#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ💖
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
১২.
সবার পেছনে ছুটে চলেছে আদরের মোটরসাইকেল। আদরের কিছুটা আগে যাচ্ছে আর্দ্রর গাড়ি। টিকলি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো আদরের দিকে। টায়রা আদরের কাধে এক হাত রেখে আরেক হাত দিয়ে ব্যাগ ধরে আনমোনা হয়ে কোথাও তাকিয়ে ছিলো। দুটো গাড়ির মধ্যে যে খুব বেশি ফারাক তা নয়। কাছাকাছি চলছে। আর্দ্রর গাড়ি থেকে এক ফিট দূরে হবে আদরের গাড়ি। টিকলি বহুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো আদরের পানে। আদর একবাক্যে সামনের দিকে চেয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। তার চোখের মনি দুটি একবারো ঘুরলো না টিকলির দিকে। একবার চেয়ে দেখলো না এক অপরূপ রমনী তার পানে নিজের অগাধ গহন দুটি চোখ মেলে দিয়েছে। কেনো জানি না টিকলি অসহায় হয়ে পরলো। স্নিগ্ধ চোখ দুটো দিয়ে আদরের পানে তাকিয়েই ভাবলো, ‘সে কি রাগ করলো?’
টিকলি চোখ ঘুরিয়ে বিষন্ন মনে সামনে তাকালো। মন খারাপের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নেমে গেছে। এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টিগুলো জানতে পারলো না আদর ঠিক দেখেছে দুটি প্রগাঢ় অভিলাষী চোখ তার সাদৃশ্যে তাকিয়ে ছিলো। টিকলির দিকে সরাসরি না তাকালেও তার মনোযোগ আটকে ছিলো টিকলিতে। সে দেখেছে টিকলিকে তাকিয়ে থাকতে কিন্তু কোনো এক চাপা অভিমানে আদরের পুরোদস্তুর আর তাকানো হয়ে উঠলো না। টিকলি যখন সামনে ফিরে তাকালো আদর তখন এক নজর টিকলিকে পেছন থেকে ভালোভাবে দেখলো। তারপর আবারো মোটরসাইকেল চালানোতে মনোনিবেশ করলো।
,
কমলার দিঘি থেকে প্রায় এক ঘন্টার ব্যবধানে হাতিয়ার শেষ প্রান্ত অর্থাৎ মোক্তারিয়া ঘাটে পৌছে গেলো ওরা। সেখান গিয়ে ড্রাইভারদের ভাড়া ও মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দিলো। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে স্পিডবোট বা ট্রলারে করে যেতে হয় বন্দরটিলা ঘাট অর্থাৎ নিঝুম দ্বীপের এক প্রান্ত।
আদররা স্পিডবোট ভাড়া করলো। আদর ব্যাগ গুলো একে একে এনে স্পিডবোটে রাখলো। স্পিডবোট টা ঘাট থেকে অল্প একটু দূরে। লাফিয়ে উঠতে গেলে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। টিকলি হাত বাড়িয়ে দিলো আদরের দিকে। আদর সম্পূর্ণ তাকে উপেক্ষা করে ট্রলি ব্যাগগুলো টেনে স্পিডবোটে তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো। টায়রা পাশ থেকে তখন চেঁচিয়ে বলল, ‘ভাইয়া হাতটা ধরুন না।’
আদর সৌজন্যে হেসে টায়রাকে হাত ধরে টেনে উঠালো। টায়রা স্পিডবোটে উঠে টিকলির দিকে তাকালো সাথে বলল, ‘হাইরে! তুই এখনো গাধার মতোন তাকিয়ে আছিস? নে উঠ দেখি।’ টায়রা হাত বাড়ালো টিকলি জোরপূর্বক হেসে হাত ধরে উঠে আসলো।
বন্দরটিলা ঘাটে পৌছাতে সময় লেগেছে মাত্র কয়েক মিনিট। স্পিডবোট চলতে শুরু করতেই দেখা গেলো পানির ঝলকানি। টিকলি টায়রা পানিতে হাত রাঙালো, ঝাপটালো, আবেশিত হলো।
টিকলি আর টায়রা বসেছে পাশাপাশি। ওদের সামনেই আদর আর আর্দ্র বসেছে পাশাপাশি। সামনের দিকে তাকালেই চারজনা চারজনের মুখচ্ছবি স্পষ্ট দেখতে পারছে। টিকলি বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো আদরের দিকে কিন্তু এই কয়েক মিনিটের মাঝে আদর একবারো মুখ তুলে চেয়ে দেখলো না টিকলির ওই গভীর কূপের দুটো অসহায় চোখ। যে চোখ বলছে, ‘আমার অপরাধ কি?’
