বেপরোয়া ভালবাসা পর্ব-৪৬+৪৭+৪৮

0
492

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৪৬
#লেখনীঃ মনা হোসাইন

অনেক খোঁজার পরেও আদিবার কোন খুঁজ না পেয়ে আদির পাগ*লপ্রায় অবস্থা। বাসার আশপাশ থেকে শুরু করে যত জায়গায় খুঁজ নেয়া সম্ভব খুঁজেছে কিন্তু আদিবার সন্ধান পাওয়া গেল না। কোন উপায় না পেয়ে আদি তার আংকেল কে নিয়ে পুলিশের কাছে গেল। কেস ফাইল করেও আদির মন শান্ত হচ্ছে না বারবার মনে হচ্ছে সে অন্যায় করেছে আদিবাকে বুঝিয়ে বললেই এমনটা ঘটত না। আদি অস্থির হয়ে উঠেছে দেখে জেসমিন বলল,

-“ভাইয়া শান্ত হও এত অস্থির হওয়ার কি আছে? সময় হলে নিজেই ফিরে আসবে।

-“ফিরবে না. আদিবা আমার চেয়েও বেশি জেদি আজ যদি আমার কথায় কষ্ট পেয়ে কিছু একটা করে ফেলে আমি কি নিয়ে বাঁচব..?

-“পৃথিবীতে কেউই চিরদিন বেঁচে থাকে না দুদিন আগে আর পরে সবাইকেই যেতে হবে। আদিবা যদি নিজেই এমন কিছু করতে চায় এ নিয়ে আমরা এত ভেবে কী করব?

-“চুপ একটাও উল্টা পাল্টা কথা বলবা না। আদিবার কিছু হবে না। আদিবাকে ছাড়া আমি এক মিনিট ও বাঁচতে পারব না বুঝেছো।

-“কিন্তু…

-“আদিবা আমার কাছে কী সেটা যদি এতদিনেও না বুঝে থাকো তাহলে আর কিছু বলার নেই। এই ব্যাপারে আর একটাও নেগিটিভ কথা আমি শুনতে চাই না তোমরা প্লিজ বাসায় যাও..

-“ওকে এত ভালবাসো কেন ..? ও তোমার সব কথা মেনে চলে বলে..?

-“নাহ কথা শোনার জন্য কেউ কাউকে ভালবাসে না বরং ভালবাসে বলেই কথা শুনতে বাধ্য করে। যাতে কখনো হারিয়ে না যায়।




রাত বাড়ছে যে যার বাসায় ফিরেছে। আদি আদিবাকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরল।রাত প্রায় ৩ টার কাছাকাছি…আদি এসে বাসায় ঢুকতেই থানা থেকে ফোন আসল তারা আদির বর্ননা অনুযায়ী কাউকে খুঁজে পেয়েছে আদি একটুও সময় নষ্ট না করে থানায় ছুটে গেল। কিন্তু সেখানে আদিবা নেই আদি যেতেই পুলিশের গাড়ি করে পুলিশের একজন উপদস্থ কর্মকর্তা তাকে নিয়ে বের হল। কি হচ্ছে আদি কিছু বুঝতে পারছে না সে কয়েকবার অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলেও তিনি তাকে কোন উত্তর দিল না। দেখতে দেখতে গাড়ি এসে থামল হাসপাতালের সামনে। গাড়ি থেকে নেমেই আদির মাথা চক্কর দিল সে এবার বুঝতে পারছে কিছু একটা গন্ডগোল ঘটেছে। আদি চেঁচিয়ে বলল,

-“what’s going on? Why we went here? Where is my wife?

-“clam down mr adidtto, you have to figure out whats going on so plz contribute with us…

আদি আর কিছু বলতে পারল না। সে পুলিশের সাথে এগিয়ে গিয়ে একটা কেবিনের সামনে দাঁড়াল। আদি প্রশ্ন করতে যাবে তার আগেই পুলিশটি বলল,

-“we are extremely sorry sir, may be madam is no more. so we are here now. Plz identify the dead body if she is your wife!

আদিবা বেঁচে নেই এই কথাটা শুনামাত্র আদির মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করল হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। পা চলছে না চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। অফিসার আদিকে লাশের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য তাড়া দিল কিন্তু আদি কেবিনের ভিতরে যাওয়ার আগেই জ্ঞান হারাল । সাথে থাকা অফিসার তাড়াতাড়ি করে আদিকে ধরল।
আদিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল আদির পালিত বাবা মা সহ তার বোনরা ছুটে আসল। বেশ অনেক্ষন যাবৎ আদিকে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে কিন্তু জ্ঞান ফিরছে না।






