বৃষ্টিশেষে প্রেমছন্দ পর্ব-৪৮+৪৯

0
511

#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন

৪৮.
রাহুল ইটের রাস্তা দিয়ে নির্বিকারভাবে হেঁটে আসছিলো। দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো রাস্তায় ছায়ার যোগানদাতা। বাহারি পাতাগুলো সকালের নরম রোদ আর নির্মল হাওয়ার সাথে দুলতে দুলতে রাস্তায় নানান ধরের নকশা আঁকছে। আকাশ ফেটে আসা তপ্ত রোদের ভ্যাপসা গরম। আচমকা রাহুল সামনে আর্দ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। খানিকটা চমকে মুখটাকে নিচে নামিয়ে এগিয়ে যেতেই আর্দ্র রাহুলের কাধ চাপড়ে বলল,

‘কি ভাই? কি খবর? বিয়ে করে নিচ্ছো? সাথে আবার হুটহাট বাসাটাও ছেড়ে দিলে। যাওয়ার আগে দেখাটা পর্যন্ত করে গেলে না।’

রাহুল শুকনো ঠোঁট দুটো ভিজালো। নিভার জন্যই তো এতোসব কাণ্ড। রাহুল উল্টে প্রশ্ন করলো, ‘তুমি এখানে যে?’

আর্দ্র খুব জোরে শ্বাস ফেলল। বলল, ‘সামনে আমার বিয়ে। মা-বাবা এসেছে শপিং করতে। সাথে বগলদাবা করে আমাকেও নিয়ে এলো। বুঝলে আজকালকার দিনে ছেলেমেয়ের ইচ্ছের কোনো মূল্যই নেই।’

রাহুলের চোখ ফেটে বেরুতে চাইলো। অবাক গলায় বলল, ‘তোমার বিয়ে? আদর ভাইকে ছেড়ে তোমার বিয়ে?’

আর্দ্র দ্বিতীয় বার জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আকাশের দিকে মুখ করে তাকালো। খানিক বাদে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। থুতনি’টা কেঁপে কেঁপে উঠলো। রাহুল আর্দ্রর কাধে হাত রেখে বলল, ‘কার সাথে বিয়ে হচ্ছে তোমার? আর কবে বিয়ে?’

আর্দ্র হাত চোখের উপর রাখলো। কিছুক্ষণ পর সরিয়ে বলল, ‘তিনদিন পর৷ সামনের শুক্রবার। তোমাকে দাওয়াত দেইনি কারণ সেদিন তোমারও বিয়ে। তুমি নিজেই উল্টে দাওয়াত দিয়ে রেখেছো। আর দাওয়াত দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে আমি নেই। তবুও পারলে এসো।’

শেষের কথাগুলোর মুচকি হাসিতে আর্দ্রর ভেতরের কষ্ট গুলো দৃশ্যমান হলো। রাহুল মাথা দুলিয়ে বলল, ‘পাত্রীর নাম কি ভাই?’

আর্দ্র উদাস কণ্ঠে বলল, ‘নিভা ইয়াসমিন। আমার খালাতো বোন। চেনো নিশ্চয়ই? চেনার কথা তো!’

রাহুল চমকে উঠলো। বুকের ভেতর কি যেনো ধক করে উঠলো। আত্মা কাঁপলো। এরপর অবাক গলায় বলল, ‘নিভার বিয়ে? তোমারও বিয়ে? তোমাদের দুজনের একসাথে বিয়ে?’

,

টিকলি হাত মোচড়াতে মোচড়াতে টায়রার পাশে বসে বলল, ‘যাহ তো টায়রা। খবর লাগা তো। রাহুল ভাইয়া কি নাম্বার চেঞ্জ করেছে নাকি?’

দুপুরের খাওয়া শেষে অলস শরীরে শুয়েছিলো টায়রা। টিকলির কথায় যারপরনাই বিরক্ত হলো। টিকলি অস্থির হয়ে উঠলো, ‘যা না! আর তিনদিন পর বিয়ে। কি করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।’

টায়রা ঘুমের ভান ধরে বলল, ‘পরে যাবো।’

‘এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিবো। আমার এদিকে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর তুই পরে আছোস তোর ঘুম নিয়ে?’

