বিয়ে পর্ব-২২+২৩

0
876

#বিয়ে
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব- ২২

ধ্রুব ওর কপালে কপাল ঠেকালো। এরপর আচমকা চোখমুখে অসংখ্য চুমু দিতে দিতে বলল,
— আমার ব্যথা এরচেয়ে ভয়ংকর।
অদ্রি এবার জোরে ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে দিলো। ধ্রুব নিজের মধ্যে ফিরে এলো, ও হাঁপাচ্ছে। অদ্রি কাঁদতে কাঁদতে বলল,
— আপনি ভালোবাসতে জানেন না। খুব স্বার্থপর…
— আমি স্বার্থপর?
প্রশ্নটা যেন নিজের মনকেই করলো ধ্রুব। তবে উত্তর পেলো না। অদ্রিকে এভাবে প্রথম কাঁদতে দেখছে সে। ও হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অনুমতি ছাড়া চুমু খেয়েছে এজন্য অদ্রি রেগে গেছে সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ও। মেয়েটা তো এখনো সহজ হয়নি ওর সাথে।
ধ্রুব কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু অদ্রি তা শুনতে রাজি নয়। একপ্রকার জেদ আর অভিমানের সংমিশ্রণে দারুণ রেগে গেছে ও। সেজন্য ধ্রুব’র কোনো কথা না শুনেই ও বিছানায় এসে শুয়ে পড়েছে। ধ্রুব হন্তদন্ত হয়ে ঘরে এসে জিজ্ঞেস করলো,
— কান্না বন্ধ করো অদ্রি। আমি এমনটা করতে চাইনি…
অদ্রি ভেজা গলা। ও বিরক্ত হলো। বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
— আমাকে এখন ঘুমাতে দিন। প্লিজ…
ধ্রুব আবারও অধৈর্যবোধ করলো,
— তুমি এত দুর্বোধ্য ব্যবহার কেন করছো আমার সাথে?
অদ্রি শক্ত কন্ঠে বলল,
— কারণ আপনার প্রতিটি ব্যবহার আমি ভুলতে পারিনি এখনো। আপনার প্রত্যেকটি অপমান মনের ভেতর গেঁথে আছে, যেখান থেকে মুছতে পারছি না। সবথেকে বেশি কোন কথাটা মনে আছে জানেন? আপনার বিয়ে ভাঙার সেই লেইম অফারের কথাটা।
— আমি তো ক্ষমা চেয়েছি অদ্রি, যত দিন গিয়েছে আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি।
— ক্ষমা জিনিসটা কি এতই ঠুনকো? যে আপনি চাইলেন আর আমি করে দিলাম? এরজন্য তো…
ধ্রুব ওর কথা শেষ করতে দিলো না। তার আগেই বলে ওঠলো,
— তোমার কি তাহলে সময় প্রয়োজন? কতদিন? একদিন? একমাস? একবছর? ঠিক কতদিন অদ্রি?
— উহু! আদৌ জানিনা আমি আপনাকে মাফ কর‍তে পারবো কি-না!
— ভালোবাসি এটা যথে..
অদ্রি হাসলো। সেখানে স্পষ্ট তাচ্ছিল্য মিশে আছে,
— শুনুন, আমার মা-বাবার প্রেমের বিয়ে, কিন্তু মা মারা যাওয়ার ঠিক পনেরোদিন পরেই আমার বাবা অন্য একজনকে বিয়ে করে নিয়ে আসে। ঠিক পনেরোদিন। ভালোবাসার স্থায়িত্ব ঠিক পনেরোদিন ছিলো…
ধ্রব নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,
— আমি তো তোমার বাবা নই অদ্রি।
অদ্রি তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
— যে মানুষটা আমায় জন্ম দিয়েছে, যে মানুষটা আমাকে বড় করেছে সে যদি এভাবে পালটে যেতে পারে, মা’কে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি আর নিজের ভালোবাসাকে ভুলে যেতে পারে, কি করে বিশ্বাস করবো আপনি আমার সঙ্গে এমনটা করবেন না?
ধ্রুব নমনীয় হওয়ার চেষ্টা করলো,
— সব মানুষ তোমার বাবার মতো নয়। তাহলে পৃথিবীতে ভালোবাসার এত এত মহাকাব্য আর রচনা থাকতো না।
পৃথিবীর সব মেয়ে যেমন তোমার মতো কঠিন হৃদয়ের না, তেমনি সব ছেলেও তোমার বাবার মতো না।
অদ্রি ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো,
— আপনি তো আমার প্রতি ভালোলাগা সৃষ্টি হওয়ায়, আমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছেন না, সেজন্য ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসেছেন। এটা কি স্বার্থপরতা নয়?
ধ্রুব দূরে দাঁড়িয়ে থেকেই বলল,
— তাহলে তুমিও কি স্বার্থপর নও অদ্রি?
ধ্রুবর চোখ জ্বলজ্বল করছে। অদ্রি থমকে গেলো। আড়ষ্ট কন্ঠে বলল,
— আমি?
ধ্রুব কঠোর গলায় বলল,
— আমার কাছ থেকে ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট নিতে চাও না, আমাকে তুমি চাও না, স্বাভাবিক লাইফ চাও না। তাহলে কেন আছো এ বাড়িতে? কি আছে তোমার এখানে?
অদ্রি নিশ্চুপ। ধ্রুব বলল,
— সবকিছু নিজের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য করছো তুমি। আমার মায়ের কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে,
একটা পরিবারের সবার কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে এখানে পড়ে আছো। এরপর এডমিশন হয়ে গেলে চলে যেতে চাও। সবটাই নিজের স্বার্থপূরণের জন্য। তাই নয় কি?
অদ্রির চারপাশটা দিকশূন্য ঠেকলো। বিব্রতবোধ কেমন জেঁকে ধরলো আষ্টেপৃষ্টে। ধ্রুব’র বলা কথাটা তো আংশিক নয়, পুরোপুরি সত্যি। বাবার প্রতি রাগ দেখিয়ে বিয়ে করলেও সে তো জানতো এই মানুষগুলো ওকে মা-বাবার স্নেহ দেবে। খানিকটা লোভেই তো সে এ বাড়িতে এসেছে। ধ্রুব’র ভালোবাসার অভাব বোধ করেনি কোনোদিন শুধুমাত্র ওদেরই জন্য! অদ্রি কি জবাব দেবে এবার? ওর কাছে এই প্রশ্নের কোনো উত্তরই তো নেই। সেজন্য খুব সন্তপর্ণে এড়িয়ে গেলো কথাটা। উল্টো স্তিমিত কন্ঠে প্রতুত্তর করলো,
— আমি ঘুমাতে চাই।

