মৌ জেনো না দেখতে পায় সেই জন্য।

নদীর কিনার দিয়ে হাঁটছে নীল আর বর্ণ।বেশখানিকটা সময় নিরব থাকার পর বর্ণ নীলাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-‘আচ্ছা গতকাল না আপনার চুল ফেলে দেওয়ার কথা ছিলো।চুল গুলো কাটেন নি কেনো?’

নীলা নদীর দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে বলল
-‘চুল গুলো কাটবো না।কোনো একজনের কাছে আমার চুল গুলো বিশেষ কিছু ছিলো,আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবেও।যদি আমি চুল গুলো কেটে ফেলতাম আমার থেকে সে বেশি কষ্ট পেতো আমি জানি।এইখানে যতদিন আছি আমার প্রিয় মানুষের কাছে আমি সুস্থ থাকতে চাই।চুল তো কাটাই লাগবে আমি ঐ দেশে গিয়ে কাটবো।আমার অসুস্থতা কাউকে দেখাবো না।আমার আপনজনদের তিলে তিলে কষ্ট পেতে দিবো না আমি।’

বর্ণ অপলক চেয়ে থাকে মেয়েটার দিকে।বর্ন জানে তার কথাই বলেছে নীলাম্বরী।মেয়েটা এই অবস্থাতেও তার কথা ভাবছে।খুব গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বর্ণ।

নীলা বর্ণকে চুপ থাকতে দেখে বলল
-‘সবাই যেখানে রাজি সেখানে লুকিয়ে কেনো বিয়ে করেছি জিজ্ঞেস করবেন না ডাক্তার সাহেব?’

বর্ণের জেনো হঠাৎ কথাটা মনে পড়লো নীলা বলাতে।সে তড়িঘড়ি করে বলল
-‘হ্যাঁ হ্যাঁ ভালো কথা মনে করেছেন।আমাকে কেনো বিয়ে করেছেন হঠাৎ?’

নীলা কিশোরীর ন্যায় খিলখিল করে হেসে উঠলো। বর্ণ নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে নীলার দিকে।নীলা হাসি বজায় রেখেই বলে
-‘জানেন শুভ্রম ভাইয়ার বিয়েটা হয় নি।বরং তার হবু স্ত্রীর সাথে তারই ছোট ভাই পালিয়ে গেছে।’

বর্ণ জেনো আকাশ থেকে পড়লো।বিস্ময় ভরা কন্ঠে বলল
-‘সত্যি!’

নীলা উপর-নীচ মাথা নাড়িয়ে জানালো “হ্যাঁ সত্যি”। বর্ন সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-‘ওর বিয়ে ভাঙার সাথে আমার বিয়ে করার কি সম্পর্ক মিস ও না সরি মিসেস নীলাম্বরী?’

নীলা বাঁকা হেসে বলে
-‘সম্পর্ক তো আছে ডাক্তার সাহেব। শুভ্রম ভাইয়া চেয়ে ছিলো সে যেমন না পাওয়ায় যন্ত্রণা সহ্য করেছে তেমন জেনো আপনিও সহ্য করেন।কিন্তু আমি থাকতে তো সেটা সম্ভব না। হ্যাঁ সেদিন ফুপির কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য মাথায় অন্য চিন্তা এসে ছিলো কিন্তু পরক্ষণেই সঠিক ভাবনা এসেছে। তাই আপনাকে বিয়ে করলাম।চাইলে সবার সামনেই আমাদের বিয়েটা হতো কিন্তু আমি চাই না সবাই জানুক আমাদের বিয়েটা হয়েছে। শুধু আপনি আর আমি জানবো।আপনি এতটুকু জানবেন যে অন্ততঃ আপনার অপ্রাপ্তি নেই।’

বর্ন জেনো আজ অবাকের উপর অবাক হয়ে বলল
-‘সবাই জানলে কি সমস্যা?’
-‘সবাই জানলে আপনার নীলাম্বরীকে নিয়ে বাজে কথা বলবে।সবাই বলবে এত অসুস্থ মেয়ে যার জীবনের ঠিক নেই সে গেছে ছেলেটাকে বিয়ে করতে।নিজের জীবনের সাথে ছেলেটার ভবিষ্যতটাও অনিশ্চিতে ফেলে দিতে।আপনি কি চান আমাকে মানুষ খারাপ কথা বলুক।আপনি তো জানেন বিয়েটাতে হয়তো আপনার জীবন অনিশ্চিতে পরবে কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা নিশ্চিত হয়ে যাবে।’