টায়রা বড় একটা হাই তুলে মুখ হামলাতে হামলাতে বলল, ‘আমার বদলে তুই গেলে বেশি ভালো হবে। রাহুল ভাইয়া বোধ হয় ছাদে। এই ছেলে বেশিরভাগ সময় ছাদে থাকে। নিভাও বলেছিলো একদিন।’

টিকলি ভ্রু কুচকে তাকালো। নিভা আজ সকালে একবার এসেছিলো। রাহুল এ বাড়িতে থাকে শুনেই চমকে উঠলো। চোখ জোড়া টলমল করে উঠলো তার। আধ ঘন্টাও বসে থাকলো না। চলে গেলো। টায়রা তখন বাড়িতে ছিলো না। রাহুলও বাড়িতে ছিলো না। শুধু ছিলো একা টিকলি।

টিকলি সব ভাবনা একদিকে ফেলে ছাদের দিকে ছুটলো। রাহুল ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকঁছিলো। টিকলিকে দেখে সে হাসলো কিন্তু হাত থেকে সিগারেট ফেলল না। কি আশ্চর্য! অথচ নিভাকে দেখলে সে তড়িঘড়ি করে ফেলে দিতো। অবশ্য টিকলি আগে থেকে জানে রাহুল সিগারেট খায়। কিন্তু তবুও যাকে দেখে তার ভয় পেয়ে সিগারেট ফেলে দেওয়ার কথা তাকে দেখেই ফেলল না। যাক গে, এসব এতো ভেবে কাজ নেই। এক একজনের প্রতি এক একরকমের সম্মান। নিভার সাথে রাহুলের টিকলির মতো ঘনিষ্ঠতা ছিলো না বলেই হয়তো সামনে সিগারেট খেতে জড়তা কাজ করতো। টিকলি ইতস্তত করে বলল,

‘ভাইয়া?’

রাহুল হেসে বলল, ‘হুম বল।’

টিকলি তৎক্ষণাৎ কথা খুঁজে পেলো না। কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে শুকনো ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে বলল, ‘বলছিলাম…বলছিলাম যে তুমি আজ সকালে কোথায় গিয়েছিলে? ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু ফোন বন্ধ এলো।’

দু’আঙ্গুলের ফাঁকে পোড়া ঠোঁটে সিগারেট ফুকতে ফুকতে রাহুল আস্তেধীরে জবাব দিলো, ‘সকালে একটা কাজে গিয়েছিলাম। ছাত্রদের আর পড়াবো না বলে না করে দিয়ে আসলাম। সাথে আবার রাস্তায় আর্দ্রর সাথেও দেখা হলো। আর ফোনের সিম চেঞ্জ করেছি। পুরোনো সব জিনিস বাতিলের খাতায় নাম লেখাচ্ছি।’

টিকলি চমকে বলল, ‘কি বলো! আর্দ্র ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিল? কি বলল?’

‘তেমন কিছুই না। শুনলাম ওর নাকি বিয়ে তাও আদর ভাইয়ার আগে। আমাদের যেদিন বিয়ে সেই একই দিনে বিয়ে।’

টিকলি এই সম্পর্কে আর কিছু বলল না। জড়তা নিয়ে চাইলো, ‘তোমার নাম্বারটা দেও ভাইয়া।’

রাহুল নাম্বার দিলো। টিকলি নাম্বার নিয়ে নিশ্চুপে চলে যেতে গেলেই আবার ঘুরে দাঁড়ালো। ভাবলো, ও নিজে কি রাহুলকে সবটা বলে দিবে? পরক্ষণেই চিন্তা করলো থাক আগে আদর কথা বলুক। ভ্রু কুচকে টিকলি প্রশ্ন করলো,

‘তুমি এতো ইজি কীভাবে? আমাকে বিয়ে করায় তোমার মত আছে?’

রাহুল টিকলির চোখের দিকে তাকালো। চোখের তাঁরায় তার জন্য কিছু খুঁজে না পেয়ে আবারো চোখ সরিয়ে নিলো। টিকলি অনেক্ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো৷ রাহুলের থেকে উত্তর না পেয়ে চলে যেতে নিলো। রাহুল চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস আটকে তৃপ্তি নিয়ে বলল,

‘আজ পর্যন্ত বলা হয়নি। আমি এই তুই নামের ভেবলি টাকে খুব ভালোবাসি। অনেক ছোটবেলায় থেকে তুই যখন আমার কাছে এসে আধো আধো গলায় বিচার দিতি , টায়রা তোর চকলেট খেয়ে ফেলেছে। সেই আধো আধো গলায় কথা বলা থেকে ভালোবাসি। কক্ষনো না কাঁদা তুই হঠাৎ বিশাল আকারে আয়োজন করে ঠোঁট চোখ ফুলিয়ে কেঁদে বন্যা বইয়ে দেওয়ার পানি গুলোকে ভালোবাসি। তোর শব্দবিহীন জটিল হাসিগুলোর ডঙ্কার কে আমি অনেক ছোটোবেলা থেকেই ভালোবাসি…!

