এ কেমন ভালোবাসা পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
184

#এ_কেমন_ভালোবাসা?
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
_________________.৮._________________
রাঙ্গা গোধুলি বেলা,সূর্য রক্তিম বর্ন ধারন করেছে,চারদিকে মাতাল করা বাতাস শো শো করে বইছে,নদীতে উত্তার ঢেউ,পাশেই ঘাটে নৌকা বাধা,নদীর পাড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছটিতে ফুটেছে রক্ত রাঙ্গা কৃষ্ণচূড়া ফুল।মনোমুগ্ধকার দৃশ্য আর পাশে যদি থাকে প্রিয়তমা তাহলে কথাই নেই।এতো স্বর্গ সুখ।উথাল-পাতাল বাতাসে উড়ছে আদিবার চুল, উড়ছে আদিবার ওরনা,চোখে তার মুগ্ধতা,অবাক চোখে দেখছে সে সব,খুশি যেন উপছে পড়ছে ওর চেহারায়। আদ্র স্থির দৃষ্টিতে সেদিক তাকিয়ে,আদিবা চোখে ঘুরিয়ে পিছে তাকাতেই দেখে আদ্র তার দিক তাকিয়ে।বুকটা কেপে উঠে আদিবার,আদ্র কেমন যেন নেশাভরা চোখে তাকিয়ে।হাত-পা শিরশির করে উঠে আদিবা।চোখে নামিয়ে সামনে দিক হাটা দিলো আদিবা।নাহলে সে আদ্রের এই ভয়ানক চাহনী সয্য করত না পেরে মনেই যাবে।নদীরপাড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছটার সাথে হেলাম দিয়ে দাড়ায় সে।চোখ বন্ধ করে মুহূর্তটা উপভোগ করতে চাইলো। হঠাৎ কাধে কারো শীতল হাতের ছোয়া পেয়ে, চোখে খুলে আদিহবা।মানুষটা যে আদ্র তা বেশ বুজতে পেরেছে আদিবা।ইদানিং লোকটাকে ও দূর থেকেও অনুভব করতে পারে।আদিবা পিছে ঘুরতে নিলেই আদ্র ওকে থামিয়ে দেয়,

—“,হুসসস!ডোন্ট মুভ!”
—“কে..কেন?”

আদ্র কোন কথা বললো না আলতো হাতে আদিবার ঘাড় থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিলো।আদের প্রতিটা ছোয়ায় আদিবা কেপে কেপে উঠছে।জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।আদিবা’র এমন করাতে যেন আদ্র আরো মাতাল হয়ে গেছে আদিবাতে।আদ্র আস্তে আস্তে ওর মুখটা আদিবা’র ঘাড় বরাবর আনলো।আদ্র এর গরম নিশ্বাস আদিবার ঘাড়ে পড়তেই।আদিবা শক্ত করে খামছে ধরলো আদ্রের হাত।কাপা গলায় বলে,

—“প্ল..প্লিজ ছ..ছেড়ে দ..দিন আ..আমায়!”

আদ্র ওর কোন কথায়ই শুনলো না।শব্দ করে একটা চুমু খেলো আদ্র আদিবার ঘাড়ে।মুহূর্তেই আদিবা’র সারা শরীর ঝাকি দিয়ে উঠলো।নিশ্বাস আটকে দাড়িয়ে রইলোন।এ কি করলো আদ্র? ওযে এরকম অনুভূতিগুলো সয্য করতে পারে না।আদিবা আদ্র এর হাতটি এতো শক্ত করে ধরেছে যে মনে হয় ওর নখ এক ইঞ্চি ভীতরে চলে গেছে আদ্রের শরীরে। আদিবা সরে যেতে চাইলো কিন্তু আদ্র ওকে ছাড়লো না। শক্ত করে ধরে রাখলো।আদ্র আদিবাকে পুরোপুরি ওর বাহু ডোরে বন্ধি করে নিলো। আদ্র এর বুকে আদিবা’র পিঠ ঠেকে আছে। আদ্র আদিবার চুলে নাক ডুবালো।আর সয্য করতে পারলো না আদিবা।ছিটকে নিজেকে আদ্র এর বাহুবন্ধি থেকে ছাড়িয়ে।ঘুরে আদ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আদ্র এর শার্ট শক্ত করে আকড়ে ধরে আছে।আদ্র নিজেও আদিবাকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর নিজের মাথাটা আদিবার ঘাড়ে রাখলো আদিবা এখনো থর থর করে কাপছে।

—“এভাবে কাপিস না।নিজেকে কোন্ট্রোল করতে পারবো না।”
—“প্ল..প্লিজ এই..এইসব ব..লা বন্ধ ক..করুন।”
—“তোকে দেখলে যে এইগুলো এইভাবেই চলে আসে মুখে।”
—“আ..আর আমি যে মরে যা..যাবো আপনার বুকে।”
—“আদিবা!”
—“জ্বি!”
—“কি আছে বলতো তোর মাজে।কেন এতো পাগল হই আমি তোকে দেখলে।কেন তুই আমাকে এতো জ্বালাস?কেন আমি তোকে না দেখে থাকতে পারি না।বলতে পারিস?”
—“জা..জানি না।”
—“ভালোবাসি যে তাই।”

আদিবা আদ্রকে ছেড়ে অবাক হয়ে তাকালো।বলছে কি আদ্র এসব।তাকে আদ্র ভালোবাসে।কিন্তু কিভাবে?কেন?কি আছে তার মাজে?আদ্র তো তাকে দেখতেই পারে না।তবে ভালোবাসে কি করে?

—“,কি বলছেন এইসব?”