নীলার কথায় বর্ণ জেনো বারবার চমক খাচ্ছে।বর্নের জেনো কথা বন্ধ হওয়ায় উপক্রম।বর্ণকে চুপ থাকতে দেখে নীলা নিজ থেকেই বলে উঠলো
-‘আচ্ছা বিয়ে তো হয়েছে।এখন নতুন বউকে উপহার দিবেন না?’

বর্ণ মুচকি হেসে বলল
-‘বলেন কি উপহার চান।’
-‘প্রমেজ করুন দিবেন?’

বর্ণ হেসেই বলল
-‘আচ্ছা প্রমেজ।’

নীলার উপহার গুলোর নাম শুনে বর্ণের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।সে দু’কদম পিছিয়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে নীলাকে বলল
-‘না এটা সম্ভব না নীলাম্বরী।অন্যায় আবদার আমি রাখতে পারবো না।’

নীলা বাঁকা হেসে বলে
-‘প্রমেজ করেছেন কিন্তু।’

বর্ন জেনো অথৈজলে পড়লো।কূল কিনারা বিহীন সমুদ্রের মাঝে জেনো সে ডুবে যাচ্ছে।

_______

নীলা নিজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বিয়ের এক সপ্তাহ হয়ে গেছে।বর্ন নীলার কথা অনুযায়ী বিয়ের কথা কাউকে জানায় নি।তবে সেদিনের পর থেকে বেশ চুপচাপ হয়ে থাকে।এমনেতেও গম্ভীর এখন আরও বেশি চুপচাপ।তবে সময় মতো খোঁজ খবর নেয় নীলার।কথাবার্তা বলে নীলার সাথে। কিন্তু গম্ভীর হয়ে।

নীলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলো সব কিছু।তার জীবনে হয়তো সময় খুব কম আবার হয়তো বেশি।জীবনের সমীকরণে আজ সে নিরুপায়।তার সাথে আচরণ করা অহংকারী দিয়া এখন নিজের মতনই থাকে।তার এত অহংকার যে জিনিসটা নিয়ে সেটা হলো তার সৌন্দর্য সেটাতে এখন দাগ পরে গিয়েছে।

নীলা আনমনেই হাসে।প্রকৃতি বিচার করতে ভুলে না মানুষ ভুলে গেলেও।তার বড় শখ ছিলো মৌ আপু আর দিগন্ত ভাইয়ার বিয়েটা নিজের সামনে থেকে দেখে যাবে।কিন্তু সেটা আর হলো কই।সে তো চলে যাচ্ছে ভিনদেশ।ফিরবে কি না সে জানে না।

নীলার স্মৃতিচারণের মাঝেই বেশ শব্দ করে মেঘ ডেকে উঠলো।আচমকা শব্দে নীলা কেঁপে উঠতেই অসাবধানতায় গোলাপ গাছের কাটা ফুঁটে গেলো নীলার হাতে। নীলা প্রথমে ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলেও পরে কিছু একটা ভেবে উচ্চস্বরে হেসে উঠে।নীলার হাসির সাথে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়।নীলার রক্ত বের হওয়া হাতটা মেলে ধরলো বারান্দার গ্রিল দিয়ে বাহিরে।বৃষ্টির পানি নীলার রক্ত ধুয়ে মুছে দিলো।নীলা কিশোরীর ন্যায় খিলখিল হেসে বলল
-‘বাবা কালো গোলাপের সৌন্দর্যের সাথে আমার তুলনা করেছে।বাবা গোলাপের সৌন্দর্য টাই দেখলো কিন্তু গোলাপ গাছের কাটা গুলো দেখলো না।গোলাপের সৌন্দর্য টা এমনই যা সবারই চোখে লাগবে কিন্তু কাটা গুলো একমাত্র তারাই উপলব্ধি করবে যাঁরা সুন্দর গোলাপটাকে ছিঁড়তে আসবে।আফটার -অল ইট ছুঁড়লে পাটকেল তো খেতেই হবে তাই না।নীলাম্বরীর বেলাতেও ঠিক একই নিয়ম।তার নমনীয়তা দেখে যে ছুঁতে আসবে তার লুকায়িত অগ্নিশিখাতে সে পুঁড়ে যাবে।’