অদ্রির মনোভাব অনুমান করতে পারলো ধ্রুব।
অবশেষে একটি ছোট্ট প্রশ্নে অদ্রি আটকেছে। ও ইচ্ছেকৃত এসব বলতে চায়নি, কিন্তু কি করবে সে? অপ্রিয় সত্যগুলো কখনো কখনো প্রকাশ করতে হয়, যাতে করে নিজের জিনিস নিজেরই থাকে। অদ্রি যতই এড়িয়ে যাক না কেন ধ্রুব’র করা এই প্রশ্নের জবাব অদ্রির নিজেকেই দিতে হবে। হোক আজ, কাল বা পরশু। ধ্রুব তীক্ষ্ণ কন্ঠে অদ্রিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— তুমি সত্যিই একটা ইগোস্টিক মেয়ে।

অদ্রি শুনলো, ব্যথিত হলো কিন্তু কোনো দ্বিরুক্তি করলো না। ওর বড্ড ক্লান্ত লাগছে। ধ্রুব’র করা অভিযোগ গুলো ওর হৃদয়ে তীব্র এক দহন তৈরি করেছে। সত্যিই পৃথিবীর সব মানুষ আলাদা, তাঁদের চলন-বলন, কথাবার্তা, স্বভাব-চরিত্র আলাদা। তাহলে অদ্রির কেন শুধু মনে হয় পৃথিবীর পুরুষরা ওর বাবার মতো, ওরা ভালোবাসতে জানে না? সত্যিই! ভালোবাসা না থাকলে পৃথিবীতে এতো মহাকাব্য রচনা হতো না। অদ্রি আপনমনে ধ্রুব’র বলা কথাগুলোর গভীরে ডুবে যেতে থাকে, ওর চোখের কোণে জল!

