#বিবাহিতার সাতকাহন
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১০
ভেবেছিলাম আলাদা হয়ে নুহাশের কাছে চলে আসলে আমি হয়তো একটু শান্তি পাব। তবে শান্তির পেছনে ছুটা যে অরণ্যে রোদন ব্যতীত কিছু না সেটা কে জানত। সবকিছুতে শান্তি খোঁজাও মাঝে মাঝে অশান্তির মূল কারণ। ভালোবাসা নামক মরীচিকার পেছনে ছুটা মানে নিজেকে নিস্তেজ করে অস্তিত্বহীন করে তুলা।
নতুন শহর। ব্যস্ত শহর। ফ্যাকাশে জীবনের রঙিন শহর। আমাদের নতুন জীবনের সূচণা। নতুন সংসার বুননের একটা ক্ষীণ আশা।
নতুন বাসায় উঠলাম। সরকারি কোয়ার্টার। এ কোয়ার্টারে আরও অনেক পরিবার থাকে। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই লাগছে। একটা ফ্ল্যাটে তিনটা রুম, দুইটা বাথরুম, রান্নাঘর, দুইটা বেলকনি আর ড্রইং, ডাইনিং এর সমন্বয়ে এ ফ্ল্যাটটা।
সাজানো বাকি কেবল। এখনও কিছু কেনা হয় নি। চুপ করে ড্রইং রুমে একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছি। নুহাশ আমাকে বসিয়ে রেখে বাইরে গেল ঘরের কিছু আসবাপত্র কিনতে। আমি কাউকে চিনি না তাই দম ধরেই বসে আছি। সদর দরজাটা খোলা। কেউ একজন বারবার উঁকি দিচ্ছে আবার চলে যাচ্ছে। খানিকটা ভয়ও লাগছে। বুঝতে পারছি না কে এমনটা করছে।
আমি আস্তে পায়ে উঠলাম। সামনের দিকে হালকা হেঁটে সদর দরজায় আসলাম। লক্ষ্য করলাম একটা ছেলে। বয়সে বেশ ছোটোই হবে। এইতো এস এস সি কিংবা এইচ এস সিতে পড়ে। দৈহিক গড়ন তাই বলে। আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগে ছেলেটা বলে উঠল
“আপনি কি নতুন? আমরা পাশের বাসায় থাকি।”
আমি স্বাভাবিক গলায় উত্তর দিলাম
“আজকেই আসলাম।”
ছেলেটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে উত্তর দিল
“আপনার পরিবারের কেউ আসে নি। মানে আপনার বাবা মা। উনাদের দেখছি না তো?”
“আমি আর আমার হাসবেন্ড এসেছি। আমার হাসবেন্ড বগুরা থানাতেই আছে তাই।”
সামনে থাকা যুবকের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আমার দিকে একটু তাকাল তারপর মাথাটা নীচু করে বলল
“ওহ আপনি ম্যারিড?”
হালকা হেসে প্রশ্ন ছুড়া হলো
“কেন আপনি কী ভেবেছিলেন? আচ্ছা আপনি কী করেন?”
কিছুটা ভরসা চোখে তাকিয়ে উত্তর দিল
“আমি পিয়াস। এইচ এস সি দিব। আচ্ছা আপনি কিসে পড়েন? আর আপনার হাসবেন্ডের নাম কী?”
মোলায়েম মৃদু গলায় উত্তর দিলাম
“তুমি তো আমার ছোটো হবা। আমি অনার্সে পড়ি। নুহাশ আমার হাসবেন্ডের নাম।”
বেশ টেনে কথার ধ্বনি কানে আসলো
“ওওওও নুহাশ ভাইয়ার ওয়াইফ আপন? উনাকে তো অনেক ভালো করেই চিনি। আমার বাবার সাথে জব করতেন। আমার বাবা তো এখন অন্য জায়গায় পোস্টিং এ আছে। আমারা ভাইবোন পড়ালেখা করি তাই আমরা এখানে থাকি। নাহয় বাবার সাথে চলে যেতাম।”
আমি আর কথা বাড়াতে চাইলাম না। অহেতুক কথা বাড়ানোর প্রয়োজনও অনুভব করছি না। তাই কথার সমাপ্তির উদ্দেশ্যে ছোটো একটা শব্দ উচ্চারিত হলো।
“ওহ আচ্ছা।”
কিন্তু অপরপক্ষের ছেলেটা চাচ্ছে না কথার সমাপ্তি হোক। সে চাচ্ছে কথার বিস্তৃতি ঘটুক। একটু টেনে হিঁচড়ে কথা গুলো সামনের দিকে এগিয়ে যাক। তাই সে সমাপ্ত কথার রেশটাকে উল্টিয়ে দিয়ে বলল
“আপু আমরা পাশের বাসায় থাকি। আমি, আমার মা আর বোন থাকি। যদি কোনোকিছু প্রয়োজন পড়ে তাহলে আমাদের বলবেন। আর আপনার নাম কী?”