নীলচে আকাশ, ঝলমলে রৌদ্র দীপ্ত দিন। নিস্তব্ধ সবুজ অরন্যের বুক ছিড়ে বয়ে চলেছে ছোট নদী। নদীর স্রোতের হালকা কলকল শব্দ ভেসে আসছে। সময়টা হয়ত বসন্ত কাল চারদিকে নানান ধরনের বনফুল ফুটেছে তার মাঝেই আদিবা এদিক থেকে ওদিক ছুটাছুটি করছে উদ্দেশ্য প্রজাপতি ধরা। আদিবার মুখের মিষ্টি হাসি আদির মন কেড়ে নিচ্ছে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে সে আদিবার দিকে।
প্রশান্তিতে মন ভরে উঠছে কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হল না হটাৎ আদিবা প্রজাপতির পিছনে ছুটতে ছুটতে কোথায় যেন হারিয়ে গেল আদি গলা ছেড়ে আদিবাকে ডাকতে লাগল….

-“আদিবা…..!!!

আদিবার নাম ধরে ডেকে জেগে উঠল আদি সাথে সাথে সবাই এসে বেডের পাশে ভীড় জমাল। আদি তার পালিত মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

-“আদিবা কোথায় মা…??

আদির মা উত্তর দিচ্ছেন না দেখে আদি উঠে হাতের স্যালাইনটা খুলতে যাবে ঠিক তখনী মাথার পাশ থেকে কেউ আদিকে চেপে ধরল আদি অবাক হয়ে তাকাল, আর দেখল আদিবা তার হাতে স্যালাইন ঠিক করে দিচ্ছে…

-“আদিবা….!! তুই বেঁচে আছিস?

-“মরে গেলে খুশি হতেন?

আদি আর কিছু না বলে সবার সামনেই আদিবাকে হ্যাচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।

-“ভাইয়া কি করছেন এসব? সবাই দেখছে তো…

আদিবার কথায় আদির কোন পরিবর্তন ঘটল না। সে আদিবাকে ছড়িয়ে রেখেছে। আদিবা বিব্রত হচ্ছে দেখে আদির মা সবাইকে নিয়ে বাইরে চলে গেলেন।

-“হয়েছে তো এবার ছাড়ুন. আমি পালিয়ে যাচ্ছি না আমাকে পরেও জড়িয়ে ধরা যাবে…স্যালাইন টা আলগা হয়ে গিয়েছে…আগে সুস্থ হোন।

আদি আদিবা ছেড়ে রাগী চোখে তাকাল। আদিবা কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,

-“কী হয়েছে…?

আদি কোন উত্তর না দিয়ে টান দিয়ে স্যালাইন টা খুলে ফেলে দিয়ে আদিবার হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে আসল।

-“আরে কী করছেন? কোথায় যাচ্ছেন? আপনি সুস্থ না।

-“আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না সিনক্রেয়েট করিস না…

বলতে বলতে আদি হাঁটতে লাগল। আদি রেগে গিয়েছে বুঝতে বাকি রইল না আদিবার। আদি কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতেই সবাই তার দিকে তাকাল। আদিবা গোবেচারা মুখ করে বলল,

-“আংকেল..!

আদির বাবা এগিয়ে এসে বললেন,
-“আদি কি করছিস বাবা? বৌমা কে ছাড়।

-“আংকেল হাসপাতালের ফরমালিটিস গুলো মিটিয়ে দিও আমি বাসায় যাচ্ছি।

-“আদি তুই আগে সবটা শোন প্লিজ…

-“তোতা পাখিকে তো সাথে নিয়েই যাচ্ছি। আশা করছি তিনি নিজেই সব টা বলতে পারবেন।

বলেই আদি রক্ত চোখে তাকাল আদিবার দিকে।
-“ভাইয়া আসলে….

-‘আর একবার ভাইয়া বলে দেখ… যাইহোক আংকেল আসছি…মা সরি তোমাকে পৌঁছে দিতে যেতে পারছি না সাবধানে বাসায় যেও। পৌঁছে আমাকে জানিও।

-“আমার কথা বাদ দে বউ মার সাথে খারাপ কিছু করিস না বাবা।

-“এত চিন্তা করছো কেন বউ আমার,ওর কিছু হলে তো আমার বেশি সমস্যা হওয়ার কথা যাইহোক তোতাপাখি চলুন…আপনাকে অনেক কিছু শিখানোর আছে।

আদিবা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে কিন্তু আদি তাতে পাত্তা না দিয়ে আদিবাকে নিয়ে বাসায় ফিরল।

আদি আদিবাকে নিয়ে বেড রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিয়ে শান্তভাবে এগিয়ে গিয়ে সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে আদিবার দিকে এগিয়ে দিল। আদির চোখ মুখে রাগ জ্বল জ্বল করছে ভয়ে আদিবার গলা শুকিয়ে উঠেছে সে কাঁপা কাঁপা হাতে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে শেষ করল। আদি শান্ত হয়ে বিছানায় বসে বলল,

-“তারপর বলুন কি হয়েছিল..?