অন্যদিকে, তখনের পর টায়রার সাথে আর্দ্রর আর কথা হয়নি। সবার মাঝে এক গোপন অভিমানের পালা চলছে। কিন্তু কেনো? কি অর্থ এই অভিমানের? অচেনা অজানা মানুষের সাথে আড়ালে আবডালে অভিমান কি মানায়? অভিমান কি যার তার উপর আসে? এই আড়ালে অভিমানটার উপর থাকে না বলা এক অধিকার। ওদের চারজনের কি সেই অধিকার হয়েছে? নাহ..হয়নি তো! তবে কেনো এই অভিমান? অভিমান যে অনেক দামী। যার তার সাথে করতে নেই। তা কি এই চার যুবক-যুবতী বুঝে না?
,
স্পিডবোট থেকে নামার সময় যথারীতি আদর সবার আগে নেমে আবারো ব্যাগপত্র নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরলো। টিকলি এবার আর হাত বাড়িয়ে দিলো না। কিন্তু সে নামতে হিমশিম খাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে। ভাবছে, যদি নামতে গিয়ে স্পিডবোট পিছিয়ে যায় তখন তো টিকলি পানিতে পরে যাবে। গুরুতর কিছু না হলেও মান সম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে।
এইতো… কাছাকাছি দেখা গেলো আর্দ্রকে। টিকলি গলা ছেড়ে আর্দ্রকে ডাক দিলো। আর্দ্র এসে নামিয়ে নিয়ে গেলো টিকলিকে।
টিকলির ডাক ঠিক কর্ণপাত হয়েছে আদরের। তার মনের মোমবাতিটার আলো আরেকটু হালকা হয়ে এলো। এরপরের বার বুঝি নিভেই যাবে। মনের মোমবাতির নিভু নিভু আগুনের জ্বলন্ত শিখাগুলো একটাই প্রশ্ন করলো, ‘আমাকে কেনো ডাকলেন না টিকলি?’
টায়রা দাঁড়িয়ে ছিলো টিকলির পেছনে। আর্দ্র এসে টিকলিকে নামিয়ে নিয়ে গেলো কিন্তু তার দিকে এক পলক অবহেলায় তাকিয়ে চলে গেলো। টায়রাও যে পানি ভয় পায়!
সবার ব্যাগ নামিয়ে আদর ভাবনায় বিভোর টায়রাকে বলল, ‘দাড়িয়ে আছো কেনো টায়রা? এসো নেমে এসো।’ আদর হাত বাড়িয়ে দিলো। টায়রা হালকা করে হেসে আদরের হাত ধরে নেমে এলো।
সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো! এই এলোমেলো ঘটনাগুলোর উৎপত্তি কোথা থেকে তার হদিস পেলো না টিকলির অজ্ঞাত অবুঝ মন। আচ্ছা, এই বিশৃঙ্খল অভিমান গুলোর কারন কি এবং সূচনা কোথায়?
রৌদ্রেরঝাঁজে পুরে যাচ্ছে শরীর। চোখ মুখ কুচকিয়ে তাকিয়ে দেখতে হচ্ছে চারিপাশ। রোদ থেকে বাঁচতে কপালের উপর এক হাত রেখে টিকলি প্রশ্ন ছুড়লো, ‘এখন কোথায় যাবো?’
আদর কোনো উত্তর দিলো না। ভাইয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আর্দ্র ভাবুক গলায় বলল,
‘এখন..? এখন…. হ্যাঁ, এখন আমরা নামা বাজার যাবো। এটা এই নিঝুম দ্বীপের মূল বাজার বা মেইন পয়েন্ট বলা যায়। সেখান থেকে আমরা একটা হোটেলে উঠবো থাকা-খাওয়ার জন্য।’
‘আমরা নিঝুম দ্বীপ ঘুরবো না এখন?’
