লাল গোলাপ
লেখিকা মিতু
পর্ব ১
~ প্লিজ দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন। আমার এতো বড় সবর্নাশ করবেন না। আমার সব শেষ হয়ে যাবে। প্লিজ আমাকে যেতে দিন। কে আছো আমাকে বাঁচাও। আল্লাহ..
– এহহ বললেই হলো…আজ আমি তোকে ছাড়বো না। তুই আমাকে কষ্ট দিয়ে চলে গেছিস। আজ তোর…(মাতাল কণ্ঠে)
~ দয়া করুন। আমিতো আপনাকে চিনিই না। আমাকে ছেড়ে দিন। নাহলে আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না। দয়া করুন।
– তাতে আমার কি। আমি আজ তোকে ছাড়বো না। অনেক কষ্ট দিয়েছিস। কত ভালোবাসতাম তোকে…
মাতাল নিশান মেয়েটার উপর উঠে তাকে চেপে ধরে বুকের উপর থেকে শাড়ীটা সরিয়ে পাশে ছুড়ে মারে। মেয়েটা আপ্রাণ চেষ্টা করছে বাঁচার কিন্তু নিশানের সাথে কোনভাবেই পারছে না। মেয়েটা অাবার বলছে,
~ আমাকে যেতে দিন। আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না। আমাকে যেতে দিন।
– আজ তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
বলেই যেই নিশান মেয়েটার উপর ঝাপিয়ে পড়বে ওমনি নিশান অজ্ঞান হয়ে যায় আর মেয়েটার উপর পড়ে যায়। মেয়েটার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। ও নিশানকে ঠেলে পাশে ফেলে দ্রুত শাড়ীটা ঠিক করে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। নিশান অচেতন অবস্থায় ওভাবেই পড়ে রয়।
পরদিন সকালে,
– নিশান..দোস্ত…উঠ…নিশান…
নিশানের বেস্ট ফ্রেন্ড ফারহান নিশানকে ডাকছে। গতকাল নিশান আর ওর বাকি বন্ধুরা ফারহানের বোনের বিয়েতেই এসেছিল। লেট নাইটে নিশানকে ওর বন্ধুরা মিলে জোর করে ড্রিংক করায় বলেই নিশানের এ অবস্থা হয়। নিশান আগে কখনো ড্রিংক করেনি। ফারহান আবার ডাক দেয় নিশানকে,
– নিশান… ওই বেটা উঠ..বুঝছি নেশা কাটে নায়। দাঁড়া…
ফারহান, পাশে থাকা গ্লাসে পানিটুকু নিশানের মুখের উপর ঢেলে ঢেয়। আর সাথে সাথেই নিশান একলাফে উঠে বসে। ভয় পেয়ে যায় নিশান। বসেই চোখ ডলছে আর বলছে,
– গায় পানি দিলি ক্যান?? (রাগী ভাবে)
– টাল হয়ে পড়েছিলি। সেই কখন থেকে বেটা ডাকছি। উঠতেই ছিলি না। তাই এই পন্থা।
নিশান মাথা চেপে ধরে রাগী ভাবে বলে,
– শয়তানগুলারে বলছি আমাকে দিস না এসব ছাইপাস। তাও দিসে। এখন আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। তাকাতেও পারছি না।
– আচ্ছা দাঁড়া আমি লেবুর শরবত নিয়ে আসি। তাহলে ভালো লাগবেনে।
– জলদি যা বেটা।
ফারহান গেলে নিশান মনে করতে থাকে কাল কীভাবে ও এখানে এলো। প্রথম নিশান আর ওর বন্ধুরা মিলে নাচানাচি করতেছিল গানের তালে তালে। তারপর ওকে জোর করে সবাই মিলে ড্রিংক করায়। তারপর..উফফ মনে আসছে না।
– নে এটা খা। খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর। কেন যে তোকে এসব খাওয়াইতে গেল।
নিশান ভাবতে ভাবতে শরবতটা অর্ধেক খাওয়া মাত্রই নিশান থেমে যায়। চোখদুটো বড় করে ফেলে। ফারহান নিশানকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। নিশান শরবতের গ্লাসটা আস্তে আস্তে মুখ থেকে নামাতে নামাতে চোখ বড় করা অবস্থায় ফারহানের দিকে তাকায়। ফারহান প্রচন্ড ভয় পায়। ফারহান দ্রুত বলে,
– দোস্ত কি হয়েছে?? এরকম করছিস কেন??