-“আ আ আসলে ভাইয়া….

আদিবা পুরো বাক্য শেষ হওয়ার আগেই আদি চেঁচিয়ে উঠল,
-“যা যা প্রশ্ন করব স্পষ্ট ভাষায় ঝটপট উত্তর দিবি..
কোথায় ছিলি এতক্ষন? আর হাসপাতালে কি ঘটেছিল?

-“ভাইয়া…!!

-“আবার ভাইয়া বলিস?

-“স স সরি…

-“ভয় পাচ্ছিস কোন দুঃখে? আমি তোকে বকা দিয়েছি বা গায়ে হাত তুলেছি?

-“ভয় লাগলে কি করব…?

-“ভয় পেতে হবে এমন কাজ করিস কেন তাহলে?

-“আমি শুধু আপনাকে বুঝাতে চেয়েছিলাম…

-“কি বুঝাতে চেয়েছিলি? আমি এতদিন তোর সাথে যা যা করেছি ভুল করেছি…?

আদিবা উত্তর দিল না চুপ করে আছে।

-“উত্তর দে…

-“আপনি করলে দোষ নেই আমি করলে দোষ?
আপনিও তো নীলয় ভাইয়ার সাথে আমাকে দেখে সন্দেহ করেছিলেন…আর আমি যখন সেইম কাজটাই করলাম আপনি আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলেন…

-“আমি বের করে দিয়েছিলাম? বাহ! যাইহোক আমি যখন তোকে সন্দেহ করেছিলাম আমার বয়স কত ছিল?

-“মানে?

-” মানে পাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে খু**ন করলেও ক্ষমা করে দেয়া হয় কিন্তু প্রাপ্ত বয়স হওয়ার পর করলে তাকে ফাঁ**সি দেয়া হয়। আশা করছি তুই প্রাপ্ত বয়স্ক…



চলবে…!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৪৭
#মনা হোসাইন

-” আমি এসেছি থেকে যা যা করেছি সব ইচ্ছে করেই করেছি। অযথা আপনাকে জাগিয়ে রাখা, রান্না করানো,বার বার ফোন করে বিরক্ত করা সবি বুঝে শুনে করেছি…আর সবচেয়ে বড় কথা আপনি অফিসে যাওয়ার পর পরেই আপনার আংকেল আর বোনরা এসেছিল। তারা সারাদিন এখানেই ছিল। তাদের সাথে আমি কোন খারাপ আচারন করিনি। ভালভাবে সময় কাটছিল হটাৎ আপনার বোন জেসমিন জানতে চায় আমাদের এভাবে বিয়ে হল কেন? কেন সোজা প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে হল না আপনি এত নাটক করে বিয়ে করলেন কেন ? তখন আমি তাদের সব ঘটনা খুলে বলি। আপনারা বাড়ি ছাড়ার কারন, আমার প্রতি রাগ, এখনকার মনমালিন্য সবকিছুই খোলে বলি। সব শোনে ওরাই প্লেন করে আপনি যেভাবে আমাকে সন্দেহ করে ছয়টা বছর মৃত সেজে পার করে দিয়েছেন আমিও ঠিক সেইম কাজটাই করব। সন্দেহ করে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যাব তারপর এক্সিডেন্টের অভিনয় করব আর আপনাকে বুঝাব অতিরিক্ত শাসন করলে কেমন লাগে। করলামও তাই হাসপাতালের সমস্ত ব্যবস্থা আংকেল করে দিয়েছিলেন।

আদিবার কথা শুনে আদি স্থীর চোখে তাকিয়ে বলল,
-“তারমানে তুই আমাকে আমার ভুলের শাস্তি দিতে চেয়েছিলি?

“আমি আপনাকে শাস্তি দিতে চাইনি আমি শুধু বুঝাতে চেয়েছিলাম।

-” কি বুঝাতে চেয়েছিলি আমি তোকে ভালবাসি না তাই তো…?

-“নাহ ভালবেসেও যে অ*ত্যাচার করা যায় সেটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম। আমি যে সেদিন আপনাকে সারারাত জাগিয়ে রেখেছি জোর করে নয় ভালবেসে… আপনাকে প্রেসার দিয়েছি সেটাও ভালবেসেই। কিন্তু এই ভালবাসায় ভাললাগা ছিল না,ছিল বিরক্তি।

আদিবার কথা আদি একটু হাসল তবে এই হাসি মন খোলা হাসি নয়, তাছিল্যের হাসি।

-“আপনি হাসছেন?