টিকলি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। চোখে বিস্ময়তার মেলা। চোখের ভাঁজে ভাঁজে অনুতাপ, অসহায়ত্ব। থুতনিতে কাঁপন৷ সে অবাক, হতবাক, নির্বাক। চোখের দৃষ্টি শুন্য। টিকলির মাথাটা দপদপ করছে। কানের ভেতর শাঁ শাঁ থেকে পু পু একধরনের শব্দ হচ্ছে। টিকলির পা স্থির থাকলো না। শূন্য চোখের দৃষ্টি পানি ফেলতে ফেলতে এক দৌড়ে নিচে চলে গেলো। এতোসব গোলমেলে জটিল সমস্যার বেড়াজালে টিকলির জীবন ছিন্ন করে দিতে ইচ্ছে হলো। মাথার চুল টেনে ধরলো। কোন দিকে যাবে? কোনপথটা খোলা? একদিকে রাহুলের এতো বছরের ভালোবাসার উপর মায়া অন্যদিকে নিজের ভালোবাসার উপর ভালোবাসা। কাকে রেখে কাকে কষ্ট দিবে টিকলি? কারোর কষ্টই তো কারোর থেকে কম নয়।

টিকলিকে কথাগুলো বলতে পেরে রাহুলের মনে অন্যরকম প্রশান্তি জাগলো। টিকলি যেভাবে দৌড়ে চলে গেলো রাহুল ধরে নিলো টিকলি লজ্জা পেয়েছে।একবারো ভাবতে পারলো না আবারো কষ্টের পঁচা সমুদ্রে সে গা ভাসাতে চলেছে।

রাহুল আকাশের দিক তাক করে সিগারেট ফুকতে ফুকতে স্মিত হেসে উঠলো। মনে মনে ভাবলো, ভালোবাসার চাইতে বড় অভিনয় এ পৃথিবীতে আর দুটি নেই। মানুষের চাইতে বড় বেঈমান এবং নিমকহারামও বোধহয় আর কেউ হয়না। যেই মেয়েটা দুদিন আগেও ভালোবাসি ভালোবাসি করে কেদে বুক ভাসালো। সেই মেয়েটা দুদিন না যেতেই তার ই খালাতো ভাইকে বিয়ে করতে বসে গেছে। তাও আবার তারিখ ফেলেছে একই দিনে। রাহুলের আরো মনে হলো তার জীবনের প্রথম মেয়ে বান্ধবী’টির নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে তার অভিনন্দন জানানো উচিত। কিন্তু দুভার্গ্যবশত জানানো যাচ্ছে না। কারণ সেইদিন তারও বিয়ে। তার অনেকদিনের জমানো ভালোবাসার সাথে তার বিয়ে। রাহুল ভেবে রেখেছে বাসর রাতে তার ভালোবাসার ভাণ্ডার এবং সিন্দুক উভয়ই টিকলির জন্য উন্মুক্ত করে দিবে। সাথে ঝার বোতল গুলোতে অনেকগুলো প্রজাপতি আর জোনাকি ধরে টিকলিকে উপহার দিবে। টিকলি নিশ্চয়ই খুশিতে রাহুলকে জড়িয়ে ধরবে? ইশশ কত্ত স্বপ্ন পূরণ হওয়া বাকি রাহুলের!

,

টিকলি কাঁপা কাঁপা হাতে আদরকে ফোন করলো। মুখে হাত রেখে কান্না চেপে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। সে ভেবেছে একজনের ছোটবেলার ভালোবাসার জন্য তিনটে জীবন নষ্ট হতে পারে না, কিছুতেই না। রাহুলকে বিয়ে না করলে রাহুল সাময়িক কষ্ট পাবে। হয়তো সারাজীবন কষ্ট পাবে। কিন্তু রাহুলকে বিয়ে করলে টিকলি আদর এমনকি রাহুল সারাজীবন আরো বেশি কষ্ট পাবে৷ টিকলি কখনো রাহুলকে মানতে পারবে না। আর সব শুনে রাহুলও নিশ্চয়ই এই বিয়ে করতে চাইবে না। যে স্বপ্ন রাহুল দেখছে তা বাস্তবায়ন করার বিন্দুমাত্র ক্ষমতা টুকু টিকলির নেই, একদম নেই।

টিকলি আদরকে রাহুলের নাম্বারটা দিয়ে সতর্ক করে দিলো, ‘আর মাত্র তিনদিন। তারপর কিন্তু আমার বিয়ে, ডাক্তার।’

