#বৃষ্টি_নামার_পরে❤
#লেখিকা-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১৫
২৫.
“মৃন্ময়ের এসব কান্ড গুঞ্জন দেখতে পেলো না।গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে চুপচাপ। পড়ন্ত বিকেলের রোদেরা নরম আলো ছড়াচ্ছিলো,রাস্তায় মানুষজন গিজগিজ করছে।আকাশ ভরা মেঘেদের দল।ওদিকে তাকিয়ে গুঞ্জনের মনে হলো পৃথিবীটা এতো সুন্দর কেন?এই সৌন্দর্য সবার সবসময় নতুন নতুন রুপ নিয়ে হাজির হয়,সেই নতুন রুপে গুঞ্জন হাজারবার প্রেমে পড়ে এই পৃথিবীর।”
“হঠাৎ করে ওড়নায় টান পড়াতে গুঞ্জন পিছু ফিরে চাইলো।ওড়না অনুসরণ করে দৃষ্টি এগোতেই দেখলো মৃন্ময়ের কোলের উপর রাখা।গুঞ্জনের চোখে বিস্ময় ও সম্ভ্রমের দৃষ্টি।অবাক হয়ে বললো,আমার ওড়না ওখানে গেলো কি করে?”
“মৃন্ময়ের মুখটা মুহূর্তেই চুপসে গেলো।শুনেও না শোনার ভান করে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়ি চালানোয় ব্যস্ত সে।গুঞ্জন দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করলো,এই যে মিস্টার মৃন্ময় চৌধুরী! আমার ওড়না ওখানে কি করে?”
“মৃন্ময় গুঞ্জনের দিকে না তাকিয়ে বললো,আমি কি জানি?বাতাসে হয়তো এদিকে উড়ে এসেছে!এটা নিয়ে এত কথা বলার কি আছে?”
“গুঞ্জন চোখ সরু করে বললো,তাই?তা এরকমই যদি হবে তাহলে আপনি চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন না কেন?ওদিকে ফিরে রয়েছেন কেন?আপনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি মিথ্যা বলে আমায় বোকা বানাচ্ছেন!”
“মৃন্ময়ের চোখে-মুখে বিস্ময়।ঘাড় ঘুরিয়ে চোরা চোখে গুঞ্জনের দিকে তাকালো। গম্ভীর গলায় বললো, আমার কি আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই নাকি?আজব!চুপচাপ বসে থাকো!”
“বলেই আবারও গাড়ি চালানোয় মতো মনোযোগ দিলো।ভাগ্যিস চোখে সানগ্লাস ছিলো।তাই গুঞ্জন ওর চোখের ভাষা পড়তে পারলো না,নাহলে মৃন্ময়ের তীক্ষ্ণ চোখ দেখে গুঞ্জন ভয়ংকর কিছু আবিষ্কার করে ফেলতো।ভেবেই একটা নিঃশ্বাস ফেললো মৃন্ময়।ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো হাসি!মধুরতম হাসি!”
“গুঞ্জন আর কিছু বললো না।ওড়নাটা সরিয়ে আবারও আগের মতো চুপচাপ বাইরে তাকিয়ে আছে।পেছনে নাবিলা আর আরিশা গুনগুন করে কথা বলছে।আর অনু মোবাইল চাপছে,ইন্সট্রাগ্রামে ছবি আপলোড দেওয়ায় ব্যস্ত সে।যেহেতু আজ প্রথম শাড়ি পরেছে।একসময় এসে পৌঁছলো শহরের সবচেয়ে বড় শপিংমল লা-রোজা’তে।বিশাল বড় আর সুউচ্চ এই শপিংমলে গুঞ্জন এর আগে শুধু একবার এসেছিলো।আর আজ দ্বিতীয়বারের মতো এলো মৃন্ময়ের সাথে!”
