বৃষ্টিস্নাত তুমি পর্ব-১৪+১৫

0
314

#বৃষ্টিস্নাত_তুমি – (১৪)
হুযাইফা মাইশা

‘ আ-আপনি অস্বাভাবিক আচরণ করছেন কেন? আপনার জ্বর এসেছে?’

‘ জ্বর এসেছে কিনা কাছে এসে চ্যাক করো। আসো দেখি, তোমার পানি’শমেন্টও দেয়া বাকি।’

‘ আপনি পা’গ’ল হয়ে গেছেন!’

পূর্ণতা পিছু সরল। ইয়াভকিন নিজেই এগিয়ে এল। গায়ে ভেজা শার্ট এখনও। তা দেখে পূর্ণতা চেঁচিয়ে উঠে,
‘ সরুন সরুন, ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চেঞ্জ করে আসুন, যান।’

ইয়াভকিন সেসব কথায় ভাবাবেগ না দেখিয়েই এগিয়ে আসে আরও। আলগোছে একহাতে পূর্ণতার কোমর পেঁ’চিয়ে নিজের কাছে টেনে নেয়,
‘ তুমি বললেনা, তুমি কি পানিশ’মেন্ট পেতে চাও, থা’প্প’ড় নাকি চুমু? হু?’

‘ আপনার থেকে চুমু নেয়ার চেয়ে থা’প্প’ড়ই ঠিক আছে। ছিহ! সরুন!’

চোখ মুখ কুঁচকে মাথা পেছনে নিয়ে নেয় পূর্ণতা। ইয়াভকিন ভ্রু কুঁচকিয়ে নিজের মাথাও ঝুঁকিয়ে নেয়। পূর্ণতাকে বিস্ময়ের অতল সাগরে ফেলে এক মুহূর্তের জন্যে অধরে অধর ছুঁইয়ে ছেড়ে দেয়। একহাতে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে অগ্রসর হয় আলমারির দিকে। পূর্ণতা ঠোঁটে হাত চেপে দাঁড়িয়ে। বড় বড় নেত্রযুগলে তখন বিস্ময় ছেয়ে। কয়েক মূহুর্ত রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে পরমূহুর্তে ফুঁপিয়ে উঠে। চিৎকার করে বলে,
‘ আপনি একটা অ’স’ভ্য।’

‘ এমন অ’স’ভ্যতামি আমি হাজারবার করব।’
দ্বিধাহীন উত্তর ভেসে এল ওপর প্রান্তের মানুষ হতে।

ইয়াভকিন শার্ট পাল্টে বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখল রুম খালি। মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বেরিয়ে এল রুম থেকে।
সবে বাথরুম থেকে বেরিয়েছে পূর্ণতাও। চোখ-মুখ টকটকে লাল। তার উপর ঠোঁটও। ইয়াভকিন সেদিকে তাকিয়ে প্রশ্ন রাখে,
‘ সামান্য একটা চুমুতে নিশ্চয়ই তোমার ঠোঁট এমন লাল হবেনা?’
‘ আপনি দিন দিন লাজলজ্জা হারাচ্ছেন।’
‘ শুনো মেয়ে, আমি পুরুষ মানুষ। লাজলজ্জা একটু কমই আছে। আর ওসব তোমাদের মানায়। আমাদের না।’
‘ আপনি আমার থেকে দূরে থাকবেন।’
‘ তুমি এতদিন তো ভালো ছিলে পূর্ণতা, আগের মতো ঝ’গ’ড়ুটে হয়ে যাচ্ছ কেন! আর বিয়ে করেছি কি দূরে থাকার জন্য?’
‘ বিয়ে করার তো ইচ্ছাই ছিলোনা আপনার!’