তীব্র বর্ষণের এক সকাল। বৃষ্টি থামার কোনো নামগন্ধও
নেই। ঘন-কালো মেঘ জড়িয়ে রেখেছে আকাশটাকে। দূর থেকে দূরান্ত, বিশাল নীলাম্বরের কোথাও সূর্যের ছিঁটেফোটা পর্যন্ত দেখা যায় না। ভেজা গাছের পাতাগুলো প্রচন্ড বেগে দুলছে। হাসনাহেনা আর কামিনীর সুঘ্রাণ মাতাল করে দিচ্ছে পুরো প্রকৃতিকে। নীরবতায় ঘেরা প্রকৃতিতে শুধুমাত্র শোনা যাচ্ছে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ। ঠান্ডা বাতাসে ক্রমেই সবকিছু শীতল হয়ে ওঠছে। একটু পরপর কেঁপে ওঠছে জানালার কপাট। বৃষ্টির শব্দে এবং প্রচন্ড ঠান্ডা লাগায় অদ্রি ওঠলো। বহুকষ্টে দু’চোখ মেলে তাকালো। চাদরে শীত মানছে না, সেজন্য ওঠে গিয়ে কম্বল নিয়ে এলো। তারপর আবার শুয়ে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম নামলো না চোখে।
একটু পর খেয়াল করে দেখলো ঘুমের মধ্যে ধ্রুবও ঠান্ডায় গুটিশুটি মেরে কাঁপছে। না চাইতেও অদ্রির ভীষণ হাসি পেয়ে গেলো। লোকটা কি বোকা নাকি? এত ঠান্ডায় কোথায় কম্বল মুড়িয়ে ঘুমুবে তা নয়তো শীতে জবুথবু হচ্ছে। অদ্রি আবারও ওঠে বসলো। দু’জনের মধ্যে প্রায় এক হাত দূরত্ব। তাছাড়া কীভাবে কম্বলটা দিয়ে দুজনকে কভার করবে সেটা নিয়েও অস্বস্তি হচ্ছিলো ওর। কিন্তু এত ঠান্ডায় অস্বস্তিকে মনের ভেতর জায়গা দিলে চলবে নাকি? এমনিতে যদিও অদ্রি ওর ওপর রেগে আছে কিন্তু এখন আর কি করা যাবে? ও তো আর এতোটাও কেয়ারলেস না। এসব সাতপাঁচ ভেবে অদ্রি ধ্রুবকে নিজের দিকে আনার চেষ্টা করলো। ওর ঘুম ভাঙানোর ইচ্ছে ছিলো না অদ্রির। কিন্তু এত বড় শরীরটাকে টেনে নিয়ে আসার সাধ্য ওর নেই। সেজন্য অদ্রি নিজেই ধ্রুব’র একটু কাছে গিয়ে শুয়ে পড়লো, একরাশ অস্বস্তি নিয়ে। কম্বলটা দিয়ে ভালোমতো ঢেকে দিতেই ধ্রুব নড়েচড়ে শুলো। কিন্তু আরামদায়ক আবহাওয়ার দরুন কিছুতেই ওর ঘুম ভাঙলো না।

গতরাতে বলা ধ্রুবর কথাগুলো মনমস্তিষ্কে জড়াতেই অদ্রির কপালে ভাঁজ পড়লো। ধ্রুব’র আচরণ, ক্ষমা চাওয়া সবকিছু ওর ভাবনার বাইরে ছিলো। অদ্রি একদৃষ্টিতে ওকে দেখতে থাকে। উত্তাল হয় নতুন এক অনুভূতি। “আমিসহ আমার সমস্ত কিছু তোমার হয়ে গেছে” এই কথাটায় যেন মিশে ছিলো অন্যরকম কিছু। অদ্রি অনুভব করতে পারছিলো তখন। একরাশ দ্বিধা আর ধ্রুব’র কর্মকান্ড ভাবতে ভাবতে অদ্রি চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে। স্বচ্ছ কাঁচ বেয়ে গড়িয়ে চলা বর্ষণের তীব্রতা কেমন কাঁপন ধরায় ওর হৃদস্পন্দনে। নিজের কম্পিত হাতটা আলতো করে বুলিয়ে দেয় ধ্রুব’র শাইন করা কালো চুলগুলোতে।

বৃষ্টির দিন হওয়ায় শায়লা চুলায় খিচুড়ি চাপালেন। সঙ্গে আরও নানা পদের তরকারি। জরিনা মশলা বাটছে। রুখসাত জাহান নিজের জন্য কফি তৈরি করছেন। তিনি খুব মিশুক মানুষ। এ বাড়িতে আসার পর শায়লা আর জরিনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করেন। কোনোপ্রকার দ্বিধাবোধ না করেই। বাড়ির অন্যান্যরা সবাই এখনো গভীর ঘুমে থাকায় লিভিংরুমটা শান্ত, নীরব হয়ে আছে৷ রুখসাত জাহান কফির মগে চুমুক দিতে দিতে রাদিফের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছেন। তারও ইচ্ছে দেশের কোনো মেয়েকে
তার ছেলের বউ করাবেন। কানাডার আধুনিক মেয়েরা দেখতে রূপবতী হলেও বউ হিসেবে নিজের দেশের মেয়েরাই সেরা। শায়লা প্রস্তাব দিলেন তার মেঝো ভাইয়ের মেয়ের জন্য। এসব নিয়েই দুজনের মাঝে বিস্তর আলোচনা চললো বহুক্ষণ। একটু পরেই অদ্রি নিচে এলো। জরিনা চা নিয়ে এলো ওর জন্য। হেসে হেসে জানালো রাদিফের বিয়ের ব্যাপারটা। শায়লা ডাইনিংয়ে খাবার বেড়ে দিতে দিতে অদ্রিকে বললেন ধ্রুবকে ডাকতে।