আর্দ্র হাতঘড়ি টা দেখে নিয়ে কপালের উপর আবার হাত রাখলো। কানের চিপ দিয়ে ঘাম বেয়ে বেয়ে পরলো। হলুদ ফর্সা মুখখানা রোদশ্রীতে হয়ে আছে লাল। আর্দ্র ক্লান্ত গলায় বলল,
‘সেই কাল বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে জার্নি করছি। এখন অলমোস্ট দুপুর হয়ে গেছে। এখন যদি এই ঠাডা পরা রোদে নিঝুম দ্বীপ ঘুরতে যাও তাহলে একটুও মজা পাবা না। তার চেয়ে চলো নামা বাজার গিয়ে একটা ভালো হোটেলে উঠে খাওয়া-দাওয়া করে রেস্ট টেস্ট নিয়ে তারপর বিকালে ঘুরবো।’
আদর ধমকে উঠলো এই মুহুর্তে, ‘এই, তোর সমস্যা কি? এতো নাক গলাচ্ছিস কেনো? ওদের ঘুরতে ইচ্ছে করলে ওরা ঘুরবে। তারপর যখন ইচ্ছা হবে তখন হোটেল বা রিসোর্ট ভাড়া করে থাকবে। আমাদের এখন যাওয়ার দরকার আমরা চলে যাবো ওদের টানছিস কেনো? ওদেরটা ওরা বুঝে নিবে। তোর ওতো বক্তব্য দিতে হবে না আর নিজের মতামতও পেষন করতে হবে না। যার যার টা সে সে বুঝে নিবে।’
ভাইয়ের বকুনিতে আর্দ্র একদম শান্ত হয়ে গেলো। টায়রা সূক্ষ্ম চোখে কিছুক্ষণ আদরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ক্ষনকাল উদ্ধার করার চেষ্টা করলো আদরের এই অসময়ের কারণহীন রাগের। কিন্তু কোনো রহস্যই উন্মোচন করা গেলো না। তার ভোঁতা মস্তিষ্ক কারণটা ধরতে পারলো না। টিকলি কণ্ঠে রাগ মিশিয়ে বলল,
‘আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো? আপনারা যদি এখন হোটেলে বা রিসোর্টে উঠেন তাহলে আমরাও উঠবো। পরে একসাথে নিঝুম দ্বীপ ঘুরা যাবে।’
আদর কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, ‘কেনো? একসাথে কেনো? আমরা এখন হোটেল বা রিসোর্টে উঠলে আপনারাই বা এখন কেনো উঠবেন? আপনারা কি এসেছেন আমাদের ভরসায়? আমাদের সাথে যদি দেখা না হতো তখন কি করতেন? নিশ্চয়ই একা একা নিজের মরজিমাফিক ঘুরাফেরা করতেন? এখনও তাই করুন।’
কি আশ্চর্য! এই লোকটা হঠাৎ এতো কাট কাট গলায় কথা বলছে কেনো? লোকটা নিজ ইচ্ছায় আমাদের কত সাহায্য করলো! নিজে মোটরসাইকেল ভাড়া করে আমাদের নিয়ে আসলো। স্পিডবোট ভাড়া করলো। একসাথে আসলাম সবাই। লঞ্চে কত মজা করলাম। আর এখন দেখো! লোকটার ব্যাবহার দেখো না! সমস্যা কি এই লোকের? কি নিয়ে এতো রেগে আছে?
টিকলির মনে অজস্র ভাবনা। যে ভাবনার কোনো মাথা মুন্ডু কিচ্ছু নেই।
টিকলি আঙ্গুল তুলে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিতে উদ্ধৃত হলো৷ তখনি টায়রা অতি ঠান্ডা নরম ভদ্র এবং বিজ্ঞ সুরে বলল,
‘দেখুন ভাইয়া, আমরা এতোটা পথ একসাথে এসেছি। বলতে গেলে এখন আমরা বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছি। ভাই-বোন অথবা বন্ধুর মতো। আর আমরা দুজন মেয়ে। কোথাও কাউকে চিনি না। অপরিচিত জায়গায় যদি এই অল্প পরিচিত আপনারা থাকেন তাহলে একটু সেফ ফিল হবে।’
আর্দ্র ঘাড়ে হাত রেখে বিড়বিড় করলো, ‘ওহ মাই গড! এই মেয়ে এতো সুন্দর করেও কথা বলতে পারে? ভাইয়া এতো কড়া কড়া কথা শুনিয়ে দেবার পরও এই মেয়ে এতো মিস্টি সুরে কথা বলছে? ভাইয়ার জায়গায় আমি হলে নিশ্চিত এখনি আমার গলা চেপে ধরে জবান বন্ধ করে দিতো।’
‘এটা কোনো যুক্তিযুক্ত কারন হলো না টায়রা। আমরাও তো খারাপ হতে পারি।’ আদর জবাব দিলো।
‘কি যে বলেন ভাইয়া! আপনারা যদি খারাপই হতেন… যদি আমাদের ক্ষতি করাই আপনাদের মূল উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে এর আগে অনেকবার অনেক সুযোগ আপনারা হাতছাড়া করে ফেলেছেন।’
‘যেমন?’ আর্দ্র এবার মুখ ফুটে প্রশ্ন করলো। আদর কড়া চোখে আর্দ্রর দিকে তাকালো। আর্দ্র মাথা নিচু করে আবারো কিসব বিড়বিড় করলো, ‘বড় ভাই থাকার এই এক জ্বালা। কথায় কথায় শুধু চোখ রাঙানি।’
টায়রার আগে টিকলি বলে উঠলো, ‘যেমন, প্রথম সুযোগ হলো লঞ্চে। একদম সুবর্ণময় সুযোগ। দ্বিতীয় সুযোগ হলো মোটরসাইকেলে। আপনারা ইচ্ছে করলে মোটরসাইকেলে করে আমাদের অন্য জায়গায়ও নিয়ে চলে যেতে পারতেন। মোটরসাইকেল ওয়ালাদের কিছু টাকা ঘুষ দিলেই হতো। তৃতীয় সুযোগ কমলার দিঘি। আপনারা ইচ্ছে করলে ওই জায়গায় আমাদের ক্ষতি করে ব্যাগপত্র টাকা পয়সা চুরি করে নিয়ে আমাদের একা ফেলে চলেও আসতে পারতেন। বিচ কিন্তু একদম জনমানবহীন নিরব ছিল। আর চতুর্থ…. ‘
আদর টিকলিকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘ব্যস ব্যাস থামুন, তার আগে বলুন আপনি আমাদের চোর বললেন?’
