বৃষ্টি নামার পরে পর্ব-১৮

0
3569

#বৃষ্টি_নামার_পরে❤
#লেখিকা-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১৮

৩১.
“সেদিন বিকেলের মধ্যেই ওই বাসায় গিয়ে পৌঁছেছে গুঞ্জন আর মৃন্ময়।ওখানে গিয়ে জানতে পারলো, সিফাতের সাথে রুহির দু’দিন পরে এনগেজমেন্ট। গুঞ্জন এসব শুনে অবাক হলো যে,কিছু বলতেই পারলো না।গুঞ্জনকে দেখে কেউই ততোটা খুশি হলো না,কিন্তু মৃন্ময়কে দেখে সবাই যারপরনাই খুশি হলো!”

“অনেকদিন পরে গুঞ্জন নিজের ছোট্ট রুমটাতে পা দিলো,সাথে সাথেই ওর চোখদুটো ভিজে উঠলো।সাজানো-গুছানো করিডোরের এক কোণের এই ঘরটিতে অনেকদিন কেউ আসে না বোধহয়,গুঞ্জন রুমে ঢুকে লাইট জ্বালালো।ধুলো-ময়লা ঝেড়ে রুম পরিষ্কার করে একটুখানি জিরিয়ে নিলো।একটু পরে মৃন্ময় আসলো রুমে।এতক্ষণ ড্রইংরুমে বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।মৃন্ময় বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,হাই গুঞ্জন।”

“গুঞ্জন দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো, হাই!”

-“কি করছো!”

-“কামলা খেটে নিজের ঘর নিজে পরিষ্কার করলাম।”

“মৃন্ময় বললো, কেন?ঘর কেউ পরিষ্কার করেনি!”

“গুঞ্জন বললো, আমার ঘরে কেউ আসে নাকি?আমার ঘর আমাকেই পরিষ্কার রাখতে হয়!”

-“বাহ,খুব ভালো পরিষ্কার করেছো!”

-“ভালো বলার জন্য ধন্যবাদ!”

-“তাই?”

-“জ্বি!”

“এমন সময় নিভৃত আসলো গুঞ্জনের রুমে।বললো, ভাইয়া তোমাকে খেতে আসো,সবাই তোমার জন্য ওয়েট করছে।আপ্পির সাথে রোমান্স পরে করিও।তোমাদের কি রোমান্টিক লাগছে বাহ,বাহ।
তারপর মিটমিটিয়ে হেসে দৌড়ে চলে গেলো।মৃন্ময় আর গুঞ্জন দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আছে।”

“খাবার টেবিলে মৃন্ময় গুঞ্জনকে দেখতে পেলো না।তাই বাসার সবার সাথে একসাথে খেতে বসে ওর কেমন অস্বস্তি লাগছিলো।কিন্তু গুঞ্জনের বাবা-মা,দুই চাচা-চাচী আর ফুপ্পিরা সবাই মৃন্ময়কে ইচ্ছমতো জামাই আদর করছে।এই আইটেম সেই আইটেম সব ওর প্লেটে তুলে দিচ্ছে।মৃন্ময় এর আগে এতো ফ্যাসাদে আর পড়েনি।কোনোমতে সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে গুঞ্জনের রুমে এসে দেখলো গুঞ্জন বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে।মৃন্ময়কে দেখেও না দেখার ভান করে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো।”

“গুঞ্জন ভাবছে সে সময়ের কথা,ও বাড়ি থেকে আসার সময় অনু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে গুঞ্জনকে বললো,

-“এই দাঁড়াও!”

-“জ্বি বলো।”

-আচ্ছা,তুমি কি মুনুকে তোমার প্রেমে ফেলতে চাইছো?তাহলে জেনে রাখো, তা কখনো পারবে না।কারণ তুমি দেখতে পুরাই গাইয়া।”

“অনু’র কথা শুনে গুঞ্জন চুপ থাকতে পারলো না।বললো, তোমার ছ্যাছড়ামিটা এবার ছাড়ো।নিজে বারোভাতারি বলে আমাকেও সেরকম ভেবে থাকলে নিজের মাথাটা একটা দেয়ালের সাথে বারি দাও,বুঝলে ছ্যাছড়া মেয়ে।যত্তসব।”

“কথাটা বলে দৌড়ে চলে এসে দেখলো, গাড়ির কাছে মৃন্ময় গুঞ্জনের জন্য অপেক্ষা করছে।গুঞ্জনকে দেখে মৃন্ময় বলে উঠল,

-“তাড়াতাড়ি চলো।”

“গুঞ্জন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো!”

