#বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি
#পর্বঃ১৪_(শেষ পর্ব)
#শুভ্রতা_শুভ্রা
রিয়া মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল “হুম অবশ্যই”
রেহান ও মুচকি হাসলো। বাহির থেকে তিয়াসের মা ওদের কথা শুনে রুমে এসে রিয়ার সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে বললেন
“আমাকে ক্ষমা করে দেও। আমি ওইদিন তোমার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। তুমি এতো ভালো। আল্লাহ্ তোমাদের ভালো রাখুক। আর আমার কোনো সমস্যা নেই তিহান তোমাদের কাছে থাকলে। আমি জানি তিহান সবচেয়ে বেশি ভালো থাকবে তোমাদের কাছে। আর আমার ছেলের শেষ ইচ্ছা ছিলো তিহান যেন তোমাদের কাছে থাকে।”
——————-
কেটে গেছে একবছর সময় যায় স্রোতের মতো। তিহান এখন ভালোই আছে। রেহান আর রিয়া তাকে কখনো বাবা মার অভাব বুঝতে দেয়নি। রিয়া অনেক ভালো আছে এখন। রেহানের কেয়ার ভালোবাসা দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটিতে রিয়াও আনন্দে আছে। রিয়া এখন প্রচণ্ড ভালোবাসে রেহানকে।
আজ রিয়ার জন্মদিন। রেহান প্রতিদিনের মতো সকালে উঠে রিয়ার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। রিয়া চোখ খুলে রেহানের দিকে তাকায়। রেহান মুচকি হেসে উঠে যায়। রিয়া ও একটা মুচকি হাসি দেয়। সকালের পর আর দেখা মেলেনি রেহানের। রিয়া মুখ ফুলিয়ে আছে। একবার কলও করেনি রেহান। দুপুরের খাবার খেয়ে রুমে এসে মন খারাপ করে বসে আছে রিয়া।
তিহান রুমে এসে দেখলো তার মামুনি মুখ ফুলিয়ে আছে। তিহান গুটিগুটি পায়ে রিয়ার কাছে গিয়ে ওর কোলে বসে বলতে লাগলো
“মামুনি মন খারাপ করে আছ কেন? তুমি মন খারাপ করে থাকলে আমার একদম ভালো লাগে না। কান্না আসে আমার। মামুনি হাসো তোমাকে হাসিতেই বেশি মানায়।”
তিহানের কাঁদো কাঁদো কন্ঠে এমন কথা শুনে রিয়া ফিক করে হেসে দিলো। এটা নতুন কিছু না। রিয়ার মন খারাপ হলে রেহান বা তিহান ওর মন খারাপ থাকতেই দেয় না।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় রিয়া দেখলো রেহান কল করেছে ও কল রিসিভ করে চুপ করে রইলো
রেহান বলল “ওই জানপাখি দুপুরের খাবার খেয়েছো।”
রিয়া চুপ করে আছে।
রেহান আবার বলল “ওই কথা বলছো না কেন জানপাখি। রাগ করে আছো।”
রিয়া এবার বলল “আমি রাগ করলে কার কি। আমি কারো কিছু হই যে আমি রাগ করলে কারো সমস্যা হবে।”
রেহান বলল “জানপাখি তুমি এখন কার্বাটে একটা ব্যাগ আছে সেখান থেকে ওটা নিয়ে পরে নেও। আমি তোমাকে একটা জায়গার ঠিকানা টেক্সট করছি সেখানে চলে আসো প্লীজ। আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকবো বলে দিলাম।”
রিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো। তারপর কার্বাট থেকে ব্যাগটা বের করে দেখলো একটা কালো শাড়ি, কালো চুড়ি, একটা গাজরা আর এক সেট জুয়েলারি। আর দুটো চকলেট। রিয়ার মুখে মুচকি একটা হাসি ফুটে উঠে। সে রেডি হয়ে নিলো।
তিহানকে সাথে করে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সে রাব্বির সাথে খেলায় ব্যস্ত। অনেক চেষ্টার পরও সে নিতে পারলো না তিহানকে। ব্যথ হয়ে সে একাই রওনা হলো রিয়া।
রিয়া গাড়ি নিয়ে চলে এলো একটা লেকের কাছে। এখানে আসার কথায় বলেছিলো রেহান। রিয়া নেমে সামনের দিকে যেতে লাগলো। পুরো পরিবেশটা চুপচাপ। আশেপাশে কেউ নেই। রিয়া কিছুটা অবাক হলো কারণ আগে যখন এখানে এসেছে তখন অনেক মানুষ থাকতো। সে আর না ভেবে সামনের দিকে অগ্রসর হলো। লেকের পানিতে গোলাপের পাঁপড়ি ছোড়ানো। ঘাসের উপর লাভ বেলুন। রিয়া হা করে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ কারো গান গাওয়ার আওয়াজ শুনে পিছু ঘুরলো রিয়া। এই ভয়েসটা তো রিয়া চেনা। সে প্রতিদিন লাইভে যে স্পর্শ নামে ছেলেটির গান শুনে তার গানের কন্ঠ। কালো পাঞ্জাবী কালো জিন্স আর কালো ঘড়ি। রিয়া মুগ্ধ হয়ে গান শুনছে।
গান শেষে ছেলেটি পিছু ঘুরলো। রিয়া রেহানকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। রেহান আস্তে আস্তে রিয়ার সামনে এসে দাড়ালো। রিয়ার দিকে ঝুকে বলল
” শুভ জন্মদিন জানপাখি। দোয়া করি সারাজীবন হাসিখুশি থাকো। এবার বলো স্পর্শ বলবে নাকি রেহান বলবে জানপাখি।”
রিয়া গাল ফুলিয়ে উল্টো ঘুরে গেলো। রেহান মুচকি হেসে পিছন থেকে রিয়াকে জরিয়ে ধরে বলল
“সরি জানপাখি সকালে কল না করার জন্য। আসলে এগুলো এরেঞ্জ করতে করতে আর ফোন দিত পারিনি। সরি”
রিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলতে লাগলো “আপনি আগে কেন বলেন নি যে আপনিই স্পর্শ। জানেন আপনার গান গুলো আমার কতো কতো ভালো লাগে।”
রেহান রিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর নাক টেনে বলল “সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। আচ্ছা সরি এই তো কান ধরছি।”
রেহান কান ধরা দেখে রিয়া ফিক করে হেসে দেয়।
রিয়া রেহানের কাধের উপর মাথা রেখে বসে আছে। রেহান বলল “আমি তোমার সাথে কথা বলবো না।”
রিয়া কপাল কুচ করে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল “আপনার আবার কি হলো!”
