বৃষ্টিময় প্রেম সারপ্রাইজ পর্ব

0
1445

#বৃষ্টিময়_প্রেম (সারপ্রাইজ)
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা

আকাশজুড়ে মেঘমালার খেলা, বারিধারার নেমেছে বর্ষণ। ধরণী মেতেছে বৃষ্টির প্রেমে! বাইরের ভেজা বাতাসে স্নিগ্ধ প্রেমের আবির্ভাব। জানালার পানে দাঁড়িয়ে সেদিকে তাকিয়ে পূর্ণকে বললাম,

“চলুন না বৃষ্টিবিলাস করি?”

“এখন?”

“হ্যাঁ, কেন? আপনি এখন ভিজতে চাইছেন না?”

“চাইছিনা তা নয়। তবে এ ভরা সন্ধ্যার বৃষ্টিতে ভিজলে তো জ্বর আসবে, বউ। ঠান্ডা লাগবে তোমার। এজন্য বলছিলাম!”

পূর্ণর কথা যুক্তিযুক্ত হলেও আমার মন সায় দিলোনা৷ কেন যেন ভীষণ মন চাইছিলো প্রিয়তমের সাথে প্রিয় বৃষ্টিতে ভেজার! হোক না অসময়, তবুও মনের ইচ্ছে তো আর দমিয়ে রাখা যায়না। তাই বৃষ্টি থেকে মনোযোগ সরিয়ে বায়না ধরলাম তার কাছে। ভিজবো মানে এখনি ভিজবো, মন শুনবেনা বারণ। খানিকক্ষণ উনার বাহু ধরে টানাটানি করে লাভ হলো, উনি রাজি হলেন। সবার অগোচরে রুম ছেড়ে চুপিসারে বেরিয়ে এলাম দুজনেই। বাসার পেছনের দিকটায় বেশ জায়গা, মূলত বাগানের জন্য এ জায়গা রাখা হয়েছে। কিছু ফুলের গাছও আছে চারদিকে। বলাবাহুল্য এখানে কেউ সচারাচর আসার কথা নয়, এমন ভরাসন্ধ্যার ঝুম বৃষ্টিতে তো আরও নয়! তা ভেবেই দুজনের এখানে আসা।
আকাশের দিকে দুহাত মেলে দিয়ে দু’একবার গোলগোল ঘুরে বৃষ্টিকে অনুভব করছিলাম, বিন্দু বিন্দু জলে আবেশ জাগছিলো মনে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পূর্ণ একদৃষ্টিতে মুগ্ধ চোখে আমায় দেখছিলেন শুধু। তার ঠোঁটের কোণে স্নিগ্ধ হাসির রেখা, যে হাসির সৌন্দর্য বৃষ্টি বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে৷ সেদিক চেয়ে আমি থেমে গেলাম, মুচকি হেসে উনার দিক এগোতেই হাত দিয়ে থামিয়ে দিলেন আমায়।

“এক মিনিট দাও। আসছি! বেশি দেরি করবোনা”

কথাটা বলেই অন্যদিক চলে গেলেন তিনি। খানিকবাদে ফিরে এলেন, এক হাত পেছনে লুকোনো। সেদিক উকিঝুকি দিতেই নিজ হতে এগিয়ে এলেন আমার দিকে৷ পেছনে রাখা হাতটা বের করে সামনে আনতেই উৎফুল্ল হলাম! উনার হাতে শোভা পাচ্ছে এক গুচ্ছ কদম! নিশ্চয়ই বাড়ির বাইরের গাছ থেকে নিয়ে এলেন। ফুলগুলোর দিক তাকিয়েই মন ভালো হয়ে গেলো! বর্ষার সৌন্দর্য সারা অঙ্গে মে‌খে প্রস্ফুটিত হয়ে আছে স্বর্ণরঙিন কদম ফুল! সেদিক চেয়ে ঠোঁটের হাসি বেশ খানিকটা বিস্তৃত হলো আমার। ঠিক এমন সময় বৃষ্টিতে ভেজা পূর্ণ আমার দিকে হাত বাড়িয়ে গভীর স্বরে বললেন,

“এই যে বৃষ্টিকন্যা, একগুচ্ছ কদম হাতে ভিজবে কি আমার সাথে?”

তার বলতে দেরি, আমার এগোতে দেরি হলোনা৷ নিমিষেই একমুঠো আবেশে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।

“আপনি ছাড়া আর কেউ কি আছে আমার বলুন?”

“থাকবেই বা কীভাবে? আমি অন্য কাউকে থাকতে দিলে তো?”

আমায় শক্তহাতের বাধনে নিজের সাথে বদ্ধ করে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন পূর্ণ নিজেও। সরু চোখে উনার দিক তাকিয়ে মুখ ভেং’চি দিলাম। তার চোখমুখে দুস্টুমি স্পষ্ট। এখন কিছু বললেই নির্ঘাত লাগামছাড়া কথা বলবেন। তাই আর কথা না বাড়িয়ে পুনরায় মাথা রাখলাম তার বুকে। খানিকক্ষণ কেটে গেলো সেভাবেই, এতক্ষণের বৃষ্টিতে ভিজে কাকভেজা হয়ে গেছি দুজনে! অথচ দুজনের কারও সেদিক ভ্রুক্ষেপ নেই, মুহুর্তকে অনুভব করাই যেন এখানে মুখ্য বিষয়!

“দেখি, তুরফা। সরো তো”

“কি হয়েছে?”