অদ্রি ধীরপায়ে করিডোর ধরে এগিয়ে চলেছে। ধ্রুব হয়তো এখনো ঘুমিয়ে আছে ভেবে নব ঘুরিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো ধ্রুব তোয়ালে পরে দাঁড়িয়ে আছে আয়নার সামনে। ফর্সা, বলিষ্ঠ দেহের ধ্রুব’র এমন রুপ দেখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে থমকে গেলো ও। আর দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ধ্রুব ঘাড় ফিরিয়ে দেখতে পেলো অদ্রিকে। এরপর ভীষণ অবাক দৃষ্টিতে ওভাবেই তাকিয়ে থাকলো। পরক্ষণেই পুরো ব্যাপারটা ওর মাথায় আসতেই ত্বরান্বিত পায়ে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। অদ্রি ততক্ষণে নামিয়ে ফেলেছে ওর নিজের দৃষ্টি। ধ্রুব’কে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে চোখ বন্ধ করে আড়ষ্ট গলায় বলল,
— আমি সত্যি কিছু দেখিনি।
ধ্রুব দেখলো অপ্রস্তুত অদ্রিকে। কোমল, মুখখানা
কি স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে! গলার কাছের তিলটায় চোখ পড়তেই শীতল শিহরণে ডুবে গেলো ও। এরপর স্মিত হাসলো। মৃদু গলায় বলল,
— জানি কিছু দেখো নি। কিন্তু দেখলেও কিছু মনে করবো না….
অদ্রি চট করেই চোখ খুলে ফেললো। ভ্রু কুঁচকে রেগে তাকালো। তারপর বলে ওঠলো,
— নির্লজ্জতার সীমা পার করে ফেলেছেন অনেক আগেই। তবে এতটা সীমাও অতিক্রম না করলে পারতেন।
ধ্রুব অস্থির গলায় ফের জিজ্ঞেস করলো,
— এখানে নির্লজ্জের কি হলো? হুহ? তুমি আমার অল টাইম লাইফ পার্টনার! আমার এই সুন্দর বডি দেখে কি তুমি ইম্প্রেস হও নি?
ধ্রুব’র এমন লাগামহীন, ঠোঁটকাটা কথাগুলো শুনে অদ্রি র বিস্ময়ের সীমা রইলো না। সঙ্গে সঙ্গে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো অন্যদিকে। এরপর তীক্ষ্ণ গলায় বলল,
— আন্টি খেতে ডাকছে!
ধ্রুব নিষ্পলক চেয়ে রইলো ওর মুখপানে। অদ্রি চলে যেতে লাগলে ও মৃদুস্বরে বলল,
— কিছুই যখন বলোনি তার মানে তুমি আমার সুন্দর বডি দেখে ইম্প্রেস হয়েছো!
অদ্রি নিজের হাসি কিভাবে আর কোথায় লুকাবে ভেবে পেলো না। এই ধ্রুব এমন অদ্ভুত আচরণ করছে যে বহুদিন পর ওর পেট ফেটে হাসি আসছে। ও পেছনে না তাকিয়েই বলল,
— বডি দেখে বোকারা ইম্প্রেস হয়, আমি না!

বলে অদ্রি নেমে গেলো। ধ্রুব’র মুখ শুকিয়ে গেলো একথা শুনে। ও তো জানতো অদ্রি ওকে ডাকতে আসবে, সেজন্যই তো আয়নার সামনে ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো যাতে অদ্রি ওর বডি দেখে ইম্প্রেস হয়। কিন্তু না, এই মেয়ে উল্টো ওকে তাচ্ছিল্য করে চলে গেলো। অদ্রিকে টলানোর জন্য ও কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না, বন্ধুদের কাছে তো আর এসব শেয়ার করা যায় না। সেজন্য ইউটিউবে বউয়ের ভালোবাসা পাওয়ার টিপস দেখেছিলো সে। ১০০% কার্যকারিতার এই টিপসেও অদ্রির মন না গলাতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউটিউবারকে কে এই টিপস দিলো ধ্রুব রাগ নিয়ে বসে এটাই চিন্তা কর‍তে লাগলো।

[ অদ্রি চরিত্র লিখে এই প্রথম এত রোষানলের শিকার হলাম। যাইহোক, ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ]

চলবে…..