-গুঞ্জন?

-হুম,

-আজকে তোমাকে খুব হট লাগছে
আচ্ছা তোমার কি এতক্ষণ লাগে রেডি হতে?”

-“লাগে তো।আমি তো ওয়াশরুমে ছিলাম না।ছিলাম আকাশে।

-মানে?

“গুঞ্জন রেগে বললো, মানে জাহান্নামের চৌরাস্তায় ছিলাম।”

“গুঞ্জনের এইরুপ দেখে মৃন্ময় মুখ কালো করে বসে রইলো ড্রাইভিং সিটে।”

“আর তাছাড়া গুঞ্জনই বা কি করবো রাগটা কন্ট্রোল করতে পারেনি।শয়তান অনু’টার জন্য এমন হয়েছে!”

“এখন গুঞ্জনের একথা ভেবে হাসি পাচ্ছে।”

“এদিকে কিছুক্ষণ পর গুঞ্জনের কাছে গিয়ে মৃন্ময় বললো, তুমি খাবে না?”

-“জ্বি খেয়েছি!”

-“কখন?আমি তো ডাইনিংয়ে দেখলাম না।”

“গুঞ্জন ফিকে হেসে বললো, আমি কি আর ডাইনিংয়ে বসে খাই নাকি?আমি রুমে বসে খাই।আব্বু – আম্মুর সাথে খেতে বসলে আমার অস্বস্তি হয়,ছোট থেকেই আমি এভাবে খাই।কেউ কিছু বলে না!”

-“ওহহ!”

“বলে মৃন্ময় এক মায়াবী দৃষ্টিতে গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু কিছু বলেনি।ওর কেমন খারাপ লাগছে গুঞ্জনের জন্য,মায়া হচ্ছে।গুঞ্জনকে বেশি বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।”

“রাত প্রায় আটটার দিকে নিভৃত এসে বললো, এই তোমরা আমার রুমে চলো তো!”

“গুঞ্জন চোখ পাকিয়ে বললো, কেন রে?”

-“আহা আসোই না!”

-“কেন?বলবি?”

-“আমি আর হিয়া তোমাদের সাথে গল্প করবো,আসো না প্লিজ।তারপর মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বললো, ভাইয়া আসো তো তুমি!”

“মৃন্ময় গুঞ্জনকে রাগানোর জন্য বললো,আরে আমি তো আসছি।ওকে নেওয়ার দরকার নেই।ও গেলে ঝামেলা বাঁধাবে।চলো চলো।”

“গুঞ্জন মৃন্ময়ের গা জ্বালানো কথা শুনে রেগে গেলো। অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে গটগট করে নিভৃতের হাত টেনে ধরে ওর রুমে চলে গেলো। মৃন্ময়ও মুচকি হেসে গেলো!”

_____
“গুঞ্জন ক্লান্ত হয়ে বললো, নিভৃত প্লিজ থাম। আর তোর কৌতুকগুলো শুনতে পারছি না।আমার পেট মনে হচ্ছে ফেটে যাবে হাসতে হাসতে।”

“নিভৃত বললো, হিহিহি আমি থামবো না।”

“গুঞ্জন একটু রেগে বললো, শয়তান ছেলে। তোর এসব শুনিয়ে আমাকে কি হাসাতে হাসাতে মেরে ফেলতে চাস?”

“মৃন্ময় বললো, তুমি বলতে থাকো নিভৃত। ওর কথা তুমি শুনবে না।নাও,লেটস স্টার্ট….!”

“গুঞ্জন রেগে বললো,ধুর…আমি আর এখানে বসবোই না।আমি চললাম।”

“নিভৃত গুঞ্জনকে রাগানোর জন্য বললো, হিহিহি!ভয় পাইসে!”