“শপিংমলে এই দোকান সেই দোকান ঘুরাঘুরি করেও কেউ কিছু নিতে পারলো না অনুর জন্য।ওএ নিজের পছন্দের সব জামা আগে কিনবে আর পরে বাকিরা।গুঞ্জন এসব দেখে মনে মনে বিরক্তি প্রকাশ করলেও কিছু বললো না।মৃন্ময় আর গুঞ্জনকে একা ছেড়ে দিয়ে অন্য শো-রুম থেকে আরিশা আর নাবিলাকে নিয়ে ওদের শপিংটা শেষ করলো,কিন্তু নিজের জন্য কিছুই কিনলো না।আর ও নিজের জন্য কখনোই অতিরিক্ত কিছু কেনে না বা খরচ করে না।অল্পতেই সন্তুষ্ট।তবে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটা শাড়িতে গুঞ্জনের চোখ চলে গেলো। ভীষণ চমৎকার হালকা হলুদ রঙের শাড়ি,তেমনই সুন্দর কারুকাজ।দাম জিজ্ঞেস করাতে সেলসম্যান বললো,বারো হাজার টাকা।”
“আরিশা জিজ্ঞেস করলো, ওটা নেবে আপ্পি?খুব সুন্দর শাড়িটা।দাদাভাইয়াকে বলছি দাঁড়াও!বলেই আরিশা দৌড়ে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসলো মৃন্ময়কে।সঙ্গে অনুও এলো।হাত ভর্তি শপিংব্যাগ।”
“আরিশা মৃন্ময়কে বললো,দাদাভাই ওই শাড়িটা নিয়ে নাও,আপ্পির খুব পছন্দ হয়েছে!”
“গুঞ্জন আরিশার মুখ চেপে ধরে বললো,আরে নাহ।এসব কোনো শাড়ি হলো?তারপর মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বললো,চলুন তো!”
“কথা শেষ করে শপিংমলের চারতলার ক্যান্টিনে ডিনার সারার উদ্দেশ্য এগোতেই হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে একটা হিরো হিরো চেহারাওয়ালা ছেলে একটা মেয়ের সাথে মৃন্ময়ের সামনে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটা ছেলেটার ডান হাতটা আকড়ে ধরে আছে।নিউ ম্যারেড কাপল যেমন থাকে ঠিক তেমন লাগছে দুজনকে।কথায় কথায় গুঞ্জন জানতে পারলো এটা মৃন্ময়ের বেস্টফ্রেন্ড টাইপ বন্ধু।অনেকদিন পর দেখা!”
২৬.
“মৃন্ময়ের বন্ধুর নাম সিফাত।পরে জানা গেলো ওই মেয়েটা হলো ওই ছেলের ছোট বোন মিশকা।সিফাত তার বোনকে বললো,বাসায় চলে যেতে।মেয়েটিও সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।এদিকে গুঞ্জন বারবার নিজের পাপী মনের কথা চিন্তা করে নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছে,ছি ছি ভাই-বোনকে ও ভেবেছিলো কি না কাপল?ছিহ!”
“ছেলেটা, মানে সিফাত অনু আর মৃন্ময়কে একসাথে দাঁড়ানো দেখে বললো,তোদের দুজনকে কি সুন্দর লাগছে!বেস্ট কাপল!হা হা।কেমন আছেন ভাবি?”
“অনু বেক্কল বনে গেলো।”
“মৃন্ময় বললো,তুই কি করে বুঝলি আমি আর ও কাপল?”
-“আরে তোদের দুজনকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আর ভাবির শাড়িটা জোস,নিশ্চয়ই তুই পছন্দ করে কিনেছিস?বোঝাই যায় তোরা কাপল।জানিস তো আমার বুদ্ধি অনেক,আগেভাগেই সব বুঝে যাই!”
“একথা শুনে আরিশা ফিক করে হেসে দিলো,গুঞ্জনকে বললো,লিজেন্ড!ওই মগার বুদ্ধি দেইখা আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।”
“গুঞ্জনও বেশ মজা পাচ্ছিলো।মৃন্ময় কিছু বলার আগেই গুঞ্জন বলে উঠলো,আপনি সত্যিই বুদ্ধিমান ভাইয়া।ঠিক বুঝে গেলেন!”
“সিফাত মেয়েলী গলা শুনে পেছন ফিরে চাইলো।সবুজ রঙা জামা পরিহিত এক মায়াবী রমণী দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে, খিলখিল করে হাসছে।কি অদ্ভুত সুন্দরই না লাগছে ওকে!”
“সিফাত ধ্যান থেকে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কে?ঠিক চিনলাম না তো!”
“গুঞ্জন হেসে বললো,আমি মৃন্ময় ভাইয়ার কাজিন!’
-” কেমন কাজিন?”
-“খালাতো বোন টাইপ!”
-“ওয়াও,গ্রেট।বলে মুগ্ধ চোখে গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে রইলো!”