অধর গলিয়ে কিঞ্চিৎ তাচ্ছিল্যের হাসি দেখা দিল পূর্ণতার। ইয়াভকিন থমথমে নয়নে তাকাল। সোফায় বসতে বসতে বিড়বিড় করে কি যেন বলল। পূর্ণতা প্রত্যুত্তর না পেয়ে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।

সন্ধ্যাবেলা। ইয়াভকিন তখনও সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে। যেহেতু কাল শুক্রবার; অফিস নেই, সুতরাং কাজের চাপটাও কম। তাই সে আপাতত নিশ্চিন্তে টিভি দেখছে। পূর্ণতা যে রুমে থাকে সে রুমের দরজা লাগানো। স্বামী-স্ত্রী আলাদা আলাদা রুমে থাকে ভাবতেই কেমন অদ্ভুত লাগলো ইয়াভকিনের। অথচ গত একমাস ধরে তা-ই হয়ে আসছে। দোষের বেশিরভাগটা হয়তো ওর।
মেয়েটা ভীষণ চঞ্চল। এতকাল এটাই জেনে আসছে সে। অত্যাধিক মিশুক হওয়ায় ওর বাড়ির সকলেই পূর্ণতাকে পছন্দ করে। বিশেষ করে ওর মা, কাজল। কিন্তু পানি ঢালার ঘটনা-টার পর ইয়াভকিন ধরেই নিয়েছিল মেয়েটা চরম পর্যায়ের বে’য়াদব। মেয়েটাকে এড়িয়েই চলেছে এরপর। ওদের বাড়িতেও যায়নি। কিন্তু এখন ওর ভিন্ন রূপ দেখছে। এখন মেয়েটা ওর অন্যা’য়গুলো মেনে নিচ্ছে। এই যেমন, বিয়ের পর আলাদা রুমে থাকা। এই কাজটা অবশ্যই অ’ন্যায়। মেয়েটাকে সে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে— নিজের এমন গভীর চিন্তা ভাবনায় ইয়াভকিন হতভম্ব। কপালে ভাঁজ ফেলে উঠে দাঁড়ায়। অশান্ত ইয়াভকিন বাইরে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়। গায়ের মৃদু শীত লাগাটা খেয়ালে নেই ওর।

পূর্ণতা রুমে ঘাপটি মেরে বসে আছে। শান্ত থাকতে পারছেনা কিছুতেই। বারবার অধরে অধর ছুঁয়ে যাওয়ার মুহুর্তেটা মন-মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেই ছোঁয়াটা অবশ্য তন্ময়ের ছোঁয়ার ন্যায় বি’শ্রী লাগেনি। বরং, অন্যরকম অনুভূতির মনে হা’না দেয়াটা ও স্পষ্ট টের পাচ্ছে। প্রাণপণে সেসব দমিয়ে রাখতে পারছেনা। অদ্ভুত চিন্তা মাথায় আসছে।
ভাবনায় ছেদ ঘটাল দরজার শব্দে। ঘড়িতে বাজে নয়টা। এখন নিশ্চয়ই ইয়াভকিন বাইরে যাবেনা। পূর্ণতা বিছানা ছেড়ে উঠে রুমের দরজা খুলল সর্বপ্রথম। এরপরই দেখল, ইয়াভকিন মেইন দরজা দিয়ে ঢুকছে। চোখ-মুখের অবস্থা বেহাল। অন্যদিনের মতো গোছালো নয়। বরং সম্পূর্ণ উল্টো। এলোমেলো চুল আর নত মস্তক। গায়ে কালো রঙের টিশার্ট। পূর্ণতা এগিয়ে গেল।
চোখ তুলে একবার তাকায় ইয়াভকিন। শান্ত অথচ বেসামাল দৃষ্টি। যেই দৃষ্টি পূর্ণতার অশান্ত মনে অশান্তির পরিমাণটা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম, মনের মধ্যে মুহুর্তেই তোল’পাড় সৃষ্টি করতে সক্ষম। পূর্ণতা প্রশ্ন রাখল,
‘ কি হয়েছে আপনার?’
‘ কিছুনা।’

ভাবলেশহীন উত্তর। সে এগিয়ে যায় রুমের দিকে। দিন দুনিয়ার খবর যেন নেই তার। পূর্ণতা খানিক পরে পিছু ধরে। ততক্ষণে উপুড় হয়ে বিছানায় শরীর ছেড়ে দিয়েছে ইয়াভকিন। ঘাড় কাত করে শুয়ে সে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। সি’গা’রেট পোঁ’ড়া কিঞ্চিৎ কালচে ওষ্ঠদ্বয় থেকে থেকে কেঁপে উঠছে মৃদু। পূর্ণতা কি মনে করে এগিয়ে যায়। ইতস্তত করে হাত বাড়িয়ে ইয়াভকিনের কপাল এক মুহূর্তের জন্য ছুঁয়ে দেয়। লোকটার গায়ে ভীষণ জ্বর! মাথা এত গরম! হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ায় পূর্ণতা। হন্তদন্ত পায়ে বাটিতে পানি আর একটা রুমাল খুঁজে আনে। মৃদু কাঁপা কণ্ঠে বলে,
‘ সোজা হন একটু।’
ইয়াভকিন হয়তো শুনেনি। সে আগের ন্যায় উপুড় হয়ে আছে। কানের কাছটায় মুখ নেয় পূর্ণতা। গলার স্বর বাড়িয়ে বলে,
‘ একটু সোজা হোন, এভাবে জলপট্টি দিতে পারবোনা তো।’