টিকলির কণ্ঠটা কেমন যেনো ভেজা ভেজা শোনা গেলো। আদরের নিজেকে অসহায় লাগলো। সে গেছে এক গ্রামে গরিব অসহায় লোকজনদের মেডিকেল ট্রিটমেন্ট করতে। জরুরি ভিত্তিতে আজ ভোরেই যেতে হয়েছে। আবার রাতের গাড়িতে ফিরে আসবে। সব মিলিয়ে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত নিজেকে খুব বেশি নিঃসহায় লাগলো তার। মাথা কাজ করছে না। এই প্রায় দুপুর শেষ হয়ে যাওয়া সময়টাতেও তার সকালের খাবার খাওয়া হয়নি। এতোদিকের চাপ আদরের আর সহ্য হচ্ছে না। আল্লাহ মুখ তুলে তাকালে হয় এবার!

,

‘হ্যালো? রাহুল?’

রাহুল নাম্বারটা আরেকবার দেখে নিলো। এরপর কানে ধরে বলল, ‘জি ভাই। আসসালামু আলাইকুম। নতুন সিম তো চিনতে পারিনি।’

আদর টিকলির কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে শত ব্যস্ততার আড়ালেও সাথে সাথে রাহুলকে ফোন করেছে। সে যদিও ঢাকায় এই মুহুর্তে উপস্থিত নেই তবুও বলল, ‘তুমি কি এক্ষুণি আমার সাথে দেখা করতে পারবে রাহুল?’

রাহুলের এখন কোথাও বের হতে ইচ্ছে করলো না। একটার পর একটা সিগারেট মনের সুখে খেতেই বেশি ভালো লাগছে। টিকলি তো সিগারেট সহ্য করতে পারে না। বিয়ের পর তো টিকলির কারণে রাহুলের সিগারেট খাওয়া বাদও দিতে হতে পারে। তাই বিয়ের আগ পর্যন্ত মনের সুখে সিগারেট খাবে বলেই প্রতিজ্ঞা করেছে সে। তাই রাহুল একটা মিথ্যে কথা বলল, ‘না আদর ভাই। এখন তো দেখা করতে পারছি না। সামনে বিয়ে ভাই বুঝেন ই তো। ব্যস্ততা!’

আশেপাশের গ্রামের মানুষের নানান শব্দে চিৎকারে আদর আবছা শুনতে পেলো রাহুলের কথা। সেই আবছা কথা শুনেই দাঁতে দাঁত পিষে বলল, ‘তাহলে ফোনেই বলছি শোনো…’

ওপাশ থেকে অনেক শব্দ ভেসে এলো। এক তো গ্রামে নেটওয়ার্কের সমস্যা। দুই. মানুষের কোলাহলে ঠিক মতো আদর কথা বলতে পারছে না। চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছে। রাহুল ভ্রু কুটি করে হ্যালো হ্যালো করে বলল,

‘হ্যালো আদর ভাই। কথা কেটে কেটে আসছে। একটু দূরে সরুন। অনেক মানুষের শব্দ। আমি ঠিকমতো শুনতে পাচ্ছি না। হ্যাঁ? কি বললেন? ভাই একটু জোরে বলুন।’

আদরের সমানতালে রাহুলও চিতকার করে বলল। আদরের আশেপাশে মানুষজন গিজগিজ করছে। দূরে সরেও লাভ নেই। আদর হতাশ মনে জোরে চেঁচিয়ে বলল,

‘যেভাবেই পারো প্লিজ রাহুল কাল সকালে আমার সাথে দেখা করো। এভাবে ফোনে বলা সম্ভব নয়।’

রাহুল আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলো। এরপর কিছুক্ষণ ফোন সামনে নিয়ে আদরের নাম্বারের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

_____________________________

বিকেল দিকে নিভা আবার এলো। টিকলি আধশোয়া হয়ে কিছু চিন্তা করছিল। নিভাকে দেখে ভ্রু নাচিয়ে তাকালো। সন্দিহান গলায় বলল,

‘কিরে! সকালেই তো এলি। এখন আবার? কাহিনি কি? বিয়ের কনেদের ওতো বাইরে বের হতে হয়না জানিস না। তোর জন্য বাইরে বের হওয়া নিষেধ। বুঝলি?’