মাথা তুলে প্রশ্ন করতেই আমার হাত থেকে হুট করে কদম ফুল নিয়ে নিলেন পূর্ণ। বিস্মিত হয়ে তার দিক চাইতেই ফুল থেকে পাতা ছাড়িয়ে সযত্নে পড়িয়ে দিলেন আমার বাম কানে। অতঃপর খানিকটা পিছিয়ে দাড়ালেন, বৃষ্টির মাঝেই বুকের বা পাশে হাত রেখে নিঃশব্দে একদৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলেন বৃষ্টিভেজা আমায় বেশ কিছুক্ষণ!

উনার কান্ডে লাজুক হাসির রেখা খেলে গেলো ঠোঁটে। এই যে বিয়ের এত বছর হয়ে গেলো তবুও তার মুগ্ধ দৃষ্টি বদলায়না, প্রতিনিয়ত সে চোখেই তাকায় মানুষটা! কি এত দেখে? কখনো ভেবে পায়না আমার ব্যাকুল মন! মিনিট কয়েক অতিক্রম হলো। অথচ এখনো পূর্ণ সেভাবেই নির্বিকার দাঁড়িয়ে, বৃষ্টির পানিও যেন এ প্রেমিকপুরুষের চোখের তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হচ্ছেনা।

“ভেতরে যাবেন না? অনেকক্ষণ ধরেই ভিজছি তো”

পূর্ণ উত্তর দিলেন না। সেভাবেই চেয়ে থাকলেন, বরং তার ঠোঁটের হাসি যেন আরেকটু ছড়িয়ে গেলো, বে’প’রোয়া দৃষ্টির গভীরতা যেন বেড়ে গেলো। তা দেখে লজ্জার মাত্রা বেড়ে গেলো আমার। চোখ এদিক সেদিক ঘুরিয়ে ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলাম,

“এই যে, কি সমস্যা আপনার বলুন তো?”

এবার মুখ খুললেন পূর্ণ। যেন কিছুই করেননি সেভাবেই অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন,

“কই?”

“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন তখন থেকে? কি হয়েছে?”

“সেটা আমি কিভাবে বলবো?”

“আশ্চর্য! আপনি কিভাবে বলবেন মানে? নিজেই বারবার তাকাচ্ছেন আবার নিজেই বলছেন আমি কিভাবে বলবো?”

“আহহা! তুমি তো বুঝলেই না দেখি ব্যাপারটা!”

“তাহলে বুঝান দেখি?”

“আমি তো কিছুই করিনি। এখন আমার চোখ নিজ থেকেই চলে যাচ্ছে তোমার দিকে, এটা কি আমার দোষ বলো? আমি তো চাইছিনা তাকাতে, তাও বারবার চলে যাচ্ছে। এখানে কোনোভাবেই আমার দোষ থাকতে পারেনা, তুর পাখি! আমি নির্দোষ।”

উনার কথা শুনে কপালে ভাজ পড়লো, সবকিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো। এরকম অদ্ভুতুড়ে লজিক দেওয়া দুনিয়ায় একমাত্র উনার পক্ষেই সম্ভব! ভাবনার মাঝেই কোমড় জড়িয়ে আরেকটু কাছে টেনে নিলেন পূর্ণ। আমার সমগ্র মুখশ্রী জুড়ে গভীর দৃষ্টি তাক করে হতাশ গলায় বললেন,

“তুমি কেন আমার চোখের এত প্রিয় বলো তো? কি জাদু করেছো আমার উপর? এ প্রেমিকপুরুষের চোখ তোমার থেকে সরতেই চায়না দেখি! সব দোষ তো তোমার, তুর পাখি!”

কথাটা বলে হুট করে ঝুকে টুপ করে ভেজাগালে চুমু খেলেন পূর্ণ। উনার কথা শুনে চোখ ছোট করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। জানতাম এমন কিছুই হবে! এ লোকের সাথে কথায় ইহজীবনে আর পেরে উঠবোনা কখনো! আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই এতক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজার ফলস্বরুপ হাচ্চি এলো। তা দেখে নিমিষেই রে’গে গেলেন পূর্ণ। এতক্ষণের প্রেমিকপুরুষ যেন হুট করে রা’গীপুরুষে রুপান্তরিত হয়ে ধমকে উঠলেন,

“দেখেছো, এজন্য মানা করেছিলাম তোমায়। আরও করবে বৃষ্টিবিলাস? সারারাত থাকবো এখানে?”

দাতে দাত চেপে বলা তার কথায় অপরাধী দৃষ্টিতে তাকালাম। তা লক্ষ্য করে পূর্ণ আবারো বললেন,

“অতি আদরে বিগ’ড়ে ফেলেছি তোমায়। যা করতে চাও, আমায় রাজি করিয়েই ছাড়ো৷ আজ একবার শুধু জ্ব’র আসুক, তারপর তোমায় দেখছি!”

আমায় বকতে বকতেই হাত ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে গেলেন পূর্ণ। মাটিতে পড়ে গেলো কানে গুজে রাখা কদম, পেছনে রইলো এক সুন্দর বৃষ্টিময় স্মৃতি!

[আসসালামু আলাইকুম। বৃষ্টিময় দিনে হঠাৎ করে লিখে ফেললাম পাঠকদের জন্য ছোট্ট একটি অংশ। রিচেক করা হয়নি। কেমন লেগেছে জানাবেন]