ইয়াভকিন আস্তে ধীরে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে। পূর্ণতা সাহায্য করে তাকে। ব্যান্ডেজ করা হাতটা আলগোছে সরিয়ে রাখে পূর্ণতা। আগে জলপট্টি দেয়া শুরু করে। খানিক পর গায়ে পাতলা চাদর জড়িয়ে দেয়। এরপর উঠে দাঁড়ায়। গরম কিছু খাওয়ানো দরকার। রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হতেই ইয়াভকিনের গোঙানো বেড়ে যায়। এমন গু’রুতর অসুস্থে সে মাস কয়েকের মধ্যে পড়েনি। বৃষ্টির ছটা গায়ে লাগলেও তার জ্বর আসেনা। কিন্তু আজ কি হলো!

গরম স্যুপ বানিয়ে ইয়াভকিনকে কোনোমতে খাইয়ে দিল পূর্ণতা। আনাড়ি হাতে খাওয়াতে গিয়ে স্যুপ পড়ল ইয়াভকিনের গায়ে। খাওয়ানো শেষ করে সে ভেজা রুমাল দিয়েই গলার অংশটা মুছে দিল। উঠে যেতে চাইলেই বাঁধ সাধে ইয়াভকিন। শক্তি নেই তাও জেদ ধরে হাত আটকে দেয় পূর্ণতার। মিনমিন কণ্ঠে বলে,
‘ এখানে থাকো।’

নিশ্চুপে মেনে নেয় পূর্ণতা। ইয়াভকিন শান্ত স্বরে আবার বলে,
‘ একটু কাছে আসবে পূর্ণতা?’

সময় নেয় পূর্ণতা। একটু দূরত্ব কমিয়ে, ভীষণ অভিমান মাখা কণ্ঠে ফিসফিস করে প্রশ্ন রাখে,
‘ আপনি কি এমনভাবেই তিহাকে কাছে টানতে চেয়েছিলেন কখনও? একবারের জন্য হলেও?’

চলবে।

#বৃষ্টিস্নাত_তুমি – (১৫)
হুযাইফা মাইশা

জ্বরের প্রকোপের মুখে থেকেও চোখ খুলে চাইল ইয়াভকিন। শক্তিহীন হাতটায়ও শক্তি প্রয়োগ করে কাছে টেনে নিল পূর্ণতাকে। একহাতে ঝাপটে ধরে বলল,
‘ টানিনি, কখনও না। একবারের জ-জন্যও না।’
‘ সত্যি?’
‘ হু। ওকে জড়িয়েও ধরিনি পূর্ণতা, বিশ্বাস করো।’

বলতে বলতে চোখ বুজল ইয়াভকিন। ওষ্ঠদ্বয় কেঁপে উঠছে, বিড়বিড় করে কি যেন উচ্চারণ করছে। পূর্ণতা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চাদরটা গায়ে টেনে দিল। সে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে। ডানহাতটা ইয়াভকিনের বলিষ্ঠ হাতের মধ্যে ব’ন্দি। ছাড়াতে চাইলে ইয়াভকিন বাঁধ সাধছে। বাধ্য হয়েই হাল ছেড়ে দিল পূর্ণতা। ওমন করে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন চোখ লেগে এসেছে টের পায়নি।

সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন বাজে এগারোটার মতন। জানালার পর্দা টানানো হয়নি বিধায় থাই গ্লাস দিয়ে আলো ঢুকছে। কালকের ন্যায় মেঘলা নয় আকাশ। ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশ। মেঘ নেই। থাই গ্লাস গলিয়ে সেসব পর্যবেক্ষণ করে নিজেকে ছাড়াতে চাইল পূর্ণতা। তক্ষুনি খেয়ালে এল সে ইয়াভকিনের বুকের পাশটায় শুয়ে। হেলান দিয়ে শুয়ে নেই গত রাতের ন্যায়। তাকে দু’হাতে জড়িয়ে রেখেছে ইয়াভকিন। জ্বরের ঘোরে নাকি ইচ্ছে করে বুঝতে পারছেনা পূর্ণতা। নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালানোর মধ্যেই ইয়াভকিনের ঘুম ভেঙে যায়। তীব্র মাথা ব্যথা এখনও আছে; মাথা তুলতে গিয়ে খেয়াল করল মাত্রই। চোখ মুখ কুঁচকাতেই পূর্ণতা তড়িঘড়ি করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। ওড়না ঠিক করতে করতে জিজ্ঞেস করল,
‘ জ্বর ছেড়েছে?’

বলতে বলতে হাত এগিয়ে নিল। ইয়াভকিনের কপাল ছুঁয়ে বলল,
‘ মাথা ব্যথা করছে?’

‘ একটু।’

‘ আমি কফি বানিয়ে আনি। উঠতে পারবেন? ফ্রেশ হবেন না? এগারোটা বেজে গেছে।’

‘ উঠতে পারবো।’

পূর্ণতা হন্তদন্ত পায়ে ছুটে কিচেনের দিকে। অগোছালো চুলে, কুঁচকানো কাপড়ে ছুটে যাওয়া পূর্ণতার দিকে একপলক তাকিয়ে উঠে বসে। মেয়েটা হঠাৎ এত খেয়াল রাখছে। অসুস্থ বলে? নাকি অন্য কারণে?
_

দুপুর একটা। রান্নাঘরে ব্যস্ত পূর্ণতা। শুক্রবারে কাজের খালা আসেন না। যেদিন ভার্সিটি থাকে পূর্ণতার, সেদিনই সকাল সকাল আসেন। রান্নাবান্না করে আবার চলে যান। শুক্রবারে নিজেই রান্না করে পূর্ণতা। আজও করছে। ঘামে জবুথবু অবস্থা। হাত দিয়ে খুন্তি নাড়ছে। তখনি রান্নাঘরে এল ইয়াভকিন। কানে ফোন চেপে। চোখ-মুখ কুঁচকানো, সেই সাথে গম্ভীর। সে এগিয়ে এসে ফোন বাড়িয়ে দেয়। পূর্ণতা হাতে নেয়। কানে লাগাতেই ওপাশ থেকে কাজলের কণ্ঠ ভেসে আসে,
‘ হ্যালো?’
‘ আসসালামু আলাইকুম মা, কেমন আছেন?’
‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম, তোমরা কেমন আছো সেটা বলো।’
‘ ভালো আছি মা, বাবা কেমন আছেন?’
‘ হু, ভালোই। রাজ্যের কাজ উনার। বাড়িতে দুদন্ড থাকেনই না। সদরে ছুটোছুটি করেন রোজ। এই বয়সে এত ধকল নেয়া কি উচিত, তুমিই বলো?’

বাড়িতে প্রবেশ করলেন ইয়াসিন সাহেব। সদর থেকে মাত্রই ফিরলেন। কাজলের শেষোক্ত বাক্য উনি শুনে ফেললেন। এগিয়ে আসে ফোন নিয়ে নিলেন হাতে। ধরে বললেন,
‘ আমি এখনও মনের দিক দিয়ে সবল। ওসব উল্টা-পাল্টা কথা কানে তুলিস না।’

হেসে ফেলে পূর্ণতা। সালাম দিয়ে কথা সাড়ে। ফোন রেখে ইয়াভকিনের দিকে বাড়িয়ে দেয়। ইয়াভকিন তখন মনোযোগ দিয়ে রান্নাঘর দেখছে। ফোন হাতে নিয়ে সেটা পকেটে পু’ড়ে বলল,
‘ রান্নাঘরে এখন আমার ঢুকাই হয়না।’

‘ ঢুকেছেনই বা কবে!’

‘ ফ্ল্যাট নিয়েছি দুই বছরও হয়নি। এর আগে একটা ছোট্ট বাসায় থাকতাম। তখন নিজেই রান্না করে খেতাম। এরপর নিজের টাকায় ফ্ল্যাট কিনেছি। কাজের জন্য রান্না করার সময় পাইনা সেজন্য খালা আসেন। উনি অসুস্থ হলে অবশ্য আমিই রান্না করি। এন্ড ইউ নো হোয়াট, আমার রান্না খেয়ে সবাই-ই প্রশংসা করে। তোমার থেকে বেশি ভালো আমার রান্না-ই।’

‘ আচ্ছা?’