“গুঞ্জন চোখ পাকিয়ে বললো, হাসছিস কেন ডাফার?”

-“তোমাকে দেখ!”

“গুঞ্জন রেগে বললো,তুই আমাকে রাগাতে চাইছিস ওই ইনোসেন্ট মিস্টার ম্যানার্সওয়ালার কথায়,তাই না?শেষ পর্যন্ত তুই ও আমার শত্রু হলি?দেখিস তোর এই হ্যান্ডসাম রুপ দেখে ও কোনো মেয়ে তোর প্রেমে পড়বে না,তুই ছ্যাঁকা খাবি।শয়তান ছেলে।তুই একটা মীরজাফর,গুঞ্জনকে তুই ধোঁকা দিলি,যা তোর মতো বিশ্বাসঘাতকের সাথে আমার আর কথা নাই।”

“মৃন্ময় আর নিভৃতকে ব্যাক্কল বানিয়ে বসিয়ে রেখে গুঞ্জন ওর নিজের রুমে এসে গোসল করে নিলো। নিভৃতের এসব ফাউল কৌতুক শুনে সত্যি যা অবস্থা হয়েছিল গুঞ্জনের।ইচ্ছে হচ্ছে ওই মৃন্ময়ের মাথা ফাটিয়ে দিতে।অবশ্য নিভৃত আর হিয়াই যা একটু গুঞ্জনকে ভালোবাসে,সবসময় ওর মুখে হাসি দেখতে চায়।নানা মজার মজার কথা বলে হাসায় নিভৃত।ক্লাস টেনে পড়া নিভৃত খুব ছোট থেকেই বুঝে গিয়েছে এ বাড়িতে গুঞ্জনকে কেউ পছন্দ করে না,গুঞ্জনের বাবা-মাও না।অথচ গুঞ্জনকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে নিভৃত।এসব ভেবে ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো গুঞ্জন!”

“গোসল করে রুমে আসতেই গুঞ্জনের ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে মৃন্ময়ের নাম।গুঞ্জনের দেখেই রাগ উঠে গেলো, ফোনটা হাতে নিয়ে কল কেটে দিয়ে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দিলো। ফোনটা বার বার বেজেই চলেছে।একসময় বিরক্ত হয়ে রিসিভ করলো গুঞ্জন।ক্যাটকেটে গলায় জিজ্ঞেস করলো, হ্যাঁ ভাই।কি বলবেন বলুন।”

“মৃন্ময় কড়া গলায় বললো, ফোন রিসিভ করছিলে না কেন?রিসিভ করতে এতো সময় লাগে?আমি রুমে এসে কতক্ষণ নক করে গেলাম,খোলার নাম নেই।রিডিকিউলাস!”

“গুঞ্জন রাগী গলায় বললো,গোসলে ছিলাম।যতসব ঢং!”

“মৃন্ময় বললো, এই অসময়ে গোসল কিসের?আজাইরা আর কাজ পাও না!”

-” সবকিছুর হিসেব আপনাকে দিতে হবে নাকি?”

“মৃন্ময় রেগে বললো,নিজের বাসায় এসে তো দেখছি তোমার সাহস অনেক বেড়ে গেছে।ভালোই!”

-“হ্যাঁ বেড়েছে! দুইটা দিন অন্তত শান্তিতে থাকতে দিন আমায়।আপনার বাসায় তো অনু বেপ্পির ঢং দেখতে দেখতে আমার মাথা পচে গিয়েছে।আর এটা নামেই আমার বাসা,কাজে নয়।আমি এখানের আশ্রিতা,দেখে বুঝলেন না?গুঞ্জন হাসলো অল্প!”

“মৃন্ময় একেবারে চুপ হয়ে গেলো।তারপর বললো, একবার বাসায় যাই,তারপর বুঝাবো মজা।”

-“আপনার সো কল্ড মিজা দেখার আশায় রইলাম।”

“বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে গুঞ্জন ওর রুমের দরজা খুলে দিলো।ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে হনহন করে মৃন্ময়ের কাছে গেলো।বললো,ঢং কম করবেন হুম।আর শুনোন,”

-“কি?”