নীলার কথা শেষ হতে ড্রয়িং রুম থেকে তার ডাক এলো।তার মা আফসানা রহমান বলছেন
-‘নীলা তাড়াতাড়ি এসো বৃষ্টি নেমে গেছে।আমাদের ফ্লাইটেরও সময় হয়ে গেছে।’

নীলা আজ ফোটা কালো গোলপটায় হাত বুলিয়ে বলল
-‘হ্যাঁ আম্মু আসছি।’

অপরপাশ থেকে আর কথা আসলো না।নীলা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হ্যাঁ আজ একটু পর তাদের ফ্লাইট।তারপর চলে যাবে ভিনদেশ।আবার এদেশের মাটিতে পা রাখতে পারবে কি না সে জানে না।আবার এই শীতকালে বৃষ্টি,এই কালো গোলাপের সৌন্দর্য সে দু চোখ ভরে মুগ্ধ হয়ে দেখতে পারবে কি না তার জানা নেই।সে শুধু জানে তাকে ফিরতে হবে তার ডাক্তার সাহেবের জন্য।

নীলা শেষবারের মতন গোলাপটার দিকে তাকালো।আজ এতদিন পর অবশেষে তার কালো গোলাপের সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য হলো।আজ সত্যিই মনে হচ্ছে কালো মানেই অসুন্দর না।কালো মানেই কয়লা না।কালো মনে মাঝে মাঝে কালো গোলাপের সৌন্দর্যও হতে পারে।

_________

এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে নীলা তার বাবা-মা,নিরুপমা,নীড়,বর্ণের পুরো পরিবার।নিরুপমা এতক্ষণ বেশ কান্নাকাটি করেছে।সবাই অনেক কান্না করেছে।বর্ণ কেবল পুতুলের ন্যায় তাকিয়ে আছে।আর নীলাও কাঁদে নি।সবার মনে একটা ভয় তারা আবার জীবিত নীলাকে দেখতে পারবে কি না।

সবাই বর্ণ আর নীলার থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।তাদের একটু আলাদা কথা বলতে দেওয়া উচিত। সবাই তো জানে বর্ণ নীলাকে পছন্দ করে।

সবাইকে সড়ে যেতে দেখে নীলা বর্নের দিকে তাকালো।করুন স্বরে বলল
-‘ডাক্তার সাহেব কথা বলবেন না? এই কিন্তু শেষ সুযোগ। আর কথা বলার সুযোগ নাও হতে পারে।’

বর্ণ নীলার গাল চেঁপে ধরলো।টলমলে দৃষ্টিতে বলল
-‘তুমি খুব খারাপ নীলাম্বরী খুব খারাপ।আমি সাথে গেলে কি হতো? কি হতো বলো?’

নীলা ব্যাথাতুর হেসে বলল
-‘আপনার মা তার ছেলেকে কতদিনের জন্য পেতো না,আপনার বাবা তার ছেলেকে পেতো না,আপনার পুরো পরিবার তাদের বড় ছেলেকে মিস করতো।পুরো পরিবারের বড় ছেলে আপনি তাদের দায়িত্ব আপনার ঘাঁড়ে।আমি যে এত স্বার্থপর হতে পারবো না।’

বর্ণ দাঁতে দাঁত চেঁপে চোখের জল আটকিয়ে বলল
-‘আমি যদি সেদিন জানতাম তুমি প্রমেজ করিয়ে এমন কিছু চাইবে তাহলে কখনোই আমি প্রমেজ করতাম না।’

নীলা আগের ন্যায় হাসি বজায় রেখে বলল
-‘মনে আছে তো কি চেয়েছি? আপনি আমার সাথে যেতে পারবেন না।আমি জানি আপনি যদি আমার সাথে যান তাহলে আমার দশা সহ্য করতে পারতেন না।তার চেয়ে বরং আপনি এদেশে থেকে অপেক্ষা করবেন।আপনার নীলাম্বরীর ফেরার অপেক্ষা।আর দ্বিতীয় টা হলো মৌ আর দিগন্ত ভাইয়ার বিয়ে দেওয়া।আপনি নিজে দাঁড়িয়ে থেতে তাদের বিয়ে দিবেন।আপনি থাকা মানেই তো আমি থাকা।’