‘ বিশ্বাস হচ্ছেনা? না হলে কি আর করার, সত্য তো সত্যই!’

‘ আচ্ছা,তাহলে আজ রান্না করুন, দেখি!’

থতমত খেয়ে তাকায় ইয়াভকিন। রান্না আগে করেছে সেটা সত্যি, কিন্তু এখন করার ইচ্ছা নেই। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠল,
‘ এখন আমি অসুস্থ। আমার জ্বর ভুলে যাচ্ছো?’

‘ জ্বর হলে এখানে কি? যান, আর এসব আজগুবি গল্প শুনাতে আসবেন না।’
খুন্তি উঁচিয়ে ধরে পূর্ণতা। কথাগুলো বলে আবার রান্নায় মন দেয়। রান্না শেষ হওয়ার আগ অব্দি দাঁড়িয়েই থাকে ইয়াভকিন।

_

রাত তখন এগারোটার কাছাকাছি। খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে নিজের রুমের দিকে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হচ্ছে পূর্ণতা। খানিকটা ইয়াভকিনকে দেখিয়ে দেখিয়ে। ইয়াভকিন বর্তমানে টিভি দেখার ভান করছে। তার ধ্যান টিভিতে নেই। টিভি এক বাহানা মাত্র। বসে বসে সে আড়চোখে পূর্ণতার কাজকর্ম দেখছে। পূর্ণতা রুমে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ আমার শরীরটা কেমন যেন করছে। মাঝরাতে কি জ্বর আসবে?’

‘ আমি কি করে জানবো?’

‘ তোমার তো জানার কথা।’

‘ মানে?’

‘ কিছুনা, কিছুনা। আজ কি ওই রুমে শুবে?’

‘ হ্যাঁ।’

‘ একা ঘুমোবে কি করে?’

‘ একা থাকার অভ্যাস আমার আছে। নতুন কি! আজব কথা জিজ্ঞেস করছেন! কি সমস্যা আপনার?’

‘ তুমি বড্ড বেশি কথা বলো, পূর্ণতা। আমি কবে বললাম আমার সমস্যা আছে?’

‘ তাইতো, আচ্ছা যাই। সময় নষ্ট করার মানে হয়না, গুড নাইট।’

সুরসুর করে পা বাড়ায় পূর্ণতা। ইয়াভকিন মাথা চুলকে পেছন ডাকে,
‘ একসাথে থাকা যায়না?’

‘ না যায়না, আপনি ভীষণ ঝ’গ’ড়ুটে মানুষ!’

‘ আচ্ছা, মেনে নিলাম।’

‘ হুহ।’

বলে আবার ঘুরে আসলো পূর্ণতা। ইয়াভকিনের রুমের দিকে যেতে যেতে বলে,
‘ আপনি সরাসরি কিছু বলতে পারেন না, তাইনা?’

কানে তুললনা ইয়াভকিন। সে আপাতত নিশ্চিন্ত মনে পূর্ণতার পিছু পিছু যাচ্ছে। প্রশান্তির হাওয়ায় যেন সে উড়ছে।
বিছানার একপাশে পূর্ণতা শুয়ে পড়ল। চোখ জোড়া বন্ধ করা। ইয়াভকিন একটু পায়চারি করে তারপর শুয়ে পড়লো। লাইট নিভানো। তবে পাশের বিল্ডিং গুলোর আলো থাই গ্লাস দিয়ে কিঞ্চিৎ ঢুকছে। সাদা ফিনফিনে পর্দা গুলো টানানো হয়নি। সেসব লক্ষ্য করতে করতে সময় গড়ায়। এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসলোনা ইয়াভকিনের। পূর্ণতা ততক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে। মেয়েটা ভীষণ ঘুমকাতুরে কিনা! ইয়াভকিন একটু দূরত্ব কমায়। একহাতে পূর্ণতাকে বুকে জড়াতে জড়াতে বলে,
‘ না বলে জড়িয়ে ধরার জন্য আমি মোটেও সরি বলবোনা।’

চলবে।