– আমিতো গতরাতে একটা সর্বনাশ করে ফেলেছি দোস্ত।
ফারহান চিন্তিত হয়ে বলে,
– কিইই???
– আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি একটা মেয়েকে জোর করে এই রুমে নিয়ে এসেছিলাম। মেয়েটার ফেইস আমার মনে পড়ছে না। তবে মেয়েটা বারবার যেতে চাচ্ছিল। কিন্তু আমি…ছিহঃ ছিহঃ..দোস্ত এ আমি কি করেছি??
ফারহান কিছুক্ষন নিশানকে দেখে শান্ত গলায় বলে,
– হায়রে..নিজেকে আগে দেখ। তোর গায়ে জামা কাপড় সব ঠিক মতোই আছে।
নিশান সত্যিই তাকিয়ে দেখে, হ্যাঁ ওর পরনে জামা কাপড় সব ঠিকই আছে। নিশান তাও বলে,
– দোস্ত বিশ্বাস কর আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি একটা মেয়েকে এখানে ধরে নিয়ে আসছিলাম। হাল্কা মনে আছে ফেইসটা। উফফ…
– আরে তুই যদি এনেও থাকিস তুই তো কিছুই করিস নি। চিল মার। এটা শেষ কর স্বাভাবিক হ।
– না দোস্ত আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি কিছু একটা খারাপ অবশ্যই করেছি।
– কিচ্ছু করিস নাই ভাই। টাল হয়ে এখানে পড়েছিল হয়তো। এটা খেয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় যা বেটা। আন্টি টেনশন করছে।
নিশান পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ওর মা অলরেডি ১০ টা কল করেছে। নিশান দ্রুত শরবতটা খেয়ে উঠে দাঁড়ায়।
– শুধু তোদের জন্য আজ আমার এতোটা খারাপ লাগছে। আল্লাহ জানে গতকাল কি করেছি আমি।
বলেই নিশান নিচে নেমে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে মেয়েটাকে খুঁজার ট্রাই করে। বাট তেমন কাউকেই দেখছে না। নিশান গাড়ি নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে। জামাটার উপরের কিছু অংশ এখনো ভিজে ছিল। নিশান বেল দিতেই ওর ছোট বোন মিলা দরজা খুলে দেয়। নিশানকে দেখেই বলে,
~ ভাইয়া তুমি ফোন ধরো না ক্যান?? মা টেনশন করছিল তো।
– আগে বল বাবা কই??
~ উপরে।
নিশান ভিতরে ঢুকতেই ওর বাবার সামনে পড়ে,
– রাতে কই ছিলে??(গম্ভীর কণ্ঠে)
নিশান চুপচাপ দাঁড়িয়ে বলে,
– বাবা, ফারহানের বোনের বিয়ে ছিল। তাই ওর বাসায়ই ছিলাম।
এর মধ্যে নিশানের মাও এসে পড়ে আর বলে,
– কিরে বাবা?? রাতে বাসায় এলিনা কেন?? কতো চিন্তা হয়েছে আমাদের জানিস??