ছেলেটা কথা জুড়ে দিতে চাইলেও আমার ইচ্ছা হচ্ছে না কথা বলতে। কারণ আমার মথায় শুধু নুহাশ কখন ফিরবে সে চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে বললাম
“আমার নাম মুমু। আচ্ছা ঠিক আছে থাকো। পরে কথা হবে। আর কিছু লাগলে অবশ্যই দরজায় নক দিব।”
কথাগুলো বলে সদর দরজা থেকে সরে এসে রুমে বসলাম। পিয়াস এখনও মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে৷ ছেলেটা কী চায় কে জানে। বেশিক্ষণ উঁকিঝুঁকি এর পালা স্থায়ী হলো না। পিয়াস চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর নুহাশ আসলো। ঘরের সকল আসবাপত্র নিয়ে। বলাচলে যাবতীয় সব জিনিসপত্র কিনে নিয়ে এসেছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে এতকিছু কীভাবে হ্যান্ডেল করল সেটাই ভাবছি। জিনিস পত্র গুলো লোক দিয়ে সেট করানো হচ্ছে। নুহাশ এর মধ্যে আমাকে ডেকে বলল
“কখন থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। এখানে রুটি আর পরোটা আছে এক পাশে বসে খেয়ে নিও। আমি পাশের বাসায় পিয়াসের আম্মুকে বলে যাচ্ছি। কোনো দরকার লাগলে উনাকে বলবে। আমি এখন ডিউটিতে যাচ্ছি। ফিরতে সকাল হয়ে যাবে। উনারা জিনিস পত্র সেট করে গেলে তুমি সব তোমার মতো করে গুছিয়ে নিও।”
আমি মাথা নেড়ে গেলাম। অন্যের অধীনে চাকুরি চাইলেও তো আমাকে সময় দেওয়া সম্ভব না। তাই থেকে যাওয়ার আবদারটা জুড়ে দিলাম না।
নুহাশ চলে গেল। আমি এক পাশে বসে খেয়ে নিলাম। রাতও ভালো হয়েছে। সদর দরজা খোলা রেখেই কাজ করছি। এর মধ্যে একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা আসলো আমার রুমে। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে জানতে পারলাম উনি পিয়াসের মা। আমাদের সামনের ফ্ল্যাটেই থাকে। আমার দিকে এগিয়ে এসে তিনি জিজ্ঞেস করলেন
“খাওয়া দাওয়া হয়েছে? আর কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো? নুহাশ তোমার কথা বলে গেল তাই দেখতে আসলাম। ফার্নিচার সব সেট করা হয়নি দেখা যায়। শুনো তোমার বোরিং লাগলে আমাদের ফ্ল্যাটে এসো। এদিকে এরা ফার্নিচার সেট করতে থাকুক। এ ঘর গুছাতে মিনিমাম ছয়, সাতদিন সময় লাগবে।”
আমি শুধু হু হা করে গেলাম। উনি কিছুক্ষণ কথা বলে উনার ফ্ল্যাটে চলে গেলেন। বুঝতে পারলাম উনি অনেক কথা বলেন আর দ্রূত কথা বলেন। ততক্ষণে আমি খাওয়া শেষ করে সবকিছু দেখে নিলাম আরেকবার। ফার্নিচার সেট শেষে উনারা চলে গেলেন। আমি ফার্নিচার আরেকটু গুছিয়ে নিলাম। হাত,পা আর চলছে না, আরেকটু ঘুমানো দরকার। তাই কোনোরকম গুছিয়ে দরজাটা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
চোখটা লেগে আসতেই মনে হলো কেউ আমার পাশে। চোখ খুলতেই ভয় পেয়ে গেলাম হুট করে।
কপি করা নিষেধ