টিকলি চোখ দুটো বিস্ফোরিত করে ক্ষণকাল তাকিয়ে থাকলো ড্যাবড্যাব করে। আদর একটু বিব্রত বোধ করলো। আচ্ছা, মেয়েটা এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো? আদর কি খুব ন্যাকামো বা অপ্রাসঙ্গিক কিংবা আজাইরা কথা বলে ফেলেছে নাকি?
টায়রা এবার নিচু কন্ঠে জোরালোভাবে বলল, ‘না না না ভাইয়া। ও তা বলে নি। আপনারা আমাদের কি কি ক্ষতি করতে পারেন সেটার লিস্ট দিচ্ছিলো।’
আর্দ্র চোখ বড় বড় করে বলল, ‘ভাইয়া দেখো, তোমাকে ইনডিরেক্টলি নানা ডাকলো।’
সাথে সাথে টায়রা দাঁত কটমট করে তাকালো। আর্দ্র দ্বিগুন চোখ রাঙিয়ে তাকালো। আদর নিজের ব্যাগটা কাধে নিতে নিতে বলল, ‘এসো তোমরা সবাই।’
এই মুহুর্তে আদরের হেল্প নিতে একটুও ইচ্ছে করছে না টিকলির। যারা অহংকার করে তাদের টিকলি একদমই সহ্য করতে পারে না। আর আদরের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও সেই অহংকারের ছাপ পাওয়া গেছে। কিছুক্ষণের জন্য টিকলি আদরের উপর সেই মাস্ক পরা অসভ্য ছেলেটার ছায়া দেখেছে। নেহাৎ কোনো চেনাজানা নেই তাই ঠেলায় পরে যাচ্ছে না হলে কক্ষনো এই দাম্ভিক লোকের সাথে আর এক পাও বাড়াতো না।
এদিকে টিকলির চোখ টাও ব্যাথায় টনটন করছে। ভ্রু উপরের কাটা জায়গাটা থেকে ব্যথা ছড়িয়ে পরেছে সারা চোখময়। চোখের সেই তীব্র ব্যথা আস্তে আস্তে ঘায়েল করছে মাথাও। মাথার সাথে চোখের এই এক অবাক করা গোপন বন্ডিং। বাম চোখ দিয়ে টিকলি সব ঘোলা দেখছিলো। এমতাবস্থায় এই ভারী ট্রলি ব্যাগটা টেনে নিয়ে যাওয়া ভিষণ মুসকিল হয়ে দাড়িয়েছে।
আদর খেয়াল করলো সবটা। আস্তে করে টিকলির হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে সে টিকলিকে এড়িয়ে যাওয়া গলায় বলল, ‘কোথাও ট্রাভেল করতে গেলে যতোটা সম্ভব ছোট ব্যাগ নেওয়া উচিত। আর সেখানে এই ট্রলি ব্যাগ তো রীতিমতো বিলাসিতা। ‘
টিকলি নাক ফুলিয়ে তাকালো। লোকটা কথায় কথায় অপমান করে যার জন্য তার উপকার গুলো চোখের আড়ালে পরে যায়। কিন্তু কথাগুলোও সব সত্যি বলে। সত্যি তো এতো বড় বোঝা কেনো নিয়ে এসেছে টিকলি? ছোট একটা ব্যাগ আনলেই তো পারতো। টিকলি আরেকবার ভালোভাবে আদরের দিকে তাকালো।
আদর হেটে যাচ্ছে বড় বড় কদম ফেলে স্ট্রেট সামনের দিকে তাকিয়ে ব্যাগ টানতে টানতে। ট্রলি ব্যাগের চাকার সাথে মাটির ঘর্ষণে ভু ভু শব্দ হচ্ছে। লোকটার পা ফেলে হাটার ধরনটাও কি সুন্দর! বলতে নেই, এই লোকটার উপর টিকলি রাগ করে থাকতে পারে না। লোকটার উপর তার জেদ তেজ আসে না। লোকটার অশেষ পারসোনালিটির উপর টিকলি মুগ্ধমগ্ন হয়ে যায় বারংবার।
চলবে❤️
#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ 💖
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
১৩.