-“মিথ্যা বলব না তোর উপড়ে বিরক্ত হয়নি সেটাও বলব না। তবে আমি যে আদিবাকে ভালবাসি তার উপড় বিরক্ত হয়নি। বিরক্ত হয়েছি বদলে যাওয়া আদিবার উপড়। আমি বদলে যাওয়া বিষয়গুলোকে বড্ড ঘৃনা করি। তুই যদি ছোট থেকেই এমন থাকতি আমি বিরক্ত হতাম না এতদিনে মেনে নিতে শিখে যেতাম। আমি পুরানোতে সীমাবদ্ধ তাই নতুনত্ব আমাকে ছুঁতে পারে না।

-“মানে বুঝলাম না।

-“দেখ আমি ছয় বছর আগেও যে আদি ছিলাম এখনো তাই আছি। এই ছয়বছরে অনেক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে কিন্তু আমি এখনো আদিবাতে আটকে আছি আগেও ছিলাম আমার আচারনে এতটুকু পরিবর্তন আসেনি বদমেজাজি, জেদি তবে আগের আদিই। তুই ছোট থেকেই চুপচাপ কখনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি। আর ভালবাসা সেটা তো আমার জন্য কখনো ছিলই না।আমি যাই করতাম তোর কাছে ভুল মনে হত। তোর কাছে যাওয়াকে তুই ভয় পেতি কিন্তু বিয়ের দিন তুই ইচ্ছে করেই আমাকে নিজের কাছে টানলি। আমি জানতাম এটাও তুই মন থেকে করিস নি। যা করছিস তার পিছনে নিশ্চুই কোন কারন আছে তবে আমার ভুল বোঝানোর জন্য এতটা সেক্রিফাইস না করলেও হতো…

-“ম ম মানে…?

আদিবার কথায় আদি শান্ত চোখে তাকিয়ে জবাব দিল,
-” ঘুরানো ফিরানো কথা আমার পছন্দ না আদিবা তাই সরাসরি বলছি তুই আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিস আমি তোর উপড় অ*ত্যাচার করেছি।আমিও বুঝেছি। তবে এটা আমার সাথে বেড শেয়ার করার আগে সেটা বুঝালে ভাল হত।
যাইহোক ব্যাগ গোছা আমি টিকিট নিয়ে আসছি।

আদির কথা শুনে আদিবা প্রচন্ড অবাক হল। প্রশ্নবোধক চাহনীতে তাকাল।

-” কিসের টিকেট..?

-” চিন্তা করে দেখলাম আমি আসলেই ভুল করেছি।যা করে ফেলেছি সেটা তো আর ফিরে আসবে না তবে তোর জীবনটা নষ্ট করার অধিকার আমার নেই। একজন ভুলে ভরা মানুষের সাথে জোর করে আটকে রেখে তোর সারাটা জীবন নষ্ট করার মানে হয় না। তাই আমি তোকে মুক্তি দিব। জোর করে আর যাইহোক ভালবাসা হয় না। তাই তোকে দেশে পাঠিয়ে দিব। চিন্তা করিস না আমি তোর ভরণ পোষনের দায়িত্ব এড়িয়ে যাব না। শুধু তোকে আমার শাসন থেকে মুক্তি দিচ্ছি যদি সঠিক কাউকে পাস তার কাছে চলে যাস আর যতদিন না পাচ্ছিস নিজের স্বাধীন মত জীবন কাটা।

বলেই আদি উঠে গেল। আদিবা কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু সুযোগ পাই নি। আদি এই রাতের বেলাতেই বেরিয়ে গিয়েছে আদিবা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

আদি ফিরতে ফিরতে ভোর রাত আদি আসতেই আদিবা ছুটে গেল। আদিবা কিছু বলতে যাবে তখনী আদি বলে উঠল,

-“সকাল দশটায় টিকিট রেডি হয়ে নে।

-“বলছিলাম কী…

-“আদিবা ২ দিন হল আমি ঘুমাই না। একটু ঘুমাতে দিবি প্লিজ। তোকে তো একা একা পাঠাতে পারব না গিয়ে দিয়ে আসব।

বলতে বলতে আদি ঘরে গিয়ে দরজা লক করে দিল আদিবা জানলা দিয়ে দেখল আদি সত্যিই ঘুমাচ্ছে। কিন্তু আদিবার চোখে ঘুম নেই সে তো এমন কিছু চায় নি। শুধু আদিকে তার ভুল গুলো বুঝাতে চেয়েছিল। কিন্তু আদি তো সব ভুল বুঝল এই ছেলেটা এত ত্যাড়া কেন? কখনো মনের কথা বুঝেনা ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে গেল আদিবা বুঝতে পারেনি।

সকালে আদির ডাকে ঘুম ভাংগল আদিবার।

-“আদিবা ফ্লাইটের সময় হয়ে গিয়েছে তাড়াতাড়ি উঠ…কিরে উঠ।

আদিবা কোন রকম চোখ মেলে তাকাতেই আদি তাকে টেনে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে দিল। সে বিশাল ব্যাস্ত কথা বলারেই যেন সুযোগ নেই। সে নিজেই কথা বলে চলেছে।

-“সোফায় কেউ ঘুমায়? অন্যরুমে ঘুমাতে পারলি না..?

