#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :৩১
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
পাখির কিচির মিচির আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো বেলীর।পিট পিট করে চোখ খুললো।নিজেকে আবিষ্কার করলো সুবাসের বহু ডোরে।সুবাসের দিকে বার কয়েক তাকিতে চোখ বন্ধ করে নিলো।চোখে ভাসে উঠলো কল রাতের মুহূর্ত গুলো।কল রাতের ঘটনা গুলো মনে করে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো বেলী।দু গালে লাল আভা ছড়িয়ে পড়লো।ঠোঁটে ফুটে উঠলো মুচকি হাসি।মনের মধ্যে অনুভূতি গুলো প্রজাপতির নেয় উড়তে লাগলো।সুবাসের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো বেলী।কিভাবে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে।কেউ বলবে যে এই লোক কালকে বেলীকে ভীষণ বাজে ভাবে জ্বালিয়েছে।বেশ কিছুক্ষন পর সুবাসের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো নাস্তা তৈরি করতে।
বেশ কিছু ক্ষণ যাবৎ রান্না ঘরের দরজায় দাড়িয়ে বেলীকে পর্যবেক্ষণ করছে সুবাস।একদম পাক্কা গিন্নী লাগছে।এক হাতে রুটি ভাজছে অন্য হাতে ভাজি করছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।পরনে ব্ল্যাক কালার শাড়ি।শরীর আঁচলটা কোমরে গুজে দেয়ার ফলে ফর্সা পেট দেখা হচ্ছে।সুবাস অতি নীরবে বেলীর পিছন দিকে দাড়ালো।বেলীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।বেলীর ঘাড়ে চু’মু খেলো।বেলী হকচকিয়ে গেলো।
-“ক কি করছেন?ছাড়ুন আমায়।কেউ দেখে ফেলবে।”
-“ছাড়বো না।আর কেউ দেখবে না।বাসায় শুধু তুমি আর আমি আছি।বলছিলাম কি চলো আবার তোমায় কাল রাতের মতো আদর করি।”
দুষ্ট হাসি হেসে বলে সুবাস।
বেলী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।এমনি কল রাতের কথা ভেবে নিজে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে।সুবাস থেকে পালিয়ে বেরানির চেষ্টা করছে।এই সুবাস কিনা আবার তাকে লজ্জা দিচ্ছে।
-“আপনার ফালতু কথা রাখুন।নাস্তা রেডি।তাড়াতাড়ি রেডী হোন নাহলে অফিসে জন্য লেট হয়ে যাবে।”
-“এখনের মতো ছেড়ে দিচ্ছি।রাতে কিন্তু ছেড়ে দিবো না।বি রেডী ফর নাইট বউ”
বলেই সুবাস রেডী হতে চলে গেলো।বেলী নাস্তা তৈরি করে রূমে নিয়ে এলো।সুবাস আয়নার সামনে নিজের শার্ট এর কলার ঠিক করছিলো ঠিক তখন বেলির চোখ যায় সুবাসের ঘাড়ে।একদম লাল হয়ে ছিলে গেছে।সব দোষ এই বেলীর।হাতের নখের জন্য এমন টা হলো।বেলী সুবাস সামনে গিয়ে মলম লাগিয়ে দিল।সুবাস চোখ বন্ধ করে নিলো।বেশ জ্বলছে।
-“বেশি জ্বলছে আপনার?”
-“যেখানে প্রতিবার তোমার রূপে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাই সেখানে এই জ্বালা কিছুই না বউ। কই তখন তো মলম লাগিয়ে দেও না?”