-‘তুমি খুব খারাপ নীলাম্বরী। আমার যে বড্ড কষ্ট হবে এখানে থাকতে তোমাকে ছাড়া।’

-‘ডাক্তার সাহেব একটু কষ্ট করে থেকে যান।আপনার নীলাম্বরী ফিরে আসার সম্ভাবনা ৪০%। এই সম্ভাবনা টুকু আকড়ে ধরে থেকে যাবেন ডাক্তার সাহেব।আপনার সাথে আমার যে হাজার বসন্ত কাটানো বাকি আছে।’

বর্ণ কোনো কথা বলছে না।তার জেনো অতি কষ্টে বাকশক্তি হারিয়ে গিয়েছে।নীলা বর্ণকে চুপ থাকতে দেখে বলল
-‘আপনাকে বিয়ে করার আরেকটা কারণ াছে ডাক্তার সাহেব।’

বর্ন টলমল চোখ নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে বলল
-‘কী কারণ?’

নীলা আনমনে বলল
-‘জানেন তো নিজের স্ত্রীর মৃত্যুর থেকে কষ্ট প্রেমিকার মৃত্যু। না থাকে একটু ছোঁয়ার অধিকার। আমি চাই নি আপনাকে কষ্ট দিতে।আমি মরে গেলে জেনো আমাকে স্পর্শ করার অধিকার সবার আগে আপনার থাকে।’

মৃত্যুর কথা শুনে বর্ণের কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে।নীলার মুখ চেঁপে ধরে বলল
-‘এসব বলো না নীলাম্বরী। আমাকে তো মেরেই রেখে যাচ্ছো।’

নীলা আর কিছু বলে না।ব্যাগ থেকে আরেকটা শপিং ব্যাগ বের করে বর্ণের হাতে দেয়। বর্ণ অবাক হয়ে বলে
-‘কি এটা?’

নীলা গম্ভীর কন্ঠে বলল
-‘আপনি জানতে চাইবেন না আমার এ অবস্থার জন্য কে দ্বায়ী? এইটার ভিতর সেই উত্তর।’

নীলার কথা শেষ হতেই প্লেন ছাড়ার এনাউন্সমেন্ট হলো।নীলা সবার থেকে বিদায় নিয়ে ভিতরে চলে যাচ্ছে।বর্ণ বার বার চাইছে নীলা জেনো পিছে ফিরে একবার তাকায়।কিন্তু বর্নকে নিরাশ করে নীলা হেঁটে যাচ্ছে। বর্ণ মাথা নিচু করে ফেলে।চোখ থেকে এক ফোঁটা জল টুপ করে মাটিতে পরে।হঠাৎ নীলাম্বরী চিৎকার দিয়ে বলে
-‘ডাক্তার সাহেব আমি ফিরে আসবো।অপেক্ষা করবেন।পিছে আমাকে ফিরতেই যে হবে ডাক্তার সাহেব। আমার পুরো পৃথিবী যে আমি পিছে রেখে যাচ্ছি।’

বর্ণ হাজারো কষ্টের মাঝে চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো।

নীলারা চোখের আড়াল হতেই নিরুপমা কান্না করতে করতে ছুটে গাড়ির দিকে চলে গেলো।বর্ণ সবাইকে চলে যেতে বলে নিজেও হাঁটা ধরলো।আজ সে রাতে শহর দেখবে।এই রাত,এই একাকীত্ব তো তার জীবনের মতন যেটা তার নীলাম্বরী তাকে দিয়ে গেলো।

হাঁটতে হাঁটতে বর্ণ একটা ব্রিজের উপর দাঁড়ালো।হঠাৎ হাতের ব্যাগটার দিকে খেয়াল হলো।ব্যাগের মাঝে হাত দিতে একটা ছুড়ি বের হয়ে আসলো।ছুড়িটার মাঝে রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে।বর্ণের পিলে চমকে উঠলো।তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে চিরকুট বের করলো।সেখানে নীলা গোটা গোটা অক্ষরে লিখেছে