রেহান বলল “আজ পযর্ন্ত তুমি একবারও বললে না ওই কথা।”
রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল “কোন কথা”
রেহান বলল “ওই যে ওই কথা”
রিয়া বলল “ওই কথা আবার কোন কথা। ওই মিয়া এতো ঢং করার কি আছে। মেজাজ গরম করবি না একদম।”
রেহান ঠোঁট উল্টিয়ে বলল “ভালোবাসার কথা”
রিয়া বলল “ও তাই বলেন”
রেহান বলল “ও তাই মানে বলবে না আমায় তাই তো। থাকো তুমি আমি গেলাম।”
রেহান উঠে চলে যেতে নিলে রিয়া ওর হাত চেপে ধরে বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো
“আমি যে অজান্তেই আপনাকে কখন ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। আপনাকে না দেখলে আমার বুকের ভিতরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। আপনাকে আমি প্রচণ্ড ভালোবেসে ফেলেছি। যা কথায় বলে বোঝানো যাবে না। অসম্ভব ভালোবাসি প্রিয়।”
রিয়ার কথা শুনে রেহানের চোখ ছলছল করে উঠলো। রেহান হুট করে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। এতোদিন তো এইকথাটাই শুনতে চেয়েছিলো রেহান। রেহানের চোখ বেয়ে অশ্রুকণা গরিয়ে পরলো। রিয়া রেহানের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল
“কান্না করবেন না প্লীজ আপনার চোখের পানি যে আমি সহ্য করতে পারিনা।”
রেহান মুচকি হাসি দিয়ে বলল “তাই নাকি বউ ভালোবাসি অনেক বেশি ভালোবাসি প্রিয়তমা। চলো কেক কাটি কতো কষ্ট করে কেকটা বানিয়েছি জানো।”
রিয়া বলল “আপনি”
রেহান রিয়ার ঠোঁট আঙুল দিয়ে বলল “না এখন থেকে আর আপনি না তুমি করে বলবে; ঠিক আছে।”
রিয়া লজ্জা মাখা মুখে হ্যাঁবোধক মাথা নাড়ালো। রেহান মুচকি একটা হাসি দিয়ে টুকুস করে রিয়ার গালে একটা চুমু বসিয়ে দিলো। রিয়া রেহানের দিকে তাকালো। তারপর দুইজন হেসে দিলো।
ওরা কেক কাটলো দুইজন মিলে। রিয়া কেকের এক পিস নিয়ে রেহানের মুখের সামনে ধরলো। রেহান ও রিয়ার সামনে এক পিস কেক ধরলো। ওরা অনেক ঘোরাঘুরি করে বাসায় গেলো।
রাত হয়ে গিয়েছে। রিয়া দেখলো তিহান রেহানের মায়ের কাছে ঘুমিয়ে গিয়েছে। রিয়া তিহাকে একটা চুমু দিয়ে রুমের দিকে চলে গেলো। রেহান তিহানকে একটু আদর করে ওর মাকে বলল
“কাজ হয়েছে”
রেহান মা বলল “হ্যাঁ”
রিয়া রুমে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলো। গুলো রুম বেলি আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো। রেহানের দরজা আটকানোর শব্দে রিয়া পিছু ঘুরে তাকালো। চোখ ছোট ছোট করে রিয়া বলল
“এগুলো কে করেছে!”
রেহান বলল “কেন বাড়ির সবাই”
রিয়া বলল “মানে”
রেহান রিয়াকে জরিয়ে ধরে বলল “তুমি কি আজ আমাকে ভালোবাসার সুযোগ দিবে জানপাখি?”
রিয়ার লজ্জামাখা মুখ দেখে রেহানের মুখে মুচকি একটা হাসি ফুটে উঠলো।
“আমার বিস্বাদপূর্ণ জীবনের আনন্দের কারণ হচ্ছে তুমি । ভালোবাসা কারো কাছে আনন্দের। কারো কাছে বিস্বাদময়। কেউ পায় পূর্ণতা। কেউ বা অপূর্ণতার চাদরে ঢেকে যায়। একটা সম্পর্কে সবচেয়ে মূল হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাসের ফলেই একটা সম্পর্ক টিকে থাকে।”
রিয়ার কথাগুলো শুনে রেহান রিয়ার নাক টেনে বলল “আমার বউটা এতো কথা কোথায় থেকে শিখলো!”
রিয়া মুখ বাকিয়ে বলল “ঢং যাও তো এখান থেকে।”
রেহান রিয়াকে জরিয়ে ধরলো। দুইজনই হাসলো।
#সমাপ্ত