-“আমাকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান।”

-“কিহহহ??পাগল? এত রাতে তুমি ঘুরতে যাবে?”

-“ঘুরতে না হাঁটতে বেরুবো।আর আপনি হবেন আমার গার্ড।মানে বডিগার্ড!”

-“খেয়েদেয়ে কাজ নেই?চুপচাপ এখান থেকে যাও।”

“গুঞ্জন অসহায় চোখে তাকালো মৃন্ময়ের দিকে।ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, প্লিজ চলুন না।আমার এখানে আর ভাল্লাগছে না,দম বন্ধ লাগছে!”

“মৃন্ময় চমকে তাকালো ওর দিকে।কেমন যেন ফ্যাকাশে লাগছে ওকে,কিছু ভেবে মৃন্ময় রাজি হয়ে গেলো!”

___________
৩২.

রাত বারোটায় ওরা দুজন হাঁটতে বেরুলো।কিছুক্ষণ পিচঢালা পথে চুপচাপ হাঁটার পরে হঠাৎ করে গুঞ্জনের ভীষণ মাথাব্যথা করতে লাগলো। প্রচন্ড মাথাব্যথা!”

“মৃন্ময় বিভিন্ন কথা বলে ওকে রাগাতে চাইছে,হাসাতে চাইছে।একসময় গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে দেখলো গুঞ্জন ওর মাথায় হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে পড়েছে।মৃন্ময় অবাক হয়ে গুঞ্জনের কাছে গিয়ে দেখলো গুঞ্জনের সারা মুখ,কপাল ঘেমে একাকার।মৃন্ময়কে কিছু বলতে যাবার আগেই ও অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।”

“মৃন্ময় হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে গুঞ্জনকে ডাকছে,পকেট থেকে পানির বোতল বের করে গুঞ্জনের চোখে মুখে পানির ছিঁটা দিচ্ছে কিন্তু কিছুতেই ওর জ্ঞান আসছে না।আশেপাশের দু-একটা লোক এ অবস্থা দেখে সামনে এসে বললো, আচ্ছা আপনি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন ওনাকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন?”

“মৃন্ময় বললো,প্লিজ আপনারা ওর জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করেন,আমার মাথায় কিছু আসছে না কি করবো।ওর কি হয়েছে? কথা বলছে না কেন?”

“লোক দুটো বললো, ওনাকে এক্ষণি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।একটা গাড়ির ব্যবস্থা করছি দাঁড়ান।”

“মৃন্ময় অসহায় গলায় বললো, হুম তাড়াতাড়ি করুন।”

“একটা সিএনজি ডেকে তাড়াতাড়ি গুঞ্জনকে পাশের একটা হসপিটালে নিয়ে গেলো ওরা।”

“দু-ঘন্টা হয়ে গেলো গুঞ্জন অজ্ঞান হয়ে গেছে অথচ এখনো কোনো ডাক্তার এসে দেখছে না।এতো রাতে ডাক্তার পাওয়া খুবই মুশকিল। গুঞ্জনকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে রাখা হয়েছে,নার্সরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন তবুও ওর জ্ঞান ফিরছে না।
এদিকে দুই বাসার সবাই এ খবর পেয়ে হসপিটালে এসে বসে আছে।”

“মৃন্ময় পুরো পাগলের মতো বিহেভ করছে।ও ভাবতে পারছে না গুঞ্জন হঠাৎ করে কিভাবে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে?কয়েকদিন ধরে ওকে অসুস্থ দেখাচ্ছিলো,এর জন্যই কি এরকম হলো?আর এতো রাতে হসপিটালে একটা ডাক্তারও নেই গুঞ্জনকে দেখানোর?আর অন্য কোনো হসপিটালে নেওয়া ও সম্ভব নয় এখন!মৃন্ময় হতাশ হয়ে গিয়েছে। কেউ ওকে সামলাতে পারছে না!”