#বিয়ে
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-২৩

ধ্রুব’র মুখ শুকিয়ে গেলো একথা শুনে। ও তো জানতো অদ্রি ওকে ডাকতে আসবে, সেজন্যই তো আয়নার সামনে ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো যাতে অদ্রি ওর বডি দেখে ইম্প্রেস হয়। কিন্তু না, এই মেয়ে উল্টো ওকে তাচ্ছিল্য করে চলে গেলো। অদ্রিকে টলানোর জন্য ও কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না, বন্ধুদের কাছে তো আর এসব শেয়ার করা যায় না। সেজন্য ইউটিউবে বউয়ের ভালোবাসা পাওয়ার টিপস দেখেছিলো সে। ১০০% কার্যকারিতার এই টিপসেও অদ্রির মন না গলাতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউটিউবারকে কে এই টিপস দিলো ধ্রুব রাগ নিয়ে বসে এটাই চিন্তা কর‍তে লাগলো।

এডমিশন এক্সামটা অদ্রির কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মেডিকেল বা বুয়েটে সে এক্সাম দেবে না। সেজন্য ভার্সিটি এক্সামের প্রতিই ওর সব মনোযোগ। একটা ভ্যালুয়েবল সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে না পারলে তার এতদিনের পরিশ্রম বৃথা যাবে। তাই একপ্রকার নাওয়া-খাওয়া ভুলে সে পড়ায় মগ্ন দু’দিন ধরে। এজন্য রাদিফ-ফ্লোরাদের সাথে গল্প করার খুব একটা হয় না ওর। দরকার ছাড়া খুব কমই ঘর থেকে বের হয়। শায়লার বকা-ঝকার কারণে কোনোমতে খাবারটা
খেতে নামে নিচে। এছাড়া পৃথিবীর সবকিছু যেন
ভুলে গেছে এমনভাবেই পড়ায় মগ্ন অদ্রি। মেয়েটা চারপাশের সবকিছু ভুলে গেছে পড়ার চাপে। ধ্রুব অফিসে যাওয়ার সময় দেখে যায় ও টেবিলে বসে পড়ছে আবার ফিরেও দেখে এই এক দৃশ্য।