রিমঝিম আবহাওয়া। নিঝুম দ্বীপের নামা বাজার এসে ওরা উঠলো নিঝুম রিসোর্টে। রিসোর্টের দেয়ালে পোস্টার টানিয়ে স্পষ্টঅক্ষরে লেখা,
নিঝুম রিসোর্ট
পরিচালনায়
অবকাশ পর্যটন লিঃ ও সাফারী প্লাস
নামা বাজার, নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া, নোয়াখালী
মোবাইলঃ ০১৮৬৬৯৮৯৮৫৮, ০১৮৬৬৯৮৯৮৫৫ ( নাম্বার দুটি কালেক্ট করা অনলাইনের নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা থেকে)
অবকাশ পর্যটনের নিঝুম রিসোর্টের দুই বেডের রুম ভাড়া দুই হাজার টাকা। অফ সিজন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল – ৩০ সেপ্টেম্বর এর মধ্যে এলে ৫০% ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। আদর দুটো রুম ভাড়া করলো। ডিসকাউন্ট দিয়ে দুটো রুম ভাড়া একত্রে পরলো দুই হাজার টাকা। রুম ভাড়া করার সময় আদর টিকলিকে ইশারায় দেখিয়ে দিয়ে লোকটাকে বলল,
‘ওই যে উনাকে দেখছেন, উনার কাছ থেকে এডভান্স টাকাটা নিয়ে রাখেন।’
রিসেপশনিস্ট টিকলির কাছে গেলো। টিকলি টাকা দিয়ে লোককে আলবিদা জানিয়ে আদরের দিকে তাকিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বলল, ‘এটা কি হলো?’
আদর চুলে হাত চালাতে চালাতে জবাব দেয়, ‘কোনটা?’
‘এই যে এটা। মানে টাকাটা তো আপনি দিতে পারতেন। পরে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিতেন।’
টিকলিকে এড়িয়ে যেতে যেতে আদর বলল, ‘পরে দিলেও দিতে হতো আর এখনো দিতেই হচ্ছে। বাকির নাম ফাঁকি কথাটা মনে রাখবেন। আর মোটরসাইকেল ভাড়া পুরোটা আমি বহন করেছি। সো থাকা-খাওয়ার ভাড়া আপনার। ‘
টিকলি আদরের পেছন পেছন যেতে যেতে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলল, ‘মোটরসাইকেল ভাড়া আপনার কত পরেছে শুনি? আমার তো রুম ভাড়া করতেই দু’হাজার চলে গেলো। খাওয়া দাওয়ার খরচ তো আছেই। বলতে গেলে মোট তিন-চার হাজার টাকা খরচ হবে আমার।’
আদর হাটা থামিয়ে পেছন ঘুরে ঠোঁট গোল করে বলল, ‘তো? আমারো ভাড়া গিয়েছে অলমোস্ট তিন হাজার টাকার মতো। আমি কি এই ব্যাপারে একটা টু শব্দ করেছি? তবে আপনি ফকিন্নির মতো আচরণ করছেন কেনো?’
নিজের দিকে আঙ্গুল তুলে টিকলি মুখটাকে হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। এরপর বিস্ময়কর কণ্ঠে বলল, ‘আ আ আমি ফকিন্নি? আর আপনার মোটরসাইকেল ভাড়া তিনহাজার টাকা গিয়েছে? ফাইজলামি? ‘
আদর আবারো হাটা শুরু করে তাচ্ছিল্য করে বলল,
‘আমি আপনার মতোন অভাবগ্রস্থ নই যে মিথ্যা কথা বলবো। আর একটা মোটরসাইকেলে দুজনের ভাড়া হলো ৩০০-৩৫০ টাকা। তো আমরা দুটো মোটরসাইকেল নিয়েছিলাম। এবং নিজ দায়িত্বে চালিয়ে এসেছি। এর জন্য ড্রাইভাররা এক্সট্রা টাকা নিয়েছে। দুটো মোটরসাইকেল মিলিয়ে ওরা দুই হাজার টাকা নিয়েছে। আর কমলার দিঘি দেখতে গেলে ৩০০-৩৫০ টাকা এক্সট্রা গুনতে হয়। তো এখানেও এক্সট্রা ৭০০-৮০০ টাকা দিতে হয়েছে। তারপর আপনাকে আমি মিরিন্ডা কিনে দিয়েছিলাম। কমলার দিঘি গিয়ে বাদাম, ঝাল মুড়ি খেয়েছেন দুই বোন। সব মিলিয়ে তিন হাজার টাকা খরচ হলো না?’