প্রিয় ডাক্তার সাহেব,
ছুড়িটা দেখে অবাক হলেন? ছুড়িতে যেই রক্ত গুলো লেগে আছে সে গুলো আপনার নীলাম্বরীর রক্ত।আর যেই হাতের ছাপ আছে সেটা নীলাম্বরীর খুব কাছের মানুষের ছাপ।সে কে জানেন? আপনার নীলাম্বরীর স্বার্থপর বড়মা।হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন।আপনার নীলাম্বরীর স্বার্থপর বড়মাই নীলাম্বরীর পিছে ছুড়ি মেরেছে।তার কথাতেই রাহাত ভাইয়া এত কিছু করেছে।সেদিন বড় মাই আমাকে ছুড়ি মেরেছে।বড়মাই আমাকে ওষুধ গুলো খাইয়েছে।কেনো জানেন?লোভের জন্য। আমার বাবার সম্পত্তি পাওয়ার জন্য। কারণ সব সম্পত্তি আমার নামে লেখা।কি অবাক হচ্ছেন তাই না? পিঠ পিছে ছুড়ি আপন মানুষই মারে।বড়মায়ের এমন অবস্থা কীভাবে হলো জানেন? আমি করেছি।বড়মা যদি সুস্থ থাকতো তাহলে সবাই কোনো না কোনো ভাবে বড়মায়ের বিশ্বাসঘাতকতার কথা জেনে যেতো।আমি চাই নি সবাইকে আর কষ্ট দিতে।তাই নিজে রক্তাক্ত হওয়ার পর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই বড়মাকে।সে বড়বাবাকেও ঠকিয়েছে।তাকে তো একটু শাস্তি পেতেই হতো।তার জন্য আমার বোনের জীবনটাও নষ্ট হতে চলছিেো।

সবটা আপনাকে জানালাম।এই প্রমাণ গুলো আপনি চাইলে রেখে দিতে পারেন।আমি সুস্থ হয়ে ফেরার পর আপনি বললে আমি শাস্তি ভোগ করবো।ভালো থাকবেন ডাক্তার সাহেব। আমি ফিরে আসবো।বছর পঁচিশ পর আমাদের প্রাপ্তির হিসেবটা জেনো হয় জব্বর।’

ইতি
নীলাম্বরী

বর্ণ অবাক হয়ে যায়। তাহলে আজ নীলার এত ক্ষতির জন্য ওর ই বড় মা দ্বায়ী!বর্ণ হাতে থাকা ছুড়িটা ফেলে দেয় ব্রীজের নিচে পানিতে।কিছু রহস্য লুকিয়ে থাকুক পৃথিবীর থেকে।তার নীলাম্বরী কিছুই করে নি।আকাশ পানে তাকিয়ে দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে বর্ণ। দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে।উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে সে বলল
-‘ভালোবাসি নীলাম্বরী।আপনাকে বলা হয় নি আপনার ডাক্তার সাহেব আপনাকে বড্ড বেশ ভালোবাসি।ফিরে আসবেন কিন্তু নীলাম্বরী। এই উন্মাদ ডাক্তার সাহেব আপনার অপেক্ষায় থাকবে।আই নিড ইউ নীলাম্বরী। ভালোবাসি।’

বর্ণের মাথার উপর দিয়ে এক প্লেন ছুটে গেলো ভিনদেশ।হয়তো প্লেনে থাকা রমনীও বলছে “ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব।বড্ড ভালোবাসি”।কিন্তু আফসোস একজনের কথা অপরজন শুনলো না।কখনো সুযোগ আসবে কি না জানা নেই।

(সমাপ্ত)

[অবশেষে শেষ হলো। আপনারা যেমনটা চেয়েছেন তেমনটা করতে পারি নি।এতে হয়তো বর্ণ আর নীলাম্বরীর জীবনে পূর্ণতা পেতো কিন্তু গল্পটা পূর্ণতা পেতো না।তাই এইভাবে শেষ করলাম।এবার নীলা সুস্থ হয়ে ফিরতে পেরেছিলো নাকি অসমাপ্ত রয়ে গেছে তাদেন পথ চলা সেটা পাঠকরা নিজের মতন ভেবে নিন।আর এতদিন পাশে থাকার জন্য ভালোবাসা। আমি আবার ফিরবো আরও কোনো রহস্য নিয়ে😁।পাশে থাকবেন।]