চারদিন ধরে এই দৃশ্য দেখে ওর বেশ মনক্ষুন্ন হয়।
পড়াটা কমপ্লিট করলেই তো চলে, দিনরাত টেবিলে বসে থাকার কি প্রয়োজন? ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে ও অদ্রির সামনে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে থাকে ওর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায়। কিন্তু অদ্রি ক্যালকুলেটর নিয়ে হিসেব কষায় মগ্ন। ঠিক তখুনি টেবিলের ওপর অদ্রির ফোন ভ্রাইবেট করলো। কম্পিত ফোনটাও অদ্রির মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে ব্যর্থ হলো। ধ্রুব এবার বিরক্তি নিয়ে ফোনটা তুলে নিলো। স্ক্রিনে “রাহাত” নামটা দেখে ভ্রু কুঁচকালো, কিন্তু কোনো প্রশ্ন করলো না অদ্রিকে। এরপর শক্ত চেহারা নিয়ে ফোনটা নিয়ে অদ্রির মুখের সামনে তুলে ধরে বলল,
— তোমার ফোন।
হঠাৎ এরকম করায় অদ্রি হা করে চাইলো ওর দিকে। যেন ধ্রুব কি নিয়ে কথা বলছে বুঝতে পারছে না।
এটা দেখে ধ্রুব একপ্রকার ধমকেই ওঠলো,
— এতক্ষণ ধরে বাজছে ফোনটা, শুনতে পাও না?
সব মনোযোগ যখন পড়াশোনায়ই দেবে তাহলে ফোন ব্যবহার করা, মানুষকে খেয়াল করা একেবারে বন্ধ করে দিলেই তো পারো।
অদ্রি এবার বুঝতে পারলো ঘটনা কি! ও তড়িঘড়ি করে ধ্রুব’র হাত থেকে ফোন নিয়ে নিলো। তারপর নমনীয় গলায় বলল,
— স্যরি।
বলে ফোনটা রিসিভ করলো। কানে লাগিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কে?
ওপাশ থেকে রাহাতের গলা শোনা গেলো। কথা বুঝতে অসুবিধে হওয়ায় অদ্রি ফোনটা নিয়ে ব্যলকনিতে চলে গেলো। নোটস নিয়ে বিস্তর আলোচনা চললো ওদের। কিছুক্ষণ পর ফোনে কথা বলা শেষে অদ্রি যখন ঘরে এলো ধ্রুব অধৈর্য্য গলায় বলল,
— সারাক্ষণ এভাবে পড়লে তো মাথায় জ্যাম লেগে যাবে। কিছুক্ষণ পরপর ব্রেক নাও, তাহলে সব মনে রাখতে সুবিধা হবে।
অদ্রি ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
— অনেক পড়া বাকি। ব্রেক নিলে কমপ্লিট হবে না…
বলতে বলতে আবার টেবিলে বসতে গেলে ধ্রুব ওকে আটকে দিলো। অদ্রির হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
— পাঁচ মিনিট ব্রেক নিলে তেমন কিছুই হবে না।
এভাবে হাত ধরে টান দেওয়ায় অদ্রি বেশ চমকে গেলো। এরপর নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,
— পরীক্ষা তো আমার, সেজন্য টেনশনটা আমারই। আপনি কি করে বুঝবেন…
ধ্রুব কপালে ভাঁজ ফেললো। ওর ইচ্ছে করছে অদ্রিকে
একটা বোতলে আটকে নিজের বুকপকেটে রেখে দিতে। যাতে সারাক্ষণ পড়া নিয়ে ব্যতিব্যস্ত না থেকে ওর সাথেও সময় কাটায়, গল্প করে। এবার ও একটু কড়া গলায় বলল,
— এই টপিক বাদ…
— তাহলে কোন টপিক চলবে?
ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
— আমি কি খুব খারাপ? আমার সাথে সময় কাটালে
কি তুমি বোর হও?
অদ্রি ঠোঁট উল্টালো। মাথা নাড়তে নাড়তে বলল,
— অবশ্যই।
ধ্রুব অধৈর্য্য হয়ে বলল,
— আমার সাথে তো কখনোই গল্প করো না, তাহলে দেখবে আর বোরিং লাগবে না। তুমি তো সবসময়
আমাকে বাদ দিয়ে অন্য সবার সাথে গল্প করো,
জানো আমার কত কষ্ট হয়?
অদ্রি ভাবলেশহীনভাবে বলল,
— আমি কি করে জানবো? আপনিই না সেদিন বললেন আপনার নাকি আমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে কষ্ট হয়। আদৌ সত্য কি-না কে জানে! যাইহোক, পাঁচ মিনিট শেষ, এবার আমাকে পড়তে হবে।
অদ্রি ওঠে যেতে নিচ্ছিলো। ধ্রুব নিতে পারলো না এবার অদ্রির উপেক্ষা। আচমকা বিছানায় পা তুলে অদ্রির কোলে মাথা রেখে সে শুয়ে পড়লো। চোখদুটো বন্ধ করে বলল,
— খুব মাথাব্যথা করছে।
অকস্মাৎ ধ্রুবর এমন কার্যে হতবিহ্বল হয়ে পড়লো অদ্রি। চোখদুটোতে নেমে এসেছে একরাশ বিস্ময়। ঠোঁট নড়তে চাইছে না মোটেও। তবুও কুঁচকে থাকা ভ্রু জোড়া স্বাভাবিক করে কঠোরভাবেই বলল,
— আমি কি করতে পারি?
ধ্রুব ধীর গলায় বলল,
— অনেককিছু করতে পারো। একটু চুলগুলো টেনে দিতে পারো, মাথা টিপে দিতে পারো।
অদ্রি বলল,
— আমি? এখন?
ধ্রুব ওর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল,
— অফিসের কাজের চাপ থেকেই এই মাথাব্যথার উৎপত্তি, বেশ বুঝতে পারছি! দাও তো…
অদ্রির গা থেকে ভেসে আসছে একটা মিষ্টি গন্ধ। ধ্রুব ডুবে যেতে থাকে সেই ঘ্রাণে। অদ্রি ওকে সরানোর চেষ্টা করে বলে,
— উঠুন, আমি ঔষধ এনে দিচ্ছি। খেলেই কমে যাবে।
ধ্রুব নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,
— কমবে না অদ্রি, খুব বেশি মাথাব্যথা।
অদ্রি ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,
— সেজন্যই তো এনে দিচ্ছি, দেখি সরুন। আমাকে যেতে দিন।
ধ্রুব আগের থেকে শক্ত হয়ে নিজের মাথাটা রাখলো অদ্রির কোলে। ও নড়াচড়া করার সুযোগ পেলো না।
এটা যে স্রেফ অযুহাত সেটা অদ্রি ভালোভাবেই বুঝতে পারলো। লোকটা ইদানীং ওর অ্যাটেনশন পেতে এত নাটক করে যে ভেবেই ওর হাসি পায়। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ধ্রুব’র দিকে। ও সেটা টের পায় না। এরপর মৃদু তেজ নিয়ে ধ্রুব বলে ওঠলো,
— তোমার হাতের ছোঁয়া না পেলে কোনো ঔষধেই কমবে না অদ্রি।
বলে নিজেই জোর করে অদ্রির হাত টেনে নিয়ে ওর কপালে রাখে। চোখ বন্ধ করে অনুভব করার চেষ্টা করে ওর ছোঁয়া। বুকের ভেতর ভীষণ শান্তি অনুভব করে। প্রসন্ন কন্ঠে বলে,
— একটু ছুঁলে কিছু হবে না।
ধ্রুব’র ঘোর লাগা কন্ঠস্বর। অদ্রি বিপরীতে বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না। ও থমকে যায়। কেমন মুখ গোঁজ করে দ্বিধাবোধ নিয়ে বসে থাকে। হাত নড়তে
চায় না। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করার যথেষ্ট চেষ্টা করতে ও ধ্রুব’র কপালে, চুলে আঙ্গুল চালাতে থাকে। অদ্ভুত এক ভালোলাগায় আটকে যায় ওর নিঃশ্বাস!