– সরি।
নিশানের বাবা বলে,
– আর যেন এমন না হয়। আর হলেও অন্তত আমাদের জানাস। ফোনটা পর্যন্ত ধরিস নি। যা ফ্রেশ হয়ে আস।
– জি বাবা।
নিশান দ্রুত ওর রুমে চলে যায়। নিশান ওর বাবাকে অনেক ভয় পায়। গতকাল বন্ধুদের জন্য মাতাল হয়ে পড়ায় আর বাসায় আসতে পারে নি। ওর বাবা যদি জানতো এই কাহানী তাহলে ওকে এখনই বাসা থেকে বের করে দিত। নিশান ওর রুমে গিয়ে সোফায় বসে। মাথাটা এখনও ঝিমঝিম করছে। আবার খুব খারাপও লাগছে। নিশানের স্পষ্ট মনে আছে ও একটা মেয়ের সাথে জোরাজোরি করছিল। নিশানের খুব খারাপ লাগছে৷ ওর খুব জানতে ইচ্ছা হচ্ছে ও কোন খারাপ কিছু করেছে কিনা। কিন্তু কে ছিল এই মেয়ে। ফেইসটাও তেমন মনে আসছে না। বাট দেখলে হয়তো মনে আসবে। নিশান ভাবছে,
– যেভাবে হোক মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু কীভাবে… কীভাবে?? হ্যাঁ বিয়ে বাড়ির ভিডিওতে অবশ্যই থাকবে। সেখান থেকেই বের করতে হবে। মেয়েটার সাথে খুব খারাপ করেছি আমি।
এরপর নিশান ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে নাস্তার টেবিলে বসে,
নিশানের মা বলে,
– নিশান আজকে ভার্সিটি যাবিনা??
– না মা। দুই তিন দিন যাওয়া হবে না। নতুনরা ভর্তি হয়েছে তো তাই। ওদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। কয়দিন পরই যাবো।
মিলা পাশ থেকে বলে উঠে,
– আরে বোকা ভাইয়া যাও যাও। নতুন আপুরা আসছে। এবার একটাকে পছন্দ করে জিএফ বানাও।
– তাহলে ফারহানকেও বলি একটা জিএফ বানাতে কি বলিস??
মিলা নিশানের দিকে চোখ বড় করে তাকায়। কারণ মিলা ফারহানকে অনেক পছন্দ করে। ফারহানও মিলাকে পছন্দ করে। নিশান সব জানে। মিলাকে চুপ করিয়ে নিশান মুচকি হাসছে। নিশানে বাবা বলে উঠে,
– নিশান তাড়াতাড়ি ভালো করে পড়াশোনা শেষ কর। আমার পরে তোকেই সব ধরতে হবে।
– জি বাবা।
– এসব বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি একটু কম কর। নাহলে কিন্তু পড়াশোনার ক্ষতি হবে।
পাশে থেকে মা বলে উঠে,
– কি যে বলো তুমি। প্রত্যেকটা পরীক্ষায় নিশান ভালো করে। তুমি চিন্তা করো নাতো। ও যথেষ্ট ভালো।
– মা, আমি ভালো না বুঝি??(মিলা)
– তুইও ভালো। আমার কাছে তোরা দুইজনই সমান।
– হয়েছে। শোনো, আমি আজ রাতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি অফিসের কাজে। আমার ব্যাগটা গুছিয়ে রেখো। অার নিশান তুই সবার খেয়াল রাখিস।
– জি অবশ্যই।
এরপর ৩/৪ দিন কেটে যায়। নিশান গাড়ি নিয়ে ভার্সিটিতে যাচ্ছে। সেদিন রাতের কথাটা নিশান প্রায় ভুলেই যাচ্ছিল। কারণ ভিডিও আসতে আরো ১৫ দিন লাগবে। নিশানের ফ্রেন্ডরা ভার্সিটিতে অপেক্ষা করছে। ওরা এখন মোস্ট সিনিয়ার। কারণ ওরা সবাই ৩য় বর্ষ থেকে ৪র্থ বর্ষে উঠেছে। আর এক বছর পর ওরাও বের হয়ে যাবে৷
নিশান ভার্সিটিতে ঢুকে গাড়ি পার্ক করে চাবি ঘুরা ঘুরাতে মেইন গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখে ওর বন্ধুরা মিলে কিছু মেয়েদের সাথে কথা বলছে। নিশান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– কিরে কি অবস্থা সবার??
সবাই ওর দিকে তাকায়। কিন্তু সবার মাঝে নিশান আর একটা মেয়ের চোখ একে অপরের দিকে আঁটকে যায়। নিশানের সব মনে পড়ে। আর মেয়েটা হঠাৎই…
চলবে….