-“বলছিলাম কী…?

-“এখন কিছু শোনার সময় নেই টেবিলে খাবার রাখা আছে গিয়ে খেয়ে নে আমি তোর ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছি।যা যা…

আদিবা এবারেও কিছু বলার সুযোগ পেল না।
কিছুক্ষন পরেই আদি এসে আদিবাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল আদিবা খায় নি সেটা হয়ত আদি লক্ষ্য করেনি।

আদি ড্রাইভ করছে আদিবা শুধু ছটফট করছে কিছু বলার জন্য কিন্তু আদি একেবারেই সুযোগ দিচ্ছেনা। গাড়ি যতই এগুচ্ছে আদিবার অস্থিরতা ততই বাড়ছে…আদিবার ছটফট দেখে আদি এবার প্রশ্ন করল কিছু বলবি?

বলতে দেরি হলেও আদিবার উত্তর দিতে দেরি হল না।

-“আমি ফিরে যাব কেন..? আপনি আমাকে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?

-“তুই এখানে কার কাছে থাকবি আমি ছাড়া কাউকেই তো চিনিস না।

-“আমি অন্য কারো সাথে থাকব কেন? আমাদের বিয়ে হয়েছে আমরা একসাথে থাকব তাই না?

আদি একবার আদিবার দিকে তাকাল,
-“দুজন মানুষের মনে কোন মিল নেই শুধুমাত্র বিয়ে হয়েছে বলে সারাজীবন একসাথে থাকতে হবে এর কোন মানে নেই। তুই তোর মত করে জীবনটা সাজিয়ে নে। যেভাবে থাকতে ইচ্ছে হয় যা যা করতে ইচ্ছে হয় তাই কর। তোর জীবন যাপনের জন্য যত টাকা প্রয়োজন আমি দিব।

-“আমি কি বলেছি আমি দেশে ফিরে গিয়ে স্বাধীনভাবে জীবন কাটাতে চাই..?

-“বলিস নি তবে আমার ভুল গুলো চোখে আংগুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিস।

-“ভাইয়া হাজার হোক আমাদের বিয়ে হয়েছে…

আদি কোন উত্তর দিল না । আদিবা তাকে এত করে বুঝানোর ট্রাই করল তবুও কাজ হল না।আসলে আদি খুবি ত্যাড়া টাইপের ছেলে নিজে যা বুঝে সেটাই করে। কোন কারনে তার সিধান্ত বদলায় না।




আদি আদিবারা বাসায় পোঁছাল রাতের বেলা। তাদের দেখে বাসার সবাই অবাক। আদিবার চোখ মুখে বিষন্নতা থাকলেও আদির আচারনে কোন রকম কষ্টের ছাপ নেই। সে বাসায় ঢুকেই বলল,

-“আমি খুব ক্লান্ত কেউ আমাকে বিরক্ত করো না প্লিজ।

আদির কাছে পাত্তা না পেয়ে সবাই আদিবাকে ঝেঁকে ধরল কি হয়েছে আদিবা কিছু বলতে পারছে না তার শুধু কান্না পাচ্ছে। সে বেশ জোরেই কেঁদে ফেলল। আদি বিরক্তিভরে পিছনে ঘুরল,

-“কি হচ্ছে কী মা? ওর কাছে এভাবে জবাবদিহি চাইছো কেন? নিজের বাসায় কী আসতে পারবে না নাকি? ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে এসেছে এতে এত প্রশ্নের কী আছে?যাইহোক আদিবা তুই আমার সাথে আয় যা বলার সকালে বলো।

আদিবা এই সুযোগটা মিস করতে চায় না তাই আদি বলার সাথে সাথে আদির ঘরে চলে গেল।

আদি ড্রেস চেঞ্জ করছে আদিবা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আদি বিষয়টা লক্ষ্য করা একটু থেমে বলল,

-“লাজ লজ্জা কী সব বিসর্জন দিয়ে দিয়েছিস..?

-“আ আ আমি মানে…

-“ঘটনা কি বলতো…? যা বলার সরাসরি বল।

-“আপনি সত্যি আমাকে রেখে চলে যাবেন?

-“কেন তোর কি মনে হয় তামাশা করার জন্য একদিনের ব্যবধানে দেশে এসেছি।

আদিবা আবারো কেঁদে দিল।

-“আশ্চর্য তুই এত কাঁদুনি হলি কবে থেকে.? সমস্যাটা কোথায় সেটা বল।

আদিবা কেঁদে কেঁদেই বলল,
-“বিয়ের দিন আ আ আপনি বলেছিলেন যাই হয়ে যাক আমাকে কখনো ডিভোর্স দিবেন না। জোর করে আটকে রাখবেন। তাহলে আজ কেন বদলে গেলেন?