অদ্রির মনে সুপ্ত একটা ভয় ছিলো এক্সাম নিয়ে। প্রিপারেশন যদিও ভালো ছিলো তবুও পরীক্ষার
আগের রাত থেকে বেশ নার্ভাসনেস কাজ করছিলো ওর মধ্যে। চিন্তায় চিন্তায় পড়ায় মন দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলো। শায়লা ওর মনোভাব বুঝতে পারলো। বিভিন্ন কিছু বলে ওর মন ঘুরানোর চেষ্টা করছিলো। কিন্তু তবুও অদ্রির কিচ্ছু ভালো লাগছিলো না। কিছু একটার অভাববোধ করছিলো সে। এরপর ধ্রুব যখন প্রতিদিনের মতো অদ্রির পড়াশোনা নিয়ে ওর সাথে বিতর্কে জড়ালো তখন অদ্রি নিজের মনে একটু শান্ত অনুভব করলো। দিনদিন ধ্রব’র এই আচরণগুলোতে কেমন অভ্যস্ত
হয়ে যাচ্ছিলো সে। অদ্রি নিজেকে সামলালো।
নিজেকে ব্যস্ত রাখতে ধ্রুব’র কফিটা নিয়ে এসে ওকে দিলো। তবুও মনে ভয় ছিলো ঢাকা ভার্সিটির এক্সামটা হয়তো ভালো হবে না। কিন্তু অদ্রিকে ভুল প্রমাণ করে ওর ভার্সিটি এক্সাম খুব ভালো হলো। হল থেকে বেরিয়ে শতশত মানুষের ভিড়ে অদ্রি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলো। ওকে নিয়ে এসেছে ধ্রুব, ফ্লোরাও
এসেছে। যদিও শায়লা আসতে চাচ্ছিলো তবে ধ্রুব রাজি হয়নি। নিজের ফোনটা কাছে না থাকায় ফ্লোরা আর ধ্রুবকে কি করে ওর অবস্থান জানাবে বুঝে ওঠতে পারছিলো না অদ্রি। আচমকা প্রচন্ড ভিড় ঠেলে একটা বলিষ্ঠ হাতের ছোঁয়া পেলো ওর কাঁধে। অদ্রি চমকে ঘুরে তাকিয়ে দেখতে পেলো কালো শার্ট পরিহিত লম্বা মানুষটিকে। ধ্রুব, সাথে ফ্লোরাও আছে। ও শান্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