“মৃন্ময় দাদীমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদোকাঁদো গলায় বললো, আচ্ছা ডাক্তার কি ওকে দেখবে না দিদা?ও এভাবে চুপচাপ হয়ে আছে কেন?প্লিজ ওকে কেউ কথা বলতে বলো।’

” আনিসা চৌধুরী কাঁদতে কাঁদতে বললেন,এতো রাতে ডাক্তার কোথায় পাবো??”

“এমন সময় একটা নার্স গুঞ্জনের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো তাড়াহুড়ো করে। মৃন্ময়ের কাছে এসে বললো,আপনার ওয়াইফের অবস্থা তো ক্রিটিকাল। কি করবেন এখন।আমাদের এখানে তো ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না।”

“মৃন্ময় রেগে বললো, কি আজব মেয়েটা মরে যাচ্ছে আর আপনি বলছেন ডাক্তার নেই?”

-“আমি স্যারকে ফোন করেছিলাম,উনি কাল সকালে আসবেন বলেছেন!”

“আনিসা চৌধুরী রেগে বললো, আচ্ছা মানুষ তো আপনারা ডাক্তার কখন আসবে?হ্যাঁ মেয়েটা মারা যাওয়ার পর? তখন কি জানাজা পড়তে আসবে মেয়েটির?”

“এমন সময় পেছন থেকে একটা ডাক্তার বললেন, কি হচ্ছে এখানে?চেঁচামেচি কেন?”

“মৃন্ময় ডাক্তারকে দেখে পাগলের মতো দৌড়ে গেলো। বললো, আমার গুঞ্জনকে প্লিজ দেখুন।ওর জ্ঞান ফিরছে না,প্লিজ আপনারা দেখুন।”

“ডাক্তার সিস্টারকে কিছু একটা বলে ইমারজেন্সি কেবিনে ছুটলেন।আশ্বাস দিয়ে গেলেন যে,গুঞ্জনের জ্ঞান ফিরবে।আর ওর কিছু হতে দেবেনা।”

______

“সেদিন রাতে গুঞ্জনের আর জ্ঞান ফিরলো না।ডাক্তার আর নার্সেরা অনেক চেষ্টা করার পর ভোরের দিকে গুঞ্জনের জ্ঞান ফিরলো। আর সেই খবরটা মৃন্ময়কে শোনানোর পর,,”

“হসপিটালের করিডোরে সবাইকে রেখেই মৃন্ময় দ্রুত দৌড়ে গেলো গুঞ্জনের কেবিনে।দাদীমা,আনিসা চৌধুরী, ইকবাল চৌধুরী, আরিশা,নাবিলা সবাই হসপিটালের করিডোরের ওয়েটিং রুমে বসে আছে।সবাই চিন্তিত। আর
গুঞ্জনের পরিবারের লোকেরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না এই ছেলে গুঞ্জনের মধ্যে দেখলোটা কি?অপয়া একটা মেয়ের জন্য এইসব পাগলামো করার কি দরকার?আর এই মৃন্ময় তো দেখতে অনেক সুন্দর, ফর্সা লম্বা,স্মার্ট।তাও আবার কত বড় চাকরি করে আর ও কিনা গুঞ্জনের জন্য এসব করছে? নির্ঘাত ওর মাথায় সমস্যা,তার একটা ছিঁড়া।নইলে গুঞ্জনের জন্য এতোটা উতলা হতো না।সবাই একপ্রকার বিরক্ত হলো!”

“গুঞ্জন হসপিটালের বেডে ঢেলান দিয়ে বসার চেষ্টা করছে, একসময় বসেও গেলো।ও এখানে কেন ঠিক বুঝতে পারলো না।শুধু মনে হচ্ছে ওর মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছিলো, হঠাৎ ও ফ্লোরে পড়ে যায় দরজার সাথে প্রচন্ড জোরে বারি খেয়ে।তারপর কি ওর বাসার কেউ ওকে হসপিটালে এডমিট করেছে?তাহলে ও কাউকে দেখতে পাচ্ছে না কেন? হুট করে দরজা খুলে মৃন্ময় গুঞ্জনের সামনে দাঁড়ালো।গুঞ্জন ভয় পেয়ে চমকে উঠলো।দেখলো মৃন্ময়কে,ওর চোখমুখ এরকম লাগছে কেন?চুলগুলো উস্কুখুস্কু,কেমন একটা পাগল পাগল ভাব!ভাবুক চোখে তাকিয়ে রইলো!”