টিকলি আদরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আরে ভাই আপনি আমাকে মিসকিন বললেন এদিকে তো আপনি সবচেয়ে বড় মিসকিন, অভাবগ্রস্থ, ফকির, অতিদরিদ্র, হতদরিদ্র একজন মানুষ। যে কিনা সামান্য একটা ত্রিশ টাকার মিরিন্ডা, বিশ টাকার বাদাম আর চল্লিশ টাকার ঝালমুড়িও হিসাব করে। আপনি নাকি আবার ডাক্তার?’
টিকলি বলল হাতের দু আঙ্গুলে ছোট করে পরিমাপ দেখিয়ে। আদর বলল, ‘যে যেমন তার সাথে তেমনই করা উচিত। ‘
,
এই রিসোর্টগুলো যে একদম আহামরি সুন্দর টাইপ তেমন না। একদম বিরাট জাকজমকপূর্ণ লাক্সারি রিসোর্ট তা না। রিসোর্ট মানেই বুঝা যায় অনেক এক্সপেন্সিভ, আড়ম্বরপূর্ণ কিন্তু এখানে তার বালাই নেই। নামেই রিসোর্ট। খুব স্বাভাবিক একটা আবাসিক হোটেলের মতো। দেয়ালে পেস্ট রং করা, স্টেনওয়ালা কমদামি খাট, ফুল তোলা লাল কমলা বিছানার চাদর, এটাচ বাথরুমের কালো রঙের দেয়াল। সমস্যা হলো, এখানে দিনে বিদ্যুৎ থাকে না। ১-২ ঘণ্টা পরপর ৩০ মিনিটের মতো বিদ্যুৎ আসে।
আর্দ্র টায়রা ঘরগুলো দেখতে চলে এসেছিলো আগেই। টায়রা পুরো ঘরটা দেখে নাক উঁচুতে তুলল। বিড়বিড় করে বলল, ‘নামেই রিসোর্ট।’
,
ওদের রুম দুটো পাশাপাশি। আর্দ্র খানিক চিন্তা করলো কোন ঘরে ঢুকবে। এরপর সে এই সিদ্ধান্তে আসলো যে বাম পাশের রুমটায় যাবে। আর্দ্র যখন বাম পাশের রুমে ঢুকতে গেলো দূর্ভাগ্যবশত টায়রাও সেই রুমে ঢুকতে গেলো। দুজন দুজনের সাথে হালকা ধাক্কা খেয়ে থেমে গেলো। এরপর টায়রা গেলো ডান পাশের ঘরে আর্দ্রও যেতে নিলো। এরপর দুজনেই আবার বাম পাশের রুমে ঢুকতে গেলো। পরিশেষে আর্দ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
‘আরে দাড়ান তো। হয় নিজে যান নাহয় আমাকে যেতে দিন।’
টায়রা হাত ভাঁজ করে দাড়িয়ে বলল, ‘আপনার যাওয়ার দরকার আপনি যান। আমি পরে যাবো।’
‘সবসময় শুধু ঘাইড়ামি।’ বলেই আর্দ্র ডান পাশের ঘরে ঢুকে পরলো। বাইরে থেকে টায়রা গলা উঁচিয়ে বলল,
‘দোয়া করি, আপনার কপালে একটা মহা ঘাইড়া জুটুক। যাতে আপনার জীবনটা ত্যানা ত্যানা করে দেয়। আমিন।’
‘দূর হন এক্ষুনি।’ ভেতর থেকে চেঁচিয়ে জবাব দিলো আর্দ্র।
,
খাওয়ার পর্ব শেষ করে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো দুই বোন। যার কারণে তাদের আজ আর কোথাও ঘুরতে যাওয়া হলো না। প্রায় যখন সন্ধ্যা তখন অন্ধকার হয়ে আসা ঘরটাতে মশার কামড় খেয়ে জেগে উঠলো টিকলি। কারেন্ট নেই। বাইরের দিনের আলো হালকা হয়ে আসছে দেখেই টিকলি একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলল। টায়রাকে দু-একবার ডাক দিলো। টায়রা বিরক্তির ঘুম ঘুম কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো,
‘কি হইছে বা*?’
টিকলি রাগীস্বরে বলল, ‘এক চটকানা খাবি। এতো খারাপ হইতাছিস কেনো দিন দিন?’
মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে আধো আধো চোখ মেলে টায়রা বলল, ‘এই কথা বলার জন্য আমার এতো সুন্দর ঘুমটা ভাঙাইলি? ‘
‘নাহ, বাইরে দেখ। তোর ঘুমের জন্য বারোটা বেজে গেছে।’
টায়রা নিজের স্মার্টফোনটা হাতড়িয়ে বালিশের আশেপাশে খুঁজলো। ফোন খুলতেই দেখা গেলো সাড়ে ছয়টা বাজে আর কয়েক মিনিট পর মাগরিবের আজান দিবে। টায়রা লাফিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। মুখে হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘ও মাই গড। এতো ঘুমিয়েছি?’ এরপর টিকলির দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘আমার ঘুমের জন্য বারোটা বাজছে তাই না? আর তুই কি করতাছিলি?’