নিভা কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে জোরে শ্বাস ফেলে বলল, ‘সকালে টায়রার সাথে দেখা হয়নি তাই এখন আবার আসলাম।’

টায়রা গিয়েছিলো ওয়াশরুমে। ভ্যাপসা গরমে ঘেমে নেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিল। তাই আবার গোসল করলো। ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে নিভাকে দেখতেই খানিক অবাক হলো। সাথে নিভাকে দেখে রাগে গা পিত্তি জ্বলেও উঠলো। মাথা থেকে সাদা তোয়ালে টা খুলে নিভার দিকে ছুড়ে মারলো। ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে নিজের বানানো উদ্ভট একটা গান গাইলো,

“ও আমার সতিন গো
চিরসাথী জামাইয়ের ঘরে
তোমারি জন্যে এনেছি আমি ঝাড়ুর বাড়ি যে..
ও…একই সাথে করবো মারামারি
যাবোনা কোনোদিন ছেড়ে
ও…থাকবে না কোনো বাধা
আমার আর জামাইয়ের মাঝে
তুই মরলে….জামাই আমার হবে
ও আমার সতিন গো
চিরসাথী জামাইয়ের ঘরে…”

টায়রা গানটা গাইলো ‘ও আমার বন্ধু গো’ গানের সুর নকল করে।

চলবে❤️

#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন

৪৯.
টিকলি বিস্ফোরিত চোখে তাকালো৷ নিভা অবাক গলায় বলল, ‘অ্যাই তুই কি গাইলি?’

টায়রা উত্তর দিলো না। মুখে ক্রিম লাগাতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। নিভা বড় বড় চোখ করে আবার বলল, ‘তুই আমাকে দেখে গাইলি? আমি তোর সতিন?’

টায়রা মুখ টানা মেরে দিলো। টিকলি নিভাকে চেপে ধরে ভ্রু নাচিয়ে বলল, ‘তুই আর্দ্র ভাইয়াকে বিয়ে করছিস? মত আছে তোর?’

নিভা চুপ হয়ে কুকরিয়ে গেলো। আড়চোখে টায়রার দিকে তাকিয়ে কথার উত্তর দিলো না। উল্টে তুতলিয়ে বলল, ‘আমি একটু ছাদে যাই।’

টিকলি নিভাকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসলো। টায়রা ভ্রু কুচকে তাকালো। মুচকি হেসে টিকলি বলল, ‘যা।’

নিভা চোখ মুখ কুচকে বলল, ‘গেলাম।’

টিকলি ঠোঁট টিপে বলল, ‘যাবি তো। তুই যে এতো ঘন ঘন বাসায় কেনো আসছিস সেটা কি আমি বুঝিনা?’

,

বাতাসের ছন্দে মিলেমিশে একাকার তখন বেলাশেষের পাখিদের কূঞ্জন। পরিষ্কার নীল আকাশ নরম রোদের সাথে ক্লান্ত। সূর্য ডোবার পরিকল্পনায় লাল হলুদ আলোয় নিজেদের রাঙাতে ব্যস্ত পশ্চিমা আসমান। ছাদে লাগানো ছোট ছোট সবজি গাছগুলো নরম রোদ আর হালকা বাতাসে দুলছে নিজ দায়িত্বে। নিভা ছাদে পা রাখতেই দেখলো রাহুল সিগারেট খাচ্ছে। দু’ পা এগিয়েও আবার পিছিয়ে গেলো। নারীত্ব বোধটা মাথা চাড়া দিয়ে জেগে উঠলো। এই মুহুর্তে রাহুলের সাথে যেচে কথা বলাটা বিশাল বড় এক বেহায়াপনা সাথে অনেক বড় অন্যায়। তাছাড়া কিবা কথা বলার আছে নিভার? আর যাই হোক নিজের আত্মসম্মান ছিন্ন করতে পারবে না সে। ভালোবাসার জন্য কারণে অকারণে নির্লজ্জ হওয়া যায় কিন্তু নিজের আত্মসম্মান খোয়ানো যায় না কোনো অবস্থাতেই। ভালোবাসার জায়গায় এসেই নারীদের আত্মসম্মান প্রবল হয়ে উঠে।

নিভা ঘুরে দাড়াতে যাবে তখনই রাহুলের সাথে চোখাচোখি হলো। বিচলিত হয়ে রাহুলের হাত ফসকেই সিগারেট টা মাটিতে পড়ে গেলো। মিনিট খানিক আশ্চর্য দৃষ্টিতে সিগারেটের দিকে তাকিয়ে থেকে পা দিয়ে পিষে ফেলা হলো। নিভা ঘুরে দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই রাহুলের মনে পড়লো সে অভিনন্দন জানাতে চেয়েছিলো। রাহুল হালকা আওয়াজে বলল,

‘অভিনন্দন।’

নিভা অবাক দৃষ্টিতে নির্বাক হয়ে ঘুরে দাড়ালো। রাহুল প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ালো। নিভা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি কারণ?’

‘আগামী নতুন দিনের জন্য অভিনন্দন।’

‘আপনাকেও।’ নিভা ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়েও থেমে গেলো। পেছন ফিরে জিজ্ঞেস করলো, ‘বিয়েটা আপনি করছেন ই তাহলে?’