-“তারমানে আমার বদলে যাওয়াটা তুই মেনে নিতে পারছিস না.? কেন পারছিস না? আমি যা করছি তোর ভালর জন্যই করছি। জোর করা ছেড়ে দিয়েছি এটা তো তোর জন্য সুখবর..

-“আমি কি আপনাকে জোর করা ছেড়ে দিতে বলেছি..?

-“তুই তো বড্ড ঝামেলার মেয়ে যখন জোর করতাম তখনো আপত্তি ছিল এখন জোর করব না বলছি তাতেও আপত্তি তাহলে আমি করব টা কি?

-“আপনি আগে যেমন ছিলেন তেমনি থাকুন বদলে যাবেন না প্লিজ।

আদি এবা ভিলেনি হাসি দিয়ে বলল,
-” তুই কি বুঝতে পারছিস তুই নিজের মুখে স্বীকার করছিস তুই আমার জোর করাটাকে পছন্দ করিস..?



চলবে..!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৪৮
#লেখনীঃ #মনা_হোসাইন

আজ বেশ বেলা করেই ঘুম ভেঙেছে আদিবার। এই দুদিনে যে ধকল গেল ঘুমিয়ে বেশ ফ্রেশ লাগছে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল সে, সাথে সাথেই চারপাশে চোখ বুলিয়ে অবাক হল আদিবা। তার স্পষ্ট মনে আছে গতরাতে সে আদির ঘরে ঘুমিয়েছিল তাহলে এখন নিজের ঘরে আসল কি করে..? তবে কি আদি তাকে রেখে গিয়েছে? কিন্তু কেন? তবে কি আদির রাগ এখনো ভাংগেনি ..?

আদিবা তাড়াতাড়ি উঠে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে আসল। নিচে সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে তবে আদি বাদে কেউ খাচ্ছে না। সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে আদির দিকে তাকিয়ে আছে আর আদি মনযোগ দিয়ে আপন মনে খেয়ে চলেছে।আদিবা নিচে নামতেই সবাই আদির দিক থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে তাকাল।

এমনভাবে তাকাল যেন পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমায় বিশেষ চরিত্রের আগমন ঘটেছে। আদিবা ইতস্ততা নিয়ে এগিয়ে আসতেই আদি খাবারে মনযোগ রেখেই পা দিয়ে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল,

-” বস…

সবাই রাগী চোখে তাকাল আদির দিকে।আদিবাও হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আদি খেতে খেতে শক্ত কন্ঠে বলল

-“কিরে আদিবা তোকে কি ভাল করে কথা বললে গায়ে লাগে না?বসতে বল্লাম না?

আদিবা বিচলিত হয়ে আদির পাশে বসল আদি এখনো খাবার প্লেটেই মনযোগ আটকে রেখেছে আদিবা বসার পর সে মুখ তুলে তাকাল।আর বলতে শুরু করল,

-“জানি আমার এমন সিধান্তে সবাই অবাক হয়েছো সাথে রেগেও গিয়েছো কিন্তু কি করব বলো ভাগ্যের লিখন কখনো বদলানো যায় না। আমাদের ভাগ্যে এমনটাই লিখা ছিল তাই এমন হলো…

আদির বাবা এবার রেগে বললেন,
-“ভাগ্যের দোহাই দিও না আদিত্য, জীবনটা ছেলে খেলা নয়। তুমি যখন আদিবার সাথে সংসার করবেই না তখন আদিবার জীবনটা নষ্ট করলে কেন? ও তোমায় বিয়ে করতে চায়নি তবুও জোর করে বিয়ে করে কোন অপরাধের সাজা দিলে?

-“আমি ওকে সাজা দেয়ার জন্য বিয়ে করিনি বাবা। একসাথে থাকার জন্যই বিয়ে করেছিলাম কিন্তু ওকে যখন হাসপাতালে দেখলাম তখন মনে হল এই দিনটা সত্যি আসার আগে আমার ওকে মুক্তি দেয়া উচিত। মানুষ নিজের স্বভাব যতই বদলানোর চেষ্টা করুক পুরোপুরি বদলাতে পারে না আমিও হয়ত পারব না। তখন দেখা যাবে আদিবা আমার হাত থেকে বাঁচতে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সিধান্ত নিল তখন..?

-“তারমানে তুমি সিধান্ত নিয়ে নিয়েছো…?