“তারপর মৃন্ময়ের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো,দোস্ত তোর কাজিনরে তো আমার সেই লাগছে।দেস না একটা লাইন করিয়ে।”
“মৃন্ময় হতভম্ব হয়ে গেলো।রাগটা চেপে মৃদু হাসলো।”
“সিফাত আবারও বললো,আমি কিন্তু রিজার্ভ করে ফেলছি।বাকিসব তুই ঠিকঠাক করে দিবি,ওরে রাজি করানোর দায়িত্ব তোর।বলবি,আমি প্রথম দেখায়ই ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
“মৃন্ময় গম্ভীর গলায় বললো,ও রাজি হবে না!”
-“সেইটা তোর দেখার বিষয়। কেমনে রাজি করাবি না করাবি তুই সব ম্যানেজ করবি,বিকজ লাভ এট ফার্স্ট সাইট!”
“মৃন্ময় কিছু বললো না।এর মধ্যে মৃন্ময়কে সিফাতের সাথে বিজি দেখে অনু আরিশা আর নাবিলাকে নিয়ে অন্য একটা শপে ঢুকলো,ঘন্টা খানেক পরে সবার সাথে আবার যোগ দেবে।”
” মৃন্ময়ের হঠাৎ অফিস থেকে ফোন এলো।তাই একটা সাইডে গিয়ে ও ফোনে কথা বলছে!আর এদিকে সিফাত গুঞ্জনকে একা দাঁড়ানো দেখে ওর সাথে কথা বলতে গেলো।জিজ্ঞেস করলো,কিসে পড়ো?”
-“ফাইনাল ইয়ার!”
-“ওহহ!”
-“জ্বি!”
-“তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে!”
“গুঞ্জন বললো, ধন্যবাদ!”
-“সবাই তো শপিং করছে,তুমি করবে না?”
-“না,আমার আপাতত কোনো শপিং নেই!”
“সিফাত অবাক হয়ে বললো,তা বললে হবে নাকি?সবার সাথে এসেছো আর শপিং করবে না?”
-“ইট’স ওকে!”
“সিফাত গম্ভীরমুখে বললো, আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?”
“গুঞ্জন ইতস্তত করে বললো, জ্বি অবশ্যই!”
“সিফাত বললো, এতক্ষণ ধরে কথা বলছি আর তোমার নামটাই জানা হলো না,ধ্যাত!প্লিজ আস্ক ইউর নেইম!”
-“গুঞ্জন!”
-“ওয়াও,আনকমন নাইস নেইম।”
-“ধন্যবাদ!”
“সিফাত বললো,আচ্ছা এখন তো আমরা ফ্রেন্ড সো থ্যাংকস,ওয়েলকাম এসব ফর্মালিটি করার দরকার নেই।আর তুমি হয়তো ভাববে এতো অল্প সময়ের দেখায় কেউ কারো ফ্রেন্ড হতে পারে নাকি?আসলে আমি বেশ মিশুক সবার সাথে,অল্প সময়েই সবার সাথে মিশে যাই।তুমি আবার কিছু মনে করো না প্লিজ!”
“গুঞ্জন বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলো না।হাসি দিয়ে বললো, ওহহ!আমি কিছু মনে করিনি।”
“সিফাত আবারও বললো, যেহেতু ফ্রেন্ড তাই আমার একটা আবদার রাখতে হবে।”
-“কি?”
-“আগে বলো রাজি!”
-“আগে আপনি বলুন কি?”
-“উহু তুমি বলো রাখবে?”
“গুঞ্জন বললো,ঠিক আছে।”
“সিফাত হাসি দিয়ে বললো,আমি তোমাকে কিছু গিফট করতে চাই,আই মিন তুমি শপিং করছো না যেহেতু,তাই!”
“গুঞ্জন ভাবছে, এই ছেলে এত্ত ছ্যাছড়া কিভাবে হয়?অনুকেও হার মানাবে এই ছেলে।দু’মিনিট কথা হতে না হতেই ফ্রেন্ড হওয়ার প্রপোজাল দিলো,একগাদা আজাইরা কথার ঝুলি নিয়ে বসলো এখন আবার গিফটাইতে চাচ্ছে,কজ কেন?এর মাথার তার কি ছিঁড়া?আজব!রাগে গুঞ্জনের মাথা ফেটে যাচ্ছে, অন্যকেউ হলে এতক্ষণে ঝেড়ে ফেলতো কিন্তু একে কিছু বলতেও পারছে না!কি ঝামেলায় পড়া গেলো রে বাবা!”