রাহুল কাধ ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়, ‘করবো না বলেছিলাম নাকি আপনাকে?’

নিভা তাক লাগা গলায় বলল, ‘আপনি কি এখনো কিছু জানেন না।’

রাহুল বুঝলো না বরং আরো উল্টো বুঝে বলল, ‘এ পৃথিবীর সবাই কি সব জানে? সব জানলেই কি বিয়ে করতে হবে না? আপনি তো কত কিছুই জানেন। তাই কি বিয়ে করছেন না?’

নিভা বিস্মিত হলো। বিরবির করে বলল, ‘আনবিলিভেবল।’

রাহুল ভ্রু কুটি করে তাকালো। নিভা আচমকা বলল, ‘দেখুন আপনি এই বিয়ে করবেন না প্লিজ। আপনি এই বিয়ে করতে পারেন না৷ এই বিয়েটা করলে তিন তিনটে জীবন নষ্ট হবে। আমি আপনাকে এক্সপ্লেইন করছি সব। আপনি একটু শুনুন।’

রাহুল ভাবলো তিনটে জীবন মানে ওর, টিকলির আর নিভার কথা বলছে। তাই রাহুল হাত সামনে এনে নিভাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

‘কিচ্ছু এক্সপ্লেইন করতে হবে না নিভা। আমার জীবন নষ্ট হবে না। আমি টিকলিকে ভালোবাসি। আমার জীবন নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ ই নেই। আর টিকলি আমাকে ভালোবাসে কিনা জানিনা কিন্তু নিশ্চয়ই ওর বিয়েতে অমত নেই। আর বাকি রইল আপনার কথা। আপনি যেমন দু’দিনের মাঝেই বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে গেছেন ঠিক তেমনি দু’দিনের মাঝে এই পাগলামি গুলোও ভুলে যাবেন। এতোটা বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। সুখে থাকুন।’

নিভা বিস্ময়ে কথা বলতে পারলো না। স্তম্ভিত হয়ে গেলো। ও বলল কি আর রাহুল বুঝলো কি! তিনটে জীবন মানে তো রাহুল আদর আর টিকলির কথা বুঝিয়েছিলো। ওর নিজের কথা তো বাদ ই দিয়েছিলো। ব্যথিত নয়নে রাহুলের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো নিভা। এরপর কি আর কিছু বলার থাকতে পারে? এই ছেলেটা ঠিক কতটা গর্ব করে বলছে, ওর জীবন নষ্ট হবে না। অথচ দিন শেষে একমাত্র ওর জীবনটাই ভয়াবহ নষ্ট হয়ে যাবে। কালো দূর্যোগ নেমে আসবে ওর স্বপ্নভূবনে। নিভা স্থির পায়ে চলে যেতে গেলেই রাহুল হঠাৎ বলে উঠলো,

‘আমি ভুল মানুষকে নিজের আপন বন্ধু ভেবেছিলাম। খুব ভালো বন্ধু ভেবে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত সব কথা শেয়ার করে জীবনের মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছিলাম। আর এই ভুল আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভুল।’

নিভার চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করে উঠলো। আহ কি কষ্ট! তীরের মতো ছুটে এসে বিধলো নিভার হৃদয়ের প্রগাঢ় গহনে। এতো কষ্ট! এতোটা কষ্ট! কেনো? নিভার চোখ ফেটে কান্না আসতে চাইলো। রাহুলের কলার চেপে চিৎকার করে কেঁদে জানতে ইচ্ছে করলো,

‘ভালোবাসা এতোটা খারাপ? শুধুমাত্র ভালোবেসে ফেলেছিলাম বলেই আমি আজ আপনার কাছে জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভুল? তবে কি আপনি ভুল নন? আপনিও তো ভালোবাসেন। আমার থেকেও পাগলের মতো টিকলিকে ভালোবাসেন। ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছেন। তবে আপনি কেমন ভুল? কেনো এতো স্বার্থপর আপনি? নিজেরটা ছাড়া কিছু বুঝেন না তাইনা? কথা বলার আগে ভাবেন না? একবার এই কথাগুলোর জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখুন তো কেমন লাগে!’