‘আমি তো তোর দেখাদেখি ঘুমাচ্ছিলাম।’
‘সর তো আবাল। চোখের সামনে থেকে সর। তোর জন্য আজকে ঘুরতে যাওয়া হলো না। আবার কাল সকাল অবধি ওয়েট করতে হবে।’
‘যত দোষ নন্দ ঘোষ।’
টায়রা ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে আস্তে আস্তে বলল, ‘ওরা তো একবার ডাকতে পারতো। আর আদর ভাইয়ার কাছে তো তোর নাম্বারও আছে।’
টায়রার আস্তে বাচ্য গুলো কর্ণপাত হলো টিকলির। শুধু কর্ণধার ই হয়নি একদম বুকের গভীরে ঢুকে গিয়ে তারা বিক্ষুব্ধ যুদ্ধ ঘোষণা করছে। আর এই বিক্ষিপ্ত যুদ্ধের কারন হলো টিকলির অবচেতন মন। যেই মনকে টিকলি নিজে বুঝে উঠতে পারছে না। যেই মন অভিমান করে বলছে, ‘সত্যি তো, আদর সাহেব কেনো একটা ফোন দিলেন না? তার কাছে তো আমার নাম্বার ছিলো।’
,
বিকেলবেলা আদর আর্দ্র ও রেস্ট নিতে নিতে ঘন্টাখানেকের জন্য ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। ঘুম থেকে উঠে দেখে বিকাল পাঁচটা বাজে। এই সময়ে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে ঘুরতে যেতে যেতেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তাই আর যাওয়া হয়নি। আদরও টিকলি টায়রাকে ডাক দেয়নি। শুধু ওরা দুই ভাই মিলে বিকাল দিকে নামা বাজারটা ঘুরে ঘুরে দেখেছে।
রাত তখন বাজে আটটা। এখানে সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এছাড়া সারারাত লাইট ইউজ করা যায় সোলার প্যানেল থেকে। আদর রিসোর্টের পেছনে অল্প খালি জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে ছিলো। মোবাইল হাতে নিয়ে গেলো কন্ট্রাক্টস লিস্টে। উদ্দেশ্যে ওর এসিস্ট্যান্ট তমালকে ফোন দেওয়া। ‘T’ দিয়ে সার্চ দিতেই সবার সামনে ভেসে উঠলো টিকটিকি নামে সেভ করা একটি নাম্বার। আদর কয়েক সেকেন্ড গভীর মনোযোগে নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে থেকে পরমুহূর্তে কল লাগালো তমালকে। তমালের সাথে কিছু জরুরি কথাবার্তা শেষ করে ফোন রাখতেই আবারো চোখ গেলো টিকটিকি নামের সেই নাম্বারটিতে। আদর ডায়াল করলো পরমুহূর্তে আবার কেটেও দিলো। ফোনটা পকেটে রাখতে গিয়েও পকেট থেকে আবার বের করে টিকলির নাম্বারটা ফোন থেকে ডিলিট করে দিলো।
মিনিট পাঁচেক পূর্ণিমাচন্দ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে আদর চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। ঘুরতেই দেখা হলো টিকলির সাথে। অনাকাঙ্ক্ষিত বশত টিকলিও হকচকিয়ে গেলো। আদর প্রশ্ন করলো আগে, ‘আপনি?’
‘হুম। ভেতরে নেট পাচ্ছিলো না তাই আর কি..’
‘কি সিম ইউজ করেন?’
‘বাংলালিংক।’
‘ওহ সম্ভবত এখানে শুধু গ্রামীণফোন আর রবির নেট পায়। নট সিউর। ‘
‘ওহ আচ্ছা।’ টিকলি মন খারাপ করে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো সাথে সাথে পেছন থেকে ডেকে উঠলো গম্ভীর ব্যক্তিটি। টিকলি হালকা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে নরম সুরে বলল,
‘জি বলুন।’
ব্যস, সেখানেই থমকে গেলো সে। টিকলি যখন এতো সুন্দর করে কথা বলে আদরের তখন সব অভিমান দুমড়ে মুচড়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ করেই আবার যখন আদরকে এভোয়েড বা রিজেক্ট করে তখন আবার মস্তিষ্কে রক্ত উঠে যায়। কেনো এমন হয়? যেমন, এখন আদরের মনে হচ্ছে একটু আগে সে একটা ভুল করে ফেলেছে। নাম্বারটা ডিলিট করে সে ঠিক করেনি। আবার হয়তো কিছুক্ষণ পর টিকলির কোনো ব্যবহার তার ভালো না লাগলে সে আবার ভাববে, ডিলিট করেছে বেশ করেছে।
আদর গলা খাকারি দিয়ে প্রশ্ন করে, ‘ চোখের ব্যাথা কমেছে?’