-“হ্যা আর আমার সিধান্ত কোন কারনেই বদলাবে না। তবে তোমাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদিবাকে প্রেসার দিও না। সবারেই নিজের মত করে বাঁচার অধিকার আছে। তাছাড়া আদিবার কোন কিছুর অভাব আমি রাখব না মাস শেষ হওয়ার আগেই ওর প্রয়োজনীয় সব কিছু পৌঁছে যাবে তাই তোমাদের উপড় বোঝা হয়ে থাকবে এটা ভেবো না। কাকিমনি তোমাকে বলছি আদিবা বরাবরই চুপচাপ স্বভাবের নিজের ভাললাগা খারাপ লাগা প্রকাশ করতে পারেনা তাই ইতিমধ্যে অনেক কষ্ট পেয়েছে তাই তোমাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করব ওকে আর নতুন করে কষ্ট দিও না।ওকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি মানে এই না যে আমি ওর উপড় অসন্তুষ্ট,ওর বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ আছে।আদিবার উপড় আমার সত্যিই কোন অভিযোগ নেই।আমি কথা দিচ্ছি আমি ওর সমস্ত ভরণ পোষনের দায়িত্ব নিব। তাই দয়াকরে এই নিয়ে ওকে দোষারোপ করে ওর উপড় অ*ত্যাচার করো না. ছয় বছর তো অনেক অত্যা*চার করেছো আর না।

-“আদি তুমি তোমার পাগলের সংলাপ বন্ধ করো যাকে ছেড়ে দিচ্ছো তার প্রতি আর দরদ নাইবা দেখালে।

-“বাবা আবারও উল্টা পাল্টা কথা বলছো আমি ওকে ছাড়ছি না মুক্তি দিচ্ছি। যাইহোক শেষ একটা কথা বলি তোমরা যদি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করো তাহলে ওকে অন্য কোথাও রাখব তবে ওকে যদি বাসা ছাড়তে হয় তাহলে আমিও এই বাসার সাথে কোন সম্পর্ক রাখব না। বলেই আদি হাত ধুয়ে নিল। আমার ফ্লাইটের সময় হয়ে যাচ্ছে আমাকে বের হতে হবে..

বলতে বলতে আদি উঠে গেল সে নিজের ঘরে যেতেই আদিবাও গিয়ে হাজির হল,

আদি শার্ট চেঞ্জ করছিল আদিবাকে দেখে থেমে গেল, -“কিছু বলবি..?

আদিবা এবার আর সহ্য করতে পারলনা কেঁদে ফেলল,
-“আজব কাঁদছিস কেন..?

আদিবা কেঁদে কেঁদে বলল,
-“আমাকে এতবড় শাস্তি দিবন না প্লিজ।

আদি লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
-“আমি জানি তুই কিসের জন্য এত অস্থির হচ্ছিস কিন্তু আদিবা যা হওয়ার সেটা তো হয়ে গিয়েছে আমি চাইলেই তোর সতীত্ব ফিরিয়ে দিতে পারব না। তুই সেদিন কেঁদেছিলি কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি আমি ভুলে গিয়েছিলাম জোর করে সব করা উচিত না। আমি তোর উপড় অতিরিক্ত অধিকার দেখিয়ে ফেলেছি তার জন্য আমি দুঃখিত।তবে আমি আর কখনো এই ভুল করব না দেখ গতরাতে তোর সাথে কিছু করা তো দূর তোর সাথে থাকিনি পর্যন্ত।ঐ দিনের জন্য তুই আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ আর শুধুমাত্র এই কারনে নিজেকে আমার সাথে থাকার জন্য ফোর্স করিস না। জীবন তো একটাই সমাজ কিংবা পরিবার কি বলবে সেভেবে নিজেকে কষ্ট দিস না। এসব কোন ব্যাপার না কিছুদিন পরেই ভুলে যাবি।

-“আপনি কি বুঝতে পারছেন আমি কি বলছেন..?

আদি এবার এগিয়ে গিয়ে আদিবার হাত ধরে এনে নিজের কাছে বসাল।

-“আদিবা,আমি কোনদিনি তোর ক্ষতি চাইনি যেকোন সম্পর্কে তিনটা শর্ত থাকে
মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়া অথবা ছেড়ে দেওয়া

আমি সবগুলো ধাপেই ট্রাই করেছি প্রথমে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছি সেজন্য তোর থাকে নিজেকে এত বছর দূরে রেখেছি যাতে আস্তে আস্তে তোর চালচলন মেনে নিতে পারি । বিশ্বাস কর মেনে নিতে শিখেওছিলাম, যেদিন আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল তুই সেদিন নীলয়ের সাথে ফিরেছিলি আমি জেনেও রিয়েক্ট না করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার মেনে নেওয়াটা তোর কাছে যথেষ্ট ছিল না। তারপর চেষ্টা করলাম মানিয়ে নেওয়ার তোকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, জোর করে মানিয়ে নিতে চেয়েছিলাম তাই জোর করে বিয়ে করলাম কিন্তু তাতেও ব্যার্থ হলাম তুই মেনে নিতে পারলি না তাই এবার ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। আমরা দুজন দুমেরুর বাসিন্দা আমরা একসাথে থাকলে দুজনের কারোর বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে।তাই এখন এই একটা পথই খোলা আছে।