,

নয়নকে রাহুল ডেকে পাঠিয়েছিলো আগেই। একা একা সিগারেট খেতে ভালো লাগে না। একটা সঙ্গী দরকার। সুখ দুঃখের আলাপ করতে করতে যার সাথে মজা করে সিগারেট খাওয়া যাবে। নয়ন জানে রাহুল ছাদে আছে। কিন্তু ছাদে গিয়ে দেখে নিভা আর রাহুল একসাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। নয়ন টাস্কি খেয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিরবির করলো,

‘শালা! তোর চরিত্র এতো খারাপ হইছে কবে? একটারে বিয়ে করবি তার বান্ধবীর সাথে আবার লাইন মারবি? আমার যত শত পোড়া কপাল!’

টিকলি টায়রার ঘরের দরজায় গিয়ে নক করলো নয়ন। টিকলি শোয়া থেকে উঠে বসলো। হাসি হাসি মুখ করে বলল, ‘নয়ন ভাই আপনি? আসুন না ভাইয়া আসুন।’

টায়রা ধমক দিয়ে বলল, ‘স্টপ।’ নয়ন সাথে সাথে থেমে দাঁড়ালো। টায়রা ভ্রু নাচিয়ে বলল, ‘কি চাই? মেয়েদের ঘরে উঁকিঝুঁকি?’

নয়ন বোকা বোকা চেহারায় হেসে বলল, ‘কোথায় উঁকি দিলাম? অনুমতি নিয়েই তো ডুকলাম।’

টিকলি বলল, ‘ভাইয়া ওর কথা রাখেন। আপনি বসেন।’

নয়ন গিয়ে বিছানার কোণায় বসলো। টায়রা বিরবির করে পা গুটিয়ে বসলো। এরপর নয়নের দিকে গোয়েন্দা চোখে তাকিয়ে বলল,

‘আচ্ছা কাহিনি কি বলেন তো! আপনারা সবাই আমাদের বাসায় এসে ভিড় জমিয়েছেন কেনো? বরপক্ষ কনেপক্ষের বাড়িতে! বিষয়টা ভিষণ উইয়ার্ড সাথে লজ্জাজনক।’

নয়ন কাশলো। সচেতন কণ্ঠে বলল, ‘পরসু মানে হলুদের দিন সকালেই আমরা বরপক্ষ চলে যাবো।’

নয়ন টায়রার থেকে চোখ সরিয়ে টিকলির দিকে তাকালো। টিকলিকে বিষন্ন মনে চিন্তা করতে দেখে প্রশ্ন করলো, ‘বিয়ের কনে এমন মনমরা কেনো?’

টিকলি দাঁত বের করে হেসে বলল, ‘বিয়ের কনে যে তাই!’

নয়ন দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বলল, ‘কি আশ্চর্য! বিয়ে যারা করে তারাও মনমরা। বিয়ে যারা না করে তাদেরও মনমরা!’

টিকলি ভ্রু উপরে তুলে বলল, ‘হঠাৎ এই কথা? বিয়ে করতে ইচ্ছে করে?’

‘শুধু ইচ্ছে করে….’

‘তবে? আর কি কি ইচ্ছে করে?’

‘ওই বিয়ের পর যা যা ইচ্ছে করে আরকি!’

টিকলি গলা ঝেড়ে কাশলো। বিরবির করে বলল, ‘কি নির্লজ্জ!’

নয়ন এবার টায়রার দিকে তাকিয়ে খুশি খুশি গলায় বলল, ‘দেখুন, রাহুল আর টিকলি বিয়ে করে ফেলছে ওদিকে আর্দ্র ভাই আর নিভা বিয়ে করে ফেলছে। এ সুযোগে আমরা দুজনও বিয়ে করে ফেলি চলুন। আপনাকে আমার প্রথম দিন থেকেই ঝাক্কাস লাগে! দিল কাইরে নিছেন এক্কেরে!’

টিকলি টায়রা বিস্ফোরিত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। হাত মুঠো করে ঘুষি দেখিয়ে টায়রা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘এটা কি?’

নয়ন ঢোক গিলে বলল, ‘ঘুষি!’

টায়রা দরজা ইশারা করে বলল, ‘আপনি এই মুহুর্তে আমার রুম থেকে বের হবেন নাকি এটা খেয়ে তক্তা হবেন?’

নয়ন না বুঝে বলল, ‘হ্যাঁ?’

টায়রা উঠে বসে চুলকানির লাঠি হাতে নিয়ে বলল, ‘তোর হ্যাঁ এর আমি গুষ্টি কিলাই। যাবি নাকি!’