“চট করে সিফাত গুঞ্জনের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো একটা বিশাল শো-রুমে।মৃন্ময়ের কোনো খোঁজ কেউ-ই করলো না।গুঞ্জন ইতস্তত করে মুখ কালো করে যেতে লাগলো!”
“এদিকে একজন যে ওদের দুজনের এসব কান্ড দেখে ভেতরে ভেতরে জ্বলেপুড়ে মরছে তা গুঞ্জন জানে না।মানুষটার চোখের কোণে জল,রাগে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে সিফাতকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে,হঠাৎ করে ওর মনে হলো,গুঞ্জনকে ও কারো হতে দিবেনা।গুঞ্জন শুধু ওরই আর ওরই।একটা বাঁকা হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলো!”
“কিছুক্ষণ পর,সিফাত গুঞ্জনকে একটা গাউন পছন্দ করে দিলো।বারবার মানা করা স্বত্ত্বেও সিফাত জোর করে গুঞ্জনকে চেইঞ্জিং রুমে গিয়ে ঠিকঠাক করে দেখে আসতে বললো।গুঞ্জন একরাশ বিরক্তি নিয়ে চেইঞ্জিং রুমের দিকে পা বাড়ালো।আর এদিকে মৃন্ময় মনে মনে ভাবলো এটাই সুযোগ গুঞ্জনের সাথে ফয়সালা করার। তাই ও হাতে একটা কাপড় নিয়ে গুঞ্জনের পিছু পিছু গেলো।গুঞ্জন যখন চেঞ্জিং রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো তখন মৃন্ময় নিজেও গুঞ্জনের সাথে চেঞ্জিং রুমে ঢুকে পরলো।ঠাস করে দরজা আটকে দিলো।গুঞ্জন মৃন্ময়কে দেখে অবাক হয়ে বললো,আপনি?আপনি লেডিসদের চেঞ্জিং রুমে কি করছেন?”
“মৃন্ময়ের চেহারা রাগে লাল হয়ে আছে।গুঞ্জনের মুখটা চেপে ধরে চুপ করিয়ে দিয়ে বললো,ইউ ইডিয়ট তুমি সিফাতের দেওয়া কাপড় নিয়েছো কেন?তুমি কি ভিক্ষুক?তোমার হাজব্যান্ডের কি এতটুকু সামর্থ্য হয়নি তোমার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে?অন্যের কাছ থেকে এসব নিতে তোমার কি একটুও লজ্জ্বা হচ্ছে না ব্লাডি গার্ল?তোমার বর কি মরে গিয়েছে?”
“গুঞ্জন হতভম্ব হয়ে আছে।এই লোক এসব কি বলছে?গুঞ্জন রাগী গলায় বললো,ড্রামা কম করেন আপনি।কেন এতো নাটক করছেন?আমি ওই ছেলের কাছ থেকে গিফট নেওয়ার কারণে?আচ্ছা,আপনি যে নিজেকে এতো বর বর বলছেন তা কোনোদিন মেনে নিয়েছিলেন আপনি?বেয়াদব ছেলে আপনি একটা, মেয়েদের চেঞ্জিং রুমে ঢুকে বসে আছেন,চরিত্রহীন লোক একটা।এখন আসছেন ঢং দেখাতে?আপনার টাকার গরম দেখাতে?প্লিজ লিভ মি…”
“গুঞ্জনের এসব কথা শুনে মৃন্ময় আরও রেগে গেলো।গুঞ্জনকে ছেড়ে দিয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো,লাইক ইট!আমি চরিত্রহীন?সো এখন দেখো এই চরিত্রহীন লোকটা তোমার সাথে এখন এবং ভবিষ্যতে কি কি করতে পারে!”
“গুঞ্জন ভয় পেয়ে ঢোক গিলে বললো,আ আ.. আপনি ক.. ক কি কি করর..রবেন?”
“মৃন্ময় একটান দিয়ে গুঞ্জনকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। মৃন্ময়ের সিক্সপ্যাকওয়ালা খালি গা’ দেখে গুঞ্জন লজ্জ্বায় বারবার নিহত হচ্ছে,ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ!”
চলবে….ইনশাআল্লাহ!