টিকলির কুঞ্চিত ভ্রুযুগল সোজা হয়ে তাকালো। নরম হয়ে গেলো চোখের চাহনি। শীতল বৃষ্টি বৃষ্টি গন্ধ বাতাসে শরীর তপ্ত হয়ে যায়। স্রোতস্বিনীতে ভেসে যায় মন। ভিজে যায় হৃদয়পাটাতন। কিন্তু এই স্রোতস্বিনীতে ভাসতে ভাসতেই হঠাৎ স্রোতশূন্য হয়ে পরে সে। তখন নিজেকে বড্ড নিষ্প্রয়োজন বলে মনে হয়। অভিমান জমে যায় বুকের গহীনে। হিম শীতল হাওয়া ক্রমেই উষ্ণ গরমে পরিণত হয়। ভালো লাগে না তখন টিকলির। আদরের তার প্রতি উদাসীনতা এবং ছন্নছাড়া ভাব তার একদম ভালো লাগেনা। এই যে এখন কি সুন্দর ভাবে খোঁজ নিচ্ছে কিন্তু একটুপর ঠিক আবার টিকলিকে ইগনোর করবে যেমনটা করে আসছে সেই কমলার দিঘি থেকে। টিকলি বুঝে পায়না একটা মানুষের দুটো রূপ কি করে থাকতে পারে? এই কেয়ারিং তো এই ইগনোরিং।
টিকলি কানের পাশে চুলগুলো গুঁজে দিয়ে হালকা গলায় বলল, ‘জি কমেছে।’
আদর টিকলির থেকে চোখ সরিয়ে আবারো আকাশের পানে তাকালো। বলল, ‘ওহ। মলমটা ঠিকমতো লাগালে আস্তে আস্তে দাগও মিশে যাবে।’
টিকলি মাথা নাড়িয়ে ‘হুম’ বলল। এরপর কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘আকাশে কি দেখেন?’
আদর টিকলির দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণঠাসায় হাসি টেনে বলল, ‘তাঁরা দেখি।’
‘তাঁরা? প্রতিদিন দেখেন?’
‘হুম। জানেন, আমি না শুকতারা জমিয়েছি।’
‘যাহ, শুকতারা আবার জমানো যায় নাকি?’
আদর হাসে। বলে, ‘যায় তো। এই যে আমার এই বুকের ডানপাশে শুকতারা রেখেছি।’
‘কেনো রেখেছেন?’
‘যাতে অসময়ে হঠাৎ করে কাঙ্ক্ষিত মানুষটা এলে আর কিছু না দিতে পারলেও এই শুকতারা যেনো দিতে পারি।’
‘কাঙ্ক্ষিত মানুষ?’ টিকলি অবাক গলায় প্রশ্ন করে।
‘হুম, কাঙ্ক্ষিত মানুষ। এমন মানুষ যে আমার শুকতারা কিনতে চাইবে।’
‘কিনতে চাইবে? শুকতারা বেঁচা-কেনাও যায় বুঝি?’
‘নাহ, শুধু জমানো যায় আর কেনা যায়। বেঁচা যায় না।’
‘তাই? আচ্ছা, কেনো কিনতে চাইবে?’
টিকলির বাচ্চামো প্রশ্ন শুনে আদর মুচকি হেসে উত্তর দিলো, ‘কারণ সে যে কাঙ্ক্ষিত মানুষ তাই।’
আদর আবার বলল আত্মমগ্ন গলায়, ‘শুকতারা যত্ন করে নিজের বুকের ডানপাশ টায় রাখার জন্য আমার বুকের ডানপাশ থেকে কেড়ে নিবে। কারণ সে ভাববে শুকতারা আমার কাছে ভালো নেই। একাকিত্ব বোধ করছে। তার একটা সঙ্গী দরকার। আর সেই সঙ্গিনী হবে সে।’
‘কেনো সঙ্গ দিবে?’
“কারন সে যে হবে এক বিরলতম রঙিন প্রজাপতি। যার পাখায় থাকবে শুকতারার রং। ভালোবাসার রংমহলের ওয়াচ টাওয়ার। যার কাছে গেলেই আমি দেখতে পারবো আমার পুরো ভালোবাসাময় শুকতারার বাগান। শুকতারা জ্বলজ্বল করতে করতে জানান দিবে সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটির নাম।”
চলবে❤️