নয়ন তাড়াতাড়ি নেমে দাঁড়ালো। দরজার কাছে গিয়ে বলল, ‘সত্যি চলে যাবো? আর কিছুক্ষণ থাকি? আর একটু হলেই আমাদের বিয়ের পাকা কথা হয়ে যেতো। তাছাড়া আমি আপনাদের অতিথি…’

নয়নের কথা শেষ হওয়ার আগেই টায়রা বাড়ি ভাঙা চিৎকার দিলো, ‘গেট লস্ট।’

___________________________

আর দুদিন পর রাহুল আর টিকলির বিয়ে। ওইদিকে আর্দ্র আর নিভার বিয়ে। এই মুহুর্তে আদর এবং রাহুল মুখোমুখি বসে আছে। রাহুলই প্রথম কথা বলল,

‘ভালো আছেন ভাই?’

আদর জোরপূর্বক বলল, ‘হুম।’ পরিপেক্ষিতে জিজ্ঞেস করলো না তুমি কেমন আছো। রাহুল একটু অপ্রস্তুত হলো। বলল, ‘কি খাবেন ভাই? বলেন অর্ডার দেই।’

‘আমি দুজনের জন্য কফি অর্ডার দিয়েছি। আর কিছু খাবো না। তুমি যদি খাও তবে অর্ডার দেও।’

‘বাড়ি থেকে খেয়ে বের হয়নি ভাই। খিদে লেগেছে। শুধু কফি খেয়ে পেট ভরবে না।’

রাহুল হেসে হেসে বলল। এদিকে আদর কাল দুপুরে খেয়েছিলো। এরপর থেকে না খাওয়া। আদর দাঁত কিড়িমিড়ি করলো। এই ছেলেটার সমস্যা কি? না জেনে শুনে কীভাবে একটা ছেলে ঢ্যাং ঢ্যাং করে বিয়ে করতে পারে?

‘তুমি যে বিয়ে করছো মেয়ের মতামত নিয়েছো?’

রাহুল বিস্মিত ভঙ্গিতে বলল, ‘আপনাকে তো বলেছিলাম ভাইয়া মেয়ে আমার কাজিন। মেয়ের পায়ের আঙ্গুল থেকে মাথার চুল পর্যন্ত সবকিছুই আমি জানি। মতামত নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’

আদর স্মিত হাসলো। কফি এসে গেছে। কফিতে চুমুক দিতেই রাহুল বলল,

‘আর তাছাড়া মেয়ের পরিবার থেকে প্রস্তাব এসেছে। আর আমার ফুফা তার মেয়েদের বিষয়ে ভীষণ কন্সার্ন। মেয়ের মতামত না নিয়ে নিশ্চয়ই প্রস্তাব টি দেননি। তাই আলাদা ভাবে বিয়ের মতামত চেয়ে মেয়েকে লজ্জায় ফেলার কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছিনা। যতোই হোক আমরা কাজিন। এতোদিন ভাই বোন নজরেই দেখে এসেছি হুট করে জামাই বউ এ কনভার্ট হওয়া একটু কম্পলিকেট। মানিয়ে নেওয়ার জন্যও সময় প্রয়োজন।’

আদর কফির মগ টেবিলে শব্দ করে রাখলো। ধীরে সুস্থে বলল, ‘তুমি খুব বুঝমান রাহুল। কিন্তু এতোটা বুঝমান হয়েও ভিষণ নির্বোধের মতো কাজ করে ফেলছো।’

রাহুল ভ্রু কুচকে তাকালো। একটু শক্ত কণ্ঠে বলল, ‘ভাইয়া আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন?’

‘আমি এটাই বলতে চাইছি যে, ভাই বোন থেকে জামাই বউ হওয়া একটু কম্পলিকেটেড। সময়ের প্রয়োজন। তুমি ই বললে। তাহলে এটা বুঝতে পারছো না? মেয়েটার অনেক কথা থাকতে পারে যা এই জড়তা গুলোর জন্য বলতে পারছে না।’

রাহুল সতর্ক দৃষ্টিতে তাকালো, ‘আপনি এসব কেনো বলছেন ভাই?’

আদর জোরে শ্বাস ফেলল। দু’আঙ্গুল দিয়ে কফির মগ ঘুরাতে ঘুরাতে বলল, ‘আমি সবসময় সরাসরি কথা বলে এসেছি রাহুল। তুমি ঠিকমতো চেনো আমাকে। তোমার সাথে অনেক গুলো বছর কাটিয়েছি আমি। তুমি আমার খুব আদরের ছোট ভাই। তোমার সাথে এসব বলা লজ্জাজনক কিন্তু তবুও আমি নিরুপায়।’

রাহুলের নিঃশ্বাস আটকে এলো। রুদ্ধকণ্ঠে বলল, ‘সরাসরি কথায় আসুন আদর ভাই। হেয়ালি করবেন না।’

আদর ভীষণ বড় আকারের দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আস্তেধীরে বলল, ‘আমি টিকলিকে ভালোবাসি রাহুল।’

চলবে❤️