“মৃন্ময় সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে গম্ভীর গলায় বললো, কি সমস্যা তোমার?এরকম হলো কেন?”

“গুঞ্জন ভয় পেয়ে বললো,আসলে সামান্য মাথাব্যথা করছিলো।আর হঠাৎ করে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাই,আর কিছু না।আমার মাথায় কোনো সমস্যা নেই!”

“মৃন্ময় চিৎকার করে বললো,তুমি কি আমায় মিথ্যে বলছো গুঞ্জন?তোমার কোনো সমস্যা না হলে শুধু শুধু এভাবে সেন্সলেস হয়ে যেতে না!”

“গুঞ্জন বললো, আমার কোনো সমস্যা নেই, বলছি তো আপনাকে।প্রেসার ফল করেছিলো হয়তো।আর আপনি এরকম করছেন কেন আজব!”

“মৃন্ময় পাগলের মতো গুঞ্জনকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো বলতে লাগলো,তোমার এ অবস্থা দেখে আমার মনে হচ্ছিলো আমার বুঝি দম আটকে গিয়েছে, তুমি বুঝি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।তুমি বুঝতে পারছো না,সেসময় আমি বোধহয় অর্ধেক মরেই গিয়েছি।আমার মনে হচ্ছিলো আমি বুঝি আর কখনো তোমার শ্যামবর্ণ চেহারা,তোমার মায়াবী চোখ জোড়া,তোমার চুলগুলো ছুঁতে পারবো না।তোমার ঝগড়াগুলো,তোমার সাথে কথা বলার সময়টুকু বুঝি আর পাবো না!”

“গুঞ্জনের গলার স্বর ভারী হয়ে আসছে।ও নিজেকে অনেক কষ্টে সামলিয়ে রেখেছে।মৃন্ময়কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে দেখে গুঞ্জন কঠোর কণ্ঠে বললো, দেখুন এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।আপনি এসব প্লিজ বন্ধ করুন।এখানে কাঁদার মতো কিছুই হয়নি,জাস্ট মাথাটা একটু ঘুরে গিয়েছিলো।”

“গুঞ্জনের কথাগুলো শুনে মৃন্ময় ওকে ছেড়ে দাঁড়ালো।কান্না করার ফলে ওর চোখমুখ একেবারে টকটকে লাল হয়ে আছে।সন্দেহী চোখে তাকিয়ে মৃন্ময়কে গুঞ্জন কিছু বলতে যাবে তখনি মৃন্ময় গুঞ্জনের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো ‘আমি তোমার প্রতি অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করি গুঞ্জন!সেটাকে কি ভালোবাসা বলে নাকি অন্যকিছু বলে সেটা ঠিক আমার জানা নেই,আর আমি জানতেও চাই না।তবে এটা বলতে পারি,আমি তোমাকে ভালোবাসি এবং আর এবং অনেক ভালোবাসি।’

” গুঞ্জনের চোখমুখ বিস্ময়ে হা হয়ে গেলো।”

“গুঞ্জনের চোখের দিকে তাকিয়ে মৃন্ময় একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।আর গুঞ্জন যেন বরফের মতো জমে গেলো। কানের কাছে মৃন্ময়ের গরম নিঃশ্বাস গুঞ্জনের নিঃশ্বাস নেওয়া আটকে দিলো। চোখ দুটো বন্ধ করে ভাবছে মৃন্ময় কি বলে গেলো,সত্যিই কি গুঞ্জনকে মৃন্ময় ভালোবাসে?নাকি ক্ষণিকের মোহ?গুঞ্জনের অসহায়তা দেখে কি মৃন্ময় গুঞ্জনের প্রতি টান দেখাচ্ছে?এটা কি ভালোবাসার সত্যি ভালোবাসা?নাকি দয়ার ভালোবাসা?

চলবে…. ইনশাআল্লাহ!