আদিবার কথায় আদ্র হাসে,বলে,

—“,জানি বিশ্বাস হচ্ছে না!কিন্তু এটাই সত্যি ভালোবাসি তোকে।তুই যখন জন্ম নিলি,জানিস কেমন যেন লেগেছিলো সেদিন ছোটছোট হাত-পা, গুলুমুলু গাল,ব্যস সেদিন আম্মুকে বলেছিলাম।আম্মু এই ছোট্ট পুতুল আমার চাই।ভালোলাগতো তোকে খুব।কিন্তু যখন বুজতে পারলাম এইটা ভাললাগা না ভালোবাসা!তখন তোর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম।কারন এযে অন্যায়!কিন্তু মনকে কিভাবে আটকাই বলতো?পারি নি তোকে ভূলতে। যতো তোর থেকে দূরে যেতে চাইতাম আরো তোর জন্য পাগল হয়ে যেতাম।এখন আর তোর থেকে দূরে থাকতে পারি না আদিবা। আমার তোকে চাই আদিবা।জানি না #এ_কেমন_ভালোবাসা আমার?তবে আমি এটুকু জানি আমার তোকে চাই প্রতিটা মুহূর্তে চাই।কি হবি আমার?হবি আমার অস্তিত্ব!দিবে তোকে নিজের করে নেওয়ার অধিকার।”

আদিবা অবাক হয় নড়বার শক্তিও পায় না।কেমন যেন এই আদ্রকে তার কাছে অচেনা লাগছে।আদ্র এগিয়ে এসে আদিবাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত গলায় বলে,,

—“তুই চাইলেও আমার না চাইলেও আমার।আমি তোকে কারো হতে দিবো না।বুজেছিস?”

আদিবার কি হলো সে জানে?মনের অজান্তেই তার হাত দুটো আদ্রের পিঠ আকড়ে ধরে।মুহূর্তেই আদ্রের ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।তার পিচ্চি মুখে না বললেও এইভাবে তার মনের ভাষা প্রকাশ করছে।

কিছুক্ষন পর আদ্রকে ছেরে দাড়ায় আদিবা বলে,

—“আপনার সাথে কথা নেই?”
—“কেন?”ভ্রু-কুচকে বলে আদ্র।
—“আপনি আমাকে সবসময় ধমকাধমকি করেন তাই কথা বলবো না।”
—“ওহ!! আচ্ছা।”বাকা হাসি দেয় আদ্র।
—“হ্যা ভালোবাসলে কি কেউ তাদেরকে এইভাবে ধমকাধমকি করে।”
—“আমি করি আর এমনি করবো সারাজীবন তোকে সয্য করতে হবে।”
—“ইসস!!আমার বয়েই গেছে।”মুখ ভেংচি কাটে আদিবা।
—“কি বললি?”আদ্র তেড়ে আসতেই আদিবা দৌড়।

আদ্র ওর পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে,,

—“আদিবা দাড়া!দাড়া বলছি।”
—“দাড়াবো না।পারলে ধরুন।”খিলখিল করে হাসে আদিবা।
—“ধরতে পারলে খবর আছে।”
—“আগে ধরুন তো!”

এক পর্যায়ে আদিবাকে আদ্র ধরে ফেলে,

—“কি এইবার কোথায় যাবি?ধরে ফেলেছি তোকে।”
—“ছাড়ুন আমায়!”
—“উহুউ ছারবো না।খুব তো ভাগালি আমাকে এইবার শাস্তি পাবি।”
—“ক..কি শা..শাস্তি?”ভয়ে ভয়ে বলে আদিবা।”

আদ্র কিছু বললো না তাকিয়ে আছে আদিবা’র দিকে।ভয়ানক সেই চাহনী।কেপে উঠে আদিবা কারন আদ্রের হাত দুটো ওর কোমড়ে বিচরন করছে।আদ্রের কাধের শার্ট আকড়ে ধরে।আদ্র ওর মুখ নিয়ে আদিবার ঘাড়ে স্লাইড করছে,

—“আদিবা পাগল হয়ে যাই আমি তোর জন্য?তোর একটুখানি ছোয়া পাওয়ার জন্য?নিজেকে বড্ড উন্মাদ লাগে।”

কথাগুলো বলতেই ভূমিকম্পের মতো কেপে উঠে আদিবা।থরথর করে কাপছে সে।কারন কথাগুলো বলার সময় আদ্র ওর ঘাড়ে প্রতিবার হালকা করে ঠোট ছুইয়ে দিয়েছে।

—“প্লিজ এএএরকম টা কর..করবেন না?”
—“কিরকম?”ঘোরলাগা কন্ঠে আদ্র বলে।
—“প্লিজ এই..এইভাবে ছুবেন না।”
—“আমি ছুবো!”
—“তা..তাহলে যে..”
—“তাহলে কি?”
—“আ..আমি যে ম..মরে যাই।স.সয্য ক..করতে পা..পারি না আপনার..স্পর্শ। ”

মূহুর্তেই ছিটকে সরে যায় আদিবা। নদীর পারে গিয়ে দাড়ায়।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়।আদ্রও ধির পায়ে হেটে এসে দাড়ায় ওর পিছনে বুকে জড়িয়ে নেয় ওকে আবার পিছন দিকে।আদিবা নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দেয় আদ্র এর গায়ে।দৃষ্টি স্থির তাদের সামনের সূর্যাস্ত যাচ্ছে সেদিক।এখানেই থমকে যাক সময় থমকে যাক পৃথিবী।ভালোবাসার এই প্রজাপতি দুটো যেন সারাজীবন একে অপরকে ভালোবাসে আকড়ে ধরে থাকুক।প্রাপ্তিটা যেন ভালোবাসার হয় সারাজীবন।দুজনেতে যত্ত থাকুক প্রতি বেলা।

সমাপ্ত।।।।।।।।।।