-“আপনার কথা আমি কিছুই বুঝি না।”
বেলী লজ্জায় লাল হয়ে মলম লাগিয়ে সরে যেতে নিলেই সুবাস তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
-“বুঝো না ?নাকি বুঝতে চাও না?তুমি চাইলে আমি তোমাকে বুঝাতে পারি।”
-“ছা..ছাড়ুন।”
বলেই বেলী সুবাসের বাধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়লো।সুবাস তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশে।
____________
রাত বারোটা ত্রিশ। সমিয়ার ফোন অনোবরত বেজেই চলছে। গভীর ঘুমে ছিল সামিয়া।এতো রাতে আবার কে কাল দিলো?কারো কোনো বিপদ হলো নাকি আবার?রাতে বেলা কাল এলে এমনই মনে নানা উদ্ভট খেয়াল আসে।নিজের মন কে স্থির করে ফোনে হাতে নিলো সামিয়া। ফোন নম্বর দেখে ভীষণ অবাক হলো।ফোনের স্ক্রিনে ইয়াসিরের নাম ভেসে উঠেছে।সামিয়া ফোন রিসিভ করলো।
-“এতো ক্ষন সময় লাগে নাকি কল রিসিভ করতে?আমি ছাদে ওয়েট করছি ।তাড়াতাড়ি ছাদে চলে আসুন।”
বলেই খোট করে কল কেটে দিলো ইয়াসির।সামিয়া বসে রইলো।কি বললো এই লোক?এতো রাতে ছাদে যাবে?ছাদে যাওয়া কি ঠিক হবে?কোনো ভূত তুত কি আবার সামিয়াকে কল দিলো?নাহলে এতো রাতে ইয়াসির কথা থেকে কল দিবে?কথা গুলো ভেবে আবার ঘুমোতে গেলেই কাল আসে।
“আপনি যদি তাড়াতাড়ি না আসেন তবে আমি কিন্তু ভালো করেই জানি কিভাবে আপনাকে ছাদে আনতে হয়। জাস্ট দু মিনিটের মধ্যে ছাদে আসুন।এবার না আসলে কিন্তু আমি রুমে চলে আসবো।”
বলেই কল কেটে দিলো ইয়াসির।সামিয়া পর পর কয়েকবার পলক ঝাপটালো।গায়ে ওড়না টা ভালো ভাবে জড়িয়ে নিলো।চুল গুলো হাত খোঁপা করে নিলো।সাজিয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
গুটি গুটি পায়ে ছাদে প্রবেশ করলো সামিয়া।ছাদে প্রবেশ করতেই ঠান্ডা দমকা হাওয়া সামিয়ার সামিয়ার শরীরে বারি খেলো।কেমন ঠান্ডা পরিবেশ মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।সামিয়া এদিক ওদিক তাকালো।হাতে থাকা ফোনের লাইট অন করলো।লাইট অন করতেই দেখতে পেলো। তার থেকে দশ হাত দূরে রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে আছে ইয়াসির।চোখ দুটো তার দিকেই নিবদ্ধ।ইয়াসিরের থেকে দু হাত দুরত্ব রেখে দাড়ালো সামিয়া।
-“কি জন্য ডেকেছেন?কোনো বিশেষ প্রয়োজন?”
-“কেন প্রয়োজন ছাড়া কি আপনাকে ডাকতে পারি না? আফটার অল ইউ আর মাই উড বি।”
-“অবশ্যই না।কি দরকার তাড়াতাড়ি বলুন।কেউ দেখে ফেললে অন্য কিছু ভাববে।”
-“যে মেয়ে নিজে থেকে অন্য একটা ছেলের রূমে গিয়েছিল তাও আবার গ্রামে, সেই মেয়ে নাকি লোকে কি বলবে ভাবছে। ভেরি স্ট্রেঞ্জ!”
সামিয়া ভালোই বুঝতে করলো যে,ইয়াসির তাকে খোঁচা মারলো।রাগে নাক ফুলালো সামিয়া।কট মট করে তাকালো ইয়াসিরের দিকে।
-“আপনার ফালতু কথা শোনার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।থাকেন আপনি আমি যাই।”
বলেই সামিয়া পা বাড়াতে নিলে ইয়াসির হেচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো।কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।সামিয়া ছুটো ছুটি করতে লাগলো।
-“এমন করছেন কেনো?আমি কি এখন আপনাকে আমার সাথে বাসার করার জন্য ডেকেছি নাকি?এতো ছুটো ছুটির মনে কি?তবে আপনি চাইলে আমি প্রথম ধাপ শুরু করতে পারি।”
-“বাজে কথা বন্ধ করুন।আপনি যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।আমার…”
চলবে…..?