এত মানুষের ভিড়ে কোনোভাবে যাতে কেউ ব্যাড টাচ করতে না পারে সেজন্য দু’হাতে আগলে রাখলো ধ্রুব অদ্রিকে, সামলালো ফ্লোরাকেও। তবুও পেছন থেকে দুটো ছেলে টিজ করছিলো ওদেরকে নিয়ে। এমনকি দু’বার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছিলো টাচ করতে। একপর্যায়ে ধ্রুব’র মেজাজ সপ্তমে পৌঁঁছালো। ভিড় থেকে বেরিয়ে ফ্লোরা আর অদ্রিকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দাঁড় করিয়ে রাস্তার ওপাশে চলে গেলো। কিছু বোঝে ওঠার আগেই ওরা দুজন দেখলো ধ্রুব দুটো ছেলের সঙ্গে বাকবিতন্ডতায় জড়িয়েছে। এরপর হঠাৎই একটা ছেলের কলার ধরে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিলো গালে। অদ্রি এতোটাই হতভম্ব হয়ে গেলো যে ওর হাত থেকে ব্যাগ পড়ে গেলো। ফ্লোরাকে নিয়ে একপ্রকার ছুটেই গেলো সে ধ্রুব’র দিকে। বিবাদ থামানোর চেষ্টা করলো। ধ্রুব মোটেও ছাড়লো না ছেলে দুটোকে। ইতোমধ্যে আশেপাশে মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। ফ্লোরা আর অদ্রি বহুকষ্টে ধ্রুবকে সরিয়ে নিয়ে এলো সেখান থেকে। গাড়িতে বসেও রাগে কাঁপছিলো ধ্রুব, ফর্সা মুখে নেমে এসেছিলো আঁধার! অদ্রি একটু সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
— এভাবে রাস্তায় মারামারি করলেন কেন? কি যে উদ্ভট স্বভাব আপনার…
ধ্রুব’র কপালে ভাঁজ পড়লো। ইচ্ছে করছে নিজের গালেই চড় দিতে। যার জন্য করে চুরি সেই বলে চোর। ও জোরে ধমকে ওঠলো,
— ছেলেগুলো তোমাদেরকে নিয়ে বাজে কথা বলছিলো,
ব্যাড টাচ করতে চাচ্ছিলো। অথচ তুমি আমাকেই দোষারোপ করছো? তুমি বুঝি ওদের টাচ উপভোগ করতে তাইনা? নিজের ওপর এখন আমার রাগ হচ্ছে!
অদ্রির মুখে অন্ধকার নেমে এলো। ধ্রুব ক্রুদ্ধ গলায় বলল,
— রিডিকুলাস অদ্রি।
প্রচন্ড এক ধমক খেয়ে অদ্রির মুখ শুকনো হয়ে গেলো। ফ্লোরা চুপচাপ বসে দু’জনকে দেখছিলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ও বলল,
— এই ব্যাপার নিয়ে ডিসকাস না করে, বাড়ি চলো।
এরপর অদ্রিকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,
— আচ্ছা, তোমার এক্সাম কেমন হলো বললে না তো?
অদ্রি হাসার চেষ্টা করে বলল,
— ভালো।

ধ্রুব শুধু মুখ কালো করে বসে রইলো। ওর মেজাজ আগের চেয়ে আরও বেশি খারাপ হচ্ছে। বাড়ি ফিরে পুরো ঘটনা ফ্লোরা খুলে বললো সকলের কাছে, আর ধ্রুব গটগটিয়ে হেঁটে নিজের ঘরে চলে গেলো। ধ্রুব যে বেশ রেগে গেছে সেটা বেশ বুঝতে পারলো অদ্রি। নিজের বোকামির জন্য হতাশ হলো। মাফ চাইতে হবে ধ্রুব’র কাছে। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে অদ্রি ঘরে এলো। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে দেখলো কাউচে বসে আছে, কপালে হাত রেখে দু-চোখ বন্ধ করে। এখনো চেঞ্জ করেনি। অদ্রি ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো ওর কাছে। হালকা কেশে ধ্রুব’র দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলো। ওর কন্ঠ শুনেই ধ্রুব অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো। অদ্রি মুখ গোঁজ করে বলল,
— সত্যিই সরি আমি। আমি বুঝতে পারিনি যে ছেলেগুলো খারাপ ছিলো। আপনি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝে রেগে থাকবেন না।
ধ্রুব একটু সময় নিলো। এরপর সটান দাঁড়িয়ে পড়লো। জিজ্ঞেস করলো,
— তো? কি ঠিক করলে?
ধ্রুব’র কথা বুঝতে পারলো না অদ্রি। প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাতেই ও বলল,
— এক্সাম তো শেষ, এবার কি সত্যি চলে যাবে তুমি?
আমার কথা ভাবলে না একবারও?
অদ্রি অবাক হলো। ধ্রুবর বিধস্ত চেহারা, ওর তীব্র অনুভূতি নিয়ে বলা বাক্য শূঁলের মতো বিঁধলো অদ্রির মনে। ওর মাথায় হাজারো কথা ঘুরপাক খেতে লাগলো। ধ্রুব উত্তরের আশায় চেয়ে রইলো ওর মুখপানে। অদ্রি কিছু বলতেই মুখ খুলবে তখনই ধ্রুব ওর মুখ চেপে
ধরে দাপুটে গলায় বলল,
— উহু! কোত্থাও যেতে পারবে না, আমি যেতে দেবো না তোমায়। তাই না বলার চেষ্টাও করো না, হয়তো আমি রেগে তোমাকে এই ঘরেই আটকে রেখে দিতে পারি!

অদ্রি ভ্রু কুঁচকে একদৃষ্টে শুধু তাকিয়ে রইলো। ধ্রুব’র চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা মিশে থাকতে দেখলো সে!

চলবে….