আদিবা আদির কথার কোন জবাব দিতে পারছে না। ভিতরটা যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।মনের মাঝে হাজার কথা জমা থাকলেও গলায় এসে আটকে যাচ্ছে কিছু বলতে পারছে না। তবে আদির অনর্গল বলে চলেছে,

-“আর একটা কথা তুই যে অযথা সন্দেহের নাটক করছিলি আমি সেটা জানতাম আমি তোর হাত কা*টার কারন জানার জন্য যখন সিসিটিভি চেক করেছিলাম তখনী দেখেছিলাম আংকেলরা এসেছে তাই তুই যে অযথা সিনক্রিয়েট করছিস জানতাম সেই জন্যেই তোর সাথে এত রুড বিহেভ করেছিলাম। এসব আমাকে সন্দেহ করার জন্য ছিল না তুই ভুল করছিস সেটা বুঝানোর জন্য ছিল। কিন্তু তুই যখন হারিয়ে গেলি বুঝলাম আমার রুড বিহেভ করাটা উচিত হয়নি তারপর তোকে যখন হাসপাতালে দেখলাম আমি ভেবেছিলাম তুই সত্যিই এ*ক্সিডেন্ট করেছিস আমি সেটা মেনে নিতে পারিনি।তখন নিজেই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি তোর যা করার কর আমি আর তোর জীবনে ঢুকব না। তুই বেঁচে আছিস এটাই আমার কাছে অনেক। ।আমি কখনো তোর ক্ষতি চাইনি সেই ছোটবেলা থেকেই তোকে ভালবাসতাম তাই যে বিষয়গুলো তোর জন্য ক্ষতিকর সেখান থেকে তোকে বিরত রাখার চেষ্টা করতাম।তুই ব্যাথা পেলে শাস্তি দিতাম যাতে পরেরবার আরও সাবধান হোস। সে যাইহোক আমার ভালবাসার পদ্ধতিটা ভুল ছিল তাই এখন থেকে দূর থেকে চাইব তুই ভাল থাক।

বলে আদি ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল আদিবা বুঝতে পারল আদি তার আচারনে কষ্ট পেয়েছে আর আদির সিধান্ত কোন কারনেই বদলাবে না। আদি রেডি হয়ে বের হয়ে আসল,

আদিবা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে দেখে
আদি এগিয়ে এসে আদিবার মাথায় হাত বুলিয়ে মলিন হাসল তারপর কারো কাছে কোন বিদায় না নিয়েই দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল…

আদিবা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আদি দ্বিতীয়বার ঘুরে তাকায় নি আদি বের হতে না হতেই অরিন ছুটতে ছুটতে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

-“আদিবা আদিবা….ভাইয়াকে তুই যেতে দিস না ওকে তুই আটকা যেকরেই আটকা…আদিবা একবার বাইরের দিকে আবার অরিনের দিকে দেখছে ..

-“তাকিয়ে কী দেখছিস মুখপুড়ি? ভাইয়া আজ তোকে ছেড়ে নয় এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার বের হয়ে গেল।

অরিনের কথা শুনে আদির মা এগিয়ে এসে বললেন

-“কিসব আবল তাবল বকছিস অরিন?

অরিন এবার চোখের পানি ছেড়ে বলল,
-“আমি আবল তাবল বকছি মা দেখো ও চিরকুট লিখে গিয়েছে।

বলে অরিন একটা চিরকুট এগিয়ে দিল আদির মা সেটা পড়তে শুরু করল,

-“মা বাবা তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার মুখ আমার নেই।আমি জানি না চিরবিদায় কী করে নিতে হয় তাই কাউকে বিদায় জানাতে পারলাম না। আর আদিবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সাহস আমার নেই এই মুখের দিকে তাকিয়ে বিদায়ের কথা বলার হিম্মত আমার কোনদিন হবে না তাই এভাবে বিদায় নিচ্ছি।
-‘যাই রে আদিবা… হয়ত আর কোনদিন আর দেখা হবে না তবে আমি যেখানেই থাকি না কেন সবসময় চাইব তুই ভাল থাক। দোয়া করি সুখী হ.. আমার জন্যেও দোয়া করিস এপাড়ে তো আমার বেপরোয়া ভালবাসা পূর্ণতা পেল না. ওপাড়ে যেন পূর্ণতা পায়।



চলবে…!!